#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব:২৭
সকাল সকাল উঠে হাত-পা ছড়িয়ে কান্না করছি।কারন জারিফ ভাইয়া আমাকে ট্যুরে যেতে দিবেনা।এখন ওই লোকটাকে নিয়ে যা পরিস্থিতি তাই আমার ওখানে যাওয়া ভাইয়া সেফ মনে করছেনা।কিন্তু আমি জেদ ধরে বসে আছি আর ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছি।ইচ্ছে ড্রেসিং টেবিলে বসে সাজছে আর আমাকে বলছে,
ইচ্ছে:সুন্দরি হওয়ার অনেক জ্বালা রে বইন।একটু কম সুন্দর হলেও পারতি তাহলে ওই লোকটা তোর পেছনে পরতোনা আর তোর ট্যুরেও যাওয়া হতো,।(কানে ইয়ার রিং পরতে পরতে)
ওর কথা শুনে এবার গলা ছেড়ে দিয়ে কাঁদতে লাগলাম।আম্মু রুমে এসে বিরক্ত হয়ে বলতে লাগলো,
আম্মু:এই চুপ,আর একবার কান্নার আওয়াজ পেলে মেরে গাল ফাটিয়ে দিবো।বড় হয়েছে তাও তার বাচ্চামি স্বভাব যাইনি।
আমি:আম্মু,আমিও যাবো…এ্যা এ্যা….না গেলে ভার্সিটি থেকে যখন প্রতিবেদন চাইবে তখন আমি কি করে প্রতিবেদন লিখবো,ওই মহিলা আমার থেকে বেশি মার্কস পাবে(ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে),,,এ্যা এ্যা এ্যা
ইচ্ছে:তুই বরং আমার কপি করিস।(হেসে হেসে)
আমি:আম্মু….(নিজের চুলগুলো এলোমেলো করে)
আম্মু:জারিফ না করেছে, তারপরও তুই গেলে যা আমার কি?
বলেই আম্মু চলে গেল।আমি যে ভাইয়ার আদেশ অমান্য করবোনা আম্মু সে ব্যাপারে নিশ্চিত।ইচ্ছে সাজ কমপ্লিট করে আমার সাথে সেলফি তুলে চলে গেল ভার্সিটি।আমি মন খারাপ করে বেডে উপুর হয়ে শুয়ে কাঁদতে থাকলাম।ওই বদ হুডি পরা লোকটাকে হাজারো গালি দিতে দিতে ঘুমিয়ে পরলাম।
উপুর হয়ে ঘুমোচ্ছিলাম কেউ আমাকে একঝটকায় তুলে চিৎ করে শুয়ে দিল।আমি পিট পিট করে ঘোলা চোখে তাকিয়ে দেখি কালো শার্ট পরা কেউ আমার পাশে বসে আছে।ঘুম এখনও কাঁটেনি তাই আমি আবার চোখ বন্ধ করে অন্যপাশ ফিরে শুলাম।কেউ এবার আমার নাক টেনে আমার মুখ তার দিকে ঘুরালো।আমি চোখবন্ধ রেখেই লোকটার হাত আমার নাক থেকে খুলে শক্ত করে ধরে থাকলাম যাতে আর নাকে হাত দিতে না পারে।ঘুমে চোখ খুলতে পারছিনা।মুখের উপর গরম বাতাস প্রবাহিত হতেই আমি মুচকি হাসলাম।হঠাৎই মনে হলো কেউ আমার ঠোঁটের কোনে কিস করলো।আমি ধরফরিয়ে উঠে বসে এক হাত দিয়ে কপালের চুলগুলো মাথার উপর ঠেলে তুলে দিয়ে সামনে বসা লোকটার দিকে তাকালাম।
আমি:ভাইয়া আপনি?(ঘুম জড়ানো কন্ঠে)
উনি বেডে বসে একহাত দিয়ে ফোন টিপছেন।আমার কথা শুনে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
নির্ভীক:গুড মর্নিং। (মিষ্টি হেসে)
আমি ভ্রু কুচকে উনার দিকে তাকিয়ে আছি আর কিছুক্ষণ আগের কথা ভাবছি।উনি কি আমাকে কিস করেছেন?কিন্তু উনাকে দেখে তো মনে হচ্ছে না, উনি তো একদম স্বাভাবিক হয়ে বসে আছেন।তবে কি আমি স্বপ্ন দেখলাম?হ্যা স্বপ্নই দেখেছি, উনি এসব পচা কাজ কখনও করতে পারেননা, আই নো।আমিই দিন দিন পচা হয়ে যাচ্ছি।ছিঃ এরকম একটা স্বপ্ন কি করে দেখলাম আমি, হাউ?(মনে মনে)
নির্ভীক:হোয়াট?(এক ভ্রু উচু করে) তাকিয়ে আছো কেন এভাবে?উঠো তাড়াতাড়ি ৭:৩৫ বাজে তোমাদের ভার্সিটি থেকে ৭টায় বাস ছেড়েছে।
উনার কথা শোনার সাথে সাথে কান্নায় আমার বুক ভারি হয়ে আসলো কারন একটাই, আমি ওদের সাথে যেতে পারলাম না।কোনরকমে কান্না আটকিয়ে বললাম,
আমি:আমিও যাবো ট্যুরে।(মাথা নিচু করে)
নির্ভীক:নিয়ে যাবো তো, সেজন্যই তো আসলাম।(দুই হাত দিয়ে আমার গাল ধরে) যাও তাড়াতাড়ি রেডি হও, আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।(গাল ছেড়ে দিয়ে)
উনার কথা শুনে আমি মহা খুশি।আমি একলাফে বিছানা থেকে নেমে রকেটের গতিতে ওয়্যারড্রপ থেকে গোলাপি কালার জর্জেট গাউন বের করে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম।১০মিনিট পর ভেজা চুল মুছতে মুছতে ড্রেসিং টেবিলেে গিয়ে বসলাম।হেয়ার ড্র্যায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে চিড়ুনি করে মাথার বামপাশে ছোট ছোট দুটো প্রজাপতি ক্লিপ বসিয়ে দিয়ে চুল খোলায় রাখলাম।কানে সাদা স্টোনের মাঝারি সাইজের ইয়ার রিং পরলাম।ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক দিলাম।চোখে কাজল দিয়ে চুলগুলো একপাশে এনে অন্যপাশে ওড়না পিন আপ করে নিলাম।ছোট ব্যাগে ফোন, পাওয়ার ব্যাংক, কিছু টাকা, পানির বোতল আর কয়েকটা টিস্যু পেপার ঢুকিয়ে নিয়ে জুতো পরে গট গট করে নিচে চলে এলাম।নিচে আসতেই দেখি জারিফ ভাইয়া আর নির্ভীক ভাইয়া ব্রেকফাস্ট করছে।কিন্তু নির্ভীক ভাইয়া খাওয়া বাদ দিয়ে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছেন।আমি ডাইনিং এর দিকে এগিয়ে যেতেই আম্মু বলল,
আম্মু:আয় খেতে বস।(প্লেটে ব্রেড দিয়ে)
আমি:খাবো না আম্মু।
জারিফ:বস এখানে।(পাশের চেয়ারে হাত দিয়ে)
আমি:খাবোনা ভাইয়া।(ভাইয়ার পাশে চেয়ার টেনে বসে)
জারিফ:হা কর।না খেলে যেতে দেবোনা,চাঁদ তুই ওকে নিয়ে যাবিনা।(মুখের সামনে খাবার দিয়ে)
নির্ভীক:ওকে।(খেতে খেতে)
আমি:খাচ্ছি তো।(ভাইয়ার হাত টেনে খাবার মুখে নিয়ে)
নির্ভীক ভাইয়া নিজের প্লেটের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছেন।খাবার খেয়ে আমরা বেরিয়ে পরলাম।জারিফ ভাইয়া অফিস যাওয়ার পথে আমাদের গাড়িতে করে বাস স্ট্যান্ড নামিয়ে দিয়ে গেল।বাসের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আমি নির্ভীক ভাইয়াকে বললাম,
আমি:আমরা বাসে যাবো?(এক্সাইটেড হয়ে)
নির্ভীক:ইয়াহ,চলো ভেতরে গিয়ে বসি।(আমার হাত ধরে)
বাসে উঠে উনি আমাকে জানালার ধারের সিটে বসিয়ে দিয়ে নিজে আমার পাশের সিটে বসলেন।প্রায় ২০-২৫ মিনিট পর বাস ছাড়লো।অনেক বছর বাসে উঠিনি, খুব ভাল লাগছে।কিন্তু বেশিক্ষণ এই ভাল লাগা থাকলোনা কারন কিছুদূর যেতেই আমার মাথা ঘুরতে লাগলো।আমি চোখ বন্ধ করে সিটে হেলান দিয়ে বসে আছি।নির্ভীক ভাইয়া আমার ডান হাত ঝাকিয়ে বললেন,
নির্ভীক:হোয়াট হেপেন্ড?ঘুমাচ্ছো নাকি?
আমি:মাথা ঘুরছে।(চোখ বন্ধ করে)
নির্ভীক:বমি পাচ্ছে?(আমার গালে হাত দিয়ে)
আমি:নাহ্
নির্ভীক:ওকে তাহলে দূরে ঐদিকে দেখ।ঐযে ছোট ছোট ঘর, গাছপালা, কত সুন্দর না?
আমি তাও চোখ বন্ধ করে আছি।উনি আমার বাম গালে হাত রেখে বললেন,
নির্ভীক:আরে তাকাও না বাবা।
এই প্রথম উনার কথাতে আমি বিরক্ত হচ্ছি।মাথা ঘুরলে তাকিয়ে থাকা যে কি কষ্ট যার ঘোরে সেই বুঝে।আমি এক রাশ বিরক্তি নিয়ে উনার দিকে তাকালাম। উনি একদম আমার কাছে, মনে হচ্ছে আমার সিটেই চলে এসেছেন।উনার বামহাতের কনুই আমার মাথার উপর সিটের সাথে ঠেস দিয়ে রেখেছেন।আর ডান হাত দিয়ে আমার গাল ধরে আছেন।আমি উনার চোখের দিকে তাকাতেই উনি আমার গাল জানালার দিকে ঘুরিয়ে দিলেন।তারপর মৃদু শব্দে কথা বলতে থাকলেন,
নির্ভীক:দূরে তাকিয়ে থাকো।অনেক দূরে, যতদূর তোমার চোখ যায়।বাস কাছের জিনিস গুলো খুব দ্রুত পাস করে যাচ্ছে যার জন্য তোমার মাথা ঘুরছে কিন্তু দূরের জিনিস গুলো দেখ অনেকটা স্থির। ওগুলো দেখ আর কথা বলো আমার সাথে তারপর দেখ আর মাথা ঘুরবেনা।
আমি উনার কথা অনুযায়ি কাজ করলাম।কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম আর মাথা ঘুরছে না। সারা রাস্তা এভাবেই দূরের প্রকৃতি দেখে আর উনার সাথে কথা বলেই নাটোর পর্যন্ত চলে আসলাম।নাটোর এসে বাস থেকে নেমে উনি আমাকে নিয়ে অটো রিক্সায় উঠলেন।
আমি:আর কত দূর?
নির্ভীক:বেশি না তিন কিলো।(চোখে সানগ্লাস পরতে পরতে)
কয়েক মিনিট পর আমরা চলে আসলাম নাটোরের উত্তরা গণভবনে।পার্কিং এরিয়াতে চোখে পরলো আমাদের ভার্সিটির বেগুনি আর নীল কালারের বাস যেখানে বড় বড় করে সাদা কালি দিয়ে লিখা আছে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়’।বাস এখানে তারমানে বন্ধুরা সব ভেতরেই আছে।
নির্ভীক ভাইয়া আমার হাত ধরে গণভবনের মূল ফটকের সামনে এসে দাঁড়ালেন।লাল আর সাদা রং করা এই রাজকীয় ফটকের উপরের দিকে রয়েছে পাথরের ঘড়ি।সেসময়ের রাজা ইংল্যান্ড থেকে এটি এনেছিলেন।প্রবেশদ্বারের লোহার গেইটে একটা সাইন বোর্ডে বড় বড় করে লিখা আছে ‘দিঘাপাতিয়া রাজবাড়ি বা উত্তরা গণভবন’। এতক্ষণ এসব দেখার পর আমি এবার মিষ্টি হেসে উনার দিকে তাকালাম।
নির্ভীক:চলো।(হাত ধরে মিষ্টি হেসে)
ভেতরে এসে আশেপাশে প্রচুর লোক দেখতে পেলাম। সবাই এই দৃষ্টি নন্দন ভবনটিকে দেখার জন্য এসেছে।আমরা মূল ভবন দেখলাম,মূল ভবনের সামনেই রয়েছে রাজার আবক্ষ মূর্তি।এছারাও শ্বেত পাথরের মূর্তি, কালো মূর্তি, পাহারি কন্যার মূর্তি এবং ছিপ হাতে বসে থাকা কালো মূর্তি দেখলাম।মূল ভবনের পরই সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দিত ভবন হলো ‘কুমার প্যালেস’।কুমার প্যালেসের সামনে একটা বিশাল কামান রাখা আছে।
দুপুরের খাবার খেয়ে আমরা আবার ভবনের দিকে আসলাম।নির্ভীক ভাইয়া আমাকে হৈমন্তি গাছ দেখালেন।এটা এক অদ্ভূত গাছ, গাছে কোন পাতা নেই শুধু অসংখ্য মরা ডাল।এখানে ৬টা পুকুর আছে, নির্ভীক ভাইয়ার সাথে সবগুলো পুকুর ঘুরে দেখলাম।আমরা পাখি অভয়াশ্রমেও গেলাম যদিও সেখানে পাখির দেখা মেলেনি তাও পাখিদের নিয়ে এমন উদ্যোগ ভাল লেগেছে। আমরা চিড়িয়াখানায় ও গেলাম সেখানে শুধু হরিণ আর বানর।ইতালি গার্ডেনে আমাদের ঢুকতে দেওয়া হলোনা।
বিকেল ৪:৩০ এর মধ্যেই আমাদের পুরোটা ঘুরে দেখা শেষ।৫:৩০ টায় গণভবনের গেইট বন্ধ করে দেওয়া হবে।আমাদের হাতে আরও এক ঘন্টা সময় আছে।আমরা একটা বাগানে এসে বসলাম।এখানে বড় আর মোটা কিছু প্রাচীন গাছ আছে।আমি আর নির্ভীক ভাইয়া শান বাধানো গাছতলায় বসে গল্প করছি।
আমি:আমার বন্ধুরা কোথায়?সারাদিন কেটে গেল ওদের দেখতে পেলাম না।
নির্ভীক:আমি ওদের দেখেছি।
আমি:আপনি দেখেছেন?আমাকে বললেন না কেন?(ভ্রু কুচকে)
নির্ভীক:তোমাকে বললে তুমি ওদের সাথে চলে যেতা তাই বলিনি,যখনই ওদের দেখেছি তোমাকে অন্যদিকে নিয়ে গিয়েছি।(ইনোসেন্ট মুখ করে)
আমি:ওদের সাথে দেখা হলে কত্ত মজা হতো।
নির্ভীক:আমার সাথে থাকতে তোমার ভাল লাগেনি।(মুখ গোমরা করে)
আমি:হুম খুব ভাল লেগেছে।কিন্তু ওদের সাথে গেলে আমি তাও আপনার সাথেই থাকতাম।
নির্ভীক:কি করে থাকতে? সবাই তোমাকে নিয়ে যা টানাটানি করে আমি তো তোমার সাথে কথা বলারই চান্স পেতাম না।(মুখ ফুলিয়ে)
আমি:ইউ মিন আমি আপনাকে অবহেলা করতাম?(মুখ মলিন করে)
নির্ভীক:নট এ্যাট অল।(আমার নাক টেনে)আচ্ছা যাওয়ার সময় ওদের সাথে ফিরবো।ওকে?
আমি:ওকে।(খুশি হয়ে)
উনার সাথে কথা বলতে বলতে খেয়াল করলাম আশেপাশে অনেক ছেলে আমার দিকে তাকাচ্ছে।আমি ফোনের স্ক্রিনে নিজের মুখ দেখলাম দাঁড়িয়ে ড্রেস ও দেখে নিলাম।সব তো ঠিকই আছে তাও ওরা কেন তাকাচ্ছে।(মনে মনে) আমার অসস্তি হচ্ছে তাই বারবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছি।
নির্ভীক:হোয়াট?(ভ্রু নাচিয়ে)
আমি:দেখুন না লোকগুলো কেমন করে তাকাচ্ছে।
নির্ভীক:চলো এখান থেকে।(চোখমুখ শক্ত করে)
আমরা মূল ফটকের কাছে আসতেই বন্ধুদের পেয়ে গেলাম।সবাই আমাকে দেখে অবাক সাথে খুশিও।ইচ্ছে তো মহা অবাক।
ইচ্ছে:প্রান্ত ভাইয়া এসেছে? (আমার কানে কানে)
আমি মাথা নাড়িয়ে না সূচক জবাব দিতেই ওর মুখমলিন হয়ে গেল।আমি ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছি আর নির্ভীক ভাইয়া আমাদের ডিপার্টমেন্টের স্যার ম্যামদের সাথে কথা বলছেন।৫টার কিছু পরই আমরা বাসে এসে বসলাম।বাসে উঠার সময় খেয়াল করলাম আমার লুচি বান্ধবি গুলো নির্ভীক ভাইয়াকে ডার্ক চকলেট বলছে।উনি কালো শার্ট পরে আছেন সেজন্য।আমি ফুলতে ফুলতে গিয়ে জানালার পাশে বসলাম। নির্ভীক ভাইয়া আমার পাশে এসে বসলেন।আমাদের সামনের সিটে তামান্না আর রিপন। পেছনের সিটে আইরিন আর ইচ্ছে, নির্ভীক ভাইয়ার পাসের সিটে ওই বদ লুচি মেয়ে সূচি আর আদনান আর বাকি জায়গাই অন্য রা।
বসে সবাইকে দেখছি এমন সময় আমার ফোনে সূচির মেসেজ আসলো,
“দোস্ত আমার সাথে সিট চেন্জ করবি?উনার মতো ডার্ক চকলেট এর পাশে বসতে পারলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করবো।”
আমি:নেভার,আমি ওই নানু ভাই এর কাছে বসতে পারবোনা।(রিপলাই করলাম)
সূচি:প্লিজ ইয়ার আয় না।আমার ডার্ক চকলেট… (আবার মেসেজ করলো)
আমি রেগে ফোন ব্যাগে ঢুকালাম।নির্ভীক ভাইয়া খুব মনোযোগ দিয়ে উনার ফোনে আমাদের আজকের তোলা ছবি গুলো দেখছেন।আমি ভাবছি কি করা যায়, যে করেই হোক উনার এই কালো শার্ট টার কিছু একটা ব্যবস্থা করতে হবে।আচ্ছা উনি তো ভেতরে সাদা টিশার্ট পরে আছেন আমি যদি উনাকে শার্ট খুলতে বলি তাহলে কেমন হয়?..না এটা বলা যাবেনা,এটা শুনতেই খারাপ লাগছে।আমি ভাবতে থাকলাম..
ভাবতে ভাবতে আমার গলা শুকিয়ে গেল।ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে দেখি বোতলে পানি নেই।
নির্ভীক:পানি খাবা?দাঁড়াও।এই রিপন..(সামনের সিটে বসা রিপন কে ডেকে)
রিপন:জ্বী ভাই।(লাফ দিয়ে সিট থেকে উঠে দাঁড়িয়ে)
নির্ভীক:ফ্রেশ ওয়াটার আছে?(ফোন প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে)
রিপন:জ্বী ভাই আছে কিন্তু অল্প খান।
বলেই রিপন একটা নতুন পানির বোতল উনাকে দিলেন।উনি বোতলের ছিপি খুলে আমাকে দিলেন।আমি পানি খাচ্ছি আর ভাবছি এখান থেকে একটু পানি দিয়ে যদি উনার শার্ট ভিজিয়ে দেয়া যায় তাহলে নিশ্চয় উনি শার্ট খুলবেন।এরই মধ্যে বাস চলতে শুরু করলো। সবাই হৈ হুল্লোর করছে। আমি দুবার চেষ্টা করেও উনার উপর পানি ফেলতে পারলাম না।তাই মুখ ফুলিয়ে বসে থাকলাম আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেলাম।
একটা মিষ্টি ডাকে চোখ খুললাম।তাকিয়ে দেখি ইচ্ছে আমার সামনের সিটে দুই হাতের কনুইয়ে ভর দিয়ে আমার দিকে ঝুকে আমাকে ডাকছে,
ইচ্ছে:বোনু?,,,বোনু??এই বোনু?
আমি:ভাবি..আর একটু ঘুমোতে দে(চোখ বন্ধ করেই)
নির্ভীক:হোয়াট, ভাবি?এই তুমি ওকে ভাবি ডাকছো কেন?কি হয়েছে তোমার?(আমার গাল ঝাকিয়ে)
আমি:উম?কি?কি হয়েছে?আপনি এখানে কেন?(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:চলো উঠো, আমরা চলে এসেছি। আর কত ঘুমাবা?এই রিপন ছেলেটা একটা ফাজিল, ঘুমের ঔষধ মেশানো পানি তোমাকে দিল।ও অবশ্য বলেছিল অল্প খেতে কিন্তু তুমি তো একটু রেখে সব খেয়ে নিলে।
আমি ভাল করে তাকিয়ে দেখি অন্ধকার হয়ে গিয়েছে।পুরো বাসে আমরা তিন জন আছি।নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আমার মন আনন্দে নেচে উঠলো কারন উনি ওই কালো শার্ট টা খুলে ফেলেছেন।আমি আনন্দটাকে প্রকাশ না করে উনাকে বললাম,
আমি:ভাইয়া আপনি না কালো শার্ট পরে ছিলেন?(হাই তুলতে তুলতে)
ইচ্ছে:বেহেনজি নিজের দিকে একটু তাকিয়ে দেখুন আর কথা না বারিয়ে চলুন বাসায় যাই।(বাস থেকে নামতে নামতে)
আমি নিজের দিকে তাকিয়ে অবাক।কারন কালো শার্ট টা আমার উপর দেওয়া।
আমি:এটা এখানে কেন?(তবে কি আমি ঘুমের মধ্যে উনার শার্ট খুলে নিয়েছি?আল্লাহ্ এমনটা যেন না হয়….মনে মনে)
নির্ভীক:তোমার শীত করছিল তাই দিয়েছি।চলো চলো।
যাক তাও ভাল আমি উনার শার্ট খুলে নেইনি।(মনে মনে)
বাস থেকে নেমে দেখি আমরা বাসার সামনে।বাস আমাদের বাসায় পৌঁছে দিয়ে গেল?বাহ্!ড্রাইভার আঙ্কেল খুব ভাল।(মনে মনে)
নির্ভীক ভাইয়া আমাদের বাসায় দিয়ে নিজের বাসায় ফিরে গেলেন।আমি কোনমতে ফ্রেশ হয়ে আবার ঘুমিয়ে পরলাম।
.
সকাল ১০টায় ঘুম ভাঙলো।উঠে দেখি ইচ্ছে এখনও ঘুমোচ্ছে।আমি ওকে ডাকলাম।
আমি:এই ছেরি উঠ।(পা দিয়ে ওর বডি ঝাকিয়ে)
ইচ্ছে:ঘুমোতে দে, সারারাত ঘুম হয়নি।(রাগি কন্ঠে)
আমি:সারারাত কি করেছিস হ্যা?(ভ্রু কুচকে)
ইচ্ছে আর কোন কথা না বলে অন্যপাশ ফিরে শুয়ে পরলো।আমিও ওকে বিরক্ত না করে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।ফ্রেশ হয়ে এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখি নির্ভীক ভাইয়ার ১৬টা মিসড কল।লাস্ট কল রাত ২:২৭।কি ব্যাপার এত বার কল দিয়েছেন কেন?আমি সঙ্গে সঙ্গে উনাকে কল দিলাম।কিন্তু উনি রিসিভ করলেন না।উনি ঘুমোচ্ছেন হয়তো তাই আর কল দিলাম না।সূচির দুটো মেসেজ এসেছে।কাল রাতের মেসেজ যখন আমরা বাসে ছিলাম, আমি তখন ঘুমিয়ে ছিলাম।
দুটো ছবি পাঠিয়েছে।ছবি গুলো দেখেতো লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে কারন একটা ছবিতে আমি নির্ভীক ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোচ্ছি আরেকটা ছবিতে নির্ভীক ভাইয়ার শার্ট আমার উপর আছে আর আমি উনার একবাহুতে হেলান দিয়ে ঘুমোচ্ছি।আমি সারারাস্তা এমন করে এসেছি?কি একটা অবস্থা।
এইবার আমি মেসেজ ওপেন করলাম।সূচি মেসেজে এ্যাঙ্গরি ইমোজি দিয়ে লিখেছে,
“আমার এত সুন্দর ডার্ক চকলেট কে তুই ১মিনিটে হোয়াইট ভানিলা আইস্ক্রিম বানিয়ে দিলি?..তবে হোয়াইট টিশার্টে উনাকে অনেক কিউট লাগছে। ”
আমি ওকে হাজারটা গালি দিতে দিতে বেলকুনিতে গেলাম।নির্ভীক ভাইয়ার বেলকুনিতে তাকিয়ে দেখি বেলকুনির দরজা লাগানো আমি ঠিকই ধরেছি উনি এখনও ঘুম থেকে উঠেন নি।এদিক ওদিক তাকিয়ে এটা ওটা দেখতে থাকলাম।তারপর নিচে আসতে লাগলাম। নিচে আসার সময় জারিফ ভাইয়ার ঘর থেকে নির্ভীক ভাইয়ার আওয়াজ পেয়ে থেমে গেলাম।দরজার কাছে একটু এগিয়ে যেতেই শুনতে পেলাম,
নির্ভীক:অজ্ঞাত ০.১ ফাইল যেদিন চুরি হয়েছে আমি সেদিন থেকে ধারনা করেছিলাম এসব ও করছে তারপর অন্তকে ফোন করলো তখন আমি ১০০% সিউর এসব ওরই কাজ।আর ওই লেটার আর হাত কাঁটা এসব অন্তকে ফাঁদে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা মাত্র।কাল আবার কি করেছে জানো?কয়েকটা ছেলেকে আমাদের পেছন পেছন নাটোর পাঠিয়েছে সেই ছেলেগুলো আবার আমাকে সব বলে দিয়েছে।হাহাহা,এই ব্রেন নিয়ে ও নিজেকে আগ্নেয়গিরি ভাবে,রিডিকিউলাস।
আমি দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে নির্ভীক ভাইয়াকে বললাম,
আমি:লোকটা কে?
নির্ভীক ভাইয়া বেডে বসে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন।উনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি আমাকে এখানে এক্সপেক্ট করেননি।
জারিফ:ছোটপাখি তুই?(সোফায় বসে)
আমি সোফার টেবিলের উপরে রাখা ল্যাপটপে একটা ছবির দিকে তাকিয়ে বেশ জোড়ে শোরেই বললাম,
আমি:শৈবাল….????????
চলবে………!