বেলির_কথা (০২)

#বেলির_কথা (০২)

শাহেদ তড়িঘড়ি করে ডাক্তার নিয়ে আসে,ডাক্তার কাকাকে অনেক বুঝিয়ে নিয়ে আসে সে।ডাক্তার কাকা আবার অনেক ভালো মানুষ।শাহেদকে আলাদাভাবে স্নেহ করেন তাই তার কথা ফেলতে পারেনি।

বেলি তখনো জ্বরের ঘোরে বিড়বিড় করছিলো।
‘আম্মা আমি ভাইয়ের সব কথা শুনবো,তাও আমাকে ছেড়ে যেও না?’

ডাক্তার কাকা জ্বর মেপে ঔষধ দেন।
‘বেলিকে কিছু খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দাও।’

ডাক্তারকে শাহেদ বাড়ি পর্যন্ত পৌছে দেয়।সারারাত বেলির মা ঘুমায় না।অজানা ভয়ে তার মনটা ছোট হয়ে আছে।কিছুক্ষণ পর পর জলপট্টি দেয় আর চোখ মুছে।
শাহেদ ঘুমিয়ে পড়ে।
.
ভোরের দিকে বেলির জ্বর সেড়ে উঠে।শরীর অনেক দূর্বল তবুও সে উঠে বসে।পাশে দেখে মা হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে।বেলি চুপটি করে বিছানা থেকে নেমে পড়ে।

বাইরে বের হয়।একটু একটু ভোরের আলো ফুটেছে সবে।পাখিরা কিচিরমিচির ডাকছে।বেলি বারান্দায় বসে পাখিদের সাথে কথা বলে হাসে।
বেলির মায়ের ঘুম ছুটে যায়।পাশে বেলিকে না দেখে তিনি তাড়াতাড়ি বের হয়ে দেখেন বেলি বারান্দায় বসে আছে।পাশে গিয়ে বেলির কপালে হাত রাখে।
‘এখন কেমন লাগছে?’
‘ভালো আম্মা?কি হয়েছিল আমার?’
‘কিছু হয়নি।’
‘আমি ভাবছি আজ থেকে ভাইয়ের সব কথা শুনবো।বেলিকে মারার জন্য ভাই কিছু খুঁজে ই পাবেনা।’
‘আচ্ছা এসব বাদ দে।মুখহাত ধুয়ে আয়।’
.
বেলিদের বাড়ির পাশে পুকুর।গ্রামের মানুষরা সাধারণত পুকুরেই প্রায় সব কাজ করেন।এই যেমন- মুখ হাত ধোয়া,গোসল করা,কাপড় ধোয়া,বাসনকোসন ধোয়া ইত্যাদি।

বেলি পুকুরঘাটে বসে।কিছুক্ষণ মাছেদের দিকে তাকায়।তারপর মাছকে জিজ্ঞাসা করে,
‘আচ্ছা মাছ সাতার কাটতে কি খুব মজা?এতক্ষণ তোরা পানিতে থাকিস অসুখ করেনা তোদের?’

বেলি চুপচাপ কিছুক্ষণ মাছগুলো দেখে কি যেন ভাবে।তারপর মুখ ধুয়ে চলে আসে।
‘এতক্ষণ করলি যে?আমি যে চিন্তায় ছিলাম।’
‘মাছগুলোকে দেখছিলাম।’
‘আচ্ছা।আয় খেতে আয়?’

শাহেদ উঠে বেলিকে দেখে।বেশ সুস্থ দেখাচ্ছে বোনকে।
দুজনেই পাটি পেতে বসে চা পান করছিলো।শাহেদ বলে,
‘বেলি! নদীর ধারে মাছ ধরতে যাবি আমার সাথে?’

বেলির চোখমুখ খুশিতে ভরে যায়।
‘হ্যা যাব।’

কিন্তু বেলির মা বলে,
‘না ও এখনো পুরপুরি সুস্থ হয়নি।’
‘তাতে কি আম্মা আমি দেখে রাখবো।’

দুইভাইবোনের মহব্বত দেখে বেলির মা সস্থি পায়।শাহেদ যখন রাগে তখন যেন অন্যমানুষ।এটা নিয়েই মন আবার ভার হয়ে আসে।

শাহেদ আর বেলি জাল নিয়ে বের হয়।বেলির হাতে একটা পাত্র রয়েছে।মাছ পেলে সেটাতে রাখবে।

বাড়ি থেকে একটু দূরে নদী।তারা বিল দিয়ে হেটে নদীর কাছে পৌছালো।শাহেদ জাল ছুড়ে দিলো।জাল টেনে আনতেই দেখলো অনেক ধরনের মাছ এসেছে।

বেলি জিজ্ঞেস করে,
‘ভাই এ মাছগুলোর নাম কি?চেহারা গুলো বেশ সুন্দর।’

বেলির বোকা কথায় শাহেদ হাসে।মাছের আবার চেহারা।
‘মাছের চেহারা সুন্দর হয় কি রে বেলি?’
‘হ্যা হয়তো দেখো সুন্দর।তোমার মতো ই সুন্দর চেহারা।’
‘আমি সুন্দর?’
‘হ্যাএএ আমার ভাই অনেক সুন্দর।'(হাত বাড়িয়ে বলে)
‘তুই ও সুন্দর বেলি।’

বেলি চুপ হয়ে যায়।শাহেদ আর এ কথা আর বাড়ায় না।শাহেদ বলে,
‘মাছটার নাম পুঁটিমাছ।বইতে পড়িস না তোরা?’
‘হ্যা পড়েছিলাম চেহারা ভুলে গেছি তো।’

বেলির কথায় আবারো শাহেদ হাসে।পাত্রের অর্ধেক মাছ নিয়ে আবারো তারা বাসায় ফিরে আসে।
.
তারপর বেলি স্কুলে যাওয়ার জন্য রেডি হয়।প্রিয়া রিয়া সীমা এসেই ডাক দিতেই বেলি বের হয়।
‘আজ যাবি স্কুলে?’
‘হ্যা যাব।’
‘কাল যাসনি যে অনেক পড়া বাকি।তুই তো শিখিস নি? দেখ মাইর খাবি।’

বান্ধবীদের কথা শুনে বেলির মা ভয় পায়।তারপর বলে,
‘কি বলো তোমরা? তাহলে বেলি তুই যাস না।’
‘আম্মা তুমি আমায় নিয়ে এত ভয় পাও কেন?আমি গিয়েই সব পড়া শিখে নিবো।’

বেলি বের হয়।
‘সাবধানে যাস।খবরদার কোনো দুষ্টুমি করবি না।আমার চোখ কিন্তু তোর সাথে সাথে যায়।’
‘আচ্ছা।’
.
স্কুলে গিয়ে বেলি সব পড়া শিখে নেয়।বেলি ভাল স্টুডেন্ট হওয়ার শিক্ষক শিক্ষিকা সবাই ভালবাসে।তবে বেলির বান্ধবীরা তাকে তেমন পছন্দ করেনা।পুরা ক্লাস মিলে বেলি ই এমন চাপারঙ্গের।বান্ধবী যারা বেলির সাথে কথা বলে তারা শুধুমাত্র পরীক্ষায় বেলির হেল্প নেয়ার জন্য ই বলে।তবে বেলি ওদের এসব বুঝেনা।সরলভাবে ই তাদের সাথে মিশে।তবে সীমা অন্যরকম সে বেলিকে খুব পছন্দ করে।
.
স্কুল শেষে ফেরার পথে রিয়া বলে উঠে,
‘দ্যাখ দ্যাখ?এই গাছে কি সুন্দর পেয়ারা।কত্ত বড় পেয়ারা?বেলি তুই ত গাছে উঠতে পারিস।পেড়ে দে না?’

বেলি অসহায় হয়ে বলে,
‘আমি পারব না রে।আম্মা বলেছে চুরি করে কিছু খাওয়া ভাল না।’
‘ধ্যাত চাচি কি এখানে আছে?তুই চাচিকে কিছুই বলবি না তাহলেই তো হলো।’
‘না। আমি জানি আম্মার চোখ ও আমার সাথে হাটে।আমি যদি অন্যায় করি দেখে ফেলবে?’

বেলির কথায় বান্ধবী সবাই হেসে উঠে,
‘ও কি বোকা রে?’

বেলি চুপ করে থাকে।প্রিয়া লম্বা লাঠি খুঁজে পেয়ারা টা পেড়ে নেয়।তিনবান্ধবী ভাগাভাগি করে খায়।বেলি খায়না।তার খুব ভয়।আম্মা যদি জানতে পারে কখনো চুরি করে মানুষের ফল খেয়েছে।খুবই রাগ করবে।

বেলিরা বাড়ির প্রায় কাছাকাছি আসতেই দেখে এক বৃদ্ধমহিলা গরুর গোবর নিয়ে চিকন চিকন লাঠিতে লাগাচ্ছেন।মহিলাটির কাপা হাতে কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও রোদের মধ্যে এসব করছেন।একই গ্রামে থাকায় বেলি মহিলাকে চিনে।মহিলাটির স্বামী সন্তান কেউ ই নেই।

বেলিকে ও মহিলা চিনে।কিন্তু গোবর লাঠিতে লাগিয়ে কি করবে সেটাই মাথায় আসলো না বেলির।বেলিদের বাড়ির আশেপাশে কারোর ই গরু নেই আর থাকলে গোবর দিয়ে এসব করতে দেখেনি।তার মা কে ও কখনো করতে দেখেনি।

বেলি এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘অ বুড়িমা রোদের মধ্যে বসে এসব কি করছো?’
‘এগুলা লাকড়ি করছি।এগুলা শুকালে চুলায় আগুন ধরিয়ে রান্না করা যায়।’
‘আচ্ছা।আমি কি তোমাকে সাহায্য করবো?’
‘না রে।’

বেলির বান্ধবী প্রিয়া বলে,
‘কি করছিস?বাড়ি যেতে দেরি হয়ে যাবে।চল?’
বেলি বলে,
‘বুড়িমা এর কষ্ট হচ্ছে,হাত কাঁপছে। তাকে একটু সাহায্য করলে কি ক্ষতি?তোরা যা গা।’

বেলি আবারো বলে,
‘বুড়িমা আমি হাতে কিছু একটা বেধে তোমারে সাহায্য করি?তাহলে হাতে গন্ধ ও লাগবেনা।তাছাড়া আম্মা ত আমাকে দেখছেন ই।কাউকে সাহায্য করলে শুনলে আম্মা খুশি ই হবে।’

মহিলা বেলিকে দেখেয় অবাক হোন।তারপর বলেন,
‘ঠিক আছে অই যে গাছ দেখিস?ওখানে নিচে আরো কিছু গোবর আছে।ওগুলা গাছে লাগিয়ে দিয়ে যা।এগুলা ও শুকালে চুলায় দেয়া যাবে।’
.
বেলি গাছের নিচে গেলো।বান্ধবীরা(প্রিয়া,রিয়া) না চাওয়া সত্ত্বেও বেলির পিছনে দাঁড়াল।
সামনে পরীক্ষা আসতেছে বেলির সাথে সাথে ই থাকতে হবে।ঝগড়া লাগলে যদি বেলি না দেখায়? সারাবছর পড়া ন পড়ে বেলির থেকেই দেখে দেখে কোনমতে পাশ করে এরা।বেলি ও স্যারদের থেকে লুকিয়ে এদের সাহায্য করে নিঃস্বার্থে।
.
বেলি হাতে গোবর নিলো কিন্তু কিছুতেই গাছে লাগাতে পারছে না।বুড়িমা হাসলো।হেসে উঠে এসে দেখিয়ে দিলো।গোবর দলা পাকিয়ে জোরে ছুড়তে হবে।বেলি তাই তাই করলো।শেষবারের টা বেশি জোরে মারতে গিয়ে অন্যদিকে চলে গেলো।
গেলো ত গেলো ভালো।
কোথায় গেলো তাকিয়ে দেখতে বেলিরা দেখতে পায় একজন যুবক দাঁড়িয়ে আছে।লম্বা করে সাদা শার্ট কালো প্যান্ট।কাধে ব্যাগ।
সাদা শার্টের গায়েই গোবর।

ছেলেটি চিৎকার দিয়ে বলল,
‘এই মেয়ে তোমার সাহস কি করে হয়?আমার দিকে এসব ছুড়ে মারার?’

সীমা বেলির কানে কানে বলল,
‘চল বেলি পালাই।এ ছেলেটা আমাদের মেরে ফেলবে মনে হচ্ছে।যে রাগ!’

ছেলেটি আবারো বলল,
‘কি হলো পিচ্চি মেয়ে? এসব কি?’

বেলি অসহায় হয়ে তাকায়।সে তো ইচ্ছে করে এমন করেনি।সে কি ক্ষমা পাবেনা?আম্মা কি খুব বকবে?বেলি ছেলেটা কে কিছু বলতে চাইতেই বান্ধবীরা তাকে টেনে বলে,
‘চল পালাই?’

তারপর বেলিকে ধরেই তারা দৌড় দেয়।ছেলেটি তাদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে।শার্টের নিচের দিকে ই গোবর লেগেছিল।ছেলেটি শার্টটা টেনে নাকে নিয়ে আসে।

আর একটা শব্দ ই বের হয় মুখ থেকে,
‘ওওওয়াক্কক্কক্কক’

চলবে..

#তাহরীমা

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা উচিৎ)

(গল্পে হাসি কান্না সুখ দুঃখ সব থাকবে।যাদের ভাল লাগেনা গল্প আমি খুবই দুঃখিত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here