#বৈবাহিক_চুক্তি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্বঃ২১
“রুহান তুমি খাচ্ছ না কেন? এভাবে বসে আছো কেন?”
“খাবো না আমি, তুমি খুব পচা।তুমি আমাকে বড় আব্বুর সাথে যেতে দাও নি, খাব না আমি”
“এটা কেমন কথা?দিনদিন অশভ্য হয়ে যাচ্ছ।খাও বলছি ” ধমক দিয়ে বললো রুশি
“খাবো না, খাবো না, খাবো না ”
“রুহান…” বলেই মারতে ধরলে সায়ান এসে হাত ধরে ফেলে, আর রুহান কান্না করে দেয়।কান্না করতে করতে হিচকি তুলে ফেলছো।
“রুশি, ওকে মারছো কেন?ছোট বাচ্চা ও এতকিছু বুঝে না এখনো ”
“মাম্মা অনেক পচা, রুহান হেটস মাম্মা। কথা বলবো না আমি ”
“আচ্ছা বাবাই খাইয়ে দেই?খেতে হবে তো তোমায় নাহয় তুমি বড় হবে কি করে?”
“মাম্মাকে যেতে বলো নাহয় খাবো না, বলো বলো বলো”
“আচ্ছা রুশি তুমি উপরে যাও, আমি ওকে খাইয়ে নিয়ে আসছি ”
রুশি কিছু বলতে গিয়েও বললো না, আজকে দুইদিন ধরেই রুহান এমন করছে কেমন জানি ওকে দেখতে পারেনা। ও কিছু বললেই চেতে যায় আর দৌড়ে বড় আব্বুর রুমে চলে যায়।দুইদিন ধরে ওর সাথে ঘুমায় না এমনকি ওকে দেখতেও পারেনা। আগে তো ওকে ছাড়া কিছুই বুঝতো না কিন্তু এখন মাকে যেন লাগেই না। রুশি উপরের রুমে এসে পায়চারি করছে।
“বাবাই, তুমি মাম্মাকে ওইভাবে বলেছো কেন? মাম্মা কষ্ট পেয়েছে না?”
“মাম্মাতো একটুও ভালোবাসেনা আমায়,শুধু মারতে চায়। তুমি না এলে তো মারতোই ”
“না বাবা কে বলেছে, মাম্মাতো অনেক লাভ করে তোমাকে। তুমি খাচ্ছিলে না বলেইতো মাম্মা ওমন করেছে,তুমি না খেলে অসুস্থ হয়ে যাবে না!তুমি যদি খেতে তাহলে কি মাম্মা মারতো? কখনোই মারতো না, মাম্মা তার রুহান বেবিকে অনেক ভালোবাসে ”
“তাহলে বড় আব্বুর সাথে যেতে দেয়নি কেন?”
“ওইখানে তো কতো নোংরা কতো জার্মস , বড় আব্বুতো বড় তাই তার কিছু হতো না, কিন্তু রুহান তো ছোট তাই তাকে সব জার্মস রা এটাক করলে রুহান বেবি কি করবে?এজন্য মাম্মা যেতে দেয়নি কারণ মাম্মাতো রুহানকে ভালোবাসে ”
“ওহ মাম্মাকে যে বকা দিয়েছি মাম্মা কি রাগ করছে?”
“হুমম তাতো করেছে একটু, রুহান যদি তাড়াতড়ি খেয়ে মাম্মাকে স্যরি বলে তাহলে হয়তো আর রাগ করবে না ”
“তাহলে তাড়াতড়ি খাইয়ে দাও, মাম্মার কাছে যাবো ”
সায়ান রুহানকে খাওয়াচ্ছিল তার মধ্যেই রুহানের বড় আব্বু ফিরেছে, বয়স তার সত্তরের কোঠায় পৌছালো বলে তবে দেখে বুঝা যায় অনেকটা স্ট্রং তিনি। এখনো লাঠি ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন তবে একটু ঝুকে চলেন।
“রুহান দেখো কি এনেছি তোমার জন্য! ”
“বড় আব্বু এসে গেছে, কি এনেছো আমার জন্য দেখাও দেখাও ”
“এই যে চকলেট আর এই গাড়িটা ”
“কতো সুন্দর গাড়ি!!” রুহান গাড়িটি হাতে নিয়ে চকলেট গুলো খাওয়া শুরু করলো। সায়ান ভাবছে আগে রুহান এতো চকলেট খেতো না কেভিটির ভয়ে তবে দুইদিন ধরে মনে হচ্ছে চকলেটের উপরই আছে। চকলেট ছাড়া অন্য খাবার তেমন একটা মুখে নিচ্ছে না।
“রুহান বাকি খাবার খেয়ে নাও আগে তারপর চকলেট খেও ”
“না আর খাবো না “বলেই দৌড়ে উপরের দিকে চলে যাচ্ছে
“মাম্মার কাছে যাবে না? ”
“পরে যাবো এখন না ” বলেই চলার গতি বাড়িয়ে চলে গেলো, ওকে আর পায় কে!
“দাদাজি এভাবে চকলেট খেলেতো ক্ষতি হবে, ওর জন্য চকলেট কেন আনলেন কেন?”
“কি জানি আমাকে বললো নিয়ে আসতে তাই আনলাম, দুদিন ধরে একটু বেশিই চকলেট খাচ্ছে ও, আমি খেয়াল করেছি। কিন্তু না আনলে তো রাগ করতো ”
“একটু কম আনবেন, ক্ষতি হয়তো খেলে।”
“আচ্ছা আমি বুঝাবো যাতে আর না খায় ” বলেই দাদাজি উপরে চলে গেলেন আর সায়ান রুশির কাছে আসলো।
রুশি রুম জুড়ে পায়চারি করেছিলো, মুখখানি এটুকু করে রেখেছে, সায়ানকে আসতে দেখেই ওর কাছে আসলো
“রুহান কোথায়? ”
“দাদাজির রুমে গেছে, চিন্তা করোনা ঠিক আছে ও। আমি খাইয়ে দিয়েছি ”
“কিভাবে চিন্তা করবো না বলুন দুদিন ধরে কেমন জানি করছে ও, আমাকে মনে হচ্ছে দেখতেই পারেনা”
“এমন ভাবছো কেন তুমি?ছোট বাচ্চা মারতে নিয়েছো তাই এমন বলেছে, ওইটা মনে ধরে রেখেছ কেন? আমাকেও তো বলেছিলো মনে আছে!”
“আমার কেমন অস্থিরতা কাজ করছে মনে হচ্ছে কিছু একটা হবে ”
সায়ান রুশির চিন্তা বুঝতে পারলো, সন্তানের জন্য মায়েরা একটু বেশিই চিন্তা করে আর একটুতেই অস্থির হয়ে যায়। সায়ান রুশিকে জড়িয়ে ধরে বললো
“অযথা চিন্তা করছো, কিছু হবে না ওর। আমাকে বিশ্বাস করোতো? আমি আমাদের সন্তানের কিছু হতে দিবো না ইনশাআল্লাহ ”
রুশির মনে হলো এই কম্ফোর্টজোনের দরকার ছিলো যে বলবে “আমি আছিতো ভয় কিসের ” কি হচ্ছে কি হয়েছে কিছু মনে করতে ইচ্ছে হচ্ছে না বরং এই সময়টাকে আকড়ে ধরে রাখতে ইচ্ছে করছে, কিছু না ভেবে ও সায়ানকে জড়িয়ে ধরলো আর নিজের ভার ছেড়ে দিলো ওর উপর, কান্না পাচ্ছে খুব করে কান্না পাচ্ছে তাই কান্না করে দিলো। সায়ান বাধা দিতে গিয়েও দেয়নি। কাঁদুক এতে মন অনেকটা হাল্কা হয়, রুশি থেকে থেকে কেপে উঠছে, এভাবে কতক্ষণ জানা নেই,কান্নাটা কমে আসলে সায়ান বলে উঠলো
“তা বাবুর জন্য এতো চিন্তা করছো বাবুর বাবার দিকেও একটু তাকাও, বেচারা প্রেমতৃষ্ণায় কাতরাচ্ছে তোমার একটু ভালোবাসা পাবে বলে কখন থেকে অধীর আগ্রহে বসে আছে ”
রুশির মুচকি হেসে বুকে কিল বসাতে শুরু করলো সায়ানের,
“আরে আরে মারছো কেন?”
“আপনি আর বেচারা! ”
“আমার থেকে বড় বেচারা কে বলতো? সুন্দরি বউ পাশে আছে অথচ তাকে হিসেব করে ভালোবাসতে হচ্ছে ”
“তাই সুযোগের সৎ ব্যাবহার করলেন তাইতো? ছাড়ুন আমাকে ছাড়ুন বলছি ”
“না থাক আর কিছু বলবো না, তবুও ছাড়তে বলোনা ”
রুশি কিছুক্ষণ চেষ্টা করে ছাড়াতে না পেরে সায়ানের বুকে মুখ লুকিয়ে আছে আর সায়ান আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে, এমন সুযোগ দ্বিতীয় বার নাও পেতে পারে।
“বস কাজ মনে হয়ে গেছে,বাচ্চাটা দেখলেন তো কেমন বিহেভ করলো ”
“হুম দেখলাম, তুমি সবার দিকে নজর রেখো যাতে ধরা না খাও ”
“বস আপনিও সাবধানে থাকবেন যাতে আপনাকে সন্দেহ না করে”
“পুরো দুনিয়ার উপর আংগুল উঠলেও সায়ান জামিল খান আমি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবে না, আচ্ছা রাখি কয়েকদিন হয়তো যোগাযোগ করতে পারবো না কারণ আমার উপর সন্দেহ আসুক চাইনা আমি ”
ইনান বারান্দায় দাঁড়িয়ে গোধুলি লগ্ন উপভোগ করছে, ময়মনসিংহ শহরটি আসলে অনেক সুন্দর, চারদিকে পানি আর পানি যেন কোন দ্বিপ। তারউপর এই প্রাসাদের মতো বাংলোটি লোকালয় থেকে একটু দূরে। চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়েই ছিলো তখন কেউ একজন ওকে জড়িয়ে ধরলো, ও জানে নারীটি কে তবে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না, এই মুহুর্তটাকে অনুভব করতে চায় হয়তো এরপর আর কখনো ভাগ্যে নাও থাকতে পারে।
“কিছু বলছেন না যে? এখানে আসার পর একটা কথাও বলেননি আমার সাথে”
“সেই সুযোগ পেলাম কই? ”
“মন থেকে চাইলে সব পাওয়া যায় ”
“আচ্ছা মন থেকে চাই তোমাকে একটা কিস করতে, সেটা কি পাবো? ”
“আপনি সবসময় এমন বেশরম এর মতো কথা বলেন কেন?থাকবোই না এখানে ” হাত ছাড়িয়ে চলে যেতে নিলে ইনান হাত চেপে ধরে
“উহুম এভাবেই থাক, ভালো লাগছে এভাবে থাকতে ”
সামু আর হাত ছাড়িয়ে নিলো না।
“ভাইয়াকে কবে বলছেন আমাদের কথা?”
“কি কথা?”সামনে ফিরে ভ্রু কুচকে বললো,
“আরে এই যে আমাদের মধ্যে আছে আরকি ”
“কি আছে আমাদের মধ্যে! ” না জানান ভান করে
“ও তাহলে কিছু নেই?তাহলে আমি কেনো আছি এখানে চলে যাই ” যাওয়া ধরলেই ইনান বাধা দিয়ে বললো
“কি আছে সেটাতো বলে যাও?”
“কিছুই নেই হয়েছে!”
“কিছুই নেই? আমি আরো ভাবলাম কালকে তোমার ভাইকে বলবো আমাদের বিয়ের কথা, কিন্তু কিছু যেহেতু নেই তাহলে আর কি করার! ”
“আমি তাই বলেছি নাকি?”
“বলেছো তো ”
“তো আপনিও তো বলেছেন যে কি আছে আআমাদের মধ্যে তাই বলেছে ”
“আমি তো ভাবি অনেক কিছুই আছে আমাদের মধ্যে কিন্তু তুমি কি ভাবো তাই ভাবছি ”
“সবসময় সব কথা মুখে বলতে হয়না, কিছু কথা বুঝে নিতে হয় ”
“আচ্ছা তাই!” বলেই টুপ করে গালে ঠোট ছোঁয়ালো,সামু চোখ বড় বড় করে বললো।
“এই এটা কই করলেন? ”
“তুমি বলেছো তাই করেছি “ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে
“আমি কখন বললাম? ”
“বললে তো আমি শুনেছি ”
“একদম মিথ্যে বলবেন না, আমি মুখ দিয়ে একটা শব্দও করিনি ”
“সব কথা কি মুখে বলতে হয় নাকি? কিছু কথা বুঝে নিতে হয় আর আমি বুঝে নিয়েছি ”
“একদম ফালতু কথা বলবেন না, আমি মোটেও এমনটা বলিনি ”
“ও আচ্ছা তাহলে ভালোলাগে নি তোমার তাইনা। ওকে তাহলে ফেরত দিয়ে দাও ”
“যাহ কি বলেন এসব ” বলে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো
“হাহা পাগলি ”
ইনান চুলে হাত দিয়ে হেসে বললো।
#চলবে
(যারা রুহানকে মিস করছিলেন তাদের জন্য আজকের পর্ব, আর বড় করে দিয়েছি কিন্তু)