বৈবাহিক চুক্তি পর্ব-৬

0
2980

#বৈবাহিক_চুক্তি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্বঃ৬

কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে একজন খুব কষ্টে নিজের হাসি আটকানোর চেষ্টা করছে, এতক্ষণ আটকাতে পারলেও এবার শব্দ করে হেসে ফেললো, তখনি ভেতর থেকে কম্পিত কন্ঠে আওয়াজ এলো “কে? বাইরে কি কেউ আছেন?”
উচ্চস্বরে হাহা করে হাসতে যাবে তখনি কেউ একজন টেনে নিয়ে গেলো ব্যাক্তিটিকে

“হা হা হা, এত ভিতু যে বুঝতে পারছে কেবিনে কেউ ছিলো তবুও উঠে চেক না করে চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান করছে, আবার এখন হাসির আওয়াজ শুনেছে তবুও ভয়ে বেরিয়ে আসছে না। ভিতুর ডিম কোথাকার! এই মেয়ে নাকি আবার ছেলেটিকে বাচানোর জন্য গান পয়েন্টে উল্টো দিকে দাঁড়িয়েছে!”

“বস আপনি ঠিক আছেন? না মানে আপনি কি ড্রিংক বেশি করে ফেলেছেন? আর ইউ ড্রাংক? ”

” শাট আপ সাহিল, আমি ড্রিংক করলেও আমার নেশা হয়না আর আজতো টাচ পর্যন্ত করিনি ”

” না মানে আপনাকে এই প্রথম হাসতে দেখলাম, আপনি এত সুন্দর করে হাসতেও পারেন জানা ছিলো না, ছেলে হওয়েই ক্রাশ খেয়েছি, মেয়ে হলেতো ডিরেক্ট প্রেমে পরতাম ”

সাহিলের কথা শুনে সায়ান ভ্রু কুচকে তাকালো ” বাই এনি চান্স তোমার কোন সমস্যা নেই তো? দেখ তাহলে কিন্তু সাবধান, আমি কিন্তু মোটেও ওই টাইপ নই ”

” ছি ছি তওবা তওবা এসব কি বলেন, আমার গার্লফ্রেন্ড আছে ”

” থাকলেই ভালো ” বলে ভ্রু কুচকে গাড়ির দিকে হাটা শুরু করলো।

“আচ্ছা শুনো এই যে এই মেয়েটির সব ইনফরমেশন চাই আমার, আগে কোথায় ছিলো, কোন দেশ থেকে এসেছে যাবতীয় সব ডিটেইলস ”

” ইয়েস বস, কিন্তু বস আপনি এই মেয়েটাকে নিয়ে এত ইন্টারেস্টেড কেন? আই মিন মেয়েটার অলরেডি একটা ছেলে আছে দেখে মনে হচ্ছে বিবাহিত তাহলে… না মানে দাদাজি এত বছর আপনাকে বিয়ে করানোর জন্য এত সুন্দরি মেয়ে দেখালো আর আপনি কিনা এই বিবাহিত মেয়ের দিকে… ”

পরের অংশ মিনমিনে কন্ঠে বললেও সায়ান স্পষ্ট শুনতে পেলো
” তোমাকে যতটুকু বলা হয়েছে ততটুকু করো আর ওদের দিকে খেয়াল রেখো এক মিনিটের জন্যও যেন এদিক সেদিক না হয়”

” জি বস” সাহিল এই প্রথম নিজের বসকে কোন মেয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে দেখে সত্যিই অবাক হলো।

সায়ান ড্রাইভ করছে আর ভাবছে যে ওর যতটুকু খেয়াল রাখা দরকার তার থেকে বেশিই কি রাখছে। ও ক্যালিফোর্নিয়া থেকে যে ফ্লাইটে ল্যান্ড করেছে সেটা একটু ডিলে হওয়ার কারনে কলকাতা থেকে আগত ফ্লাইটের দশমিনিট আগে ল্যান্ড করেছে সেটি। প্লেন থেকে নেমে ফোন অন করতেই ওর ফোনে সাহিলের ফোন আসে যে ও খবর পেয়েছে সায়ান কে মারার জন্য কয়েকজন ওত পেতে আছে। ও অলরেডি সকল বডি গার্ডদের খবর দিয়েছে কিন্তু তাদের আসতে আধঘণ্টা সময় লাগবে তাই ও যেন ওর কাপড় চেঞ্জ করে নেই। এমন ঘটনার সাথে সায়ান পরিচিত, বিজনেসের যত ব্রাঞ্চ বেড়েছে শত্রু সংখ্যা যেন দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। ওকে হারিয়ে টপে যাওয়ার জন্য অনেকেই এমন প্ল্যানিং করছে। তাই কালো হুডি পরে নিলো সাথে মাস্ক, কিন্তু এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে ডান দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো একটা লোক গান পয়েন্ট করে আছে, লোকটির দৃষ্টি লক্ষ করে সামনে তাকাতেই দেখতে পেল একটা মেয়ে বাচ্চা ছেলেকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মেয়েটা কি পাগল নাকি! তখনি ওর নিজের প্রিয়তমার কথা মনে পড়লো, ওতো এভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো, আচ্ছা পৃথিবীর সব মেয়েগুলো বোকা নাকি এই দুজনই স্পেসিফিক বোকা ভেবে পায়না ও। তারপর দ্রুত গিয়ে নিজে বাচালো মেয়েটিকে, বাচ্চাটি ততক্ষণে অজ্ঞান হয়ে গেছে তাই বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে দৌড়াতে লাগলো গাড়ির দিকে। ততক্ষণে ওই লোকেরা ওদের নোটিস করেছে তাই তাদের মাইন্ড ডাইভার্ট করতে অন্যদিকে ছুটলো তাদের গাড়িতে বসিয়ে।আজ হসপিটালে গিয়ে যখন দেখলো মেয়েটি তার ছেলেকে আগলে রেখে শুয়ে আছে তখন ওর নিজের মায়ের কথা মনে পড়ে যায়।

সায়ানের বয়স যখন দশ বছর আর ওর বোনের বয়স আট তখন ওরা ভেকেশনে নিজেদের ফার্মহাউজে বেড়াতে যাচ্ছিল কিন্তু গাড়ির ব্রেক ফেইল হয়ে যায় তাই ওর বাবা মা ওদের দুইভাই বোনকে গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। ও রাস্তায় পড়ার কারনে হাত পা কেটে গিয়েছিল কিন্তু ওর বোন হাতে খুব জোরে ব্যাথা পায়। ট্রিটমেন্ট করার কারনে অনেকটা ঠিক হলেও পুরোপুরি হয়নি, ডক্টর বলেছে আকস্মিক শক খাওয়াতে মাইনর স্ট্রক করেছিলো ওর বোন তাই সাময়িক প্যারালাইজড হয়ে গেছে হাত।হয়তো ঠিক হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। ওর বোনের নাম সামায়রা তবে ও সামু বলে ডাকে। সামু আর ও দাদার আর চাচা চাচির কাছেই বড় হয়েছে। তারা সবাই ময়মনসিংহে থাকে আর ও বছরে একবার ওইখানে যায়।ও হয়তো মেয়েটিকে সাহায্য ওই পর্যন্তই করতো কিন্তু কথা হচ্ছে ওকে যারা মারতে এসেছে তারা এই মেয়েটিকেও কেন টার্গেট করেছে, কি শত্রুতা আছে মেয়েটির ওদের সাথে? তাই মেয়েটির ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করতে বললো যাতে ওর শত্রু সম্পর্কে আরো ধারণা হয়।

“কিন্তু মেয়েটি সত্যিই ভিতু হাহা, আজ বছর বহু বছর পর এভাবে হাসলাম, থ্যাংকস টু দেট গার্ল”

🌸🌸🌸

“হাহা হাহা মাম্মা তুমি… ”
” এই এভাবে হাসছিস কেন? পাগলে ধরেছে তোকে রুহান? ”
“মাম্মা তোমার ছেলেদের মত দাড়ি গজিয়েছে ”
“কি বলতেছিস আবোল তাবোল ” আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থ হয়ে গেলো রুশি। কি সুন্দর কলম দিয়ে মুছ আকা, ওই জন্যই কালরাতে ঘুম ভেংগে গিয়েছিলো, আর ওই হাসির শব্দ!যেটা শুনে যত দুয়া মনে ছিলো সব পড়া শুরু করে দিয়েছিলো। এর মানে এখানে সত্যিই কেউ ছিলো সামনে পেলে তাকে… রাগে রুশির শরির থরথর করে কাঁপছে।

সকাল-১০টা
সায়ান ঘুম থেকে উঠে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে অফিসে ছুটছে। অফিসে ঢুকেই নিজের কেবিনে একজন মেয়েকে বসে থাকতে দেখলো, একটু আগেই ওর বডিগার্ড জানালো সে নাকি তার বউকে খুজে পেয়েছে তাই একপ্রকার দৌড়ে এসেছে এখানে।সাড়ে নয়টা নাগাত নাকি একটা মেয়ে ওর অফিসে এসেছে আর বলেছে ও সায়ানকে দেখতে চায়, বডিগার্ডরা পরিচয় জিজ্ঞেস করলে বলে যাকে সায়ান এত বছর ধরে খুজছে সে। সায়ান এটা শুনে খুব দ্রুত এখানে ছুটে এসেছে, হয়তো তার শ্রেয়সীর মান ভেংগেছে তাই নিজেই ধরা দিতে এসেছে।

” নাম কি আপনার? ”
” আমাকে তুমি করে বলো ডিয়ার, আর নিজের বউয়ের নাম জানোনা তুমি? ওহ ওইদিনতো নাম বলিনি তোমাকে তাই না? আজ বলছি আমার নাম আনিকা ইউ ক্যান কল মি এনি, তোমাকে কত মিস করছি জানো? কেন চলে গিয়েছিলে আমাকে ফেলে? তোমাকে না পেয়ে দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলাম সেদিন। প্রমিস মি আর কোনদিন ছেড়ে যাবে না ” মেয়েটি কথা বলতে বলতে কান্না করে দিয়েছে যা দেখে সায়ানের খুব মায়া হলো। সায়ান মেয়েটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, কিছুটা কাছে গিয়ে গালের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো তারপর…

#চলবে

( যাদের মনে হচ্ছিলো ব্যাক্তিটি সাহিল তাদের জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত, আচ্ছা সায়ান তো অন্য মেয়েকে বউ মেনে নিয়েছে রুশির কি হবে তা নিয়ে চিন্তায় আছি 😥)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here