ভালোবাসি আমি যে তোমায় পর্ব: ১৭

0
2474

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব: ১৭

সবাই মিলে ব্রেকফাস্ট করছি।আঙ্কেল অ্যান্টি একবারে রেডি হয়ে ব্রেকফাস্ট করতে বসেছেন।ব্রেকফাস্ট সেরে উনারা কাজে চলে যাবেন।আমার আজ ১১টায় ক্লাস আছে তাই কোনো তাড়াহুরো নেই।
অ্যান্টি: অন্ত,তোর এখানে কোন সমস্যা হচ্ছে নাতো?আমি তোকে একদমি সময় দিতে পারছিনারে।

আমি:না অ্যান্টি আমার কোন সমস্যা হচ্ছে না।

অ্যাঙ্কেল: একদম নিজের বাড়ি মনে করবে।

আঙ্কেল: ঠিক আছে আঙ্কেল।

অ্যান্টি: কমলা?চাঁদ ঘুম থেকে উঠেনি?

কমলা:হ ভাবি উঠছে।আমি কফি দিয়াইছি।তোয় অহন নাস্তা করবোনা।

অ্যান্টি: ঠিক আছে।আজকে দুপুরে অন্তর পছন্দের খাবার রান্না করো।আমি সন্ধ্যার পর আসবো।

আমি: না অ্যান্টি ইটস্ ওকে,খালা যা রান্না করবে আমি তাই খেয়ে নিবো।খালার সব রান্নায় ইয়াম্মি।

কমলা: অন্ত মা তোমার যা খাইবার মন চাই তুমি শুধু আমারে কইবা।

আমি: ঠিক আছে খালা।

আঙ্কেল-অ্যান্টি কাজে চলে গেলেন।আমিও রুমে চলে আসলাম।এখন করার মতো কিছুই নেই।একা একা বোর হচ্ছি তাই আবার নিচে গেলাম। নিচে এসে দেখি কমলা খালা আর জাফর চাচা কিচেনে গল্প করছে।আমি ওদের কাছে যেয়ে দেখলাম জাফর চাচা বাজার নিয়ে এসেছে। নানান ধরনের শাক-সবজি, মুরগি আর মাছ।কমলা খালা সবগুলো বাজার গুছিয়ে রাখছে।মাছগুলো পলিথিনে খুব লাফাচ্ছে।তাই খালাকে বললাম,

আমি:খালা এগুলো কি মাছ এত লাফাচ্ছে কেন?

আমার কথা শুনে জাফর চাচা বলল,
জাফর: কও কি মা,তুমি এই মাছ চিনহোনা?(হেসে)

আমি: না আমি মাছ চিনিনা তেমন।মাছ এ অনেক কাঁটা থাকে তাই মাছ খাইও না।আম্মু কাঁটা বেছে খাওয়ালে খাই।
কমলা: এইডা কৈ মাছ অন্ত মা।(হেসে)

জাফর:জানো তো মা,এইডা খুব মজার মাছ সহজে মরেনা।রান্দনের সময় আগুনে দিলেও থাইকা থাইকা লাইফা উডে।ছুডু বেলায় কত ধরছি এইমাছ।

আমি:ওহ ইয়াহ,মনে পড়েছে।বই এ পড়েছি কৈ মাছের প্রাণ মানে যা সহজে মরে না।আমি এই মাছের নাম জানি কিন্তু দেখে চিনতে পারিনি।(ঠোঁট উল্টিয়ে)

কমলা: এইডা পুরানা যুগের মাছ।অহনকার দিনে খালে বিলে আর এই মাছ খুঁইজা পাওন যায়না।

আমি: খালা আমি কৈ মাছ দেখবো ভালও করে তুমি পলিথিন থেকে বের করো।

জাফর: আসো আমি তোমারে দেখাইতাছি।

জাফর চাচা পলিথিনের গিট খুলছে আমিও জাফর চাচার কাছে বসলাম।পলিথিন খুলতেই সব মাছ লাফিয়ে বের হয়ে আসলো।দুইতিনটা আমার হাত-পায়ে লাফিয়ে পড়লো।ভয়ে আমার কলিজা উড়ে যাওয়ার উপক্রম।আমি চোখমুখ খিচে বন্ধ করে দিলাম এক চিৎকার,,,,,, “আআআআআআআআআআআ!!!!!!!!”

জাফর চাচা কমলা খালা সব মাছ ধরতে শুরু করলো। পেছন থকে একটা কন্ঠ কানে আসলো,

নির্ভীক: হোয়াট হেপেন্ড,অন্ত?..কি হয়েছে?(উত্তেজিত কন্ঠে)

পেছনে তাকিয়ে দেখি নির্ভীক ভাইয়া সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নামছেন।আমি সঙ্গে সঙ্গে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে কিচেন থেকে দৌড়ে বাহিরে এসে সোফার উপর গিয়ে দাঁড়ালাম।নির্ভীক ভাইয়া আমার হাত ধরে আমাকে ভাল করে দেখে কিচেনের দিকে যেতে লাগলেন।

আমি: যাবেন না ওখানে।(উনার একহাত ধরে)

নির্ভীক: ছাড়,দেখি কি হয়েছে।(আমার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কিচেনের দিকে যেতে যেতে)

আমি: ওখানে কৈ মাছ আছে খুব লাফাচ্ছে, কামড়ে দিবে,ডোন্ট গো।(চিল্লীয়ে)

আমার কোন কথায় উনি না শুনে কিচেনে ঢুকলেন। আমি সোফার উপর থেকে উকি দিয়ে দেখছি।কিছুক্ষণ পর সবাই হাসতে হাসতে বের হলো।কমলা খালা শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ চেপে হাসছে।জাফর চাচাও নিঃশব্দে হাসছে।নির্ভীক ভাইয়া ঠোঁটে ঠোঁট চেপে মুচকি হেসে আমার দিকে এগিয়ে বললেন,

নির্ভীক: তোমার নাম আনতারা রাখা একদম ঠিক হয়নি তুমি মোটেও বীরাঙ্গনাদের মতো সাহসী নও তুমি খুবই ভীতু, ভীতু বীরাঙ্গনা। হা হা হা…

সত্যি এত ভয় পাওয়া উচিত হয়নি।এখন সবাই আমাকে নিয়ে মজা করবে।সবার হাসি দেখে ঠোঁট উল্টিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম।

নির্ভীক: ঐ আজকে ক্লাস নেই?(আমার দিকে তাকিয়ে)

আমি:হুম ১১টায়।

নির্ভীক: ১০:২০ (ঘড়ির দিকে তাকিয়ে)

আমি:ওহ শীট। আজকে এই মাছ দেখার জন্য ক্লাসে লেট হয়ে যাবে।

বলেই দৌঁড়ে রুমে এসে রেডি হয়ে নিলাম।ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল পনিটেইল করে বাধতে চাইছি কিন্তু পারছিনা,কখনও খুব টাইট হচ্ছে তো কখনও ঢিলা। এখন আমার খুব বিরক্ত লাগছে।কোন রকম বেধে উঠবো এমনসময় নির্ভীক ভাইয়া রুমে আসলেন। কালো শার্ট কনুই পর্যন্ত হাতা ফোল্ড করা,কালো জিন্স,কালো ঘড়ি,মাথা ভর্তি কালো সিল্কি চু্ল, কালো চোখের মনি,কালো খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি, উনার হাতে ফোন আছে সেটাও কালো।উফ্ উনাকে একদম কালো গোলাপের মতোই সুন্দর লাগছে।উনি আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছেন।উনার দৃষ্টি অনুসরণ করে আমিও নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি আজকে আমিও পুরো কালো পড়েছি।

নির্ভীক: আর ইউ রেডি?…চল আমি তোমার সাথে যাবো।

আমি:হুম।(উল্টো দিকে ঘুরে চুলের ব্যান্ড টানতে টানতে)

নির্ভীক ভাইয়া আমাকে উনার দিকে ঘুরিয়ে একটানে ব্যান্ড খুলে নিলেন।

আমি: একি!! জানেন কত কষ্ট করে বেধেছিলাম।এখন আবার বাধতে কত সময় লাগবে।

নির্ভীক:এগুলো খোলা থাক।(সামনের ছোট চুল কানের পেছনে গুজে)

আমি কোমড়ে ২হাত দিয়ে উনার দিকে রাগী চোখে তাকালাম।উনি আমার রাগের বিন্দুমাত্র ধার ধারলেন না।উল্টো আমার ব্যাগ হাতে নিয়ে আমার একহাত ধরে টেনে নিয়ে আসলেন।

আমাকে ভার্সিটিতে দিয়ে নির্ভীক ভাইয়া উনার ক্যাম্পাসে গেলেন।যাওয়ার আগে বলে গেলেন ক্লাস শেষ হলে যেন উনাকে ফোন দিই উনিই বাসায় নিয়ে যাবেন।ক্লাস এ ঢুকে সব ফ্রেন্ডরা আমাকে পাগল করে দিচ্ছে।সবার এক কথা, ভিসি স্যার এর ছেলে আমার কে হয়,আমাদের কিভাবে পরিচয়।সবার এত এত প্রশ্নে আমি কাহিল।

আইরিন: ইচ্ছে ঠিকই বলে তোরা রাজশাহীর বেস্ট কাপল।

আমি:নির্ভীক ভাইয়ার সাথে আমার সেইরকম কোন সম্পর্ক নয়,উনি আমার খুব ভাল বন্ধু।
তামান্না: একটু ট্রাই করলেই হয়ে যাবে।

আমি:বাজে কথা বাদ দে।উনার সাথে আমর খুব ভাল সম্পর্ক আমি সেটা খারাপ করতে চাইনা।যেমন আছি অনেক ভাল আছি।

আইরিন: ও তারমানে এখনও প্রেমে পরিস নি।কোন ব্যাপার না প্রেমে পড়লে সব ঠিক হয়ে যাবে।(মুচকি হেসে)

তামান্না: হুম, হুম একদম ঠিক।

আমি: থামবি তোরা?(ধমক দিয়ে)

আইরিন: তোর জায়গাই আমি থাকলে সম্পর্ক এত দিন বিয়ে পর্যন্ত নিয়ে যেতাম।আর তুই?

আমি: হ্যাঁ তো যা না।

ক্লাসে আর কোন কথা হলো না কারন স্যার চলে এসেছেন।ক্লাস সব শেষ করে নির্ভীক ভাইয়াকে ফোন দিয়ে আমি, আইরিন, তামান্না রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি।

তামান্না:শোন অন্ত, ইচ্ছে কিন্তু আমাদের বলেছে নির্ভীক ভাইয়া তোকে ভালোবাসে।তুই সেটা স্বীকার করছিস না কেন বলতো?..আমরা কি তোর এতই পর?(মন খারাপ করে)

আমি: ওই ফালতু মহিলার কথা কানে নিবিনা।নির্ভীক ভাইয়া আমাকে ভালোবাসেন না।

আইরিন: যদি ভালোবাসে তখন তুই কি করবি?ভালোবাসবিনা?

আমি:ভালোবাসা??? সেটা কি?

আমার কথা শুনে ওরা দুজন থ।

তামান্না: এখন আমি পুরো সিউর নির্ভীক ভাইয়া তোকে ভালোবাসে।কিন্তু তুই শালি মদন ভালোবাসা বুঝিসনা।

আইরিন:ইচ্ছে আসলে তোর একটা ব্যবস্থা করে দিব যা।

আমি: কি করবি?(ভ্রু কুচকে)

আইরিন:তোকে ভালোবাসা শেখাবো।

আমি আইরিনের চুল টেনে ধরেছি কিছু বলবো তখনই নির্ভীক ভাইয়া বাইক নিয়ে চলে এসেছেন।

আইরিন, তামান্না দুজনই আমাদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল আমি বাইকে বসলাম।রাস্তায় নির্ভীক ভাইয়া বললেন,

নির্ভীক: ওই মেয়েটার চুল টেনে কি কথা বলছিলে?

আমি এখন কি বলবো?ওরা তো ভালোবাসার কথা বলছিল।কি বলি,কি বলি,যা সত্যি তাই বলি…(মনে মনে)

আমি: তেমন কিছুনা।এই আপনার সম্পর্কেই বলছিল।

নির্ভীক: আমার সম্পর্কে?স্ট্রেঞ্জ!!… তা কি বলছিল শুনি?

আমি: ওরা বলছিল আপনি নাকি আমাকে ভালোবাসেন ইচ্ছে নাকি ওদের বলেছে।

আমার কথা শুনে নির্ভীক ভাইয়া ব্রেক কষলেন আমি উনার দিকে ঝুকে উনার কাঁধে হাত রাখলাম।উনি আমার দিকে ঘাড় ঘুড়িয়ে বললেন,

নির্ভীক: তুমি ওদের কি বললে?

আমি: কি আর বলবো যা সত্যি তাই বলেছি।আমি বলেছি এইরকম কিছু নয় আর আমরা বন্ধু।

নির্ভীক: তখন ওরা কি বললো?

আমি: ওরা নাকি আমাকে ভালোবাসা শেখাবে।

নির্ভীক: ওরা পারবে?

আমি: আপনিও এমন বলছেন।জানেন আমি সবাইকে কত ভালোবাসি?? আমি ভালোবাসতে জানি আর শেখা লাগবেনা।

উনি আবার বাইক থামিয়ে আমার দিকে ঘাড় ঘুড়িয়ে বললেন,

নির্ভীক: সত্যি তুমি ভালোবাসতে জানো?

আমি: অফকোর্স জানি।
নির্ভীক: তুমি তো ভালোবাসা কি সেটাই জানোনা।(হাসতে হাসতে)

আমি: মানে???(অবাক হয়ে)

নির্ভীক: তোমার ডায়েরী তে দেখেছি,হোয়াট ইজ লাভ? এটার উত্তর তোমার কাছে নেই।

আমি:এই আপনি ওটা কখন দেখলেন?(অবাক হয়ে)আমার ডায়েরি কেন খুলেছেন?

নির্ভীক: তোমার ডায়েরী পড়ে যা বুঝেছি তাহলো তুমি নিতান্তই একটা কিউট,সুইট বেবি গার্ল।সবাই তোমাকে কত্ত ভালোবাসা দেই আর তুমি তোমার সব ভালোবাসা ম্যাজিক বক্স এ লুকিয়ে রাখ, কেউ তোমার থেকে একটু ভালোবাসা নিতে চাইলে তুমি দেও না।

আমি: মোটেও না। আমি সবাইকে দিই।

নির্ভীক:ওকে আমাকেও একটু দিও তো।

আমি:ওকে কিন্তু কিভাবে নিবেন?..আমি এখন থেকে তাহলে সব গিফট তিন ভাগ করবো।এক ভাগ আমার এক ভাগ ইচ্ছের আর এক ভাগ আপনার।

নির্ভীক: না না এভাবে নয়।আমি তোমাকে শিখিয়ে দেবনি কিভাবে ভালোবাসা দিতে হয়। আফটার অল আম ইউর… বাসায় এসে গিয়েছি চলো।

বাসায় এসে শাওয়ার নিয়ে নিচে খেতে আসলাম।আমি,নির্ভীক ভাইয়া, কমলা খালা আর জাফর চাচা একসাথে খেতে বসেছি।টেবিলে মাছের বাটিতে অনেক গুলো কৈ মাছ ভাজি রাখা আছে।

কমলা খালা আমার প্লেটে ভাত দিয়ে বললো,

কমলা: কি মা?মাছ দিব?

আমি: না থাক দিও না।

জাফর:খাও মা খাও খুব স্বাদের মাছ।

আমি সবার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সবাই মাছ খাচ্ছে।
আমি তো এই মাছের কাঁটা বেছে খেতেই পারবোনা। তাই বললাম,

আমি: নাহ্ থাক। অন্যকিছু দাও।

কমলা খালা আমার প্লেটে মাংস দিবে তখনই নির্ভীক ভাইয়া আমার প্লেট টেনে কাঁটা বাছা মাছ দিলেন।আমি তো মনে মনে অনেক খুশি।উনি আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিশ ফিশ করে বললেন,

নির্ভীক: আমার তরফ থেকে তোমাকে অনেক গুলো ভালোবাসা দিলাম।

আমি উনার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালাম। উনি আমাকে একটা চোখটিপ দিয়ে খেতে লাগলেন।আমিও মুচকি হেসে খাওয়া শুরু করলাম।

আমি: উম চাচা, কৈ মাছ সত্যি খুব সুস্বাদু।

জাফর: বলছিলাম না তোমার ভাল লাগবে।দেখলা?..তুমি ওকারনেই মাছটারে এত ভয় পাইলা।

সবাই আবার হো হো করে হাসা শুরু করে দিল।আমি বেশ লজ্জায় পরে গেলাম।যাইহোক খাওয়া শেষ করে রুমে যাওয়ার সময় নির্ভীক ভাইয়া বলেছেন এখন রেস্ট নিতে বিকেলে ঘুরতে নিয়ে যাবেন।তাই আমি রুমে এসে বেডে শুয়ে পড়লাম।এখন একটু রেস্ট নিই একটু পরই বিকেল হয়ে যাবে।

চলবে……………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here