#ভরসার_দুহাত
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_১২
বুরাকের হাত শক্ত করে ধরে উমায়ের হাঁটছে। হঠাৎ পেছন থেকে দৌড়ে আসার শব্দ আসলো। বুরাক আর উমায়ের পেছনে ফিরে চমকে উঠল। খালিদ খানের লোকেরা দৌড়ে আসছে। উমায়ের অবাক হয়ে বলল-
“এরা এখনো জঙ্গল থেকে যায় নি?”
“গেলে কি আর আমাদের পেছনে আসতো? কিন্তু ওদের চেহারায় ভয়ের ছাপ কেন? আর এইভাবে চিৎকার করার কি আছে?”
“আমিও তাই ভাবছি।”
খালিদ খানের লোকেরা বুরাককে দেখে চিৎকার দিয়ে বলল-
“বুরাক আমাদের বাঁচা”
বুরাক থতমত খেয়ে গেল। উমায়ের ভালো মতো ওদের দিকে তাকিয়ে দেখে ওদের পেছনে কুকুরের দল দৌড়ে আসছে। উমায়ের ভীতু গলায় বলল-
“ওদের পেছনে কুকুর আসছে অনেকগুলো।”
বুরাক ভালো মতো দেখে বলল-
“এইগুলো শিয়ালের দল, পালাও উমায়ের।”
বুরাক উমায়ের এর হাত ধরে দৌড়ে পালালো। হঠাৎ খালিদ খানের একটা লোককে শিয়ালের দল কামড়ে ধরলো। বাকিরা আরো জোরে দৌড়াতে লাগলো। তারা দৌড়াতে দৌড়াতে বুরাকের কিছুটা কাছে এসে পরলো। উমায়ের তাদেরকে দেখে বলল-
“বুরাক ওরা আমাদের ধরে ফেলবে তো।”
“চিন্তা করো কেন আমি আছি তোমার সাথে।”
খালিদ খানের একজন লোক বলল-
“না না এখন ধরা সম্ভব না। নিজের প্রাণ বাঁচিয়ে পালাও সবাই।”
বুরাক ধমকের স্বরে বলল-
“ধরবি না যেহেতু চুপ থাক। দৌড়ানোর সময় কথা বললে শক্তি কমে যায়।”
সবাই চুপ হয়ে দৌড়াচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ দৌড়ানোর পর তারা নদীর সামনে এসে পরলো৷ বুরাক অবাক হয়ে বলল-
“এটা আমরা কোথায় এসে পরলাম?”
খালিদ খানের লোক বলল-
“এটা নদী।”
বুরাক তার মাথায় থাপ্পড় মেরে বলল-
“সেটা তো আমিও দেখতে পারছি। এই নদীর শেষ কোথায় সেটা বল।”
উমায়ের বিরক্ত হয়ে বলল-
“নদীর আবার শেষ হয় না-কি? এই নদী হয় তো নাফাখুম ঝর্ণার পর্যন্ত যায়।”
“বাহ তুমি তো দেখছি ভালোই আইডিয়া করলে।”
“আমি বই-তে পড়েছিলাম।”
খালিদ খানের লোক বলল-
“আরে এখন কি করা যায় সেটা বল বুরাক। শিয়ালরা তো এসে পরবে।”
“না আসবে না, তারা জঙ্গল থেকে বের হয় না।”
উমায়ের বলল-
“এইসব ছাড়ো, তোমরা বলেছিলে আমাদের ধরবে না।”
বুরাক বলল-
“হ্যাঁ ঠিক, তোরা কি আমাদের ধরতে চাস?”
খালিদ খানের লোকেরা একে অপরের দিকে তাকাল। তারপর আবার বুরাকের দিকে তাকিয়ে বলল-
“বস আমাদের মেরে ফেলবে যদি তোদের না ধরে নিয়ে যাই।”
“যাওয়া কি প্রয়োজন? যেখানে দুচোখ যায় চলে যা। রাশিদ খান নেই, খালিদ খান এমনিতেও অনেক কিছু হারিয়েছে। যদি কোনদিন মরে ঘরে পড়ে থাকে। দোষ তোদের উপর আসবে।”
“হ্যাঁ ঠিক বললি, কিন্তু আমরা যাব কোথায়?”
“দুনিয়াতে জায়গার অভাব আছে বল। তোদের মতো মানুষরা পারবে অন্যের সাহায্য করতে। কাজের অভাব নেই দুনিয়ায়। দেখ আমরা এখন গ্রামের আশে পাশে আছি। এখানে অনেক ফ্যাক্টরি আছে। সেখানে কাজ করলে নিজের জন্য উপার্জন করতে পারবি।”
বুরাকের কথা শুনে সবাই ভাবনায় ডুবে গেল। উমায়ের বুরাকের কানের কাছে ফিসফিস করে বলল-
“এই গুন্ডা গুলো তো খুব বোকা। তোমার কথা ওরা মেনেও নিচ্ছে।”
বুরাক কিছু বলল না৷ এখন উমায়েরকে কিভাবে বলবে যে এক সময় এরা সবাই বুরাকের কথায় উঠতো বসতো। সবাই একে অপরের সাথে কথা বুরাকের দিকে তাকিয়ে বলল-
“বস যদি কোনদিন আমাদের খুঁজে ফেলে সত্যের সাথে মোকাবিলা করবো। বুরাক, তোকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।”
বুরাক হেসে তাদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। তারা সবাই হাসিমুখে বুরাককে জড়িয়ে ধরলো। উমায়ের থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে কি স্বপ্ন দেখছে বুঝতে পারছে না। বুরাক তাদের ছেড়ে বলল-
“আমার সাথে যোগাযোগ রাখিস তোরা।”
“আচ্ছা, আমাদের তোর নাম্বার মনে আছে।”
বুরাক হাসলো, নদীর দিকে তাকিয়ে দেখে অনেক মাঝিরা নৌকা নিয়ে নদীতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বুরাক দাঁড়িয়ে কি যেন ভেবে উমায়ের এর দিকে তাকিয়ে বলল-
“উমায়ের, আমি যেখানে নিয়ে যাব যাবে?”
“কোথায়?”
“গেলে বুঝতে পারবে, যাবে?”
উমায়ের হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল। বুরাক উমায়ের এর হাত ধরে হাঁটা ধরলো। উমায়ের পেছনে ফিরে একবার জঙ্গলটা দেখে বলল-
“জঙ্গলের পর নদী, বিষয়টা কেমন ভয়ংকর। আচ্ছা বাঘ, শিয়ালরা বাহিরে আসে?”
“জঙ্গলটা খুব ছোটো, তাই তো আমরা খুব তারাতাড়ি রাস্তা পেয়ে গিয়েছি। এই জঙ্গলে বাঘ নেই। জঙ্গলে শিয়াল থাকা স্বাভাবিক আর শিয়াল গুলো বাহিরে আসে না।”
“যদি ওদের ধরে ফেলে মানুষরা।”
“হয় তো ধরবে না, এই শিয়ালরাই জঙ্গলের পাহারাদার তা জানো?”
“কিভাবে?”
“সন্ত্রাসরা বেশীরভাগ জঙ্গলের ভেতরে নিজের আস্তানা গড়ে। শিয়াল থাকলে ওরা কখনো পারবে না।”
“হ্যাঁ ঠিক বললে”
বুরাক আর উমায়ের হেটে নৌকার সামনে গেল। সেখানে মাঝিরা বসে চা পান করছে। বুরাক একটা মাঝির সাথে কথা বলে নৌকা নিয়ে নিলো নদী পাড় হওয়ার জন্য। উমায়ের কখনো নৌকায় ভ্রমণ করেনি। তাই সে খুব এক্সাইটেড। বুরাক আগে নৌকায় উঠে উমায়ের এর দিকে হাত বাড়াল। উমায়ের বুরাকের হাত ধরে নৌকায় উঠে পরলো। চারপাশে পানি আর পানি। নৌকা স্রোতের কারণে নড়ছে। বুরাক আর উমায়ের গিয়ে বসলো।
“আমরা ডুবে যাব না তো?”
উমায়ের এর মুখে এই কথা শুনে বুরাক কপালে হাত দিয়ে দিলো। উমায়ের বিরক্ত হয়ে বলল-
“তুমি আমার কথা শুনলে এমন রিয়াকশন দাও কেন?”
বুরাক কপাল থেকে হাত সরিয়ে উমায়ের এর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল-
“তোমার মুখে সবসময় এমন কথা বার্তা শুনি কেন? আমরা নৌকায় উঠলাম আর তুমি বলছো ডুবে যাওয়ার কথা।”
“প্রথমবার নৌকায় উঠলাম, তাই আর কি।”
“সাঁতার পারো না?”
“হ্যাঁ পারি।”
“তো ভয় কিসের?”
উমায়ের জবাব দিলো না। মাঝি নৌকা চালাতে চালাতে এগিয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর উমায়ের বলল-
“বুরাক, আমি তোমাকেও বিপদে ফেলে দিলাম তাই না?”
বুরাক উমায়ের এর দিকে তাকাল। উমায়ের আবার বলল-
“তুমি অনেক ভালো। একজন অচেনা মেয়ের এইভাবে সাহায্য করলে। শুধু তাই না আমার পরিবারকেও বাচালে তুমি আর তোমার বন্ধু মিলে। আমি দোয়া করবো সবসময় তোমাদের জন্য। আর এখনও দোয়া করছি যাতে তোমার বন্ধুর কিছু না হয়। তুমি ওকে নিয়ে টেনশন করছো তাই না?”
বুরাক হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল। একটা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে ছেড়ে বলল-
“আমার মন বলছে ববির কিছু হয়নি।”
“তুমি বললে না ববি তোমার বন্ধু কিভাবে হলো?”
“আমি যেখানে তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি সেখানে গেলে তুমি সব জেনে যাবে। কিন্তু ওয়াদা করো সব জানার পর আমাকে ঘৃণা করলেও আমার উপর বিশ্বাস করতে হবে। কারণ আমি তোমাকে তোমার বাবার কাছে পৌঁছে দেয়ার ওয়াদা করেছি। আর আমি আমার ওয়াদা রাখতে চাই।”
“ঘৃণা কেন করবো?”
“সেটা শোনার পর বুঝে যাবে।”
“জানো একটা কথা?”
“কি?”
“গুন্ডাদের সাথে তুমি যেভাবে লড়ছিলে খুব ভয়ংকর লাগছিল দৃশ্যটা। আমার মতে তুমি ওদের থেকেও বেশী ভয়ংকর।”
বুরাক হাসতে হাসতে বলল-
“তার মানে তুমি আমাকে ভয় পাও?”
উমায়ের মাথা নাড়াল। বুরাক হাসি থামিয়ে বলল-
“ভয় পেও না, আমি স্বপ্নেও তোমার ক্ষতি করতে পারবো না।”
উমায়ের মুচকি হেসে মাথা নিচু করে ফেলল। ১০ মিনিটের মধ্যে তারা নদীর ওপাড় পৌঁছে গেল। বুরাক নৌকা থেকে নেমে উমায়ের এর হাত ধরে নামাল। নৌকার ভাড়া মিটিয়ে এগিয়ে গেল দুজন। বুরাক এদিক সেদিক দেখছে। ববি তার বিকাশে টাকা পাঠিয়েছিল। এখন টাকা তুলতে হবে। উমায়ের এখনো না খাওয়া। কিছুক্ষণ হাঁটার পর বিকাশ দোকান খুঁজে পেল বুরাক। সেখানে বাটন মোবাইলও বিক্রি হয়। সর্বপ্রথম মোবাইল নিয়ে সিম অন করে টাকা বের করে নিলো। মোবাইলের টাকা শোধ করে তারা টং দোকানে গিয়ে বসলো। উমায়ের মুগ্ধ নয়নে চারপাশ দেখছে। নদীর পাশে গাছ-পালা, দোকান, স্কুলও আছে। ছোটো ছোটো বাচ্চারা স্কুল ড্রেস পড়ে দৌড়ে যাচ্ছে। বুরাক আসলো নাস্তা নিয়ে। উমায়ের বুরাককে দেখে বলল-
“কয়টা বাজে বুরাক।”
“৮ টা, কেন?”
“ভোরের সকাল এত সুন্দর আগে জানতাম না।”
“কেন? তুমি তো ভোরেই ভার্সিটি যাও।”
“শহরে তো বিল্ডিং আর বিল্ডিং। এমন পরিবেশের সাথে আমি প্রথমবারের মতো দেখা করছি।”
“আরো অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা রয়েছে৷ নাস্তা করে নাও, সবকিছু দেখাতে দেখাতে নিয়ে যাব।”
“এখন আমরা কোথায় আছি?”
“রাঙামাটি”
“ওহ আচ্ছা”
বুরাক নাস্তার প্লেট এগিয়ে দিলো। উমায়ের এর মনে হচ্ছে সে অনেক বছর পর খাবার চোখে দেখলো। খুশীতে চোখে পানি এসে পড়ছে তার। দুজন মিলে নাস্তা করে উঠে দাঁড়াল। বুরাক অনেকবার ববির নাম্বারে কল দিচ্ছে কিন্তু নাম্বার বন্ধ বলছে৷ উমায়েরকে জিজ্ঞেস করলো তার বাবার নাম্বার। কিন্তু তার মনে নেই৷ বুরাক বিরক্ত হলো। কেমন মেয়ে বাবার নাম্বার মনে রাখতে পারে না। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ উমায়ের এর চোখে একটা ফার্মেসি পরলো। বুরাকের হাত ধরে বলল-
“আমার সাথে চলো”
“কোথায়?”
“ফার্মেসিতে, তোমার গালে আর হাতে ব্যান্ডেজ করা প্রয়োজন।”
“উমায়ের আমি ঠিক আছি।”
“প্লিজ বুরাক, আমার ভয় করছে তোমার হাতটা দেখে।”
“আচ্ছা আচ্ছা রিলাক্স, চলো যাই।”
বুরাক আর উমায়ের ক্লিনিকের ভেতর গেল। ডাক্তার আসবে ১০টার পর। উমায়ের ঔষধ বিক্রেতাকে বলল বুরাককে ড্রেসিং করে দিতে। এখন ব্যান্ডেজ করা প্রয়োজন। বুরাক সবার সামনে উমায়েরকে কিছু বলতেও পারছে না। উমায়েরকে ইশারায় বলল সে ব্যান্ডেজ করবে না। উমায়ের চোখ রাঙাতেই বুরাক মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। ঔষধ বিক্রেতা বুরাকের হাতে ও গালে মেডিসিন দিয়ে মুছে ব্যান্ডেজ করে দিলো। বুরাকের জন্য কিছু ঔষধ লিখে দিয়ে বলল সময়ের মতো খেয়ে নিতে। দুজন ফার্মেসি থেকো বের হলো। বুরাক বিরক্ত হয়ে বলল-
“তোমার কারণে আমার ৫০০ টাকা খরচ হলো।”
“ছি বুরাক তুমি দেখছি খুব কিপটে”
“আমি যেখানে যাচ্ছি সেখানে কেও একজন আছে যে আমাকে অসুস্থ দেখলে সেবা করবে দিন-রাত।”
“তাই? কার কথা বলছো?”
“গেলে বুঝতে পারবে।”
বুরাক একটা রিকশা নিলো বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশ্যে। উমায়ের ভাবছে তারা আবার বাসস্ট্যান্ড কেন যাবে। দুজন পাশাপাশি রিকশায় বসে আছে। আধা ঘণ্টার রাস্তা। পুরো রাস্তায় তারা একদম চুপ। বুরাক ববিকে বার বার কল দিয়েই যাচ্ছে। কিন্তু ববির নাম্বার বন্ধ বলছে। বুরাকের খুব টেনশন হচ্ছে ববির জন্য৷ বাসস্ট্যান্ড পৌঁছে তারা নামলো। ববি চট্টগ্রামের বাসের টিকিট কিনলো। উমায়ের ভাবছে বুরাক চট্টগ্রাম কেন যাবে। বুরাক পানি আর চিপস কিনে নিলো। উমায়েরকে নিয়ে চট্টগ্রামের বাসে উঠে সিটে গিয়ে বসলো। বুরাক উমায়েরকে দেখে বলল-
“তুমি চিন্তা করো না, ২ দিনের মধ্যে তোমাকে তোমার বাসায় নিয়ে যাব।”
“আমি চিন্তা করছি না। আমি ভাবছি চট্টগ্রামে তুমি কেন যাচ্ছো।”
“গেলে বুঝতে পারবে।”
উমায়ের আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না। বাসের জানালার সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলো।
বুরাকের ডাকে উমায়ের এর ঘুম ভাঙলো। উমায়ের ধীরে ধীরে চোখ মেলে দেখে বাস থেমে আছে।
“আমরা পৌঁছে গিয়েছি?”
“হ্যাঁ চট্টগ্রাম পৌঁছে গিয়েছি। আর কিছুক্ষণের রাস্তা বাকি। আমাদের নামতে হবে।”
উমায়ের আড়মোড়া ভেঙে দাঁড়াল। বুরাকের সাথে বাস থেকে নেমে দেখে এখানে বিল্ডিং আছে। আবার অনেক গাছ – পালাও দেখা যাচ্ছে। বুরাক এগিয়ে গিয়ে অটোরিকশা নিলো। উমায়েরকে নিয়ে রিকশায় উঠে চিপসের প্যাকেট এগিয়ে দিলো।
“খেয়ে নাও, তোমার জন্য কিনেছিলাম কিন্তু তুমি ঘুমিয়ে পড়ছিলে।”
“আগে একটু পানি দাও।”
বুরাক পানির বোতল এগিয়ে দিলো। উমায়ের পানি পান করে নিলো
বুরাক চিপসের প্যাকেট ছিঁড়ে উমায়ের এর কাছে দিয়ে দিলো। বুরাক উমায়েরকে সবকিছু চেনাতে চেনাতে নিয়ে যাচ্ছে। অনেক কিছুই আছে যা উমায়ের প্রথমবার দেখছে। আরো মুগ্ধ হয়ে সব চিনছে সে। ১৫ মিনিট পর তারা পৌঁছে গেল। রিকশা থেকে নেমে বুরাক চারপাশে চোখ বুলালো। জায়গা খুব পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। আগের মতো আর কিছু নেই। রিকশার ভাড়া মিটিয়ে উমায়ের এর হাত ধরে বলল-
“চলো যাওয়া যাক”
উমায়ের মাথা নাড়াল। দুজন হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে গেল। অনেকক্ষণ হাঁটার পর বুরাক ভ্রু কুঁচকাল। তার মনে হচ্ছে সে ভুল রাস্তায় এসে পরেছে। এত অচেনা লাগছে কেন চারপাশ। তবুও এগিয়ে গেল। এক সময় দাঁড়িয়ে পরলো। সাইকেল চালিয়ে একটা স্কুল ছাত্র এগিয়ে আসছিল। তাকে থামিয়ে কি যেন জিজ্ঞেস করলো। উমায়ের চট্টগ্রামের ভাষা বুঝে না বলে দাঁড়িয়ে আছে থতমত খেয়ে। ছেলেটা চলে গেল কি যেন বলে। বুরাক হঠাৎ খুশী হয়ে গেল। উমায়েরকে তারাতাড়ি আসতে বলে হাঁটা ধরলো। উমায়ের তার পিছু পিছু যাচ্ছে। হঠাৎ একটা লোহার গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে বুরাক হাসলো৷ চারপাশে চোখ বুলালো। দরজা যেমন ছিল তেমনই রয়েছে। বাড়ির নামের উপর নাম বুলিয়ে মুচকি হেসে বলল-
“আমার স্বপ্ন মহল, শাহ্ ভিলা।”
“শাহ্ ভিলা, কার বাড়ি এটা বুরাক? দেখতে তো খুব বড়ো মনে হচ্ছে।”
বুরাক দরজায় ঠকঠক করলো। কিছুক্ষণ পর দরজা খুলল ১০ বছরের একটা ছেলে বাচ্চা। বুরাক আর উমায়েরকে দেখে বলল-
“জি কাকে চাই?”
বুরাক ভ্রু কুঁচকাল। এত ছোট বাচ্চা বাসায় কি করছে সে বুঝলো না।
“আমি শাহ ভিলাতেই এসেছি তাই না?”
“না, আপনি আমার ভিলাতে এসেছেন। বলুন কাকে চাই।”
বুরাক বিরক্ত হলো।
“তোমার বাবা মা তোমাকে শিক্ষা দিতে পারে নি। সরো সামনে থেকে।”
বাচ্চাটাকে সরিয়ে বুরাক উমায়ের এর হাত ধরে ভেতরে প্রবেশ করলো।
“ওই ওই আপনার সাহস কি করে হলো আমার বাড়িতে পারমিশন না নিয়ে ভেতরে ঢুকার?”
বাচ্চাটা বুরাকের রাস্তা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। বুরাক এক ভ্রু উঁচু করে বলল-
“বাড়িটা আমার, দলিল দেখাবো যে বাড়িটা আমার নামে ছিল।”
“লজ্জা করে না অন্যের সম্পত্তিতে চোখ দিতে? এটা আমার দাদু শাহরিয়ার শাহ্ এর বাড়ি। দাঁড়ান আমার দাদুকে ডাকছি। এসে আপনার হাড্ডি গুঁড়ো করবে। উনি কুস্তি লড়তেন আগে।”
বলেই বাচ্চাটা দৌড়ে ভেতরে গেল। উমায়ের চারপাশে চোখ বুলিয়ে বলল-
“কি সুন্দর বাগান দেখো।”
উমায়ের বুরাকের দিকে তাকিয়ে দেখে বুরাক থমকে দাঁড়িয়ে আছে। উমায়ের বুরাকের চোখের সামনে তুড়ি বাজালো। বুরাকের হুঁশ আসতেই বলল-
“পরিবারের ছোটো সন্তানের ট্যাগটা হারিয়ে ফেললাম।”
“মানে?”
“চলো আগে”
বুরাক দ্রুত হেটে ভেতরে গেল বাচ্চাটা একটা মাঝবয়েসী মহিলাকে টেনে নিয়ে আসলো।
“আরে বাবা কি হলো আমি কাজ করছি না?”
“আম্মু দেখো এই মানুষটা বলছে এই বাড়িটা না-কি তার।”
ভদ্রমহিলা বুরাককে দেখে ভ্রু কুঁচকাল। বুরাকের মনে হচ্ছে সে এনাকে চিনে। কিন্তু মনে করতে পারছে না। ভদ্রমহিলা জিজ্ঞেস করলেন-
“জি আপনি কে?”
বুরাক আমতা আমতা করে বলল-
“বু..বুরাক..বুরাক শাহরিয়ার শাহ”
ভদ্রমহিলা চমকে উঠলেন। বুরাককে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে এক কদম এগিয়ে এসে বুরাকের দিকে হাত এগিয়ে ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করলো। আবার কি যেন ভেবে দ্রুত ভেতরে চলে গেল। উমায়ের বলল-
“উনি এমন করলেন কেন তোমাকে দেখে?”
“জানি না, উনাকে আমার বেশ চেনা চেনা মনে হলো।”
ভেতর থেকে দ্রুত এগিয়ে হেটে আসার শব্দ হলো। বুরাক আর উমায়ের সামনের দিকে তাকাল। একটা মাঝবয়সীর ছেলে দ্রুত এগিয়ে আসলো। বুরাক উনাকে দেখে হাসিমুখে এগিয়ে যেতে নিলো। ছেলেটা রাগে হনহন করতে করতে এগিয়ে এসে সজোরে বুরাকের গালে থাপ্পড় মেরে দিলো।
চলবে…….