বৃষ্টি_ভেজা_অরণ্য পর্ব_৮

#গল্প
বৃষ্টি_ভেজা_অরণ্য
পর্ব_৮
-শাতিল রাফিয়া

পরের কয়েকদিন আমার স্বপ্নের চেয়েও সুন্দর কাটলো! অরণ্যের যে বিষয়টা আমার সবচেয়ে ভাল লাগল তা হল সে অফিসে একবারও সেদিনের কথা তুললো না। অফিসে সে আমাকে ‘আপনি’ করেই সম্বোধন করে। কিন্তু অফিসের পর সে বেশ রোম্যান্টিক হয়ে যায়!

তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম – অফিসে তো আপনি এরকম করেন না। অফিসে শুধু কাজ আর কাজ! উহহ!
অরণ্য তার সেই মারাত্মক হাসি হেসে বলে- আচ্ছা! আমি যদি অফিসে তোমার সাথে আনঅফিস্যিয়াল কথাবার্তা বলি তাহলে সবাই কি ভাববে বল তো? ভাববে কাজকর্ম বাদ দিয়ে এরা রোম্যান্স করে! আর এই কথা ওপর মহলে গেলে কি হবে? আমাদের চাকরি থাকবে না!

অরণ্য অফিসের পর আমাকে ড্রপ করা শুরু করে। আমরা অফিসের পর মুভি দেখতে যাই, ডিনার করতে যাই! ছুটির দিন গুলোতে বেড়াতে যাই।

একদিন লং ড্রাইভে যেতে যেতে একটা গ্রাম্য এলাকায় চলে গিয়েছিলাম। ক্ষীণ ধারায় বহমান নদীর তীরে একটা গ্রাম্য মেলা বসেছে। অরণ্য গাড়ি পার্ক করে আসলে আমরা হাত ধরে নদীর পারে হাঁটলাম। বরাবরের মতই সে আমার খোলা, এলোমেলো চুল পছন্দ করে বলে চুলগুলো খুলে দেয়!

আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম- যখন খোঁপা করি তখন বলতে পারেন না? তাহলে আর কষ্ট করে চুল বাঁধতে হয় না!
অরণ্য হেসে বলল – কেন বলব? তুমি চুল বাঁধবে আর আমি খুলে সেগুলো এলোমেলো করে দেব। তোমার চুলগুলো বাঁধন খুলে যখন অবিন্যস্ত হয়ে যায় সেটা যে কি অপূর্ব লাগে দেখতে আমি বলে বোঝাতে পারব না!

আমি অরণ্যের কাঁধে মাথা রেখে তার হাত জড়িয়ে ধরলাম!

মেলা থেকে আমি অনেকগুলো কাঁচের চুড়ি পছন্দ করলাম।

অরণ্য দাম দিতে গেলে আমি তার হাত ধরে টান দিয়ে বললাম- আমি দাম দিচ্ছি! আপনি কেন দেবেন?
অরণ্য বলে- আজ আমরা একসাথে প্রথমবার শপিং এ আসলাম!
আমি হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করলাম- শপিং?!
– ওই তো মানে মেলায়। তুমি একটা জিনিস পছন্দ করেছ আর সেটার দাম তুমি দিবে? কক্ষনো না।

আমি হেসে অরণ্যের দিকে তাকালাম। সে শুধু চুড়ি কিনেই ক্ষান্ত হল না, আমাকে সেগুলো পরিয়েও দিল!

এরপর থেকে আমরা একসাথে শপিং এও যাওয়া শুরু করলাম!

একদিন অরণ্যকে নিয়ে বাসার সবার জন্য শপিং করলাম। ওর জন্যে শার্ট কিনে দিলাম। ওর মা, বোন আর পুণ্যের জন্য জামাকাপড় কিনলাম! সে মাথা নেড়ে বারবার না করতে লাগল। আমি কিছুই শুনলাম না।

এরপর সে বলে- তাহলে এখন আমিও তোমার ফ্যামিলির জন্য শপিং করব। আর সেটা তোমাকে নিতে হবে।

আমি মাথা নেড়ে হইহই করে উঠলাম!

– সবাই ভাবছে আমার অ্যাফেয়ার আছে। এর মধ্যে এসব দিলে একবারে শেষ!
অরণ্য দুষ্টু হাসি হেসে ভ্রু নাচিয়ে বলে- তো সত্যিটা সবাইকে বলে দিলেই তো হয়!
আমি জিজ্ঞেস করলাম- কি সত্যি?
– তুমি জান না?
– না তো!

অরণ্য হেসে ফেলে!

হাজার নিষেধের পরেও সে শপিং করে দিল।

এরপর আমরা লাঞ্চ করতে গেলাম।

অর্ডার দিয়ে অরণ্য বলে- তোমার হাতটা একটু দেও তো!
– কেন? তুমি হাত দেখতে পার?

জিজ্ঞেস করেই আমি মুখ দুইহাত দিয়ে চেপে ধরলাম! আমি ঠিক করেছিলাম অরণ্যকে ‘তুমি’ করে বলব না। মানে বলব কিন্তু পার্মানেন্টলি তার বাসায় যাওয়ার পর। অর্থাৎ বিয়ের পর। কিন্তু এখন মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেল!
অরণ্য হাসতে হাসতে আমার হাত ধরে টানতে থাকে।

– বল! কি বললে?
আমি হেসে মাথা নেড়ে বললাম- কিছু না!
– ‘তুমি’ করে বললে কি হবে?
আমি উদাস হয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে উত্তর দিলাম- কেউ একজন আমাকে নাম ধরে ডাকতে নিষেধ করেছিল।
– আরে! বৃষ্টি তুমি এখনো সেটা ধরে বসে আছ? এটা কেমন শাস্তি?
আমি এবার মিষ্টি করে হেসে বললাম – আচ্ছা যাও! মাফ করে দিলাম!
– তাহলে তোমার হাত দাও।

আমি ডান হাত বাড়িয়ে দিলে অরণ্য একটা ব্রেসলেট পরিয়ে দেয়!

আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম- কখন কিনলে এটা?
অরণ্য মুচকি হেসে বলে- কিনেছি একসময়! পছন্দ হয়েছে?
– ভেরি নাইস! থ্যাঙ্কিউ!

অরণ্য আমাকে বাসায় নামিয়ে দেয়। আমার এত এত শপিং দেখে বাসার সবাই খুব অবাক হল! তাদের পাওনা জিনিস বুঝিয়ে দিলাম। সবাই খুব খুশি হলো। কিন্তু তাদের সন্দেহ হল আরও বেশি!

ভাইয়া তো জিজ্ঞেস করেই ফেলে- বৃষ্টিলেখা! তোর কি হয়েছে বল তো?
– কই?
– তুই ইদানিং বেশ হাসিখুশি থাকিস। পারলে উড়ে উড়ে চলিস!
– আশ্চর্য! আমি হাসিখুশি থাকলেও দোষ! মন খারাপ করে থাকলেও দোষ! সমস্যাটা কি তোমাদের?

আমি উঠে চলে আসলাম। মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। আর আমি ডিসিশন নিলাম দুলাভাইকে দিয়ে এবার বাসায় জানাব। কিন্তু অরণ্য কিছু বলছে না কেন? সে তো আমার বাসায় বলতে পারে। বা আমাকেই জানাতে পারে। ও আমাকে কিছু বলেনি। ও যে এভাবে আমার সাথে মিশছে এটাকেই কি আমি গ্রীন সিগন্যাল ধরে নেব? ও নিশ্চয়ই আমাকে ভালবাসে। নাহলে ওদিন..ওর বাসায় ওভাবে.. দুলাভাইকেই বলব বাসায় বলতে। এরপর যা হবে দেখা যাবে।

কিন্তু দুলাভাইকে বলার আগেই একটা ঝড় এসে আমার জীবনকে তোলপাড় করে দিল!

বেশ কয়েকদিন ধরেই দেখছি অরণ্য একটু চুপচাপ আছে। অনেকবার জিজ্ঞেস করেও কোনো উত্তর পেলাম না। সে দায়সারাভাবে উত্তর দিল।

একদিন বৃহস্পতিবার রাতে তাকে ফোন দিয়ে তার ফোন ওয়েটিং এ পেলাম। আমি ভাবলাম সে হয়তো কারও সাথে কথা বলছে, ব্যস্ত আছে। তাই আমি তখন রেখে দিলাম। আধা ঘণ্টা পর আবার ফোন করে দেখি তার ফোন ওয়েটিং এ। আমি সকালে কথা বলব ভেবে ঘুমিয়ে গেলাম।

সকালে উঠে মোবাইল চেক করলাম। আমি অবাক হয়ে গেলাম যখন দেখলাম সে আমাকে কলব্যাক করেনি। কিন্তু এটা হয় না। অরণ্যের ফোন আমি কখনো ওয়েটিং এ পেলে ও ফোন রেখে সাথে সাথেই কলব্যাক করে। আমি অরণ্যকে কল করলাম। কিন্তু সে ধরল না।
আমি এবার অবাক হওয়ার পরিবর্তে টেনশন করা শুরু করলাম। এমনিতেই সে কয়েকদিন ধরে এরকম চুপচাপ আছে। কিছু কি হয়েছে ওর?
আরও কয়েকবার ফোন দিয়ে, মেসেজ দিয়ে ওকে যখন পেলাম না, আমি ওর বাসায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।

আর তার কিছুক্ষণের মধ্যেই সে আমাকে কলব্যাক করে।

আমি ধরেই হড়বড় করে বলতে লাগলাম- এই তোমার কি হয়েছে বল তো? ফোন ধরছ না, মেসেজ দিচ্ছ না?
অরণ্য ম্লান হেসে বলে- এই যে ফোন করলাম।
আমি বললাম – রাতে তোমাকে ফোন করেছিলাম। ওয়ে..
আমাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে সে বলে- হ্যাঁ..ওয়েটিং এ ছিল!
আমি এবার অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম- তা..তাহলে ব্যাক করনি কেন?
– এমনি!

আমি বুঝতে পারছি অরণ্যের কিছু হয়েছে। ও একটা কিছু লুকাচ্ছে! এইভাবে ও আমার সাথে কথা বলছে এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে নয়তো এরকম আচরণ ও কেন করবে?

আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম- তোমার কি হয়েছে সত্যি করে বল তো! ক’দিন ধরে দেখছি কেমন অস্বাভাবিক আচরণ করছ! আন্টি, আপু সবাই ঠিক আছে?
– হুমম.. আমার আর কি হবে? কিছুই হয়নি! আচ্ছা বৃষ্টিলেখা এখন রাখছি! পরে কথা বলব। বাই।

আমি কিছু বলার আগেই সে ফোন রেখে দিল। এ তো মহা ঝামেলায় পড়লাম! কিছু বলবেও না, নিজে মন খারাপ করে থাকবে আবার আমাকেও টেনশনে রাখবে!

দুপুরে খাওয়ার পর ঘুমিয়েছি। চোখটা মাত্র একটু লেগেছে। হঠাৎই দড়াম করে একটা শব্দ শুনলাম। কি হয়েছে বোঝার আগে টের পেলাম নিশা আমাকে ধরে জোরে জোরে ঝাঁকাচ্ছে।
আমি এবার ধড়মড় করে উঠে বসলাম!
প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে দেখি নিশা মোটামুটি হাঁপাচ্ছে!

এবার আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম- কি হয়েছে তোর?

নিশা উত্তেজনায় কোন কথা বলতে পারে না।

কিছুক্ষণ পর ধাতস্থ হয়ে বলে- বৃষ্টি অ..অরণ্য..

আমার ভেতর ধ্বক করে ওঠে!

– কি হয়েছে অরণ্যের?

নিশা উত্তর দিল না।

আমি তীক্ষ্ণ গলায় বললাম- বল! কি হয়েছে অরণ্যের?

নিশা আমাকে একটা ছবি দেখাল। ছবিটা দেখে আমার মনে হল আমি কেন আরও আগেই মরে গেলাম না? এটা দেখার আগেই? ছবিতে অরণ্য একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আছে। মেয়েটাকে দেখা যাচ্ছে না ভাল করে! কিন্তু ছেলেটা যে অরণ্য সেটা ভালই দেখা যাচ্ছে!

আমি কিছুক্ষণ চেষ্টা করে তারপর জিজ্ঞেস করলাম- কোথা.. কোথায় পেলি এই ছবি?
– বৃষ্টি অণুকে চিনিস না? আমার ফ্রেন্ড?
– চিনি।
– ওর সাথে আজ একসাথে লাঞ্চ করার কথা ছিল। আমার যেতে একটু দেরি হয়েছে। আমি গিয়ে কথাবার্তা বলতে বলতে ও আমাকে বলে ‘এই জানিস পাশের টেবিলে যারা বসেছে ওদের দেখ।’
আমি দেখলাম!
অণু বলে- ওরা একটু আগে হাগ করেছে!
– এই যাহ! পাবলিক প্লেসে?
– সত্যি! আমি তোকে দেখানোর জন্য চুপিসারে একটা ছবি তুলে রেখেছি!
-আমি ছবিটা দেখে বুঝতে পারি এটা অরণ্য। আমি প্রথমে অতটা খেয়াল করিনি। এবার ভাল করে তাকিয়ে দেখি স..সত্যি অরণ্য। আমাকে ওদিকে তাকাতে দেখে অণু বলে- মজার ব্যাপার কি জানিস?
– কি?
– এই মেয়েটা আমার ক্লাসমেট ছিল। মোনালিসা। একদম ছোটবেলায়। সিক্স, সেভেনে থাকতে!
– ওর সাথে কথা বলেছিস?
– নাহ! চিনবে না মনে হয়!
– আমি তখন অণুকে বললাম ওই ছেলেটা মেয়েটার কে হয় একটু জেনে আসতে। খাওয়ার পর অরণ্য যখন বিল দিতে গেছে অণু তখন গিয়ে মোনালিসার সাথে কথা বলে। মোনালিসা ওকে চিনতে পারে। সে এসে জানিয়েছে ওইটা মোনালিসার বয়ফ্রেন্ড। মোনালিসা বিদেশে থাকে। এবার এসেছে বি..বিয়ে করতে!

নিশার কথা শুনে আমি অবাক হওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেললাম! অরণ্য! যাকে আমি সেই কবে শুধুমাত্র তার কণ্ঠ শুনে আমার মন দিয়ে ফেলেছি, ও আমার সাথে এরকম করল! করতে পারল? এবার ধীরে ধীরে সব ক্লিয়ার হচ্ছে! রাতে তার ফোন কেন ওয়েটিং এ থাকে, কেন ইদানিং আমার সাথে এরকম দায়সারাভাবে কথা বলছে সব বুঝতে পারলাম! আমার এখন একফোঁটা কান্না পাচ্ছে না। আমি অধিক শোকে পাথর হয়ে গেছি! আমার মনে হচ্ছে আমার হৃদয়টাকে কে যেন চাকু দিয়ে ফালা ফালা করে কাঁটছে! এতদিন আমি কি তবে মূর্খের স্বর্গে কাটিয়েছি, খামোখাই এত স্বপ্ন দেখেছি? ও আসলে আমাকে কোনদিন ভালবাসেনি? আসলেও তো ও কোনদিন বলেনি আমাকে ভালবাসে! আমাকে বিয়ের কথাও বলেনি! তবে ওর বাসায় সেদিন যেটা হয়েছিল? সেটা কি শুধুমাত্র মুহূর্তের আহবান ছিল?কয়েক মুহূর্তের জন্য তার রোম্যান্স জেগে উঠেছিল?

নিশা বলে- এই বৃষ্টি!
– বল!
– কি করবি এখন?
– কিছু করব না! কি আবার করব?
– তার মানে? ওকে তুই তুই কিছু বলবি না?
– কি বলব? ও কি আমাকে ভালবাসে বলেছে নাকি বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে?
– কিন্তু সেদিন.. সে যে তোকে..
– ও আমাকে শুধুমাত্র কিস করেছে। সেটা আমার স্বজ্ঞানে হয়েছে। আমি বাঁধা দেইনি!
– তাই বলে এত সহজে.. ও যে তোকে নিয়ে কয়দিন..
– তুই কি করতে বলছিস?

নিশা কোন কথা বলে না।

সেদিন রাতেও অরণ্যকে ফোন করলাম। যথারীতি ওয়েটিং এ পেলাম। আমার আর কোনো অনুভূতিই নেই। এত বড় ধাক্কা আমি জীবনে কোনদিন পাব বলে ভাবিনি! দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি!

পরেরদিন অফিসে অরণ্যের সাথে দেখা হল।

আমাকে দেখে বলে- রাতে ফোন করেছিলেন দেখেছি। আসলে..
আমি কথা শেষ করতে না দিয়ে সুন্দর করে হেসে বললাম – স্যার আপনি এত মন খারাপ করে আছেন কেন বলুন তো? মোনালিসা ম্যাম তো এসে পড়েছেন। নাকি আমি ‘মোনালিসা ভাবী’ বললে আপনি খুশি হবেন?

আমার কথা শুনে অরণ্য হা করে তাকিয়ে থাকে!

এরপর কোনমতে বলে- বৃষ্টি শোন..
আমি তাড়াতাড়ি বললাম – ওমা! কি করছেন স্যার? আমরা এখন অফিসে। ‘আপনি’ করে বলুন!
অরণ্য অধৈর্য হয়ে বলে- বৃষ্টি আমি আগেই তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম যে..
অরণ্যকে কথা শেষ করতে না দিয়ে আমি হিসহিস করে বললাম – যে আপনার সাথে মোনালিসার বিয়ে। কিন্তু বলতে পারেননি। আসলে ইচ্ছা করেই বলেননি। বললে তো আমার সাথে আর ফূর্তি করতে পারতেন না। ভাগ্যিস সেদিন আপনার বাসায় জেনারেটর চালু হয়ে গিয়েছিল। আর তা না হলে না জানি আর কি কি করার প্ল্যান ছিল আমার সাথে!

অরণ্য বিস্ফারিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে!

– ক.. কি বলছ এসব?
আমি ঝাঁঝিয়ে উঠে বলে গেলাম- বাকি কাজ কমপ্লিট করতেই কি এতদিন আমার সাথে এভাবে ঘুরে বেরিয়েছেন? আমাকে কি সস্তা পেয়েছেন? নাকি মেয়ে দেখলে মাথার ঠিক থাকে না?
এবার অরণ্য চেঁচিয়ে ওঠে – জাস্ট শাট আপ বৃষ্টি!
– কেন? এখন কেন?
– আমি তোমাকে রেপ করিনি বৃষ্টি! আমার নাহয় মেয়ে দেখলে মাথা ঠিক থাকে না। তো তুমি তো স্বজ্ঞানে ছিলে! তুমি আমাকে কেন কিস করেছিলে? আমাকে বাঁধা দেওনি কেন?

আমি আর দাঁড়ালাম না। ওর সামনে দাঁড়াতে আর রুচি হল না। মাথাটা রাগে দপদপ করতে লাগল! বাকি সময় আমি কাজে ডুবে রইলাম। অরণ্যও আর ডাকল না। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আর দেরি নয়।

আর আজ বাসায় গিয়ে মাকে বললাম – তোমরা কোন ছেলেপক্ষকে না আসতে বলতে চেয়েছিলে? তাদের আসতে বল!

মা আকাশের চাঁদ হাতে পেলেন!

খবরটা দুলাভাই জানতেই ছুটে আসে।

– কি হচ্ছে এসব? তুই হুট করে রাজি হয়ে গেলি?

নিশা সব খুলে বলে!

নিশা বলল- আমি হলে পুলিশে কেস করে দিতাম!
আমি বললাম- কি বলব পুলিশকে? স্যার ও আমাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়নি! আমি নিজে নিজেই মনে মনে ঠিক করে নিয়েছি! ও আমাকে শুধু কিস করেছে, আমিও করেছি। অনৈতিক জেনেও আমি বাঁধা দেইনি?

নিশা চুপ করে যায়।

দুলাভাই বলে- আর ওর ওপর জেদ করে যে বিয়ে করছিস সেটা ঠিক হচ্ছে?

আমি উত্তর দিলাম না।

আজ পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। আমার রুম থেকেই টের পেলাম তারা এসেছে।

আমাকে ডাকলে আমি ওদের সামনে গেলাম।

পাত্রকে দেখে আমি হা করে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম! সেও আমার দিকে তাকিয়ে থাকে!
[চলবে]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here