বেলির_কথা (০৯)

#বেলির_কথা (০৯)

.
রামিমের বাবার বন্ধু রামিমের বাবার সাথে দেখা হলেই প্রসঙ্গ টা তুলে।রামিমের বাবা রামিমের এত অধঃপতন হয়েছে জেনে রেগে যায়।

তখন রামিমের বাবার বন্ধু রফিক সাহেব বলেন,
‘শুন আমার মেয়েকে তো তুই দেখেছিস।তোর সাথে বন্ধুত্ব আরো জোড়া লাগানোর জন্য আমি তোদের ঘরেই মেয়ে দিবো ভাবছি।’
‘তুই ঠিক বলছিস তো?তোর মেয়েকে আমার ছেলেকে দিবি?আমার মান বাঁচালি তুই?’

দুজনে কথা শেষে যে যার বাড়ি চলে যায়।
.
রামিম বাহির থেকে বাসায় আসলে তার বাবা বলে,
‘বাসায় থেকো,তোমার সাথে ইম্পরট্যান্ট কথা আছে।’
‘কি কথা?’
‘সেটা যখন বলবো তখন ই বুঝবে।’

রামিম চিন্তায় পড়ে গেলো কি এমন কথা থাকতে পারে?

রাতে সবার খাওয়াদাওয়া শেষ হলে রামিমের বাবা বলেন,
‘তুমি কয়েকদিন পর কলেজ পাশ করে ভার্সিটি যাচ্ছ কি তাইতো? ‘
‘হ্যা।’
‘আমি তোমার বিয়ে ঠিক করেছি।তবে এখন নয়।’

রামিম চমকে তাকায়।
‘বিয়ে?আমি কোনো জব করিনা?’
‘জব করোনা, করবে।কিন্তু বিয়েটা তার সাথে ই হবে যার সাথে আমি ঠিক করেছি।আর এটাই ফাইনাল।’
‘কিন্তু কার সাথে?’
‘আমার বন্ধু রফিকের মেয়ের সাথে।’

রামিম কিছুক্ষণ চুপ ছিল,তারপর যখন বলে,
‘আব্বা আমার একটা কথা ছিল?’
‘কথাটা নিশ্চয় সেই মেয়েকে নিয়ে নয় যাকে নিয়ে তুমি..আর নাই বা বললাম।’

রামিম অবাক হয়ে বলে,
‘তুমি কার কথা বলছো?’
‘বেলির বান্ধবি রিয়া নাকি মেয়েটা?আমার মান সম্মান এর কথা একবার ও ভাবলে না?আমি একজন চেয়ারম্যান মানুষ আমাকে সম্মানের চোখে দেখে আর তুমি কিনা মেয়ে নিয়ে ঘুরতেছো?’

রামিম চুপ করে থাকে।রামিমের বাবা বলে,
‘তোমার বুঝা উচিৎ ছিল আর যাইহোক আমাদের পরিবারে অই মেয়ে যোগ্য নয়।আমাদের পরিবারে বউ হতে হলে তাকে সুন্দরী,শিক্ষিতা আর উচ্চপরিবারের হতে হবে।যে যেমন তার সাথে তেমন মানায়।আজ ই এ সম্পর্কের বিরতি দিবে।আর যদি মনে করো তুমি অই মেয়েকে ভালবাসো।ঠিক আছে ভালবাসতেই পারো কিন্তু এটা অসময়।তবুও আমি মেনে নিতাম যদি তুমি আমাদের সাথে যোগ্যতায় মিলে এমন মেয়েকে পছন্দ করতে।তুমি জানো রিয়ার বাবা একজন ম*দ*পা*নকারি?ওদের ব্যবহার আচার-আচরণ কিছুর ঠিক আছে?
তবুও যদি চাও তুমি তোমার ভালবাসা নিয়ে থাকো।তবে আমার পরিবারে আর তোমার জায়গা থাকবে না।’

রামিমকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে রামিমের বাবা চলে যায়।
.
পরেরদিন রিয়াকে খবর দেয়া হলে রিয়া আসে।
‘তোমার বাবাকে বলেছো আমাদের সম্পর্কের কথা?’

রামিম রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘আমি এ সম্পর্ক আর কন্টিনিউ করতে পারব না।’

রিয়া অবাক হয়ে তাকায়।
‘এ তুমি কি বলো?তুমি তোমার পরিবারকে বুঝাতে ও পারলে না?’
‘নাহ কারণ তুমি জানো আমি এখনো বেকার।আর তোমাকে আমি এ মুহুর্তে বিয়ে ও করতে পারব না।আমি দুঃখিত।আসলে আমি অতিরিক্ত অবেগী হয়ে ভুলপথে চলে গিয়েছি।আমি আমার পরিবারকে ছাড়তে পারব না।’
‘ আর এতদিনের ভালবাসা আমাদের?’
‘ভুলে যাও।সব ঠিক হয়ে যাবে।’
‘আমার বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে।আমি না তোমার বউ?বলেছিলে।’
‘নতুন প্রেমে পড়লে তখন সব সুন্দর লাগে।তখন এসব বলাটায় স্বাভাবিক।কিন্তু এখন পরিস্থিতি কঠিন হয়েছে তার চেয়ে বরং তোমার বাবার পছন্দের স্বামীকে নিয়েই সুখে থাকো।এটাই ভালো।’

রিয়া কাদোকাদো হয়ে বলে,
‘হ্যা স্বামীকে নিয়েই ত সুখী হতাম।মাঝখানে এতকিছু কেন হলো তাহলে?’
‘জানিনা।তবে তুমি ই আমার কাছে এসেছিলে আমি নই।’
‘সব দোষ তাহলে আমার?’
‘তো কি একহাতে তালি বাজে?’

রিয়া রেগে বলে,
‘আমি এ কোন রামিম কে দেখছি?’
‘ঠিকই ত বলছি ভাল মেয়ে কখনো বিয়ের আগে অন্যছেলেদের দিকে চোখ দেয়?বেলিকে দেখো?আর হ্যা তুমি বেলির নামে যা তা বলছো আমার ত তাকে তেমন মেয়ে মনেই হয়না?’

রিয়া তখন চোখের জল মুছে বলে,
‘হ্যা আমি বেলির নামে মিথ্যা বলেছিলাম ও এমন নয়।আর আজ বুঝতে পারছি বেলি সেদিন ঠিক ই করেছিল,তোমার মতো ছেলেকে বিশ্বাস না করে।’

‘ছি: তুমি আমাকে মিথ্যা ও বলেছো?তাহলে তোমার ভালবাসা সত্যি তো?নাকি এসব ও নাটক?’

রিয়া রামিমকে মারতে গিয়েও থেমে যায়।রামিম চলে যায়।
রিয়া চোখের জল মুছে নেয়।আর ভাবে,
‘বেলি ঠিকই বলে, অন্যর পুরুষের প্রতি লোভ রাখতে নেই।বিয়ের আগে সব ই তো অন্যের পুরুষ।’
.
.
একমাস হয়ে গেছে বেলিকে ছেড়ে মা চলে গিয়েছে একা।বেলি একা থাকতে পারেনা।পুরা ঘরে মায়ের স্মৃতি। ঘরে থাকলে সে সারাক্ষণ কান্না করে।এ কয়েকদিন ভাল করে খাবার ও খায়না।বেলি আগের চেয়ে অনেকটা শুকিয়ে গেছে।

নদীর ধারে বেলি বসে রয়েছে।সেদিন সীমা,রিয়া,প্রিয়া সবাই এসেছিল বেলিকে দেখতে।বেলি চুপচাপ ছিল, কারো সাথেই কথা বলেনি।
.
রিয়া বেলিদের ঘরে এসে দেখে বেলি নাই।শাহেদ পাকা ঘরের কাজ দেখাশোনা করছিল।তখন রিয়া বলে,
‘শাহেদ ভাই বেলি কই?’
‘নদীর ধারে গেছে হয়ত।ওখানেই ত বসে থাকে প্রায়।আমি কিছুক্ষণ পর পর গিয়ে দেখে আসি কথা বলিনা।আমার বোনটার মুখের দিকে তাকানো যায় না।তুমি ওর বান্ধবি, দেখো গিয়ে মন ভাল করতে পারো কিনা?’

রিয়া আস্তে আস্তে হেটে নদীর ধারে যায়।আস্তে করে বেলির পাশে বসে।বেলি তাকায় না কে এসেছে।
‘বেলি?’

বেলি তাকিয়ে দেখে রিয়া।চোখের জল মুছে বলে,
‘বল’
‘এভাবে একা বসে আছিস কেন?’
‘একা আমি, একায় ত থাকব।আম্মা ইচ্ছে করে আমায় একা রেখে গেছে।আমার বিশ্বাস হয়না আমার পাশে আম্মা নেই।আমি মানতে পারছিনা এত সহজে আম্মা চলে যাবে।’
‘এভাবে ভেঙ্গে পড়লে চাচি কি ওখানে ভাল থাকবে?তোকে সবসময় হাসিখুশি দেখতেই চাচি পছন্দ করতো জানিস না?চাচির জন্য হলেও মনে বল আন?’

বেলি চুপ করে থাকে।তারপর বলে,
‘তুই হঠাৎ এখানে?’
‘তোর কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি।’
‘কিন্তু কেন?’
‘আমাকে লোভ আর হিংসায় শেষ করে দিয়েছিল।ভেবেছিলাম আমি চেয়ারম্যান এর ঘরের বউ হবো আমার সাথে আর কে লাগে?তাই আমি রামিমকে সবসময় তোর নামে মন্দ বলতাম।কিন্তু আমি ভুলেই গেছিলাম কারো ক্ষতি করে অথবা কারো নামে নিন্দা করলে কেউ সুখী হয়না।আমায় ক্ষমা করে দিস।’

বেলি কিছুই বুঝছে না রিয়ার কথা।
‘কি হয়েছে খুলে বল তো?’

রিয়া সব খুলে বলে।
‘আমি রামিম ভাইয়ের সাথে কথা বলব ভালবাসবে একজন কে বিয়ে কেন আরেকজনকে করবে,এসব কেমন ভালবাসা?’
‘থাক বেলি।জোর করে কোনো পেতে গেলে সুখী হওয়া যায়না।আসল কথা কি জানিস বিয়ের আগের ভালবাসার দাম নেই।এসব কয়েকদিন মোহে পড়ে মজা নেয়,তারপর বাস্তব আর পরিবারের কথা বলে চলে যায়।’

বেলির আবারো মায়ের কথা মনে পড়ে যায়।আজ রিয়ার জায়গায় তার থাকার কথা ছিল।ইস কি পরিণতি ই হতো। এসব ভাবতেই অবাক লাগে।ভালবাসতেও দেরি নাই আবার ভালবাসা শেষ করতে ও দেরি নাই।

রিয়া বলে,
‘আমি তোর দুইবছর এর বড়।তাও তোর মতো জ্ঞান আমার ছিল না।আমি হিংসুটে ছিলাম।তবে আমি তোকে কথা দিচ্ছি আমি আর কারো ক্ষতি কখনো ই করব না।বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে জানিনা ছেলে কেমন হবে?ভাল ছেলে কপালে থাকবে তো?’

রিয়া কেঁদে ফেলে।বেলি বলে,
‘থাক আর কাঁদিস না।আমি কিছুই মনে করিনি এসব।যা হবার হয়েছে।আল্লাহর উপর ভরসা রাখ আর ক্ষমা চা আল্লাহর কাছে।তিনিই সব ঠিক করে দেবেন।’

আকাশে মেঘ জমেছে।রিয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘মনে হয় বৃষ্টি আসবে।বাড়ি যা বেলি,দোয়া করিস আমার জন্য।আমি ও দোয়া করবো।ধর্য্য ধর।আমি আজ আসি।’

বেলি মাথা নাড়িয়ে যেতে বলে।
রিয়া যাওয়ার পর শাহেদ দ্রুত আসে।
‘বাসায় চল এক্ষুনি বৃষ্টি আসবে।’
‘তুমি যাও আমি আসছি।’

শাহেদ যেতেই কিছুক্ষণ এর মধ্যেই বৃষ্টি শুরু হলো।বেলি চুপচাপ বসে রইলো।চোখের জল আর বৃষ্টি এক হয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু কান পেতে আছে,এই বুঝি সব মিথ্যা করে আম্মা এসে বলবে,
‘খবরদার বৃষ্টিতে ভিজবি না তোর অসুখ করবে।’

‘কোথায় আমার আম্মা?’ বেলি ডুকরে কেঁদে উঠে।

পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে মানুষ গেলে তাকে খুঁজে আনা সম্ভব।কিন্তু বেলির মা যেখানে গেছে,এক সাগর পরিমাণ কাঁদলে ও সেখান থেকে কেউ ই আর কোনোদিন ফিরে আসেনা।আর আসবেও না।এটা চিরন্তন সত্য।

চলবে…

#তাহরীমা

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা উচিৎ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here