#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব: ১৮
দুপুরে খেয়ে একটু রেস্ট নেওয়ার নাম করে ৩ ঘন্টা ঘুমিয়েছি। বেশি ঘুমোনোর ফলে চোখ-মুখ ফুলে গিয়েছে।নির্ভীক ভাইয়ার কথা মনে পড়তেই লাফ দিয়ে উঠে বসলাম।
আমি: উফ্ শীট! ভাইয়া তো বিকেলে ঘুরতে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন আর আমি মরার মতো ঘুমোচ্ছি।যাই দেখি উনি কোথায়।
বেড থেকে নেমে ফ্রেশ হয়ে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসলাম। আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখি আয়নাতে গোলাপি রঙের একটা স্টিকি নোট লাগানো। তাতে ছোট ছোট করে নীল কালি দিয়ে লিখা আছে,
” দ্যাটস্ নট রাইট,ঘুমন্ত রুপোসী।১ঘন্টা তোমার পাশে বসে থাকলাম তুমি বুঝতে পারলেনা আমি তোমার পাশে আছি?কেন?কেন এত অবুঝ তুমি?আমার অভিমান আজ সত্যি পাহাড় ছুয়েছে।তোমাকেই সেই পাহাড় ভাঙ্গতে হবে।আমাকে দিন-রাত ঘোরের মধ্যে রেখে তুমি এতটা কেয়ারলেস কিভাবে হতে পারো?”
লিখাটা পরে আমি পুরো থ।নির্ভীক ভাইয়া আমার উপর এত অভিমান করলেন?উনি আমাকে ডাকলেন না কেন?তখন খুব হাঁচি পরছিল তাই একটা মেডিসিন খেয়েছিলাম কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি এতটা ঘুম পাবে।এখন কি করবো?কি করে উনার অভিমান ভাঙ্গাবো?যাই উনার সাথে কথা বলে সব ঠিক করে নেই।
নির্ভীক ভাইয়ার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।ভাবছি ভেতরে যাব কি না। আগে কখনও উনার রুমে যাইনি।কেমন একটা দ্বিধায় পরে গিয়েছি। উনি অভিমান না করলে হয়ত এই দ্বিধা থাকতো না।উনার লিখা চিরকুট পড়ার পর থেকে মনের মধ্যে সব কিছু অস্বাভাবিক লাগছে।আর কিছু না ভেবে দরজায় টোকা দিলাম কারন দরজা ভেতর থেকে লাগানো।দুই বার টোকা দিতেই নির্ভীক ভাইয়া দরজা খুলে বেরিয়ে এসে বাহির থেকে দরজা লাগিয়ে হন হন করে বেড়িয়ে গেলেন।আমার দিকে তাকালেন ও না। আমি উনাকে পেছন থেকে ডেকে বললাম,
আমি: নির্ভীক ভাইয়া?কোথায় যাচ্ছেন?আমার কথা শুনুন প্লিজ।
উনি থামলেন না।আমি আরও ভাল করে বুঝলাম উনি কতটা অভিমান করেছেন আমার উপর।একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে নিচে আসলাম।নিচে এসে দেখি আঙ্কেল আর নির্ভীক ভাইয়া কিসব পেপারস ফাইল হাতে নিয়ে কথা বলছেন।আমাকে দেখে আঙ্কেল বললেন,
আঙ্কেল: অন্ত মা,বিকেলে নাস্তা করেছো?কমলা? অন্তকে নাস্তা দাও।
আমি: না, না আঙ্কেল এখন আমি নাস্তা করবোনা।এখনই মাগরিবের আজান হবে।(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে সোফায় বসতে বসতে)
আঙ্কেল: ওকে।চাঁদ তুমি তাহলে এই পেপার গুলো ভাল করে পড়ে সাইন করে সোনালী কে পাঠিয়ে দিও আর মি.দীনেশের সাথে একবার ফোনে কথা বলে উনাকে আমাদের ডিল সম্পর্কে জানিয়ে দিও।
নির্ভীক: ওকে বাবা।(পেপার গুলো গোছাতে গোছাতে)
আজান হয়ে গিয়েছে তাই রুমে এসে নামাজ পড়ে নিলাম।নামাজ শেষে আর বাহিরে গেলাম না জানি নির্ভীক ভাইয়া এখন ব্যস্ত আছেন এখন উনাকে বিরক্ত না করাই ভাল।বই নিয়ে পড়তে বসলাম।কিছুক্ষণ পড় কমলা খালা হাতে একটা প্লেট নিয়ে রুমে আসলো।খালাকে একদম গ্রামের শ্বাশুরীদের মতো দেখাচ্ছে।সবুজ প্রিন্টেড শাড়ি,দুই হাতে দুটো চুড়ি, মাথায় চপ চপে করে তেল দেওয়া আর পান খেয়ে মুখ লাল করে ফেলেছে।আমার তাকিয়ে থাকা দেখে কমলা খালা বললো,
কমলা:কি মা কি দ্যাহো ওমন কইরা?
আমি: তোমাকে দেখছি।খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে।
কমলা: কি যে কও মা।আমার মতো কালা মানুষ রে তোমার সুন্দর লাগতাছে?(হালকা লজ্জা পেয়ে)..এই লও তোমার জন্যি পেয়ারা মাখা আনছি।(হাতের প্লেট আমার হাতে দিয়ে)
পেয়ারা মাখা আমার খুব ভাল লাগে তাই নিয়েই খেতে লাগলাম।
আমি: উম খালা,খুব টেস্টি হয়েছে।তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন?.. বস। (খালার হাত ধরে বেডে বসিয়ে দিলাম)
খালা: তোমার পছন্দ হইছে?
আমি: হুম,খুব।তুমিও খাও।(হাতের প্লেট এগিয়ে দিয়ে)
কমলা: না মা আমি খামুনা তুমি খাও,আমি পান খাইতেছি।
আমি: জানো খালা?আমার দাদিও তোমার মতো পান খেয়ে মুখ লাল করে রাখতো।(মন খারাপ করে)
কমলা:হ আম্মাজানের কাছেই আমি পান খাওয়া শিখছি।আম্মাজান আমারে কইতো,”কমলারে আমারে দুইডা পান সাজাইয়া দেতো “।আমি দুইডা পান সাজাইয়া দিলে একডা পান আমারে দিয়া কইতো এইডা তুই খা। ওমন কইরা খাইতে খাইতে আমিও পান খাওয়া শিইখা গেলুম।
আমি: তুমি দাদিকে চিনতে?(অবাক হয়ে)কিভাবে চিনলে?..প্লিজ আমাকে গল্প শুনাও।(খালার পাশে বসে)
কমলা:আম্মাজানই আমারে আর সাগরের আব্বারে এই বাড়িতে আনছিল।তোমাগোরে গেরামের বাড়িতো তানোর। আমি তোমাগো গেরামেরই মানুষ। আগুন লাইগা আমরা সবকিছু হারাইয়া পথে বইছিলাম না ছিল থাকবার জায়গা না ছিল টাকা পয়সা।আম্মাজান সেইদিন আমারে আর সাগরের আব্বারে এক কাপড়ে এইহানে আনছিল।তহন বড় বাবা ৭দিনের বাচ্ছা।ভাবি একা সামলাইতে পারতোনা। আমি আইসা বড় বাবারে দেইখা বড় করছি।আমার সাগর মস্ত বড় ডাক্তার হইছে রে মা।(কাঁদতে কাঁদতে)
আমি:একি খালা তুমি কাঁদছো কেন?(চোখের পানি মুছে দিয়ে)আমি তোমার কথা বুঝতে পারছিনা।তুমি আর জাফর চাচা স্বামী-স্ত্রী?
কমলা: হ রে মা।(কান্না থামিয়ে)
আমি: তাহলে নির্ভীক ভাইয়া তোমাকে খালা আর জাফর চাচাকে চাচা বলেন কেন?(অবাক হয়ে)
কমলা:আর কইও না মা,ছুডু বাবা সেই ছুডুকাল থাইকা আমারে খালা আর সাগরের আব্বারে চাচা ডাহে।আমি নাহি তার মায়ের বন আর সাগরের আব্বা নাহি তার বাপের ভাই। (হালকা হেসে)
আমি: ওওওও।আর সাগর ভাইয়া কোথায়?
কমলা: আগুনে পুইরা মইরা গেছে।(শূন্যে দৃষ্টি রেখে)
আমি:কি?কিন্তু তুমি যে বললে সাগর ভাইয়া বড় ডক্টর হয়েছে?
কমলা:হ হইছে তো।আমার বড় বাবাই আমার সাগর।জানো মা বড় বাবা আমারে মা কইয়া ডাহে।(খুশি হয়ে)
আমি:রাযীন ভাইয়াই সাগর ভাইয়া?
কমলা:হ।সেইদিন আগুনে পুইরা আমার সাত রাজার ধন সাগর মইরা গেল।আমি পুইরা পাগল হইয়া গেছিলাম।সারাদিন চিল্লাইয়া কইতাম আমার সাগররে তোমরা আইনা দাও।একদিন আম্মাজান আমারে এই বাড়িতে আইনা বড় বাবারে কোলে দিয়া কইলো এই দ্যাখ কমলা এইডা তোর সাগর।ভাইজান আর ভাবি বড় বাবারে আমার হাতে তুইলা দিছে।এদের মতো ভালা মানুষ দুনিয়াত আর নাইরে মা।এড়াই আমাগো সব। সেইদিনের পর থাইকা আজ পুরাই ৩০ টা বছর আমি সাগরের আব্বা এইহানে আছি কোনোদিন এড়া আমাগো সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি,ভাই ভাবি কইছে আমরা এই বাড়িরই লোক,আমাগো পরিচয় দিছে। পরথম পরথম কত ভুল করছি শহরের হালচাল বুঝিনি কিন্তু ভাবি আমারে কোন দিন বকে নি উল্টা আমারে সব কাজ বুঝাইয়া দিত।এই দ্যাহো মা, এই সোনার চুড়ি এই গলার মালা ভাবি আমারে বানাইয়া দিছে।আমি কইছিলাম এইগুলা লাগবোনা।ভাবি কইছিল তুমি আমাগো বাড়ির লক্ষ্মী তোমার গায়ে সোনা থাকবোনা তাই কহনও হয় নাহি?
আমি:হুম বুঝলাম।কিন্তু তুমি আর চাচা আর বাচ্ছা নাওনি?তোমরা নিজেরাও তো আলাদা সুখের সংসার তৈরি করতে পারতে?
কমলা: সাগর হওয়ার পর আমার এক মরণের ব্যাধি হইছিল রে মা।ডাক্তার কইছে আমি আর কোনোদিন মা হবার পারুম না সাগর মরার পর সাগরের আব্বা ছাড়া এই দুনিয়ায় আমার আর কেউ আছিলো না আমি তাও মিনতি কইরা সাগরের আব্বারে আরেকটা বিয়া করবার কইছিলাম।তার এক কথা আমি আর কাওরে বউ বানাবার পারুম নারে সাগরের আম্মা।এইহানে আসার পর এড়াই আমাগো সব। তয় সাগরের জন্যি মনডা আনচান করে হাজার হইলেও মা তো।(একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে)
আমি সব শুনে খালা-চাচার জন্য ভালও লাগছে আবার খারাপ ও লাগছে তবে খারাপ লাগাকে প্রশ্চয় দিলামনা। আঙ্কেল-অ্যান্টির প্রতি শ্রদ্ধা দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে উনারা সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষদের কিভাবে আপন করে নিয়েছেন।আমি যেন চোখের সামনে অদৃশ্য কিন্তু শক্তিশালী বন্ধন দেখতে পাচ্ছি।এই বন্ধন ভেদ করা এই পরিবারের কারও পক্ষে সম্ভব নয়।দোয়া করি সারাজীবন এই বন্ধন অটুট থাকুক।
খালার মন খারাপ হয়তো সাগরকে মিস করছে।আমি প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য বললাম,
আমি: খালা চলোনা ছাদে যাবো।আমি কখনও এই বাসার ছাদে যাইনি।
কমলা: গেছো রে মা গেছো।তোমার তো দেখি ছুডুবেলার কিছু মনে নাই।অবশ্যি তুম খুব ছুডু আছিলা।তয় চাঁদ বাবার ল্যাজ আছিলা তুমি।সারাদিন খালি চাঁদ বাবার পিছনে লাইগা থাকতা।চলো তোমারে ছাদে লইয়া যাই।
ছাদে এসে দেখি অনেক ফুল গাছ, ছাদের মাঝখানে একটা বড় দোলনা আর এক কোণে বেতের চেয়ার-টেবিল পাতা আছে।আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি আকাশ জুড়ে তারার মেলা।খুব সুন্দর পরিবেশ। আমি যেয়ে দোলনায় বসলাম খালাকেও টেনে বসালাম।
আমি:আচ্ছা খালা,তুমি বললে ছোটবেলায় আমি নির্ভীক ভাইয়ার লেজ ছিলাম।
কমলা: হ আছিলা তো।
আমি: আমি কি উনাকে খুব বিরক্ত করতাম?
কমলা:না চাঁদ বাবারে একটুও বিরক্ত করতানা তয় চাঁদ বাবা ইস্কুলে চইলা গেলে তুমি কান্নাকাটি কইরা বাড়ি মাথায় তুলতা।চাঁদ বাবা আবার ফিইরা আইলে ঐযে কোলে উঠতা আর নামতা না।ছুডু বেলা থাইকাই তোমাগো খুব মিল।(হেসে)
আমি:আমি এত কোলে চড়তাম উনি বিরক্ত হতেন না?
কমলা:না আমি কহনও দেহিনি।তয় চাঁদ একবার তোমারে খুব মারছিল।সেইদিন তোমার খুব জ্বর আইছিল।আমরা জানিনা চাঁদ কান তোমারে মারছিল।তয় তোমারে মাইরা চাঁদ ২দিন ভাত খাইছিলনা ইস্কুলেও যায়নি।
আমি: উনি কি খুব রাগী?হয়ত আমি এমন কিছু করেছিলাম যার জন্য উনি রেগে গিয়েছিলেন।
কমলা:হ রে মা, চাঁদ বাবার খুব রাগ। রাগ উঠলে তার মাথা ঠিক থাকেনা কিন্তু খুব ভালা মানুষ। তোমরা চইলা যাওয়ার পর তার রাগ জেদ বাড়ছে বই কমেনি। ওহন আমার ছুডু বাবা অন্যরহম হইয়া গেছে।
আমি কিছু বলবো তখনই গাড়ির হর্ন বাজলো।কমলা খালা উঠে বললেন,”ভাবি আইছে আমি ওহন নিচে যাই তুমি যাইবা?একা ভয় পাবা নাতো?”
আমার এখানে খুব ভাল লাগছে একটুও ভয় করছেনা তাই খালাকে যেতে বললাম।খালা যাওয়ার পর দোলনায় পা তুলে হেলান দিয়ে বসলাম।আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা দেখছি। লাল নীল আলো জ্বালিয়ে সাটেলাইট উড়ে যাচ্ছে।দক্ষিণের হালকা বাতাসে একটু শীত করছে কিন্তু খুব ভালো লাগছে। হঠাৎ গান গাইতে ইচ্ছে করলো তাই গলাটা ঝেরে নিয়ে ধীর কন্ঠে একটা গান ধরলাম,
“সখী,ভাবনা কাহারে বলে।
সখী, যাতনা কাহারে বলে।
তোমরা যে বলো দিবস-রজনী
‘ভালোবাসা’ ‘ভালোবাসা’____
সখী,ভালোবাসা কারে কয়!সে কি
কেবলি যাতনাময়।”
পেছনে নির্ভীক ভাইয়ার উপস্থিতি টের পেয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখি নির্ভীক ভাইয়া দুইহাত বুকে গুজে দেয়ালে হেলান দিয়ে আমার দিকে কেমন ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।আমি কিছুটা লজ্জা পেয়ে উঠে দাঁড়ালাম।উনি একপা একপা করে আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন।তারপর বললেন,
নির্ভীক:এত তাড়াতাড়ি কিভাবে বুঝলে আমি পেছনে আছি?
উনার কথা শুনে আমি অবাক।তাই আমি উনাকে প্রশ্ন করলাম,
আমি: আপনি কি করে জানলেন আমি আপনাকেই আন্দাজ করেছি?(অবাক হয়ে)
উনি হালকা হেসে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন।আমি উনার থেকে চোখ নামিয়ে নিলাম। তারপর আবার উনার দিকে একটু তাকিয়ে মাথা নিচু করে বললাম,
আমি:ভাইয়া আমি সরি।হাঁচির ট্যাবলেট খেয়ে শুয়ে ছিলাম তাই আমার খুব ঘুম পেয়েছিল, আমি বুঝতে পারিনি আপনি পাশে ছিলেন।
নির্ভীক: ইটস্ ওকে। তবে এখনও যদি বুঝতে না পারতে আমি খুব রাগ করতাম,সিরিয়াসলি।
তারপর উনার দুহাত দিয়ে আমার দুগাল ধরে আমার কাছে এসে ফিসফিস করে বললেন,
নির্ভীক:বিকেলের ব্যাপারটা আমি একদমই মানতে পারছিনা, অন্ত।তুমি কেন আমার উপস্থিতি টের পেলেনা?কেন আমার শরীরের ঘ্রাণ পেয়েও তুমি নড়ে চড়ে উঠলেনা?তোমার হাতে হাত ছোঁয়ালাম তুমি কেন ঘুমের মধ্যে আমার হাত আকড়ে ধরলেনা?তুমি খুব খারাপ অন্ত। তুমি ভালোবাসতে জানোনা।
একদমে কথা গুলো বলেই আমার গাল ছেড়ে দিলেন। তারপর দোলনায় বসতে বসতে বললেন,
নির্ভীক: কোন ব্যাপার না আমি তোমাকে শিখিয়ে দিব।
বলেই একটা মিষ্টি হাসি দিলেন।তারপর আমার হাত ধরে টেনে উনার পাশে বসিয়ে দিলেন।আর বললেন,
নির্ভীক:তোমাকে যদি বলি এখন আমাকে ভালোবাসো তাহলে কিভাবে ভালোবাসবে?(আমার দিকে তাকিয়ে)
আমার কাছে এই প্রশ্নের কোন উত্তর নেই। উনি কোন ভালোবাসার কথা বলছেন কে জানে দুপুরে মাছের কাটা বেছে দিয়ে বললেন ভালোবাসা দিলেন অন্যদিকে আইরিন তামান্না তো অন্য ভালোবাসার কথা বলছিল। তাই ইতি উতি তাকিয়ে মাথা নিচু করে নিলাম।নির্ভীক ভাইয়া হু হা করে হেসে দিলেন।উনার হাসি দেখে আমি রেগে গিয়ে বললাম,
আমি:আপনি কোন ভালোবাসার কথা বলছেন?আর আমি মাছের কাটা বাছতে পারিনা কিন্তু তাও আমি আপনাকে একদিন কাটা বেছে খাওয়াবো।আমিও ভালোবাসতে জানি,হুহ্।(গাল ফুলিয়ে)
উনি আবারো হুহা হেসে দিলেন।হাসি থামিয়ে আমার একটু কাছে বসে আমার ডান হাত নিজের দুহাতের মধ্যে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
নির্ভীক: ভালোবাসার অনেক রঙ।কখনো লাল,কখনও নীল,কখনও কালো,কখনও সাদা আবার কখনও পুরো রংধনু কিন্তু এই সব কিছু অনুভব করতে হয় এগুলো চোখে দেখা যায়না।যারা প্রকৃত ভালোবাসে তারাই এই অনুভূতির সাথে পরিচিত।ইউ নো হোয়াট?ভালোবাসা সুন্দর …..লাভ ইজ বিউটিফুল।যখন তুমি কাউকে সত্যিকারের ভালোবাসবে তখন বুঝতে পারবে ভালোবাসার অনুভূতি কেমন।এই আকাশ,বাতাস,ফুল,পাখি প্রকৃতির সব কিছু তোমাকে জানিয়ে দেবে হ্যাঁ তুমি ভালোবেসে ছো।যাকে ভালোবাসবে তাকে ছাড়া তোমার কিছুই ভালো লাগবেনা,এক মুহূর্তের জন্যও যদি সে চোখের আড়াল হয় তাহলে বুকের মধ্যে ফাঁকা ফাঁকা লাগবে।ভালোবাসার মানুষের সামান্যতম অবহেলা তোমার কাছে বিষ মনে হবে। সারাক্ষণ তুমি তাকে হারানোর ভয় পাবে,নিজের থেকেও নিজের ভালোবাসার বেশি কেয়ার নিবে।ভালোবাসার মানুষ পাশে থাকলে তার থেকে একটু ভালোবাসা পেলে দিন শেষে তুমি একটা কথায় বলবে যে আমার আর কিছু চাইনা।ভালোবাসার মানুষের হাত আকরে ধরে বলতে ইচ্ছে করবে তুমি আমাকে কোনদিনও ছেড়ে যেওনা,আমি তোমাকে ছাড়া শ্বাস নিতে পারবোনা কারন ভালোবাসি আমি যে তোমায়,শুধু তোমায়। এই যে আমাকে দেখ,আমি ভালোবাসি খুব ভালোবাসি ভালোবাসার চেয়েও অনেক বেশি ভালোবাসি। আমার ফিলিংসটা বুঝতে পারছো?ইটস্ লাইক দ্যা বেস্ট ফিলিং এভার ফর মি।(আকাশের দিকে তাকিয়ে)
উনার কথা শুনে আমি হতবাক।আমি জানতাম না ভালোবাসা এত সুন্দর হয়।আরাফ ভাইয়া সারাদিন আমার কাছে ভালোবাসা চাইতো কত হিংস্র তার চাওয়া সেই শয়তানি হাসি দেখলেই গা জ্বলতো।নির্ভীক ভাইয়ার একটা কথাও আরাফ ভাইয়ার সাথে মিলছেনা।নির্ভীক ভাইয়ার কথাগুলো আমার মনে নাড়া দিচ্ছে কিন্তু উনি কাকে ভালোবাসার চেয়েও বেশি ভালোবাসেন?উনার এতসব অনুভূতি কার জন্য? আচ্ছা,উনার কি কোন গার্লফ্রেন্ড আছে?নাকি আমাকেই ভালোবাসেন?কিছুক্ষণের জন্য আমি আমার প্রতি উনার ভালোবাসা ফিল করেছি,ইয়েস করেছি ফিল।কিন্তু উনি আমাকে ভালোবাসেননা, ভালোবাসলে এত কিছু না বলে বলতেন ‘ভালোবাসি’।উনি অন্য কাউকে ভালোবাসলে আমি মানতে পারবো তো? উফ্ আমার বুকটা এত ভারি ভারি লাগছে কেন?(মনে মনে) নির্ভীক ভাইয়া আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বললেন,
নির্ভীক:কিছু বুঝলে?(ভ্রু কুচকে)
আমি মাথা নাড়িয়ে না সূচক জবাব দিলাম।উনি হালকা হেসে বললেন,”ভেরি গুড,আই লাইক ইট।”
উনার কথার আগা গোড়া কিছু না বুঝে ভ্যাবলাকান্তের মতো তাকিয়ে থাকলাম।উনি সবকিছু জটিল করে দিচ্ছেন। উনি আবার বললেন,
নির্ভীক: জানো মাঝে মাঝে তোমার জন্য আমার খুব হিংসে হয়।(ঠোঁট উল্টিয়ে)
আমি:কেন?(চোখ বড় বড় করে)
নির্ভীক: কারন তুমি না চাইতেই অনেক ভালোবাসা পেয়ে যাও আর আমি চেয়েও এক টুকরো ও পাইনা।(হতাশ হয়ে)
আমি:কেন?আপনি যাকে ভালোবাসার চেয়েও বেশি ভালোবাসেন সে আপনাকে ভালোবাসে না?
নির্ভীক: হুম সে আমাকে অনেক ভালোবাসে আই নো।
আমি: আপনি কাকে ভালোবাসেন?(চিন্তিত হয়ে)
আমার কথা শুনে উনি আমার দিকে অবাক চোখে তাকালেন।আমি বুঝলাম না এত অবাক হওয়ার কি আছে।উনি মুচকি হেসে বললেন,
নির্ভীক:তুমি সত্যিই অনেক ছোট।আচ্ছা এসব ভালোবাসার টপিক এখন থেকে বন্ধ।যখন বড় হবে তখন শেখাবো,ওকে?
আমি:না, আপনি আগে বলুন,কাকে ভালোবাসেন?
নির্ভীক:আমার ভালোবাসাকে।
আমি: উফ্ একটু সহজ করে বলুন না।
নির্ভীক:তুমি বুঝবেনা আগে বড় হও তারপর বলবো।
আমি: না…
নির্ভীক:শাট আপ।একদম তর্ক করবেনা।পিচ্চি মানুষ পিচ্চিদের মতো থাকবে।(রেগে ধমক দিয়ে)
উনার এক ধমক খেয়ে আমার সব হাওয়া ফুস।গলা দিয়ে আর কোন আওয়াজ আসছেনা।
নির্ভীক:অনেক রাত হয়েছে এখন নিচে চলো।(আমার হাত ধরে নিচে নিয়ে গেলেন)
আমরা নিচে এসে ডিনার সেরে যে যার রুমে চলে গেলাম।নির্ভীক ভাইয়ার কাছে ভালোবাসার উপর লেকচার শুনার পর থেকে আমার মন-মস্তিষ্ক সবকিছু জুড়ে খালি একটা নাম একটাই মুখ বিচরণ করছে সেটা হলো… নির্ভীক ভাইয়া।
চলবে……………!