#বৃষ্টিস্নাত_ভোর
#পর্বঃ৪
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি
স্বচ্ছ কাচের ফাঁকে ওপাশের দৃশ্য একদম পরিষ্কার দেখা যায়।রেষ্টুরেন্টের বাইরেই খানিকটা দূরে জোড়ায় জোড়ায় কপোত কপোতি দাড়িয়ে আছে।এইটা নিত্যনৈমিত্তিক দৃশ্য।শহরাঞ্চলের প্রায়ই এই দৃশ্যের সম্মুখিন আমরা সবাই কমবেশি হই।তবে বিশেষ দিনগুলোতে এর মাত্রা আরো বেড়ে যায়।
আজরাহান আর আশফিক প্রায় আধ ঘন্টা যাবৎ বসে আছে রেষ্টুরেন্টে।দে আর কাজির ব্রাদারস।আশফিক আজরাহান এর ছোট চাচার একমাত্র ছেলে।আশফিক এফোড় ওফোড় করে প্রায় তিন বছরের বড় আজরাহান থেকে।দুই বছর আগেই মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে।আজরাহান এখনো অধ্যয়নরত।তিন বছর আগেই আশফিক ওই কলেজের প্রফেসর হিসেবে জয়েন করেছে আর আজরাহান মাত্র কয়েকমাস।বয়সের সামান্য পার্থক্য থাকলেও দুই ভাই একে অন্যের হৃদয়ের আধখান।সকল ধরনের সামাজিক আর অসামাজিক কাজ দুই ভাই একসাথেই সম্পাদন করে।
আজরাহান বিরক্তিকর ভাব ফুটিয়ে ক্ষীন কন্ঠে বলল–
“কিরে কখন আসবে তোর শিরনি!!
সেই কখন থেকে বসে আছি।মেয়েদের এই একটাই সমস্যা এরা কোথায় যাওয়ার সময় দীপিকা পাডুকোন সাজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।”
“তোর মুখটা একটু বন্ধ কর ভাই।এমনিতেও তোকে দেখলে ও ক্ষেপে যাবে।”
আজরাহান অন্যমনষ্ক হয়ে কাচ গলিয়ে বাইরে তাকায়।আড়চোখে নজরে দেখতে পায় ওদের দিকেই কেউ এগিয়ে আসছে।শাড়ী তে মেয়েদের সত্যিই মায়ামতী লাগে।মেয়েটি ওদের সামনেই বসে।হালকা হেসে বলল-
“কেমন আছো??
আশফিকও আন্তরিকতার সাথে মৃদু হেসে বলল—
“ভালো।
এতো দেরি করলে যে??
“এডিটর এর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।”
“ও আচ্ছা।”
ওদের কথা শেষ হতেই আজরাহান বলল—
“আমি তো ভাবলাম ময়দা মাখতে দেরি হয়েছে।”
ইনশিরাহ ভ্রুকুটি করে।কিন্তু আর কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না।আশফিক হালকা কেশে আজরাহান এর হাতে গুতো দিয়ে ওকে চুপ করতে ইশারা করে।
ইনশিরাহ কপাল কুচকে বলল–
“তোমাকে না বলেছি এই ফ্লাটার কে নিয়ে আসতে না।”
আজরাহান ওর মোবাইল স্ক্রল করছিলো।ইনশিরাহ এর কথায় ওর দিকে চোখ বাকিয়ে তাকায়।আর বলল–
” ইনডায়রেক্টলি কী নিজের কথা বলছো নাকি??
আমার আবার এইসব শিরনি মিরনি তে কোনো ইন্টারেস্ট নেই।”
“হোয়াট ডু ইউ মিন??
“আই মিন,,,
আজরাহান কে থামাতেই আশফিক বলল—
“তুই থামবি।কী শুরু করলি দু জনে!!
“তোমার ভাইকে বলো চুপ করতে।”
“ওকে।আই কোয়াইট।”
আশফিক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।আজরাহান একবার শুরু হলে আর থামবার নাম নেয় না।ইনশিরাহ গাঢ় নজরে আজরাহান কে দেখে।চোখ ফেরানো দায়।কিন্তু এই ছেলের স্বভাব!!!
ইনশিরাহ মুখ বাকিয়ে বলল–
“দুই ভাই আর কলেজ পেলে না।মেয়েদের কলেজে গিয়ে উঠলে।”
আজরাহান থামতে গিয়েও আবার বলল–
“তুমি কী আমাদের গায়ে প্লে বয় এর ট্যাগ লাগাতে চাও না কী??
তাহলে ভেবে নিও।নাহলে কিন্তু আমি তোমাকেও ছাড়বো না।”
“ভাই,তোর দুইটা পায়ে পড়ি।চুপ কর এইবার।”
আজরাহান গম্ভীর কন্ঠে বলল–
“তাহলে তোর শিরনি কে বল আমার পিছু না লাগতে।আজরাহান কারীম সহজে কাউকে ছেড়ে দেয় না।”
ইনশিরাহ কিছু বলতে গেলে আশফিক ওকে থামিয়ে বলল–
“ইনশিরাহ প্লিজ।চেঞ্জ দ্যা টপিক।
তুমি কী বলতে ডেকেছো তা বলো।”
ইনশিরাহ নিজেকে সংযত করে আজরাহান এর দিকে ক্ষীপ্র দৃষ্টিতে তাকায়।এই ছেলেটায় চেহারায় যতটা মায়া, মনে তার চেয়ে দশ গুন বেশি শয়তানি।ইনশিরাহ ওর হ্যান্ডব্যাগ থেকে একটা পত্রিকার অংশবিশেষ বের করে আশফিক এর সামনে রাখে।সেখানে একটা খবর ছাপানো।খবরটা হেডলাইন””ঘুমন্ত স্বামীকে রেখে প্রেমিকের সাথে স্ত্রীর পলায়ন””।আশফিক ডিটেলস পড়ে।ইনশিরাহ একজন জার্নালিষ্ট।এই ধরনের খবর রোজ ওর কাছে আসে।আশফিক পড়া শেষ করে ইনশিরাহ এর দিকে কৌতূহল দৃষ্টিতে বলল–
“এখানে নতুন কী???
ইনশিরাহ শান্তভঙিতে বলল–
“সম্পূর্ন নিউজ টা ফেইক।”
আশফিক কপাল ভাজ করে বলল–
“হোয়াট???
তুমি কী করে বুজলে??
ইনশিরাহ এক শীতল শ্বাস ছাড়ল।এর ফাঁকেই আজরাহান কে একবার দেখলো।আজরাহান মোবাইল রেখে ওর দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ করে।ইনশিরাহ বলল–
“এইটা একটা যৌতুকের ঘটনা।মেয়েটার সাথে ছেলটার আট মাস আগে বিয়ে হয়।ভালোই কাটে দু মাস।কিন্তু এর পরেই নানা বাহানায় ছেলের বাড়ির লোক মেয়ের বাবার কাছে টাকা চাইতে থাকে।কয়েকবার দেওয়ার পরও তাদের চাওয়া আরো বেড়ে যায়।আর সমস্যার শুরু হয় মেয়েটা কনসিভ করলে।ওর স্বামী অন্য নারীতে আসক্ত হয়ে পড়ে।এদিকে টাকার চাপ অন্যদিকে অন্য নারীর সাথে স্বামীর অবাধ মেলামেশা মেয়েটা কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারে নি।তাই প্রতিবাদ করে।আর তাতেই বিপত্তি বাধে।মেন্টাল টর্চার এর সাথে ফিজিক্যাল টর্চারও শুরু হয়।গরম তেল ঢেলে দেয়।যাতে মেয়েটার শরীরের একাংশ জ্বলসে যায়।বাচ্চাটাকে বাচানো যায় নি।”
সম্প্রতি ২০১৮ সালে যৌতুক নিরোধ আইন পাশ হয়।বিয়ে উপলক্ষে বর বা কনে যেকোন পক্ষের লোকজন একে অন্যের কাছ থেকে বিয়ের আগে,বিয়ের সময় অথবা বিয়ের পরে কোনো শর্ত সাপেক্ষে বা অহেতুক অযুহাত দেখিয়ে কিছু দেওয়া নেওয়া কে যৌতুক বলে।যৌতুক দেওয়া ও নেওয়া দুটোই সমান অপরাধ।তাই যৌতুকের অপরাধ কে শাস্তি অযোগ্য অপরাধ বলে।যৌতুক নেওয়ার শাস্তি হলো ১ থেকে ৫ বছরের কারাদন্ড অথবা ৫০০০০ টাকার অর্থদণ্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারে।যারা যৌতুকের দেওয়া নেওয়ার সাথে জড়িত থাকবে তাদেরও একই শাস্তি।এমন কী যারা যৌতুকে উদ্বুদ্ধ করবে তাদের ও একই শাস্তি প্রদান করা হবে।প্রতিবছর হাজারো নারী নির্যাতিত হয় যৌতুক নামে বিভীষিকার জন্য।
আশফিক চিন্তিত মুখে জিঙ্গাসু দৃষ্টিতে বলল–
“কিন্তু তুমি এইসব কী করে জানো??
“মেয়েটা এখন আমার কাছে।বার্ন ইউনিট এ ভর্তি করিয়েছি।”
“ইশশশ!!
না জানি কত কষ্ট হচ্ছে মেয়েটার??
“মেয়েটার দোষ কী জানো!!!
সে একজন পুরুষকে ভালোবেসেছে।পুরুষ নামের হায়েনা কে বিশ্বাস করেছে।যে ওকে খুবলে খেয়ে এখন ছুড়ে ফেলে দিয়েছে।”
কথা গুলো বলতে বলতে ইনশিরাহ এর অক্ষিপল্লব ভিজে উঠে।নয়নের কোন বেয়ে কয়েক ফোটা শীতল অশ্রুও গড়িয়ে পড়ে।
আজরাহান গভীরভাবে তাকিয়ে দেখে ইনশিরাহ কে।এই মেয়েটা একদম নারকেল এর মতো।উপরটা যতো শক্ত ভিতরটা তারচেয়ে দ্বিগুন নরম।ওর ধ্যান ফিরাতেই আজরাহান বলল—
“ভুল বললে শিরনি।সব পুরুষ কিন্তু এক নয়।এই যে আমাকেই দেখো।আমি কিন্তু ভুলেও কাউকে ফেরায় না।তুমি একবার ট্রাই করে দেখতে পারো।”
ইনশিরাহ আবার জ্বলে উঠে।এই ছেলে কখনো শোধরাবে না।গলা খেকিয়ে বলল–
“কী সমস্যা তোমার???
আজরাহান হেসে বলল–
“আই হ্যাব নো প্রবলেম।”
“তোমাদের মতো পুরুষদের আমি ভালো করেই চিনি।নারীরা তোমাদের জন্য খেলার পুতুল মাত্র।”
আশফিক ভয়ার্ত হয়ে বসে আছে।ইনশিরাহ পুরুষ বিদ্বেষী না হলেও পুরুষদের প্রতি ওর ধারনা বেশি একটা সুবিধার না।এক রকম এড়িয়ে চলে।সারাদিন এই পুরুষদের সাথেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পায়ের সাথে পা মিলিয়ে কাজ করে চলে।কিন্তু দিনশেষে কোথাও একটা শংকা,কোথাও একটা অপূর্নতা গ্রাস করে চলে।পাঁচ বছর ধরে ওর আর আশফিক এর মধ্যে একটা সুদৃঢ় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে যা নিছক বন্ধুত্বে আবদ্ধ।আশফিক এগিয়ে নেওয়ার বহু চেষ্টা করছে কিন্তু ইনশিরাহ এর দিক থেকে কোনো সাড়া সে পায় নি।কিন্তু আশফিক হাল ছাড়ে নি।ওর যেকোনো কাজে দেবদূত এর মতো ওর পাশে থাকে।
ইনশিরাহ নরম কন্ঠে বলল–
” আই হোপ এই নিউজ টা” দ্যা ব্ল্যাক শ্যাডো”এর নজরে পড়ে।একমাত্র সেই কিছু করতে পারবে।”
আজরাহান ব্যঙ্গ করে বলল–
“বাহ!!!
পুরুষ বিদ্বেষী এখন “দ্যা ব্ল্যাক শ্যাডো” এর প্রেমিকা।”
ইনশিরাহ তার চিকন নাকের আগা ফুলিয়ে বলল–
“এখানে প্রেমিকার কী দেখলে!!!
এখন ওই মেয়েটার সাথে হওয়া অন্যায়ের শাস্তি শুধু সেই দিতে পারে তাদের।”
আজরাহান হো হো করে হেসে উঠে।আর বলল–
“বেচারার তো আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই।মেয়েদের জন্য জীবন জলাঞ্জলী দিবে শুধু।”
ইনশিরাহ এইবার ফুসে উঠে।গলা চড়িয়ে আশফিক কে বলল—
“আজকের পর তোমার এই ভাই কে একদম আমার সামনে আনবে না।আসি আমি।”
ইনশিরাহ উঠে চলে যেতে গেলে আজরাহান হাসতে হাসতে আবার ওকে পিছু ডেকে বলল–
“শিরনি,,,,আমার ভাই কে কী শিরনি আনতে প্লেট নিয়ে পাঠাবো না তুমিই দিবে????
ইনশিরাহ হন হন করে বেরিয়ে যায় সেখান থেকে।আশফিক মৃদু রাগাম্বিত হয়ে বলল—
“তোর কী সমস্যা রে??
তুই কী চাস আমি কুমার ই মরে যাই।”
“ওই মেয়ের আসায় থাকলে তোকে কুমার ই মরতে হবে।”
“কেনো পাগলামো করিস তুই।জানিস তো ও একটু অন্যরকম।”
“জানি।”
“তাহলে???
“তাহলে কী???
আশফিক আজরাহান কে ভালো করে দেখে।সাধারনত আজরাহান এইরকম করে না।
“প্রহর এর সাথে কিছু হয়েছে??
আজরাহান কাঠ কাঠ গলায় বলল—
“ডিঙি নৌকার বিয়ে করার স্বাদ জেগেছে।”
“এইটা নিয়ে ভাবার কিছু নেই।বিয়ে তো একদিন হবেই।”
“ওর বিয়ের এখনো বয়স হয়নি।”
“তো!!
একদিন তো হবে।”
“আমার ডিঙি নৌকার মাঝি হওয়ার একচ্ছত্র অধিপতি শুধু আমি।”
“এতই যখন চিন্তা এইসব করে বেড়াস কেন তুই।”
আজরাহান ভ্রু কুঞ্চি করে মিনমিনে চোখে বলল–
“কী করে বেড়াই আমি!!
এক ছিলো শাহজাহান আর আমি এই যুগের আজরাহান। হাজার রানী থাকলেও আমার ভালোবাসার তাজমহল শুধু আমার মমতাজ এর জন্যই।”
এর মধ্যেই মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠে আজরাহান এর।আজরাহান উঠে দাড়ায়।
“কোথায় যাচ্ছিস??
আজরাহান মোবাইল এর স্ক্রিন দেখিয়ে বলল–
“মারমেইড কল করেছে।যাই তার সাথে একটু সাতার কেটে আসি।”
“তোর এই স্বভার আর ঠিক হবে না???
“কথা হবে দেখা হবে,প্রেমে প্রেমে মেলা হবে,
কাছে আসা আসি,আর হবে না।
চোখে চোখে কথা হবে,ঠোঁটে ঠোঁটে নাড়া দেবে,
ভালোবাসা বাসি আর হবে না।
শত রাত জাগা হবে,থালে ভাত জমা রবে
খাওয়া দাওয়া কিছু মজা হবে না।
হুট করে ফিরে এসে,লুট করে নিয়ে যাবে,
এই মন ভেঙে যাবে জানো না
আমার এই বাজে স্বভাব,কোনোদিনও যাবে না।।
“চলি ব্রাদার।”
,
,
,
ড্রয়িং রুমে বসে আছে নাবীন খান পাশে নবনীতা খান। তার বিপরীত দিকেই আজরাহান আর সামান।আর এক পাশের কোনায় লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বসে আছে নন্দিতা।রাজনৈতিক ,সামাজিক,অর্থনৈতিক কোনো টপিক্স বাদ পড়লো না তাদের আলোচনায়।সামান বিরক্ত হলেও তা প্রকাশ করার অবকাশ নেই।আজ অনেকদিন পর হবু জামাতা কে পেয়ে খান পরিবার খুশিতে গদগদ।আজরাহান এর বেশ বিরক্ত লাগছে।নেহাৎ ওর ভাই একা আসতে ভয় পাচ্ছিলো তাই এসেছে।মুখে কোনো রকম প্রতিক্রিয়া না করে স্মিত হেসে বলল—
“আনটি,,নুরাইসা বাসায় নেই??
নবনীতার চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।উচ্ছলিত কন্ঠে বললেন—
“ও তো ওর ঘরেই আছে।তুমি যাও।”
আজরাহান কালনিপাত করলো না।এমনিতেই এইসব অহেতুক কথাবার্তা ও পছন্দ করে না।আজরাহান ধীর পায়ে নুরাইসার ঘরের সামনে যায়।দরজা খোলা পেয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ে।নুরাইসা কোথাও নেই।ওয়াশরুম থেকে পানির আওয়াজ আসতেছে।ও বুঝতে পারে নুরাইসা সম্ভবত ওয়াশরুমে।সবকিছু নতুন করে সাজানো।অবশ্য এর আগেও ও একবার এই ঘরে এসেছিলো।যেদিন ওই অযাচিত ঘটনা টা ঘটে।আজরাহান নরম পায়ে জানালার কাছে গিয়ে দাড়ায়।ঠান্ডা একটা বাতাস আসছে আর সাথে একটা মিষ্টি গন্ধ।মনে হয় কোনো ফুলের।কিন্তু ঠিক কী ফুল তা আজরাহান বুঝতে পারছে না।
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আজরাহান কে দেখে চক্ষুচড়ক গাছ নুরাইসার।বিস্ফোরিত চোখে বলল—
“আপনি???
আজরাহান হালকা হেসে আস্তে আস্তে সামনে পা বাড়ায়।নুরাইসাও পিছন দিকে সড়ে যেতে থাকে।হালকা কম্পন শুরু হয় ওর শরীরে।তা ভয়ে না অন্যকিছু তা নুরাইসা জানে না।পরক্ষনেই ওর মনে পড়ে ওয়াশরুমে ওড়না নিয়ে যাওয়া হয়নি।বিছানার দিকে চোখ যেতেই দ্রুত ওড়না নিয়ে গায়ে জড়ায়।আর ঘুরতেই দেখে আজরাহান একদম ওর সামনেই।শুধু ইঞ্চির দূরত্ব বললেই চলে।নুরাইসা হালকা বেডের পাশ কাটিয়ে পিছনে যেতেই দেয়ালে পিঠ ঠেকে।আজরাহান ওর এক হাত নুরাইসার মাথার কাছের দেয়ালে আর অন্য হাত কোমড়ে সাইডের দেয়ালে রেখে ওকে তার মাঝেই আবদ্ধ করে।মিষ্টি সুরে বলে—
“গোসল করলেন বুঝি মারমেইড!!
খুব গরম তাই না???
নুরাইসার শরীর রাগে রি রি করছে।লালচে চোখে তাকিয়ে আছে আজরাহান এর দিকে।আজরাহান আবার বলল–
“আপনার তো পানি খুব পছন্দ তাই না মারমেইড।ওই যে ফার্স্ট টাইম যখন আমাদের দেখা হয় তখন ও পানিতেই ছিলেন আপনি তাই না!!!!
কম্পনরত কন্ঠে নুরাইসা ক্ষীপ্ত হয়ে বলল–
“আপনার সাহস কী করে হলো আমার ঘরে আসার??
বের হোন আমার ঘর থেকে।বের হোন।”
“আপনাকে রাগলে কিন্তু আরো বেশি হট লাগে মারমেইড।”
নুরাইসার ফোস ফোস করে নিঃশ্বাস ছাড়ছে যার উষ্ণতা আজরাহান এর বুক ছুয়ে যাচ্ছে।ওর ইচ্ছে হচ্ছে এখনই আজরাহান এর উপর কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় যেনো ও পুড়ে ওর ছাইগুলো ফ্যানের বাতাসে উড়ে জানালা দিয়ে চলে যায়।
আজরাহান নুরাইসার আরেকটু কাছে এসে বলল–
“শুনেছি আপনার না কী পিংক কালার খুব পছন্দ।তাই বলে কী সেটাকে সবাইকে দেখিয়ে বেড়াতে হবে!!!
নুরাইসার বুকটা ধক করে উঠে।ঘাড় ঘুড়িয়ে জামার গলাটা আরেকটু টেনে নেয়।এই লোকটা আস্ত একটা বেয়াদব।নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে আজরাহান কে একটা ধাক্কা মেরে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে।গলা ফেড়ে চিৎকার করে বলল–
“বাবা,বাবা
এই অসভ্য লোকটা কোন সাহসে আমার ঘরে গিয়েছে??
সবাই হকচকিয়ে উঠে।সানায়া বিস্মিত কন্ঠ বলল—
“ছিঁ নুরা,এইসব কী ধরনের কথা!!!
ও না তোমার টিচার।”
“কিসের টিচার।আস্ত একটা শয়তান লোক।আর এই সবকিছুর জন্য বাবা দায়ী।
কে বলেছে এই লোকটাকে প্রফেসর বানাতে আমাদের কলেজের!!!
কী পড়ায় সে??
কলেজে আসে শুধু র্্যাম্প ওয়াক করতে।সারা কলেজ জুড়ে ঘুরে বেড়ায়।ক্লাসে এসে কী করে জানো??পড়ানোর নাম করে মেয়েদের সাথে আড্ডা দেয়।চুল গুলো এপাড় থেকে ওপাড় নেয়।আর ওই যে জাম রঙের ঠোঁট দুটো।ঠোঁট বাকিয়ে শুধু হাসে।আর আমাদের ক্লাসর মেয়েগুলোও এক এক টা আস্ত শাখচুন্নি।আজকাল তো কলেজ আসেই এনাকে একনজড় মন ভরে দেখার জন্য।”
সবাই হা করে তাকিয়ে আছে।যে মানুষটাকে ও একদম সহ্যই করতে পারে তার কতো নিখুত র্বননা দিলো।নিজের অজান্তেই নুরাইসা আজরাহান এর সৌন্দর্য অবলোকন করে তা সবারই বোধগম্য হলো।অনবরত কথা বলায় নুরাইসার গলা শুকিয়ে যায়।ঠোঁট লেগে আসে।জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আবারও নাবীন খানের দিকে কঠিন গলায় বলল–
“যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একে আমাদের কলেজ থেকে বিদায় করো।নাহলে একটা মেয়েকেও পাশ করাতে পারবে না।”
আজরাহান ওর পিছনেই দাড়িয়ে সব শুনছিলো।হালকা কেশে বলল–
“আমি আসি ভাইয়া।আমার কাজ আছে।তুমি ভাবী কে সময় দাও।”
আজরাহান নুরাইসার পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় ওর কানেকানে বলল–
“আসি মারমেইড।আবার দেখা হবে।”
মি.আর মিসেস খান ওকে ডিনার করে যেতে বলে।কিন্তু ও না করে।
বারান্দায় দাড়ানো নন্দিতা।হালকা চাঁদের আলোয় মেয়েটাকে একদম অপ্সরী লাগছে।হালকা বাতাসে খোলা চুল গুলো তির তির করে উড়ছে।সাধারণ সাজেও কোনো মেয়ে এতো সুন্দর কী করে হয়!!!!
নন্দিতার হালকা হেসে বলল–
“পাগলিটার কান্ড দেখেছো!!
আজরাহান এর দূর্নাম করতে গিয়ে ওর সুনাম করে চলছে।”
নন্দিতা আরেক চোট হেসে নেয়।সামান নিস্পলকভাবে দেখে।মেয়েটার হাসিতে অদ্ভুত মায়া আছে।যেনো এক মুহূর্তেই হারিয়ে যাওয়া যায়।সামানের কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে ওর দিকে তাকাতেই দেখে সামান নন্দিতার দিকে ধ্যানের মতো তাকিয়ে আছে।
“এই,কী দেখছো এমন করে??
“তোমাকে।”
কথাটা বলেই নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে সামান।কি বললো সে।নন্দিতাও বেশ লজ্জা পায়।স্মিত হেসে আবার সামনের দিকে তাকায়।সামান স্বাভাবিক কন্ঠে বলল—
“আজরাহান এর হয়ে আমি সরি।আসলে ও এখনো ছেলেমানুষ।তাই কখন কী করে বসে!!
“আরে না।আমার এই টিকটিকির মতো বোনটাকে শেরনি তো তোমার ভাই ই বানায়।এই জন্যই তো বাবা ওকে ওতো পছন্দ করে।”
“আর আমাকে???
নন্দিতা নিগূঢ় দৃষ্টি রাখে সামানের চোখে।চোখে চোখেও যে কথা হয় তা নন্দিতা আজ বুঝতে পারে।নন্দিতা চোখে হাসে।ফিরে তাকায় আকাশ পানে।আজ আকাশটা ভীষন সুন্দর।টিপটিপ জ্বলা তারার হাতছানি।রূপালি আলোয় আকাশ ভরা।
চলবে,,,
(বিঃদ্রঃ
আজরাহান কে কী মনে হয়😜😜???