বৃষ্টিস্নাত_রাত্রি লেখকঃ আবির খান পর্বঃ ০৫

বৃষ্টিস্নাত_রাত্রি
লেখকঃ আবির খান
পর্বঃ ০৫
আমি বেল দিতেই অবনী দ্রুত দরজা খুলে। ওকে দেখে আমি পুরো “থ”। সাথে ও আমাদেরকেও দেখে পুরো অবাক। অবনী বেশ অবাক কণ্ঠে বলে উঠে,

~ আপু তুমি?
~ অবনী তুই এখানে? (রিনা)

মাঝ দিয়ে আমি আর আসিফ স্তব্ধ হয়ে আছি। আসলে আমি অবনীকে দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। নতুন ড্রেসে ওকে এত্তো সুন্দরী লাগছিল মানে বলার বাইরে। একদম কোন রূপ নগরের রূপসী লাগছিল ওকে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো অবনী আর রিনা একে অপরকে চিনে কিভাবে! আমরা সবাই ভিতরে আসলে আসিফ সবার আগে বলে উঠে,

— রিনা তোমরা একে অপরকে চিনো কিভাবে?
~ আমি ওর খালাতো বোনের বান্ধবী। ওই যে লামিয়া আছে না ওর কাজিন হয় অবনী। আমরা তিনজন আগে একসাথে শপিং এ যেতাম। অবনীকে সাথে নিয়েই লামিয়া শপিং এ আসতো। তখন থেকেই ওকে চিনা। ওর বাসায়ও গিয়েছি লামিয়ার সাথে অনেকবার।
— বলো কি! বাহ! আমি তো পুরো অবাক।

এদিকে অবনী কান্নাসিক্ত কণ্ঠে অস্থির হয়ে রিনার কাছে এসে বলে,

~ আপু আপু প্লিজ তুমি পাপা মাম্মিকে বইলো না আমি এখানে আছি৷ নাহলে ওনারা আমাকে খারাপ লোকের সাথে আবার বিয়ে দিবে৷ প্লিজ বলো না।

রিনা অবনীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ওকে অভয় দিয়ে বলে,

~ তুই কোন চিন্তা করিস না। আমি কিছুই বলবো না। নীল ভাইয়ার কাছে তুই সেইফ আছিস। আমাদের কোন চিন্তা নাই৷ সমস্যা গেলে আমার বাসায় ফিরে যাস। লাগলে আমি আর ও গিয়ে তোকে দিয়ে আসবো। বলবো আমাদের কাছে ছিলি। কি ঠিক আছে তো?
— হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই। (আসিফ)

অবনী অসম্ভব খুশি হয়। রিনাকে জড়িয়ে ধরে বলে,

~ আপু তুমি অনেক অনেক ভালো। সত্যি আমাকে বাঁচালে তোমরা।

এদিকে আসিফ আস্তে আস্তে আমার কাছে এসে কানে কানে বলে,

— ভাই অবনী তো মাশাল্লাহ অনেক সুন্দরী তাইনা?
— হুম অনেক।
— এক কাজ করি চল, ওর সাথে তোকে বিয়ে দিয়ে দি। এরকম একটা মেয়ে আর পাবি না। করবি ওকে বিয়ে?
— হুম কর….

আমি থেমে গিয়ে মুহূর্তেই আসিফের দিকে ভ্রুকুচকে তাকাই। আসিফ হাসতে হাসতে রসিকতা করে বলে,

— এহ.. থামলি কেন বল বল। হাহা।
— আসিফফা তোরে কিন্তু মাইর দিমু৷ মজা করিস না৷ ও বিপদে পড়ে এখানে আসছে। আমি শুধু সাহায্য করছি। এসব ভাবাও ভুল।
— আরে সিরিয়াস হচ্ছিস কেন! মজা করছি বাপ। আচ্ছা যা আর কিছু বলবো না৷ তোদের ম্যাটার তোরাই বুঝ।
— আচ্ছা বাদ দে। আয় আগে বস। আবনী তোমার আপুকে নিয়ে বসো। আমি নাস্তা নিয়ে আসছি।
~ ছি ছি একদম না। আমি আনছি। আপনি বসুন। আমাকে দিন এসব।
— আরে না না তুমি ওদের সাথে গল্প করো। আমি আনছি।
~ এই যে সকালে কি বলছিলাম..

আমার আর অবনীর খুনসুটি দেখে আসিফ আর রিনা সেই মজা পাচ্ছিল। আসিফ রিনাকে ইশারা দিলে রিনা এসে আমার হাত থেকে নাস্তা নিয়ে বলে,

~ ভাইয়া আপনি ওর সাথে বসে গল্প করুন। আমরা দুই বোনরা আপনাদের জন্য নাস্তা নিয়ে আসছি।
— আরে..
— নীল এখানে এসে বসতো।
— আচ্ছা।

রিনা অবনীকে নিয়ে কিচেনে চলে যায়। আমি আর আসিফ একসাথে বসে কথা শুরু করি। অন্যদিকে অবনী আর রিনা কিচেনে গিয়ে নাস্তা রেডি করতে করতে বলে,

~ নীল ভাইয়া তো এখানে একা থাকে। তার উপর সে আবার সারাদিন বাসার বাইরে থাকবে৷ তুই কি একা একা এখানে থাকতে পারবি? যদি তোর কোন সমস্যা না হয় আমাদের সাথে আমাদের বাসায় যেতে পারিস। আমাদের বাসা বড়ো আছে। ওর থাকতেও সমস্যা হবে না। কি যাবি?

অবনী রিনার কথা শুনে খুব ভাবনায় পড়ে যায়৷ রিনা খেয়াল করে অবনীর মুখখানা চিন্তায় শুকিয়ে যাচ্ছে। তার মানে ও যেতে চায় না৷ রিনা মুচকি হাসি দিয়ে আবার বলে,

~ বুঝেছি আর ভাবতে হবে না এত। থাকিস এখানে সমস্যা নাই। কোন কিছু লাগলে আমাকে বলিস।

অবনী লজ্জাসিক্ত কণ্ঠে আবার খুব খুশি হয়ে মাথা নাড়িয়ে আচ্ছা বলে। রিনা মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করে,

~ এই নীল ভাইয়ার কাছেই তো তুই আগে পড়তি তাই না?
~ হ্যাঁ। উনি খুব ভালো পড়াতেন। যার জন্য আমার রেজাল্ট খুব ভালো হতো সবসময়। অনেক ভালো মনের মানুষ উনি। আমি তো ভাবতেই পারিনি উনি আমাকে এখানে থাকতে দিবেন৷ এত কেয়ার করবেন। সত্যিই অনেক ভালো উনি।

রিনা নাস্তা বেড়ে রসিক চাহনিতে আবনীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,

~ কিরে নীল ভাইয়ার প্রেমে পড়লি নাকি আবার হুম?

রিনার হঠাৎ এই প্রশ্নে আবনী পুরো থতমত খেয়ে যায়৷ লজ্জায় ওর মায়াবী মুখখানা পুরো লাল হয়ে যায়। অবনী কিছুই বলতে পারে না। রিনা ত একটা মেয়ে। তাই ওর বুঝতে দেরি হলো না অবনীর মনের অবস্থাটা। তাই ও আর অবনীকে না জ্বালিয়ে হেসে দিয়ে বলল,

~ আচ্ছা চল, এবার আমাদের প্রেমিকদের কাছে ফিরি। হাহা।

রিনার কথা শুনে অবনীও হেসে দেয়। তারপর ওরা নাস্তা নিয়ে আমার আর আসিফের কাছে আসে। এরপর আমরা নাস্তা করতে করতে অনেকক্ষণ গল্প করি। আসিফ আমার সম্পর্কে অবনীকে অনেক কিছু বলে। মানে আমাদের পুরনো দিনের গল্প আরকি। অনেকটা দিন পর কেন জানি মনে হলো জীবনটা অনেক সুন্দর। ওদের সাথে অনেক হাসাহাসি করলাম। বিষন্ন অন্ধকার জীবনটা হঠাৎ করে কেন জানি আলোকিত মনে হতে শুরু করলো। আর এই পরিবর্তনের ক্রেডিট শুধুমাত্র অবনীর। আমি মুচকি হেসে অবনীর প্রাণজুড়নো হাসিটা দেখছি। মেয়েটাকে একদম বাচ্চা বাচ্চা লাগে। খুব কিউট ও। আমার একটাই ইচ্ছা আল্লাহ ওকে যেন অনেক খুশি রাখুক আর সকল খারাপ কিছু থেকে দূরে রাখুক। আমাদের এই গল্প আড্ডা রাত আটটা পর্যন্ত চলল। আসিফ আর রিনাকে অনেক জোর করি যে খেয়ে যা। কিন্তু ওরা নাছরবান্দা। কোন ভাবেই খাবে না। না খেয়েই বিদায় নিয়ে হাসি মুখে চলে গেল। আমি ওদের এগিয়ে দিতে নিচে নামলাম। আসিফ যাওয়ার সময় বলল,

— মেয়েটা অনেক ভালো রে। ওর খেয়াল রাখিস। আর শোন, ওর চোখে তোর জন্য অন্যরকম কিছু একটা দেখেছি। জানি না সেটা কি৷ তবে হয়তো খুব তাড়াতাড়ি তুই জানতে পারবি। আসি রে। এরপর আমাদের বাসায় আসিবি তোরা।
— আচ্ছা। সাবধানে যাস। ভাবী আবার আসবেন কিন্তু।
~ আচ্ছা ভাইয়া। আপনারাও আইসেন।

ওরা চলে যায়। আসিফ কখন মজা করে আর কখন সিরিয়াস সেটা আমি ভালোই বুঝি। একটু আগে ও সম্পূর্ণ সিরিয়াস হয়েই কথা গুলো বলেছে। আমাকে ভাবনায় ফেলে দিয়ে ও চলে গেল। ঠিক বুঝলাম না ও কি বুঝাতে চাইলো। অবনীর সাথে আমার পরিচয় অনেক দিনের৷ ওকে আমি টানা চার বছর পড়িয়েছি। কিন্তু কখনো তেমন কিছু দেখিনি। জানি না আসিফ কি বলে গেল। অবনী আমার কাছে এখন একজন মেহমান আর আমার পুরনো দিনের একজন ছাত্রী। এরচেয়ে আর কিছুই না ও। আর কিছু সম্ভবও না। আমি বাসায় আসি। অবনী দরজা খুলে দিলে আমি ভিতরে আসলে ও জিজ্ঞেস করে,

~ ওনারা চলে গিয়েছেন?
— হুম। রিকশায় উঠিয়ে দিয়ে আসলাম।
~ ওহ! আচ্ছা আপনি তাহলে ফ্রেশ হয়ে আসুন৷ আমি ঘরটা গুছিয়ে দি।
— এই তুমি আমার মেহমান হয়ে এত কিছু করছো কেন? তোমার কিছুই করতে হবে না৷ আমি করছি সব৷ বাসাটা আমার বুঝলে?
~ একদম না স্যার। আপনি আমার জন্য অনেক কিছু করেছেন। আজকে অনেক সুন্দর একটা মুহূর্ত দিয়েছেন। আমি সত্যিই অনেক খুশি। তাই আমাকেও কিছু করতে দিন৷
— হায়রে পাগলিটা। আচ্ছা করো। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।
~ থ্যাঙ্কিউ।
— আচ্ছা একটা বিষয় আমাকে খুব অবাক করছে। তুমি এত ধনী পরিবারের মেয়ে হয়ে কিভাবে এত কাজ পারো? আজকালকার ধনী পরিবারের মেয়েরা সংসারের কাজ তো দূর সংসার কি জিনিস সেটাই বুঝে না৷ সেখানে তুমি আমাকে খুব অবাক করলে। বাহ!

অবনী ললজ্জাসিক্ত কণ্ঠে আস্তে করে বলে,

~ স্যার হাতের পাঁচটা আঙুলের মতো পাঁচটা মানুষও কিন্তু ভিন্ন হয়৷ তাদের মাঝে অনেক কিছু লুকিয়ে থাকে। সময়ের প্রয়োজনেই তা প্রকাশ করে৷ যান যান ফ্রেশ হয়ে আসুন৷ আমি খাবার গুলো গরম দিয়ে রাখি।

বলেই অবনী কিচেনের দিকে চলে গেল। আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। নিজের কানকে নিজেই বিশ্বাস করতে পারছি না৷ আমি ত এতদিন ভুল ছিলাম। অবনী তো আর সেই ছোট্ট অবনী নেই৷ ও আসলেই অনেক বড়ো হয়ে গিয়েছে। কারণ একটু আগে ও যা বলল তা একজন ম্যাচিউর মেয়ে ছাড়া কখনোই বলতে বলতে পারবে না। তাহলে অবনী সত্যিই আর বাচ্চা মেয়ে নেই। ও অনেক বড়ো হয়ে গিয়েছে অনেক। আমি ভাবতেও পারি নি। জানি না ওর মাঝে আর কি লুকিয়ে আছে৷ এরপর দেখতে দেখতে রাত এগারোটা নাগাদ বেজে যায়। এর মাঝে আমরা আসিফদের দেওয়া খাবার খেয়ে নি। কিন্তু এখন একটা বড়ো ঝামেলায় পড়েছি। অবনী সোফায় এসে ঘাপটি মেরে বসে আছে। ও নাকি এখানেই ঘুমাবে। আমাকে কষ্ট দিতে চায় না। আমি বলছি,

— আহ! অবনী এমন করো না প্লিজ। তুমি বেডে গিয়ে ঘুমাও। তুমি একটা মেয়ে। আমি কোন ভাবেই তোমাকে এখানে ঘুমাতে দিতে পারি না প্লিজ।
~ না আমি এখানেই ঘুমাবো। কাল আপনার অফিস আছে। ঠিক মতো না ঘুমালে কাজ করবেন কিভাবে? যান যান শুয়ে পড়ুন৷

আমি অসহায়ের মতো ওর দিকে তাকিয়ে আছি। অবনী আড় চোখে আমাকে বার বার দেখছিল। আর আমি ভাবছি কিভাবে ওকে উঠানো যায়৷ হঠাৎ মাথায় একটা সেই লেভেলের দুষ্ট বুদ্ধি আসলো। মেয়েদের সবচেয়ে বড়ো দুশমন হলো তেলাপোকা। আজকে তার নামটা কাজে লাগাতে হবে৷ আমি হঠাৎই লাফ দিয়ে দূরে সরে গিয়ে হালকা জোরে চিৎকার দিয়ে ওকে ভয় দেখিয়ে বললাম,

— এই এই তেলাপোকা তেলাপোকা…

আমাকে পুরো স্তব্ধ করে দিয়ে অবনী একলাফে উঠে এসে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ভীষণ ভয় পেয়ে বলে,

~ ইইইইই….বাঁচান বাঁচান…..

আমার পুরো শরীরের সাথে অবনী এখন মিশে আছে। আমি পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছি। ও ভয়ে আমার বুকের মাঝে মুখ লুকিয়ে আমাকে শক্ত করে ধরে আছে। কি হলো এটা! এরকমটা তো হওয়ার কথা ছিল না। এখন কি হবে? যখন ও জানতে পারবে আমি মজা করেছি?

চলবে…?

সবার ভালো সাড়া চাই তাহলে খুব তাড়াতাড়ি পরবর্তী পর্ব দেওয়া হবে। আর কেমন লেগেছে জানাবেন কিন্তু। আগের এবং পরবর্তী পর্বের লিংক কমেন্ট দেওয়া হবে। ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here