#ভালোবাসার রংমশাল
#পর্ব-৬
#সিফাতী সাদিকা সিতু
সিঁথি সাম্যকে দেখে দৌড়ে আসলো।ভাইয়া দেখুন না নিঝুম হঠাৎ করে পরে গেলো।আশফি স্যার না থাকলে ওর তো মাথা ফেটে যেতো।নিঝুম নিভু নিভু চোখে সাম্যর দিকে তাকালো।আশফির ঘাড় থেকে মাথাটা তুলতে চাইলো কিন্তু পারলো না।আশফি তার বাহু চেপে ধরে আছে।সাম্য এসে বললো,অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।সত্যি আপনি না থাকলে বড় কোনো অঘটন হতে পারতো।
আশফি বললো,ইটস ওকে।ওর শরীর বোধহয় বেশ দূর্বল তাই মাথা ঘুরে পরে গেছে।
আসলে কিছুদিন আগে ওর কপালে আঘাত লেগেছিল, পুরোপুরি সেড়ে ওঠে নি এখনো।আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি।
সিওর।আশফি নিঝুমকে ধরে দাড় করিয়ে দিলো।সাম্য কোলে তুলে নিলো।সিঁথিকে বললো ওর সাথে আসতে।
“আপনি কি ওর ভাই? ”
সাম্য মুচকি হেসে বললো,” হ্যাঁ।”
নাজনীন বেগম কাজ শেষে রান্নাঘর গুছিয়ে রাখছেন।শামসুন্নাহার এসে দাঁড়ালো।
ভাবী তোমার সাথে অনেক কথা আছে, তোমার ঘরে এসো।
দাঁড়া হাতের কাজ গুলো সেড়ে নেই। কি বলবি এখানেই বলনা?
না,এখানে বলবো না।তুমি আগে আসো তো,কাজ পরেও করতে পারবা বলে নাজনীন বেগমকে টেনে নিয়ে গেলেন।
ওরে বাবা আস্তে টান, পরে যাবো তো।কি এমন কথা তোর, মেজো?
কথা আমার নয়, তোমার নিঝুমের।
নাজনীন বেগম একটু অবাক হয়ে বললেন, নিঝুমের আবার কোন কথা বলবি?
বড় ভাবি, সবকিছু যেমন মনে হচ্ছে তা কিন্তু না।কোহিনূর নিঝুমকে মন থেকে ছেলের বউ হিসেবে মানতে পারেনি।
কি বলছিস এসব, মেজো?
ঠিকও বলছি।সেদিন সাম্যর হসপিটালে থাকা নিয়ে অনেক রাগারাগি করছিলো।এমনকি বলেছে, নিঝুমের কোনো কিছুতে ওর যায় আসে না।ছেলেকে নিঝুমের কাছ থেকে সরাতে পারলে যেন খুশি হয়।
নাজনীন বেগম চুপ করে গেলেন।কোহিনূর নিঝুমকে মেনে নিতে পারে নি!সাম্য কি জানে তার মায়ের মনের ভাব?কিছুই যেন বুঝতে পারছেন না তিনি।
নাজনীন বেগমকে চুপ করে থাকতে দেখে বললেন, দেখো ভাবী কোনদিন কি করে বসে কোহিনূর। তুমি তো ওকে চেনো,এই জোড়া সংসার কতোবার ভাঙতে চেয়েছিলো বলো।
কিন্তু নিঝুমকে কেন মেনে নিতে পারেনি ছোট?ওকে তো সে ভালোভাবেই চেনে। আমার নিঝুমের খারাপ কি আছে? আচ্ছা মেজো সাম্য কি কোহিনূরের কথা জানে?
জানি না গো।তবে সাম্যর হাবভাব কেমন যেন।নিঝুমকে কখনো হাঁক ডাক করতে দেখিনি।লজ্জা পায় এমনটা নয়,কেমন যেন একটা ভাব আছে ওর।কোহিনূর কি ওকে কিছু বলেছে?
আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না মেজো। তোর বড় ভাই জানতে পারলে কি হবে বলতো?উনি তো সব সরাসরি বলে বসবেন।আমার কাছে সাম্যর কোনো বিষয় তো সেভাবে চোখে লাগেনি।হসপিটালে ওর অবস্থা দেখেছি আমি,নিঝুমের জন্য খুব দুশ্চিন্তা করছিলো।
তা না হয় ঠিক আছে। তবে ওদের নতুন বিয়ে হয়েছে তা যেন বোঝাই যায় না। সাম্য সেই সকালে বেরিয়ে যায় রাতে ফেরে।মাঝে, মাঝে দুপুরে খেয়ে আবার চলে যায়।নিঝুমের সাথে ঠিক মতো কথাও বলতে দেখিনি। এসব কি ভাবার বিষয় নয় ভাবি?
আমি কি নিঝুমকে একবার জিজ্ঞেস করে দেখবো রে, সাম্য ওর সাথে কেমন আচরণ করে?
তোমার কি মনে হয় ভাবি, নিঝুম বলবে? বলার হলে এতোদিনে বলতো।মেয়েটাকে তো চেনো তুমি সহজে কোনো কথা বলার নয়।তার চেয়ে তুমি একটু ওদের কয়েকদিন লক্ষ্য করো সবকিছু ঠিকঠাক মনে হলে তারপর না হয় আমরা কোহিনূরের সাথে কথা বলবো।আর সাম্য যদি ঠিক না হয় তাহলে বলে তো লাভ হবে না।তখন বিষয়টা বড় ভাইয়ের কানে দিতে হবে।
এটা ছাড়া উপায়ও দেখছি না রে।আমার দুশ্চিন্তা হচ্ছে, নিঝুমের জীবন টা না এলোমেলো হয়ে যায়।তুই কোহিনূরকে কিছু বুঝতে দিবি না আমাকে যে এসব বলেছিস?
বুঝতে দেবো না জন্যই তো তোমাকে এখানে এনে কথা গুলা বললাম। এখন চলো রান্না ঘরে যাই, দুজনকে এখানে কথা বলতে দেখলে কোহিনূর সন্দেহ করতে পারে। যে ধড়িবাজ মহিলা!
★★
আসফি কফি হাতে ছাঁদের দোলনায় বসে আছে। তার মনের ভেতর যে প্রজাপতিরা উড়ে বেরানো শুরু করেছে!জীবন নিয়ে কখনো সে সিরিয়াস হয় নি।কখনো কোনো মেয়েকে নিয়ে এরকম মনের ভেতর সাড়া জাগেনি।অথচ আজ কেন এমন লাগছে তার।নিঝুম নামের মেয়েটিকে দেখার পর থেকে কিছুই ভালো লাগছে না তার।মেয়েটার বড় বড় চোখ দুটো যেন ঘায়েল করছে তাকে।মেয়েটিকে যখন সে ধরেছিলো তার বুকের ভেতর শিহরণ জেগেছিল। নিঝুম যখন তার ঘাড়ে মাথা রেখে ছিলো তখন তার সুখ সুখ অনুভূতি হয়েছিলো যেন এমনটাই সে চায়। ভার্সিটি থেকে ফেরার পর আসফির ঠোঁটে সুক্ষ্ম হাসি ফুটে আছে!
নিঝুমের পাশে বসে নাজনীন বেগম রাগী চোখে তাকিয়ে আছেন।নিঝুম মাথা নিচু করে আছে।সাম্য দাঁড়িয়ে আছে একপাশে।
তোকে যেতে দিয়েছিলাম কারণ ভেবেছি তুই সুস্থ আছিস। বাইরে গেলে মনটাও ভালো হবে।তোর যে শরীর খারাপ লেগেছে তা আমাকে জানিয়েছিস?
নিঝুম কোনো কথা বলছে না।মামনি খুব রেগে গেছে।
কি হলো চুপ করে আছিস কেন?
যাওয়ার পর হঠাৎ শরীর খারাপ লেগেছিলো,আমি তো বুঝতে পারিনি এমনটা হবে,ভয়ে ভয়ে বললো নিঝুম।
শরীর খারাপ লেগেছে বাড়ি চলে আসতি বা সাম্যকে ফোন করে ডাকতে পারতি?
নিঝুমের মনে হলো,সে বা সিঁথি কেউ সাম্যকে ডাকেনি তাহলে সাম্য তখন কিভাবে সেখানে উপস্থিত হয়েছে!নিঝুমের কেমন যেন খটকা লাগলো।
আমি খাবার দিয়ে যাচ্ছি, খেয়ে ঘুমিয়ে পরবি।
নিঝুম মাথা নাড়ালো।
নাজনীন বেগম চলে গেলে নিঝুম সাম্যর দিকে তাকিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করলো,”আপনি কিভাবে জানলেন আমি অসুস্থ হয়েছি?”
জানাটাই দেখছি ভুল হয়ে গেছে। তা না হলে ওই লোকটার ঘাড়ে মাথা রেখে দিব্যি সুস্থ হয়ে যেতে!
ছি!আপনার মানসিকতা এতো জঘন্য কেন,আমি কি ইচ্ছে করে ওনার ঘাড়ে মাথা রেখেছি?উনি আমারদের টিচার হন আপনার মতো ফালতু লোক নন।
সাম্য রেগে কটমট করে তাকালো। হিসহিসিয়ে বললো,তোমার মতে বেয়াদব মেয়েদের কাছে ওনারা ভালই হবে। আমি ফালতু কারণ আমাকে দিয়ে তো সুবিধা করতে পারো না।
নিঝুমের চোখ দিয়ে পানি ঝরলো।সাম্য সবসময় তাকে আঘাত দিয়ে কথা বলে।অথচ কিছুক্ষণ আগেই তাকে কতো যত্নে সারাটা পথ এনেছিলো।সবকিছু কেমন গোলমেলে লাগে।আগের সাম্যই তো ঠিক ছিলো বিয়ের পর কেমন দুই ধরনের আচরণ করছে!
সাম্য বেলকনিতে এসে দাঁড়ালো।এতো কেন রাগ হচ্ছে তার!
“হৃদয় ডেকেছে তোমায়,আসবে কাছে তুমি?
এক গুচ্ছকদম হাতে থাকবো দাঁড়িয়ে,
মন ভেজাবো তোমার, আমার ভালোবাসার বৃষ্টিতে!
শান্তা কাগজটা বুকে জড়িয়ে ধরলো। শাওলী তাকে এই কথা গুলো লিখে দিয়েছে।সাম্যকে সে এই কথা গুলো বলবে।আগামিকাল সে সাম্যর সাথে দেখা করবে।কাল সে শাড়ি পরবে।উত্তেজনায় বারবার আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে পরখ করছে। কিশোরী মেয়েদের মতো পাগলামি করছে সে।
চলবে…