ভালোবাসার চেয়েও বেশি 💞পর্ব-৬৪

0
6599

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৬৪

★ চার দিন পর সকাল দশটা, আদিত্যরা সবাই ওদের সাভারের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আজকে ওরা সবাই ওদের গ্রামের বাড়ি যাবে। আদিত্যর বাবা আর চাচা মিলে ডিসাইড করেছে যে, আবির আর তানির বিয়ে ওদের গ্রামের বাড়িতে হবে। তাই সবাই আজ রওনা দিবে। তানির পরবারও যাচ্ছে ওদের সাথে। সবাই খুবই এক্সাইটেড হয়ে আছে।

একটু পরে ওদের সামনে দুইটি হাইস এসে দাঁড়াল। প্রথম টিতে সিনিয়র সিটিজেনরা সবাই বসলো। আর দ্বিতীয় টিতে ইয়াং স্টাররা সবাই। ড্রাইভিং সিটে বসলো তাসির, আর ওর পাশের সিটে সানা। পরের সারিতে নিশি আর সায়েম। তারপরের সারিতে তানি আর আবির বসলো। এবং সবার পেছনে বসলো আদিত্য আর নূর।

গাড়ি চলছে আপন গতিতে। সব কাঁপলস রাই যার যার পার্টনারদের সাথে রোমান্টিক মোমেন্ট তৈরী করতে ব্যাস্ত। তাসির গাড়ি চালাচ্ছে, তাই শুধু আই কন্টাক্ট আর হাত ধরা পর্যন্তই চলছে ওর রোমাঞ্চ। নিশি আর সায়েম নানা রকম রোমান্টিক পোজে সেলফি তুলছে। আবির আর তানিও ওদের খুনশুটিতে ব্যাস্ত।

তবে আদিত্য আদিত্যই, যাকে বলে প্রো রোমান্টিক। ওরতো নূর পাশে থাকলে দুনিয়া দারির কোনো হুশই থাকেনা। শুধু নূরের মাঝেই ডুবে থাকে। যেমন এখনো, নূর জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বাইরের সৌন্দর্য উপভোগ করছে। বাতাসে ওর চুলগুলো উড়ছে। আর আদিত্য সেই চুলে নাক ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিচ্ছে। আর হাত দিয়ে নূরের শাড়ির ফাঁকে খোলা কোমড়ে স্লাইড করছে। নূর কেঁপে উঠে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললো।
…..ক কি করছ? সবাই আছে এখানে, ওরা দেখলে কি ভাববে?

আদিত্য নূরের চুল সরিয়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে নেশালো কন্ঠে বললো।
….কি ভাববে? যা ভাববে ভাবুক। আমি আমার বউকে আদর করছি অন্য কাউকে না। পেছনে বসেছি তো এইজন্যই, যাতে ইচ্ছেমত আমার বউকে আদর করতে পারি। বিয়ের পরে এটা আমাদের প্রথম ট্রিপ। আই ওয়ান্ট দিস মোমেন্ট ভেরি স্পেশাল উইথ ইউ প্রাণপাখী।

নূর আর কি বলবে, ও জানে আদিত্য ওর কথা শুনবে না। তাই চুপ করে থেকে লজ্জায় লাল হতে লাগলো।

একটু পরে সায়েম বলে উঠলো।
….ব্রোস, জার্নি কেমন যেন বোরিং হয়ে যাচ্ছে। লেটস প্লে মিউজিক,এন্ড হ্যাভ সাম ফান গাইস।

আবির বলে উঠলো।
…আমাদের ভেতর এতবড় শিল্পী থাকতে, মিউজিক প্লেয়ার কেন লাগবে? কাম অন আদি ভাই, একটা ধুমধড়ক্কা, তাড়াকতা,ভাড়াকতা গান শুরু করে দে।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….ঠিক আছে তবে তোদেরও আমার সাথে গাইতে হবে। রাজি?

সব ছেলেরা একসাথে বলে উঠলো।
….সুপার রাজি।

আদিত্য মুচকি হেসে গাওয়া শুরু করলো।
♬ ♬ আরে টিকা তুলির মোড়ে একটা
♬ অভিসার সিনেমা হল রয়েছে
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে

(সব ছেলেরা একসাথে গেয়ে উঠলো)
♬ আরে টিকা তুলির মোড়ে
♬ একটা হল রয়েছে
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে

(আদিত্য এক হাত উপরে তুলে গাইলো)
♬ ও……ওরে ভাই
♬ একদিন গেলাম সিনেমা দেখতে
♬ আর রিকশা থেকে নেমে দেখি হলে একটা সুন্দরী মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
♬ হঠাৎ দেখি সেই মেয়েটির চোখে আমার চোখ পড়েছে
(সব ছেলেরা একসাথে)
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে

(আদিত্য গাইলো)
♬ ও……ওরে ভাই
♬ হাউজফুল কোনো টিকেট নাই ব্লাকে দশ টাকার টিকেট বিশ টাকায় কিনে নিয়ে কোনরকমে ভেতরে ঢুকে বসলাম ।হঠাৎ দেখি পাশের চেয়ারে সেই মেয়েটি আমার পাশেই বসেছে।
(সব ছেলেরা একসাথে হাতে তালি দিতে দিতে গাইলো)
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে।
♬ আরে টিকা তুলির মোড়ে একটা হল রয়েছে
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে

(আদিত্য)
♬ ও…..ওরে ভাই
♬ সিনেমা শুরু হয়ে গেল। রাজ্জাক সাবানা যখন প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিল, তখন আমার বুকের ভেতর ধুপধাপ শুরু হল। আমি যদি প্রেম করতে পারতাম , তখন দেখি পাশের সিটে বসা মেয়েটি আমাকে চিমটি মেরেছে
(সব ছেলেরা একসাথে সিটে উঠে নাচতে নাচতে গাইলো)
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে
♬ আরে টিকা তুলির মোড়ে একটা হল রয়েছে
♬ ♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে
(আদিত্য)
♬ ও….ওরে ভাই
♬ আমি মেয়েটিকে বললাম তোমার নাম কি। মেয়েটি বলল মালতী বিবি আহা গো মালতী বিবি বলে সেই মেয়েটি এক ফলা হাসি দিয়েছে
(সব ছেলেরা)
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে
♬ টিকা তুলির মোড়ে একটা হল রয়েছে
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে
(আদিত্য)
♬ ও…..ওরে ভাই
♬ সিনেমা শেষ হওয়ার পথে, রাজ্জাক ভিলেন ধুপধাপ মারপিট আবার সাবানা দৌড়ে এসে রাজ্জাক কে জড়িয়ে ধরে বলল,
“তুমি আমার চিরদিনের সাথী” তখন দেখি পাশের সিটে বসা সেই মেয়েটি আমাকে জড়িয়ে ধরেছে
(সব ছেলেরা)
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে
♬ টিকা তুলির মোড়ে একটা হল রয়েছে
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে
(আদিত্য)
♬ ও……ওরে ভাই
♬ সিনেমা শেষ হয়ে গেল, বাইরে আসলাম রিক্সা নিলাম। হঠাৎ দেখি সেই মেয়েটি দৌড়ে এসে আমার রিক্সাই চেপে বসেছে
(সব ছেলেরা)
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে
♬ টিকা তুলির মোড়ে একটা হল রয়েছে
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে
(আদিত্য)
♬ ও……ওরে ভাই
♬ মেয়েটি বললো আমাকে ডার্লিং খুব ক্ষুধা পেয়েছে। গেলাম মোস্তফা হোটেলে, খুব পোলাও কোর্মা খাইলাম। হঠাৎ দেখি বয় একটা পাঁচশ টাকার বিল এনেছে। বিলটা দেখে তখন আমার মাথা ঘুরেছে
(সব ছেলেরা)
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে
♬ টিকা তুলির মোড়ে একটা হল রয়েছে
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে
(আদিত্য)
♬ ও………ওরে ভাই
♬ খাওয়া দাওয়া শেষ হয়ে গেল। মেয়েটি বললো ডার্লিং আজকের মতো চলে যাই বলে চলে গেল। আমি বাড়ি এসে রিক্সা থেকে নেমে, রিক্সা ভাড়া দিতে গিয়ে দেখি মেয়েটি আমার পকেট মেরে চলে গিয়েছে
(এবার সবাই একসাথে)
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে
♬ আরে টিকা তুলির মোড়ে একটা হল রয়েছে
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে

এভাবে আনন্দ ফুর্তি করতে করতে ওরা যাত্রা করতে লাগলো। দু-ঘন্টা পরে ওরা যমুনা ব্রিজের ওপর চলে এলো। আদিত্য নূরকে বাইরে দেখিয়ে বললো।
….প্রাণপাখী, দেখ এটা আমাদের যমুনা নদীর ব্রিজ।

আদিত্যের কথায় নূর উৎসাহ নিয়ে বাইরে তাকাল। কতো সুন্দর দৃশ্য, ব্রিজের নিচে বহমান পানি, পানির উপরে নৌকা জাহাজ চলছে। নদীর ভেতরে জায়গায় জায়গায় চড় পরে গেছে। সেই চড়ের ওপর আবার অনেকে ঘর বাড়ি করে রয়েছে। তাদের গরু ছাগল গুলো চড়ে বেড়াচ্ছে। নূর মুগ্ধ হয়ে সবকিছু দেখছে। এইপ্রথম ও ঢাকার বাইরে কোথাও যাচ্ছে। সবকিছু ওর কাছে অনেক ভালো লাগছে।

আর আদিত্য মুগ্ধ হয়ে ওর প্রাণপাখীর মুগ্ধতা দেখছে। মেয়েটা অল্পতেই কতো খুশী হয়ে যায়। ওকে দুনিয়ার আরো সৌন্দর্য দেখালে নাজানি কতো খুশি হবে। কথাটা ভেবে আদিত্য মনে মনে বললো , আমি আমার প্রাণপাখীকে সব সৌন্দর্যই দেখাবো।

এভাবে আরো আধাঘন্টা পরে ওরা সিরাজগঞ্জ জেলায় পৌঁছে, গ্রামের রাস্তায় যেতে লাগলো। গাড়ি গ্রামের চিকন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। রাস্তার দুই ধারে শুধু সবুজের সমারোহ। সবুজ গাছগাছালি ধান খেত, বাতাসে ধানগাছ গুলো ঢেউ খেলাচ্ছে। সবকিছু অসম্ভব সুন্দর লাগছে নূরের কাছে।

একটু পরে ওরা বিশাল বড়ো একটা বাড়ির সামনে এসে থামলো। আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….প্রাণপাখী নাম আমরা এসে গেছি।

নূর মুচকি হেসে আদিত্যের হাত ধরে নামলো। নিচে নেমে দাড়িয়ে সামনে তাকিয়ে তানি আর নূর অবাক হয়ে গেল। ওদের সামনে অনেক পুরানো বাড়ি দেখা যাচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে পুরান দিনের সত্যিকারের কোনো রাজপ্রাসাদ। নূর আদিত্যের দিকে হালকা ঝুকে আস্তে করে বললো।
….এটা কি তোমাদের বাড়ি? এটাত অনেক পুরান একটা জমিদার বাড়ি মনে হচ্ছে।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….হ্যাঁ প্রাণপাখী , এটা আমাদেরই বাড়ি। এটা আমাদের জমিদার বাড়ি।

তানি দুই গালে হাত দিয়ে বিস্ময় ভরা কন্ঠে বললো।
…..ওয়াও, তারমানে তোমরা জমিদার বংশ?

আবির ভাব নিয়ে বললো।
….আবার জিগায়, তানি বেবি তুমি এখনো চিনতেই পারোনি যে তোমার হবুবর কি চিজ। উই আর রয়্যালস বুজেছ।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….এসব জমিদার আমাদের পূর্ব পুরষেরা ছিল। এখন আর এসব নেই। তবে আমাদের এই জমিদার বাড়টা আছে। আমরা মাঝেমধ্যে এখানে আসি বেড়াতে। এটার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য লোক রাখা আছে। আর বাবা মাঝেমধ্যেই এটার সংস্করণ করান।

নূর মুচকি হেসে আস্তে করে বললো।
…..তারমানে তুমি সত্যিকারের রাজকুমার? আমার রাজকুমার।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….হ্যাঁ বলতে পারো। সো ওয়েলকাম টু মাই কিংডম রাণী সাহেবা।

কথাটা বলেই আদিত্য নূরকে কোলে তুলে নিয়ে ভেতরে এগুলো। নূর বেচারি লজ্জায় লাল হয়ে গেল। আবির তানির দিকে তাকিয়ে দেখলো, তানি কেমন মুখ ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। আবির ঠোঁট কামড়ে হাসলো তানির অভিমান দেখে। তারপর হঠাৎ আবির তানিকে কোলে তুলে নিয়ে বললো।
….আমিও পারি,আমার রাণিকে কোলে নিতে।

তানি একটা লাজুক হাসি দিল।
আবিরের দেখাদেখি সায়েমও নিশিকে কোলে তুলে নিল। এখন শুধু তাসির আর সানা দাঁড়িয়ে আছে। তাসিরের কোনো এ্যাকশন না দেখে সানা বলে উঠলো।
….কি হলো তোমাকে কি ইনভিটেশন দিতে হবে নাকি আমাকে কোলে নেওয়ার জন্য?

তাসির বলে উঠলো।
….আমিই?

….হ্যাঁ তুমি নাতো কি,ওই পাশের বাড়ির কদর আলী? হায় আমার কপালেই এমন ভোলারাম জুটতে হলো। এখন চেয়ে চেয়ে দেখছ কি? চলো কোলে নেও আমাকে।

তাসির বেচারা আর উপায় না পেয়ে সানাকে কোলে তুলে নিয়ে ভেতরে গেল।
—————-

পরদিন সকাল দশটা, আজকে আবির আর তানির হলুদ এবং মেয়েদীর অনুষ্ঠান। পুরো বাড়ি থেকে শুরু রাস্তা পর্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে সাজানো হয়েছে। বাড়ির উঠানেই বড় করে স্টেজ সাজানো হয়েছে। হলুদের অনুষ্ঠানের জন্য মেহমানরাও আসা শুরু হয়ে গেছে। তানির আত্মীয় স্বজনরাও এসেছে।

একটু পরে আবিরকে নিয়ে এসে স্টেজে বসানো হলো। তারপর নূর আর সানা মিলে তানিকে নিয়ে এলো। তানি সহ সব মেয়েরা কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ী, বাঙালী স্টাইলে পরেছে। সব ছেলেরা তাদের নিজ নিজ প্রিয়তমার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। আদিত্য সবসময়ের মতো নূরের মায়ায় হারিয়ে গেছে। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে। আর নূর সেটা দেখে লাজুক হাসছে। আজ ওদের নিজেদের হলুদের কথা মনে পড়ে গেল।

তানিকে নিয়ে এস আবিরের পাশে বসানো হলো। একটু পরে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেল।

আদিত্যের বাবা তার চাচাীকে নিয়ে এলো ওখানে। তারপর সবার দিকে তাকিয়ে বললো।
….সবার প্রথমে হলুদ চাচী আম্মা লাগাবে।

আদিত্য চাচী আম্মার কাছে এগিয়ে এসে বললো।
…আসসালামু আলাইকুম দাদী, কেমন আছ তুমি?

দাদী বলে উঠলো।
…..আমি ভালো আছি, তুই ক্যাবা আছু গ্যাদা? (সিরাজগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষা)

দাদীর কথায় মেয়েরা ফিক করে হেসে দিল। আদিত্য জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললো।
….আমিও ভালো আছি দাদি। বাইদা ওয়ে দাদী তোমার আদরের গ্যাদার সাথে দেখা করবে না? ওইযে দেখ কি সুন্দর সেজে গুঁজে বসে আছে তোমার জন্য। যাও যাও দেখা করে আস।

আবির বেচারার এখন ইচ্ছে করছে একছুটে এখান থেকে পলাতে। সালার আদি নিজে বেঁচে গিয়ে আমাকে ফাঁসিয়ে দিল। এখন এই বুড়ী এসে আমাকে পচাবে।
একটু পরে দাদী গিয়ে আবিরের পাশে বসলো। তারপর আবিরের গাল টেনে দিয়ে বললো।
….ক্যাবা আছুরে গ্যাদা? বাবা কত্তহানি বড় হইয়া গেছু। আবার দেহি বিয়াও হরত্যাছু।

তানি এদিকে অনেক কষ্টে নিজের হাসি আটকে রেখেছে। আবির বেচারা জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললো।
….জ্বি জ্বি দাদী,ভালোই আছি। আপনি হলুদ লাগিয়ে যা না। না মানে আপনি এখানে এতো কোলাহলে অসুস্থ হয়ে যাবেন। তাই বলছিলাম আরকি।

….হ হ ঠিকই কছু। আমি আমার এত ভীড়ে ব্যারামে পইরা যামু।
তারপর দাদী হলুদ লাগিয়ে চলে গেল।

দাদী চলে যেতেই তানি হেসে উঠে বললো। ওয়াও গ্যাদা, আই লাইক দা নেম। আলে লে লে গ্যাদা, কি অবস্থা গ্যাদা?

আবির গাল ফুলিয়ে বললো।
….তো এতে এত হাসার কি আছে? এটা এখানকার আঞ্চলিক ভাষা। বড়রা ছোট ছেলে মেয়েদের আদর করে গ্যাদা গেদি বলে ডাকে।

….আমিও তোমাকে এখন থেকে গ্যাদা বলেই ডাকবো। আমার কিউট গ্যাদা।হি হি

তারপর সবাই এসে একে ওদের হলুদ দিতে লাগলো।
———–

আদিত্য একজায়গায় দাঁড়িয়ে সায়েম আর তাসিরের কথা বলছিল। হঠাৎ ওখানে তানির কিছু কাজিন বোনেরা এসে আদিত্যকে ঘিরে ধরলো। আদিত্যর গা ঘেঁষে হেসে হেসে কথা বলতে লাগলো। সায়েম সেটা দেখে তাসিরের দিকে ঝুকে বললো।
….ব্রো আমাদের মনে হয় এখানে কোনো বেল নেই। চল আমরা কেটে পরি।

তাসিরও মুচকি হেসে মাথা ঝাকিয়ে দুজন ওখান থেকে চলে গেল। এদিকে আদিত্য পরে গেছে মহামুশকিলে। এই মেয়েগুলোর জন্য চরম বিরক্ত বোধ করছে ও। কিন্তু তানির কাজিন দেখে কিছু বলতেও পারছে না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ওদের সাথে জোরপূর্বক হেসে কথা বলতে হচ্ছে। নাহলে আবার তানির খারাপ লাগবে এটা ভেবে।

নূর স্টেজে তানির পাশে বসে কথা বলছিল। হঠাৎ ওর নজর গেল আদিত্যের উপর। আদিত্যকে এভাবে মেয়েদের সাথে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে নূরের মেজাজ প্রচন্ড গরম হয়ে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে এখুনি যেয়ে সবগুলোর চুল ছিড়ে ফেলতে। কতবড় লুচু মেয়ে সবগুলো, লজ্জা শরম যেন হোলসেল এ বেচে এসেছে। অন্যের বরের সাথে কিভাবে গায়ে পড়ে কথা বলছে? আর ওদের কি বলবো আমার টাই বা কম কিসে? দেখতো কত সুন্দর খি খি করে হাসছে? যেন সারাজীবনের হাসির স্টক আজই শেষ করবে। এমনিতেতো আমার দিকে কেউ তাকালেও তার মাথায় রক্ত উঠে যায়। আর নিজে কি সুন্দর অন্য মেয়েদের সাথে হাহা হিহি করছে। যেন আমি এখানে নেই। এসব কথা ভেবে নূরের রাগ আরও বেড়ে যাচ্ছে। নূর রাগের মাথায় হাত দিয়ে নিচে একটা বাড়ি মারলো। তানির হাত ওখানে থাকায় বারিটা তানির হাতে লাগলো। তানি হাতের ব্যাথায় ককিয়ে উঠে বললো।
…..আহহ্ কি করছিস আমাকে কেন মারছিস? কি হয়েছে তোর?

নূর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে থেকেই বললো।
….কিছু না সরি।

নূরের নজর বরাবর তানিও সেদিকে তাকালো। এবং তাকিয়েই বুঝলো নূরের রাগের কারণ। তানি দুষ্টু হেসে বললো।
….ওওও তো এই কথা। ম্যাডাম জেলাসি মুডে আছে। না না আদিত্য ভাইয়া কাজটা একদম ঠিক করছে না। নিজের বউ থাকতে অন্য মেয়েদের সাথে এইভাবে হাসাহাসি করাটা একদম ঠিক না। তোর কিছু একটা করা দরকার।

….আ আমি কি করবো?

…কি করবি মানে? জিজু যেমন মেয়েদের সাথে হাসাহাসি করে কথা বলছে, তুইও তেমন হ্যান্ডসাম ছেলেদের সাথে হেসে হেসে কথা বল।

…আমিই? না না কি বলছিস তুই?

….ঠিক আছে তাহলে এখানেই বসে বসে জিজুর রাসলীলা দেখ। আমার কি , আমি তো তোর ভালোর জন্যই বলছিলাম। জিজু পারলে তুই কেন পারবি না। তুইও দেখিয়ে দে,মেয়েরা কোনো কিছুতে কম না।

নূরও এবার ভাবলো তানি ঠিকই বলেছে। ও পারলে আমি কেন পারবো না? আমিও দেখিয়ে দেব ওকে হুহ্।
কথাটা ভেবে নূর উঠে দাঁড়িয়ে সামনে হেলেদুলে হাটতে লাগলো। তানি সেটা দেখে হাসতে লাগলো। মনে মনে ভাবছে আজকে হেব্বি মজা হবে। যখন জিজু নূরকে অন্য ছেলের সাথে কথা বলতে দেখবে।

নূর গ্রামের কিছু হ্যান্ডসাম ছেলেদের সামনে দিয়ে হেলেদুলে হাটতে লাগলো। ছেলেগুলো হা হয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। এত সুন্দর মেয়ে ওরা জীবনে কখনো দেখিনি। ওদের মাঝে একজন চেয়ারম্যান এর ছেলে। সেই ছেলেটা নূরের কাছে এগিয়ে এসে বললো।
…..হ্যালো মিস, আপনাকে তো চিনলাম না? আপনি কোন পক্ষের? বর না কনে?

নূরের এই ছেলেটার সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছাই নেই। তবুও আদিত্যকে দেখানোর জন্য জোরপূর্বক হেসে বললো।
….আমি দুই পক্ষেরই।

ছেলেটা হাসিমুখে বললো।
….ও আই সি, আপনি বুঝি ঢাকা থেকে এসেছেন? তা নাম কি আপনার?

….জ্বি নূর।

….ওয়াও, অনেক সুন্দর নাম। বাইদা ওয়ে আপনি কিন্তু দেখতে অনেক সুন্দর। আপনার মতো সুন্দর মেয়ে আমি কখনো দেখিনি।

নূর এবার চরম বিরক্ত হচ্ছে ছেলেটার উপর। তবুও জোরপূর্বক হেসে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
…..ধন্যবাদ।

এদিকে আদিত্য চরম বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। এখান যেতে নিলেই ওরা আটকে দিচ্ছে তাই যেতেও পারছে না। এদিক ওদিক তাকাতেই হঠাৎ ওর নজর গেল নূরের উপর। আর তাকাতেই ওর ভ্রু কুঁচকে এলো। নূরকে একটা ছেলের সাথে এভাবে হেসে কথা বলতে দেখে, আদিত্যের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। চোয়াল শক্ত
হয়ে কপালের রগ ফুলে উঠলো।

আদিত্য আর এক মুহূর্তও ওখানে না দাঁড়িয়ে নূরের কাছে যেতে লাগলো। মেয়েরা এবার আটকাতে নিলে আদিত্য এমন অগ্নি চোখে ওদের দিকে তাকাল যে মেয়েরা ভয়ে ওখান থেকে ছু মন্তর হয়ে গেল।

আদিত্য নূরের কাছে এগিয়ে এসে রাগে কটমট করে নূরের হাত চেপে ধরে ওখান থেকে টেনে নিয়ে গেল। আচমকা এমন হওয়ায় ছেলেটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। কি হলো ও কিছুই বুঝতে পারলো না।

আদিত্য নূরকে রুমে নিয়ে এসে বেডের ওপর ফেলে দিল। রাগে ওর শরীর এখনো কাপছে। আদিত্যের এমন রাগ দেখে নূর একটু ভয় পেয়ে গেল। আদিত্য নূরের উপরে উঠে , নূরের দুই হাত বেডের সাথে চেপে ধরে অগ্নি চোখে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বললো।
…..হাউ ডেয়ার ইউ নূর? হাউ ডেয়ার ইউ? কি করছিলে তুমি ওখানে ওই ছেলেটার সাথে হ্যাঁ? যেখানে কেউ তোমার দিকে তাকালেও আমি তার চোখ তুলে নেই। সেখানে তোমার সাহস কি করে হলো, অন্য একটা ছেলের সাথে ওভাবে হেসে হেসে কথা বলার? বলো?

নূর প্রথমে ভয় পেলেও তখনকার কথা মনে পরে ওর হঠাৎ রাগ উঠে গেল। নূর আদিত্যকে নিজের উপর থেকে ধাক্কা দিয়ে বেডে ফেলে দিল।তারপর নিজে আদিত্যর পেটের ওপর উঠে বসলো। হঠাৎ নূরের এমন রিয়্যাকশনে আদিত্য ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। নূর আদিত্যের পাঞ্জাবির কলার ধরে রাগী কন্ঠে বললো।
…..আচ্ছা? তো তুমি কি করছিলে? তুমি যা খুশি তাই করবে আর আমি করলেই দোষ তাইনা?

আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
…..মানে? আমি আবার কি করলাম?

….আহা হা হা, জনাবের ভাব তো দেখ? যেন কিছুই বোঝে না। তখন ওই মেয়েদের সাথে গা ঘেঁষে হাহা হিহি কল করছিল শুনি? তখন মনে হয়নি যে আমার কেমন লাগবে হ্যাঁ?
নূর আদিত্যর পাঞ্জাবির বোতাম দেখিয়ে বললো।
….আর এসব কি হ্যাঁ? এভাবে পাঞ্জাবির বুক খোলা রেখে সবাইকে নিজের বডি দেখাতে চাও বুঝি? শোন এটা শুধু আমার, আমি ছাড়া আর কেউ দেখবে না এটা বুজেছ?

আদিত্য আসল ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ঠোঁট কামড়ে হেসে দিল।তারপর নূরের পিঠে হাত দিয়ে নূরকে নিজের মুখোমুখি এনে বললো।
….তো এইজন্য ম্যাডাম রেগে আছে? মনে হচ্ছে আমার বউটা জেলেস হয়ে গেছে।

নূর বলে উঠলো।
….মনে হওয়ার কি আছে। অফকোর্স আমি জেলাস। আমি ছাড়া তোমার সাথে অন্য কেউ কেন হাসাহাসি করবে কথা বলবে হ্যাঁ?

…..আরে পাগলি আমি কি ইচ্ছে করে ওদের সাথে কথা বলেছি নাকি। ওরা সবাই তানির কাজিন। আমি ওদের সাথে রুড বিহেভ করলে, তানি হয়তো মন খারাপ করতে পারে তাই আমি অনিচ্ছা সত্ত্বেও ওদের সাথে কথা বলছিলাম।

নূর ভ্রু কুঁচকে বললো।
….কিহহ্ ওরা তানির কাজিন? কিন্তু তানিতো আমাকে কিছু বললো না। তারমানে ওই চুন্নিটা আমার সাথে মজা নিয়েছে। আমাকে ভুলভাল বুঝিয়ে তোমাকে দেখানোর জন্য অন্য ছেলের সাথে কথা বলতে বলেছে। দাঁড়াও আমি এখুনি যেয়ে দেখছি ওঁকে।
কথাটা বলে নূর সরে আসতে নিলে আদিত্য আটকে দেয়। নূরকে ঘুরিয়ে নিচে শুইয়ে আদিত্য নূরের উপর ঝুকে বললো।
…..এখন কোথাও যাওয়া চলবে না প্রাণপাখী। যে কারণেই হোক না কেন, অন্য ছেলের সাথে কথা বলে অন্যায় তো তুমি করেছ। তাই শাস্তি এখন তোমাকে পেতেই হবে। ভয়াবহ শাস্তি।

নূর লাজুক হেসে আদিত্যের বুকে মুখ গুঁজল।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here