ভালোবাসি আমি যে তোমায় পর্ব: ২

0
3339

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব: ২

ইচ্ছের কথামত ঐদিকে তাকাতেই একজনকে দেখে আমার চোখ কিছুক্ষণের জন্য স্থির হয়ে গেল।

স্কাই ব্লু শার্ট, হাতা কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা,লোমহীন হাতে ব্ল্যাক ঘড়ি,ব্ল্যাক জিন্স,মাথা ভর্তি সিল্কি চুল আর ফর্সা মুখে খোচা খোচা কালো দাড়ি……..হাজার হাজার মানুষের ভীরে উনাকে খুঁজে পেতে ২ সেকেন্ড সময় লাগবে বলে মনে হয়না। আশেপাশের সবার থেকে উনি একটু বেশি লম্বা,হয়তো ৬’২”।

আমি তাকাতেই দেখলাম উনি আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন।উনাকে দেখে মনে হচ্ছে উনি অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু দেখছেন।আমার এতো সব ভাবনার মাঝেই ইচ্ছে আমার হাত ঝাকিয়ে বলতে লাগলো,

ইচ্ছে: কিরে যাবি ঐ ভাইয়াদের কাছে?

আমি: হ্যা? হুম চল তাড়াতাড়ি।(থতমত করে)

বলেই আমরা অনেকটা দৌড়েই উনাদের সামনে গিয়ে দাড়ালাম।আমাদের এভাবে দেখে উনারা সবাই আমাদের দিকে তাকালেন।স্কাই ব্লু শার্ট ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আমি বললাম,

আমি: excuse me ভাইয়া!আমরা ২জন বিপদে পড়েছি। plz help us.

পাশথেকে একটা মোটাসোটা দেখতে আপু আমাদের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললেন,

আপু:কি হয়েছে?(একটু চিন্তিত স্বরে)

ইচ্ছে: আমাদের এগ্রিকালচার বিল্ডিং এ এক্সাম কিন্তু অনেক খুঁজেও বিল্ডিংটি পাইনি।

পাশথেকে আরেকটা ভাইয়া( লম্বা,ফর্সা,ব্লাক শার্ট পড়ে আছেন আর কাধেঁ গিটার ঝুলানো আছে) হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন,

ভাইয়া: অনেক দেরি করে ফেলেছ তোমরা।

বলেই ব্লু শার্ট ভাইয়ার দিকে তাকালেন। উনার তাকানো দেখে মনে হচ্ছে উনি ব্লু শার্ট পড়া ভাইয়াকে চোখ দিয়ে বললেন, কি করবি?
আমি: আসলে ভাইয়া আমরা ভীরের মধ্যে রাস্তা গুলিয়ে ফেলেছি।আগে কখনও এখানে আসাও হয়নি।

মোটামুটি শর্ট ড্রেস পড়া (হাটু পর্যন্ত দৃশ্যমান) ন্যাকা টাইপের আপু বললেন,
ন্যাকা আপু: তোমরা আজকে আর এক্সাম দিতে পারবানা।অলরেডি ৮:২০ বাজে। তোমাদের এখান থেকে যেতে ৩০মিনিট লাগবে,কারন হেটে যেতে হবে, এখানে রিক্সা পাবা না।১০ মিনিট পর হলের ভেতরে যেতে আর কাউকে allow করবেনা।(ভাব নিয়ে কথাগুলো বললেন)

এই কথা শুনেই আমার চোখ ছলছল করে উঠলো পলক ফেললেই পানি গড়িয়ে পড়বে।
তখনই স্কাই ব্লু শার্ট ভাইয়াটা ন্যাকা আপুকে বললেন,

ব্লু শার্ট : এই ডাফার চুপ কর। এমনিতেই ওরা টেনশনে আছে আর তুই মজা নিচ্ছিস? এরপর তো সব পড়া ভুলে যাবে আর এক্সামে ডাবল জিরো পাবে।

ন্যাকা আপু: হোয়াট? তোর মনে হচ্ছে আমি মজা নিচ্ছি?তুই ভাল করেই জানিস ওরা এখন দৌড়ে গেলেও টাইমলি যেতে পারবেনা।

এইবার চোখের পানিরা আর কোনো বাধা মানলো না।ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোখমুখ শুকিয়ে গিয়েছে।ওর দিকে তাকিয়ে আমি মাথা নিচু করে ফেললাম।(দোষতো আমারই,ইচ্ছে অনেক আগে থেকেই বিল্ডিং এর সামনে যেতে বলছিল আমি আর একটু পড়ি আর একটু পড়ি করতে করতেই লেইট হয়ে গেল।)

ন্যাকা আপুর কথা শুনে ব্লু শার্ট ভাইয়া পাশে থাকা বাইকে উঠে বসলেন আর বললেন,

ব্লু শার্ট : ঐ প্রান্ত, তোর বাইকটাও রেডি কর।আমাদের এখন এদের নিয়ে যেতে হবে।

উনার কথা শুনে কাঁধে গিটার ঝুলানো ভাইয়া বললেন,
প্রান্ত: হোয়াট? তুই বাইকে মেয়ে তুলবি? আমি ছাড়া কোনদিন কাউকে তুলিসনি আর আজ…আর আমিও তো… (অবাক হয়ে)

ব্লু শার্ট : শাট আপ ইয়ার।এখন এসব ভাবার টাইম নেই।তুই ধরে নে এটা আমাদের ১০০তম রেস। তুই সব সময় চাইতি ১০০তম রেসটা একটু অন্যরকম হবে।নে হয়েছে অন্যরকম। সো লেটস গো….আর মাত্র ৮মিনিট আছে।

বলেই উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
ব্লু শার্ট: কাম ফাস্ট।

আমি দেরি না করে উনার বাইকে উঠে বসলাম একটু দূরুত্ব রেখে।ইচ্ছেও প্রান্ত ভাইয়ার বাইকে উঠেছে।ন্যাকা আপুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি রেগে আগুন হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। বিপদে না পড়লে আমি কখনই অপরিচিত ছেলের বাইকে উঠতাম না,হুহ্(মনে মনে)
আমরা বাইকে বসতেই উনারা ঝরের গতিতে রেসলিং শুরু করে দিলেন।এই দিকে রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা তাও আমার ভয় করছে এই বুঝি কেউ বাইকের নিচে চাপা পড়লো।আমি চোখ বন্ধ করে ভাইয়ার শার্ট খামছে ধরে আছি।
কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে দেখি আমরা ভার্সিটির পেছন দিকে যাচ্ছি। একটা রেলগেট পার হতেই বিশাল বিল্ডিং চোখে পড়লো।উনারা গেইটের কাছে বাইক থামালেন।বাইরে কেউ নেই সবাই হলে ঢুকে গেছে,গেইটটা লাগিয়েই দিচ্ছিলো আমাদের দেখে গেইটমেন ইশারা করে তাড়াতাড়ি ঢুকতে বললেন।

প্রান্ত ভাইয়া ব্ল শার্ট ভাইয়াকে বললেন,
প্রান্ত : এই প্রথম আমি জিতলাম। কি ব্যাপার বলতো?

ব্লু শার্ট: কোনো ব্যাপার না।(কপালে আঙ্গুল ডলে)

বলেই আমাদের ভেতরে যেতে বললেন।
আমি আর ইচ্ছে এক দৌড়।গেইটের ভিতরে ঢুকেই আমার মনে পড়লো উনাকে ধন্যবাদ জানানো হলোনা,পেছনে তাকাতই দেখি উনি আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন।
আমি ঠোঁট নাড়িয়ে শব্দহীন ভাবে উনাকে বললাম,”থ্যাঙ্ক ইউ”।….উনি চোখ বন্ধ করে মাথা একটু নাড়িয়ে আবার তাকালেন। আমি মুচকি হেসে আবার দৌড় দিলাম।

.
এক্সাম শেষ করেই আমি ইচ্ছেকে খুঁজতে লাগলাম কারন আমার সিট ছিল ২০১ আর ইচ্ছের ২০৩ এ।অনেক ভীর ঠেলে ইচ্ছেকে পেলাম তারপর আমরা বাইরে বেরিয়ে এসে কথা বলতে শুরু করলাম।

ইচ্ছে: অন্ত রে,আমার এক্সামটা অনেক ভাল হয়েছে।এখানে চান্স হইলে ওই ভাইয়াদের অনেকগুলা আইসক্রিম খাওয়াবো।(হাসিখুশি মুডে)

আমি:ভাইয়ারা না থাকলে আমারা এক্সামি দিতে পারতাম না।আশেপাশে ভাল করে দেখতো উনারা আছেন কিনা।

আমি আর ইচ্ছে চারপাশ ভাল করে খুঁজে দেখলাম উনাদের পেলাম না।

এক্সাম ভাল হওয়া সত্বেও আমার এত মন খারাপ লাগছে কেন?…মনে হচ্ছে কিছু হারিয়ে ফেলেছি।কেমন একটা ফিলিং হচ্ছে।ইচ্ছে করছে হাত-পা ছড়িয়ে কান্না করি।কেন এমন হচ্ছে?…ভাইয়াটাকে আর পেলাম না বলে?…(মনে মনে)

আমরা আর দেরি না করে ফুপ্পার কাছে যাওয়ার জন্য হাটা দিলাম।প্রাই ১ঘণ্টা পর আমি আর ইচ্ছে ফুপ্পার কাছে আসলাম। তারপর ফুপ্পাকে এমন ভাবে জড়িয়ে ধরলাম যেন আমরা যুদ্ধ জয় করে ফিরে এসেছি।…যুদ্ধ তো করে আসলাম জয় হবে কিনা জানিনা তবে বীরবালিকাদের মতো ফিলিং আসছে,মন বলছে এই যুদ্ধে আমি জয়ী হবই।
.

গাড়িতে বসে আছি,ঢাকায় ফিরে যাচ্ছি।
ভীষণ মন খারাপ লাগছে।আজকে সম্পূর্ণ নতুন এক অনুভূতির সাথে পরিচিত হলাম। সত্যি কি পরিচিত হলাম?..আমি তো এই অনুভূতির নামি জানিনা তাহলে কিভাবে পরিচিত হলাম,?..বার বার মন টাকে অস্থির করে দিচ্ছে বলে?….জানিনা তাকে আর কোনদিন খুঁজে পাবো কিনা।আচ্ছা তিনিও কি আমাকে এভাবে মিস করছেন?… নাহ এসব আর ভাববোনা।(মনে মনে)

ইচ্ছে: কি এত ভাবছিস?

আমি:হুম??(বেখেয়ালি ভাবে)

ইচ্ছে: বলছি যে মন টা কি ঐ ব্লু শার্ট ভাইয়াকে দিয়ে দিয়েছিস?

আমি : কি যাতা বলছিস?এমন টা হওয়ার মতো কিছু হয়েছে নাকি?

ইচ্ছে: হয়তো হয়েছে।উফ্ ২জনই কি কিউট। তবে তোর টা বেশি কিউট।

আমি রাগি চোখে তাকাতেই ইচ্ছে বললো,

ইচ্ছে: আব, আমার টাও কিউট।
বলেই হেসে দিল।আমিও হেসে ব্যাপারটাকে ওখানেই উড়িয়ে দিয়ে ঢাকা ফিরলাম।

.

অনেক আশা নিয়ে আজ ৩য় বারের মতো RU তে ঢুকলাম………!!

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here