#বেখেয়ালি_মনে
#লেখনীতে- Ifra Chowdhury
পর্ব-৩৭
.
.
ত্রয়ী আনমনে দাঁড়িয়ে আছে বেলকনির এক পাশে। বারেবার ইনানের গানের কন্ঠ ওর কানে ভেসে উঠছে। আর ও চোখ বন্ধ করে সেটা গভীরভাবে অনুভব করতে চাইছে। খুব স্বস্তিবোধ হচ্ছে ওর। মনের মধ্যে এক অজানা প্রশান্তি কাজ করছে।
যদিও তখন ইনানের গান শুনেও মুখ ফিরিয়ে ছাদ থেকে নিজের রুমে এসেছিলো, কিন্তু মূলত ওর মান-অভিমান, রাগ সবই গলে গেছে! ইশ এখন ইচ্ছে করছে, তখনি যদি ও ইনানকে জড়িয়ে ধরতে পারতো!
এসব ভেবে একা একাই উশখুশ করছে ত্রয়ী। ইনানের কথা ভাবতে ভাবতে চিন্তিত মনে বারান্দার পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে পায়চারি শুরু করেছে। ওর হাতের আঙুলগুলোও স্থির নেই। পরস্পরের সাথে প্যাঁচ কাটতেই ব্যস্ত ওরা।
ইনানদের বাসায় গিয়ে কি একটাবার ওকে দেখে আসবে? একটু মিষ্টি করে কথা বলবে? ওর ভেতরের অস্থিরতাটা প্রকাশ করবে?
না থাক! দরকার নেই বাবা। কেউ এমন সময় দেখে যদি সন্দেহ টন্দেহ করে? আগামীকালের জন্যই অপেক্ষা করা যাক বরং।
‘অপেক্ষার ফল সুমিষ্ট হয় ত্রয়ী।’
এই বলেই আপন মনে নিজেকে সান্ত্বনা দেয় সে।
একটু পরেই ওখানে এসে হিমা উপস্থিত হয়। বেলকনিতে ত্রয়ীকে ওভাবে অস্থিরভাবে হাটতে দেখে হিমা বলে,
-কি গো, তোমার দুশ্চিন্তা কি এখনো শেষ হয় নি? তোমার নাগর তো চলেই এসেছে।
কথাটা বলেই একটা দুষ্টু হাসি দেয় হিমা।
ত্রয়ী হিমার কন্ঠ শুনে চমকে তাকায়। আর সেই সাথে ওর চাহনিতে একটা ঝাপসা লজ্জার আভাও ফুটে উঠে। ও আমতা আমতা করে হাসার চেষ্টা করে একটু,
-ক-কই দুশ্চিন্তা করছি? না তো।
হিমা ত্রয়ীর কাছে এসে ওর থুতনি ধরে আহ্লাদের সহিত জিজ্ঞেস করে,
-তাহলে তোকে এতো বেখেয়ালি বেখেয়ালি লাগছে কেন, হ্যাঁ?
-না আসলে.. উনার কথাই ভাবছিলাম। কিন্তু দুশ্চিন্তা না।
-ওহ আচ্ছা, তাই? ভালো তো।
ত্রয়ী এবার হিমার এক হাত জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো প্রশ্ন করে,
-ও হিমাপ্পা, উনি আসার পর তোমার সাথে উনার কথা হয়েছে?
-না তো। কেন বল্ তো?
-আসলে.. আমি না উনার সাথে রাগ করে বসেছিলাম। উনি আমার মান ভাঙানোর সফল চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তাও আমি উনার সাথে ভালোভাবে একটাও কথা বলিনি। এখন উনিও কি আমার উপর রাগ করে আছেন? বা মন খারাপ করেছেন? উফ বুঝতে পারছি না!
হিমা ত্রয়ীর কথা শুনে এক গাল হেসে নেয়। আর বলে,
-ওরে পাগলি মেয়ে, রাগ বা মন খারাপের কী আছে? ও এমন করবে কেন? আর করলেই বা কী? এসব তো ক্ষণস্থায়ী। পরে আবার সব ঠিক হয়ে যাবে দেখিস৷
ত্রয়ী একটু প্রশান্ত দৃষ্টিতে তাকায় হিমার দিকে,
-তুমি কত্তো ভালো হিমাপ্পা! এই এক তোমার সাথেই আমি এভাবে মনখুলে উনাকে নিয়ে যা ইচ্ছা বলতে পারি। যেকোনো সুসময় বা দুঃসময়েও তোমাকে পাশে পাই। মনের কথাগুলো শেয়ার করে খুব হালকা হালকা লাগে তখন।
হিমা হেসে ত্রয়ীর হাত দুটো নিজের মুঠোয় নিয়ে নেয়,
-তাই? তা আর কয়দিন পর আমরা যখন আবার লন্ডন চলে যাবো, তখন কার সাথে এসব কথা বলবি?
কথাটা শুনেই ত্রয়ীর মুখটা একদম শুকনো পাউরুটির মতো হয়ে যায়,
-সে কি! তোমার কয়দিন পরেই চলে যাবে? কবে?
-হ্যাঁ রে। পরের সপ্তাহেই আমাদের ফ্লাইট মেবি। অনেক মাস তো থাকলাম। দেখতে দেখতে এখন যাওয়ার সময়টাও হয়ে এলো। না গিয়েও তো উপায় নেই। যেতেই হবে।
হিমার যাওয়ার কথা শুনেই ত্রয়ী মনমরা হয়ে যায়। ও নত মাথায় ছোট্ট করে জবাব দেয়,
-ওহ!
হিমা ত্রয়ীকে হালকা জড়িয়ে ধরে বলে,
-আচ্ছা এখন মন খারাপ করিস না তো। আমি কি এখনি চলে যাচ্ছি নাকি? আরো বেশ কয়েকদিন তো আছিই। দেখি চল্ এখন নাস্তা করবো। খুব খিদে খিদে পাচ্ছে আয়।
হিমা ত্রয়ীকে টানতে টানতে ভেতরে নিয়ে যায়। আর ত্রয়ীও মন খারাপটা দূরে ঠেলে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে মৃদু হাসিতে মাতে।
_________________________________________________________
দুপুর থেকে নিশান ওদের বাসার সামনের মেইন রোডের এক দোকানে বসে কিসের জন্য যেন অপেক্ষা করছে। দোকানটা দোতলায় অবস্থিত। ওর আংকেলের এক কফিশপও ওখানে। তো নিশান প্রায়ই এখানে যাতায়াত করে। যদিও ওর কফি ততোটা পছন্দ নয়, তো ও এসে অর্ডার দিয়ে এক কাপ চা পান করে। আর রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে ব্যস্ত রাস্তা পর্যবেক্ষণ করে।
কিন্তু আজ কয়দিন ধরে ঠিক এই সময়টাতেই ও অন্যকিছুর জন্যও অপেক্ষা করে। আর অপেক্ষার কারণটা একজনই। ইফতিহা। মেইন রোডের শেষ মাথাতেই ইফতিহার স্কুলটা। যখন ছুটির পর ছাত্রছাত্রীরা বের হয়, তখন নিশান এখানের এই দোতলার বারান্দাটা থেকে সব স্পষ্ট দেখতে পায়। এখনও সে স্কুল ছুটির অপেক্ষাতেই আছে। কখন স্কুল ছুটি হবে, আর সে ইফতিহা স্কুল ড্রেস পড়ে মাথায় স্কার্ফ দিয়ে বান্ধবীদের সাথে হেটে হেটে গল্প কথায় বাসায় যাওয়াটা দেখবে।
ইফতিহাও গত দু’দিন ধরে দেখছে, নিশান ওকে চুপি চুপি দূর থেকে নজরে নজরে রাখছে। যদিও ওর ব্যাপারটা ভালোই লাগে, এইটা ভেবে যে, ওর জন্যও কেউ এভাবে এতো খেয়াল করে। যাকগে! কিন্তু নিশান সরাসরি কিছু বলে না কেন? ঐদিন ইফতিহা মুখ লুকিয়ে চলে যাওয়ার পর নিশান আর ওর মুখোমুখি হয় নি।
ধ্যৎ! কেন যে ইফতিহা নিজেও নিশানকে সরাসরি পছন্দের কথা বলতে পারে না! নিশান ওভাবে স্পষ্টভাবে বলার পরও যদি ইফতিহা ওর দুর্বলতার কথা স্বীকার না করে, তাহলে বেচারা আর কী করবে? যেমন ভদ্র ছেলে, জোর করেও তো ভালোবাসা আদায় করতে চলে আসবে না।
যাক! ইফতিহাকে সময় দিচ্ছে নিশান। নিশান চায়, ইফতিহা নিজেই এখন ওর কাছে ধরা দিক। ওর যতোটুক বলার দরকার ছিলো, ততোটুক বলে হয়তো ইফতিহার মনে একটু হলেও ওর ভালোবাসার সঞ্চার করা গিয়েছে।
ইফতিহা ধীরে ধীরে পথ হাঁটছিলো। আর নিশান সেটাই নয়নভরে দেখছিলো। হঠাৎ ওর খেয়াল হয়, আজ তো হিমা-ঝুমা ওরা লন্ডন চলে যাবে। ত্রয়ীটাকে কান্না করতেও দেখে এসেছে নিশান। হায় হায়! জলদি বাসায় পৌছাতে হবে। ওদেরকে বিদায় জানানোর জন্য সবাই এয়ারপোর্টেও তো যাবে। ইশ রে! দেরি হয়ে গেলো হয়তো। এটা ভেবেই নিশান দ্রুত পা চালিয়ে নিচে নেমে নিজেও বাসার দিকে রওনা হয়।
_______________________________________________________
এই সপ্তাহে ইনানকে আবার সিলেট যেতে হচ্ছে। ওদের সেই জায়গার সমস্যাটার জন্যই। ওটার প্যাঁচ আর সহজে ছোটানো যাচ্ছে না। কিছু বদলোকের নজর পড়েছে যে। পড়বেই বা না কেন? টানা এতো শতক জমিন! কোনোভাবে এখানে কোনো ব্যবসা বা বিল্ডিং দাঁড় করাতে পারলেই লাভের উপর লাভ হবে। চরম লাভ বৈকি লস হবে না।
যাক! ঠিক এই জায়গাটার জন্যই থানায় কেইস ফাইলও হয়ে গেছে। ইনানের দাদার রেখে যাওয়া জায়গা এটা। উনার ইচ্ছা ছিলো- এই জায়গায় একটা এতিমখানা স্থাপন হবে। যদিও উনি জীবিত অবস্থায় তা করে যেতে পারেন নি, তবে উনার ছেলে-নাতিরা মিলে ঠিকই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছিলো।
কিন্তু হুট করেই এই জায়গার উপর তাদের এলাকার এক নেতা, আবদুল সামাদ সাহেবের কুদৃষ্টি পড়ে। উনি এই জায়গাটা দখল করে এখানে মার্কেট, শপিং মল খুলবেন। তাই তলে তলেই এই পুরো জমিন নিজের নামে করাতে উঠে পড়ে লেগেছেন। তবে আল্লাহর রহমত! বিভিন্ন সূত্রে মোস্তফা হক আর ইনান এই ব্যাপারে জেনে গিয়েছিলো। আর তারপরেই নেতার দল আর ইনান ও ওর বাবা -এই দুই পক্ষে জায়গা নিয়ে অনেক কোর্টকাছারি শুরু হয়ে যায়।
কাল আবার এই নিয়ে কোর্টে শুনানি আছে। সেজন্যই ইনান আবার প্রস্তুতি নিচ্ছে সিলেট যাওয়ার। এইবার হয়তো আর জমিটা হাতছাড়া হবেনা। সব সাক্ষ্য প্রমাণাদি ওদের সত্যের পক্ষেই আছে বলে ওর ধারণা। যাকগে, দেখা যাক কী হয়।
মোস্তফা হকের শরীরটা একটু ঠিক নেই। কয়দিন ধরেই একটু দুর্বলতায় ভুগছিলেন। গতরাতে তো জ্বরও দেখা দিয়ে গেলো। তাই এই অবস্থায় ইনান ওর বাবাকে এখান থেকে সিলেট নিয়ে যেতে চাইছে না৷ মোস্তফা হক বলছিলেন, উনিও যাবেনই সাথে। কিন্তু পরে ছেলের জেদের কাছে হার মানতে হলো উনাকে।
ইনান ওর বাবাকে সব ঠিকঠাকভাবে সামলে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে একা একাই সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। তবে যাওয়ার আগে একটাবার ত্রয়ীর মিষ্টিমুখের দর্শন করতেও ভুলে নি ইনান। ভেতর ভেতর মন খারাপ থাকলেও ত্রয়ীও হাসিমুখেই ওর ইনানের শুভ কামনার জন্য দোয়া করে সাময়িক বিদায় দেয়।
_______________________________________________________
ইনান সিলেট পৌঁছেই আগে ত্রয়ীকে ইনফর্ম করে। নাহলে মেয়েটা আবার জানি কখন রাগ-অভিমানের পাহাড় গড়ে বসে! ত্রয়ীর সাথে মনমতো কথা বলার পর বাসায় কল করেও ওর পৌঁছানোর খবর জানিয়ে দেয়।
ইনান ফ্রেশ টেশ হয়েই ওদের উকিল সাহেবের বাসার দিকে রওনা হয়। ওর দাদার জায়গাটা আর কালকের মামলার শুনানিটা নিয়ে উকিল সাহেবের সঙ্গে দরকারি আলাপ আলোচনা আছে।
ওসব কথা সারতে সারতে উনার বাসাতেই প্রায় ঘন্টা দু’য়েকের মতো কেটে যায়।
রাত তখন সাড়ে এগারোটার মতো।
ইনান উকিল সাহেবের বাসা থেকে বের হয়েই ওর বন্ধু ফয়সালকে কল দেয়। ওর মেসে আজ ইনানের দাওয়াত। আরো ক’জন বন্ধুও থাকবে। বেশ আড্ডা ফুর্তির সাথে ডিনারটা করা যাবে। ইনান ওর বন্ধুর অপেক্ষায় রাস্তার অন্ধকার মোড়টায় দাঁড়িয়ে থাকে। মিনিট দশেকের মধ্যেই চলে আসবে হয়তো।
একা একা দাঁড়িয়ে এখানে মশার কামড় খেতেও ভালো লাগছে না ইনানের। অথচ তাছাড়া উপায়ও নেই। ইনান ওর বন্ধুর নতুন মেসটা ঠিক কোথায়, জানে না। তাই ফয়সাল আসলে দু’জন মিলেই ওখানে চলে যাবে।
ইনান অপেক্ষা করছে। ওর হাতঘড়িতে সময় যাবে, ঠিক তখনি কয়েকজন যেন ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। একজন রীতিমতো ওর মুখে কি যেন চেপেও ধরেছে। ইনানের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। একদল ছোকড়া ওকে অন্ধকার গলিটায় টেনে মাটিতে ফেলে বেদম প্রহার করতে থাকলো। দু’জনের হাতে স্টিক, আর ক’জন খালি হাতেই ঘুষি দিচ্ছে, এলোপাথাড়ি লাথি দিচ্ছে। আর বলছে,
-খুব পাখা গজিয়ে গেছে, তাই না? এইটুক বয়সেই এতো চ্যাংড়ামো? হ্যাঁ? বসের সাথে পাঙ্গা! ঐ তোর বাপটা কই? ওটাকেও কয়টা উত্তম মধ্যম দিলে ঠিক হতো!
ইনান এক মুহুর্তের জন্য পুরো স্তব্ধ হয়ে গেলো। ওর সাথে কী হচ্ছে না হচ্ছে, কিছুই যেন ঠাওর করতে পারছে না। সমস্ত শরীরে ব্যাথা করছে ওর। হাতে পায়ে কালশিটে দাগ পড়ে গেছে। এই নির্জন গলিতে কাউকে খুন করে ফেললেও হয়তো কাক-পক্ষী কেউই টের পাবে না।
ইনান উঠতে চেয়েও উঠতে পারছে না। ওদের উলটো আঘাত করতে পারছে না। হাত পা নাড়াতে কষ্ট হচ্ছে খুব। ওর গলা দিয়ে এখন চিৎকারও বের হতে চাইছে না। ওদিকে আগন্তুক ছেলেগুলোও ওকে ক্রমাগত মেরেই চলেছে।
ইনান এক পর্যায়ে বুদ্ধি করে ওদের ক’জনকে ধোঁকা দিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে পড়তে যাবে, ঠিক এমন সময়ই ওদের মধ্যে কেউ একজন একটা লোহার পাইপ হাতে নিয়ে সজোরে পেছন থেকে ইনানের মাথায় আঘাত বসিয়ে দিলো। ইনান সঙ্গে সঙ্গে ওর মাথায় দু’হাত ধরে একটা হৃদয়বিদারক চিৎকার দিয়ে হাটু ভেঙে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। ওর মাথা দিয়ে অজস্রে রক্ত ঝরছে। নাক মুখ দিয়েও রক্ত গড়াচ্ছে।
এবারে ইনানকে মারতে আসা ছেলেগুলো ভড়কে গেলো। ওদের কেউ একজন বললো,
-একি রে! মরে টরে গেলো নাকি? তাহলে তো আরেক ঝামেলায় পড়ে যাবো। বস তো মারার কথা একদমই বলে নি। শুধু ওর এমন দুঃসাহসিকতার জন্য মেরেপিটে একটু ভয় দেখানোর কথা বলেছিলো।
অন্যজন বললো,
-আরে আমি তো ওভাবে মারতে চাই নি। শালা নিজেই তো চালাকি করতে গিয়ে ফাঁসলো। আমার কোনো দোষ নেই কিন্তু।
ওদের একজন নিচু হয়ে ইনানের নাকের কাছে আঙুল ধরে ওর শ্বাস-প্রশ্বাস চেক করে বলে উঠলো,
-ওরে শালা এখনো মরে নি। আল্লাহ রক্ষা করলেন! অনেক হয়েছে। চল্ এখন পালা!
বলেই সবক’টা দ্রুত ভোঁ দৌড় দিয়ে ওখান থেকে পালিয়ে যায়। আর ইনান গলির মধ্যেই পড়ে থাকে প্রায় অর্ধমৃত অবস্থায়।
.
.
চলবে..#বেখেয়ালি_মনে
#লেখনীতে- Ifra Chowdhury
৩৭.
__________________
ত্রয়ী আনমনে দাঁড়িয়ে আছে বেলকনির এক পাশে। বারেবার ইনানের গানের কন্ঠ ওর কানে ভেসে উঠছে। আর ও চোখ বন্ধ করে সেটা গভীরভাবে অনুভব করতে চাইছে। খুব স্বস্তিবোধ হচ্ছে ওর। মনের মধ্যে এক অজানা প্রশান্তি কাজ করছে।
যদিও তখন ইনানের গান শুনেও মুখ ফিরিয়ে ছাদ থেকে নিজের রুমে এসেছিলো, কিন্তু মূলত ওর মান-অভিমান, রাগ সবই গলে গেছে! ইশ এখন ইচ্ছে করছে, তখনি যদি ও ইনানকে জড়িয়ে ধরতে পারতো!
এসব ভেবে একা একাই উশখুশ করছে ত্রয়ী। ইনানের কথা ভাবতে ভাবতে চিন্তিত মনে বারান্দার পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে পায়চারি শুরু করেছে। ওর হাতের আঙুলগুলোও স্থির নেই। পরস্পরের সাথে প্যাঁচ কাটতেই ব্যস্ত ওরা।
ইনানদের বাসায় গিয়ে কি একটাবার ওকে দেখে আসবে? একটু মিষ্টি করে কথা বলবে? ওর ভেতরের অস্থিরতাটা প্রকাশ করবে?
না থাক! দরকার নেই বাবা। কেউ এমন সময় দেখে যদি সন্দেহ টন্দেহ করে? আগামীকালের জন্যই অপেক্ষা করা যাক বরং।
‘অপেক্ষার ফল সুমিষ্ট হয় ত্রয়ী।’
এই বলেই আপন মনে নিজেকে সান্ত্বনা দেয় সে।
একটু পরেই ওখানে এসে হিমা উপস্থিত হয়। বেলকনিতে ত্রয়ীকে ওভাবে অস্থিরভাবে হাটতে দেখে হিমা বলে,
-কি গো, তোমার দুশ্চিন্তা কি এখনো শেষ হয় নি? তোমার নাগর তো চলেই এসেছে।
কথাটা বলেই একটা দুষ্টু হাসি দেয় হিমা।
ত্রয়ী হিমার কন্ঠ শুনে চমকে তাকায়। আর সেই সাথে ওর চাহনিতে একটা ঝাপসা লজ্জার আভাও ফুটে উঠে। ও আমতা আমতা করে হাসার চেষ্টা করে একটু,
-ক-কই দুশ্চিন্তা করছি? না তো।
হিমা ত্রয়ীর কাছে এসে ওর থুতনি ধরে আহ্লাদের সহিত জিজ্ঞেস করে,
-তাহলে তোকে এতো বেখেয়ালি বেখেয়ালি লাগছে কেন, হ্যাঁ?
-না আসলে.. উনার কথাই ভাবছিলাম। কিন্তু দুশ্চিন্তা না।
-ওহ আচ্ছা, তাই? ভালো তো।
ত্রয়ী এবার হিমার এক হাত জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো প্রশ্ন করে,
-ও হিমাপ্পা, উনি আসার পর তোমার সাথে উনার কথা হয়েছে?
-না তো। কেন বল্ তো?
-আসলে.. আমি না উনার সাথে রাগ করে বসেছিলাম। উনি আমার মান ভাঙানোর সফল চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তাও আমি উনার সাথে ভালোভাবে একটাও কথা বলিনি। এখন উনিও কি আমার উপর রাগ করে আছেন? বা মন খারাপ করেছেন? উফ বুঝতে পারছি না!
হিমা ত্রয়ীর কথা শুনে এক গাল হেসে নেয়। আর বলে,
-ওরে পাগলি মেয়ে, রাগ বা মন খারাপের কী আছে? ও এমন করবে কেন? আর করলেই বা কী? এসব তো ক্ষণস্থায়ী। পরে আবার সব ঠিক হয়ে যাবে দেখিস৷
ত্রয়ী একটু প্রশান্ত দৃষ্টিতে তাকায় হিমার দিকে,
-তুমি কত্তো ভালো হিমাপ্পা! এই এক তোমার সাথেই আমি এভাবে মনখুলে উনাকে নিয়ে যা ইচ্ছা বলতে পারি। যেকোনো সুসময় বা দুঃসময়েও তোমাকে পাশে পাই। মনের কথাগুলো শেয়ার করে খুব হালকা হালকা লাগে তখন।
হিমা হেসে ত্রয়ীর হাত দুটো নিজের মুঠোয় নিয়ে নেয়,
-তাই? তা আর কয়দিন পর আমরা যখন আবার লন্ডন চলে যাবো, তখন কার সাথে এসব কথা বলবি?
কথাটা শুনেই ত্রয়ীর মুখটা একদম শুকনো পাউরুটির মতো হয়ে যায়,
-সে কি! তোমার কয়দিন পরেই চলে যাবে? কবে?
-হ্যাঁ রে। পরের সপ্তাহেই আমাদের ফ্লাইট মেবি। অনেক মাস তো থাকলাম। দেখতে দেখতে এখন যাওয়ার সময়টাও হয়ে এলো। না গিয়েও তো উপায় নেই। যেতেই হবে।
হিমার যাওয়ার কথা শুনেই ত্রয়ী মনমরা হয়ে যায়। ও নত মাথায় ছোট্ট করে জবাব দেয়,
-ওহ!
হিমা ত্রয়ীকে হালকা জড়িয়ে ধরে বলে,
-আচ্ছা এখন মন খারাপ করিস না তো। আমি কি এখনি চলে যাচ্ছি নাকি? আরো বেশ কয়েকদিন তো আছিই। দেখি চল্ এখন নাস্তা করবো। খুব খিদে খিদে পাচ্ছে আয়।
হিমা ত্রয়ীকে টানতে টানতে ভেতরে নিয়ে যায়। আর ত্রয়ীও মন খারাপটা দূরে ঠেলে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে মৃদু হাসিতে মাতে।
_________________________________________________________
দুপুর থেকে নিশান ওদের বাসার সামনের মেইন রোডের এক দোকানে বসে কিসের জন্য যেন অপেক্ষা করছে। দোকানটা দোতলায় অবস্থিত। ওর আংকেলের এক কফিশপও ওখানে। তো নিশান প্রায়ই এখানে যাতায়াত করে। যদিও ওর কফি ততোটা পছন্দ নয়, তো ও এসে অর্ডার দিয়ে এক কাপ চা পান করে। আর রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে ব্যস্ত রাস্তা পর্যবেক্ষণ করে।
কিন্তু আজ কয়দিন ধরে ঠিক এই সময়টাতেই ও অন্যকিছুর জন্যও অপেক্ষা করে। আর অপেক্ষার কারণটা একজনই। ইফতিহা। মেইন রোডের শেষ মাথাতেই ইফতিহার স্কুলটা। যখন ছুটির পর ছাত্রছাত্রীরা বের হয়, তখন নিশান এখানের এই দোতলার বারান্দাটা থেকে সব স্পষ্ট দেখতে পায়। এখনও সে স্কুল ছুটির অপেক্ষাতেই আছে। কখন স্কুল ছুটি হবে, আর সে ইফতিহা স্কুল ড্রেস পড়ে মাথায় স্কার্ফ দিয়ে বান্ধবীদের সাথে হেটে হেটে গল্প কথায় বাসায় যাওয়াটা দেখবে।
ইফতিহাও গত দু’দিন ধরে দেখছে, নিশান ওকে চুপি চুপি দূর থেকে নজরে নজরে রাখছে। যদিও ওর ব্যাপারটা ভালোই লাগে, এইটা ভেবে যে, ওর জন্যও কেউ এভাবে এতো খেয়াল করে। যাকগে! কিন্তু নিশান সরাসরি কিছু বলে না কেন? ঐদিন ইফতিহা মুখ লুকিয়ে চলে যাওয়ার পর নিশান আর ওর মুখোমুখি হয় নি।
ধ্যৎ! কেন যে ইফতিহা নিজেও নিশানকে সরাসরি পছন্দের কথা বলতে পারে না! নিশান ওভাবে স্পষ্টভাবে বলার পরও যদি ইফতিহা ওর দুর্বলতার কথা স্বীকার না করে, তাহলে বেচারা আর কী করবে? যেমন ভদ্র ছেলে, জোর করেও তো ভালোবাসা আদায় করতে চলে আসবে না।
যাক! ইফতিহাকে সময় দিচ্ছে নিশান। নিশান চায়, ইফতিহা নিজেই এখন ওর কাছে ধরা দিক। ওর যতোটুক বলার দরকার ছিলো, ততোটুক বলে হয়তো ইফতিহার মনে একটু হলেও ওর ভালোবাসার সঞ্চার করা গিয়েছে।
ইফতিহা ধীরে ধীরে পথ হাঁটছিলো। আর নিশান সেটাই নয়নভরে দেখছিলো। হঠাৎ ওর খেয়াল হয়, আজ তো হিমা-ঝুমা ওরা লন্ডন চলে যাবে। ত্রয়ীটাকে কান্না করতেও দেখে এসেছে নিশান। হায় হায়! জলদি বাসায় পৌছাতে হবে। ওদেরকে বিদায় জানানোর জন্য সবাই এয়ারপোর্টেও তো যাবে। ইশ রে! দেরি হয়ে গেলো হয়তো। এটা ভেবেই নিশান দ্রুত পা চালিয়ে নিচে নেমে নিজেও বাসার দিকে রওনা হয়।
_______________________________________________________
এই সপ্তাহে ইনানকে আবার সিলেট যেতে হচ্ছে। ওদের সেই জায়গার সমস্যাটার জন্যই। ওটার প্যাঁচ আর সহজে ছোটানো যাচ্ছে না। কিছু বদলোকের নজর পড়েছে যে। পড়বেই বা না কেন? টানা এতো শতক জমিন! কোনোভাবে এখানে কোনো ব্যবসা বা বিল্ডিং দাঁড় করাতে পারলেই লাভের উপর লাভ হবে। চরম লাভ বৈকি লস হবে না।
যাক! ঠিক এই জায়গাটার জন্যই থানায় কেইস ফাইলও হয়ে গেছে। ইনানের দাদার রেখে যাওয়া জায়গা এটা। উনার ইচ্ছা ছিলো- এই জায়গায় একটা এতিমখানা স্থাপন হবে। যদিও উনি জীবিত অবস্থায় তা করে যেতে পারেন নি, তবে উনার ছেলে-নাতিরা মিলে ঠিকই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছিলো।
কিন্তু হুট করেই এই জায়গার উপর তাদের এলাকার এক নেতা, আবদুল সামাদ সাহেবের কুদৃষ্টি পড়ে। উনি এই জায়গাটা দখল করে এখানে মার্কেট, শপিং মল খুলবেন। তাই তলে তলেই এই পুরো জমিন নিজের নামে করাতে উঠে পড়ে লেগেছেন। তবে আল্লাহর রহমত! বিভিন্ন সূত্রে মোস্তফা হক আর ইনান এই ব্যাপারে জেনে গিয়েছিলো। আর তারপরেই নেতার দল আর ইনান ও ওর বাবা -এই দুই পক্ষে জায়গা নিয়ে অনেক কোর্টকাছারি শুরু হয়ে যায়।
কাল আবার এই নিয়ে কোর্টে শুনানি আছে। সেজন্যই ইনান আবার প্রস্তুতি নিচ্ছে সিলেট যাওয়ার। এইবার হয়তো আর জমিটা হাতছাড়া হবেনা। সব সাক্ষ্য প্রমাণাদি ওদের সত্যের পক্ষেই আছে বলে ওর ধারণা। যাকগে, দেখা যাক কী হয়।
মোস্তফা হকের শরীরটা একটু ঠিক নেই। কয়দিন ধরেই একটু দুর্বলতায় ভুগছিলেন। গতরাতে তো জ্বরও দেখা দিয়ে গেলো। তাই এই অবস্থায় ইনান ওর বাবাকে এখান থেকে সিলেট নিয়ে যেতে চাইছে না৷ মোস্তফা হক বলছিলেন, উনিও যাবেনই সাথে। কিন্তু পরে ছেলের জেদের কাছে হার মানতে হলো উনাকে।
ইনান ওর বাবাকে সব ঠিকঠাকভাবে সামলে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে একা একাই সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। তবে যাওয়ার আগে একটাবার ত্রয়ীর মিষ্টিমুখের দর্শন করতেও ভুলে নি ইনান। ভেতর ভেতর মন খারাপ থাকলেও ত্রয়ীও হাসিমুখেই ওর ইনানের শুভ কামনার জন্য দোয়া করে সাময়িক বিদায় দেয়।
_______________________________________________________
ইনান সিলেট পৌঁছেই আগে ত্রয়ীকে ইনফর্ম করে। নাহলে মেয়েটা আবার জানি কখন রাগ-অভিমানের পাহাড় গড়ে বসে! ত্রয়ীর সাথে মনমতো কথা বলার পর বাসায় কল করেও ওর পৌঁছানোর খবর জানিয়ে দেয়।
ইনান ফ্রেশ টেশ হয়েই ওদের উকিল সাহেবের বাসার দিকে রওনা হয়। ওর দাদার জায়গাটা আর কালকের মামলার শুনানিটা নিয়ে উকিল সাহেবের সঙ্গে দরকারি আলাপ আলোচনা আছে।
ওসব কথা সারতে সারতে উনার বাসাতেই প্রায় ঘন্টা দু’য়েকের মতো কেটে যায়।
রাত তখন সাড়ে এগারোটার মতো।
ইনান উকিল সাহেবের বাসা থেকে বের হয়েই ওর বন্ধু ফয়সালকে কল দেয়। ওর মেসে আজ ইনানের দাওয়াত। আরো ক’জন বন্ধুও থাকবে। বেশ আড্ডা ফুর্তির সাথে ডিনারটা করা যাবে। ইনান ওর বন্ধুর অপেক্ষায় রাস্তার অন্ধকার মোড়টায় দাঁড়িয়ে থাকে। মিনিট দশেকের মধ্যেই চলে আসবে হয়তো।
একা একা দাঁড়িয়ে এখানে মশার কামড় খেতেও ভালো লাগছে না ইনানের। অথচ তাছাড়া উপায়ও নেই। ইনান ওর বন্ধুর নতুন মেসটা ঠিক কোথায়, জানে না। তাই ফয়সাল আসলে দু’জন মিলেই ওখানে চলে যাবে।
ইনান অপেক্ষা করছে। ওর হাতঘড়িতে সময় যাবে, ঠিক তখনি কয়েকজন যেন ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। একজন রীতিমতো ওর মুখে কি যেন চেপেও ধরেছে। ইনানের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। একদল ছোকড়া ওকে অন্ধকার গলিটায় টেনে মাটিতে ফেলে বেদম প্রহার করতে থাকলো। দু’জনের হাতে স্টিক, আর ক’জন খালি হাতেই ঘুষি দিচ্ছে, এলোপাথাড়ি লাথি দিচ্ছে। আর বলছে,
-খুব পাখা গজিয়ে গেছে, তাই না? এইটুক বয়সেই এতো চ্যাংড়ামো? হ্যাঁ? বসের সাথে পাঙ্গা! ঐ তোর বাপটা কই? ওটাকেও কয়টা উত্তম মধ্যম দিলে ঠিক হতো!
ইনান এক মুহুর্তের জন্য পুরো স্তব্ধ হয়ে গেলো। ওর সাথে কী হচ্ছে না হচ্ছে, কিছুই যেন ঠাওর করতে পারছে না। সমস্ত শরীরে ব্যাথা করছে ওর। হাতে পায়ে কালশিটে দাগ পড়ে গেছে। এই নির্জন গলিতে কাউকে খুন করে ফেললেও হয়তো কাক-পক্ষী কেউই টের পাবে না।
ইনান উঠতে চেয়েও উঠতে পারছে না। ওদের উলটো আঘাত করতে পারছে না। হাত পা নাড়াতে কষ্ট হচ্ছে খুব। ওর গলা দিয়ে এখন চিৎকারও বের হতে চাইছে না। ওদিকে আগন্তুক ছেলেগুলোও ওকে ক্রমাগত মেরেই চলেছে।
ইনান এক পর্যায়ে বুদ্ধি করে ওদের ক’জনকে ধোঁকা দিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে পড়তে যাবে, ঠিক এমন সময়ই ওদের মধ্যে কেউ একজন একটা লোহার পাইপ হাতে নিয়ে সজোরে পেছন থেকে ইনানের মাথায় আঘাত বসিয়ে দিলো। ইনান সঙ্গে সঙ্গে ওর মাথায় দু’হাত ধরে একটা হৃদয়বিদারক চিৎকার দিয়ে হাটু ভেঙে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। ওর মাথা দিয়ে অজস্রে রক্ত ঝরছে। নাক মুখ দিয়েও রক্ত গড়াচ্ছে।
এবারে ইনানকে মারতে আসা ছেলেগুলো ভড়কে গেলো। ওদের কেউ একজন বললো,
-একি রে! মরে টরে গেলো নাকি? তাহলে তো আরেক ঝামেলায় পড়ে যাবো। বস তো মারার কথা একদমই বলে নি। শুধু ওর এমন দুঃসাহসিকতার জন্য মেরেপিটে একটু ভয় দেখানোর কথা বলেছিলো।
অন্যজন বললো,
-আরে আমি তো ওভাবে মারতে চাই নি। শালা নিজেই তো চালাকি করতে গিয়ে ফাঁসলো। আমার কোনো দোষ নেই কিন্তু।
ওদের একজন নিচু হয়ে ইনানের নাকের কাছে আঙুল ধরে ওর শ্বাস-প্রশ্বাস চেক করে বলে উঠলো,
-ওরে শালা এখনো মরে নি। আল্লাহ রক্ষা করলেন! অনেক হয়েছে। চল্ এখন পালা!
বলেই সবক’টা দ্রুত ভোঁ দৌড় দিয়ে ওখান থেকে পালিয়ে যায়। আর ইনান গলির মধ্যেই পড়ে থাকে প্রায় অর্ধমৃত অবস্থায়।
.
.
চলবে..