বেখায়ালি ভালোবাসা পর্ব-২৩

0
2015

#বেখায়ালি_ভালোবাসা,
#পর্ব_২৩
#লেখাঃসাবেরা_সুলতানা_রশিদ
মেঘ টেলিফোন টা রিসিভ করতেই ওপাস থেকে রোজির কান্না জড়িত কন্ঠ ভেসে আসে।
—কি হয়েছে ভাবি কাঁদছো কেন??
বাড়িতে সবাই ভাল আছেতো ??
—মেঘ বাবা–
—বাবা!!বাবার কি হয়েছে ভাবি??
কথা বলছো না কেন বলো বাবার কি হয়েছে ?
—মেঘ বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বাবা এখন আই সি ইউতে ভর্তি আছে।
—কখন কিভাবে??
—সকালে, এখন এত কিছু বলা সম্ভব না।
—কোন ক্লিনিকে আছে ?
—অনি কে নিয়ে যে ক্লিনিকে ছিলাম সেটা।
—ঠিক আছে ভাবি আমি এখনি আসছি।
—আচ্ছা।
মেঘ ফোনটা রেখে দিয়ে ওর আম্মুকে ডেকে সবটা খুলে বলে ।
—ঠিক আছে তুই রেডি হয়ে নে । আমিও তোর সঙ্গে যাবো।
কিছুক্ষণের মধ্যে মেঘ তার আম্মুকে সঙ্গে নিয়ে ক্লিনিকের উদ্দেশ্য রওনা হয়।
————**——**——**————
সৈকতের অফিসরুমের টেলিফোনটা বেজেই যাচ্ছে । কিন্তু কেউই ফোনটা তুলছে না।
সৈকত একটা মিটিংয়ে ব্যস্ত ।
মিটিংটা শেষ করে নিজের কেবিনে ঢুকতেই ফোনের শব্দ শুনে টেলিফোনটা রিসিভ করে শোনে চৌধুরী সাহেব অসুস্থ।
কিন্তু কি হয়েছে কখন হয়েছে সৈকত আর কিছু সেসব জিঙ্গাসা করে না।
সৈকত সকালে চৌধুরী সাহেবকে দেখে মনে মনে এই আশংকায় করে ছিল যে এত কিছু শোনার পর যেভাবে রিএ্যাক্ট করলো তাতে প্রেসার হাই না হয়ে যায় ।
কিন্তু যেহেতু তিনি আই সি ইউতে আছেন তারমানে বড় কোন সমস্যা দেখা দিয়েছে।
সৈকত চেয়ার টা টেনে বসে ভাবতে থাকে-
আচ্ছা এই সংবাদ টা শোনার পর আমার কি খুশি হওয়া উচিত না দুঃখ পাওয়া উচিত!!?
হুম খুশি হওয়ায় উচিত,কারণ উনি আমার মায়ের খুনি। আর কোন খুনির অধিকার নেই বেশীদিন বেঁচে থাকার।
আর যদি দুঃখ পায় সেটা হবে পুরোটাই মিথ্যা ইমোশন। জাস্ট লোক দেখানো। যেটা একদমই ডিজগাস্টিং। এসব লোক দেখানো এ্যাক্টিং আমার দ্বারা কখনো সম্ভব না।
আচ্ছা উনি মারা গেলে কি সত্যিই আমার একটুও কষ্ট হবে না??
যদি কষ্ট না হয় তাহলে উনি হবেন পৃথিবীতে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যবান মানুষ যার মৃত্যের সংবাদ শুনে সন্তান কষ্ট না পেয়ে বরং———-
আচ্ছা থাক এসব নিয়ে না হয় পরেও ভাবা যাবে।
সৈকত চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ায় ক্লিনিকে যাওয়ার উদ্দেশ্য ।
————**——**——**————
মেঘ ক্লিনিকে ঢুকে উর্ধশ্বাসে দৌড়ে আসতেই পুলিশের দুজন ডিউটিতে থাকা সিকিউরিটির লোক মেঘ কে বাধা দেয় ।
তাদের সাথে অনেকক্ষন কথা বলার পরও তারা বলে যে পরিবারের বিনা পারমিশনে আমরা আপনাকে ভিতরে যেতে দিতে পারি না ।
মেঘ বলে দেখুন আমি উনার———- বলতে গিয়ে মেঘের কোথায় যেন বাধে। কি লাভ শুধু শুধু তাদের সামনে নিজেকে চৌধুরী বাড়ির ছোট ছেলের বউ বলে জাহির করে!!?
যাকে সে মনে প্রাণে স্বামী হিসেবে জানে সেই তো তাকে স্ত্রী হিসাবে মানেনা।
তাহলে কি লাভ!!??
সিকিউরিটির লোক জিঙ্গাসা করে বলুন ম্যাম আপনি উনার কে ??
মেঘ তাড়াতাড়ি বলে আমি উনার মেয়ে মতো।
সরি ম্যাম আমরা এখন আপনাকে ওদিকে যেতে দিতে পারছিনা।
আমরা এখন শুধু তার পরিবারের লোককে এল্যাও করছি।
আপনি এখন যেতে পারেন।
মেঘের আম্মু মেঘের এমন আচরনে অবাক হয়ে যায়।
সরাসরি মেঘ কেন বলছে না যে ঐ বাড়ির ছোট বউ। তাহলে তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায় ।
এই মেঘ কি হয়েছে তোর ??
তুই কিছু না বলে চুপ করে আছিস কেন??
মেঘ কোন কথা না বলে পিছন ফিরে তাকাতেই দেখে সৈকত দাড়িয়ে আছে ।
সিকিউরিটির দুজন সৈকত কে দেখেয় বলে আসুন স্যার আসুন।
—এখানে কি হয়েছে ??
—আসলে স্যার এখন আমরা আপনাদের পরিবারের লোককে ছাড়া বাইরের কাউকে এল্যাও করছি না।
—সৈকত মেঘের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললো আপনারা জানেন না “ইনি কে”??
সি ইজ মাই ওয়াইফ।
সিকিউরিটির দুজন নিজেদের মুখ চাওয়া চায়ি করে তাড়াতাড়ি করে বললো সরি ম্যাডাম আমরা আপনাকে চিনতে পারিনি।
আমাদের ভুল হয়ে গেছে । মাফ করবেন।
সৈকতের মুখে ওয়াইফ কথাটা শুনে মেঘ বিস্ময় ভরা চোখে সৈকতের দিকে তাকায় ।
সৈকত কোন কথা না বলে মেঘের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে । দেখে মেঘের চোখদুটো ছলছল করছে ।
সৈকত মেঘের আম্মুর কাছে ভালমন্দ জিঙ্গাসা করে ।
মেঘের আম্মু সৈকতের কথার উত্তর দিয়ে বলে দেখতো বাবা এখন যদি তুমি না আসতে তাহলে মনে হয় আর ভিতরে যেতে পারতাম না।
সৈকত কথা বলছে মেঘের আম্মুর সাথে কিন্তু চোখ মেঘের দিকে।
—কেন আপনারা কি নিজেদের পরিচয়টা দেননি??
—আসলে মেঘ বললো যে চৌধুরী সহেবের মেয়ের মতো কিন্তু তারা বুঝে উঠতে পারেনি যে মেঘ কি বলতে চাইছে।
সৈকত মিচকি হেসে বলে ও আচ্ছা এখন চলুন ।
মেঘ কোন কথা না বলে মাথা নীচু করে সৈকত আর তার মাকে অনুসরন করে চলে ।
বাইরে কাউকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না।
সৈকত একটা রুমে প্রবেশ করতেই দেখে তার ভাইয়া ভাবিরা সবাই খুব চিন্তিত মুখে গম্ভীর হয়ে বসে আছে ।
মেঘকে দেখেই ঝিনুক কান্না করতে করতে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে ।
রোজি এসে পাশে দাড়ায় ।
মেঘ ঝিনুকে কিছুক্ষন শান্তনা দিয়ে রোজির কাছে জানতে চাই কি হয়েছে বাবার??
—ডাক্তার বলেছে হার্ট এট্যাক করেছে অবস্থা খুব সিরিয়াস।
—কিভাবে হলো আর এটা কখন হলো ??
—কিভাবে যে হলো সেটা বলতে পারছিনা। তবে বাবা তোকে নিয়ে খুব চিন্তায় ছিল একদিন। আর আজ সকালে নাস্তার টেবিলে অনি আর সৈকতের মাঝে তোকে নিয়ে কথা হচ্ছিল। বাবা সেখানে উপস্থিত ছিল। এক পর্যায়ে অনি একটু বেশী বায়না করছিল সৈকতের কাছে তখন আমি অনিকে নিয়ে রুমে চলে আসি । তার কিছুক্ষণ পর কাজের মেয়ের চিৎকার শুনে রুম থেকে বেরিয়ে এসে ডাইনিং রুমে আসতেই দেখি বাবা ফ্লোরে পড়ে আছে। আর তারপরই এখানে ।
মেঘ রোজির কথা শুনে মনে মনে ভয় পায় এই ভেবে যে সৈকত তাহলে বাবাকে সবটা বলে দেয়নি তো!!??
মেঘ মনের সন্দেহটা দূর করতে রোজিকে বলেঃ
—আচ্ছা ভাবি তুমি অনিকে নিয়ে রুমে চলে গিয়েছিলে তখন আর কে কে ডাইনিংয়ে ছিল??
—শুধু বাবা আর সৈকত।
হঠাৎ একজন ডাক্তার রুমে ঢুকে বলে
সরি টু সে স্যারের অবস্থা খুব খারাপের দিকে যাচ্ছে । প্রেসার টা বেড়েই চলছে কোন ভাবে সেটা আমরা কন্ট্রোলে আনতে পারছিনা।
আর উনি এখনো আগের মত সেন্সলেস হয়ে আছেন।
মনে হচ্ছে বড় ধরনের কোন শক পেয়েছেন তার জন্যই এমনটা হচ্ছে।
আপনারা দোয়া করতে থাকুন।
আমরা আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি বাকিটা আল্লাহের ইচ্ছা বলে ডাক্তার চলে যায় ।
মেঘ ডাক্তারের সব কথাগুলো শুনে মনে মনে ভাবে
তারমানে আমি যে ভয়টা পাচ্ছিলাম সেটাই ঠিক!!
সৈকত বাবাকে সব বলে দিয়েছে ??
ও মাই গড!!
এখন কী হবে??
মেঘ দেখে ডাক্তার বেরিয়ে যেতেই সৈকতও রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
মেঘ ও সৈকতের পিছন পিছন ববেরিয়ে যায় ।
সৈকত ছাদে এসে একটা সিগারেট ধরিয়ে
দুই টান দিতেই
মেঘ পিছনে এসে দাঁড়ায় ।
—কেন করলেন আপনি এটা??
মেঘের কন্ঠ শুনেই সৈকত হাত থেকে সিগারেটটা ফেলে দেয় ।
—কি করেছি!!?
—আপনি জানেন না আপনি কি করেছেন??
—না জানিনা।
—আপনি কেন সবটা না জেনে বাবাকে এভাবে আঘাত দিলেন?
—আমার জন্য চৌধুরীর এ অবস্থা সেটা তোমাকে কে বললো?
—মানে!??
—মানে খুবই সহজ। তোমার কেন মনে হচ্ছে যে তোমার শ্রদ্ধেয় শ্বশুর মশাই আমার জন্য অসুস্থ হয়েছে??
—মনে না হবার কোন কারণ তো নেই!!
আপনি নিশ্চয় বাবাকে সেদিন আপনাকে বলা কথা গুলো বলে দিয়েছেন।
—হ্যা বলেছি তো??
—তো!!?সবটা না জেনে আপনি বাবাকে এসব কথা গুলো বলে কেন হার্ট করলেন।?
—এখানে হার্ট করার কিছুতো দেখছি না!!
তার মানে তুমি কি সেদিন আমাকে সবটা মিথ্যা বলেছিলে??
— না আমি কোন মিথ্যা বলিনি।
—তাহলে এতো ভয় পাচ্ছো কেন?
—ভয় পাব না কেন বলুনতো??আমার জন্য আজ মানুষটার এ অবস্থা। সেদিন যদি আমি আপনাকে কথাগুলো না বলতাম তাহলে হয়তো আজ উনি এভাবে অসুস্থ হতেন না।
—বাহঃ আচ্ছা তোমাদের সব মেয়েদের প্রবলেম টা কোথায় বলতো??একবার অন্যের উপর দোষ চাপাও আবার কিছুক্ষন পর নিজের উপর দোষ চাপাও।
—আপনি কয়জন মেয়েকে জানেন??
—না মানে এই যে তুমি নিজে একটু আগে আমাকে তোমার শ্বশুরের এই অবস্থার জন্য দায়ী করলে আবার এখন নিজেকে দায়ী করছোতো তাই।
—হ্যা দোষটা আমারই যে আমি আপনাকে সব সত্যেটা ভালভাবে বুঝিয়ে উঠতে পারিনি। আর আপনিও এমন একজন মানুষ কথাগুলো শোনার পর সত্যমিথ্যা যাচাই না করে মুদ্রার একপিট দেখে নিজের মনের ক্ষোভ গুলো অন্যের উপর ঝাড়েন।
—কি বলতে চাইছো??
—খুব সহজ । আগে নিজের আশপাশটা ভালকরে লক্ষ্য করবেন জানবেন শুনবেন তারপর যা করার করবেন। হতে পারে আপনি যেটা না জেনে বলছেন সেটা আপনার চোখের সামনে আছে সমস্যা সমাধানের জন্য অথচ আপনি সেটা না দেখেই —–
—কি না দেখেই??বলো
—আমি আপনার সঙ্গে এই মুহুর্তে
তর্ক করতে আসিনি । শুধু এতটুকু বলবো আমি আপনার সব প্রশ্নের উত্তর আপনার ঘরেই রেখে এসেছি । শুধু নিজের চেষ্টায় একটু সেটা উদঘাটন করে সত্যেটা মেনে নিবেন।
আর হ্যা এই মুহূর্তে আপনি যাকে বিশ্বাস করছেন সেই কিন্তু আপনার ক্ষতি করবে।
আমি আপনাকে খুব বুদ্ধিমান ভেবেছিলাম কিন্তু—–
বলেই মেঘ ওখান থেকে চলে আসে।
সৈকত মেঘকে আটকায় না ওর চলে যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে থাকে
আর ভাবে কি বলে গেল মেঘ!!?
সে আমার ঘরে সব প্রশ্নের উত্তর রেখেছে মানে!!?
আর কি সে সত্যে!!?
আর কে ক্ষতি করবে আমার—–
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here