ভালোবাসার চেয়েও বেশি 💞পর্ব-৩৫•৩৬

0
8000

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৩৫+৩৬

#পর্ব-৩৫

★ এই জঘন্য লোকটা আবার কেন এসেছে এখানে? এই জনি সয়তান আবার আমার সাথে কিছু করবে নাতো? নূরের ভাবনার মাঝেই ওর সৎ মা রুবিনা বেগম নূরের চুলের মুঠি ধরে টেনে এনে ড্রয়িং রুমের ফ্লোরে ফেলে দিয়ে কর্কশ গলায় বলে উঠলো।
…..তাহলে এসব নষ্টামি করার জন্যই ভার্সিটিতে যাওয়া হয় তাইনা? আমিতো আগে থেকেই জানতাম, এসব পড়াশোনা তো শুধু বাহানা। আসলে কথা হলো তুই পড়ার কথা বলে বাইরে যেয়ে নিজের শরীরের জ্বালা মেটাতে যাস তাইনা?

নূর উঠে দাঁড়িয়ে রুবিনা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো।
….কি বলছো এসব? আর আমি কি করেছি? আমি কোথায় নষ্টামি করে বেড়ালাম?

……আচ্ছা এখন সাধু সাজা হচ্ছে তাইনা? মনে হচ্ছে ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানিস না।

….তুমি কি বলছো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। সত্যিই বলছি আমি কোনো খারাপ কিছু করিনি।

…..আচ্ছা কিছু করিসনি? তাহলে এসব কি?
কথাটা বলেই রুবিনা বেগম জনির হাতে থাকা ফোনটা নিয়ে নূরের সামনে ধরলো।

ফোনের দিকে তাকাতেই নূর থ হয়ে গেলো। ফোনের স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছে নূর আদিত্যের গালে চুমু দিচ্ছে সেই মূহুর্তের ছবি। এটা দেখে নূর প্রচুর ভয় পেয়ে গেল। ভয়ে হাত পা কাঁপা শুরু করে দিল। মনে মনে ভাবছে এই উনি কোথা থেকে পেল?

রুবিনা বেগম দাঁত কটমট করে বললো।
….কিরে? এখনও বলবি তুই কিছু করিস নি তুই একদম ধোয়া তুলসীপাতা? হুহ্? জনি আজ আমাদের না বললে তো আমরা জানতামই না যে তুই তলে তলে এসব করে বেড়াচ্ছিস। আমিতো আগে থেকেই জানতাম। যেমন নষ্টা মা, তেমন তার নষ্টা মেয়ে। তোর মা যেমন নষ্টামি করে বেরিয়েছিল, এখন তুইও সেই পথেই চলছিস। ছিঃ ছিঃ ছিঃ,,

মায়ের নামে এসব কথা শুনে নূর আর সহ্য করতে পারে না। সব ভয় ভুলে প্রতিবাদী কন্ঠে বলে উঠলো।
…..বাচ্ ছোট মা। যা বলবে আমাকে বলো। আমার মৃত মাকে নিয়ে কোনো খারাপ কথা বলবে না। তাহলে কিন্তু আমি কিছুতেই সহ্য করবো না।

নূরের কথায় রুবিনা বেগম তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বললো।
……কিহহ্? কি বললি তুই? যত বড়ো মুখ নয় ততবড় কথা। একেতো অন্যায় করেছিস, তারপর আবার এতবড় সাহস। আমার মুখে মুখে তর্ক করতিস?
কথাগুলো বলেই রুবিনা বেগম নূরের গালে আবারও সজোরে একটা থাপ্পড় মেরে দিল।

চড় খেয়ে নূর টাল সামলাতে না পেরে নিচে পরে গেলো।
রুবিনা বেগম নূরের দিকে ঝুকে চুলের মুঠি ধরে আবারও এগালে ওগালে চড়াতে লাগলো। চড়াতে চড়াতে বলে উঠলো।
….বাসার মান সম্মান সব রাস্তায় রাস্তাটা বেচে বেড়াচ্ছিস।আবার উল্টো আমার সাথে দেমাগও দেখাচ্ছিস। নাগড়দের পাল্লায় পড়ে বেশি দেমাগ বেড়ে গেছে তোর তাইনা? আজই তোর সব দেমাগ আমি নামিয়ে ফেলিবো।

মারতে মারতে নূরের নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে যাচ্ছে। তবুও রুবিনা বেগম থামছে না। রবি দৌড়ে এসে ওর মাকে থামানোর চেষ্টা করলে রিপা ওকে আটকে দেয়।

একটু পরে জনি উঠে এসে রুবিনা বেগমের হাত ধরে আটকে দিয়ে বললো।
…..থাকনা ফুপি আর মারার দরকার নেই ওকে।যা করার তাতো করেই ফেলেছে। মারলে তো আর বাড়ির মানসম্মান ফেরত আসবেনা তাইনা? আমি তোমার ভাতিজা। আমি সবসময় তোমাদের ভালো চাই। তাই তোমরা চাইলে আমার কাছে একটা উপায় আছে। এতে করে কেউ কিছু জানবেও না, আর তোমার বাড়ির মানসম্মানও রক্ষা হবে।

রুবিনা বেগম ভ্রু কুঁচকে বললো।
…কি উপায়?

….তোমাদের অনুমতি হলে আমি নূরকে বিয়ে করতে চাই। এতে করে বাড়ির কথা বাড়িতেই থেকে যাবে। বাইরের কেউ জানবেও না। আর তোমাদের সম্মানও ক্ষীণ হবে না।

রুবিনা বেগম একটু চিন্তা করে বললো।
….কিন্তু তুমি কেন এই নষ্টা মেয়েটাকে বিয়ে করে নিজের জীবন নষ্ট করবে?

জনি ইনোসেন্ট ভাব ধরে বললো।
….তোমাদের জন্য নাহয় একটু সেক্রিফাইস করলাম। এটা আর এমন কি? আমি ম্যানেজ করে নিবো।

রুবিনা বেগম জনির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠলো।
….তুই আমাদের জন্য কতকিছু করছিস বাবা। ঠিক আছে তুই যা বলছিস তাই হবে।

জনি একটা বিজয়ের সয়তানি হাসি দিল।

এদের কথা শুনে নূরের আত্মা কেপে উঠলো। কি বলছে এরা এসব? আমার বিয়ে তাও আবার এই সয়তানটার সাথে? কখনও না। আমার জীবন থাকতে আমি কখনও এটা করবো না। এসব ভেবে নূর শরীরের ব্যাথা নিয়ে কোনরকমে উঠে দাঁড়ালো। হঠাৎ করে ওর ভেতর কেমন সাহস চলে এলো। নূর জনির দিকে দৃঢ় ভাবে তাকিয়ে শক্ত গলায় বলে উঠলো।
…..কখনও না। তোর মতো জঘন্য লোককে আমি কোনো দিনও বিয়ে করবো না। কখনো না। তোর মতো জঘন্য লোককে বিয়ে করার চেয়ে মরে যাওয়াও অনেক ভালো। তুই কি ভেবেছিলি? তুই এসব ছবি দেখিয়ে ছলে বলে আমাকে বিয়ে করবি? সে আশা তোর কোনদিনও পূরণ হবে না। আরে তুই কি ছবি দেখাবি? আমি নিজেই তোকে বলছি, হ্যাঁ আমি চুমু দিয়েছি উনাকে। আর শুধু চুমু কেন? আমার মন চাইলে আমি আমার সবকিছু তাকে দিয়ে দেব। কারণ আমি তাকে ভালোবাসি। শুনতে পেরেছিস তুই? ভালোবাসি তাকে আমি। আর সেও আমাকে পাগলের মতো ভালবাসে। আমার জন্য নিজের জীবনটাও উৎসর্গ করে দিতে একবারও ভাবে না। তাই আমি বিয়ে করলে তাকেই করবো। বুঝতে পেরেছিস তুই?
একদমে কথাগুলো বলে থামলো নূর।

নূরের কথা শুনে জনি চোয়াল শক্ত করে রাগী চোখে নূরের দিকে তাকিয়ে রইলো।

রুবিনা বেগম আবারও নূরের গালে একটা থাপ্পড় মেরে বললো।
…কিহহ্ এতবড় সাহস তোর? এতো অধপতণ হয়েছে তোর? নিজের নষ্টামির কথা নিজের মুখেই আবার গর্ব করে বলে বেড়াচ্ছিস? কান খুলে শুনে রাখ বিয়ে তোর জনির সাথেই হবে। এবং কালই হবে। কথাটা মাথায় ভালো করে ঢুকিয়ে নে।

নূর রুবিনা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো।
…..কখনও না। আমি ওকে কখনও বিয়ে করবো না।

রুবিনা বেগম দাঁত কিড়মিড় করে বললো।
…কি বললি তুই? বিয়ে করবিনা? দাড়া তোর ব্যাবস্থা করছি আমি। তুই কেন তোর ঘাড়েও বিয়ে করবে।
কথাটা বলেই রুবিনা বেগম স্টোর রুমের দিকে গেল কিছু একটা আনতে।

রুবিনা বেগম যেতেই জনি নূরের দিকে ঝুকে হাত দিয়ে নূরের থুতনি শক্ত করে রাগী স্বরে বলে উঠলো।
…..তুই কি ভেবেছিলি? তোর আশিক কে দিয়ে আমাকে মার খাওয়াবি, আর আমি চুপচাপ বসে থাকবো? কিছু করবো না হুহ্? আমি অনেক আগে থেকেই তোর পেছনে লোক লাগিয়ে রেখেছিলাম। যাতে তোর সব খবরাখবর আমাকে দিতে পারে। আর তাইই হলো। আমার হাতে লেগে গেল ট্রাম্প কার্ড। এখন আমি যা চাইবো তাই হবে। বিয়েতো তোকে আমাকেই করতে হবে। আর কোনো উপায় নেই তোর কাছে। এবং বিয়ের পরেই তোকে আসল খেল দেখাবো।আমার শরীরের এক একটা আঘাতের বদলা আমি তোর থেকে সুদে আসুলে তুলবো। মনে রাখিস কথাটা।
হঠাৎ রুবিনা বেগমের আসার শব্দ পেয়ে জনি নূরকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।

রুবিনা বেগম হাতে করে একটা বেত নিয়ে এলো। রুবিনা বেগম কাছে আসতেই জনি বলে উঠলো।
….ফুপি আমি তাহলে আজ আসি।কাল মা বাবাকে নিয়ে একেবারে বিয়ে করতে আসবো কেমন?

রুবিনা বেগম বললো।
….ঠিক আছে তুমি যাও।আমি তোমার ফুপার সাথে কথা বলে রাখবো। কাল তোমরা আসলেই বিয়ে পরিয়ে দেব। ততক্ষণে আমি এটাকে সোজা করছি। নূরের দিকে ইশারা করে বললো কথাটি।

জনি সয়তানি হাসি দিয়ে বললো।
…ঠিক আছে। বায়।
বলেই জনি বেড়িয়ে গেলো।

আর রুবিনা বেগম নূরের চুলের মুঠি ধরে টেনে নূরের রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা আটকে দিল। তারপর বেত দিয়ে নূরকে পেটাতে লাগলো। মারের চোটে নূর চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। তবুও রুবিনা বেগম থামছে না। মারতে মারতে বলতে লাগলো।
….বল তুই বিয়ে করবি? বল?

নূর যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে তবুও মুখ দিয়ে বলে।
…না কখনও না।তুমি আমাকে মেরে ফেললেও আমি এই বিয়েতে রাজি হব না।

এটা শুনে রুবিনা বেগম আরও মারতে থাকে।

রবি দৌড়ে এসে দরজা ধাক্কিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো।
….ছেড়ে দেও আমার আপুকে। ছেড়ে দেও প্লিজ।

প্রায় দশমিনিট পর রুবিনা বেগম হাঁপিয়ে ওঠে মারা বন্ধ করে দেয়।
নূর মার খেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় বেহুশের মতো পরে থাকে।
রুবিনা বেগম বলে উঠলো।
….বিয়েতো তোকে জনিকেই করতে হবে। কথাটা মনে রাখিস। আমি এখুনি যেয়ে তোর বাবাকে তোর কুকির্তির কথা বলছি।এসব শোনার পর তোর প্রতি যা একটু মায়া আছে তাও থাকবে না। তারপর সেও আর এই বিয়েতে মানা করবে না।
কথাগুলো বলেই রুবিনা বেগম নূরের রুম থেকে দরজা খুলে বেড়িয়ে গেলো। যাওয়ার আগে নূরের ফোনটাও সাথে নিয়ে গেল। যাতে নূর কাওকে ফোন দিতে না পারে। বাইরে এসে নূরের দরজায় তালা লাগিয়ে দিল। আর রবির দিকে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বললো।
…যা এখান থেকে এতো দরদ দেখাতে হবে না । নাহলে কিন্তু তোর অবস্থাও ওর মতোই হবে।
কথাটা বলেই রুবিনা বেগম নিজের রুমের দিকে গেল।

নিজের রুমে এসে রুবিনা বেগম নূরের বাবাকে ফোন করে নূরের ব্যাপারে আরো একটু বেশি করে বানিয়ে বললো। তারপর নূর আর জনির বিয়ের কথাও বললো। সব শুনে নূরের বাবা বললো। সে বাসায় আসছে। আর বাসায় এসেই এ ব্যাপারে কথা বলবে। রুবিনা বেগমও সায় দিল।

রবি নূরের কষ্ট কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না। কিন্তু ও কিছু করতেও পারছে না নূরের জন্য। রবি কিছু একটা ভেবে চুপিচুপি ওর মায়ের রুমের দিকে গেল। দরজাটা একটু ফাঁক করে দেখলো ওর মা রুমে নেই। মনে হয় ওয়াশরুমে গেছে। এটা দেখে রবি একটু খুশি হলো। ও পা টিপে রুমে ঢুকে নূরের ফোনটা খুজতে লাগলো। কিছুক্ষণ খোঁজার পর বেডের কাছে ছোট টেবিলের ড্রয়ারে নূরের ফোনটা পেল। রবি খুশি হয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দ্রুত ওখান থেকে বেড়িয়ে এলো।
এক দৌড়ে বাসার বাইরে এসে নূরের ফোন থেকে তানির নাম্বার বের করে ফোন দিল।

তানি ফোন রিসিভ করে বললো।
….হ্যাঁ নূর বল।

তানির কথায় রবি কেঁদে দিল। কান্না জড়িত কন্ঠে বললো।
….তানি আপু।নূর আপু,,,

রবির গলা শুনে তানি হকচকিয়ে উঠে চিন্তিত স্বরে বললো।
…হ্যালো রবি।কাদছিস কেন? আর নূরের কি হয়েছে?

রবি কান্না মিশ্রিত গলায় তানিকে সব খুলে বললো। সব শুনে তানি হতভম্ব হয়ে গেলো। মনে মনে ভাবছে, একটা মানুষ এতটা খারাপ কিভাবে হতে পারে?
রবি বললো।
…আপু তুমি জলদি আসো। নূর আপুকে বাঁচাও। নাহলে আপু মরে যাবে। ওরা কালই ওই জনির সাথে আপুর বিয়ে দিয়ে দিতে চাচ্ছে।

রবির কথায় তানিরও চোখে পানি চলে আসে। তানি হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে রবিকে আস্বস্ত করে বললো।
….তুই চিন্তা করিস না। আমি এখুনি আসছি। নূরকে কিছুই হতে দিবোনা আমি।
কথাটা বলেই তানি ফোন কেটে দিয়ে দ্রুত নূরের বাসার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেলো।

কিন্তু তানি এসেও কিছু করতে পারলো না। নূরের সৎ মা তানিকে ভেতরে ঢুকতে দিল না। দরজা থেকেই তানিকে তাড়িয়ে দিয়ে তানির মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিল। তানি অনেক চেষ্টা করেও ভেতরে ঢুকতে পারলো না। নূরের জন্য তানির অনেক টেনশন হচ্ছে। নাজানি কোন অবস্থায় আছে মেয়েটা।

তানির হঠাৎ আদিত্যের কথা মনে হলো। হ্যাঁ আদিত্য ভাইয়াকে বললে সে নিশ্চয় নূরকে এখান থেকে বাচিয়ে নিয়ে যাবে। কথাটা ভেবেই তানি ফোন বের করে আদিত্যের নাম্বারে ফোন করতে যাবে তখনি ওর মনে হলো। আদিত্য ভাইয়াতো এখন হসপিটালে আছে। উনাকে তো এখন ফোনে পাওয়া যাবে না। তানি আবার কিছু একটা ভেবে আবিরের নাম্বারে ফোন দিল।

আদিত্য হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে। আপাতত ওর শরীরে স্যালাইন চলছে। তাই ঘুম না আসলেও এমনি চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। পাশেই সোফায় আবির আর তাসির বসে আছে।
হঠাৎ আবিরের ফোনটা বেজে উঠলো। আবির ফোন বের করে দেখলো তানির কল। আদিত্যের যাতে ডিস্টার্ব না হয় তাই আবির ফোন নিয়ে কেবিনের বাইরে এসে রিসিভ করে কানে নিয়ে বললো।
….হ্যাঁ তানি বলো।

আবিরের কন্ঠ শুনে তানি কেঁদে উঠলো।
তানির কান্নার শব্দ শুনে আবির ভ্রু কুঁচকে উত্তেজিত হয়ে বললো।
….তানি। কি হয়েছে বেবি? কাদছো কেন?

তানি কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠলো।
….আবির। নূর,,,,

….নূর? কি হয়েছে নূরের?

…..আবির নূরকে বাচও প্লিজ।

….মানেহ্? কি হয়েছে? কান্না থামিয়ে ঠিক করে বলো আমাকে।

তানি কান্নাটা একটু থামিয়ে আবিরকে সবকিছু খুলে বললো। সবকিছু শুনে আবিরও চিন্তায় পড়ে গেল। একদিকে আদিত্য অসুস্থ, অন্যদিকে নূরের এই অবস্থা। আবির তানিকে আস্বস্ত করে বললো।
….তুমি চিন্তা করোনা। আমি কিছু একটা করছি। ওকে?

তানি মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….ঠিক আছে । কিন্তু যা করার একটু জলদি করো প্লিজ।

…ঠিক আছে।

আবির ফোন কেটে দিয়ে মনে মনে ভাবছে, কি করা যায় এখন? আদিত্যকে এখন এই ব্যাপারে জানালে নাজানি কেমন রিয়াক্ট করে? যদি আবার অসুস্থ হয়ে পরে? আবির কিছু একটা ভেবে আবার কেবিনে ঢুকলো।

#পর্ব-৩৬

দরজা খোলার শব্দে আদিত্য চোখ খুলে তাকালো। আবিরের দিকে তাকিয়ে দেখলো আবিরকে কেমন যেন চিন্তিত লাগছে। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
….কিরে? কি হয়েছে? তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?

আবির জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে বললো।
….কি আবার হবে? কিছুই না? তুই মনে হয় ভুল ভাবছিস?

আদিত্যর কেমন যেন সন্দেহ হলো। কিন্তু আপাতত আর কিছু বললো না।
আবির তাসিরের কাছে যেয়ে ওর কানের দিকে ঝুকে আস্তে করে বললো।
….একটু বাইরে চল। জরুরি কথা আছে।

তাসির মাথা ঝাকালো। তারপর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
…..তুই থাক আমরা একটু আসছি কেমন?
কথাটা বলেই ওরা দুজন কেবিনের বাইরে বেড়িয়ে গেলো।

এদের এসব কান্ড দেখে আদিত্যের সন্দেহ আরো বেড়ে গেল। মনে মনে ভাবলো, নিশ্চয় কিছু একটা হয়েছে। যেটা এরা আমার কাছ থেকে লুকাচ্ছে। কিন্তু কি?

কেবিনের বাইরে এসে আবির তাসিরকে সবকিছু খুলে বললো। সবকিছু শুনে তাসিরও প্রচুর চিন্তায় পড়ে গেল। আবির বলে উঠলো।
…..এখন কি করবো। ভাইকে কি এব্যাপারে বলব? ভাই যদি আবার হাইপার হয়ে অসুস্থ হয়ে পরে তখন?

তাসির বললো।
…তুই ঠিকই বলেছিস।আদিত্যকে এই মূহুর্তে কিছু না বলাটাই বেটার হবে। এক কাজ করি। আমি আর তুই যেয়ে আপাতত নূরকে হেল্প করি। তারপর পরের টা পরে দেখা যাবে। আদিত্য এখন মোটামুটি ঠিক আছে। এখন ওর কাছে না থাকলেও চলবে।

আবির মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….ঠিক আছে। তাহলে ভাইকে কোনো অযুহাত দেখিয়ে আমরা বেড়িয়ে পরি।

তাসির মাথা ঝাকিয়ে সায় দিল। তারপর ওরা দুজন আবার কেবিনে ঢুকলো। তাসির আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
….আদি একটা জরুরি কাজ পরে গেছে আমাদের একটু যেতে হবে বুঝলি। তুই ঘুমিয়ে থাক কেমন আমরা একটু পরেই চলে আসবো। কথাটা বলেই দুজন উল্টো ঘুরে তড়িঘড়ি করে বের হতে নিলেই আদিত্য পেছন থেকে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো।
….স্টপ দেয়ার রাইট নাও।

কথাটা শুনেই দুজন সাথে সাথেই নিজেদের চোখ বন্ধ করে নিল। যে ভয়টা পাচ্ছিলো সেটাই হলো।আদিত্যের নিশ্চয় ওদের ওপর সন্দেহ হয়েছে। এখনতো সবটা না জেনে কিছুতেই ছাড়বে না। ওদের ভাবনার মাঝেই আদিত্য আবার বলে উঠলো।
….এদিকে ঘোর দুজন।

আবির আর তাসির আদিত্যের দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। আবির জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে বললো।
….কি হয়েছে ভাই? ডাকলে কেন? আমরা তো বললামই। আমরা একটু পরেই চলে আসবো। তুমি এটুকু সময় একা থাকতে পারবে না?

আদিত্য একটা ধমক দিয়ে বললো।
…জাস্ট সাট আপ। আমাকে কি তোদের ছোট বাচ্চা মনে হয়? সত্যি করে বল কি হয়েছে?

আবির বললো।
….কি আবার হবে? বললামই তো ছোট্ট একটা কাজ আছে। সেটা করেই আমরা চলে আসবো।

আবির এবার রেগে যেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
….ডোন্ট ট্রাই মাই পেশেন্স আবির। এমনিতেই মাথা গরম হয়ে আছে। তাই জলদি করে বল হয়েছেটা ক?

আবির আর তাসির পরে গেছে মহামুশকিলে। আদিত্যকে এখন কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। তাসির বুঝে যায় আদিত্যকে এখন আর কোনো অযুহাত দেখিয়ে মানানো যাবে না। সত্যিটা না জানা পর্যন্ত ও ছাড়বে না। এসব ভেবে তাসির আমতা আমতা করে বললো।
…..আ আসলে আদি, নূর,,,

নূরের নাম শুনে আদিত্যর বুকের ভেতর ধক্ করে ওঠে। আদিত্য ঠাস করে উঠে বসে উত্তেজিত হয়ে বললো।
….নূ নূর? কি হয়েছে নূরের?

তাসির আদিত্যের কাছে যেয়ে কাঁধে হাত দিয়ে বললো।
….দেখ আদি আমার কথা শোনার পর তুই হাইপার হোস না প্লিজ। শান্ত থাকার চেষ্টা করবি বল।

আদিত্যর বুকের ভেতর কেমন ভয় লাগতে শুরু হলো। আমার নূরের কিছু হয় নি তো? আদিত্য তাসিরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….ডোন্ট স্কেয়ার মি তাসির। জলদি বল আ আআমার নূরের কিছু হয় নি তো?

তাসির একটা দম নিয়ে আদিত্যকে সবটা খুলে বললো। সবকিছু শুনে আদিত্যের চেহারার ভাবভঙ্গি পাল্টে গেল। চোখ দুটো আগ্নেয়গিরির লাভায় পরিণত হলো। চোয়াল শক্ত হয়ে কপালের রগ ফুলে নীল হয়ে গেলো। হাত দুটো শক্ত করে মুঠ করে নিল। আদিত্যকে দেখে আবির আর তাসির দুজনেই ভয় পেয়ে গেল। আদিত্যকে দেখে মনে হচ্ছে ও এখনই কোনো তান্ডব শুরু করে দিবে। আদিত্য আর একমুহূর্তও দেরি না করে হাতের স্যালাইনের পাইপটা একটানে খুলে ফেললো। তারপর একলাফে বেড থেকে নেমে বেরোনোর জন্য উদ্যত হলো। তাসির আর আবির দুজনেই আদিত্যকে ধরে বললো।
….আদি এইভাবে হাইপার হওয়া তোর জন্য ঠিক ন,,,

তাসিরের কথা শেষ হওয়ার আগেই আদিত্য তাসিরের কলার চেপে ধরে রাগী স্বরে বললো।
….টু হেল উইথ ইউর হাইপার। তোদের সাহস কি করে হলো আমার কাছে এই কথাটা লুকানোর? আমার নূর ওখানে নাজানি কি অবস্থায় আছে। আর তোরা পরে আছিস আমার হাইপার নিয়ে। তোদেরকে তো আমি পরে দেখে নিবো। আমাকে আগে আমার নূরের কাছে যেতে হবে। কথাটা বলেই আদিত্য তাসিরের কলার ছেড়ে দিয়ে দ্রুত গতিতে ওখান থেকে বেড়িয়ে গেলো।
আবির আর তাসিরও আদিত্যের পেছনে পেছনে দৌড়াল।

ফুল স্পিডে গাড়ী চালিয়ে নূরের বাসার সামনে এসে গাড়ি ব্রেক করলো আদিত্য। তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে নূরের বাসার দিকে দৌড়ালো। আবির আর তাসিরও নেমে আদিত্যের পেছন পেছন গেল।

তানি নূরের বাসার সামনেই বসে ছিল। আদিত্যদের আসতে দেখে দৌড়ে ওদের কাছে গেল। তানিকে দেখে আদিত্য তানির দিকে তাকিয়ে বললো।
…নূর কোথায় তানি? কি হয়েছে ওর?

তানি কান্না জড়িত কন্ঠে বললো।
….জানি না ভাইয়া। নূরের ছোট মা আমাকে ভেতরেই ঢুকতে দিল না। নাজানি কি অবস্থায় আছে নূর?

আদিত্য আর দেরি না করে নূরের বাসার দরজায় এসে অস্থির ভাবে কলিং বেল বাজালো।

একটু পরে নূরের ছোট মা এসে দরজা খুলে দিল। আদিত্যকে দেখে রুবিনা বেগম ভ্রু কুঁচকে বললো।
…..কে তুমি? এখানে কাকে চাই?

আদিত্য চোয়াল শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
…..নূর কোথায়?

রুবিনা বেগম তাচ্ছিল্যের সুরে বললো।
….বাহ্ এখন তো দেখছি ওই নষ্টা মেয়ের নাগড়রা বাসায়ও আসা শুরু করে দিয়েছে।

রুবিনা বেগমের এমন জঘন্য কথা শুনে আদিত্যের মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে উঠলো। আদিত্য নিজের দুই শক্ত করে মুঠ করে নিজের রাগকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। তাসিরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…..এই মহিলাটাকে আমার সামনে থেকে সরা তাসির। নাহলে আমি কি করবো আমি নিজেও জানি না।

এদিকে রিপা হা করে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। দ্যা সাদমান শাহরিয়ার আদিত্য কিনা ওদের বাসায় এসেছে এটা ওর বিশ্বাসই হচ্ছে না। রিপা আদিত্যের সামনে এসে, গালে হাত দিয়ে উচ্চস্বরে বলে উঠলো
….আপনি আমাদের বাসায়? আমারতো বিশ্বাসই হচ্ছে না ।
তারপর রুবিনা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো।
…কি করছো মা? উনার মতো নামি-দামি ব্যাক্তিকে কেউ এভাবে দরজায় দাড় করিয়ে রাখে? সরোতো এখান থেকে। আপনি ভেতরে আসুন না?
কথাটা বলেই রিপা আদিত্যকে ভেতরে নিয়ে এলো।

আদিত্য আবারও বলে উঠলো।
…..নূর কোথায়?

আদিত্যর মুখে নূরের নাম শুনে রিপার শরীর জ্বলে উঠে। মনে মনে ভাবে, উনার মতো লোক ওই ক্ষ্যাত মার্কা মেয়েটার জন্য এতো পাগল হচ্ছে কেন?

রুবিনা বেগম ঝাঁঝাল গলায় বলে উঠলো।
….কেন ওকে দিয়ে কি কাজ তোমার? নূর বাসায় নেই, ওর সাথে দেখা করতে পারবে না। চলে যাও এখান থেকে।

আদিত্যের রাগ এবার চরম পর্যায়ে উঠে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে এই মহিলাটাকে এখুনি গুলি করে মেরে ফেলতে।

হঠাৎ পেছন থেকে রবি দৌড়ে এসে বললো।
….মা মিথ্যে কথা বলছে। আপুকে মেরে ওর রুমে আটকে রেখেছে মা।

কথাটা শুনে আদিত্য অগ্নি চোখে রুবিনা বেগমের দিকে তাকালো। মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই ধ্বংস করে দিবে।

আদিত্যের চাহনি দেখে রুবিনা বেগমও প্রচুর ভয় পেয়ে গেল। ভয়ে শুকনো ঢোক চিপলো।

আদিত্য রবির দিকে তাকিয়ে বললো।
…..নূরের রুম কোনটা?

রবি আদিত্যকে নূরের রুমের সামনে নিয়ে গিয়ে দেখিয়ে দিলো।

আদিত্য দরজায় ঠকঠক করে কয়েকবার নূরের নাম ধরে ডাকলো।কিন্তু নূরের কোনো সাড়াশব্দ পেল না। আদিত্যের ভয় আরো বেড়ে গেল। আদিত্য দরজায় লাথি মেরে দরজা ভাঙ্গার চেষ্টা করলো। কয়েকবার লাথি মারার পর দরজাটা ভেঙে পরে গেলো।

আদিত্য দৌড়ে নূরের রুমে ঢুকলো। রুমে ঢুকেই আদিত্য স্তব্ধ হয়ে গেল। কিছুক্ষণের জন্য ওর পুরো পৃথিবীটায় থমকে গেল। নূর অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পরে আছে। শরীরের জায়গায় জায়গায় কেটে গিয়ে রক্ত জমে আছে। নূরের এমন মর্মান্তিক দৃশ্য আদিত্য কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না। ওর হৃদয়টা ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে।

আদিত্য এলোমেলো পায়ে নূরের কাছে এসে নিচে বসলো। কাঁপা কাঁপা হাতটা উঠিয়ে নূরের গালে রাখলো। এই প্রথম আদিত্যের চোখেও পানি চলে এলো। আদিত্য চোখের পাতা বন্ধ করতেই চোখের পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পরলো। আদিত্য দুই হাতে নূরের বাহু ধরে উঁচু করে বুকের ভেতর জড়িয়ে নিল। আহত কন্ঠে বিড়বিড় করে বললো।
….আই এ্যাম সরি প্রাণপাখি। আমি আবারও আসতে দেরি করে ফেলেছি। আমি পারিনি তোমাকে রক্ষা করতে। পারিনি।

একটু পরে আদিত্য নিজেকে একটু ঠিক করে নূরকে কোলে তুলে নিল। তারপর বাইরে বেড়িয়ে এলো।

নূরের অবস্থা দেখে তানিও কেঁদে দিল। আবি ওকে ধরে শান্ত করার চেষ্টা করলো।

রুবিনা বেগম তেড়ে এসে বললো।
….এই এই ওকে তুমি কোথায় নিয়ে যাচ্ছো হ্যাঁ? ভালোই ভালোই ওকে রেখে দেও বলছি। এসব নষ্টামি আমার বাসায় চলবে না। কাল ওর বিয়ে। ওকে রেখে যাও বলছি।

আদিত্য চোয়াল শক্ত করে অগ্নি চোখে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বললো।
….আপনার মতো নিকৃষ্ট মহিলার সাথে কথা বলতেও আমার রুচিতে বাঁধে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করুন যে আপনি একজন বয়স্ক মহিলা। নাহলে এতক্ষণ কথা বলার জন্য দুনিয়াতে বেঁচে থাকতেন না। তাই জীবনের মায়া থাকলে আমার সামনে সরে যান। এখন আমার নূরকে বাচানো বেশি জরুরি। আপনাকে তো পরে দেখে নেব।

আদিত্যের হুমকি শুনে রুবিনা বেগম কথা হারিয়ে ফেলে। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে আদিত্যের সামনে থেকে সরে যায়।

হঠাৎ তখনি ওখানে নূরের বাবা চলে আসে। নূরের বাবা আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
….কি হচ্ছে এখানে? আর কে তুমি? আমার মেয়েকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?

রুবিনা বেগম নূরের বাবার সামনে এসে নেকি কান্না করে বললো।
….দেখেছো তুমি? আমি বলেছিলাম না তোমার মেয়ের কীর্তি। দেখ নিজের চোখেই দেখ এখন। তোমার মেয়ের প্রেমিক এখন বাসায় এসেও আমাদের হুমকি ধামকি দেওয়া শুরু করেছে।

আদিত্য নূরের বাবার সামনে এগিয়ে এসে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো।
….তাহলে আপনিই সেই লোক? সত্যিই আপনাকে দেখার খুব শখ ছিল। আজ সেটা পূরণও হয়ে গেলো।

নূরের বাবা ভ্রু কুঁচকে বললো।
…মানে? কি বলতে চাও তুমি?

….বলতে তো অনেক কিছুই চাই। কিন্তু সেসব বলার সময় বা রুচি কোনোটাই আমার নেই। শুধু এটুকুই বলবো। দুনিয়াতে শুধু ছেলেমেয়েরাই কুলাঙ্গার হয় না, কখনও কখনও মা বাবাও কুলাঙ্গার হয়। আজ আপনাকে দেখে সেটা বাস্তবে প্রমানিত হলো। আপনি এটাতো দেখলেন যে নূরকে আমি নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু নূরের শরীরের আঘাত গুলো আপনার চোখে পরলো না। আর পরবেই বা কি করে। যে লোক এতবছরেও তার মেয়ের ভালো মন্দের খবর রাখেনি সে আজ কি করে সেটা করবে। আরে আপনি তো শুধু বাবা না। স্বামী নামেরও কলঙ্ক। আপনার স্ত্রীর শেষ চিহ্নটাকেই আপনি যত্ন করে রাখতে পারেন নি। তাহলে এটা কেমন ভালোবাসা আপনার স্ত্রীর প্রতি? আচ্ছা একটা কথা বলুন তো? নূরের জায়গায় যদি আপনার একটা ছেলে থাকতো। তাহলে তার সাথেও কি আপনি এসবই করতেন? নিশ্চয় করতেন না। কারণ তখন সে আপনার বংশের প্রদীপ হত তাইনা? নূরের এই অবস্থার জন্য ওর সৎ মায়ের থেকে আপনিই বেশি দায়ী। আপনারা ওকে নিজেদের চোখের কাটা ভাবেন তাইনা? কিন্তু শুনে রাখুন। এই নূরই আমার জীবনের আলো।আমার চোখের মনি। আমার বেচে থাকার উৎস। আমার সবকিছু। তাই নিয়ে যাচ্ছি ওকে আপনাদের কাছ থেকে অনেক দূরে।যেখানে ওর ওপর কোনো কালো ছায়া আমি পড়তে দেব না।
কথাগুলো বলেই আদিত্য নূরকে নিয়ে বেড়িয়ে যেতে লাগলো।

আদিত্যের বলা কথাগুলো শুনে নূরের বাবা স্তব্ধ হয়ে গেল। কোনো কিছু বলার ভাষা পেল না। মনে মনে ভাবলো, ছেলেটা তো ঠিকই বলেছে। আমি আসলেই কুলাঙ্গার বাবা।

রুবিনা বেগম নূরের বাবার দিকে তাকিয়ে বললো।
……কি হলো তুমি কিছু বলছো না কেন? নূরকে ওরা নিয়ে গেল তো।

নূরের বাবা রুবিনা বেগমের হাত ধরে আটকে দিয়ে বললো।
….যেতে দেও। ও ওই ছেলেটার কাছেই ভালো থাকবে। আমরা তো ওকে ভালো রাখতে পারিনি। কিন্তু ওই ছেলেটা ওকে সুখে রাখবে। তাই ওকে যেতে দেও বাঁধা দেওয়ার দরকার নেই।

নূরের বাবার কথা শুনে রুবিনা বেগম ভেতরে ভেতরে রাগে কটমট করলেও। উপরে নূরের বাবার সামনে চুপ করে রইলো। নূর সুখে থাকবে এই জিনিস টা যেন রুবিনা বেগমের সহ্যই হচ্ছে না। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ওখান থেকে চলে গেলো।

নূরের বাবাও একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজের রুমের দিকে গেল।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here