#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৪০
★ আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
….এসব কি?তুমি এখনো ড্রেস চেঞ্জ করোনি কেন?
নূর মাথা নিচু করে আমতা আমতা করে বললো।
…আ আসলে আমি শাড়ী পরতে পারিনা।
হ্যাঁ আদিত্য নূরের জন্য একটা নীল রংয়ের শাড়ি এনেছে।
আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….কেন তুমি না নবীন বরনের দিন শাড়ী পরেছিলে? আবার কালও তো কত সুন্দর করে শাড়ী পরেছিলে। তাহলে?
…..নবীন বরণের দিন তানি শাড়ী পরিয়ে দিয়েছিল।আর কালতো কাকি শাড়ী পরিয়ে দিয়েছিল। আমি নিজে নিজে পরতে পারি না।
আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….তো এতে এতো মন খারাপ করার কি আছে? চলো আমি তোমাকে পরিয়ে দিচ্ছি শাড়ী।
নূর চমকে তাকিয়ে বললো।
….আ আআপনি?
….হ্যাঁ আমি। এখানে কি অন্য কেউ আছে নাকি?
….আপনি পারেন শাড়ী পরাতে?
……না পারলে কি আর বলছি নাকি? এক হিসেবে ভালোই হয়েছে য, তুমি শাড়ী পরতে পারোনা। এখন থেকে শুধু আমার নূরপাখিকে আমিই শাড়ী পরিয়ে দেব। অন্য কেউ না।
নূর সন্দেহ দৃষ্টিতে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
…..আপনি কিভাবে জানেন শাড়ী পরানো? আগেও কাউকে পরিয়েছেন নাকি শাড়ি?
আদিত্য দুষ্টুমি করে বললো।
….হ্যাঁ পরিয়ছিতো। একজনকে অনেকবার শাড়ী পরিয়ে দিয়েছি। ইনফ্যাক্ট তাকে পরানোর জন্যই শাড়ী পরানো শিখেছিলাম।
আদিত্যর কথায় নূরের চোখ দুটো ছলছলে হয়ে উঠলো। নূর অভিমানী সুরে বললো।
….ঠিক আছে, তাকেই গিয়ে পরান বেশি করে। আমাকে পরানোর দরকার নেই। আমি শাড়িই পরবো না।
কথাটা বলেই নূর রাগ করে ওখান থেকে চলে যেতে নিলেই, আদিত্য মুচকি হেসে নূরের হাত ধরে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। নূরের পিঠ ঠেকে যায় আদিত্যের বুকের সাথে। আদিত্য নূরের দুই হাতের ওপর দিয়ে নিজের দুই হাত দিয়ে, নূরের হাতের আঙ্গুলের ভেতর নিজের আঙুল ঢুকিয়ে নূরের পেটের ওপর হাত ভাজ করে চেপে ধরে। নূরের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো।
….সবকিছু এক লাইন বেশি বুঝো কেন তুমি হুম? আরে পাগলি আমিতো সানার কথা বলছি। মা ছিলোনা তাই সানার ছোট বড়ো সব আবদার আমাকে আর বাবাকেই পুরোন করতে হতো। সানা ছোটবেলায় অনেক শাড়ী পরার জিদ করতো। তাই ওকে শাড়ী পরিয়ে দেওয়ার জন্যই আমি শাড়ী পরানো শিখেছিলাম। বুঝতে পেরেছো পাগলি? এখন যাও ব্লাউজ আর পেটিকোট টা পরে এসো। আমি শাড়ী পরিয়ে দিচ্ছি। আর হ্যাঁ ভয় পেয়োনা আমি চোখ বন্ধ করে নিবো। এখন সময় নষ্ট না করে জলদি যাও।
নূর লাজুক হেসে মাথা নিচু করে ঝাকালো। মানে ঠিক আছে।
আদিত্য মুচকি হেসে নূরের কানে একটা চুমু দিয়ে ছেড়ে দিলো। সাথে সাথে নূর দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
একটু পরে নূর ওয়াশরুমের দরজা হালকা খুলে শুধু মাথা বের করে দিয়ে বললো।
…হ হয়ে গেছে আমার।
আদিত্য নিজের চোখে একটা স্কার্প বেঁধে নিয়ে বললো।
…..ঠিক আছে এখন বেড়িয়ে এসো।
নূর ধীরে ধীরে বেড়িয়ে এলো। ওর প্রচুর লজ্জা লাগছে এভাবে আদিত্যের সামনে যেতে।
নূর আসতেই আদিত্য নূরকে শাড়ি পরিয়ে দিতে লাগলো। শাড়ী পরানোর সময় আদিত্যের হাত নূরের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুঁয়ে দিচ্ছে। আর আদিত্যর ছোঁয়ায় নূর বারবার শুধু চোখ বন্ধ করে কেঁপে উঠছে।
কুচি করা শেষ হলে আদিত্য নূরকে বললো কুচিগুলো গুঁজে নিতে। কিন্তু নূর বুঝতে পারছে না, কিভাবে আর কোথায় গুজবে। নূর আমতা আমতা করে বললো।
….কিভাবে আর কতটুকু গুজবো? আসলে আমি বুঝতে পারছি না।
আদিত্য বললো।
…তাহলে আর কি করার? আমিই গুঁজে দিচ্ছি।
কথাটা বলে আদিত্য হাঁটু গেড়ে বসে নূরের কোমড়ে কুচিগুলো গুঁজে দিলো।
পেটে আদিত্যের হাতের ছোঁয়া পেয়ে নূরের সারা শরীর শিহরণে কেঁপে উঠলো। নূর শাড়ির আচল শক্ত খামচে ধরলো।
কুঁচি গুজে দেওয়া শেষ হলে আদিত্য উঠে দাঁড়িয়ে নূরের আঁচল টা ঠিক করে দিল। শাড়ী পরানো শেষ হলে আদিত্য চোখের বাঁধন খুলে দিয়ে নূরের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে বললো।
…..ওয়াও, আমার নূরপাখি টাকে একদম নীল পরী লাগছে।
নূর সবসময়ের মতো লাজুক হাসলো।
আদিত্য বললো।
….এখন তাহলে যাওয়া যাক নাকি।
নূর নিচের দিকে মাথা ঝাকিয়ে সায় দিল।
আদিত্য নূরের হাত ধরে বেরিয়ে এলো। নূর এতক্ষণে খেয়াল করলো আদিত্যও আজ একটা নীল পাঞ্জাবি পরেছে। কি সুন্দর লাগছে ওনাকে।
তারপর গাড়িতে বসে রওনা দিল গন্তব্য স্থলে।
————————————–
একঘন্টা ড্রাইভ করার পর একটা নির্জন জায়গায় এসে গাড়ি থামালো। আদিত্য নেমে নূরের পাশে এসে দরজা খুলে নূরের হাত ধরে নূরকে নামালো। আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….আমার উপর ভরসা আছে তোমার?
নূর মুচকি হেসে বললো।
….নিজের থেকেও বেশি।
আদিত্য তৃপ্তির হাসি দিয়ে একটা কালো ফিতা দিয়ে চোখ বেঁধে দিল। তারপর নূরকে পাজা কোলে তুলে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে লাগলো।
কিছু দূর আসার পরে। আদিত্য নূরকে নামিয়ে দিয়ে ওর চোখের বাঁধন খুলে দিয়ে বললো।
….এখন সামনে তাকাও প্রাণপাখী।
নূর আস্তে করে চোখ খুলে সামনে তাকালো। সামনে তাকাতেই নূর হতবাক হয়ে গেলো। নূরের সামনে পায়ের নিচে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে রাস্তা বানিয়ে রাখা হয়েছে।দুই পাশে মোশাল জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে। নূর চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলো এটা একটা নদীর পার। পূর্ণিমার রাতে চাঁদের আলোয় সবকিছু কি সুন্দর লাগছে দেখতে। নূর আশ্চর্য হয়ে ঠোঁটে হাত চেপে ধরে হাসলো।
আদিত্য নূরের হাত ধরে বলে উঠলো।
….চলো, সামনে আগাও প্রাণপাখী।
নূর একবার আদিত্যের দিকে তাকালো। তারপর কাঁপা কাঁপা পা ফুলের গালিচায় ফেলে ধীরে ধীরে আদিত্যের হাত ধরে সামনে এগিয়ে যেতে লাগলো। ফুলের গালিচার শেষ সিমানায় আসতেই নূর আশ্চর্যের শেষ সিমানায় পৌঁছে গেল। নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। সবকিছু ওর কাছে স্বপ্ন মনে হচ্ছে।
নূরের সামনে নদীতে একটা নৌকা বাঁধা। পুরো নৌকায় গাঁদা ফুল দিয়ে চাদরের মতো ঢেকে দেওয়া হয়েছে। নৌকার কিনারার চারপাশে ঘিরে ফেরিলাইট দিয়ে সাজানো হয়েছে। সবকিছু এতো সুন্দর লাগছে নূর যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। চোখ দুটো চিকচিক করছে। অবাক নয়নে একবার আদিত্যের দিকে তাকাচ্ছে, তো একবার নৌকার দিকে তাকাচ্ছে।
আদিত্য প্রথমে নৌকায় উঠে নূরের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো।
….এসো নূরপাখি,আমার হাত ধরে উঠে এসো ।
নূর মাথা ঝাকিয়ে আদিত্যের হাতে হাত রেখে নৌকায় উঠলো। আদিত্য নূরকে নৌকার মাঝখানে এনে বসিয়ে দিলো। তারপর নৌকার বাঁধন খুলে দিয়ে বৈঠা হাতে নিয়ে আদিত্য নৌকা চালাতে লাগলো।
নূর শুধু মুগ্ধ হয়ে সবকিছু দেখছে। পূর্ণিমার রাত,ভরা চাদের আলো, চারিদিকের ঠান্ডা ঝিরিঝিরি বাতাস, নদীর পানির ঘ্রাণ আর ছলাৎছলাৎ শব্দ সবমিলিয়ে একটা অপূর্ব মনোমুগ্ধকর পরিবেশ যেটা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না নূরের কাছে। নিজের খুশী কিভাবে প্রকাশ করবে বুঝতে পারছে না নূর।
আর আদিত্য নৌকা চালাচ্ছে আর মুগ্ধ নয়নে শুধু নূরকে দেখছে। নূরকে খুশী দেখে আদিত্যের মনটাও ভরে যাচ্ছে। নূরের খুশীর জন্য ও সব করতে পারবে। এই স্বপ্নটার মতো নূরের বলা না বলা সব স্বপ্নই পূরণ করবে আদিত্য।
আদিত্যের নৌকা চালানো দেখে নূর বললো।
….আপনি নৌকা চালানোও জানেন?
আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
…..জানতাম না।গত দুইদিনে শিখেছি। কারণ আমি চাই আমার নূরপাখিকে নৌকা রাইড আমি নিজে করাবো। আজকের জন্য আমি হবো তোমার মাঝি।
নূর মায়া ভরা চোখে আদিত্যের দিকে তাকালো। উনি আমার জন্য এতো কিছু করেছে? উনি এতো কেন ভালোবাসেন আমাকে? আমার কপালে কি এতো সুখ সইবে? আচ্ছা উনি কি জানেন এটা আমার স্বপ্ন, এভাবে আমার রাজকুমারের সাথে পূর্ণিমার রাতে নৌকায় চড়ে চাঁদ দেখার? হ্যাঁ উনিই তো সেই রাজকুমার। আমার স্বপ্নের রাজকুমার।
আদিত্য নৌকা অনেক খানি চালিয়ে আসার পর, নদীর মাঝামাঝি এসে নৌকা চালানো বন্ধ করে বৈঠা তুলে নৌকায় রাখলো। তারপর নৌকার একটা পার্ট তুলে নিচ থেকে একটা ফুলের বুকে বের করলো।তারপর ধীরে ধীরে নূরের কাছে এগিয়ে গেল।
নূর অন্য দিকে তাকিয়ে থাকায় বিষয় টা খেয়াল করেনি।
আদিত্য নূরের সামনে গিয়ে হাঁটু গেড়ে নূরের মুখোমুখি বসলো। তারপর ফুলের বুকেটা পেছনে লুকিয়ে মায়া ভরা কন্ঠে নূরকে ডাকলো।
….প্রাণপাখী।
আদিত্যের ডাকে নূর সামনে তাকালো। নূর তাকাতেই আদিত্য পেছন থেকে ফুলের বুকেটা বের করে নূরের সামনে ধরলো। নূর অবাক নয়নে একবার আদিত্যর দিকে, তো একবার বুকেটার দিকে তাকাতে লাগলো।
আদিত্য মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আবেগি কন্ঠে বলে উঠলো।
…… জানিনা কিভাবে শুরু করবো? নিজের অনূভুতি গুলো হয়তো ভালো করে বুঝিয়ে বলতে পারি না আমি। শুধু বলবো, যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম সেদিন প্রথমবার বুকের বামপাশের যন্ত্রটার উপস্থিতি টের পেয়েছিলাম। যেটা তোমাকে দেখলে কখনো তিব্র গতিতে ছুটে বুক ফেটে বেড়িয়ে আসতে চায়। তো কখনো বিট করাই বন্ধ করে দেয়। আমি এটা বলবো না যে তুমি আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় জিনিস। কারণ আমার পৃথীবিটাই তুমি। তুমি ছাড়া আমি নিঃস্ব। শুধু ভালোবাসি বললেও কম হবে। তোমার প্রতি আমার অনূভুতি গুলো #ভালোবাসার চেয়েও বেশি। আমি তোমাকে বলবোনা যে আমাকে ভালোবাসো। শুধু আমায় একটু তোমাকে ভালোবাসার সুযোগ দেও।আমার পৃথিবীতে তোমাকে চাই না। তোমার পৃথিবীতে আমাকে একটু জায়গা দেও। হবে কি আমার দিন রাত, সুখ দুঃখের সঙ্গি? দেবে কি সকালে তোমার এই চাঁদ মুখটা দেখে ঘুম থেকে ওঠা আর রাতে তোমার মুখটা দেখে ঘুমানোর সৌভাগ্য? দেবে কি তোমার হাতটা ধরে সারাজীবন চলার সুযোগ? হবে কি আমার রাজ্যের রানী?
আদিত্য পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা রিং বক্স বের করে নূরের সামনে ধরে বললো।
….উইল ইউ ম্যারি মি, প্রাণপাখী?
নূর যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। মুখ দিয়ে কোনো কথায় বের হচ্ছে না। খুশিতে যেন হতভম্ব হয়ে গেছে।গলায় সবকিছু দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। চোখ দুটো দিয়ে শুধু আনন্দ অশ্রু ঝরছে। এতো সুখ কোথায় রাখবে ও?
আদিত্য অধীর আগ্রহে নূরের জবাবের অপেক্ষা করছে। নূরের চুপ করে থাকা দেখে আদিত্যের মনে একটু ভয় লাগছে। আদিত্য আবার বলে উঠলো।
….নূ নূরপাখি প্লিজ টেল মি ইউর আনসার।
নূর চেষ্টা করেও মুখ দিয়ে কিছু বের করতে পারছে না। ঢোক চিপে কোনরকমে আদিত্যের হাত থেকে ফুলের বুকেটা নিয়ে, মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বোধক ইশারা দিল।
আদিত্য খুশী হয়ে একটা বিশ্ব জয়ের হাসি দেয়। তারপর বক্স খুলে একটা ডায়মন্ডের রিং বের করে নূরের অনামিকা আঙ্গুলে পরিয়ে দিয়ে হাতের ওপর একটা চুমু দিল। তারপর মুখটা এগিয়ে নূরের কপালে একটা চুমু দিয়ে দুই হাতে শক্ত করে নূরকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরলো। নূরও আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। আদিত্য নূরকে আরো শক্ত করে বুকের মাঝে আঁকড়ে ধরে নূরের ঘাড়ে চুমু দিল।
পাঁচ মিনিট পর নূর একটু শান্ত হয়ে এলো। আদিত্য নূরের মুখটা ধরে সামনে আনলো। নূরের মুখের কাছে ঝুকে নূরের চোখের পানি ঠোঁট দিয়ে চুষে নিলো আদিত্য। নূর কেঁপে উঠে আদিত্যের বুকের ওপরের অংশের পাঞ্জাবি খামচে ধরলো।
আদিত্য নূরের কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে দুই হাতে নূরের মুখটা ধরে নেশা ভরা কন্ঠে বললো।
…ভালোবাসি প্রাণপাখি। #ভালোবাসার চেয়েও বেশি ভালোবাসি।
নূর লাজুক হেসে আবারও আদিত্যকে জড়িয়ে ধরলো। আদিত্যর বুকে মাথা রেখে বললো।
….আমিও আপনাকে ভালোবাসি রাজকুমার।
আদিত্য অবাক হয়ে বললো।
…রাজকুমার?
নূর আদিত্যর বুকে মাথা রেখেই বললো ।
….হ্যাঁ রাজকুমার। আপনি আমার রাজকুমার। আমার স্বপ্নের রাজকুমার।
আদিত্য ঠোঁট কামড়ে হেসে বললো।
….রাজকুমার। আই লাইক দিস নেম। আমি তোমার রাজকুমার। আর তুমি আমার রানী। বেস্ট কাপল, কি বলো?
নূর লাজুক হাসলো।
———————————–
আদিত্য আর নূর দুজন পাশাপাশি চিৎ হয়ে শুয়ে থেকে চন্দবিলাস করছে। নূর আদিত্যের এক হাতের ওপর মাথা রেখে চাঁদ দেখছে। নূর চাঁদ দেখছে আর হাত নেড়ে নেড়ে নানা রকমের কথা বলছে। আদিত্য শুধু হু হু করছে।
নূর হঠাৎ পাশে তাকাতেই দেখলো আদিত্য একধ্যানে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। নূর বললো।
…..আপনি চাঁদ না দেখে এদিকে তাকিয়ে আছেন কেন? আকাশে দেখেন কতো সুন্দর চাঁদ।
আদিত্য বললো
……কে বললো আমি চাঁদ দেখছি না? আমিতো সেই কখন থেকে চাদই দেখছি।
নূর ভ্রু কুঁচকে বললো।
….মানে? চাঁদ তো আকাশে। আপনি এদিকে তাকিয়ে কিভাবে চাঁদ দেখছেন?
আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….আকাশে যেটা আছে, সেটা তোমার চাঁদ। আমার চাঁদ তো এখানে, আমার পাশেই আছে। আর আমার চাঁদ ওই আকাশের চাদের থেকে অনেক বেশি সুন্দর।
নূর লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। আমতা আমতা করে বললো।
….আ আপনি একটু বেশিই বলছেন। এতটাও সুন্দর না আমি। যতটা আপনি বলেন।
আদিত্য নূরের ওপর ঝুকে আধশোয়া হয়ে, ডান হাতটা নূরের গালে রেখে বললো।
….একদম বেশি বলিনা। বরং যতই বলি ততই কম হবে। তোমার রুপের বর্ননা দিয়ে আমি কখনো শেষ করতে পারবো না। তুমি জানো? তোমার সবকিছু ইনডিভিজুয়ালি সুন্দর।
আদিত্য নূরের চুলে হাত বুলিয়ে বললো।
….তোমার এই ঘনকালো লম্বা কেশ। তোমার এই চুল যদি মেঘ দেখে তাহলে সারাবছরই বৃষ্টি ঝড়াবে।
আদিত্য নূরের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো।
……আর তোমার এই ডাগর ডাগর দুটি আখি। এই চোখের দিকে আমি একবার তাকালে নিজেকে এর সমুদ্র সমান গভীরতায় হারিয়ে ফেলি। নিজেকে খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যায় তখন।
তারপর নূরের নাকের ডগায় আঙুল ছুঁইয়ে বললো।
….তোমার এই সরু বাঁশির মতো নাকটা। এই ফর্সা নাকের ডগায় যখন বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে থাকে। কতোযে সুন্দর লাগে তোমাকে বোলে বোঝাতে পারবো না।
আদিত্য এবার দৃষ্টি দেয় নূরের গোলাপি ঠোঁটের দিকে। আর ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আদিত্য একটা শুকনো ঢোক গিলে। হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে নূরের ঠোঁটে স্লাইড করে নেশা ভরা কন্ঠে বললো।
….আর তোমার এই অধরজোড়া। এটাতো সবচেয়ে বেশি পোড়ায় আমাকে। এটার কাছে আমি সবসময় পরাজিত হই। তোমার গোলাপি রসালো ঠোঁটের দিকে তাকালে নিজেকে কিছুতেই কন্ট্রোল করতে পারি না। যেমন এখনও পারছি না।
বলতে বলতে আদিত্য মাতাল চোখে তাকিয়ে ধীরে ধীরে নূরের ঠোঁটের দিকে এগুতে লাগলো।
নূরের ঠোটে আদিত্যের আঙ্গুলের ছোয়ায় নূর শিরশির করে কেঁপে ওঠে। পায়ের নখ শিনশিন করে ওঠে। নূর চোখ বন্ধ করে আদিত্যের বুকের কাছের পাঞ্জাবির অংশ খামচে ধরে ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলো।
নূরের এসব মুভমেন্ট আদিত্যকে আরও পাগল করে তুলছে। আদিত্য নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না। ডুব দিলো নূরের মধুর ভান্ডারে।আদিত্য নূরের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরলো। তারপর নূরের ঠোঁটের মাঝে জিহ্বা ঢুকিয়ে ঠোঁট আগলা করে মুখে পুরে নিলো আদিত্য। চুষে নিতে থাকলো নূরের ঠোঁটের সব রস। আদিত্যর ডান হাতটা গলিয়ে দিল নূরের শাড়ীর ফাঁকে খোলা কোমড়ে। আস্তে আস্তে কোমড়ের চারপাশে স্লাইড করতে লাগলো। কোমড় থেকে হাতটা ধীরে ধীরে পিঠ বেয়ে উপরের দিকে উঠতে লাগলো। এমন পাগল করা স্পর্শে নূরও আর চুপ থাকতে পারলো না । আদিত্যের চুল খামচে ধরে নূরও আদিত্যের ঠোঁটে সমান তালে চুমু খেতে লাগলো। নূর আর সহ্য করতে পারছে না। এ যেন এক অসহ্য যন্ত্রণাদায়ক সুখ। নূর আদিত্যকে থামানোর জন্য আদিত্যের ঠোঁটে একটু জোরে একটা কামড় দিলো।
সাথে সাথে আদিত্য থেমে যেয়ে নূরের ঠোঁট ছেড়ে দিলো।আদিত্য নূরের পিঠে থাকা হাতটা নিজের ঠোঁটে নিয়ে বললো।
….আহ্হ। এভাবে কেউ কামড় দেয়? একদম মাংস তুলে ফেলেছো।
নূর লজ্জায় আদিত্যর বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো।
….আ আআপনিই তো বলেছেন। আপনি আউট অফ কন্ট্রোল হয়ে গেলে আপনাকে থামিয়ে দিতে।
….তাই বলে এভাবে? ঠিক আছে করো। আমারও সময় আসবে। আমিও তখন দেখিয়ে দেবো কামড় কাকে বলে।
তারপর আদিত্য দুষ্টু হেসে নূরের কোমড়ে হাত দিয়ে স্লাইড করে বললো।
….বায়দা ওয়ে এখনো কিন্তু তোমার অনেক বডি পার্টসের প্রশংসা করা বাদ আছে। যেমন তোমার এই সেক্সি কোম……
আর বলতে পারেনা আদিত্য তার আগেই নূর আদিত্যের মুখে হাত চেপে ধরে আদিত্যের কথা বন্ধ করে দিয়ে বললো।
….থা থাথাক অনেক হয়েছে। আর প্রশংসা করতে হবে না।
আদিত্য নূরের চেপে ধরা হাতের তালুতে চুমু খায়।
নূর সাথে সাথে হাত সরিয়ে নেয়। আর আদিত্য শরীর কাপিয়ে হেসে দেয়। তারপর নূরকে জড়িয়ে ধরে বললো।
….আচ্ছা আমি তোমাকে এতো সারপ্রাইজ দিলাম। তুমি আমাকে কোনো গিফট দিবে না?
নূর আদিত্যের বুকে মাথা রেখে অসহায় ভাবে বললো।
….কি দেব আপনাকে? আমিতো কিছুই আনিনি। আর আমার কাছে কোনো টাকাও নেই।
আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
…..সবসময় গিফট দিতে শুধু টাকা লাগে না। ইচ্ছা করলেই টাকার চেয়ে দামী জিনিস দেওয়া যায়। আমি যেটা চাইবো সেটা দিবে তুমি?
…কি চাই বলুন? আমি পারলে অবশ্যই দেব।
…আজ থেকে তুমি আমাকে তুমি করে ডাকবে। এটাই হবে আমার জন্য সেরা গিফট। বলো বলবে?
…..কিন্তু আমার তো লজ্জা করে। আমি কিভাবে আপনাকে তুমি করে বলবো?
….অতশত জানিনা।আজ এবং এখন থেকেই তুমি আমাকে তুমি করে বলবে। বলো এখুনি।
নূর আমতা আমতা করে বললো।
….তু তুতুমি।
….এভাবে না ঠিক করে বলো। বল আদিত্য আমি তোমাকে ভালোবাসি।
….আ আদিত্য আমি আপ,, থুক্কু তো তোমাকে ভালোবাসি।
কথাটা বলেই নূর লজ্জায় আদিত্যের আরও বুকের ভেতর ঢুকে গেল।
আদিত্য একটা তৃপ্তির হাসি দিয়ে নূরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো।
….আমিও তোমাকে ভালোবাসি প্রাণপাখি।
চলবে………