বৈবাহিক চুক্তি পর্ব-২২

0
2466

#বৈবাহিক_চুক্তি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্বঃ২২

“কিরে শালা মারছিস কেন এভাবে?”

“চুপ একদম শালা বলবিনা, এটা এখন থেকে আমার অধিকার। সম্মান দিয়ে কথা বল নাহয় কিছুই হবে না বুঝলি!”

ইনান মুখের মাঝে ইয়া বড় এক প্রশ্ন বোধক চিহ্ন ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করতে এসেছিলো।আজ তিনদিনে পা দিলো এ বাড়িতে এসেছে কিন্তু আজকেই সায়ানের এমন উদ্ভট ব্যাবহার দেখছে, আসার পর থেকেই মারছে তারউপর কিসব বলছে নিজে বুঝতে পারছে কিনা সন্দেহ

“কি বলছিস এসব?”

“একদম না জানার ভান করবিনা, আমি জানি সবকিছু ওকে!” সিরিয়াস ভংগিতে বললো সায়ান

ইনান একটু কেন জানি ঘামতে শুরু করলো, কি জানে ও? তারপর ভাবলো যদি জানে তাহলে এত নরমালি কথা বলতো না, তবে এখন সায়ান ক্রমশ সিরিয়াস ভাবে কথা বলছে, কি জানে ও!

“রুশি আমাকে সব বলে দিয়েছে বুঝলি! শালা আমার বাড়িতে আমার নাকের নিচে আমারি বোনের সাথে প্রেম করছিস আর আমি টেরই পেলাম না? তুই ব্যাটা সারাজীবনই গভির জলের ফিশ রয়ে গেলি ”

“ওহ, যখন জানিসই তাহলে এখন কি বলিস এ ব্যাপারে? ” রিল্যাক্স মুডে বললো ইনান।

“এটা কি ধরনের কথা? আমি তোর গার্লফ্রেন্ড এর বড় ভাই। কই সম্মান দিয়ে কথা বলবি তানা তুই এটিটিউড দেখাচ্ছিস?যদি আমি রাজি না হই?”

“তোর সাথে আমার সবার আগের সম্পর্ক হলো আমি তোর বন্ধু, আর আমি জানি বন্ধুর সুখের জন্য তুই যেকোন কিছু করবি ”

“শালা প্যাচে ফেলছিস! আমি নাহয় তোর সুখের জন্য সব করবো কিন্তু তুই! তুই কি আমার সুখের জন্য সব করবি?”

“সেটা সময় বলে দিবে “বলেই একটা ব্রেড মুখে দিয়ে চিবোতে চিবোতে সেই স্থান প্রস্থান করলো, আর সায়ান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে

“আমাকে ইগনোর করে চলে গেলো?আমি আমার বোনকে বিয়ে দিচ্ছি নাকি তুই দিচ্ছিস? মনে হচ্ছে জোর করে বোনকে চাপাচ্ছি, সায়ান তোর সম্মান দেখি দিনদিন লো হচ্ছে! ইদানীং কি বেশি কথা বলি আমি?”

ইনান সামুর রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, নক করতে গিয়েও না করে ভেতরে ঢুকে গেলো। সামু এখনো ঘুমাচ্ছে, রুমে ঢুকে বেশ অবাক হলো ও, একটা টেডি জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে ও। বিশ বছরের একটা মেয়ে বাচ্চাদের মতো ঘুমাচ্ছে ভেবেই হাসি পেলো। খুব আস্তে খাটের পাশে সামুর মুখ বরাবর বসে খুব গভীর ভাবে দেখছে।

“আমি জানিনা ভবিষ্যতে আমাদের ভাগ্যে কি আছে, তবে এইটুকুর মধ্যে এটা সত্যি আমি তোমাকে খুব করে চাই, সারাজীবন তোমার খেয়াল রাখতে চাই। আমি অনেক খারাপ একটা মানুষ, হয়তো জীবনে অনেক ভুল করেছি সামনেও হয়তো করবো তবে তোমাকে নিজের করার জন্য জন্য আমি সব কিছু করতে রাজি আছি, আমি চাইলেই তোমার দ্বারা আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি কিন্তু তোমার কিছু হলে যে নিজেকেই হারিয়ে ফেলবো আমি তখন তো জিতে গিয়েও হেরে যাবো। তাই এমন কিছু করবো যাতে সাপও মরে যায় আর লাঠিও ভেংগে যায়, পারলে ক্ষমা করে দিও আমায়। যদি বেচে থাকি তাহলে আবার দেখা হবে ”

ইনান সামুর কপালে ছোট্ট একটা কিস করে উঠে দাঁড়ায় আর পকেট থেকে একটা চিরকুট বের করে সামুর হাতে গুজে দিয়ে যায়। দরজা দিয়ে বের হতেই সায়ানের সাথে ধাক্কা খায়, সায়ান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে

“ওই তুই একা আমার বোনের রুমে কি করছিস? বিয়ের আগে আর কখনো একসাথে যাতে না দেখি ”

“হুম” বলে চলে যেতে নিলে সায়ান হাত ধরে বলে

“ঘুমের মধ্যে কি কথা বললি ওর সাথে?ওতো ঘুমাচ্ছে ”

“আজ চলে যাচ্ছি তাই গুড বাই বলতে এসেছিলাম ”

“চলে যাচ্ছিস মানে কোথায় যাচ্ছিস? ”

“ঢাকায়, একটু দরকার আছে ”

“হুম তাড়াতড়ি আংকেল আন্টিকে নিয়ে আসিস, বিয়ের কথা বার্তা বলতে হবে ”

“এত তাড়াহুড়ার কিছু নেই ওর গ্রেজুয়েশন পর্যন্ত আমি ওয়েট করতে পারবো ” বলে সামুর দিকে তাকালো

“ওকে উঠিয়ে দেই কথা বলে যা ”

“না ঘুমোক, ফোনে কথা বলে নিবো ”

“ওকে, বের হচ্ছিস কখন?”

“এখুনি, গুড বাই ”

“ভালো থাকিস, তোকে খুব মিস করতাম ” বলেই ইনানকে জড়িয়ে ধরলো সায়ান, ইনান হাত উঠিয়ে জড়িয়ে ধরতে গিয়েও ধরলো না ”

🌸🌸🌸

তিনদিন পর রাত ১২.০৩

রুশি ডায়রি লিখছিলো, সচারাচর লিখার অভ্যাস নেই তবে এই বিশেষ দিনে লিখতে ভুলে না, আজ ওর বার্থডে। কলকাতায় থাকাকালীন সুজি উইশ করতো একটু আগেও ফোন করে উইশ করেছে, ও ছাড়া বাকি কেউ হয়তো জানেই না ওর বার্থডে এর কথা। আজ রুহান ওর সাথে ঘুমাবে। দুইদিন ধরে রুহান ওর সাথে আগের মতো কথা বলে, আগের মতো খেলে। সবকিছু মনে হচ্ছে ঠিক হয়ে আসছে। সায়ান কে ক্ষমা করে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে, এই কয়দিনে এটা বুঝে গিয়েছে যে এই লোকটি ওকে ছেড়ে কখনো যাবে না, তার সাথে যাই করুক তার লাইফের একমাত্র প্রেয়সী শুধুমাত্র সেই। রবি ঠাকুরের একটা উক্তি আছে

“যদি ক্ষমা করতে নাই পারো তবে ভালোবাসো কেন?”

আসলেই তারা দুজনেই পরিস্থির স্বিকার ছিলো আর নিতান্তই ভুলবুঝাবুঝি ছিলো দুজনের মাঝে। তাছাড়া সেদিন এয়ারপোর্টে নিজের চোখে তার শত্রুদের দেখেছে, তারমানে যা বলেছে সব সত্যি। তাই আর রাগ পুষে রাখতে চায়না, কারণ এই রাগের বশে তাদের জীবনের সুন্দর মুহুর্ত গুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে।

ও আর কতোদিনই বা বাচবে?তবে যতদিন বাচে এই পরিবারের সাথে বাচতে চায় হাসিখুশি ভাবে। রুশি লিখছিলোই হঠাৎ লাইট অফ হয়ে যায়, ও ভয়ে জড়োশড় হয়ে যাচ্ছে, অন্ধকারে ছোট থেকেই ভয় লাগে। সায়ানকে ডাকবে কিন্তু আওয়াজ বের করতে পারছেনা। তখনি হালকা সাউন্ড আসছে বারান্দা থেকে, টুংটাং গিটারের আওয়াজ সাথে এককা মিষ্টি সুর,,,

“থোড়ি জাগাহ দে দে মুঝে
তেরে পাস কাহি রেহ যাউ মে
খামোশিয়া তেরি সুনু
অর দূর কাহি না যাউ মে

আপনি খুশি দেকে মে তুঝে
তেরি দারদ সে জুড় জাউ মে

মিলা যো তু ইহা মুঝে
দিলাউ মে ইয়াকিন তুঝে
রাহু হোকে তেরা সাদা
বাস ইতনা চাহতা হু মে ”

সায়ান চোখ বন্ধ করে গান গাইছিল, চোখ খুলেই পাশে রুশিকে দেখতে পেলো, গিটারটা পাশে রেখে উঠে দাঁড়াল তারপর পাশের রাখা গিফট বক্সটা নিয়ে বললো
“হ্যাপি বার্থডে”

“থ্যাংক ইউ” বলে গিফট হাতে নিলো ছোট্ট একটা বক্স র‍্যাপিং করা, বুঝাই যাচ্ছে রিং এর বক্স।

“খুলে দেখো ”

রুশি র‍্যাপিং খুলতেই একটা কালো রঙয়ের একটা বক্স, বক্সটা খুলার আগেই সায়ান নিয়ে নিলো তারপর নিজেই খুললো। প্লাটিনামের দুটি কাপল রিং, খুব সুন্দর ডিসাইন এর। রুশির সামনে হাটু গেড়ে বসে বললো

“আই নো আই মেড প্লেন্টি অফ মিস্টেকস, হয়তো ক্ষমা করার মতো না, তবুও বলছি আমাকে কি একটাবার ক্ষমা করা যায়না! আমি সারাজীবন তোমার পাশে থাকতে চাই, আমি তোমাকে খুব করে চাই আর সারাজীবন চাইবো। একটা সুযোগ দিবে আমায় ভালো হাজবেন্ড হওয়ার ”

রুশি কি বলবে বুঝতে পারছেনা,চোখ গড়িয়ে দুফোটা জল পড়লো, এমন সারপ্রাইজ ও কখনো পায়নি। কিছু বলতেও যেন মুখে বাজছে তাই হাত বাড়িয়ে দিলো, সায়ান তার উত্তর পেয়ে গিয়েছে তাই রুশির হাতে পরিয়ে দিলো তারপর দাঁড়িয়ে রিং এর বক্স এগিয়ে দিলো, রুশি মুচকি হেসে রিং পরিয়ে দিলো।

তারপর হাত এগিয়ে দিলো ডান্স করার জন্য, বেকগ্রাউন্ডে মিউজিক চলছে খুব আস্তে

I need your love
I need your time
When everything’s wrong
You make it right
I feel so high
I come alive
I need to be free with you tonight
I need your love…

ডান্স করতে করতে রুশির খুব কাছে চলে এসেছে সায়ান, একপাশের চুলগুলো সরিয়ে গলায় গভিরভাবে ঠোট ছোঁয়াল, তারপর কানের কাছে আস্তে করে বললো “মে আই?” রুশির শক্ত করে জড়িয়ে ধরা যেন সব না বলা কথা বলে দিচ্ছিলো, রাত যত গভীর হচ্ছে অনুভুতিরা তত জড়োশড় হচ্ছে আর দুটি মন এক হওয়ার আকুতিতে ব্যস্ত, অপেক্ষা শুধু সময়ের,,,

#চলবে

(এক দুই পর্বে শেষ হয়ে যাবে গল্পটি, সবাইকে আর বেশিদিন কষ্ট করে থাকতে হবে না🙂)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here