বৈবাহিক চুক্তি পর্ব-২৩

0
2920

#বৈবাহিক_চুক্তি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্বঃ২৩

“স্যার আপনি সব জেনেও চুপ করে আছেন কেন?”

“আমিও দেখতে চাই আমার কাছের মানুষটি আমাকে কত আঘাত করতে পারে ”

“কিন্তু এভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে তো অনেক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে”

“ক্ষতিটা যতক্ষণ পর্যন্ত আমার উপর থাকবে আমি টু শব্দটুকু ও করবো না কিন্তু আই সয়ার যদি আমার ফেমিলির উপর একটা আচড়ও আসে তাহলে এই দুনিয়ায় তার শেষ মুহুর্ত হবে সেটি ”

“আপনার বোনতো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে, তাকে সাবধান করে দেয়া উচিৎ নয় কি?”

“আমার বোন সেই মানুষটিকে খুব বিশ্বাস করে তাই তার সেই বিশ্বাস ভাংতে চাই না, ওর জীবন থেকে এই মানুষটি চলে গেলে ও এই ধাক্কা সামলাতে পারবে না। বাবা মায়ের ধাক্কা অনেক কষ্টে সামলে উঠেছে ও। তাইতো ওকে চোখে চোখে রেখেছি আমি। সবচেয়ে মজার বিষয় কি জানো?
তুমি জানো সামনের মানুষটি মিথ্যা বলছে, যেটা দেখাচ্ছে সে আসলে সেটা না তবুও তার সাথে তুমি হাসি মুখে কথা বলছো। কারণ আমি দেখতে চাই আমার প্রান প্রিয় বন্ধু ঠিক কতোটা নিচে নামতে পারে। এটা দেখার মজাই আলাদা বুজছো!”

“স্যার তাহলে আগে কি করবেন? এভাবে চলতে থাকলে তো কোম্পানির স্টক মার্কেট অনেক লো হয়ে যাবে তাছাড়া একটার পর একটা কন্ট্রাক্ট আমাদের হাত ছাড়া হচ্ছে ”

“আমাদের একটা কোম্পানির কন্ট্রাক্ট হাতছাড়া হচ্ছে কিন্তু বাকিগুলো তো ঠিকই আছে। তাছাড়া এই ব্রাঞ্চ ছাড়া বাকি ব্রাঞ্চ গুলোর খবর তেমন কারো জানা নেই তাই এই কোম্পানি হাত ছাড়া বিশেষ কোন ক্ষতি হবে। গেম তো মাত্র শুরু হয়েছে, এখনো তো অনেক দেখার বাকি। নিজের লেভেলের কারো সাথে খেলার মজাই আলাদা বুঝলে! আর সে যদি হয় নিজের কেউ! তুমি সব কিছুর দিকে নজর রাখো আর আমাকে আপডেট করতে থাকো”

“ইয়েস স্যার, সেদিক থেকে নিশ্চিন্তে থাকুন ”

“ও আমাকে হারিয়ে যে আনন্দ পাচ্ছে তাতে আমিও খুব মজা পাচ্ছি, আমি লাগাম ছেড়ে দিয়েছি ও যা করার করুক, যখন লাগাম ধরে টান দিবো তখন বুঝতে পারবে সায়ান জামিল খান কি করতে পারে” পেপার ওয়েট ঘুরাতে ঘুরাতে

তখনি সায়ানের ফোন বেজে উঠে,আর অপরপাশ যা শুনলো তা শুনার জন্য ও মোটেও প্রস্তুত ছিলো না

“আমি বলেছি ইনান তুই আমাকে যাই করিশ আমি কিছু বলবো না কিন্তু আমার ফেমিলির কিছু হলে ছেড়ে কথা বলবো না। তুই কাজটা ঠিক করিশ নি এবার আমি যা করবো তা করতে তুই আমাকে বাধ্য করেছিস ”

বলেই পেপার ওয়েটটি সজোরে ফ্লোরে আঘাত করলো, মুহুর্তেই সেটি বিভিন্ন খণ্ডে পরিণত হলো, সায়ান দ্রুত পায়ে বের হলো, খুব দ্রুত গাড়ি ড্রাইভ করছে, গন্তব্য সিটি হসপিটাল। একটু আগেই রুশি ফোন করেছে যে রুহান অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে আর তাকে হসপিটালে নেয়া হয়েছে। আজ কয়েকদিন ধরেই রুহান কেমন জানি করছলো, সারাক্ষণ শুয়ে থাকে আর কিছু খেতে চায় না, খেলেও বমি করে দেয়। সায়ান গাড়িটা পার্ক করে ছুটলো ২০৩ নং কেবিনের দিকে, কেবিনে পৌঁছেই দেখলো রুহান বেডে অচেতন অবস্থায় শুয়ে আছে, মুখে অক্সিজেন মাস্ক আর হাতে ক্যানেলা লাগানো। পাশেই রুশি যেন পাথর হয়ে বসে আছে, কিন্তু থেকে থেকে কেপে উঠছে আর চোখ গড়িয়ে জল পড়ছে। সামু পাশে বসেই শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছে। রুশির দিকে এগিয়ে যাবে তখনি দাদাজি কেবিনে ঢুকলো, সায়ান দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলো তার কাছে

“কি বলেছে ডাক্তার? কি হয়েছিলো ওর আর এখন কেমন আছে?”

“ডক্টর ভেবেছিলো ফুড পয়জনের কারণে এমন হয়েছে কিন্তু ওয়াশ করার পর বুঝতে পেরেছে যে ড্রাগস এর কারণে এই অবস্থা। ওর পেটে হাই ডোজের ড্রাগ ছিলো কিন্তু বমি হওয়ায় অধিকাংশ বের হয়ে গেছে তাই ততটা ক্রিটিকাল অবস্থা হয়নি। হি ইজ আউট অফ ডেঞ্জার নাও কিন্তু অনেকটা দুর্বল তাই রেস্টের প্রয়োজন”

সায়ান হাত মুঠো করে ফেললো, ওর ছোট্ট ছেলেটাকে ছাড় দেয়নি ও, যদি এখন চোখের সামনে পেতাম তাহলে খুন করে ফেলতাম ইউ রাসকেল,বেরিয়ে যেতে নিয়েও কিছু একটা ভেবে ফিরে আশে।

“দাদাজি ওইযে চকলেট আপনি আনতেন রুহানের জন্য সেটা কোথা থেকে আনতেন? ”

“আমি তো জানি না, ওইযে তুমি যে বডিগার্ড নিয়ে এসেছিলে না? কি নাম যেন!ওকেই আনতে বলতাম আমি। কেন কি হয়েছে? ”

“নাহ কিছুনা, আপনি এই দিকে থাকেন আর ওদের খেয়াল রাখেন আমি বডিগার্ডদের বলে যাচ্ছি সুরক্ষা বাড়িয়ে দিতে ”

সায়ান গাড়ি ড্রাইভ করে ঢাকার দিকে যাচ্ছে, অনেক হিসাব বাকি আছে যা আজ চুকাতে হবে, তুই জানিসনা তুই আমার কোথায় হাত দিয়েছিস ইনান, তোর সব কিছু ক্ষমা করলেও এর হিসাব তোকে দিতেই হবে।

“বস ইনান স্যার এখন ময়মনসিংহে আছে আর আপনার বাড়ির দিকেই আসছে ”

“হুম আসছি আমি। তুমি আসলে যাতে না যেতে পারে সেই ব্যাবস্থা করো ”

“শিকার নিজেই হাতের কাছে ধরা দিচ্ছে, তাকে ছিঁড়ে খাওয়ার মজাই আলাদা” স্টেয়ারিং এ হাত রেখে বাকা হাসি দিয়ে।

🌸🌸🌸

সায়ানের সাথে হিসাব মিলানোর বাকি আছে এখনো, ও জানে এখন সায়ান বাড়ির দিকেই আসছে তাই বসে আছে ওর জন্য। আজ অনেক প্রশ্নের জবাব চাই ওর সাথে বদলাও। যেই প্রতিশোধের আগুন ছয় বছর ধরে পুষছে তা এতো সহজে নিভে যায় কি করে? যেদিন জানতে পেরেছে ওর ভালোবাসার মানুষ ওরই শত্রুর বোন তখন খুব কষ্ট লেগেছিল। একবার মনে হচ্ছিলো সব শেষ করে দেই কিন্তু কি করে শেষ করবে সব? যাকে ছাড়া নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হয় তাকে ছাড়া থাকা সম্ভব নয় তাই প্লেন বদলে ফেলেছে। যেখানে এটাক করতে এসেছিলো সেটা বদলে অন্য জায়াগায় এটাক করার চিন্তা করলো আর তা করেছেও। বাংলাদেশে “এসকে গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিস” এখন এক থেকে তিন এ নেমে এসেছে আর কয়েকদিনে টপ টেন থেকে বের হতে সময় লাগবে না। আর অন্য ক্ষেত্রে তো…

মেইনডোর খুব শব্দ করে খুললো সায়ান ও জানে ইনান ভেতরে আছে, ঢুকেই ইনানের রিল্যাক্স মুডে সোফায় বসে থাকাটা হজম হলো না ওর। কাছে এসেই কলার চেপে ধরে দাড় করালো ওকে আর শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে মারা শুরু করলো,ইনান মার খেয়েও হাসছে যা দেখে সায়ানের রাগ আরো বেশি বাড়ছে আর ও আরো বেশি মারছে ওকে। সায়ানের এই আহত বাঘের ন্যায় গর্জন দেখে ইনান ভালোই বুঝতে পারছে তীর নিশানা বরাবর গিয়ে লেগেছে।

যখন ইনানকে মারছিল তখনি হুট করে একজন সায়ানকে সামনে ফিরিয়ে ঘুষি মারলো আর একজন এসে ওর হাত পেছন থেকে ধরলো। সামনে থাকা মানুষটিকে দেখে সায়ান অবাক হলো, “ঘরের শত্রু বিভীষণ” বলে একটা উক্তি রয়েছে আর সেটার জলন্ত প্রমাণ চোখের সামনে দেখতে পেলো। সায়ানের চাচা জাহিদ খান স্বয়ং দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে, চাচার সাথে ওর ভালো সম্পর্ক কোনকালেই ছিলো তাই বলে ওর চাচা শত্রুপক্ষের সাথে হাত মিলিয়ে সত্যিই মিরজাফর হয়ে গেলো, নিজেকে সত্যি মেঘনাদ ভাবতে ইচ্ছে হচ্ছে ওর আর বলতে ইচ্ছে করছে
“হায় তাঁত তব কর্মে ইচ্ছে মরিবারে”
কিন্তু যে তার হাত ধরেছে তাকে দেখে মোটেও অবাক হলো না, ওরই এসিসট্যন্ট ধরে রেখেছে ওকে। ওর এই অবাক চাহনি দেখে ইনান হাসলো আর আঙুল দিয়ে নিয়ে ঠোটের কোনে লেগে থাকা রক্ত মুছছে।তারপর সায়ানের চুল মুঠ করে ধরলো, আঁহ নামক অস্ফুট শব্দ বের হলো সায়ানের মুখ থেকে।

“কেমন লাগছে মি.সায়ান জামিল খান,নিজের বাসায় নিজের সবচেয়ে বড় শত্রুর সামনে হাটু গেড়ে এইভাবে বসে থাকতে? কোথায় গেলো সেই সায়ান জামিল খান যার ইশারায় পুরো আন্ডারওয়ার্ল্ড কাঁপতো?আন্ডারওয়ার্ল্ড এর বাদশা ওফফফ স্যরি সাবেক বাদশাহকে এইভাবে নিজের সামনে নত শীরে বসিয়ে রাখতে আমার কিন্তু সেই লাগছে। ”

বলেই নিজের মনের সাধ মিটিয়ে মারছে ওকে, সায়ান যখন কিছুটা দুর্বল হয়ে গেলো তখন বললো

“কিরে বললি নাতো কেমন ফিল হচ্ছে তোর নিজেরই বন্ধুর এত বড় ধোকার সম্মুখীন হতে?”

সায়ান শান্ত চাহনিতে তাকালো তারপর বললো

“কেন করলি এটা তুই আমার সাথে?” বলতে কষ্ট হচ্ছে তবুও বলছে

“আমারো একি প্রশ্ন কেন করলি এটা আমার সাথে?, ছয়টা বছর শুধু এটাই ভেবে এসেছি আমার ফ্রেন্ড আমার সাথে এটা কি করে করতে পারলো! আর প্রত্যকটা মুহুর্তে ভেবেছি তোকে সামনে পেলেই তোর এই বা পাশ গুলি করে ঝাজরা করে দিবো যাতে তুই তোর বোন, বউ আর বাচ্চাকে রাখিস”

“কি করেছি আমি?বল কি করেছি?”

“সাহিল ছেড়ে দাও ওকে, ও এমনিতেই আর আমাকে এটাক করার পজিশনে নেই ”

ইনানের কথামতো সাহিল ওকে ছেড়ে দিলো কিন্তু পকেট থেক গান বের করে ওর মাথায় ঠেকালো,

“জানতে চাচ্ছিলি না কি করেছিস? লয়ার এহসান চৌধুরীকে মনে আছে? যাকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছিলি তুই কারণ তোর লোকের বিরুদ্ধে লড়ছিল সে আর তোর কথামতো লড়া বন্ধ করেনি তাই! জানিস সে কে ছিলো? আমার বাবা ছিলো সে, তার মৃত্যুতে আমার যতোটা না বেশি কষ্ট হয়েছে তার থেকে বেশি কষ্ট হয়েছে এটা জেনে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আমার বাবার খুনি ”

“জানিস বিশ্বাস করতাম না আমি যে তুই এতো নিকৃষ্ট যদি না এটা দেখতাম ” বলেই কতোগুলো ছবি ছুড়ে মারে সায়ানের দিকে, যাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে একজন মাঝ বয়সী লোকের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ধরে আছে সায়ান, সায়ান বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে,

সায়ান স্থির ভাবে তাকিয়ে আছে ওই ছবিটির দিকে, ছবিটির ঘটনা সম্পুর্ণ সত্যি, বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি ওই ছিলো। ও ভাবতেও পারেনি অতীত এভাবে হানা দিবে ওর লাইফে, যে অতীতের ভয় ও প্রত্যকটা দিন পায় যার নিজের সন্তানকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে সেই অতীত ওর দ্বারপ্রান্তে।

“কি মনে পড়েছে? মনে পড়ারই কথা এতবড় খুন করে ভুলে যাওয়ার কথা না, আচ্ছা তোর বউ তোকে ক্ষমা করতে পারবে এটা জানার পর যে তুই একটা খুনি, হাজারো মানুষের রক্তে তোর এই হাত লাল হয়ে আছে?”

সায়ান ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালো, রুশি ওকে কখনোই মেনে নিবে না যদি জানতে পারে ও আন্ডারওয়ার্ল্ড মাফিয়া ছিলো। কখনোই হয়তো ক্ষমা করবে না।

#চলবে

(কালকেই হয়তো লাস্ট পার্ট দিবো, আর কালকেই সব রহস্যের জট খুলে যাবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here