বৈবাহিক চুক্তি পর্ব-১৩

0
3002

#বৈবাহিক_চুক্তি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্বঃ১৩

“সাইন দিস পেপারস ”
এতক্ষণের নিরবতা ভেংগে বলে উঠলো সায়ান, রুশির দিকে তিনচার পেজের একটি ফাইল এগিয়ে দিয়ে।

“কিসের পেপার এটা? ” ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে বললো, এতদিন পর লোকটিকে দেখে প্রথম তরফায় তাকিয়ে থাকলেও এখন ঘোর কেটে গেছে, মনের গহিনে ঘৃণা ছাড়া অন্য কিছুই আসছেনা।

“এটা একটা চুক্তিনামা যেখানে লিখা আছে রুহানের এটলিস্ট আঠারো বছর হওয়া পর্যন্ত তুমি আমার স্ত্রীর মর্যাদায় আমার পাশে থাকবে, মানে এককথায় এটি একটি #বৈবাহিক_চুক্তি। ”

সায়ানের এহেন কথায় রুশি বেশ চেতে গেলো, এতক্ষণ যথেষ্ট ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি হেন্ডেল করতে চাইলেও এখন ধৈর্যের বাধের সমাপ্তি ঘটেছে, তাই চেঁচিয়ে বলে উঠলো
” আমাকে কি আপনার বোকা মনে হয় না অবলা নারী? আমি আপনার কথা শুনতে বাধ্য নই শুনতে পাচ্ছেন আপনি?”

” আস্তে কথা বলো বউসোনা, এত চিল্লিয়ে কথা বলে কি লাভ হবে বলো ”

” ডোন্ট ডেয়ার টু কল মি দ্যাট, আপনাকে আমি চিনিনা আর চিনতেও চাইনা, আমাকে আমার মত থাকতে দিন, ভালোয় ভালোয় বলছি আমার ছেলেকে দিয়ে দিন ”

“তুমি আমাকে চিনো না! এত তাড়াতাড়ি আমার ছোঁয়া ভুলে গেলে নাকি ভুলে যাওয়ার ভান করছো? আমি মনে করিয়ে দিবো বউসোনা? ”

সায়ানকে নিজের দিকে ঝুঁকতে দেখে রুশি নিজের রাগ আর কন্ট্রোল করতে না পেরে থাপ্পড় মারতে ধরলেই সায়ান হাত চেপে ধরে যেন এমন পরস্থিতি হবে আগে থেকেই অবগত ছিলো,হাত ধরে পেছন দিকে নিয়ে একহাতে চেপে ধরে আর আরেকহাতে সামনে আসা চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজতে গুঁজতে বলে

” গতবারের থাপ্পড় মারার পরিণামের কথা ভুলে গেলে? তুমি যদি সেটাই চাও তাহলে আমার কিন্তু কোন সমস্যা নেই, এতদিন পর বউকে কাছে পেলাম। একটু আদর যত্ন তো করতেই পারি ”

রুশির খুব করে বলতে ইচ্ছা করলো “তোর বউয়ের মায়রে বাপ ” সাথে এমন কিছু গালি দিতে ইচ্ছে করলো যা শুনে বলবে ” ছেড়ে দে মা কেঁদে বাচি “কিন্তু নিজের এই ইচ্ছাকে কোন মতে সংযত করলো। এই মুহুর্তে রাগের মাথায় কিছু বললে হিতে বিপরীত হবে, তার থেকে ঠান্ডা মাথায় ভেবে চিন্তে কথা বলতে হবে যাতে নিজে থেকে পিচু হটে যায়

” আপনি এতটা শিওর কি করে হচ্ছেন রুহান আপনার ছেলে, আমি কলকাতা শহরে থাকছি এখানে ওইধরনের সম্পর্ক খুব একটা কঠিন কিছুনা তার উপর একা থাকি আমি ”

রুশিকে ছেড়ে দিয়ে ও বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো, রুশি এই দৃষ্টি দেখে বুঝতে পারলো সে অনেকটা কনভিন্স করে ফেলেছে তাই আবার বললো

” এবার বুঝতে পারছেন তো রুহান আপনার ছেলে নয়, ওকে আমার সাথে যেতে দিন ”

“আমার নাম কি জানো? সায়ান জামিল খান, আমাকে এত বোকা ভাবো তুমি?”

সায়ান জামিল খান, অন্যসব কিছু ভুলে গেলেও এই নামটা এই কয়বছরে স্পষ্ট মনে ছিলো তাইতো রুহানের বার্থডে সার্টিফিকেটেও ওর বাবার এটাই লিখা সাথে ওর নাম রুহান জামিল খান লিখা কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এই নামটি লিখিয়ে বড় ভুল করেছে ও।

” আপনি যেই হোন না কেন তাতে আমার কিছু যায় আসেনা, আমার ছেলের বাবা নেই আর না হবে কখনো। ওর মাই ওর জন্য যথেষ্ট, আপনি আমার ছেলেকে দিয়ে দিন আমাকে ”

” জানো রুশি, রুহান যদি আমার ছেলে না হতো তাহলেও আমি তোমাকে ছাড়তাম না সেখানে রুহানতো আমার সন্তান। তুমি কি ভাবছো অন্য হাজবেন্ডদের মতো বলবো ” এই সন্তান কার? ” আমি পাশে ছিলাম না বলে আমার বিশ্বাস এত ঠুনকো নয়, আমি জানি তুমি না বললেও এটা আমার সন্তান আর না হলেও আমার সন্তান হিসেবে রাখতাম ওকে কারণ ও তোমার সন্তান। আমি তো ভেবে অবাক হচ্ছি তুমি আমার থেকে বাচার জন্য নিজের চরিত্র নিয়ে এত জঘন্য কথা বললে? কি করে পারলে এটা। আমি তোমাকে কখনোই আমার থেকে আলাদা হতে দিবো না কখনো না ”

” কেন ভালোবাসেন আমাকে? “তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে

” কি মনে হয় তোমার?

” হাহাহা, আপনি আমাকে ভালোবাসেন!! আর এটা আমাকে বিলিভ করতে বলছেন? তাহলে ওইদিন ওভাবে ছুড়ে ফেলে যেতেন না, হাজবেন্ড হিসেবে না হোক একজন মানুষ হিসেবে হলেও রেস্পন্সিবিলিটি নিতেন”

” আমি তোমাকে ফেলে চলে গিয়েছি না তুমি গিয়েছো?”

” আমি ছেড়ে গিয়েছি আপনাকে? আপনার মাথা ঠিক আছেতো নাকি?ঘুম থেকে উঠে ওই বিছানায় আমি একা ছিলাম আপনি ছিলেন না, আর দয়া দেখিয়ে খাবার রেখে গেছেন ”

” সাথে একটা চিরকুট ছিলো সেটা চোখে পড়েনি? ”

” পড়েছে তো যেখানে লিখা ছিলো ” খাবারটা খেয়ে নিয়ো এবং নিজের খেয়াল রেখো আর এদিকটা সামলে নিও”

“তাহলে ওইখানে লিখা ছিলো তোমাকে ফেলে চলে গিয়েছি আমি? ”

” লিখা ছিলো না কিন্তু বুঝতে পারা যায় নাকি যে আপনি সুন্দরমতে কেটে পড়েছেন ”

” তোমাকে এত বুঝতে বলেছে কে? কেউ ঠিকি বলে মেয়েমানুষকে একলাইন বললে তারা তিনলাইন আগবাড়িয়ে বুঝে , আমি ওইটা দ্বারা তোমাকে খাবারটা খেয়ে নিজের খেয়াল রাখতে বলেছি, চলে যেতে বলিনি। যদি চলে যাওয়ার থাকতো তাহলে কিছু না বলেই চলে যেতাম, ওইসব লিখতাম না। তুমি জানো ওইদিন কি হয়েছিলো? ওইদিন তুমি যাদের মারতে দেখেছো না তারা আমাকে মারতে এসেছিলো কিন্তু আমাকে যখন পায়নি তখন নিজের লোককেই মেরে ফেলেছে যা তুমি দেখেছো। ”

” মানুষের আর খেয়েদেয়ে কাজ নেই না আপনাকে সবাই মারতে যাবে?”

” আসলেই তাই কাজ নেই তাদের। ওইখানে একটা কলেজে ফাংশন ছিলো যেখানে আমি এটেন্ড করেছিলাম। আমার বডিগার্ডরা খোজ পায় যে আমার উপর হামলা হতে পারে তাই আমি কালো হুডি আর মাস্ক পড়ে বেরিয়ে ছিলাম কিন্তু তারপরো ওরা টের পেয়ে যায় তাই পালিয়ে বেড়াচ্ছিলাম আর তখন দেখি একটা ডাম্বো গান পয়েন্টে দাঁড়িয়ে নিজে মরার জন্য ওয়েট করছে,তাই তাকে বাচাতে গিয়ে আমার হাত পর্যন্ত কেটে ফেলেছি। কিন্তু উনিতো অজ্ঞান হয়ে আমাকে উদ্ধার করে দিয়েছেন যে তাকে কেরি করতে হয়েছে। আর পারছিলাম না বলে আশেপাশের মানুষের কাছে সাহায্য চেয়েছি কিন্তু তারা হুট করে প্রশ্ন করে বসলো মেয়েটি সম্পর্কে আমার কি হয়, বোন বললে তো আর বিলিভ করবে না তাই বলেছি বউ। কিন্তু ওইলোকগুলো আমাকে বিশ্বাস করলো না আবার কিডন্যাপার বলা শুরু করে দিলো, এখন এমনিতেই পালাতে পালাতে হয়রান তারউপর গণপিটুনি খাওয়ার শখ হয়নি তাই বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি ”

” বাই এনি চান্স আপনি কি কথাগুলো আমাকে মিন করে বলছেন? ”

” ওহ খোদা কাকে কি বললাম? সারারাত পড়ালাম রামায়ণ সকালে বলে সীতা কার বাপ।ভাগ্য ভালো আমার ছেলে আমার মতো হয়েছে ”

“তারমানে আমি ডাম্বো? আপনি আমাকে ডাম্বো বলেছেন? ”

” না আমাকে বলেছি, আসলেই আমি একটা ডাম্বো নাহয় ওইদিন লম্বা চৌড়া একটা অনুচ্ছেদ লিখে যেতাম যে দয়া করিয়া আমার জন্য অপেক্ষা করিবেন জনাবা, তুমি জানো সকালবেলা তোমাকে খাবার খাওয়ানোর জন্য সকাল সাতটায় আমি কত পথ হেটে বিরিয়ানির পেকেট জোগাড় করেছি? রাতের বেলা কান্না করে তুমি ক্লান্ত ছিলে তাই নিজের খেয়াল রাখতে বলেছি আর তোমার যাতে হাটতে না হয় তাই নিজের ফেলেরাখা গাড়ি খুঁজতে বেরিয়েছি সাথে ফোন করার জন্য যাতে বডিগার্ড আসে আর তোমাকে সেফলি ওইখান থেকে নিয়ে যেতে পারি কারণ যেকোন সময় আক্রমণ হতে পারে আমার উপর আর আমি তোমাকে নিয়ে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছিলাম না। তুমি ওই জায়াগায় সেফ ছিলে আর যাইহোক ওই জায়গার খোজ কেউ পেতো না। কিন্তু আমার সব মেনেজ করে আসতে প্রায় নয়টা দশটা বেজে যেতে পারে তাই তোমাকে বলেছি এদিকটা সামলে নিতে। কিন্তু সাড়ে নয়টায় ফিরে এসে তোমাকে আর পায়নি, ওইখানের মানুষকে জিজ্ঞেস করেও লাভ হয়নি, কেউ কিছুই বলতে পারেনি। জানো কত অসহায় মনে হচ্ছিলো নিজেকে?
একবার মনে হচ্ছিলো তোমাকে ওরা ধরে ফেলেছে আরেকবার মনে হচ্ছিলো নাহ তুমি ঠিক আছো। চারটি বছর ঠিক এই ধারণা নিয়ে বেচে আছি আর তোমাকে পাগলের মত খুঁজেছি কিন্তু পায়নি। কারণ যে নিখোঁজ হয় তাকে খুঁজা যায় কিন্তু যে ইচ্ছে করে হারিয়ে যায় তাকে খুজা যায়না।”

সায়ান কিছুক্ষণ দম নিয়ে আবার বললো “যাইহোক একবার পালিয়েছ আমার থেকে কিন্তু দ্বিতীয় বার সেই চান্স পাবে না,আর এখনতো আমার কাছে ট্রাম্পকার্ড আছে, তাই দেরি না করে পেপারস সাইন করো কারণ তুমি আবার পালিয়ে যেতে পারো তোমার বিশ্বাস নেই এন্ড আই ওয়ান্ট শিউরিটি যে তুমি আর পালাবে না ”

ফাইল আর পেন এগিয়ে দিলো রুশির দিলো সায়ান আর রুশি শান্ত চাহনিতে তাকিয়ে আছে, হয়তো কোন বড়সড় ঝড়ের পুর্বলক্ষন এইটা

#চলবে

(কে চান সায়ানকে এখনো শাস্তি দেয়া হোক,হাত তুলেন 🙃)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here