#ভালোবাসার রংমশাল
#পর্ব-৮
#সিফাতী সাদিকা সিতু
সাম্য ঘরে ঢুকে নিঝুমকে ঘুমন্ত অবস্থায় পেলো।অনেক রাতে ফিরলো আজ।শান্তার কারনে মন,মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। এখন নিজেকেই তার অসহ্য লাগছে। আজ যেন বন্ধুত্বটাও হুমকির মুখে পরলো।সম্পর্ক,ভালোবাসা, মায়া এগুলো তার কাছে এখন ভয়ের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।তার প্রতি শান্তার এই অনুভূতি কখনো বুঝতে পারেনি সে।এভাবে কি ভালোবাসা হয়!সে শান্তাকে বন্ধু, বোন এসব সম্পর্ক ছাড়া অন্যকোনো সম্পর্কে ভাবতে পারবে না।ভালোবাসা তার বুকে খড়কুটো হয়ে এসেছিলো, যা ভেসে যাচ্ছে দূর-দূরান্তে!সাম্য নিঝুমের ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকালো, সেই সাথে বুকের ভেতর সুক্ষ্ম ব্যাথা টের পেল। এ ব্যাথা নিজের ভালোবাসাকে বুকের ভেতর সমাধিস্থ করার!যা কখনো ফুরাবার নয়।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিড়বিড় করলো,”মায়াবী মোহনা ঢেউয়ের গতিতে হয়ে যায় মায়াবিনী? মৃদুমন্দ ভালোবাসা তবুও দেয় উঁকি হৃদয়ে।!”
আশফি জানালার ধারে গিটার হাতে বসে রয়েছে।বাইরের ঝুম বৃষ্টি উদাস করে দিচ্ছে তাকে,গান গাইতে ভুলিয়ে দিচ্ছে। আনমনা মন বেহায়ার মতো নিঝুমের ভাবনায় মত্ত।এলোমেলো বাঁকা পথের জীবেনে হঠাৎ যেন নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে!
মিনারা বেগম দরজায় দাঁড়িয়ে বেশকিছু সময় ধরে ছেলেকে লক্ষ্য করছেন। আশফিকে কেমন অচেনা লাগছে।আজ ছুটির দিন তবু আশফি বাইরে বেরোয়নি, বন্ধুদের সাথে দেখা করেনি।কেমন শান্ত একটা ভাব এসেছে।কফির মগটা আশফির সামনে রেখে বললেন, এতো কি ভাবছিস?
আশফি বাইরে থেকে চোখ না সরিয়ে বললো,কিছু ভাবছি না,বৃষ্টি দেখছি।
মাকে মিথ্যা বলতে হবে না,মা সব বুঝতে পারে।
জানি তো,তবুও আমাকে জিজ্ঞেস করতে আসো কেন?
ওমা,জানতে হবে তো আমাকে, মেয়েটা কে?
আশফি মনে, মনে একটু চমকালো।তবে সেটা প্রকাশ না করে পূর্বের মতো ভাব বজায় রেখে কফিটা হাতে নিলো।
বলনা,তোর বাবা শুনলে কিন্তু খুব খুশি হবে।
কি শুনতে চাচ্ছো তুমি?
যে আমার ছেলেটাকে এতো ভাবুক,শান্ত বানিয়ে দিয়েছে, তার কথা বল।
তোমার স্বামী!
বললেই হলো।আগেও তোর বাবা তোকে জোড় করে কাজে ঢুকিয়ে দিয়েছিলে কই তখন তো এমন হসনি।দুদিন বাদেই কাজ ছেড়ে দিয়ে কক্সবাজার ঘুরতে গেছিস।এখন এতো বাবার কথা শুনছিস বলে তো মনে হয়না!
আচ্ছা, কথা শুনলেও দেখি দোষ।তোমাদের কি বলে বিশ্বাস করাবো , বলোতো?
নামটা বল, তাহলে বিশ্বাস হবে।
আশফিকে চুপ করে থাকতে দেখে মিনারার মনটা খারাপ হলো।ছেলেটা কেমন দূরে সরে গেছে।তার সাথে মন খুলে দুটো কথাও বলতে পারেন না এখন।
মিনারা বেগম চলে যেতে ধরলে আশফি বলে উঠলো, মা গান শুনবে?
ছেলের এমন কথায় প্রচন্ড খুশি হলেন। কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ বসে পরলেন আশফির পাশে।আশফি তার গিটারে টুং,টাং আওয়াজ তুললো।
***
নিঝুমের আজ শেষ পরিক্ষা ছিলো।তাই বান্ধবীদের সাথে একটু আড্ডা,ফুচকা খাওয়া এসবে কারণে দেরী হলো বাড়িতে ফিরতে। ফিরতেই ডাক পরলো তার সামির রহমানের ঘরে।মনিবাবার ভাষ্যমতে সাম্যর সাথে তাকে আগামিকাল গ্রামের বাড়িতে যেতে হবে।কাগজপত্র গুলো ঠিকঠাক করতে।গ্রামের কথা শুনে আনন্দ হলেও সেই বিভীষিকাময় স্মৃতি গুলো মাথা চারা দিয়ে উঠলো।অনেকদিন গ্রামে যায় না।সেই যে মামনির সাথে এসেছিলো এখানে।এরপর আর যাওয়া হয়নি।কিন্তু সাম্যর সাথে যেতে হবে শুনেই তার একটুও ভালে লাগছিলো না।উপায় নাই, না বলার।মনিবাবাকে কিছুই বলতে পারবে না সে।সাম্য যখন তার স্বামীর তকমাটা পেয়েছে তখন সেই তো সাথে যাবে! এতে খরাপ বা ভালো লাগার কোনো অপশন নেই।
নিঝুম ঘরে ঢুকেই প্রচন্ড লজ্জায় পরে গেলো।সাম্য শুধু একটা টাওয়াল পরে তার আলমারি গোছাচ্ছে। নিঝুম ভেবে পেলো না তার এখন কি করা উচিত।ঘর ছেড়ে চলে যাবে কি?সেও তো বাইরে থেকে ফিরলো এর মধ্যে সুপ্তির ঘরে গেলে মামনি নানা ধরনের প্রশ্ন করবে।সেসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হিমসিম খেতে হয়। সাম্যকে এড়িয়ে সে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।
দরজা বন্ধের শব্দে সাম্য চমকে উঠে তাড়াতাড়ি পোশাক পরে নিলো।এই মেয়েটা আর আসার সময় পেলো না!এখন নিজের ঘরেই তাকে আঁটসাঁট হয়ে থাকতে হয়।নিঝুম গোসল সেড়ে নেয়ার পর, পরলো মহা ঝামেলায়।সাম্যর কারণে জামাকাপড় না নিয়েই ওয়াশরুমে ঢুকেছে। এখন বেরোবে কি করে সে?নিঝুমের মনে হলো সাম্যর মাথায় দুম করে দুটো কিল বসিয়ে দিতে!এভাবে কতোক্ষণ সে ওয়াশরুমে থাকবে?মামনি ডাকতে আসলে লজ্জায় পরে যেতে হবে।ভেজা টাওয়ালটা কোনরকম পেঁচিয়ে পরলো।হালকা ভাবে দরজাটা মেলে শুধু মাথাটা বের করে দেখার চেষ্টা করলো,সাম্য এখনো ঘরে কিনা?
“অভাগা যেদিকে যায়,সাগরও শুকিয়ে যায়।” কথাটা তার জন্য বেশি প্রযোজ্য বোধহয়! দেখলো,
সাম্য বিছানায় শুয়ে পা দুলিয়ে ফোনের ওপর ঝুকে আছে।
এখন কি করবে সে,সাম্যকে ডাকবে?ইশ,লজ্জায় মরে যাবে সে।কিন্তু না ডেকেও তো উপায় নেই।চোখ, মুখ খিঁচে দরজায় শব্দ করলো।অথচ সাম্যর কানে যাচ্ছেই না।এদিকে আঙ্গুলে ব্যাথা পাচ্ছে। এবার আর একটু জোরে শব্দ করলো।
সাম্য ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো।
আমার জামাকাপড় গুলো একটু দিবেন,নিতে ভুলে গেছি?নিঝুম একটু জোরে বললো।
সাম্য কি করবে ভেবে পেলো না।আসলেই ফাজিল মেয়ে, কেউ জামা কাপড় না নিয়ে ওয়াশরুমের যায়?বিরক্তি নিয়ে উঠে কাবার্ড থেকে নিঝুমের কাপড় গুলো নিয়ে ওয়াশরুমের সামনে গেলো।
আর একটু এগিয়ে আসেন! কাপড় গুলো নিতে নিঝুমকে সম্পূর্ণ হাত বের করতে হবে তাই সে বললো।
সাম্য কপাল কুঁচকে ফেললো। এই মেয়ে মোটেও সুবিধার না।তাকে এভাবে ডাকছে কেন?
সাম্য আরো কিছুটা এগিয়ে গেলো।
নিঝুম ঝট করে কাপড় গুলো নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।
তার বুক ধুকপুক করছে,এমন পরিস্থিতিতে পরতে হয় কেন তাকে?
সকালে উঠেই সবকিছু গুছিয়ে নিলো নিঝুম।মামনি খাইয়ে দিলো তাকে।অনেক বোঝালেনও তাকে,একদম মন খরাপ যাতে না করে।কোহিনূর বেগম তার ঘর ছেড়ে বেরোলেন না।নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলেন।সামির সাহেবের ওপর কথা বলতে পারেন না।সাম্য অনেক বেশি জড়িয়ে পরছে নিঝুমের সাথে।নিঝুম সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সাম্যর সাথে বেরোলো সেই চিরচেনা গ্রামের উদ্দেশ্যে।
চলবে….