বৈবাহিক চুক্তি পর্ব-৫

0
2931

#বৈবাহিক_চুক্তি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্বঃ৫

হসপিটালের বেডের পাশে বসে আছে রুশি তার পাশেই রুহান বেডে ঘুমাচ্ছে, হাতে স্যালাইন লাগানো একটু পুর্বেই ডাক্তার এসে ইঞ্জেকশন দিয়ে গেছে। অনেকদিন ভালো করে খাওয়া দাওয়া হয়নি তাই এই অবস্থা। রেডিও তে কাজ করার সুবাদে বিকাল পর্যন্ত স্টেশনেই থাকতে হতো, তারপর সুজি আর ও একসাথে ফিরতো।এরপর বাসায় এসে রান্না করে রুহানকে চাইল্ড কেয়ার থেকে আনতে যেত। সারাদিন বেচারা কি খেত না খেত কে জানে? নিজের সন্তানের মা যেরুপে খেয়াল রাখে অন্য কেউ সেরুপে রাখতে পারেনা, আর রুহানটাও বড্ড জেদি ওর হাত ছাড়া অন্য কারো হাতে খুব একটা খেতে চায় না। তাই খুব দুর্বল হওয়ার কারণে এখনো ঘুমাচ্ছে। রুশি রুহানের হাত ছেড়ে উঠে দাড়ালো তারপর কেবিন থেকে বের হলো। বর্তমানে স্কয়ার হসপিটালের ভিআইপি কেবিন বুক করেছে সে না ঠিক সে বুক করে নি যে বাচিয়েছে সে বুক করেছে। ছেলের টেনশনে এতক্ষণ এটা মাথায় না আসলেও এখন ওর অস্থির লাগছে, এই হসপিটালের নরমাল কেবিনেটই হয়তো ও এফোর্ড করতে পারবে আর তো ভি আইপি কেবিন। ওইসময় লোকটিকে তাড়াহুড়ায় কিছু বলতেও পারেনি।
হসপিটালের রিসেপশনের দিকে এগুচ্ছিলো তখন পেছন থেকে বলে উঠলো

” রিসেপশনে দিকে কেন যাচ্ছেন আপনি? কিছু লাগলে বলুন আমায়”

” নাহ, কিছু লাগবে না আমি আসলে…বিল কত হয়েছে সেটা জিজ্ঞেস করতেই যাচ্ছিলাম ”
কিছুটা সংকোচ নিয়েই কথাটা বললো রুশি

“সেকি এখন বিল জেনে কি করবেন? ডক্টর তো বললো আরো একদিন থাকতে হবে, আপনার ছেলেতো পুরোপুরি সুস্থ নয় ”

” জি, সেটা আমি জানি কিন্তু আমার একজাগায় যেতে হবে খুব জরুরি তাই ভাবছি রুহান ঘুম থেকে উঠলেই ডিসচার্জ করিয়ে চলে যাবো ”
রুশি বিনা সংকোচে কথাটা বললো কারণ ওর কাছে এতটাকা নেই তারউপর আরেকদিন থাকা মানে বিল দ্বিগুণ হয়ে যাওয়া।

” দেখুন আপনার সন্তানের ভালো যদি আপনি না বুঝেন তাহলে আর কে বুঝবে? বাই এনি চান্স আপনি কি বিল নিয়ে টেনশন করছেন? ”

” না…ঠিক তা না আসলে… ” রুশি প্রশ্নটি শুনে একটু ইতস্তত বোধ করলো,

“আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন, আপনি হসপিটাল থেকে বের হওয়ার আগে বিল পে হয়ে যাবে”

“আপনি আমার এত সাহায্য করলেন আর আমি আপনার দয়া আর নিতে পারবো না, বিল আমি নিজে পে করে দিতে পারবো ইনশাহ আল্লাহ ”

” এটা আমার দায়িত্ব ছিলো কোন দয়া নয়, বাই দ্যা ওয়ে বারবার আপনি বলে সম্মধোন করতে আমার কেমন জানি লাগে, তুমি বলতে আপনাকে? ”

” সে নাহয় বলবেন কিন্তু আপনার নামটাই তো জানা হলো না ”

” ওহ আমার নাম সাহিল রেজওয়ান, ইউ ক্যান কল মি সাহিল”

” জি সাহিল, আপনি আমার অনেক বড় উপকার করেছেন আজ আপনি না হলে তো আমরা বেচেই ফিরতাম না ”

” কিন্তু আমিতো তোমাকে শুধু হসপিটালেই পৌঁছে দিয়েছি সেফলি তাহলে… ”

” মানে! যদি আপনি আমাদের বাচান নাই? তাহলে ওইযে কালো হুডি পরা লোকটি… ওয়েট আপনি তো ফরমাল ড্রেসে তাইলে ওই লোকটি কে ছিলো?” অস্থিরতায় একটু জোরেই বলে ফেললো

” রিলাক্স, প্যানিক করোনা আমার বস তোমাকে বাচিয়েছে, আমাকে বলেছে যেহেতু তোমার ছেলে অজ্ঞান হয়ে গেছে তাই হসপিটালে নিয়ে যেতে”

” ওই লোকটি আপনার বস ছিলো?যে আমাকে গান পয়েন্ট থেকে বাঁচিয়েছিল? “জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রুশি,তার চাহনি দেখে হ্যা বোধক ইশারা করলো সাহিল। রুশি চিন্তায় পড়ে গেলো

চার বছর আগের সেদিনের মত আজোও একটি লোক ওকে বাচিয়েছে, সে হাত সেই ছোঁয়া খুব কাছের মনে হয়েছিলো লোকটিকে ওর। এয়ারপোর্টের বাইরে যখন লোকটি ওকে টেনে সরিয়ে নিয়েছিল তখন রুহান চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো ভয়ে তাই কালো হুডি পরা লোকটি ওকে টেনে কোলে নিয়ে নিয়েছিল আর ওর হাত ধরে দৌড়াতে শুরু করেছিলো তারপর সামনের গাড়ির গেট খুলে রুহানকে ভেতরে রেখে ওকে ভেতরে বসিয়ে দিয়েছিলো, রুশি রুহানকে নিয়ে অনেক প্যানিক ছিলো তাই সামনের সিটে কে বসেছে খেয়ালি করেনি। কে ওই লোকটি যাকে এত পরিচিত মনে হচ্ছিলো!! তবে কি সে রুহানের বাব? যদি সে হয় তাহলে তার চেহারাও আমি দেখতে চাই না, ঘৃণা করি আমি ওই লোকটিকে যার জন্য আমার পুরো জীবন নষ্ট হয়ে গেছে, যেখানে বড় হয়ে কিছু একটা হওয়ার সপ্ন দেখতাম, এত কষ্ট করে পড়াশুনার খরচ চালিয়েছি সেখানে লোকটির কারণে আমি আর পড়াশুনা করতে পারিনি, ঘর ছাড়া হয়েছি আমি নিজ দেশ ছেড়ে এত দূরে ছিলাম এতদিন আমার তারুণ্য শেষ হয়ে গেছে, আমি বিবাহিত হয়েও কাউকে বলতে পারিনি আমি বিবাহিত ।আমি চাইনা ওই লোকটি কখনো আমার সামনে আসুক কখনো না!

🌸🌸🌸

হাতে গান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সায়ান, তার সামনেই চেয়ারে বাধা একটি লোক যাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে এতক্ষণ বেদরম পেটানো হয়েছে

” শেষ বারের মত বলছি বল তোকে কে পাঠিয়েছে? তোদের ওই গোলাগুলির উদ্দেশ্য ছিলো আমাকে মারা তাইনা?তাহলে আমার সাথে লড়াই করতি নিরিহ মানুষ গুলোকে কেন মারছিস? বল কেন? ”

” আমাকে মেরে ফেললেও আমি বলবো না, কারণ তুই আমার শত্রু, আমি তোর হার দেখতে চাই ”

” মরার যখন এতই শখ তাহলে মর”
বলেই গুলিতে ঝাঁজরা করে ফেললো লোকটির বুক,কপালে আংগুল ঘষছে রাগে তখনি ফোন বেজে উঠলো, সবাই কার ফোন বাজছে তা খুঁজতে লাগলো কারণ তাদের বস অনেক রেগে আছে নেক্সট টার্গেট কে হয় কে জানে! সবাই খুঁজে যখন বুঝতে পারলো তাদের না তখন একজন গিয়ে মৃত ব্যাক্তির বডি খোজা শুরু করলো এবং একটা মোবাইল পেয়েও গেলো। কলটি ধরে লাউডস্পিকারে রাখতেই একটা পুরুষালী কণ্ঠস্বর শুনা গেলো

” অলরেডি মেরে ফেলেছিস? তুই কি ভাবছিস আমার লোককে তোকে ধরা খেতে কেন দিয়েছি? যাতে তোকে এই মেসেজ দিতে পারি যে আমিই তোকে মারতে পাঠিয়েছি ”
” কে তুই, আমার পেছনে কেন লেগেছিস? তুই জানিস আমি কে?কুকুরের মত পেছন থেকে ঘেউঘেউ করেছিস কেন ? সাহস থাকলে সামনে আয় ”
” ইশশ এতো বছরেও তোর স্বভাব বদদালো না, সময় হলেই সামনে আসবো তখন দেখবি কে কুকুর আর কে বাঘ, ওহ তোকে তো একটা কথা বলাই হয়নি যাকে চারবছর ধরব খুজছিস পেয়েছিস তাকে? আমি কিন্তু পেয়ে গেছি,সেই দেখতে আমার তো নেশা ধরে গেছে”
” মুখ সামলে কথা বল, কোথায় দেখেছিস ওকে? হ্যালো, হ্যালো… ডেম ইট ফোন কেটে দিসে আবার প্রাইভেট নাম্বার দিয়ে ফোন করেছে যাতে ট্রেস করতে না পারে ”

সায়ান ভাবছে কে এই শত্রু কথা শুনে মনে হচ্ছে খুব ভালো করে চিনে।নাহ তাড়াতাড়ি খুজে বের করতে হবে ওকে আর বউ…নাহ তাড়াতাড়ি খুজে বের করতে হবে ওকে যদি কোন ক্ষতি করে?

হসপিটালের কেবিনে রুশি আর রুহান ঘুমিয়ে আছে আর তাদের খুব গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে কেউ, ঠোটের কোনে তার হাসি ঝুলছে রহস্যময় হাসি। আচমকা রুশির ঘুম ভেংগে গেলো, ওর মনে হচ্ছিলো ওকে কেউ দেখছে কিন্তু চোখ খুলে কাউকে দেখতে পেলো না। আশপাশটা ভালো করে দেখে রুহানকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করলো, নাহ কাল সকালেই এখান থেকে চলে যাবে ও।

#চলবে

( একজন বলছিলো সায়ানকে কঠিন শাস্তি দিতে কে কে রাজি আছেন তার সাথে? কমেন্টে জানাবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here