#বৃষ্টিস্নাত_ভোর
#পর্বঃ২২
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি
তটস্থ পায়ে হুড়মুড়িয়ে শিহরণ এর ক্যাবিনে ঢুকে নির্ধা।কোলে তার আধো জাগ্রত নিরণ।মায়ের বুকে মাথা দিয়ে ল্যাপ্টে আছে।নির্ধার চলার গতির সাথে একটু একটু ছলকে উঠে নিরণ এর মাথা।আবারো নিভুনিভু চোখে মায়ের বুকে মাথা রাখে নিরণ।
ক্যাবিনে ঢুকতেই চক্ষু চড়কগাছ নির্ধার।শিহরণ এক নার্স এর কোমড় ধরে ঝুকে আছে।বিস্ফোরিত চোখে নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকে নির্ধা।বুকের ভিতর ছলাৎ ছলাৎ করতে থাকে সাগরের বিশাল জলরাশি।নির্ধাকে দেখেই অপ্রস্তুত হয় শিহরণ।নার্স অর্পিতা কে ছেড়ে সোজা হয়ে দাড়ায়।দুকদম সামনে এগিয়েই ক্রোধিত গলায় বলল–
“তো এই আপনার স্পেশাল এপয়েন্টমেন্ট !!হসপিটালে রোগী দেখার নাম করে এইসব করা হচ্ছে!!”
শিহরণ বিব্রতবোধ করে।চোখে মুখে ভারিক্কি রেখে বিস্মিত গলায় বলল–
“তুমি এখানে??
“কেনো !!অবাক হচ্ছেন!!আপনার প্রেমে বাধা পড়েছে তাই!!
“কী আবোলতাবোল বলছো এইসব!!
ছলছল করে উঠে নির্ধার অক্ষিপুট।কাঁদো কাঁদো হয়ে আহ্লাদী গলায় বলল–
“এই জন্যই আপনার সময় হয় না আমাকে নিয়ে বের হওয়ার।এখন তো আমাকে ভালো লাগে না আপনার।”
শিহরন ফিকে গলায় বলল–
“কী মুশকিল!!
এইসব কী বলছো তুমি??
অর্পিতার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় আবার বলল—
“অর্পিতা তুমি এখন যাও।”
নির্ধা রক্তচক্ষু নিয়ে অর্পিতার পথ আগলে দাড়ায়।উনুনে তেতে উঠা কন্ঠে ঝাঝিয়ে বলল–
“এই অসভ্য মেয়ে!!
লজ্জা করে না বিবাহিত পুরুষের সাথে ডলাডলি করতে??
অর্পিতা চোখ মুখ কুচকে বিব্রত অভিব্যক্তির প্রকাশ করে।নিস্প্রভ দৃষ্টিতে শিহরণ এর দিকে তাকায়।শিহরণ কিছু বলতে যাবে তার আগেই ক্রোশভরা কন্ঠে প্রজ্জ্বলিত চোখে বলল–
“ওদিকে কী দেখছো !আমার দিকে দেখো।বেয়াদব মেয়ে কোথাকার!!পুরুষ মানুষ দেখলেই ঝাপিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে!!
অর্পিতা নিরুত্তর।শিহরণ লজ্জিত বোধ করে।ও এখানে একদম ই নির্ধা কে আশা করেনি।তাও এমন একটা বেখাপ্পা মুহূর্তে।অর্পিতা কে চোখ দিয়ে ইশারা করতেই সে নরম পায়ে ক্যাবিন থেকে বেরিয়ে যায়।নির্ধার উচ্চবাচ্যে নিরণ এর ঘুম উবে যায়।ঢলুঢলু মাথা নিয়ে কাতর নয়নে তাকিয়ে আছে শিহরণ এর দিকে।শিহরণ হাত বাড়াতেই ঝাপিয়ে পড়ে নিরণ ওর ক্রোড়ে।বুকের উপর মাথা চেপে ধরে হাত বুলাতে থাকে শিহরণ।রাগে এখনো ফোস ফোস করছে নির্ধা।
আজ সকালেই নির্ধা কতো করে বলল ওকে ওর বাবার বাড়ি নিয়ে যেতে।এমনিতে কখনই নিজের ইচ্ছায় শিহরণ ওকে কোথাও নিয়ে যায় না।সারাদিন হসপিটাল এ ব্যস্ত থাকে।ছুটির দিন গুলোতেও ঘুম নিয়ে ব্যস্ত।আর আজ ইমপর্টেন্ট এপয়েন্টমেন্ট আছে বলে হসপিটাল এ এসেছে।শিহরণ এর একজন প্যাশেন্ট ওর কাছে একমাস পর পর রেগুলার চেকাপ এর জন্য আসে।কিন্তু কোনো একটা কাজে তিনি বহির্বিশ্বে যাবেন বলে ইমিডিয়েট আজই চেকাপ করাবেন বলে আসে।অর্পিতা শিহরণ এর ফিল্ড এরই সিনিয়র নার্স।ওকে হেল্প করতেই এসেছে।কিন্তু যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই চেয়ারের সাথে আলগোছে ধাক্কা লেগে পড়ে যেতে গেলে শিহরণ তাকে সামলায়।আর তখনই নির্ধার আগমন।
নিরণ কে কাউচে শুইয়ে দেয় শিহরণ।ছেলেটাকে ঠিকমতো ঘুমাতেও দেয়নি।নিরণ এর কপালে ছোট্ট চুমু খায় শিহরণ।
চেয়ারে এসে বসে ফোস করে এক দম ছাড়ে।অধর প্রসারিত করে ছোট্ট করে হেসে নির্ধাকে টেনে ওর পায়ের উপর বসায়।দু হাত দিয়ে শক্ত করে নির্ধার কোমড় জড়িয়ে ধরে বিগলিত গলায় বলল–
“এতো রাগ কেনো ড্রামা কুইন!!
নির্ধা প্রদীপ্ত গলায় বলল–
“একদম আমাকে ড্রামা কুইন বলবেন না।ড্রামা কুমার তো আপনি।কী করছিলেন ওই মেয়েয় সাথে!!
শিহরন স্মিত হাসে।নির্ধার হাতে অধর ছুইয়ে শান্ত গলায় পুরো ঘটনা খুলে বলল।নির্ধা আহত দৃষ্টিতে শিহরন এর দিকে তাকায়।বিরস গলায় বলল–
“সরি।”
“ইটস ওকে।”
শিহরণ জিঙ্গাসু গলায় আবার বলল–
“তুমি এখানে কী করে এলে??
নরম পায়ে সেখানে প্রবেশ করে মারশিয়াদ।অধর কোনে বাকা হেসে ফিচেল গলায় বলল–
“তোর কীর্তি দেখাতে আমি নিয়ে এসেছি নির্ধা ভাবী কে।”
মারশিয়াদ কে দেখে উঠে দাড়ায় নির্ধা।শিহরণ ঈষৎ রাগমিশ্রিত আর উদ্দীপ্ত গলায় বলল–
“তাহলে এইসব তোর কাজ!!
“ইয়েস মাই লর্ড।”
“শালা,,হারামি।ঘরের শত্রু বিভীষণ।এখনই তো আমাকে বউ ছাড়া বিধবা বানাতি।”
মারশিয়াদ গা দুলিয়ে হেসে উঠে।নির্ধা লজ্জায় মাথা নিচু করে।নিরণ কে কোলে তুলে নেয় নির্ধা।শিহরণ স্বাভাবিক গলায় বলল–
“তুমি বাসায় গিয়ে তৈরি হয়ে নাও।আমি আসছি।”
নির্ধা সম্মতিসূচক মাথা ঝাকায়।মারশিয়াদ একটা চেয়ার টেনে শিহরণ এর সরাসরি বসে।শিহরণ তপ্ত গলায় বলল–
“তোর কী খেয়েদেয়ে কাজ নেই।আরেকটু হলে তো আমার বারোটা বাজাতি।
শালা,হাতির ঘরে শিয়ালের বাচ্চা।”
মারশিয়াদ স্বশব্দে হেসে উঠে।সরস গলায় বলল–
“ভাবী সকালে কল করে বলল তুই নাকী একদম সময় দিস না তাকে??
“আরে মেয়েদের নাকি কান্না।বললাম ফিরে এসে নিয়ে যাবো।আচ্ছা বাদ দে এইসব।
তোর হাতের অবস্থা কেমন??
মারশিয়ার চোখের পাপড়ি নাড়িয়ে আশ্বস্ত করে যে সে ঠিক আছে।শিহরণ উদ্যস্ত গলায় বলল–
“তুই কেনো করিস এইসব!!যদি কিছু একটা হয়ে যেতো!!
“হয়নি তো।”
শিহরণ এক লম্বা শ্বাস ছাড়ে।শান্ত গলায় বলল–
“আশফিক কোথায়??
“আসছে।”
মারশিয়াদ ওর মোবাইল এ মনোযোগ সহকারে কিছু একটা দেখছে।শিহরন ওর চেয়ারে হেলান দিয়ে অক্ষিপল্লব বন্ধ করে কিছু একটা ভাবতে থাকে।দুজনের ভাবনার ছেদ ঘটে আশফিক এর প্রদৃপ্ত গলার আওয়াজ এ।
“দুইজন কী বনবাসে বাসর সাজাচ্ছিস নাকী!!
আশফিক এর আওয়াজ এ চোখের পল্লব খুলে উদ্ভাসিত দৃষ্টি দেয় শিহরণ।মারশিয়াদ হালকা নড়েচড়ে আয়েশ করে বসে।ঝপাৎ করে বসেই ফিচেল গলায় প্রশ্নবিদ্ধ করে শিহরণ কে আশফিক,বলল—
“ভাবী কে সাথে নিয়ে এসেছিলি নাকি!!অন্তত হসপিটাল টাকে অপবিত্র করিস না।”
উচ্চ শব্দে হেসে উঠে মারশিয়াদ আর আশফিক।কটমটিয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে প্রতপ্ত গলায় শিহরণ বলল–
“ডপ মারা বন্ধ করে আগে বল চেকাপ করিয়েছিস??
“হুম।”
“কী অবস্থা??
“বেটার নাউ।”
“যত্ন নিস।”
“ওকে।”
মোবাইল এর রিং বেজে উঠতেই হালকা কাত হয়ে পকেট থেকে মোবাইল বের করতেই স্ক্রিনে ভেসে উঠে ইনশিরাহ এর নাম।আশফিক ভাবুক চোখে তাকায় মারশিয়াদ এর দিকে।মারশিয়াদ চোখের ইশারায় ওকে যেতে বলে।ওদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায় আশফিক।শিহরণ ভ্রু কুচকে সন্দিহান গলায় বলল–
” ও কোথায় গেলো??
মারশিয়াদ মোবাইলের উপর অক্ষি নিবদ্ধ রেখে ঠান্ডা গলায় বলল–
“শিরা কল করেছে।”
“আচ্ছা।”
শিহরণ গাঢ় গলায় আবার বলল–
“আজরাহান এর সাথে কথা হয়েছে তোর??
মারশিয়াদ অনুজ্জ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফিকে গলায় বলল–
“ও এখনো রেগে আছে আমার উপর।”
“এই কিন্ডার গার্টেন এর আর কোনো কাজ নেই!!
মারশিয়াদ ম্লান হাসে।
শিহরণ উদ্বেগ জড়োয়া গলায় বলল–
“তুই হাসছিস??
“তো কী কাঁদবো!!
আমার এইসবে পোষাবে না।”
শিহরণ ঠান্ডা ও অানম্র গলায় বলল–
“প্রহর কে ছেড়ে দিলি কেনো তুই!!
মারশিয়াদ চোখের কোন ক্ষীন করে গম্ভীর গলায় বলল–
“আজরাহান ইজ দ্যা পারফেক্ট ম্যান ফর হার।আর আমি সেটাই করেছি।”
“তুই নিজেকে সবসময় ছোট কেনো করিস??
মারশিয়াদ এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।মোবাইল টা পকেটে গুজে এক হাতের আঙ্গুল অন্য হাতের ভিতর ভাজ করে টেবিলের উপর রাখে।সরস গলায় বলল–
“জরুরী নয় যাকে আমাদের ভালো লাগে তাকেই আমাদের ভালোবাসতে হবে।বরং তাকে ভালো রেখে আমরা আমাদের ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারি।”
ক্ষনকাল চুপ থেকে গাঢ় গলায় মারশিয়াদ আবার বলল–
“আমার কাছে সে কখনো ভালো থাকবে না।আজরাহান তাকে ভালো রাখতে পারবে।আর আমি তাই ই করেছি।”
শিহরন নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে বলল–
“তাহলে ওর পাগলামো!!
তার কী ব্যাখ্যা তোর কাছে??
“ভালোবাসা কোনো সূচনা মেইন্টেইন করে না।না তার কোনো উপসংহারের প্রয়োজন হয়।তারপরও তার আদি অন্ত আমরা ঠিক করি।কিন্ত মধ্যখানে বিস্তৃত ভালোবাসার উপাখ্যান আমরা আমাদের মতো করে সাজাই।সেই জায়গা একান্ত আমাদের নিজস্ব।তার কোনো ব্যাখ্যা হয় না।তার পরিধি বিস্তৃত।যতটা অতলস্পর্শী সাগর,যতটা ওই বিশাল আকাশ।”
শিহরণ স্মিত হাসে।বিগলিত গলায় বলল–
“তোর ভালোবাসার ব্যাখ্যা আমার মাথায় ঢুকবে না।”
“তোর মাথায় তো ছুরি কাঁচির বসবাস।জলজ্যান্ত মানুষকে কোমায় পাঠিয়ে দিতে দু মিনিট লাগে।”
শিহরণ অধর কোনে হেসে সরস গলায় বলল
“তা ভুল বলিস নি।”
মারশিয়াদ তার বিপরীতে ছোট্ট করে হাসি উপহার দেয়।
শিহরণ শান্ত গলায় বলল–
“নুরাইসার কথা ইনশিরাহ জানে??
“হ্যাঁ।
এই জন্যই তো আমার উপর রেগে আছে।”
মারশিয়াদ ফিচলে হেসে দীপ্ত গলায় আবার বলল–
“আমাকে কী পাগল মনে হয়!!
সবাই রাগ করে থাকে।সো সেড।”
“আনটি কে বলেছিস??
“হ্যাঁ।”
“কী বলল??
“ওই আগের মতো।ইটস ইউর চয়েজ।
বাট….।”
শিহরন ভ্রু নাচিয়ে কৌতূহলদীপ্ত গলায় বলল—
“কিন্তু কী??
মারশিয়াদ ছোট্ট করে শ্বাস ফেলে বিরস গলায় বলল–
“স্যার কী আমায় মেনে নিবে??
“কেনো নিবে না!!স্যার সবকিছু জানে তোর সম্পর্কে।”
“জানে বলেই তো মেনে নিবে না।কোনো পিতা কী তার মেয়েকে এমন পরিবারে পাঠাতে চাইবে!!
শিহরণ প্রজ্জ্বলিত চোখে প্রশ্ন ছুড়ে,বলল–
“কেনো??
পরিবার ধুইয়ে পানি খাবে না কি!!আর এতে তোর কী দোষ!!
স্যার এর ভাগ্য যে তুই তার মেয়ে কে বিয়ে করবি।”
মারশিয়াদ হালকা হেসে বলল–
“তুই ও না।”
“চিন্তার কারণ নেই।নুরাইসা এডাল্ট।স্যার না মানলে আমরা আছি কেনো!!
আমরা সব ব্যবস্থা করবো।”
“তুই কী আমাকে আমার বাবার কাঠগড়ায় নিয়ে দাড় করাতে চাস নাকি!!
শিহরন নিস্প্রভ চোখে তাকায় মারশিয়াদ এর দিকে।মারশিয়াদ এর মুখ জুড়ে বিষাদ ছেয়ে আছে।গম্ভীর গলায় বলল–
” এই জন্যই বুঝি প্রহর কে ভুলে যেতে চাস!!!
মারশিয়াদ উতপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে ঈষৎ রাগি গলায় বলল–
“এই তোর সমস্যা কি রে!!
পুরোনো কাসুন্দি না ঘাটলে চলে না।”
দুই হাত জোড় করে আবার বলল–
“মাফ কর ভাই।আমার মাথা আর ঘোলাস না।এমনিতেই টেনশনে আছি।”
শিহরণ ভ্রু কুচকে বলল–
“কেনো??
“মিষ্টি আমাকে স্যার সাথে দেখা করতে বলছে।”
“বাহ!!
এই না হলে আজকাল কার মেয়ে!!আর তর সইছে না।”
“হফ!!!
মিষ্টি মোটেও ওই রকম মেয়ে নয়।”
“এখনই মিষ্টি!!
এরপর না জানি রসগোজা,রসকদম্ব আরো কত কিছু হবে।হজম করতে পারবি তো!!
“নির্ধা কে হজম করে নিলাম আর তো মিষ্টি।অবশ্য নিরণ না থাকলে আমার কোনো সমস্যা ছিলো না।চোখ কে বলতাম তুই দেখিস না মন কে বলতাম তুই মনে রাখিস না।”
“হারামি চুপ কর।”
হা হা করে হেসে উঠে মারশিয়াদ।
,
,
,
বিশাল মাঠের এক কোনে বসে আছে ইনশিরাহ।গায়ে একটা নীল শাড়ি জড়ানো।খোলা চুল থেকে অকৃত্রিম সৌরভ ভেসে আসছে।জুতো খুলে পা দুটো বিছিয়ে রেখেছে সবুজ ঘাসের উপর।বুনো ঘাস ফুলের একটা মিষ্টি ঘ্রান ভেসে আসছে।ছোট ছোট সাদা আর হলুদের মিশেল।
মাঠের ও প্রান্তে কিছু উঠতি বয়সের ছেলেরা ফুটবল খেলছে।আশফিক গাঢ় দৃষ্টিতে নির্নিমেষ তাকিয়ে অবলোকন করছে ইনশিরাহ এর এই শান্ত,স্নিগ্ধ সৌন্দর্য।খুব কম সময়ই ইনশিরাহ এমন চুপচাপ থাকে।ঘন অক্ষিপল্লব মেলে তাকিয়ে আছে মাঠের দিকে।হালকা বাতাসে ইনশিরাহ এর চুল ওর চোখের সামনে এসে পড়তেই বিরক্তিকর ছাপ পড়ে ইনশিরাহ এর চোখে মুখে।আশফিক আলতোভাবে প্রস্ফুরনিত হাতে ইনশিরাহ এর চোখের সামনের অগোছালো চুল ওর কানের পিছনে গুজে দেয়।ইনশিরাহ ঘাড় ঘুড়িয়ে ম্লান চোখে তাকায়।আশফিক তার চোখের পল্লব বারবার উঠানামা করে মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে দেখছে ইনশিরাহ কে।ইনশিরাহ স্মিত হেসে শীতল গলায় বলল–
“এভাবে তাকিয়ে কী দেখছো??
আশফিক উদ্বেলিত গলায় বলল–
“তোমাকে।”
চোখের পলক ফেলে সোজা হয়ে বসে ইনশিরাহ।চোখে হেসে আরেকবার লজ্জামিশ্রিত আবেশে অধর প্রশ্বস্ত করে।স্নিগ্ধ গলায় আশফিক বলল–
“এখনো রেগে আছো আমার উপর!!
ইনশিরাহ গাঢ় দৃষ্টি নিবদ্ধ করে আশফিক নেত্রযুগল এ।এই এক অন্যরকম অনূভুতি।ইনশিরাহ কোনো কথা বলল না।আশফিক আবার বলল–
“ক্ষমা করা যায় না একটিবার??
ইনশিরাহ বিরস হেসে বলল–
“সামলাতে পারবে আমাকে!!
আমি কিন্তু অন্য মেয়েদের মতো নই।”
আশফিক ছোট করে হাসে।ঘাড় ঘুড়িয়ে ডানপাশে রাখা এক গুচ্ছ গোলাপ তুলে দেয় ইনশিরাহ এর হাতে। আচমকা ইনশিরাহ উচ্ছ্বসিত গলায় বলল–
“আমার জন্য??
“নাহ।আমার হৃদয়ের সম্রাজ্ঞীর জন্য।”
ইনশিরাহ লজ্জামিশ্রিত হাসি হাসে।আশফিক এর দিক থেকে চোখ নামিয়ে গোলাপের মধ্যে নাক ডুবায়।লম্বা নিঃশ্বাস টেনে নেয়।গোলাপের গুচ্ছ তে একটা রুমাল জড়ানো।ইনশিরাহ ধীরে ধীরে তা খুলে নেয়।দুহাটু ভাজ করে আসন দিয়ে বসে।গোলাপ গুলো কোলের মধ্যে রেখে শুভ্র রুমাল টা দু হাতের উপর রেখে মেলে ধরে।গুটি গুটি সেলাই এ তাতে লিখা—-
“”তুমি চাইলেই হবো আমি নীল আকাশ,তোমায় নিয়ে বাধব সেথায় ভালোবাসার নিবাস,
আবীর রঙে রাঙানো গৌধুলী বেলায় করবো সন্ধ্যাবিলাস,তুমি চাইলেই করবো তোমার চোখের কোনে বাস।
চাইলেই দিতে পারি এই জীবন তোমার নামে আমার সঙ্গি,
তুমিই একমাত্র আমার আজন্ম কালের হৃদয়ের সম্রাজ্ঞী।””
—–তানভি
লাইনগুলো পড়েই স্মিত হাসে ইনশিরাহ।নেত্রকোনে ছাপিয়ে আসে নোনতা জল।ইনশিরাহ আবার পড়ে।অস্ফুটভাবে বারংবার পড়ে।প্রজ্জ্বলিত চোখে আশফিক এর দিকে তাকায়।চোখ ফিরিয়ে রুমালে ঠোঁট ছুইয়ে দেয় ইনশিরাহ।আশফিক এর এক হাত নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে আলগোছে মাথা রাখে আশফিক এর কাঁধে।
শীত পড়তে শুরু করছে।হিম হিম বায়ু বইছে।আশফিক এর শরীরের উষ্ণতায় বেশ লাগছে ইনশিরাহ এর।আরেকটু চেপে বসে ইনশিরাহ।আশফিক ওর মাথাটা হালকা হেলে দেয় ইনশিরাহ এর দিকে।দুজন নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকে মাঠের দিকে।খেলা সমাপ্ত।মাঠ ছেড়ে চলে গেছে ছেলেগুলো।সূর্য হেলে পড়েছে।কমলার রঙের আভায় ছেয়েছে আকাশ।সেই সাথে রাঙিয়েছে ইনশিরাহ এর রঙহীন জীবন।
,
,
,
রাতের খাওয়া শেষ করে প্রহর এর মনে পড়লো স্কুল ড্রেস ধুয়ে তা ছাদে শুকাতে দিয়েছিলো।কিন্তু আনা হয়নি।তাই সিড়ি ভেঙে ছাদে এসে দেখে হিমেল শীতের রাতের কাপড়গুলোও একদম শীতল হয়ে আছে।প্রহর এর বেশ রাগ হলো।এতো জরুরী জিনিস কেউ ভুলে যায়!!
জামা কাপড় গুলো কোল ভর্তি করে সিড়ির কাছে আসতেই ওকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে প্রহর এর অধর সুধায় মত্ত হয় আজরাহান।বিস্মিত চোখে আজরাহান এর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে প্রহর।
চলবে,,,