ভালোবাসি আমি যে তোমায় পর্ব: ২৬

0
2201

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব:২৬

জারিফ ভাইয়া আমাকে আর ইচ্ছেকে এইমাত্র ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে গেল।আমরা ক্লাসে এসে আড্ডা দিচ্ছি।আজ কোন ক্লাস হবে বলে মনে হচ্ছেনা কারন আজ আমাদের স্টাডি টুরের নোটিশ দিয়েছে কালই টুরে নিয়ে যাবে।যেহেতু আমরা লেবেন ওয়ানে তাই বেশি দূর নিয়ে যাবেনা।উত্তরা গনভবন,প্রিন্সের চাতাল দেখাতে নিয়ে যাবে।যেখানেই নিয়ে যাক আমি খুব এক্সাইটেড কারন ঘুরতে আমার খুব ভাল লাগে আর বন্ধুরা সাথে থাকলে তো অনেক মজা হবে।আমরা মেয়েরা ড্রেসের কালার সিলেক্ট করছি কারন সবাই এক কালার ড্রেস পরবো কিন্তু কারো সাথে কারো মত মিলছেনা।অনেক কাহিনি করার পর ঠিক করা হলো সবাই গোলাপি কালার ড্রেস পরবো। আমরা ক্লাস থেকে বেরিয়ে একটা গাছতলায় এসে বসলাম।আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলে ১০জন আছি।গাছতলায় ১০জন গোল হয়ে বসলাম।আমরা এখন গ্রুপ স্টাডি করবো।বিভিন্ন জটিল বিক্রয়া নিয়ে নোট করছি এমন সময় কেউ পেছন থেকে আমাকে ডাকলো।তাকিয়ে দেখি সানভি ভাইয়া আর দুটো ছেলে।আমি ইচ্ছের দিকে তাকালাম।

ইচ্ছে:যেতে হবেনা আবার ডাকুক দরকার হলে নিজে আসবে।

আমি ওর কথা শুনে আবার লিখায় মনোযোগ দিলাম।এবার সানভি ভাইয়া আমার কাছে এসে ডাকলেন।আমি দাঁড়ালাম।উনি মুচকি হেসে বললেন,

সানভি:কেমন আছো?
আমি:আলহামদুলিল্লাহ ভাল,আপনি?
সানভি:যাচ্ছে কোনরকম।শোন তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে একটু এদিকটায় আসো।

আমার উত্তর না শুনেই উনি হাঁটা দিলেন তারপর কিছুটা দূর যেয়ে থেমে আমার দিকে তাকালেন।আমি ইচ্ছেকে বলে উনার কাছে এগিয়ে গেলাম।উনি ধীরে ধীরে বলতে থাকলেন,

সানভি:দেখ নির্ভীক ভাইকে কিছু বলো না হ্যা?উনার রক্ত গরম, রাগ বেশি ভালমন্দ না বুঝেই কিছু করে ফেলতে পারেন।আমি তোমাকে এমন কিছুই বলবনা যার জন্য তোমাকে নির্ভীক ভাইকে নালিশ জানাতে হবে।(হাত নাড়িয়ে কথা গুলো বলছেন)

আমি:জ্বি বলুন, কি বলতে চান?

সানভি:ইয়ে মানে আমি জাস্ট জানতে চাই তুমি কি নির্ভীক ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড?(কপালের ঘাম মুছে)

আমি:কেন জানতে চান বলুনতো?(ভ্রু কুচকে)

সানভি:দেখ আমার কোন খারাপ উদ্দেশ্য নেই তুমি আমাকে বলতে পারো।(ঢোক গিলে)

আমি:আপনাকে কেন বলতে হবে?

সানভি:একচুয়েলি,তোমাকে একজন চয়েস করেছে। নির্ভীক ভাইকে বলো না ওকে?(আবার ঘাম মুছে) তো তুমি যদি ইচ্ছুৃক থাক,,,

আমি:আমি ইচ্ছুক নয়।

বলেই উল্টোদিকে ঘুড়লাম কিন্তু সানভি আটকে দিল,

সানভি:আরে শোন প্লিজ, ও তোমাকে অনেক ভালবাসে এখন ও হসপিটালে কাল রাতে হাত কেটে বিধিকিচ্চি অবস্থা করেছে জাস্ট বিকজ অফ ইউ।

আমি অবাক হয়ে সানভির দিকে তাকালাম।আমি যাকে চিনিইনা সে নাকি আমার জন্য হাত কেটে হসপিটালে ভর্তি।দুনিয়াই যে আর কত ধরনের পাগল আছে!(মনে মনে)

সানভি:এই যে এই চিরকুট টা নাও আর এই ফুলগুলো।(পকেট থেকে একটা নীলরঙা চিরকুট আর তিনটে লাল গোলাপ ফুল বের করে আমার দিকে এগিয়ে দিলেন)

আমি:দেখুন ভাইয়া আমি এসব নিতে পারবোনা।(বিরক্ত হয়ে)
সানভি:প্লিজ, মানবতার খাতিরে তো নিতে পারো।তুমি এটা নিলে ছেলেটা একটু হলেও শান্ত হবে খুব অশান্তি করছে।

আমি:সরি,আমি নিতে পারবোনা।

সানভি:আচ্ছা ঠিক আছে।তাহলে আমি এটা তোমাকে পড়ে শোনায় তুমি প্লিজ একটু মন দিয়ে শুনো।

আমি:বললাম তো না।আমি কিন্তু নির্ভীক ভাইয়াকে বলে দেবো সব।(হালকা রেগে)

সানভি:ওকে,ওকে,রিল্যাক্স।নির্ভীক ভাইকে আমার কথা বলোনা হ্যা?আমি আসছি।

বলেই চলে গেল।আমি ও ফ্রেন্ডদের কাছে ফিরে আসলাম। সবাই জিজ্ঞেস করলো সানভি কেন ডেকেছিল কিন্তু আমি কাউকে কিছু বললাম না। মনে মনে ভেবে রাখলাম বাসায় যেয়ে ইচ্ছেকে বলবো।কিছুক্ষণপর নির্ভীক ভাইয়া ফোন দিলেন,

নির্ভীক:ক্লাস শেষ?

আমি:জ্বি।

নির্ভীক:এখন বাসায় যাবা?
আমি:না একটু পর।
নির্ভীক:ওকে ১২টায় নিতে যাবো।
আমি:আচ্ছা।
নির্ভীক:মন খারাপ?
আমি:না।(কি করে বুঝলো?মনে মনে)

নির্ভীক:অহ,ওকে সি ইউ।
আমি:বাই।

উনি কল কেটে দিলেন।আমি ফোন ব্যাগে ঢুকালাম।২৫ মিনিট পর নির্ভীক ভাইয়া আবার ফোন দিয়ে বললেন উনি আসছেন। আমরা ওখান থেকে উঠে গেটের দিকে যেতে লাগলাম।যাওয়ার সময় একটা আপু ইচ্ছের হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল।
আমি:কি আছে এতে?(ভ্রু কুচকে)

ইচ্ছে: বুঝতে পারছিনা।

খামের মুখ স্টাপলিং করা আছে ইচ্ছে খামটা ছিড়বে এমন সময় নির্ভীক ভাইয়া চলে আসলেন।
ইচ্ছে:চল গাড়িতে বসে খুলবো।

ইচ্ছে আগেই যেয়ে পেছনের সিটে বসলো তাই আমি যেয়ে নির্ভীক ভাইয়ার পাশে বসলাম।উনি আমাকে সিট বেল্ট লাগিয়ে দিয়ে বললেন,
নির্ভীক:আর ইউ ওকে?

আমি:ইয়েস।(সিটে হেলান দিয়ে)
নির্ভীক:দেখে তো মনে হচ্ছেনা।

আমি:কেন?(উনার দিকে তাকিয়ে)

উনি কপালে পরে থাকা কয়েকটা চুল এক হাত দিয়ে ঠিক করে বললেন,
নির্ভীক:কিছুনা।

বলেই ড্রাইভ করতে লাগলেন।আমি ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে বললাম,
আমি:খুলেছিস?

ইচ্ছে:হুম,এটা তো লাভ লেটার। তোর নামে।গোলাপ ফুল আছে তিনটে।

সঙ্গে সঙ্গে নির্ভীক ভাইয়া ব্রেক কষলেন।
নির্ভীক:হোয়াট দ্যা হেল?কে দিয়েছে?(রেগে আমার হাত ধরে)
আমি:জানিনা।(ছোট ঢোক গিলে)
উনি এবার ঘাড় ঘুড়িয়ে ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে বললেন,

নির্ভীক:ফুল গুলো জানালা দিয়ে ফেলে দাও আর লেটার টা জোড়ে জোড়ে পড়।(চোখ মুখ শক্ত করে)

বলেই আবার ড্রাইভ করতে লাগলেন।ইচ্ছে ফুল গুলো ফেলে দিল।আমি তাকিয়ে দেখলাম সানভি ভাইয়া যেই লেটারটা আমাকে দিতে চেয়েছিলেন এটাই সেই নীলরঙা লেটার।ইচ্ছে জোড়ে জোড়ে পড়তে থাকলো,

“তোমাকে প্রথম যেদিন দেখেছিলাম সেদিনই তোমার প্রেমে পরে গিয়েছিলাম।নীল শাড়ি পড়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলে আর পাশে থাকা মেয়েটির সাথে হেসে হেসে কথা বলছিলে।কি অমায়িক সেই হাসি।এখনও চোখ বন্ধ করলে সেটার জীবন্ত প্রতিচ্ছবি আমার সামনে ভেসে উঠে।ইচ্ছে করে তোমার ওই হাসিমাখা ঠোঁটের কোনে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দিই। আচ্ছা অন্ত? খোঁপায় তিনটে লাল গোলাপ গুজে দেয়া কি খুব জরুরী ছিল?জানো?আমি কখনও পরী দেখিনি কিন্তু সেদিন তোমাকে দেখেছি।সেদিন থেকে তুমি আমার পরী ‘নীলপরী’। খুব ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়।এতটা ভালোবেসেছি যে তুমি আমার রক্তে মিশে গিয়েছো।আমি চাইলেও আমার থেকে তোমাকে আলাদা করতে পারবোনা।আমি প্রেমিক পুরুষদের মতো ছন্দ-সাহিত্য জানিনা আমি শুধু জানি আমি তোমাকে ভালোবাসি।তুমি কি আমাকে একটু ভালোবাসা দিবে?আমার সাথে সারাজীবন থাকবে?আমি তোমাকে কখনও কষ্ট দিবোনা,অনেক ভালবাসবো তোমাকে, সারাজীবন বুকের মধ্যে আগলে রাখবো।বল না, ভালবাসবে আমাকে?…আমার কি কপাল দেখ,আমি ভেবে রেখেছিলাম নিজে তোমাকে ভালবাসার কথা বলবো কিন্তু পরিস্থিতি এমন হয়ে গেল যে…যাইহোক,আমার মনটা এখন খুব অশান্ত হৃদয়ের রক্তক্ষরণ খুব বেশি হচ্ছে। না পারছি তোমার সামনে যেতে না পারছি তোমার সাথে কথা বলতে তাই তোমাকে এভাবেই ভালবাসার কথা বলতে হলো। এখন একটু হলেও এটা ভেবে শান্তি পাচ্ছি যে আমার লিখা গুলোর উপর তোমার হাতের স্পর্শ পরছে।তোমার ভালোবাসার আগুনে পুরে ছাই হয়ে গিয়েছি আমি আমাকে প্লিজ ফিরিয়ে দিওনা,আমি মরে যাবো তাহলে।এই যে এই রক্ত দেখ(লেটারের নিচে রক্তের ছাপ)আমি এখানে শুধু তোমার মুখ দেখতে পাচ্ছি।আমি কি করব বলো?তুমি বলে দাও আমাকে।আমি জাস্ট পাগল হয়ে যাচ্ছি।অন্ত,অন্ত,অন্ত,,,,,,অন্ত নামের এ তুমি আমার অনুভূতি শূন্য জীবনটাকে রঙিন করে দিয়েছো।
আই লাভ ইউ আ লট মাই লাভ।।”

ইচ্ছে:পড়া শেষ…(একটা দম ছেড়ে)
নির্ভীক:কে দিয়েছে এটা?(ইচ্ছের দিকে লাল চোখে তাকিয়ে)

ইচ্ছে:আসার সময় একটা অপরিচিত আপু দিল।

নির্ভীক:ওটা আমাকে দাও। (ইচ্ছের দিকে একহাত এগিয়ে দিয়ে)

ইচ্ছে ওটা ভাজ করে নির্ভীক ভাইয়ার হাতে দিল।উনি ওটা প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে নিলেন।তারপর সামনের দিকে তাকিয়ে বললেন,

নির্ভীক:একটা কথা আছে জানো তো,”ভালোবাসা ভালোবাসে শুধুই তাকে,ভালোবেসে ভালোবাসায় বেঁধে যে রাখে।”বুঝলা কিছু?(আমার দিকে তাকিয়ে)

আমি:না,একটু সহজ করে বলুন।

নির্ভীক:এটার কোন সহজ ফর্ম নেই।নিজের থেকে বুঝতে হয়।
আমি:অহ,আমি তো ভুলেই গেলাম আপনি কি বললেন।ভালোবাসা, ভালোবাসে, ভালোলাগা না কি যেন..(কনফিউজড হয়ে)

নির্ভীক:চিঠিটা পরে কি ছেলেটার জন্য তোমার কোন ফিলিংস আসছে?(চোখমুখ শক্ত করে)

আমি:হুম আসছে।(জানালার দিকে তাকিয়ে)

নির্ভীক ভাইয়া জোড়ে ব্রেক কষলেন।ফলে আমি সামনের দিকে ঝুকে আবার পেছন দিকে সিটে ধাক্কা খেলাম।উনি রেগে ফোস ফোস করতে করতে আমার গাল ধরে উনার দিকে ঘুড়িয়ে বললেন,

নির্ভীক:কি ফিলিংস?

আমি:ভয়।(মাথা নিচু করে)

নির্ভীক:কেন?(শান্ত হয়ে)

আমি:যদি আরাফ ভাইয়ার মতো করে।আরাফ ভাইয়াও তো বলতো রক্তে মিশে যাওয়ার কথা, কেউ আলাদা করতে পারবেনা, পাগল হয়ে যাওয়ার কথা।তারপর হুডি পরা লোকটা এখন আবার এই চিঠি..

নির্ভীক:ডোন্ট ওরি।কিছু হবে না।ভার্সিটিতে এসব হয়ই।কাউকে ভাল লাগলো একটা রঙিন কাগজে দুচারটে আবেগী কথা লিখে হাতে গুজে দিলেই যেন ভালোবাসা হয়ে গেল অধিকাংশরাই এমন করে। যাদের নিজের আবেগ নেই তারা ফ্রেন্ডদের কাছে আবেগ ধার নেই।এসব নিয়ে চিন্তা করার কোন দরকার নেই।
কিন্তু ছোট থেকে ছোটতর কোন কথাই আমার কাছে লুকোবেনা, ওকে?(আমার দুই গালে হাত দিয়ে)
আমি:হুম।

ইচ্ছে:আচ্ছা অন্ত,সানভি ভাইয়া তোকে কেন ডেকেছিল?

আমি:এটা দিতেই।আমি নেইনি তাই অন্যরকম ভাবে তোর হাতে দিল।(ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে)

নির্ভীক:সানভি মানে?কে সানভি?(ভ্রু কুচকে)

আমি:আামাদের ভার্সিটিতেই পড়েন উনি।টোয়া আপুর ফ্রেন্ড।

ইচ্ছে:জ্বি ভাইয়া।আজ অন্তকে ডেকেছিল।

নির্ভীক:কি বলেছে ও?(আমার দিকে তাকিয়ে)

আমি গড় গড় করে এ টু জেড সব বলে দিলাম।

নির্ভীক ভাইয়া কাউকে ফোন করলেন।তারপর বললেন,
নির্ভীক:শহরের প্রত্যেকটা হসপিটালে খোঁজ নাউ।হাত কেটে সুইসাইড এটেমপ্ট করা সব গুলো রোগীর ডিটেইলস জেনে নাউ।এটা গত রাতের ঘটনা।

ফোন রেখে নির্ভীক ভাইয়া চুপ করে থাকলেন।উনাকে দেখে মনে হচ্ছে উনি রেগে আছেন কিন্তু সেটা প্রকাশ করতে চাইছেন না।ইচ্ছে হালকা কেশে বলল,

ইচ্ছে:অন্ত,অন্ত,অন্ত….এই যে অন্ত নামের নীলপরী বালিকা চিঠিটা পরে প্রেমে পরে গেলি নাকি?

আমি ইচ্ছের কথার কোন জবাব দিলাম না।চিঠি প্রেরককে জারিফ ভাইয়ার হাতের দুটো চড় খাওয়াতে পারলে ভাল লাগতো।কোন ব্যাপার না, হিসেব টা তুলে রাখলাম। ভবিষ্যতে একে খুঁজে পেলে জারিফ ভাইয়াকে বলে দুটো চড় খাওয়াবো।আমার ঠোঁটের কোনে কিস করবি?ব্যাটা লুচ্চা আমার দিকে খারাপ নজরে তাকাস তোর চোখ আমি গেলে দিব।(মনে মনে)

নির্ভীক:শাট আপ ইচ্ছেমতি, দেখছনা আমার পিচ্চিটা মুৃখ মলিন করে বসে আছে তাও তুমি মজা নিচ্ছো ? (ভ্রু কুচকে ড্রাইভ করতে করতে)
ইচ্ছে:সরি ভাইয়া।(মুখ গোমড়া করে)

আমাদের বাসায় দিয়ে নির্ভীক ভাইয়া আবার বেড়িয়ে গেলেন।সারাটা বিকেল,সন্ধ্যা এমন কি রাতের অর্ধকটা কেটে গেল নির্ভীক ভাইয়ার কোন দেখা নেই।একটা বার ফোনও দিলেন না।আমি বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছি কিন্তু চোখে ঘুম নামছে না।মন মস্তিষ্ক বার বার নির্ভীক ভাইয়ার কাছে গিয়েই থেমে যাচ্ছে।কেন যেন উনাকে নিয়ে খুব ভয় হচ্ছে।অন্যদিন তো কতবার ফোন দেন,আমাদের বাসায় আসেন কিন্তু আজ উনার কি হলো?আচ্ছা আমিও তো উনাকে ফোন দিতে পারি।কিন্তু এত রাতে….আচ্ছা দিই আগে তারপর ভাবা যাবে।উঠে বসে বেড সাইড টেবিল থেকে ফোন নিয়ে নির্ভীক ভাইয়াকে কল দিলাম।উনি সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ করলেন,

নির্ভীক:ঘুমাওনি?কি করো?

আমি:আপনি কি করছেন?আমাকে একবারো কল দিলেন না কেন?

নির্ভীক:আমাকে মিস করছিলে?
আমি:না কিন্তু
নির্ভীক:বাট?
আমি:ওই লোকটা বলেছিল আপনার হৃদপিন্ড..
নির্ভীক:আমাকে নিয়ে ভয় হচ্ছে?ডু ইউ লাভ মি?(স্লো ভয়েসে)

উনার এমন ভয়েস শুনে যেন আমার শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেল। আমি চুপ করে থাকলাম।উনার হঠাৎ করা এমন সহজ প্রশ্ন যেন আমার কাছে দুনিয়ার সবচেয়ে কঠিন প্রশ্ন মনে হলো।আমার চুপ থাকা দেখে উনি মৃদু শব্দ করে হেসে বললেন,
নির্ভীক:বেলকুনিতে আসবা?

আমি:আসছি।

বলেই তারাহুড়ো করে বেলকুনির লাইট অন করে বেলকুনিতে গেলাম।উনাকে দেখার জন্য যে আমার চোখ জ্বলে যাচ্ছে।বেলকুনিতে যেয়ে রাস্তার দিকে তাকালাম। তারপর উনাকে বললাম,

আমি:কোথায় আপনি?
নির্ভীক:সামনে দেখ।আমার বেলকুনিতে।

আমি উনাদের বাসার দিকে তাকালাম।এইপাশটায় মোট চারটা বেলকুনি আছে তারমধ্যে উনি ২য় তলার ডানদিকের বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে আছেন।কালো টি শার্ট আর কালো ট্রাউজার পরে গ্রিলে হেলান দিয়ে আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন।কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন,
নির্ভীক:আই মিস ইউ।ইচ্ছে করছে তোমাকে এখানে তুলে নিয়ে আসি।

আমি:কেন, কেন?(চোখ বড় বড় করে)

নির্ভীক:তোমাকে এখানে নিয়ে এসে খুব আদর করতে ইচ্ছে করছে।তোমার গুলুমুলু গাল দুইটা উফ্ কি কিউট!ইচ্ছে করছে খেয়ে ফেলি।(বুকে এক হাত দিয়ে)

ছিঃ ছিঃ উনি এসব কি বলছেন।উনি তো এমন ছিলেন না।(মনে মনে) কথা ঘুরানোর জন্য বললাম,
আমি:আপনি আমার গাল আর ধরবেন না। আমি আপনার উপর রেগে আছি।(মুখ ফুলিয়ে)

নির্ভীক:কেন?
আমি:আপনি আমাকে আপনার রুমে ঢুকতে দেননি।(অন্যদিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:অহ এই ব্যাপার?

বলেই উনি দেয়ালের দিকে এগিয়ে গেলেন। তারপর সেই চাঁদ ভাইয়া আর তার নিচে আমি লিখার উপর কিস করে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে পড়লেন।তারপর বললেন,
নির্ভীক:তুমি চাইলে এখনই আসতে পারো কিন্তু শর্ত একটায় এককালীন আসতে হবে,রাজি?

আমি:এটা কি ধরনের কথা?এখন আমি কি করে যাবো আর এককালিন ওখানে যাবো কেন?বাসায় আম্মু ভাইয়া ইচ্ছে সবাই আছে।

উনি শব্দ করে হাসলেন।হাসি থামিয়ে বললেন,

নির্ভীক:আমার কিউট পিচ্চি।এই পিচ্চি তোমার ঘুম নেই?ছোটবেলায় তো আটটা-নয়টায় ঘুমিয়ে যেতা।

আমি:আচ্ছা ভাইয়া দেয়ালে ‘আমি চাঁদ ভাইয়া’ এটা আপনি লিখেছেন?(ফ্লোরে বসে গ্রিলে হেলান দিয়ে)

নির্ভীক:না,না এমন কিউট কাজ আমি কখনও করতে পারি নাকি? আমি ছোটবেলায় একদমই কিউট ছিলাম না ওটাতো তুমি লিখেছো।জানো?তুমি একদিন এখানে এসে আমাকে বললে,”চাঁদ ভাইয়া আমি নিখতে পালি।” আমি বললাম,”কি লিখতে পারো?”তুমি তোমার হাতে থাকা খড়িমাটি দিয়ে এটা লিখলে।প্রথমে আমার নাম তারপর তোমার নাম না লিখে লিখলে আমি।(হেসে হেসে)

আমি:আমি কত বোকা ছিলাম।(হেসে)

নির্ভীক:বোকা নয় তুমি একটা কিউট দুষ্টু ছিলে।

আমি:আমি খুব দুষ্টু ছিলাম এজন্য আপনি আমাকে মেরেছিলেন?

নির্ভীক:তোমার মনে আছে?

আমি:না,কমলা খালা বলেছিল।

নির্ভীক:আমি আজও চাই ওই দিনটা আমার স্মৃতি থেকে মুছে যাক।এই হাত কেটে ফেলতে মন চাই।(ডান হাত দিয়ে জোড়ে দেয়ালে ঘুষি দিয়ে)

আমি:কি করছেন?লাগবে তো।(বিচলিত হয়ে)

নির্ভীক:যাও রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।গুড নাইট।

বলেই কল কাটলেন।আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে আবার উনার দিকে তাকালাম।উনি উঠে রুমে চলে গেলেন।এতক্ষণে আমার হুশ হলো আমি এত রাতে বেলকুনিতে আছি।ভয়ে শরীররে কাঁটা দিয়ে উঠলো।উঠে এক দৌঁড়ে রুমে গেলাম। বেলকুনির লাইট অফ করে দরজা লাগিয়ে বেডে এসে বসলাম।তারপর কিছু একটা ভেবে আবার বেলকুনির দরজা হালকা ফাঁক করে নির্ভীক ভাইয়ার বেলকুনিতে তাকালাম।উনি আবার এসেছেন।ফ্লোরে পা মেলে বসে কোলের উপর ল্যাপটপ নিয়ে মুখ গম্ভীর করে কিছু করছেন।ইশ্ কি সুন্দর লাগছে উনাকে।
ওয়ান মিনিট, কথায় কথায় উনাকে আমার এত সুন্দর লাগে কেন?(মনে মনে)
আমি বেলকুনির দরজা লাগিয়ে বেডে এসে শুয়ে পরলাম।তারপর ভাবতে থাকলাম উনাকে এত সুন্দর লাগার কারন কি।উনি তো এমনিই সুন্দর তারপরও আমার কাছে যেন উনাকে একটু বেশি সুন্দর লাগে।উনার সেই হাসি,উফ্ ওটা দেখলে মনটা যেন দারুচিনি দ্বীপে হারিয়ে যায়।উনার ভয়েস,মাই ফেভারিট।উনার কপালে পড়ে থাকা সিল্কি চুলগুলো দেখলেই ছুঁয়ে দিতে মন চায়।কালো চকচকে চোখের মনির দিকে তাকিয়ে থাকতে কেন এত নার্ভাস লাগে,হুয়াই?…উনার তরতরে লম্বা নাকটা বড্ড গ্লো করে,উনি কি নাকে হাইলাইট মেকআপ করেন?আচ্ছা,উনার নাকটাতে একটা কিসি দিলে কেমন হয়?…নাউজুবিল্লাহ্,এসব কি ভাবছিস অন্ত?লুচি মেয়েদের সাথে থেকে তুইও লুচি হয়ে যাচ্ছিস।কিন্তু আমি তো অন্যদের মতো সবাইকে এভাবে দেখিনা শুধু নির্ভীক ভাইয়াকেই তো দেখি।উনাকেই বা কেন দেখবো।উফ্ গড,হোয়ার আর ইউ?আমাকে বাঁচাও আমার কেমন কেমন যেন হচ্ছে।
এমন সময় ফোনে মেসেজ আসলো,নির্ভীক ভাইয়ার….

“আমার মস্তিষ্কের সবগুলো নিউরন আমাকে জানান দিচ্ছে তুমি আমাকে নিয়ে ভাবছো,কেন এমন করছো অন্ত?আমাকে কি পাবনার পাগলা গারদে পাঠাতে চাও?”

এইটা কি হলো?উনি কি করে জানলেন?আমি উনাকে রিপলাই করলাম,

“আপনি কিভাবে জানলেন,আপনার কথা ভাবছি?”

সঙ্গে সঙ্গে উনার আনসার চলে আসলো,

“ঘুমাও পিচ্চি নাহলে আই সোয়্যার এখনই তোমাকে তুলে নিয়ে আসবো।”

আমি ফোন রেখে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম।তারপর আবার কম্বল থেকে মাথা বের করে ইচ্ছের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম’কুম্ভকর্ণের নানি’।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here