বৃষ্টিস্নাত ভোর পর্বঃ২৩

0
4827

#বৃষ্টিস্নাত_ভোর
#পর্বঃ২৩
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি

সময়ের পরিক্রমায় মানুষের জীবন বদলায়।বদলায় তার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ।কিন্তু বদলানো যায়না অতীত।কিন্তু চাইলে অতীত কে ভুলে সামনে আগানো যায়।
গত কয়েকদিনে আজরাহান আর প্রহর এর সম্পর্কটাও অনেকখানি গাঢ় হয়েছে।এখন আর প্রহর আজরাহান এর সব কথায় ঝাঝিয়ে উঠে না।প্রহর এর বিশ্বাস তার অতীত তার ভবিষ্যতের উপর কোনো আঁচ ফেলবে না।আজরাহান এর ব্যবহার আর কথায় প্রহর সে ভরসাটুকু পেয়েছে যার কারণে সে এখন নিজেকে আজরাহান এর কাছে সমর্পন করতে আর কোনো দ্বিধা রাখেনি মনে।আজরাহান তার সবটুকু দিয়ে প্রহর কে আশ্বস্ত করেছে যে জীবনের শেষ শ্বাসবিন্দু পর্যন্ত সে তার ডিঙি নৌকার বৈঠা তার হাতেই রাখবে।সকল ঝড়,ঝঞ্জাট উপেক্ষা করে তাকে পাড়ে টেনে নিয়ে আসবে।

স্কুল শেষে আজও প্রহর বায়না ধরেছে সে খাবে।আজরাহান ওকে একটা ক্যাফেতে নিয়ে যায়।দুই হাতে বার্গার নিয়ে তাতেই দন্তপাটি বসায় প্রহর।এইটুকু ছোট্ট পেট হলেও হাবিজাবি খাওয়াতে খুবই পারদর্শী প্রহর।অবশ্য প্রহর এই বাজে অভ্যাসের জনক আজরাহান নিজেই।প্রহর কে পটানোর জন্য কম তেল খরচ করেনি আজরাহান।তবে আজ সে তৃপ্ত।
নিস্পলক চাহনিতে আবদ্ধ করে রেখেছে প্রহর কে আজরাহান।বিমুগ্ধের মতো প্রহর এর করা প্রতিটি অঙ্গভঙ্গি অবলোকন করছে আজরাহান।প্রহর এর সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই।বার্গারের শেষ বাইট মুখে দিয়েই চোখ ফেলে আজরাহান এর দিকে।সরস গলায় বলল–

” এভাবে চেয়ে আছেন কেনো আপনি!!
আগে কখনো দেখেনন নি??

আজরাহান স্মিত হেসে হালকা নড়েচড়ে বসে।শান্ত গলায় বলল—

“খেতে খেতে তো একদিন আমাকেও ভুলে যাবি।”

প্রহর ভ্রু কুঞ্চি করে ভেঙচি কাটে।মুখের সামনে থাকা কোল্ড ড্রিংস এ স্ট্র দিয়ে এক সিপ টেনে নেয়।এই ঠান্ডাতেও আজরাহান এর কথা অমান্য করে জোরপূর্বক কোল্ড ড্রিংস নিয়েছে প্রহর।এক সিপ টেনেই এক শীতল নিঃশ্বাস ফেলে।চোখের কোন ক্ষীন করে উচ্ছল গলায় বলল–

“খাবেন??

আজরাহান গম্ভীর গলায় বলল–

“নাহ।”

“খেয়ে দেখেন।কী মজা!!!
একদম ঠান্ডা।”

আজরাহান হালকা ঝুকে ফিসফিসিয়ে বলল–

“তোকে খাবো।দিবি??

“সরেন।”

আজরাহান সোজা হয়ে বসে গা দুলিয়ে হেসে উঠে।স্বাভাবিক গলায় বলল–

“জলদি কর,আমার কাজ আছে।”

প্রহর স্ট্র তে চুমুক দিয়ে আরো কয়েক সিপ টেনে নেয়।ঠান্ডা পানীয়তে নিজের গলা ভিজিয়ে ঠান্ডা ঠান্ডা গলায় বলল–

“কোথায় যাবেন??

আজরাহান চোখ বাকিয়ে তাকায়।গাঢ় গলায় বলল–

“মারশিয়াদ এর বাসায়।”

প্রহর উদ্দীপ্ত হয়ে উচ্ছলিত গলায় বলল–

“আমিও যাবো।”

আজরাহান উষ্ণ গলায় শক্তভাবে বলল–

“নাহ।তোর সেখানে কাজ নেই।”

প্রহর কপট রাগ দেখিয়ে উত্তেজিত গলায় বলল–

“আমি যাবো,যাবো,যাবো।”

আজরাহান দাঁতে দাঁত নিষ্পেষন করে।প্রজ্জ্বলিত চোখে তাকায় প্রহর এর দিকে।আজরাহান এর চোখ দেখে হিম হয়ে আসে প্রহর এর শরীর।প্রহর কথা বাড়ায় না।ইদানীং আজরাহান এর সাথে আগের মতো উচ্চবাচ্য করে না।কিন্তু প্রহর ওর ক্লান্ত মুখ আজরাহান এর চোখ এড়ায় না।
খাওয়া শেষে বাইকে উঠতে গেলে প্রহর এর ম্লান মুখ দেখে আজরাহান এর নিজেকে শূন্য মনে হয়।আজরাহান সরস গলায় বলল–

“নিয়ে যাবো।তবে আমার একটা শর্ত আছে।”

প্রহর প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকায়ে আজরাহান এর দিকে।আজরাহান ওর মনোভাব বুঝতে পেরে নিজেই শান্ত ও কঠিন গলায় বলল–

“একদম মারশিয়াদ এর আশেপাশে যাবি না।”

প্রহর নিরস গলায় প্রশ্ন ছুড়ে,বলল–

“গেলে কী করবেন??

আজরাহান বাতাসের বেগে প্রহর এর একদম কাছে চলে আসে।সংক্ষুব্দ গলায় বলল–

“একদম জানে মেরে ফেলবো।”

প্রহর চোখ ছোট ছোট করে নির্বাক দৃষ্টি রাখে আজরাহান এর চোখে।স্বাভাবিক গলায় বলল–

“এতো হিংসুটে কেনো আপনি!!

“তোর জন্য হিংসে কেনো,মানুষও খুন করতে পারি আমি।
আমার জন্ম-মৃত্যু তুই,আমার দীর্ঘশ্বাসও তুই।
আমার জীবনের সূর্যোদয়ের শেষ প্রহর তুই।”

প্রহর নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকে আজরাহান এর দিকে।ছোট ছোট কয়েকটা কথা বলতেই আজরাহান এর ফর্সা মুখ রক্তিম রঙ ধারন করেছে।চোখের সাদা অংশ রক্তলাল।ঘন ঘন নিঃশ্বাস পড়ছে আজরাহান এর যার প্রতিটি আওয়াজ প্রহর এর হৃদকম্পন থমকে দিচ্ছে।আজরাহান আবারো বলল–

“বস।সময় নেই আমার।আর আমার কথা যেনো মনে থাকে।আমি যদি ভালোবাসতে পারি তা পাওয়ার জন্য মরতেও পারি।আর মারতেও।”

প্রহর শান্তুভাবে বাইকে উঠে বসে।আজরাহান এর এই রূপ নতুন নয়।যখন থেকে আজরাহান বুঝতে পেরেছে প্রহর ওর প্রতি দূর্বল আজরাহান ওর প্রতিটি কথা আর কাজে প্রহর কে বুঝিয়ে দিয়েছে ও কতোটা ভয়ংকর হতে পারে।সেদিন শুধু মারশিয়াদ এর সাথে মোবাইলে কথা বলার অপরাধে অন্ধকার ছাদে প্রহর কে একা একঘন্টা আটকিয়ে রাখে আজরাহান।পড়ন্ত শীতের রাতের ঝিরিঝিরি ঠান্ডা বাতাসে প্রহর এর কাপন উঠে যায়।সেদিন সারারাত আজরাহান প্রহর এর ঘরে ছিলো।ঠান্ডা লেগে মাথায় ঝিম ধরে যায় প্রহর এর।গায়ে জ্বর জ্বর ভাব দেখা দেয়।প্রহর কে মেডিসিন দিয়ে নিজের হাতেই লং,দারুচিনি,আদার রস দিয়ে রঙ চা বানিয়ে তাতে লেবু চটকে সারারাত এ দুই তিনবার খাওয়ায়।সারারাত ওর বিছানার কাছেই চেয়ার পেতে তাতে হেলান দিয়ে বসেছিলো আজরাহান।সারারাত অক্ষিপল্লব খুলে বিনিদ্র রজনী কাটায় আজরাহান।শীতল বাতাসে প্রহর এর গলায় ধলা পাকিয়ে যায় কফ।পুরো রাতে একটু পর পর কেশে উঠছিলো।শেষ রাতের দিকেই চোখ লেগে আসে প্রহর এর।ভোরের সূর্য তার মিষ্টি রোদের আভা পৃথিবীর বুকে ছড়িয়ে দেওয়ার পূর্ব মূহুর্তেই আজরাহান বেরিয়ে আসে প্রহর এর ঘর থেকে।ভেজা চুল কোনো রকমে শাড়ির আঁচলে ঢেকে সিড়ি দিয়ে নেমে আসছিলো নন্দিতা।আজরাহান এর চোখে চোখ পড়তেই চোখ নামায় নন্দিতা।আজরাহান নন্দিতার দিকে চোরা চোখে তাকিয়ে আবার চোখ নামায়।ওকে পাশ কাটিয়ে নিজের ঘরের দিকে যায় আজরাহান। আজরাহান যেতেই প্রহর এর ঘরের দরজা হালকা ধাক্কা দিয়ে ভিতরে তাকাতেই নন্দিতা দেখে প্রহর ঘুমে বিভোর।স্মিত হাসে নন্দিতা।এই বাড়িতে আসার পর আরো অনেক কিছুই দেখেছে নন্দিতা।তাই এইসব নিয়ে আর ভাবেনি সে।
,
,
,
প্রহর কে দেখেই হোচল খায় মারশিয়াদ।ও আশা করেনি আজরাহান ওকে সাথে করে নিয়ে আসবে।গাঢ় লাল রঙের ড্রেস পড়েছে প্রহর।চুলের একপাশে সিথি করে তা ছড়িয়ে রেখেছে পিঠের উপর।মারশিয়াদকে শুধু একবার অস্পষ্টভাবে জিঙ্গেস করেছিলো যে সে কেমন আছে।আর কোনো কথা বলেনি প্রহর।আজরাহান এর পাশ ঘেষেই বসে আছে প্রহর।কাতর দৃষ্টিতে মারশিয়াদ এর দিকে কয়েকবার তাকিয়ে আবার চোখ ফেরায় ।কিন্তু কোনো কথা বলল না।রাতের তমসা প্রগাঢ় হতে লাগলো।নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে তিনজন।প্রহর এর দম বন্ধ হয়ে আসছে।সারাদিনে লাখ খানেক কথা বলা প্রহর গত পনেরো বিশ মিনিট যাবৎ একটা কথাও বলতে পারছে না।মারশিয়াদ অনলাইনে চ্যাটিং করে যাচ্ছে নুরাইসার সাথে।একটু পর পর অধর প্রশ্বস্ত করে চোখে হাসে মারশিয়াদ।আজরাহান শক্ত হয়ে বসে আছে।মনে মনে অভব্য গালি দিয়ে যাচ্ছে আশফিক কে।আশফিক এর আসার কথা।ওর জন্যই বসে আছে ওরা।কিন্তু মহান আশফিক তার নতুন গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছে।আজরাহান এর মাথা রাগে ফেটে যাচ্ছে।মনে মনে আশফিক কে কয়েকটা লাথি উষ্টা তো মেরেই দিয়েছে।এখন শুধু তা দৃশ্যমান হওয়া বাকি!

প্রহর মারশিয়াদ এর দিকে তাকিয়ে একটু অবাক হয়।কোনো মানুষ শুধু শুধু হাসে!!প্রহর এর ইচ্ছে করছে মারশিয়াদ এর মোবাইলের মধ্যে ঢুকে একবার দেখতে এমন কী চলছে সেখানে।কিন্তু পাশে যে বুনো গরিলা টা বসে আছে এখান থেকে নড়লেই তো ওর হাড়গোড় ভেঙে ওকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়বে।
তাই মনের কথা মনে রেখেই আবারো শ্রান্ত মনে বসে থাকে প্রহর।

ডোর বেল বাজতেই উচ্ছলিত হয়ে প্রহর বলল–

“আমি যাই!!

মারশিয়াদ মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি দেয়।দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দীপ্ত হাসে প্রহর।ইনশিরাহ প্রহর কে দেখে স্মিত হাসে।আশফিক ফিকে গলায় বলল–

“কখন এসেছিস তুই??

প্রহর সরস গলায় বলল–

“অনেকক্ষন।তুমি এসো তোমার ঠ্যাঙ ভাঙবে আজ রাহান ভাইয়া।গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরাঘুরি !!
হু!!

আশফিক ফিচলে হেসে ভ্রু নাচিয়ে বলল–

“তোকে কে বলল আমি গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরতে গিয়েছি!!

“তাহলে কী বউ নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলে!!

কথা শেষ করেই প্রহর খলখলিয়ে হেসে উঠে।শান্ত গলায় আশফিক বলল–

“এখন কী ঢুকতে দিবি না কি এখানেই দাড় করিয়ে রাখবি??

“ও সরি সরি।এসো।”

আজরাহান কে দেখেই চোখ মুখ শক্ত করে ইনশিরাহ।আজরাহান ইনশিরাহ এর দিকে তাকিয়ে আশফিক কে উদ্দেশ্য করে ফিচেল গলায় বলল–

“একবার এ বাচ্চা নিয়েই ফিরতি খামাখা সময় নষ্ট করলি ক্যান!!

ইনশিরাহ উত্তেজিত গলায় বলল–

“ভদ্রভাবে কথা বলো আজরাহান।”

আজরাহান শক্ত কন্ঠে বলল–

“গায়ে মানে না আপনি মোড়ল।আমি কী তোমাকে কিছু বলেছি!!
আমার ভাইকে বলেছি।তোমার এতো জ্বলে ক্যান??

ইনশিরাহ তেতে উঠা গলায় বলল—

“এইসব কী ধরনের ভাষা তোমার!!!

“খাটি বাংলা প্রচলিত ভাষা।ও তুমি বুঝবে না।
বেশি আর্টিফিসিয়াল শিক্ষিত হলে যা হয় আর কি!!
আশফিক তুই শেষ!!
শেষে না তোর ভবিষ্যৎ সংস্কৃত ভাষার বিশেষজ্ঞ হয়!!!

ইনশিরাহ দাম্ভিকতার সাথে বলল–

“যেমনই হোক তবে তোমার মতো লাফাঙ্গা না হোক।”

মারশিয়াদ কঠিন গলায় বলল–

“স্টপ দিস শিরা।নাউ ইউ গো টু ইউর রুম।রেড চিলি আপনিও শিরার ঘরে যান।”

প্রহর দুইবার মাথা হেলায়।
মারশিয়াদ আজরাহান কে গাঢ় ও চিন্তিত গলায় বলল–

“সমস্যা কী তোর??
আমাকে তো সহ্যই হয় না এখন শিরার সাথেও।”

আজরাহান উচ্চ গলায় বলল–

“তোদের দুজন কে আমার সহ্য হয় না।যদি আইন দুটো খুনের জন্য শাস্তির বিধান না করতো তাহলে সবার আগে আমি তোদের দুজনকেই খুন করতাম।”

মারশিয়াদ স্মিত হেসে শান্ত গলায় বলল–

“তোর গলায় ফাঁসির দড়ির জন্য আমার একটা কল ই যথেষ্ট।”

আজরাহান ব্যস্ত হয়ে কাউচ থেকে উঠে মারশিয়াদ এর কলার চেপে ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল–

“কর কল।দেখি তোর কোন বাপ আসে।”

মারশিয়াদ ছোট্ট করে হেসে শান্ত গলায় বলল–

“কুল ম্যান কুল।আমার বাড়িতে কী রক্তের গঙ্গা বইয়ে দিবি না কি!!

আশফিক শশব্যস্ত হয়ে আজরাহান কে সরায়।কাউচে বসিয়ে দীপ্ত কন্ঠে বলল–

“কী শুরু করলি তুই!!
এদিকে প্রহর কে বিয়ে করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিস আর ব্যবহার করছিস বাচ্চাদের মতো।বিয়ের পর ও তোকে সামলাবে না তোর বাচ্ছাদের!!

আজরাহান ক্রুর দৃষ্টিতে তাকায় আশফিক এর দিকে।

মারশিয়াদ ফিচলে হেসে বলল–

” এখন বল কেনো এসেছিস??

আজরাহান গাঢ় গলায় বলল–

“আমি কুহুকপুর যাবো।”

আশফিক হকচকিয়ে বলল-

“তোর মাথা খারাপ!!!
কেনো যাবি আবার!!

আজরাহান সম্পূর্ন ঘটনা খুলে বলল।চিন্তার ভাজ পরে মারশিয়াদ এর কপালে।আশফিক বিস্মিত নয়নজোড়া আরও প্রশ্বস্ত করে শোনে আজরাহান এর কথা।উৎসুক গলায় আশফিক বলল—

“তার মানে প্রহর কুহুকপুরে থাকতো!!

আজরাহান নরম গলায় বলল–

“আই থিংক।”

“তোর কী মনে হয় তুই ওর ফ্যামিলিকে খুজে পাবি??

“চেষ্টা করতে দোষ কী!!

মারশিয়াদ এক শীতল নিঃশ্বাস ছেড়ে শান্ত গলায় বলল–

“ব্যাড আইডিয়া।”

আজরাহান আহত গলায় বলল–

“হোয়াই??

মারশিয়াদ হেলান ছেড়ে সোজা হয়ে বসে।সহজ ও স্বাভাবিক গলায় বলল–

“ঘটনা তিন বছর আগের।আর রেড চিলি কোনো সাধারণ জায়গা থেকে আসেনি।হিউম্যান ট্র্যাফিকিং গ্যাং এর কাছ থেকে এসেছে।যাদের ব্ল্যাক শেডো ধরেছে তারা নিতান্তই চুনোপুঁটি।রেড চিলি সেখান থেকে তার বাড়ি ফেরেনি।যদি তারা তা জানতে পারে আদৌ তার ফ্যামিলি কে ওই গ্যাং ছেড়ে দিবে!!!!!
আর যদি দেও তবুও আমার মনে হয় না ওখানে আমাদের কারোই যাওয়া উচিত।”

আশফিক উদ্বেলিত গলায় বলল—

“প্রহর কে ওদের হাতে কে দিতে পারে!!!

আশফিক এর কথায় বিচলিত হয় মারশিয়াদ আর আজরাহান।ফোস করে এক নিঃশ্বাস ছাড়ে আজরাহান।দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল–

“সে যেই ই হোক একবার হাতের কাছে পাই।ওকে যদি আমি ওর জীবনের শেষ সূর্যাস্ত না দেখিয়েছি তাহলে আমিও…..।”

“আজরাহান কারীম নয় তাই তো!!!

হা হা করে হেসে উঠে মারশিয়াদ আর আশফিক।ক্রোধিত চোখে তাকায় আজরাহান।

ওদের কথার ফাঁকেই সেখানে এসে দাড়ায় প্রহর আর ইনশিরাহ।প্রহর কে দেখেই বিমোহিত মুগ্ধের মতো আবিষ্ট নয়নে তাকিয়ে থাকে আজরাহান।একটা মেরুন রঙের শাড়ি পড়েছে প্রহর।একটু আগেই আশফিক এর সাথে গিয়ে তা নিয়ে এসেছিলো ইনশিরাহ।আজরাহান হাজার চেয়েও ওর চোখ সরাতে পারছেনা।ইনশিরাহ মিষ্টি হেসে চোখ দিয়ে ইশারা করে মারশিয়াদ কে।এটাই জিঙ্গেস করছে শাড়িতে প্রহর কে কেমন লাগছে?
মারশিয়াদ চোখের কোন ক্ষীন করে উঠে দাড়ায়।রাশভারী গলায় আশফিক কে বলল–

“চল তোর সাথে আমার কথা আছে।”

আশফিকও মারশিয়াদ কে অনুসরণ করে।এক রকম টেনেই ইনশিরাহ কে সাথে নিয়ে যায় মারশিয়াদ।ইনশিরাহ চোখ মুখ বিকৃত করে মনে মনে শাসায় মারশিয়াদ কে।এতো কষ্ট করে ওই একটু খানি বারবি ডলটাকে মারশিয়াদ এর জন্যই সাজিয়েছিলো ইনশিরাহ।কিন্তু এই হাদারাম ওই কিন্ডার গার্টেন অসভ্য আজরাহান এর কাছে রেখে এলো ওই ছোট্ট বারবিডল টাকে।না জানি ওই অসভ্যটা কী করে ওর সাথে!!বিবিধ চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে ইনশিরাহ এর ছোট্ট মস্তিষ্কে।

লজ্জামিশ্রিত চোখে প্রহর তাকায় আজরাহান এর দিকে।আজরাহান জ্বলন্ত চোখ আবদ্ধ করে রেখেছে প্রহর এর নির্মল,স্নিগ্ধ,মোহনীয় চেহেরায়।প্রহর ফাঁকা ঢোক গিলে।আজরাহান এর বাড়ন্ত পদযুগল যেনো অন্তর কাঁপিয়ে দিচ্ছে প্রহর এর।পাতলা শাড়ির আঁচল ছড়িয়ে আছে প্রহর এর কাঁধে।ফর্সা মেদহীন পেট পুরোটাই দৃশ্যমান।আজরাহান হালকা পায়ে একদম ওর সামনে গিয়ে দাড়ায়।একটানে ওকে মিশিয়ে নেয় বুকের সাথে।গাঢ় ও শান্ত গলায় বলল–

“শাড়ি কেনো পড়েছিস তুই??
তোকে না বাড়ন করেছি।”

প্রহর নিস্তেজ ও আহ্লাদী গলায় বলল–

“ইনশিরাহ আপু পড়িয়ে দিয়েছে।”

“ওই শিরনি বলল আর তুই পড়ে নিলি!!

“রাহান ভাইয়া লাগছে আমার।”

আজরাহান শক্ত হাতে প্রহর এর কোমড় চেপে ধরেছে।কথার প্রগাঢ়তা বাড়ার ফলে আজরাহান এর বলিষ্ঠ হাতের বাধনও শক্ত হতে থাকে।আজরাহান হিসহিসিয়ে বলল–

“শাড়ি পড়ে মারশিয়াদ এর সামনে কেনো এসেছিস তুই??

প্রহর কাতর গলায় অস্ফুটভাবে বলল–

“রাহান ভাইয়া ব্যাথা লাগছে আমার।প্লিজ ছাড়েন।”

আজরাহান ওর হাতের বাধন হালকা করে।প্রহর প্রানের শ্বাস নেয়।আজরাহান এর শরীরের উষ্ণতায় ঘোর লেগে আসে প্রহর এর।কম্পন উঠে প্রহর এর শরীরে।অনুরণন হয় প্রহর এর ওষ্ঠদ্বয়ে।আজরাহান ওর নাক ডুবায় প্রহর এর কাঁধে ছড়িয়ে থাকা কতিপয় চুলে।মোহনীয় ঘ্রাণ তার।প্রহর এর শরীরের গোলাপের মিষ্টি গন্ধ মাতাল করে দিচ্ছে আজরাহান কে।আজরাহান শীতল কন্ঠে বলল—

“আর কখনো শাড়ি পড়বি না তুই।বিয়ের পর আমি নিজ হাতে তোকে শাড়ি পড়াবো।”

আজরাহান এর উষ্ণ নিঃশ্বাসের মিষ্টি গন্ধ নাকে লাগে প্রহর এর ।বিমোহিত মুগ্ধতা আচ্ছন্ন করে রেখেছে ওকে।প্রহর অক্ষিপুট ফেলে সম্মতি দেয়।আজরাহান ওর ডানহাতের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে প্রহর এর নিচের ঠোঁটে হালকা ঘষা দেয়।প্রহর মোহবিষ্ট চোখে তাকিয়ে আছে।
আজরাহান ধীরে ধীরে ওর অধরযুগল এগিয়ে নেয় প্রহর এর পাতলা পোলাপী ঠোঁটের দিকে।দীর্ঘ সময় নিয়ে এক গাঢ় চুম্বন করে প্রহর এর অধরে।
,
,
ব্যালকনির সম্মুখপানে মুখ করে দাড়িয়ে আছে মারশিয়াদ।মারশিয়াদ থেকে হালকা দুরত্বেই দাড়িয়ে আছে আশফিক।নিস্প্রভ দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে মারশিয়াদ এর দিকে।মারশিয়াদ আকাশ দেখছে।বিশাল আকাশ জুড়ে একটাই চাঁদ।এই এক চাঁদের বিচ্ছুরিত আলোয় পুরো ধরনী রক্ষা পায় রাতের তমসা থেকে।হাজার তারার আলোও ফিকে পড়ে ওই চাঁদের আলোয়।রাতের আকাশ তাকে ছাড়া একদম শূন্য।তার আলো না থাকলে সন্ধ্যা রাতের পরেই ধরনী প্রলীণ হয়ে যেতো অন্ধকারে।পুরো পৃথিবী ডুবে যেতো অন্ধকার সাগরে।
চাঁদের মূল্য তাই রাতের আকাশ বোঝে।তবে মারশিয়াদ আজোও তার পৃথিবীতে আসার কারণ বোঝে না।নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে শান্ত গলায় আশফিক বলল–

“তুই ঠিক আছিস মারশিয়াদ??

অস্ফুটস্বরে মারশিয়াদ বলল—

“হুম।”

আশফিক উৎসুক গলায় আবার বলল–

“যা হচ্ছে তা ঠিক হচ্ছে তো!!

“হুম।”

আশফিক জ্বলে উঠে।তপ্ত গলায় বলল–

“কী হু হু করছিস !!!
কথা বলতে পারিস না!!”

মারশিয়াদ নিরস গলায় বলল–

“ইচ্ছে করছে না।”

ফুসলে উঠে প্রদৃপ্ত গলায় ইনশিরাহ বলল–

“ওই অসভ্যটাকে বাসর করতে দিয়ে আসলে!!!

মারশিয়াদ উত্তেজিত গলায় বলল–

“স্টপ দিস ননসেন্স শিরা।”

মারশিয়াদ এর উচ্চ আওয়াজ এ কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না ইনশিরাহ।অবিচলিত ভাবে ট্রে তে করে নিয়ে আসা কফি তুলে দেয় মারশিয়াদ আর আশফিক এর হাতে।আশফিক চুমুক দেয় কফি মগে।সরল চোখে তাকিয়ে দেখে ওদের দুজনকে।মারশিয়াদ আর ইনশিরাহ এর সম্পর্ক আজোও বুঝতে পারে না আশফিক।কিন্তু তা প্রেম সম্পর্ক নয়।ওদের দুজনের মধ্যে যা আছে তা এর উর্ধ্বে।কিন্তু তাথে বিন্দুসম চিন্তিত নয় আশফিক।কারণ সে তার ভালোবাসার সরল স্বীকারোক্তি পেয়েছে।সে এখন আত্নবিশ্বাসী যে পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের একটি চীনের প্রাচীর এর মতো প্রাচীর ঘেরা ইনশিরাহ এর নরম হৃদয়ের কোথাও সে জায়গা পেয়েছে।তাই সে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।কিন্তু মারশিয়াদ!!
ওর মনের কোথাও এখনো রবীন্দ্রনাথের সেই অপরিচিতা গল্পের কল্যানীর মতো অনুপম রূপি মারশিয়াদ এর হৃদয়ের কোনো একটা বিশাল জায়গা জুড়ে এখনো প্রহর এর বাস।হয়তো অনুপম এর মতো প্রহর ওই অধর জোড়ায় খুশীর হাসি দেখে মারশিয়াদ ও ভাবে”” এই তো আমি জায়গা পাইয়াছি”।

বলা বাহুল্য আজ মারশিয়াদ এর জন্যই প্রহর আজরাহান এর জীবনে পুষ্পকানন ভরা বসন্ত হয়ে এসেছে।যার সৌরভে মাতোয়ারা আজরাহান আজ সব কিছুর উর্ধ্বে চলে গিয়েছে।
হয়তো মারশিয়াদ এর প্রতি এক নিরুঙ্কুশ ভালোবাসার কারণে আজরাহান কে একদম ই সহ্য করতে পারে না ইনশিরাহ।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here