ভালোবাসার চেয়েও বেশি 💞পর্ব- ৮৩অন্তিম পর্ব

0
8893

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৮৩ ( অন্তিম পর্ব)

★ডক্টরের কেবিনে বসে আছে আদিত্য আর নূর। ডক্টর নূরের রিপোর্ট দেখছে। টেনশনে আদিত্যের ঘাম ছুটে যাচ্ছে। বুকের ভেতর দুরুদুরু করছে। নাজানি কি আসে রিপোর্টে, নূরের যেন কিছু না হয়। নূর আদিত্যের হাতের ওপর হাত রেখে আদিত্যকে চোখের ইশারায় আস্বস্ত করলো। আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করলো।

রিপোর্ট দেখা শেষে ডক্টর গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো।
…..হুম মিঃ আদিত্য দেখুন আপনার ওয়াইফের প্রেগন্যান্সিতে কিছু কমপ্লিকেশন আছে। আপনাদের অনেক সাবধানে থাকতে হবে।

বাচ এটারই ভয় পাচ্ছিল আদিত্য। শেষমেশ ওর ভয়টাই সত্যি হলো। ডক্টরের কথা শুনে আদিত্যের হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। শরীর যেন অবশ হয়ে আসছে। এখন কি করবে ও?ওর প্রাণপাখীর কিছু হয়ে গেলে ও কিভাবে বাঁচবে? আদিত্যর অবস্থা দেখে নূরও অনেক ভয় পেয়ে গেল। আদিত্য যদি আবার বেবি এবোশন করে দিতে বলে তখন?

ডক্টর ওদের কিছু মেডিসিন আর সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়ে দিল। ওরা সেটা নিয়ে কেবিন থেকে বেড়িয়ে এলো।

বাইরে এসে আদিত্য কোনো কথাই বলছে না। নূরের দিকেও তাকাচ্ছে না। নূরের ভীষণ ভয় লাগছে, ও বুঝতে পারছে না আদিত্যের মনে কি চলছে। ও কি আমার ওপর রেগে আছে? কারণ আমিই বাচ্চার জন্য জিদ করেছিলাম।

একটু পরে ওরা যেয়ে গাড়িতে বসলো। গাড়িতেও আদিত্য পুরো রাস্তা কোনো কথাই বললোনা। নূরও ভয়ে আর কিছু বললো না। বাসায় এসে গাড়ি থামিয়ে আদিত্য গাড়ি থেকে নামলো নূর নামতে নিলে আদিত্য এসে হঠাৎ ওকে কোলে তুলে নিয়ে চুপচাপ সামনে তাকিয়ে বাসার ভেতর ঢুকলো। নূর শুধু অবাক হয়ে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে রইলো।

রুমে এসে আদিত্য নূরকে বেডের ওপর বসিয়ে দিল। নূরকে বসিয়ে দিয়ে কোনকিছু না বলে বেলকনিতে চলে গেল। বেলকনিতে যেয়ে মাথার চুল টেনে ধরে অস্থির হয়ে কতক্ষণ পায়চারী করতে লাগলো। এদিকে নূর আদিত্যের টেনশনে অস্থির হয়ে আছে।

একটু পরে আদিত্য একটু শান্ত হয়ে রুমে এসে নূরের সামনে ফ্লোরে বসে নূরের হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে শান্ত সুরে বললো।
….আমার কথা মন দিয়ে শোন।

নূর হঠাৎ কেঁদে উঠলো। আদিত্য চমকে গিয়ে দুই হাতে নূরের মুখটা ধরে বললো।
….হেই প্রাণপাখী কি হয়েছে? কাদছ কেন? শরীর খারাপ করছে।

নূর কাঁদো কাঁদো গলায় বললো।
…..তুমি আমার ওপর রেগে আছ তাইনা? কারণ আমি বাচ্চা নেওয়ার জন্য জিদ করেছিলাম। প্লিজ আমাকে এবোশন করতে বলো না।আমার জান থাকতে আমি সেটা পারবো না প্লিজ।

আদিত্য ধমকের সুরে বললো।
….শাট আপ ইডিয়ট। কি বলছ এসব? আমাকে কি তোমার এতটাই নির্দয় মনে হয়?

…তাহলে তখন থেকে এভাবে রাগ করে আছ কেন? কথা বলছ না আমার সাথে?

….কিভাবে কথা বলবো? আমার ভেতর যে ঝড় চলছে সেটা তোমাকে কিভাবে বোঝাব? তুমি জানো এখন থেকে আমি একটা সেকেন্ডও শান্তিতে থাকতে পারবো না। শান্তিতে ঘুমাতে পারবোনা। সবসময় মনের ভেতর ভয় কাজ করবে। নাজানি তোমার কখন কি হয়ে যায়? প্রতিটি ক্ষণ তোমাকে হারানোর ভয় আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে। আর এই কারনেই আমি তোমাকে বাচ্চা নিতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু তুমি চিন্তা করোনা। আমি তোমাকে এবোশন করতে বলবো না। আমি আমার জানপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করবো তোমাকে আমাদের বেবিকে ভালো রাখার। তবুও যদি আল্লাহ না করুক তোমার কিছু হয়ে যায় তাহলে, আমিতো তোমাকে আগেই বলেছি।তোমার কিছু হয়ে গেলে, আমিও তোমার সাথে চলে যাবো। তাহলে তো আর কোনো চিন্তা নেই। বাবুকে দেখে রাখার অনেক লোক আছে । তারা ওকে অনেক ভালো রাখবে।

নূর কেঁদে উঠে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে বললো।
….কেন আগে থেকেই এসব ভাবছ? আল্লাহ তো সবকিছু ঠিকও করে দিতে পারে তাইনা? আল্লাহর ওপর ভরসা রাখ, আল্লাহ নিশ্চয় সব ঠিক করে দিবেন।

আদিত্য ছলছল চোখে বললো।
….কি করবো প্রাণপাখী? আমি যে তোমাকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারি না। তোমাকে ছাড়া যে আমি শূন্য।

আদিত্য একটু শান্ত হয়ে নূরের মুখটা ধরে বললো।
…..যাইহোক এখন আমার কথা মন দিয়ে শোন। এখন থেকে তুমি নিজে থেকে কোনো কাজ করবে না। এমনকি তুমি নিজের পায়ে হাটতেও পারবে না। তোমার যেখানে যেতে হবে আমি নিয়ে যাবো। তোমার সব কাজ আমি করবো। সব মানে সব। বুঝতে পারছ তুমি?এখন থেকে আমার কথার বাইরে তুমি একটা কাজও করবো না। সবসময় আমার নজরের সামনে থাকবে তুমি।আর খাওয়া দাওয়ার কোনো অনিয়ম আমি একদম সহ্য করবো না। টাইম টু টাইম খাবার খেতে হবে। বুঝতে পারছ আমার কথা?

নূর জোরপূর্বক হেসে মাথা ঝাকিয়ে সায় দিল। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ভয়ে ওর গলা শুকিয়ে আসছে। নাজানি এই কয়মাস ওর ওপর দিয়ে কি কি অত্যাচার হতে চলেছে। আই মিন নিজের পায়ে হাটতেও পারবো না? এটা কোনো কথা?
______

দেখতে দেখতে পাঁচ মাস পার হয়ে গেছে। এই পাঁচ মাস আদিত্য যেন নূরকে একটা বাচ্চার মতো রেখেছে। বলতে গেলে বাচ্চার চেয়েও বেশি। নূর কনসিভ করার পর থেকে আদিত্য আর অফিসে যায়না। বাসায় ল্যাপটপেই কাজ করে। নূরের সামনে থেকে আদিত্য এক সেকেন্ডের জন্যেও সরেনা। পারলে যেন নূরকে সবসময় কোলে নিয়ে বসে থাকে। আদিত্য নূরকে যা বলেছিল তাই করছে। নূরকে কখনো বিছানা থেকে একা নামতে দেয়না আদিত্য। সবসময় সবজায়গায় নূরকে কোলে করে নিয়ে যায়।এমনকি ওয়াশরুমে গেলেও আদিত্য নূরকে কোলে করে নিয়ে যায় আবার নিয়ে আসে।নিজের হাতে খাইয়ে দেওয়া নিজের হাতে গোসল করিয়ে দেওয়া সব কাজ আদিত্য করে দেয়। নূর সবসময় বসে বসে বোর হয়ে গেলে আদিত্য ওকে গল্প পড়ে শোনাই আবার কখনো গান শুনিয়ে ওর মনোরঞ্জন করে। নূরের হাত পা ব্যাথা করলে আদিত্য নূরের হাত পা টিপে দেয়। নূর অনেক মানা করলেও আদিত্য শোনেনা। একজায়গায় বসে বসে সমস্যা হতে পারে দেখে আদিত্য বিছানার উপরই বসে বসে আস্তে আস্তে ইওগা করায়। নূর না হাটলেও আদিত্য পুরো বাড়িতে কার্পেট দিয়ে ঢেকে দিয়েছে। এমনকি বাথরুমেও কার্পেট বিছিয়ে দিয়েছে। যাতে নূরকে কোলে নিয়ে আদিত্য যেন কখনো পড়ে না যায়।এই কয়মাসে রাতে আদিত্য ভালো করে একদিনও ঘুমাতে পারেনি। নূরের চিন্তায় চিন্তায় আদিত্যর ঘুমই ধরে না। রাতে উঠে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে কান্না কাটি করে যেন ওর প্রাণপাখীর কিছু না হয়। মা আর বাচ্চা দুজনেই যেন সুস্থ থাকে। আদিত্যর এতো ভালোবাসা দেখে নূর মাঝে মধ্যে কেঁদে দেয়। একটা মানুষ কাউকে এতটা ভালো কিভাবে বাসতে পারে? আল্লাহ আমার কপালে এতসুখ রেখেছিল, আমি কখনো ভাবতেও পারিনি। আদিত্যকে এভাবে দেখে নূরের অনেক কষ্ট হয়। ও নিজেও আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে যে আল্লাহ যেন ওদের কে ঠিক রাখে। নাহলে ওর কিছু হয়ে গেলে যে আদিত্য সত্যি সত্যিই মরে যাবে।

আজকাল নূরের অনেক মুড সুইং হয়। অল্পতেই কেদে দেয়, আবার একটুতেই হেসে দেয়। মাঝে মাঝে কেমন বাচ্চাদের আচরণ করে। আর এসবকিছু সহ্য করতে হয় আদিত্যের। সবচেয়ে বেশি জ্বালা হয় নূরকে খাওয়াতে নিলে। কোনো সময়ই নূর ঠিকমতো খেতে চায়না। অনেক কিছু বলে বলে বাচ্চাদের মতো ভুলিয়ে ভালিয়ে খাওয়াতে হয়। যেমন এখনো করছে।

সেই কখন থেকে আদিত্য নূরের মুখের সামনে খাবার ধরে নিয়ে বসে আছে, কিন্তু নূরের মুখে নেওয়ার কোনো নাম নেই। আদিত্য আদুরে গলায় বললো।
….প্রাণপাখী প্লিজ খাবার টা মুখে নাওনা? দেখ কতো মজার চিকেন সুপ করে এনেছি।

নূর নাক শিটকিয়ে বললো।
….উহু মজা না ছাই। একদম পঁচা এটা। এটা খেলেই আমার বমি চলে আসবে। আমি খাবনা এটা।

….আচ্ছা তাহলে কি খাবে বলো? আমি অন্য কিছু বানিয়ে আনছি।

নূর হাসি মুখে বলে উঠলো।
…..আমি ফুচকা খাব। আমাকে ফুচকা এনে দেও।

আদিত্য হালকা রাগ দেখিয়ে বললো।
….আবারও ওইসব ফালতু জিনিস খেতে চাচ্ছ? ওসব তোমার স্বাস্থ্যের জন্য এখন একদম ঠিক না। তাই চুপচাপ কোনো কথা না বলে এটাই খেয়ে নেও।

….না আমি খাবনা। খাবনা খাবনা খাবনা

….নূর বিরক্ত করোনা। না জ্বালিয়ে তাড়াতাড়ি খেয়ে নেও।

নূর বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টিয়ে অভিমানী সুরে বললো।
….আমি তোমাকে বিরক্ত করি? তুমি এটা বলতে পারলে? আমাকে এখন আর তোমার ভালো লাগে না তাইনা? পূরণ হয়ে গেছি আমি। ঠিক আছে যাও থাকা লাগবে না আমার কাছে, নতুন কাউকে খুঁজে নাও।

আদিত্য এবার একটু জোরে ধমক দিয়ে বললো।
…..শাট আপ ইডিয়ট। কি বলছ এসব?

আদিত্যর ধমকে নূর হঠাৎ ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে উঠলো।
…..এ্যাএএএএ আমাকে বকা দেয়। পঁচা একটা। বাবা, বাবা,বাবা,,,
নূর জোরে জোরে আদিত্যের বাবাকে ডাকতে লাগলো।

নূরের আচরণে আদিত্য খুব একটা অবাক হলো না।কারণ নূর আজকাল প্রায়ই এমন করে। আর কিছু হলেই বাবাকে ডেকে নালিশ দেয়।
নূরের ডাকে একটু পরেই আদিত্যের বাবা ওদের রুমে ছুটে এলো। তারপর নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….কি হয়েছে নূর মা? কাঁদছ কেন?

নূর নাক টেনে বললো।
….বাবা তোমার এই পঁচা ছেলেটা আমাকে বকা দিয়েছে হুহ। আমাকে আমাকে ইডিয়ট বলেছে।

আদিত্যের বাবা আদিত্যর দিকে তাকিয়ে মিথ্যে রাগ দেখিয়ে বললো।
….তোমার সাহস কি করে হলো, আমার মেয়েকে বকা দেওয়ার হ্যাঁ? তাও আবার এমন সময়?

আদিত্য বেচারা যেন বেকুব হয়ে গেল। ও কি করলো তাইতো বুঝতে পারছে না ও। আর নূর খুশী হয়ে আদিত্যের বাবাকে বললো।
….হ্যাঁ হ্যাঁ আরও বকা দেও। আমাকে বলে কিনা ইডিয়ট হুহ? আমার মতো ইনটেলিজেন্ট মেয়ে কোথাও আছে?

আদিত্যের বাবা নূরের সাথে সাথে সায় দিয়ে বললো।
….হ্যাঁ তাইতো, আমার এতো বুদ্ধিমান মেয়েকে ইডিয়ট বলার সাহস কি করে হলো তোমার? তুমি এখুনি কান ধরে উঠবস করবে। তাইনা নূর মা? তাহলে খুশিতো তুমি?

নূর খুশী হয়ে বললো।
….হ্যাঁ হ্যাঁ অনেক খুশী।

….ঠিক আছে তাহলে তুমি কান উঠবস করো। যতক্ষণ না নূর মামুনি তোমাকে মাফ করে দেয়। আমি এখন যাচ্ছি।
কথাটা বলে আদিত্যের বাবা মুচকি হেসে চলে গেলেন।

আদিত্য উঠে দাঁড়িয়ে বললো।
….ঠিক আছে আমি কান ধরে উঠবস করছি। তাহলে খুশীতো? তারপর কিন্তু লক্ষী মেয়ের মতো খাবার শেষ করতে হবে। ঠিক আছে?

…হ্যাঁ ঠিক আছে, ঠিক আছে। তুমি আগে শাস্তি পূরণ করো।

আদিত্য কান খাড়া উঠবস করতে লাগলো। উঠবস করতে করতে আদিত্য ঘেমে যাচ্ছে। নূর হঠাৎ আবারও কেঁদে উঠলো। আদিত্য চমকে গিয়ে নূরের কাছে এসে দুই হাতে নূরের মুখটা ধরে বললো।
…..কি হয়েছে প্রাণপাখী? আবার কাঁদছ কেন? আমিতো তোমার কথা মানছি। তাহলে আবার কাদছ কেন?

নূর নাক টেনে আদুরে গলায় বললো।
…কি করবো তোমাকে এভাবে দেখে যে আমার ভালো লাগছে না। তোমাকে এসব করতে হবে না। তোমার কষ্ট হলে আমার ভালো লাগে না।
নূর ওড়নার আঁচল দিয়ে আদিত্যের কপালের ঘাম মুছে দিতে লাগলো।

আদিত্য ছলছল চোখে নূরের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ নূরকে জড়িয়ে ধরলো। চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো আদিত্যর। ওর এই কলিজাটার কিছু হয়ে গেলে ও কি করবে? কিছুতেই বাঁচতে পারবে না ও কিছুতেই না।

নূর আদিত্যের মুখটা ধরে সামনে এনে চোখের পানি মুছে দিয়ে, কপালে চুমু খেয়ে বললো।
….এখন কি বসে বসে বাচ্চাদের মতো কাঁদবে? নাকি আমাকে খাইয়ে দিবে? ক্ষুধা লেগেছে না আমার?

আদিত্য মুচকি হেসে মাথা ঝাকিয়ে নূরকে খাইয়ে দিতে লাগলো।

আরও চারমাস কেটে গেছে। নূরের এখন নয় মাস চলছে। নূর এখন বেশি নড়াচড়া করতে পারে না। পেটটাও অনেক বড়ো হয়ে গেছে। নূরের শরীরের অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে গেছে। এখন নূরও রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না। শরীর শুকিয়ে গেছে, চোখের নিচে কালো দাগ হয়ে গেছে। চেহারা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। নূরের এমন অবস্থা দেখে আদিত্যের ভয়ে দম বন্ধ হয়ে আসে। ও ভেবে পায়না এতো যত্নের পরেও নূরের শারীরিক অবস্থার এতো অবনতি কিভাবে হচ্ছে? আদিত্য আগে যেটুকু ঘুমাতে পারতো এখন তাও পারেনা। সারারাত জেগে থাকে নূরের চিন্তায়।নূর একটু নড়ে উঠলেও আদিত্য ভয়ে লাফিয়ে ওঠে। নূরের এমন অবস্থা দেখে প্রতিরাতেই নীরবে চোখের পানি ঝরায় আদিত্য, ওর প্রাণপাখীকে হারানোর ভয়ে।

এরমধ্যে সানারও একটা ছেলে হয়েছে। নাম তাসান। নিবিড়ের বয়স এখন চার বছর চলছে। এখন ওর কথা আগের থেকে অনেকটা পরিস্কার হয়ে গেছে।

রাত ১টা
আদিত্য বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে আস্তে আস্তে নূরের ঘাড় আর পিঠ মাসাজ করে দিচ্ছে। নূর অস্বস্তিতে ঘুমাতে পারছিলনা। তাই আদিত্য এসব করছে, যাতে নূর আরামে একটু ঘুমাতে পারে। এবং নূর সত্যিই আরামে ঘুমিয়ে পড়েছে।

নূর ঘুমিয়ে পড়েছে দেখে আদিত্য একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। তারপর আস্তে করে উঠে ওয়াশরুমে গেল। একটু পরে হঠাৎ নূরের ঘুম ভেঙে গেল। ওর পেটে অসহ্য ব্যাথা শুরু হয়ে গেল। নূর যন্ত্রণায় কাতরাতে লাগলো। ব্যাথায় দম বন্ধ হয়ে আসছে ওর। নূর আদিত্যকে ডাকার জন্য পাশে তাকাতেই দেখলো আদিত্য নেই। ও ওয়াশরুমের দিকে তাকিয়ে দেখলো আদিত্য ওয়াশরুমে। এদিকে নূরের যন্ত্রণা বেড়েই চলেছে। যন্ত্রণায় নূরের গলা দিয়ে আওয়াজও বের করতে পারছে না। তবুও অনেক কষ্টে আদিত্যকে ডাকার চেষ্টা করলো নূর। কিন্তু ওয়াশরুমে পানি ছেড়ে রাখায় আদিত্যর কান পর্যন্ত নূরের আওয়াজ পৌঁছাচ্ছে না।

নূর আদিত্যকে ডাকার জন্য অনেক কষ্টে বেডে ভর দিয়ে উঠে বসলো। তারপর এক হাতে পেট ধরে আরেক হাতে বেডের মাথায় ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো নূর । অনেক কষ্টে দু কদম বাড়াতেই নূর আর পারলোনা। হঠাৎ ওর পা দিয়ে পানির মতো তরল কিছু গড়িয়ে এলো। নূর আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলোনা। ওখানেই ফ্লোরে চিৎ হয়ে পরে যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলো।

আদিত্য ওয়াশরুমের দরজা খুলে বের হলো। বের হয়ে সামনে তাকিয়ে দেখলো নূর ফ্লোরে পড়ে কাতরাচ্ছে। আদিত্যের মাথায় পুরো আকাশ ভেঙে পড়লো। পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে গেল ওর।
….নূররররর,,,,
আদিত্য চিৎকার করে নূরের নাম ধরে ডেকে নূরের কাছে দৌড়ে এলো। নূরের মাথাটা তুলে কোলের ভেতর নিয়ে পাগলের মতো বলতে লাগলো।
……নূররর, আমার প্রাণপাখি । কি হয়েছে তোমার?

নূর যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে অনেক কষ্টে বললো।
….বা বাবাচ্চা আ আমাদের বাচ্চাকে বাচাও আদিত্য।

আদিত্য খেয়াল করলো নূরের মাজার নিচে ম্যাক্সি ভিজে গেছে। আদিত্যের বুঝতে বাকি রইলো না কি হয়েছে। ভয়ে আদিত্যের হাত পা থরথর করে কাঁপতে লাগলো। কলিজা শুকিয়ে আসছে ওর। হৃদপিণ্ড যেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ওর। এই একটুখানি সময়ের মধ্যে কি হয়ে গেল। আদিত্য তাড়াতাড়ি কোলে তুলে নিয়ে চিল্লিয়ে আবিরকে ডাকতে লাগলো।

আদিত্যের চিল্লানিতে বাসার সবাই ছুটে এলো। আদিত্য আবিরকে তাড়াতাড়ি গাড়ি বের করতে বললো। আবির মাথা ঝাকিয়ে তাড়াতাড়ি করে গিয়ে গাড়ি বের করলো। আদিত্য গাড়ির পেছনের সিটে নূরকে শুইয়ে দিয়ে মাথাটা নিজের কোলের উপরে নিয়ে বসলো।

যন্ত্রণায় নূর ছটফট করছে। আদিত্যের যেন জানটা বেড়িয়ে যাচ্ছে। চোখে পানি এসে চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে ওর। আদিত্য নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে কান্না ভরা কন্ঠে বললো।
…এইতো প্রাণপাখী, আর কিছুক্ষণ একটু সহ্য করো। আমরা প্রায় চলে এসেছি।

নূর আদিত্যের গালে হাত রেখে অঅনেক কষ্টে বললো।
…আ আদিত্য আ আমাকে প্রমিজ করো। য যদি এমন সিচুয়েশন এসে যায় যে মা আর বাচ্চার মধ্যে যেকোনো একজনকে বাঁচানো যাবে। তাহলে তুমি অবশ্যই আমাদের বাচ্চাকে বাঁচাবে। প্লিজ প্রমিজ করো আমাকে।

আদিত্যের কলিজাটা ছিড়ে যাচ্ছে। আদিত্য নূরের কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে গালে হাত বুলিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো।
…প্লিজ এমন করে বলোনা প্রাণপাখী। আমার সহ্য হচ্ছে না। তোমার কিছু হবে না প্রাণপাখী , কিছু না।

নূর হঠাৎ সব শক্তি হারিয়ে ফেলছে । শরীর কেমন নিস্তেজ হয়ে আসছে। চোখ খুলে রাখতে পারছে না। এটা দেখে আদিত্য আরও ভয় পেয়ে গেল। আদিত্য নূরের গালে হাত বুলিয়ে ভয়ার্ত স্বরে বললো।
…এ এই প্রাণপাখী। কথা বলো আমার সাথে প্লিজ। চোখ বন্ধ করোনা। আমার দিকে তাকাও আর কিছুটা সময় প্রাণপাখী। প্লিজ প্লিজ প্লিজ,,
আবির দ্রুত চালা গাড়ি।

নূর অনেক চেষ্টা করেও নিজের চোখ খুলে রাখতে পারছে না। বারবার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। কিছুক্ষণ পরেই ওরা হসপিটালে চলে এলো। আদিত্য নূরকে কোলে নিয়ে দ্রুত হসপিটালের ভেতর ঢুকলো। হসপিটালে ঢুকে জোরে জোরে ডক্টর কে ডাকতে লাগলো। আগে থেকে বলে রাখায় ডক্টর নার্স দ্রুত দৌড়ে এলো। নূরকে স্ট্রেচারে শুইয়ে দিয়ে ওটিতে নিয়ে যেতে লাগলো। আদিত্য নূরের হাত ধরে স্ট্রেচারের সাথে সাথে যেতে লাগলো। ওটির সামনে এসে নূরের হাত ধীরে ধীরে আদিত্যের হাত থেকে ছুটে গেল। আদিত্যের মনে হচ্ছে ওর কলিজাটাই কেউ টেনে বের করে নিয়ে যাচ্ছে। আদিত্য আর সহ্য করতে পারছে না। ওটির দরজা বন্ধ হতেই আদিত্য ওখানেই জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেল।

দুই ঘন্টা পর।
আদিত্য চোখ খুলে তাকালো। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো ও হসপিটালের বেডে শুয়ে। নূরের কথা মনে আসতেই আদিত্য এক ঝটকায় উঠে বসলো। প্রাণপাখী? আমার প্রাণপাখী কোথায়? ও ঠিক আছে তো? আদিত্য হাতের স্যালাইনের পাইপ এক টানে খুলে ফেলে দৌড়ে কেবিনের বাইরে বেরিয়ে এলো। বাইরে তাসির দাঁড়িয়ে ছিল। আদিত্যকে এভাবে আসতে দেখে, তাসির ওকে ধরে বললো।
….কিরে তোর জ্ঞান ফিরে এসেছে? তুই এভাবে বেড়িয়ে এসেছিস কেন?

তাসিরের কথায় পাত্তা না দিয়ে আদিত্য উত্তেজিত হয়ে বললো।
….তা তাসির আমার নূর আমার প্রাণপাখী কই? ও ঠিক আছে তো? বলনা?

…আদি আগে শান্ত হ। আমার কথাটা তো শোন?

আদিত্য তাসিরের কথায় পাত্তা না দিয়ে দৌড়ে নূরের কাছে যেতে লাগলো। তাসিরও ওর পিছু পিছু দৌড়ালো। আদিত্য একটা কেবিনের সামনে এসে দেখলো ওর বাসার সবাই ওখানে দাঁড়িয়ে আছে। আদিত্য ওদের কাছে যেয়ে পাগলের মতো বলতে লাগলো।
….ন নূর কোথায়? আ আমার প্রাণপাখী কোথায়?

ওরা কেবিনের দিকে ইশারা করলো। আদিত্য সেদিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা পা বাড়ালো। ভয়ে ওর রুহ কাপছে। ভেতরে যেয়ে ওর প্রাণপাখীকে সহিসালামত পাবে তো? আদিত্য কাঁপা কাঁপা হাতে কেবিনের দরজা খুলে সামনে তাকিয়ে দেখলো নূর বেডের ওপর শুয়ে আছে। নূরের চোখ খোলা দেখে আদিত্য যেন নতুন জীবন ফিরে পেল। আদিত্য দৌড়ে যেয়ে নূরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। নূরও আদিত্যকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আল্লাহ পাক ওদের ফরিয়াদ শুনেছে। ওকে আবার আদিত্যের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে।

আদিত্য দুই হাতে নূরের মুখটা ধরে পাগলের মতো সারা মুখে চুমু খেতে লাগলো। তারপর কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে কাদো কাঁদো গলায় বললো।
…জানো কতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি? জানটা প্রায় বেড়িয়ে গিয়েছিল আমার।

কিছুক্ষণ পর আদিত্য একটু শান্ত হয়ে এলে নূর আদিত্যের চোখের পানি মুছে দিয়ে অশ্রু চোখে মুচকি হেসে বলে উঠলো।
….আমাদের বাচ্চাদের দেখবে না?

আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
….বাচ্চাদের মানে?

….হ্যাঁ বাচ্চাদের, আমাদের টুইন বেবি হয়েছে। এক ছেলে এক মেয়ে।

খুশিতে আদিত্যের চোখে আবারও পানি চলে এলো। অশ্রু চোখে হেসে উঠে আদিত্য নূরকে জড়িয়ে ধরলো। একটু পরে দুজন নার্স দুটো বাচ্চাকে তোয়ালে মুড়িয়ে নিয়ে এলো। ছেলেটা নূরের কোলে আর মেয়েটা আদিত্যের কোলে দিল। আদিত্য দুই বাচ্চার কপালে চুমু খেয়ে আবার নূরের কপালে চুমু খেল। শেষমেশ ওদের জীবনে সেই কাঙ্খিত খুশিটা এলো।

একটু পরে বাচ্চাদের দুই দোলনায় শুইয়ে দেওয়া হলো। সবাই ভেতরে এসে বাচ্চাদের দেখতে লাগলো। এদিকে আরেক ব্যাক্তি অধীর অপেক্ষায় বসে আছে কাউকে দেখার জন্য। সে হলো আমাদের নিবিড় বেচারা। নিবিড় ধীরে ধীরে ভীড় ঠেলে সামনে এগিয়ে এলো। বেচারা বুঝতে পারছে না ও আগে কাকে দেখবে। হঠাৎ মেয়ে বাচ্চাটা একটু কেঁদে উঠলো। নিবিড় কোনো কিছু না ভেবে ফট করে দৌড়ে মেয়ে বাচ্চাটার কাছে এগিয়ে গেল। দোলনার ভেতর তোয়ালেতে মুড়িয়ে শুয়ে থাকা পুতুলটার দিকে বিস্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে রইলো। পুতুলটা চোখ পিটপিট করে তাকালো। নিবিড়ের ছোট্ট মাসুম হৃদয়ে হঠাৎ কোনো অনুভূতি হচ্ছে। যা ছোট্ট নিবিড় বুঝতে পারছে না। নিবিড়ের ঠোঁট জোড়া প্রাসারিত হয়ে আপনাআপনি এক হাসির রেখা চলে এলো। ছোট্ট পুতুলটা নড়াচড়া করায় ওর কোমল হাতটা বেড়িয়ে এলো। নিবিড় মুচকি হেসে নিজের হাতটা পুতুলটার হাতের কাছে এগিয়ে নিল। একপর্যায়ে পুতুলটা তার কোমল হাত দিয়ে নিবিড়ের তর্জনী আঙুল আলতো করে ধরলো। সাথে সাথে নিবিড়ের মনে হলো ওর চারপাশটা এক চমৎকার উজ্জ্বল আলোয় ভরে গেল। যেন ওর পুরো পৃথিবীটাই নতুন আলোয় আলোকিত হয়ে গেল। নিবিড় আনমেই বিড়বিড় করে বলে উঠলো।
….পুতুল, আমার পুতুল।

চার বছর পর।
চার বছরে নূরের ছেলে মেয়েরা অনেকটা বড় হয়ে গেছে। আদিত্য আর নূরের মেয়ের নাম আদ্রিতা নিকনেম অরি,আর ছেলের নাম নূরান নিকনেম নীড়। নিবিড়ের বয়স এখন আট বছর চলছে। নিবিড়ের পরে তানির আরেকটা মেয়ে হয়। নাম তানহা ওর বয়স এখন দুই বছর। সানারও ওর ছেলে তাসানের পরে আরেক টা মেয়ে হয়। নাম সানভি বয়স এক বছর।

দুপুর ২টা
সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আছে। হঠাৎ আদ্রিতা কাঁদতে কাঁদতে ওখানে এলো। নূর আদ্রিতার কাছে যেয়ে বললো।
….কি হয়েছে? আমার অরি মামনি কাঁদছে কেন?

আদ্রিতা চোখ ডলে ডলে নাক টেনে বললো।
…. নিবিল ভাইয়া আমাকে অনেক জোলে জোলে ধমক আবাল অনেক বকাও দিয়েছে।

সবাই তাকিয়ে দেখলো নিবিড় রাগী মুড নিয়ে এদিকেই আসছে। তানি ওর সামনে যেয়ে শাসনের সুরে বললো।
….নিবিড় তুমি অরিকে বকেছ কেন?

নিবিড় রাগী মুডে বলে উঠলো।
….হ্যাঁ বকেছি। ও আমার কথা মানেনি কেন? ওকে আমি বলেছি ও যেন অন্য কোনো ছেলের সাথে না খেলে। ওর যত খেলার ইচ্ছে আমার সাথে খেলবে। তাহলে ও আমার কথা না মেনে অন্য ছেলের সাথে কেন খেলছিল? আমি মানা করার পরেও কেন মানে ও?

তানি ধমক দিয়ে বললো।
…এটা কেমন কথা? ও ছোট মানুষ অন্য ছেলে মেয়ের সাথে তো খেলবেই। তাতে কি হয়েছে?

নিবিড় আরও রেগে গিয়ে টেবিলের ওপর থেকে ফুলদানি টা হাতে নিয়ে মাটিতে আছাড় মেরে চিল্লিয়ে বললো।
…না খেলবে না। খেলবে না ও অন্য কারোর সাথে। ও আমার পুতুল। ও শুধু আমার সাথে খেলবে।
কথাটা বলে রাগে ওখান থেকে হনহন করে চলে গেল।

এতটুকু বাচ্চার এমন রাগ দেখে সবাই হতভম্ব হয়ে গেছে। এখুনি এই অবস্থা নাজানি বড়ো হলে কি হবে?

আবির আদিত্যর কানের কাছে এসে বিড়বিড় করে বললো। ভাই আমার ছেলেতো দেখছি তোর কার্বন কপি হয়েছে। আমার তো মনে হয় ও তোকেও ছাড়িয়ে যাবে। এটিটিউড দেখেছিস ওর?

আবিরের কথায় আদিত্য মুচকি হাসছে।

রাত ১২টা
আদিত্য নূরকে কোলে নিয়ে বেলকনিতে বসে আছে। বাচ্চারা ঘুমিয়ে পড়েছে, তাই আদিত্য নূরকে এখানে নিয়ে এসে ওর দুষ্টুমি শুরু করে দিয়েছে। নূরের কাঁধে মুখ ডুবিয়ে চুমু খাচ্ছে। নূর মুচকি হেসে বলে উঠলো।
….এতো রোমাঞ্চ তোমার আসে কোথা থেকে? বাচ্চা কাচ্চার বাপ হয়ে গেলে তবুও তোমার দুষ্টুমি কমে না?

….উহুম আমারতো যত দিন যায় ততই তোমাকে আরও ভালোবাসতে মন চায়।

….তুমি কিভাবে এতো ভালোবাসতে পারো আমাকে?

আদিত্য নূরের কানে চুমু খেয়ে বললো।
…কারণ তুমি যে আমার #ভালোবাসার চেয়েও বেশি।

এভাবেই ভালো থাকুক আদিত্য আর নূরের ভালোবাসার চেয়েও বেশি ভালোবাসা।

________💞সমাপ্ত💞_______

[ শেষমেশ শেষ হলো গল্পটা। গল্পটা এখানেই শেষ করে দেওয়াই ঠিক মনে হলো। তাই শেষ করে দিলাম। নাহলে গল্পের মানটা কমে যেত। আর আমি আমার কথা রেখেছি।আমি আগেই বলেছিলাম যে আমি গল্পে হ্যাপি এন্ডিং দেব।আর তাই দিলাম। আসলে আমার নিজেরও পার্সোনালি স্যাড এন্ডিং পছন্দ না। কারণ স্যাড এন্ডিয়ের গল্প মানুষ তাড়াতাড়ি ভুলে যেতে চায়। তানা হলে ওই গল্পটা মনে পড়লে আমাদের মন খারাপ লাগে। কিন্তু হ্যাপি এন্ডিং এর গল্প কেউ ভুলতে চায়না। কারণ ওটা সবসময় মন ভালো করে দেয়। আর আমি চাই আমার গল্প সবাই মনে রাখুক। আর আপনাদের কথামতো টুইনস বাবুও দিয়ে দিছি।

এটা আমার জীবনের প্রথম গল্প ছিল। আমি কখনো ভাবিনি যে আপনাদের এত ভালোবাসা পাবো। আপনাদের সবাইকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ এবং ভালোবাসা আমাকে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য। আজকে গল্পটা শেষ করতে যেয়ে আমার খুব খারাপ লাগছিল। গল্পটা লিখতে গিয়ে আদিত্য আর নূর আমার জীবনের একটা অংশ হয়ে গিয়েছিল। সবসময় ওদের নিয়ে ভাবতাম। আজ থেকে সেই ভাবনা শেষ হয়ে গেল।

অবশেষে বলবো সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ বাচিয়ে রাখলে আবার নতুন কোনো গল্প নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হবো।

তবে এখুনি না আমি আপাতত কিছুদিন ব্রেক নিতে চাই। তারপর ফ্রেশ মনে চিন্তা ভাবনা করে নতুন গল্প লিখতে চাই।

আর হ্যাঁ আপনারা অবশ্যই জানাবেন। আপনারা নিবিড় আর আদ্রিতার কাহিনি দেখতে চান, নাকি নতুন কোনো গল্প চান। যেটার ভোট বেশি আসবে সেটা নিয়েই লিখব। অবশ্য নিবিড় আর আদ্রিতার ছোট্ট একটু ট্রেলারও কিন্তু আমি দিয়ে দিয়েছি। কেমন লাগলো জানাবেন। আর হ্যাঁ নিবিড় আর আদ্রিতার গল্প দিলেও কিন্তু আমি অন্য নামে দিব। কারণ আমার সিজন টুর কনসেপ্ট আমার পছন্দ না। বাকি আপনাদের ইচ্ছা।

বিদায় নিলাম সবাই ভালো থাকবেন। কোনো ভুল করে থাকলে ক্ষমার চোখে দেখবেন। 👋👋]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here