বৃষ্টিস্নাত ভোর পর্বঃ২৭

0
4818

#বৃষ্টিস্নাত_ভোর
#পর্বঃ২৭
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি

নিজের ঘরের বেড সাইড কাউচে বসে মোবাইল এ গেম খেলছে আজরাহান।দরজা খোলা থাকায় তা হালকা ধাক্কা দিয়ে ভিতরে আসে প্রহর।আজরাহান এর পাশে দাড়ায়।আজরাহান মোবাইলে অক্ষি নিবদ্ধ করে স্বাভাবিক গলায় বলল–

“কিছু বলবি??

“হুম।”

“বল।”

প্রহর আনম্র গলায় বলল–

“আপনার মোবাইল টা একটু দিবেন??

“কেনো??

“হিমি কে কল করবো।রিশা ম্যাম বন্ধের জন্য কী পড়া দিয়েছে ভুলে গিয়েছি।”

আজরাহান ভ্রু কুচকে চোখ বাকিয়ে তাকায়।দৃঢ় গলায় বলল–

“স্কুলে কেনো যাস!!
চেহারা দেখাতে??

প্রহর চোখ মুখ কুচকে বিরক্তি নিয়ে বলল–

“যান,লাগবে না আপনার মোবাইল।”

প্রহর সরে আসতেই আজরাহান একটু ঝুঁকে প্রহর এর হাত টেনে ধরে ওর পাশে বসায়।মোবাইল টা ওর হাতে দিয়ে বলল–

“নাম্বার মনে আছে??

“হুম।”

প্রহর নাম্বার উঠিয়ে ডায়াল করে।আজরাহান গাঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে প্রহর এর দিকে।প্রহর এর দিকে হালকা ঝুঁকতেই প্রহর নিজেকে সরিয়ে নেয়।ভ্রু কুচকে ব্যস্ত গলায় বলল—

“এমন করছেন কেনো??

আজরাহান ফিসফিসানি গলায় বলল–

“তোকে আমি মোবাইল দিলাম তার বদলে তুই আমাকে কী দিবি??

প্রহর ভ্রু ক্রুটি করে চোখ বাকিয়ে দৃঢ় গলায় বলল–

“আমার কাছে টাকা নেই।”

“যা আছে তাই দে।”

প্রহর আজরাহান এর হাত নিয়ে ধপ করে মোবাইলটা ওর হাতে দিয়ে দেয়। দাঁত এ দাঁত খিচে চোয়াল শক্ত করে বলল–

“লাগবে না আপনার মোবাইল।আমি ছোট মার কাছে গেলাম।”

প্রহর উঠে দরজায় কাছে যেতেই আজরাহান দরজা আগলে দাঁড়ায়।দুই হাত চেপে ধরে প্রহর কে নিজের সাথে।প্রহর বড় বড় চোখ করে আস্তেব্যস্তে হয়ে বলল–

“রাহান ভাইয়া ছাড়েন।যেতে দিন আমাকে।”

আজরাহান প্রহর কে আরও শক্ত করে আড়ষ্ট করে।প্রহর শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রতঙ্গ মিশে আছে আজরাহান এর সাথে।নিজেকে ছাড়ানো ব্যস্ত চেষ্টা প্রহর এর।কিন্তু আজরাহান এর বলিষ্ঠ হাতের বাঁধন থেকে নিজের ছাড়ানো দুঃসাধ্য।প্রহর নিরুঙ্কুশ চেষ্টা করছে।আজরাহান মোহবিষ্ট হয়ে তাকিয়ে আছে প্রহর এর দিকে।আজরাহান এমনভাবে ওকে জড়িয়ে ধরেছে যে প্রহর শ্বাস নিতে পাড়ছে না।আজরাহান শান্ত গলায় বলল–

“এতো মোচড়া মোচড়ি করিস কেন তুই??

প্রহর আহত গলায় বলল–

“প্লিজ রাহান ভাইয়া যেতে দিন আমাকে!!

আজরাহান হালকা কাত হয়ে নিজের মুখ টা প্রহর এর কানের কাছে নিয়ে শান্ত গলায় বলল–

“প্লিজ স্টপ দিস মাই লিটেল হার্ট।আই ক্যান নো লংগার কনট্রোল মাই শেল্ফ।”

প্রহর থমকে যায়।আজরাহান গাঢ় গলায় আবার বলল—

“তখন কিন্তু তোকেই আমাকে সামলাতে হবে।”

প্রহর এর নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসে।এক উষ্ণ অস্থিরতা ভর করছে প্রহর এর শরীরে।আর সহ্য করতে না পেরে এক ভয়ানক কামড় বসিয়ে দেয় আজরাহান এর ঘাড়ে।মৃদু আর্তনাদ করে উঠে আজরাহান।হাতের বাঁধন শিথিল হতেই হালকা ধাক্কা মেরে আজরাহান কে সরিয়ে রূদ্ধশ্বাস এ বাইরে বেরিয়ে আসে প্রহর।আজরাহান কিছুটা শান্ত হয়ে ধীর পায়ে ড্রেসিং টেবিল এর সামনে এসে দাড়ায়।শার্টের উপরের দিকের দুটো বাটন খুলে কলার টা একটু ছড়িয়ে দিতেই দেখে প্রহর এর ছোট্ট ছোট্ট দাঁত গুলো একদম গেঁথে গিয়েছে।রক্ত বেরিয়ে এসেছে।হাত লাগাতেই চিনচিনে ব্যথা কামড়ে ধরে।আজরাহান অস্ফুট ভাবে বলল–

“পাগলি আমার।”

নিঃশ্বাস আটকে কোনো মতে নিজের ঘরে দৌড়ে আসে প্রহর।ঘন ঘন শ্বাস ফেলছে।বুকের ভিতর ঢিপঢিপ করছে।গলা শুকিয়ে একদম কাট হয়ে গেছে।বার বার শুকনো ঢোক গিলছে।ভয়ে ওর প্রানআত্না শুকিয়ে গিয়েছে।নিজেকে একটু সংযত করে লম্বা লম্বা শ্বাস টেনে নেয় প্রহর।ঝিমুনি দিয়ে ওর মস্তিষ্ক।ঠোঁটে ভারী কিছুর অস্তিত্ব মনে হতেই অবচেতন মনে ঠোঁটে হাত চালায় প্রহর।চোখের সামনে আনতেই দেখে তাতে রক্ত লেগে আছে।প্রহর এর চোখের টলটলে অশ্রু শ্রাবনের ধারা হয়ে বইতে থাকে।ভয়ে শিউরে উঠে প্রহর এর শরীর।আজরাহান ওকে ছাড়বে না।কিছুতেই ছাড়বে না।
দরজায় ক্যাচ করে আওয়াজ হতেই সামনে তাকায় প্রহর।বিস্ফোরিত চোখে তাকিয় দেখে আজরাহান দাড়িয়ে আছে।ওকে দেখেই কাঁদতে শুরু করে প্রহর।আজরাহান ধীর পায়ে এগিয়ে আসতে থাকে প্রহর এর দিকে।প্রহর অসাড় হয়ে দাড়িয়ে আছে।ক্রন্দনরত গলায় কাতর নয়নে বলল–

“আমি ইচ্ছে করে করিনি রাহান ভাইয়া।আই এম সরি।আর কখনো করবো না।সত্যি।”

আজরাহান প্রত্যুত্তর করে না।প্রহর এর সামনে এসে শক্ত এবং স্থির হয়ে দাড়ায়।ঘাড় টাকে একটু নিচু করে প্রহর ঠোঁট থেকে শুষে নিতে থাকে লেগে থাকা উষ্ণ নোনতা লহু।প্রহর নিশ্চল হয়ে দাড়িয়ে আছে।
আজরাহান বিচানায় বসে।প্রহর শান্ত হয়ে ওর পাশেই বসে।আজরাহান গাঢ় গলায় বলল–

“আমাকে ভয় পাস তুই??

প্রহর নরম গলায় বলল–

“নাহ।”

“তাহলে??

“আপনার পাগলামি কে ভয় পাই।”

আজরাহার দুবোর্ধ্য হাসে।ফিকে গলায় বলল–

“মা বলে আমি না কি পাগল।আর তুই আমার পাগলামির ঔষধ।”

আজরাহান ঘাড় ঘুরিয়ে প্রহর এর দিকে তাকায়।গাঢ় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ওর চোখে।এ চোখের চাহনিতেই প্রহর এর দম বন্ধ হয়ে আসে।মরে যেতে ইচ্ছে করে ওর।আজরাহান শান্ত গলায় বলল–

“তাহলে দে আমার পাগলামি ভালো করে।আমার হয়ে যা তুই প্রহর।”

প্রহর অধর প্রস্ফুটিত করে পরিস্ফুরণ গলায় বলল–

” আমার পরীক্ষা রাহান ভাইয়া।”

আজরাহান স্মিত হাসে আর বলল–

“দিলাম তোকে আমি সময়।কিন্তু এইবার মা বিয়ের কথা বললে তুই যদি না করিস তাহলে কিন্তু আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না।”

প্রহর আহত নয়নে তাকিয়ে থাকে আজরাহান এর দিকে।আজরাহান ওর এক হাত প্রহর এর বাম পাশে কোমরে আলগোছে রেখে নিজের মুখ গুজে দেয় প্রহর গলায়। আজরাহান এর উষ্ণ শ্বাস এ ধীরে ধীরে বিবশ হয়ে আসে প্রহর এর শরীর।আজরাহান প্রহর এর কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল–

“তুমি ছুঁয়ে দিলে হবো আমি নদী,তোমারই পাশে বয়ে যাব নিরবধি,
আমার অন্তরচিত্তের অর্পণ
তুমি মানেই আমার সমর্পণ।”

–তানভি

আমি আমার নিজেকে সমর্পন করেছি তোর কাছে।আমার যা ছিলো সবটা উজাড় করে দিয়েছি।এইবার তোর পালা।”

আজরাহান সোজা হয়ে বসে এর সুদীর্ঘ শ্বাস ফেলে।নম্র গলায় আবার বলল–

“আমি জানি তুই অনেক ছোট।হয়তো আমার অনুভুতি সবটা বোঝার ক্ষমতা তোর নেই।কিন্তু আমি!!
আমি নিজেকে তোকে ছাড়া এক মুহুর্তও ভাবতে পারি না।”

আজরাহান ওর ডানহাতের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে প্রহর এর গালে ঘষা মেরে স্বাভাবিক গলায় আবার বলল–

” আমি যেমন নিজেকে তোকে ছাড়া ভাবতে পারি না তেমনই আমাকে ছাড়া আমি তোকে শ্বাস নিতেও দিবো না।আমার শিরা উপশিরায় যেমন তোর বিচরণ ঠিক তেমন তোর ধমনিতে প্রবাহিত প্রতিটি রক্তবিন্দুতেও আমার বিচরণ।আমাকে ছাড়া না তুই এককদম আগে যেতে পারবি না এককদম পিছনে।”

প্রহর শুধু শুনছে।আজরাহান এর প্রতিটি কথা ওর বুক কাঁপিয়ে দিচ্ছে।বুকের ভিতরের পাজর গুলো একে অন্যের সাথে যেনো লড়াই করে চলছে।আজরাহান চোখের লাভা যেনো ওকে এখনই ভষ্ম করে দিবে।কিন্তু এ সবকিছুর জন্য ও নিজেই দায়ী।আজরাহান ওর নিজের জিনিসে অন্যের অধিকার একদম সহ্য করতে পারে না।একবার যা ওর হয়ে যাবে তার সত্ত্বা সে কাউকে দিবে না।আজরাহান ভালোবাসায় প্রহর নিজে সাড়া দিয়েছে।এখন আর পিছন ফেরার রাস্তা নেই।

আজরাহান বিচানায় পা উঠিয়ে প্রহর এর কোলে মাথা রাখে।প্রহর এর হাতে অধর ছুঁইয়ে বলল–

“বিয়েতে কনের মা বাবা সম্মতি লাগে।তুই কিন্তু এখনো তোর মা বাবার কথা বলিস নি।”

প্রহর তপ্ত গলায় বলল–

“কেনো!!
আপনি কী আমার মা বাবা কে বিয়ে করবেন না কী!!

“বিয়েতে তাদেরও প্রয়োজন।”

“তাহলে আপনার আর আমাকে বিয়ে করতে হবে না।যার মা বাবা আছে তাকে গিয়ে বিয়ে করেন।”

আজরাহান দুর্বোধ্য হাসে।ফিচেল গলায় বলল–

“তোর মা বাবা কে দিয়ে আমি কী করবো রে!!
আমার তো তোকে চাই।ফুলসজ্জা তো আমি তোর সাথে করবো।সেখানে তোর মা বাবার কী কাজ!!

“আপনি চুপ করবেন!!

আজরাহান সরল চোখে তাকিয়ে দৃঢ় গলায় বলল–

“আমি তোর অতীত জানতে চাইব না।কিন্তু যদি তোর অতীত আমার বর্তমান না ভবিষ্যৎ এ বাঁধা হয়ে দাড়ায় আমি কিন্তু কাউকে ছাড়ব না।”

প্রহর নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকে আজরাহান এর দিকে।আজরাহান মৃদু স্বরে আবার বলল—

“তুই এতো ঠান্ডা কেনো রে!!কাঁপিয়ে দিলি আমাকে।
যা এখন আমার জন্য কফি নিয়ে আয়।একদম গরম।ঠান্ডা হলে কিন্তু তোকে গেলাবো।”

প্রহর আলগোছে আজরাহান এর মাথা উঠিয়ে পা বাড়ায়।আজরাহান ডেকে বলল–

“রেড রোজ!!

প্রহর ঘুড়ে দাড়ায়।অস্পষ্টভাবে বলল–

“হুহ।”

“বালিশটা দে তো।”

প্রহর ভ্রু কুঁচকে চোখ বাকিয়ে তাকায়।তপ্ত গলায় বলল–

“আপনি সোজা হয়ে শুলেই তো পারেন।”

আজরাহান উল্টো হয়ে শোয়ার কারণে বালিস ওর পায়ের কাছে পড়ে আছে।আজরাহান শক্ত গলায় বলল–

“দিতে বলেছি দে।এতো কথা কেন বলিস??

প্রহর ছোট ছোট পা ফেলে এগিয়ে আসতে আসতে বলল–

“আমি কী আপনার চাকর!!
এখনই এতো কাজ করাচ্ছেন বিয়ের পর তো আমাকে কাজের মাসি বানিয়ে ছাড়বেন।”

আজরাহান হৃদয় গলানো হাসি হেসে বলল–

“তোকে আমি আমার হৃদয়ের রাণী বানাবো।”

প্রহর ঠোঁট বাকিয়ে ভেঙচি কাটে।

“হু।”

বালিশ এনে আজরাহান এর মাথার নিচে দিতেই আজরাহান প্রহর এর কোমরে চিমটি কাটে।প্রহর ঈষৎ আর্তনাদ করে বলল–

“ও মা গো!!
লুইচ্চা ব্যাটা।”

আজরাহান প্রদৃপ্ত গলায় বলল–

“কি বললি তুই!!
এইসব অশ্লীল শব্দ কোথায় থেকে শিখেছিস??

“হিমি বলেছে।যারা মেয়েদের গায়ে হাত দেয় আর পঁচা কথা বলে তাদের এইসব বলে।”

আজরাহান ভারী গলায় বলল–

“আমি পঁচা কথা বলি!!!

“তা নয়তো কী!!
লুইচ্চা ব্যাটা।”

“তবে রে ডিঙি নৌকা!!!

খিলখিলিয়ে হেসে উঠে প্রহর।আজরাহান কে বিছানা থেকে উঠতে দেখেই তড়িৎ বেগে দৌড় লাগায়।আজরাহান মৃদু হেসে দু হাত ভাজ করে বালিশের উপর রেখে তাতে মাথা রাখে।বুক ফুলিয়ে এক শ্বাস নেয়।অবচেতন মনেই বলে উঠে–

“তোর জন্য তো আমি সব কিছুই হতে রাজী মাই লিটেল হার্ট।”
,
,
,
রাতের শুরুতেই হিম করা বাতাস কড়া নাড়ে প্রকৃতির দ্বারে দ্বারে।শীতল বাতাসে কাঁপিয়ে তোলে মানুষের অস্থিমজ্জা।আবছা কুয়াশাচ্ছন্ন রাস্তায় গাড়িও ঢের সাবধানে চালাতে হয়।
মারশিয়াদ গাড়ি গতি কমিয়ে রেখেছে।ওর পাশেই ঘাপটি মেরে বসে আছে নুরাইসা।মধ্য রাত।ওদের গাড়ি চলছে।হেড লাইটের আলোয় কুয়াশাচ্ছন্ন রাস্তা সম্পূর্ন পরিষ্কার না হলেও ধোঁয়ার কুন্ডলি পাকিয়ে তার মাঝে রাস্তা তৈরি করে দিচ্ছে।

ঠান্ডায় দাঁতের সাথে দাঁতের ঘর্ষনে এক অদ্ভুত আওয়াজ করছে নুরাইসা।মারশিয়াদ এর চোখ পড়তেই গাড়ির জানালা বন্ধ করে দেয়।
গাড়ি থামিয়ে নিজের ব্লেজার জড়িয়ে দেয় নুরাইসার গায়ে।হকচকিয়ে নুরাইসা বলল–

” আরে আরে কী করছেন??

মারশিয়াদ রাশভারী গলায় বলল–

“আসার সময় শীতের কাপড় পড়ে আসেন নি কেনো??

“আমি কী জানতাম এতো ঠান্ডা পড়বে!!

মারশিয়াদ ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে।আসলে দিনের আলোয় বোঝা যায় না রাতে কতটা শীত পড়তে পারে।এখন সময়টাই এমন।

গাড়ি এসে থামে মারশিয়াদ এর বাসায়।ঘরের ভিতরের উষ্ণতা বাইরের থেকে বেশি।তাই নুরাইসা ব্লেজার টা কাউচে রেখে সেখানেই বসে।মারশিয়াদ শার্টের হাতা ফোল্ড করে ওর পাশ ঘেষেই বসে।চোখে হেসে বলল–

“আপনার ভয় করছে না??

নুরাইসা চোখের কোন ক্ষীন করে বলল–

“কেনো??

“এই যে একা এসেছেন আমার বাসায়!!

“তো!!

মারশিয়াদ মুচকি হেসে ফিচেল গলায় বলল–

“এখন যদি আমি আপনাকে কিছু করে বসি!!

নুরাইসা গলার স্বর মোটা করে ফ্যাসফ্যাস করে বলল–

“কী করবেন মি জান!!
রেপড!!
ও আপনার দ্বারা হবে না।”

ফিক করে হেসে দেয় নুরাইসা।মারশিয়াদ নিস্পলক তাকিয়ে দেখে।শান্ত গলায় বলল–

“আপনার বাবা যদি জানে আপনি এখানে এসেছেন??

নুরাইসা উচ্ছলিত গলায় বলল–

“কী করে জানবে!!
আমি দরজা ভিতর থেকে লক করে আলো নিভিয়ে দিয়েছি।বাবা ভাববে আমি ঘুমোচ্ছি।”

নুরাইসা আবারও আওয়াজ করে হেসে উঠে।কোনোমতেই ঠোঁটে হাত চেপে ক্ষীন কন্ঠে বলল–

“বাবা তো জানে না তার মেয়ে প্রেম করতে এসেছে।”

মারশিয়াদ স্মিত হাসে।স্বাভাবিক গলায় বলল–

“কি খাবেন বলেন??খিদে পেয়েছে নিশ্চয়ই!!

“আইসক্রীম।”

“পাগল হয়েছেন আপনি!!এই ঠান্ডায় আইসক্রীম !!

“হুম।আমি আইসক্রীম ই খাবো।”

“নো মিষ্টি।আইসক্রীম খাওয়া যাবে না।আর আইসক্রীম ঘরেও নেই।এতো রাতে বাইরে যেতে পারবো না।”

নুরাইসা ঠোঁট বাকিয়ে কপট রাগ দেখিয়ে আহ্লাদী গলায় বলল–

“মানুষ ভালোবাসার মানুষের জন্য আকাশের চাঁদ নিয়ে আসতে পারে আর আপনি আইসক্রীম আনতে পারবেন না!!!

“খোঁটা দিচ্ছেন!

“হু।”

“আচ্ছা বসেন।আমি নিয়ে আসছি।”

মারশিয়াদ উঠ কিছুদুর গিয়ে আবার থমকে দাড়ায়।আর বলল–

“বাসায় কিন্তু কেউ নেই মিষ্টি।থাকতে পারবেন তো একা??

নুরাইসা ফাঁকা ঢোক গিলে।ব্যস্ত গলায় বলল–

“না,না,না।আমার আইসক্রীম দরকার নেই।”

মারশিয়াদ অধর জোড়া ছড়িয়ে বিগলিত হাসে।স্বাভাবিক গলায় বলল–

“চলেন আপনাকে পিজ্জা খাওয়াই।”

কিচেন রেক এর উপর বসে পা দুলাচ্ছে নুরাইসা।মারশিয়াদ দুই হাতে ময়দা ছেনে যাচ্ছে।নুরাইসা জিঙ্গাসু দৃষ্টিতে বলল–

“ইনশিরাহ আপু কোথায়??

“ও যশোর গিয়েছে।”

“একা??

“নাহ।সাথে আশফিক আছে।”

নুরাইসা চোখ বড় বড় নির্মিমেষ তাকিয়ে থাকে মারশিয়াদ এর দিকে।মারশিয়াদ অধর কোনে হেসে বলল–

“কী হয়েছে মিষ্টি!!এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো??

নুরাইসা এক বৃহৎ ঢোক গিলে নরম গলায় বলল–

“”আপনি ইনশিরাস আপু আশফিক স্যার সাথে যেতে দিলেন!!!

“কেনো!!
তাতে কী??

“তাদের তো বিয়ে হয়নি!!

“বিয়ে তো আমার আপনারও হয়নি।”

নুরাইসা লজ্জা পায়।মাথা নিচু করে ফ্লোরে তাকায়।মারশিয়াদ শান্ত গলায় বলল–

“যেকোনো সম্পর্কের ভিত্তি হলো বিশ্বাস।বিশ্বাসবিহীন সম্পর্ক মাঝি বিহীন নৌকার মতো।যার গন্তব্য নেই।”

নুরাইসা দূর্বল গলায় বলল–

“সরি জান।”

“ইটস ওকে।
আমি আমার বোন কে বিশ্বাস করি।আর কী বলেন তো!!
ও একদম আপনাদের মতো নয়।আলাদা।”

নুরাইসা ভাবুক চোখে তাকিয়ে থাকে মারশিয়াদ এর দিকে।পিজ্জা তৈরির প্রথম ধাপ শেষ হলে তা ওভেন এ দেয় মারশিয়াদ।টাইম এন্ড পাওয়ার সেট করে দেয়।নুরাইসা নম্র গলায় বলল–

“জান!!

“হু।”

“আপনি রান্না করতে পারেন??

“হ্যাঁ।মম ছোটবেলা থেকেই আমাদের ঘরের খাবার খাওয়ানো টা পছন্দ করতেন।বাইরের খাবার আমাদের জন্য এলাউড ছিলো না।আর এখানে এসে একা থাকতে থাকতে অনেক কিছু শেখা হয়েগেছে।”

নুরাইসা ফিকে গলায় বলল–

“আমি যে রান্না করতে পারি না।”

মারশিয়াদ নুরাইসার কাছে এসে নাকে নাক ঘষে বলল–

“আমি কী আপনাকে রান্না করার জন্য বিয়ে করবো নাকি!!
আমি তো আপনাকে আমার জন্য বিয়ের করবো।”

মারশিয়াদ নুরাইসার কোমর ধরে ওকে রেক এর উপর থেকে নামায়।বলল–

“চলেন আপনাকে একটা জিনিস দেখাই।”

একটা অ্যালবাম বের করে তা দেখতে দেয় নুরাইসা কে।একের পর এক উল্টে তা দেখে চলছে নুরাইসা।মারশিয়াদ নিবিড়ভাবে দেখছে নুরাইসা কে।নুরাইসার গালের উচু অংশটা একদম গোলাপি রঙ ধারন করেছে।মারশিয়াদ ফিচেল হেসে বলল–

“পিংকি!!!

নুরাইসা ধপ করে চোখ ফেলে মারশিয়াদ এর দিকে।ঠোঁট ফুলিয়ে বলল–

“আমাকে আর পিংকি বলবেন না??

“কেনো??

নুরাইসা আজরাহান এর সাথে ঘটা ঘটনার কথা বলতেই হা হা করে হেসে উঠে মারশিয়াদ।মারশিয়াদ আবার বলল—

“পিংকি!!

“সরেন।কথা বলবো না আমি আপনার সাথে।”

মারশিয়াদ স্নিগ্ধ গলায় বলল—

“ওকে ওকে।আর বলবো না।আপনি বসেন।পিজ্জা হয়েছে আমি নিয়ে আসছি।”

পিজ্জা খেতে খেতে নুরাইসার চোখ গিয়ে থামে মারশিয়াদ এর লিভিং রুমের পূর্ব পাশের দেয়ালে।যেখানে একটা গিটার ঝুলানো।নুরাইসা উচ্ছ্বাসিত হয়ে গিটার এর কাছে গিয়ে দাড়ায়।নরম গলায় বলল–

“এইটা আপনার??

“নাহ।শিরার।”

“ইনশিরাহ আপু গিটার বাজাতে পারে??

“হ্যাঁ।তিনবছর শিখেছিলো।”

“আপনি পারেন না!!

“একটু।”

“তাহলে আমাকে একটা গান শোনান।”

“আর ইউ ক্র্যাজি মিষ্টি!!আমি আর গান!!অসম্ভব।”

নুরাইসা জেদ ধরে বসে।অনুনয় করতে থাকে মারশিয়াদ কে।বেচারা মারশিয়াদ ফিকে গলায় বলল–

” ওকে ওকে মেরি জান।বাট গান শুনে আবার বেহুশ হয়ে পড়ে না যান।তখন কিন্তু এই মাঝরাতে আমাকে বিপদে পড়তে হবে।”

মারশিয়াদ গিটার হাতে নেয়।কাউচে গিয়ে বসে। ওর পাশেই বসে নুরাইসা।হাসি হাসি মুখ নিয়ে নির্নিমেষ তাকিয়ে দেখে মারশিয়াদ কে।মারশিয়াদ গিটারে আঙ্গুল চালায়।

” হা কারদেনা ছোটি মোটি গালতিও কো মাফ
ইতনা সা বাস এহসান কারদে
তু জো হ্যায় নারাজ মেরি শাসে না চালে
মান যা তু জিনা ইয়ে আসান কার দে

তু খোল মেরি দিলকো অর লেলে তালাসি
কোয়ি ভি মিলেগা না তেরে সিবা…….

তেরি আখোমে দেখতা যো পেয়ায মুঝে
মেরি আখোমে ভি তুঝে দেখতাহে ক্যায়া।।

নুরাইসা উঠে এসে মারশিয়াদ এর পায়ের উপর বসে।মারশিয়াদ এক হাত দিয়ে আলগোছে ধরে নুরাইসা কে।মারশিয়াদ এর ঠোঁটে এক গভীর চুমু খায় নুরাইসা।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here