#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি💞💞
#লেখিকা- Mehruma Nurr
#পর্ব-৩৯
★ ভোরের মিষ্টি আলো জানালা দিয়ে নূরের চোখে পরতেই রোজকার অভ্যাস অনুযায়ী নূরের ঘুম ভেঙে গেল। নূর আড়মোড়া ভেঙে চোখ খুলে তাকালো। আজকের সকালটা ওর কাছে যেন অনেক সুন্দর লাগছে। কাল রাতের কথা মনে হতেই নূর লজুক হেসে দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললো। ওর জীবনেও যে এত সুখ আসতে পারে। এটা কখনো কল্পনাও করেনি নূর।
নূর বেড থেকে নেমে ওয়াশরুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে নামাজ পড়ে নিল। নামাজ শেষ করে নূর কতক্ষণ শুয়ে রইলো। কিন্তু ঘুম আসছে না। রোজ এইসময়ে নূর বাসার সব কাজ করে। কিন্তু এখানে তো কোনো কাজ নেই। আদিত্য নূরকে কোনো কাজ করতে দেখলেই ভীষণ রেগে যায়। তাইতো কাকিও নূরকে কোনো কাজ করতে দেয় না। আবার ঘুমও আসছে না। নূর কতক্ষণ এপাশ ওপাশ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। নাহ্ কিছুতেই ঘুম আসছে না।
নূর আর না পেরে বেড থেকে উঠে পরলো। দরজা খুলে বাইরে বেড়িয়ে এলো। বাইরে এসে দেখলো কেউই নেই। কাকিও এখনো আসেনি। নূর কতক্ষণ একা একাই বাইরে বাগানে হাঁটাহাঁটি করলো।
একঘন্টা হাটাহাটির পর নূরের আর ভালো লাগলো না। নূর আবারও বাসার ভেতরে ঢুকলো। হঠাৎ ওর আদিত্যের কথা মনে হলো। নূর ধীর পায়ে আদিত্যের রুমের দিকে এগিয়ে গেল।
আদিত্যের রুমের দরজায় এসে দরজাটা হালকা করে ঠেলে দেখলো দরজা খোলায় আছে। নূর আস্তে করে দরজাটা খুললো। পা টিপে আস্তে করে ভেতরে ঢুকলো। ভেতরে ঢুকে দেখলো আদিত্য খালি গায়ে উপর হয়ে শুয়ে আছে। নূর আস্তে করে আদিত্যের পাশে বেডের ওপর বসলো।
নূরের আদিত্যের ঘুমন্ত চেহারাটা দেখতে লাগলো। ঘুমন্ত অবস্থায় আদিত্যকে দেখতে আরো সুন্দর লাগছে। লম্বা সিল্কি চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কপালের উপর পরে আছে। ফর্সা উন্মুক্ত শরীরে আদিত্যকে আরো আকর্ষণীয় লাগছে নূরের কাছে। নূর ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদিত্যের দিকে। নূর আস্তে করে নিজের হাতটা উঠিয়ে আদিত্যের মাথায় রাখলো। আলতো করে আদিত্যের সফট চুলের ভেতর হাত বোলাতে লাগলো। আদিত্যের চুলগুলো নূরের খুব ভালো লাগে। কি সুন্দর সফট মোলায়েম চুল। নূরের কেমন ঘোর লেগে যাচ্ছে। নূর একটু ঝুঁকে আদিত্যের ঘাড়ের কাছে নাক নিয়ে আদিত্যের শরীরের সেই মন মাতানো ঘ্রাণটা নাক টেনে নিতে লাগলো।
কিছুক্ষণ পর আদিত্য হালকা নড়ে উঠলো। নূরের এবার ঘোর কাটলো। আমাকে এখন এখানে দেখে ফেললে উনার সামনে লজ্জায় পরতে হবে। কথাটা ভেবে নূর তাড়াতাড়ি করে ওখান থেকে চলে যেতে নেয়।
কিন্তু নূর যেতে পারে না। তার আগেই আদিত্য ঝট করে নূরের হাত ধরে টেনে বিছানায় চিৎ করে ফেলে দেয়। তারপর নূরের ওপর এক হাত পা উঠিয়ে দিয়ে নূরকে জাপ্টে ধরে নূরের গলায় মুখ গুঁজে দিলো।
নূর কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই এসব হয়ে গেলো। আচমকা এমন হওয়ায় নূর থতমত খেয়ে গেল। নূর কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো।
…..কি কি ক করছেন? ছা ছাছাড়ুন প্লিজ।
আদিত্য নূরের গলায় নাক ডুবিয়ে নূরের শরীরের ঘ্রাণ নিল।তারপর নূরের কানের কাছে এসে লো ভয়েসে বললো।
…..আমিতো আর তোমার কাছে যায়নি তুমিই এসেছো আমার কাছে। তাহলে কিসের ছাড়াছাড়ি? তুমি আমার ঘুম ভাঙিয়েছো, এখন তুমিই ঘুম পাড়িয়ে দিবে।
কথা বলার সময় বারবার আদিত্যর গরম নিঃশ্বাস আর ঠোঁটের ছোঁয়া নূরের কানে আর ঘাড়ে পড়ছে। নূরের সারা শরীর শিনশিন করে কেঁপে উঠে চোখ বন্ধ করে নিল। নূর কম্পিতো স্বরে আবার বলে উঠলো।
….তা তারমানে আ আপনি জেগে ছিলেন এতক্ষণ?
আদিত্য নূরের গলায় নাক ঘষে নেশাক্ত কন্ঠে বললো।
…..উহুম,শুধু এতক্ষণ না। আমার ঘুমতো তোমাকে দেখার পর থেকেই চলে গেছে। যেদিন থেকে তোমাকে দেখেছি সেদিন থেকেই তুমি আমার ঘুম কেড়ে নিয়েছো। একটা রাতও আমাকে শান্তিতে ঘুমাতে দেওনি অনেক জ্বালিয়েছো আমাকে। তাই আজ তুমিই আমাকে শান্তি মতো ঘুম পাড়িয়ে দিবে। আর যতক্ষণ আমি ঘুমাবো ততক্ষণ তুমিও আমার সাথেই থাকবে। একদম উঠে যাওয়ার চেষ্টা করবে না।
কথাগুলো বলেই আদিত্য নূরের গলায় একটা ডিপলি চুমু খেল।
আদিত্যের ছোঁয়ায় নূর আবারও কেঁপে উঠলো।
আদিত্য নূরের কানের কাছে মুখ নিয়ে লো ভয়েসে বললো।
….আমি এখন শুধু ঘুমাতে চাই। তোমার কাপাকাপি কিন্তু আমাকে অন্যকিছু করতে বাদ্ধ করবে।
নূর পরে গেছে বিপাকে মনে মনে নিজেকেই বকতে লাগলো। কি দরকার ছিল তোর এখানে আসার? নাচতে নাচতে এখানে চলে এলি।এখন ফেঁসে গেলিত? বোঝ মজা।
নূরের ভাবনার মাঝেই আদিত্য আবার বলে উঠলো।
….নিজেকে বকা শেষ হলে আমার মাথায় বুলিয়ে আমাকে ঘুম পারিয়ে দেও।
কথাটা বলেই আদিত্য নূরের হাতটা ধরে নিজের মাথায় রাখলো।
নূর বেচারি আর কি করবে। এখান থেকে যে ছাড়া পাওয়ার কোনো উপায় নেই। সেটা ভালোই বুঝতে পারছে ও। তাই নূর আর কিছু না বলে আদিত্যের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। পাঁচ মিনিট পর আদিত্যের ঘন নিশ্বাসের শব্দে নূর বুঝতে পারলো আদিত্য ঘুমিয়ে পরেছে। নূর মুচকি হেসে আদিত্যের চুলে বিলি কেটে দিতে লাগলো। এভাবে একসময় নূর নিজেও ঘুমিয়ে পরলো।
————————————–
তাসির মাত্রই জগিং থেকে ফিরেসে। বাসায় ঢুকে ওর মাকে কফি দিতে বলে উপরে নিজের রুমে গেল ফ্রেশ হতে।
তাসির শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে একটা তোয়ালে পরে বের হলো। আয়নার সামনে যেয়ে নিজের চুল ঝাড়তে লাগলো।
একটু পরে হঠাৎ তাসিরের সামনে কেউ কফির মগ ধরলো। তাসির মনে করলো ওর মা হয়তো কফি নিয়ে এসেছে। তাসির মুচকি হেসে কফির মগটা হাতে নিল। মুখে কফি নিতেই পাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠে কেউ বলে উঠলো।
……কফি কেমন হয়েছে সোয়ামী,,
হঠাৎ করে এমন উদ্ভট কথা শুনে তাসিরের কাশি উঠে গেলো। তাসির পাশে তাকিয়ে দেখলো একটা মেয়ে শাড়ি পরে ইয়া বড়ো ঘোমটা নিয়ে দাড়িয়ে আছে। তাসির কোনরকমে কাশি থামিয়ে ভ্র কুঁচকে বললো।
….কে আপনি? এখানে কেন এসেছেন? আর, কি আবোল তাবোল বলছেন?
মেয়েটি ঘোমটার ভেতর থেকে বললো।
… আরে কি বলেন এসব? তওবা তওবা। সোয়ামী হয়ে নিজের বউকেই চিনছেন না? এটা কেমন ধরনের কথা? আর আমি এখানে কি করছি মানে? আমার সোয়মীর রুমে আসবেনা তো কে আসবে?
তাসির যেন আকাশ থেকে পড়লো। কি বলে এই মেয়ে? তাসির থতমত খেয়ে বললো।
….কি কিকি বলছেন এসব? কে আপনার সোয়ামী? আপনাকে তো আমি চিনিই না।
হঠাৎ মেয়েটা নিজের ঘোমটা ফেলে দিয়ে বললো।
….এখ চিনেছেন সোয়া…..মী।
মেয়েটিকে দেখে তাসির ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। অপ্রস্তুত হয়ে বললো।
…সানাহ? তুমি? তুমি এখানে কি করছো? আর এসব নাটকের মানে কি?
সানা লাজুক হেসে হেলেদুলে বললো।
…নাটকের কি দেখলেন? আসলে আমি ভবিষ্যতের প্রাকটিস করছিলাম। ভবিষ্যতে তো বউ হয়ে এসে আমাকেই এসব করতে হবে তাই না?
তাসির ভ্রু কুঁচকে বললো।
…..মানে? কি বলছো এসব? দেখ তোমাকে আমার রুমে এভাবে কেউ দেখে ফেললে খারাপ ভাববে। তাই তুমি এখান থেকে যাও প্লিজ।
সানা দুষ্টু হেসে তাসির কাছে আসতে আসতে বললো।
….দেখলে দেখুক। তাতে আমার আরো ভালো। এমনিতেই আমাকে আপনার বাবা মা অনেক পছন্দ করেন। এখানে আপনার সাথে আমাকে দেখে তারা খুশী হয়ে আমাদের বিয়ে দিয়ে দেবেন। এতে দুজনেরই সুবিধা হয়ে যাবে তাইনা?
কথা বলতে বলতে সানা তাসিরের একদম কাছে চলে আসলো।
সানার এভাবে কাছে আসা দেখে তাসির পেছাতে লাগলো। পেছাতে পেছাতে দেয়ালের সাথে ঠেকে গেল। আর পেছানোর জায়গা নেই। সানা তাসিরের কাছে এসে তাসিরের দুইপাশে দুই হাত দিয়ে তাসিরের দিকে ঝুকে দাঁড়ালো। তাসির দেয়ালের সেটে দাঁড়িয়ে শুকনো ঢোক গিলে বললো।
….দে দে দেখ এসব কি বলছ? তো তোমার এখান থেকে চলে যাওয়া উচিৎ।
সানা ঠোঁট কামড়ে দুষ্টু হেসে বললো।
…. কেন? ভয় লাগছে বুঝি? আপনার চোখে তো আমি একটা পিচ্চি। তাহলে আমাকে দেখে কিসের ভয়?
সানা তাসিরের উন্মুক্ত বুকে নিজের তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করে এক চোখ টিপ দিয়ে আবেদনী ভঙ্গিতে বললো।
…..বায়দা ওয়ে আপনাকে কিন্তু খালি গায়ে সেই হ…….ট লাগছে। ঠোট দুটো গোল ওর মতো করে টেনে কথাটা বললো সানা।
তাসিরের এবারে মনে পরলো যে ও এতক্ষণ খালি গায়ে আছে। কথাটা মনে আসতেই তাসির তড়িঘড়ি করে দুই হাত দিয়ে সানাকে ধরে সরিয়ে দিল। দৌড়ে যেয়ে কাবার্ড থেকে টিশার্ট বের করে পরে নিল।
সানা পেছন থেকে হেসে দিয়ে বললো।
….এখন আর ঢেকে কি লাভ?আমিতো সব দেখেই ফেলেছি।
তাসির সানার দিকে তাকিয়ে একটু গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
…..সানা অনেক হয়েছে। ছেলে মানুষির একটা সিমা আছে। কি শুরু করেছো এসব? তুমি এখান থেকে চলে যাও প্লিজ।
কথাটা বলেই তাসির ওখান থেকে সরে যেতে নিলেই সানা ওর হাত টেনে ধরে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলে উঠলো।
….আপনি কি ভেবেছেন , আপনি আমাকে যে ভালোবাসেন সেটা কি আমি জানিনা?
সানার কথায় তাসির থতমত খেয়ে গেল। আমতা আমতা করে বললো।
…কি কি বলছো এসব? এ এএমন কিছুই না। তুমি ভুল ভাবছো।
সানা বললো।
….ভুল আমি না, আপনি ভুল ভাবছেন। আপনি ভাবছেন হয়তো আমি ছোট মানুষ। আমি এসব বুঝবো না, আপনার ভালোবাসাকে বুঝবো না। আর আমি সেটাই প্রমাণ করতে চাই আপনি ভুল ভাবছেন। আপনার চোখের ভাষা আমি বুঝতে পারি। আপনার অনূভুতি গুলোও আমি বুঝতে পারি। তাহলে আপনি কেন আমার অনূভুতি গুলো বুঝতে পারেন না? কেন বুঝতে পারেন না যে আমিও আপনাকে ভালোবাসি?
সানার মুখে ভালোবাসি কথা শুনে তাসির চমকে তাকালো সানার দিকে।
সানা তাসিরের কলার চেপে ধরে করুন সুরে বললো।
….বলুন কেন এমন করেন আমার সাথে? আমি যতো আপনার কাছে আসতে চাই আপনি ততই দূরে সরে যান। আমি ফোন করলে ফোন ধরেন না। ম্যাজেস দিলে রিপ্লাই করেন না। কেন এমন করেন? আর কিভাবে আপনাকে বুঝাবো যে আমি কোনো ছোট্ট খুকি না। বলুন কিভাবে বুঝাবো?
একটু থেমে তাসিরকে ছেড়ে দিয়ে আবার বলে উঠলো।
…..ঠিক আছে দরকার হলে আমি আপনাকে শারীরিক ভাবেই বুঝিয়ে দেব যে আমি কোনো ছোটো বাচ্চা নই।
কথাটা বলেই সানা নিজের বুকের ওপর থেকে শাড়ির আচলটা একটানে সরিয়ে নিল।
তাসির এবার রেগে যেয়ে সানার গালে ঠাস্ করে একটা চড় মেরে দিল। তারপর চোয়াল শক্ত করে বললো।
….কি করছো এসব? পাগল হয়ে গেছো তুমি?
সানা গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে তাসিরের দিকে তাকালো। তারপর নিজের আঁচল আবার ঠিক করে নিয়ে তাসিরকে কিছু না ওখান থেকে চলে যেতে নেয়।
তাসিরের এবার খুব গিল্টি ফিল হচ্ছে। তাসির সানার সামনে এসে অপরাধী সুরে বলে উঠলো।
…..সানা আই এ্যাম সর,,,,,,
তাসিরের কথা শেষ হওয়ার আগেই সানা হাত উঠিয়ে তাসিরকে থামিয়ে দিয়ে বললো।
…..আপনি কেন সরি বলছেন? দোষ তো আমার। আমিই আপনার পেছনে পরে আছি। তবে চিন্তা করবেন না। আজকের পর থেকে আর আপনাকে ডিস্টার্ব করবো না। আর না আপনার সামনে আসবো। ভালো থাকবেন।
কথাগুলো বলেই সানা হনহন করে ওখান থেকে চলে গেলো।
তাসির নিজের চুল টেনে ধরে বেডের ওপর বসে পরলো। মনে মনে ভাবলো,মেয়েটার সাথে এতটা রুড হওয়া ঠিক হয়নি আমার। মেয়েটা বোধহয় অনেক কষ্ট পেয়েছে। এখন কি করবো আমি?
———————————-
সকাল ১০ টা
ঘুম ভেঙে চোখ খুলে তাকালো নূর। চোখ খুলে তাকাতেই দেখলো আদিত্য এক হাতে মাথা রেখে নূরের ওপর ঝুঁকে অপলক চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
নূর ভীষণ লজ্জায় পরে গেলো। চোখ নামিয়ে আমতা আমতা করে বললো।
…..আ আ আপনি উঠে পরেছেন তাহলে আমাকে ডাকলেন না কেন?
আদিত্য নূরের গালে হাত রেখে বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে গালে স্লাইড করে নেশাক্ত কন্ঠে বললো।
….তোমার এই ঘুমন্ত মুখটা এতো সুন্দর আর মায়াবী লাগছিলো যে জাগানোর ইচ্ছাই হচ্ছিল না। ইচ্ছে করছিল শুধু চেয়ে চেয়েতাই দেখি। সত্যি আমি বুঝতে পারিনা আর কতো রুপ আছে তোমার? আর কতো রুপে আমাকে পাগল করবে তুমি? তোমার এই ঘুমু ঘুমু চেহারা এলেমেলো চুল কতজে সুন্দর লাগছে বলে বুঝাতে পারবো না।
নূর চরম লজ্জায় পরে গেলো। লজ্জায় আদিত্যর দিকে তাকাতেই পারছে না। চোখ দুটো এদিক ওদিক ঘোরাতে লাগলো।
আদিত্য আবার বলে উঠলো।
…. এইযে এখন লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছো। জানো তোমার এই লাজুক চেহারাটা কতো সুন্দর লাগে দেখতে? একদম পাকা টমেটোর মতো লাগছে। ইচ্ছে করছে কামড়ে খেয়ে ফেলি।
নূর সাথে সাথে দুই হাতে নিজের মুখ ঢেকে ফেলে বললো।
….ছিহ্ আপনি দিনে দিনে প্রচুর অসভ্য হয়ে যাচ্ছেন।
আদিত্য শরীর কাঁপিয়ে হেসে দিয়ে বললো।
….অসভ্যের তো এখনো কিছু করলামই না। বিয়ের পরে দেখাবো অসভ্য কতো প্রকার ও কি কি।
নূর বুঝতে পারছে এভাবে ও এখান থেকে ছাড়া পাবে না। তাই ছাড়া পাওয়ার জন্য বাহানা করে বললো।
….স সরুন আমার ক্ষুধা লেগেছে।
ক্ষুধার কথা শুনে আদিত্য নূরের কপালে চুমু দিয়ে বললো।
…..ঠিক আছে যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। তারপর আমরা একসাথে ব্রেকফাস্ট করবো।
কথাটা বলে আদিত্য নূরের ওপর থেকে সরে গেল।
নূর মাথা ঝাকিয়ে বেড়িয়ে গেলো।
ব্রেকফাস্ট টেবিলে নূর নাস্তা করতে করতে বললো।
….আমি ক্যাম্পাসে কবে থেকে যাবো? আমার ক্লাস মিস হয়ে যাচ্ছে তো।
আদিত্য বললো।
….তুমি ভালো করে পুরোপুরি সুস্থ হও। তারপরে আমি তোমাকে নিয়ে যাবো। আর চিন্তা করোনা আমি তানিকে বলে দিয়েছি তোমার জন্য ইম্পর্ট্যান্ট সবকিছু নোট করে রাখবে। ঠিক আছে?
নূর মাথা ঝাকিয়ে বললো।
…হুম।
ব্রেকফাস্ট শেষে আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….আমার একটু অফিসে যেতে হবে। সন্ধ্যার দিকে চলে আসবো। বাসায় কাকি আছে । আর কোনো কিছু দরকার হলে আমাকে ফোন দিয়ো ঠিক আছে?
নূর মাথা ঝাকিয়ে সায় দিল।
আদিত্য মুচকি হেসে নূরের গালে হাত রেখে কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে বললো।
….তোমার কোনো কিছু লাগলে আমাকে বলো। আমি আসার সময় নিয়ে আসবো।
নূর মাথা নাড়িয়ে বললো।
…না কোনো কিছু লাগবে না।
আদিত্য বললো।
….ঠিক আছে আমি তাহলে আসি।
কথাটা বলে আদিত্য বেড়িয়ে গেলো।
————————————-
সন্ধ্যা ৭ টা
বাসার কলিং বেল বাজতেই নূর খুশী হয়ে দৌড়ে গেল দরজা খুলতে। ও জানে এখন আদিত্যই এসেছে। নূর যেয়ে হাসি মুখে দরজা খুলে দিল।
দরজা খুলতেই নূরের হাসি মুখটা দেখে আদিত্যের সারাদিনের সব ক্লান্তি ছু মন্তর হয়ে গেলো আদিত্য মুচকি হেসে নূরের কাছে এসে নূরের দুই গালে হাত দিয়ে বললো।
….আমার প্রাণপাখী টা মনে হচ্ছে আমাকে অনেক মিস করেছে তাইনা?
নূর লাজুক হেসে মাথা নিচু করে ফেললো।
আদিত্য এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো কাকি কোথাও আছে নাকি। কাউকে না দেখে আদিত্য মুচকি হেসে নূরকে দুই হাতে কোলে তুলে নিল।
নূর আদিত্যের গলা জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখলো। ও সত্যিই সারাদিন আজ আদিত্যকে অনেক মিস করেছে। সারাদিন ওর সময়ই কাটছিলো না।শুধু অপেক্ষা করছিলো কখন আদিত্য আসবে। আদিত্য যেন ধীরে ধীরে নূরের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। আদিত্যকে ছাড়া কিছুই ভালো লাগে না ওর।
আদিত্য নূরকে কোলে নিয়ে এসে সোফায় বসলো।
নূর এখনো আদিত্যের বুকেই মাথা দিয়ে আছে। লজ্জায় আদিত্যের দিকে তাকাতে পারছে না।
আদিত্য বলে উঠলো।
….সারাদিন কেমন কাটলো আমার নূরপাখি টার। কোনো সমস্যা হয়নি তো?
নূর আদিত্যের বুকের মাঝেই মাথা নাড়ালো।মানে না।
আদিত্য আবার বলে উঠলো।
….আচ্ছা কাকি কোথায়?
নূর আদিত্যের বুকের মাঝে মাথা রেখেই বলে উঠলো।
….উনার ছেলে নাকি অসুস্থ। তাই আমিই উনাকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি।
….ওহহ।আচ্ছা ঠিক আছে।
কিছুক্ষণ পর নূর আদিত্যের বুকের ওপর থেকে মাথা তুলে বললো।
….আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি টেবিলে ডিনার সার্ভ করছি।
কথাটা বলে নূর আদিত্যের কোল থেকে নেমে দাড়ালো।
আদিত্য মাথা ঝাকিয়ে বললো।
…..ঠিক আছে।
রাত ৯ টা
নূর একটু আগেই ডিনার সেরে এসেছে। ওষুধ খেয়ে বেডের ওপর বসে মোবাইলে একটু ঘাটাঘাটি করছিলো। এমন সময় ওর দরজায় নক পরলো। নূর জানে আদিত্য ছাড়া আর কেউ হবে না। তাই মুচকি হেসে বললো।
…দরজা খোলায় আছে ভেতরে আসুন।
আদিত্য দরজা খুলে রুমের ভেতরে ঢুকলো।
নূর তাকিয়ে দেখলো আদিত্যের হাতে অনেক গুলো সপিং ব্যাগ। নূর জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।
…এসব কি?এতো গুলো ব্যাগ কিসের?
আদিত্য ব্যাগগুলো নূরের বেডের ওপর রেখে মুচকি হেসে বললো।
….এগুলো তোমার জন্য। এখানে তোমার জন্য কিছু ড্রেস আর তোমার দরকারি কিছু জিনিস আছে। তুমি নিজের থেকে তো আর কিছু বলবে না। তাই আমি আমার আন্দাজমতো এসব নিয়ে এসেছি। পরে আবার তোমাকে নিয়ে যাবো শপিংয়ে। তখন তোমার যা যা লাগে সবকিছু কিনে নিও।
নূর চোখ বড়ো বড়ো করে বললো।
…আরো কিনবো? এখানেই যা জামাকাপড় আছে সেগুলোই তো পড়ে শেষ করতে পারবো না। এতো জামাকাপড় আমি কখন পড়বো। কি দরকার ছিল শুধু শুধু এতো টাকা নষ্ট করার।
আদিত্য একটা প্যাকেট নূরের সামনে ধরে বললো।
…এসব ফালতু কথা বলে আমার মুড নষ্ট করো নাতো? ওসব বাদ দিয়ে এই প্যাকেট টা হাতে নিয়ে এর ভেতরে যা আছে সেটা পরে এসো।
…..কি আছে এতে?
….হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে যেয়ে দেখো কি আছে। আর এটা এখুনি পরে এসো। আমরা বাইরে যাবো।
….এতো রাতে কোথায় যাবো?
আদিত্য একটু বিরক্তির স্বরে বললো।
….উফফ এতো প্রশ্ন করো কেন তুমি? যা বললাম তাই করো যাও এটা পরে এসো। আর কোথায় যাবো সেটা গেলেই দেখতে পাবে।
নূর আর কিছু না বলে মাথা ঝাকিয়ে প্যাকেট টা হাতে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে গেল।
আদিত্য ততক্ষণে নিজের রুমে যেয়ে রেডি হতে লাগলো।
নূর প্যাকেট টা খুলে যা দেখলো সেটা দেখে ও চিন্তায় পড়ে গেল। মনে মনে ভাবলো, এটা আমি কিভাবে পরবো?
আদিত্য রেডি হয়ে নূরের রুমে এসে দেখলো, নূর এখোনো বের হয় নি। আদিত্য ওয়াশরুমের দরজায় নক করে বললো।
…নূর, কি হলো এতো সময় লাগছে কেন? তাড়াতাড়ি বের হও।
কিছুক্ষণ পর নূর ওয়াশরুমের দরজা খুলে বের হলো। নূরকে দেখে আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
….এসব কি?
চলবে….