বৈবাহিক চুক্তি পর্ব-১৭

0
2542

#বৈবাহিক_চুক্তি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্বঃ১৭

“আচ্ছা আমি না গেলে হয়না! দেখুন আমি এখানে জব করি, আমার অফিস এখানে আমার সবকিছু এখন এখানে। বাংলাদেশে গিয়ে কি করবো, না আমার থাকার জায়গা আছে আর না আছে নিজে চলার মতো কোন ব্যাবস্থা। আপনি কেন অন্যায় আবদার করেছেন। হ্যা আমি আমার ছেলের জন্য আপনার কাছে দায়বদ্ধ তবে এতোটা ফায়দা তো তার উঠাতে পারেন না ”

“আমি এই মুহুর্তে সব এক্সপ্লেইন করতে পাড়ছি না তোমাকে তবে সত্যি বলছি আমি বাধ্য হয়ে তোমাদের বাংলাদেশে নিয়ে যাচ্ছি। আমি তোমাকে তোমার স্বাধীনতা দিতে চাই তবে তাতে তোমার সেফটি থাকতে হবে। জানি আমার জন্য তোমরা বিপদে পড়েছো তবে আমি এখানে না আসলেও তারা তোমাকে খুজে নিতো আর… ”

“কারা খুজে নিতো? কিসব বলছেন আপনি সেফটি এন্ড অল! ”

সায়ানের কিছু বলার নেই কারণ ও এরপর আর একটা কিছুই বলতে পারবে না কারণ ও নিজেই জানেনা ওর পেছনে কে আছে। সেদিন রুহানকে নিয়ে ফেরার সময় মনে হচ্ছিলো কেউ ফলো করেছিলো তাই রুহানকে কৌশলে বাসায় দিয়ে আবার ওই জায়াগায় ফিরে আসে তখন দেখে একজন মাস্ক পরা লোক কিছু একটা খুজছে। কনফার্ম হওয়ার জন্য লোকটির পাশ কাটিয়ে সামনের মাঠের দিকের গলিতে ঢুকে পড়লো, ওর ধারণা ঠিক ছিলো লোকটি ওকেই ফলো করেছিলো তাই ওই লোকটি গলিতে ঢুকতেই তার মাথায় আঘাত করে ফেলে দিলো, লোকটি ব্যথায় যখন কাতড়াচ্ছিলো তখন টান দিয়ে মাস্ক খুলে ফেলে আর মাস্ক খুলে নিজেই চমকে যায়। একজন বিদেশী লোক যে ইংলিশে তাকে গালি দিচ্ছে,লোকটির চোয়াল ধরে বললো

“হু আর ইউ?হু সেন্ট ইউ হেয়ার? আন্সার মি!! ”

লোকটিকে আরো কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই মুখে কিছু একটা দিলো তার কিছুক্ষণ পর নিস্তেজ হয়ে গেলো তার দেহ, নিজের মালিকের প্রতি এত লয়াল যে নিজের জীবন পর্যন্ত দিয়ে দিলো!! এরুপ লয়ালিটির সাথে সায়ান খুব পরিচিত, ও আতকে উঠলো নিজের অতীত ভেবে, ওর অতীত এভাবে হানা দিবে ভাবতে পারেনি, অতীতের যে ভুল সিদ্ধান্তের জন্য ও এখনো আফসোস করে সেই অতীত আজ ওর দ্বারে তার জাল বিছিয়ে দিয়েছে। নাহ এখানে আর থাকা যাবে না। ও বাচুক মরুক যাই হোক ওর সাথে ওর পরিবারের কিছু ও হতে দেবে না।

“দেখুন এখনো বিশমিনিট বাকি আছে, আমি প্লেন থেকে নেমে যাই, আপনি যাওয়ার হলে আপনি যান”কপাট রাগ দেখিয়ে বললো রুশি

“আর একটা কথা বললে পা ভেংগে রেখে দিবো, তারপর নাহয় সারাজীবন লেংড়া বউ পালবো ”

“হাত দিয়ে দেখুন না আপনার হাত না ভেংগে দেই”

“এইটুক হাত দিয়ে আবার আমার হাত ভাংবে, দেখো ভাঙতে গিয়ে নিজের হাত না ভেংগে যায় ”

“আমাকে কি অপুষ্টিকর মনে হয়ে? ”

“মনে করার কি আছে এটাইতো সত্যিই”

“ইউউউউ, ইন্সাল্ট করেছেন আমাকে?”

“উফফ মাম্মা বাবাই তোমরা থামবে?দেখো সবাই কেমন তাকিয়ে আছে “রুহান বিরক্তি নিয়ে বললো

“তোমার মাম্মাই তো শুরু করেছে”

“আমি শুরু করেছি! আপনি শুরু করেছেন ”

“তখন থেকে নেমে যাবো নেমে যাবো বলে ঘ্যানঘ্যান কে করছিলো? ”

“আমি ঘ্যানঘ্যান করি!আপনাকেতো… ”

“চুপপপ, তোমরা দুজন মুখে আংগুল দাও, দাও!একটা কথাও আর বলবে না, মাম্মা তুমি না বলো ঝগড়া করা ব্যাড ম্যানার্স? ”

“এটাই নিজে বলে আবার নিজেই ভুলে যায় ”

“বাবাই তোমাকেও বলেছি আংগুল দিতে, দাও!

রুশি সায়ানের দিকে তাকিয়ে মুখ ভ্যাংচি দিয়ে অন্য দিকে তাকালো, আর সায়ান নিশ্চিন্ত হলো যে এই ধানি লংকা আর নামার জন্য বলবে না।

বাংলাদেশে আসার পরে ঢাকায় দুইএকদিন থাকার চিন্তাভাবনাই করছে সায়ান, এমনিতেই জার্নিতে ক্লান্ত তাই এখনি ময়মনসিংহ যাওয়া সম্ভব না, এইদিকের পরিস্থিতি বুঝে তারপর ময়মনসিংহে যাওয়া যাবে। সায়ান লক্ষ্য করলো রুশি তখন থেকেই আশপাশটা লক্ষ্য করছে খুব গভীর ভাবে দেখছে,

“কি দেখছ এভাবে? ”

“মনে হচ্ছে এখানে আগেও এসেছি কিন্তু তা কি করে সম্ভব! ”

রুশির এই অহেতুক চিন্তা দেখে হাসলো সায়ান, মেয়েটি কাজের থেকে অকাজের চিন্তাই বেশি করে।কলিংবেল চাপতেই একজন এসে দরজা খুলে দেয়, রুহানকে হাতে ধরেই আসছিলো রুশি, সামনে থাকা মানুষটিকে দেখে চমকে উঠলো

“সাহিল, আপনি এখানে…”

“হুম এটা আমার বসের বাসা ম্যাডাম, আমি থাকবো না তো কে থাকবো! ”

“তোমার বস মানে ওই হিটলারের উপরেও আরো কেউ আছে! ডোন্ট টেল মি ওই হিটলারই তোমার বস ”

“হিটলার কে?”

“এহেম এহেম সাহিল তুমি লাগেজের দিকটা সামলাও আর যা তোমাকে বলেছিলাম তার ব্যাবস্থা করো ”

“ইয়েস বস” রুশির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বললো “পরে কথা হবে” রুশিও বিনিময়ে মুচকি হাসি উপহার দিলো।

“সাহিল গো”

“বস আর ইউ জেলাস? “ফিসফিস করে সায়ানের কানে কানে বললো

“যাও নাহয় এই মাসের মাইনে পাবেনা সাথে ওভারটাইমও করতে হবে ”

“না থাক যাচ্ছি ”

“আর তুমি যাও ভেতরে যাও আর ফ্রেশ হয়ে নাও ”
রুশিকে বললো

“আপনার কথামতো যাবো! ”

“নাহ মানে যদি ফ্রেশ তাহলে আপনার ভালো লাগতো ম্যাডাম ”

“হুম যাচ্ছি ”

🌸🌸🌸

“ভাই, তাড়াতড়ি বউমনিকে নিয়ে আস, আমি আর দাদাজি কত এক্সাইটেড হয়ে আছি তোর ছেলে আর বউকে দেখার জন্য ”

“এই পরশুদিন আসছি আমরা, কাউকে বলিস না সারপ্রাইজ দিবো সবাইকে ”

“আচ্ছা আস, আমিও একজনের সাথে দেখা করাবো তোকে”

“স্পেশাল কেউ? দেখসি আমার পছন্দ হতে হবে নাহয় কিন্তু রাজি হবো না ”

“পছন্দ হবে দেখে নিস, আমার চয়েজ বেস্ট অকে!”

“আচ্ছা আসছি, তুই আমার চয়েজ দেখসি আর আমি তোরটা দেখবো ”

“আর শুন আমারো কিন্তু পছন্দ হতে হবে”

“হাহাহা আচ্ছা, দেখে বলিস কেমন ”

পাগলি একটা, সামুর সাথে ছোট থেকেই সম্পর্ক অনেক ভালো ওর। আট বছরের বড় হলেও সায়ান আর সামু দুজন দুজনের বেস্ট ফ্রেন্ড। ওর ছোট্ট বোনটা বড় হয়ে গেছে, এখন দেখতে হবে সেই স্পেশাল মানুষটি তার যোগ্য কিনা।

#চলবে

(কয়েকটি ভালো বাংলা গানের সাজেশন দিতে পারবেন যেগুলো শুনতে ভালো লাগে তবে ডিজে টাইপ নয়!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here