ভালোবাসি আমি যে তোমায় পর্ব: ৩২

0
2332

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব:৩২

“প্রোপানয়িক অ্যানহাইড্রাইড ও সোডিয়াম প্রোপানোয়েটের সাথে বিক্রিয়ায় আলফা মিথাইল সিনামিক এসিড উৎপন্ন হয়। উম,উম.. এ বিক্রিয়ার কৌশল সম্পর্কে উম..কিছু মত পার্থক্য…”

আমি:কি পড়ছিস এত?(উঠে বসে ঘুম ঘুম কন্ঠে)

ইচ্ছে:উঠেছিস?একটা ব্যাড নিউস আছে, আইরিন বলল আজ ক্লাস টেস্ট আছে।
আমি:কি?কোন কোন টপিক এর উপর?কয়টা বাজে?(লাফ দিয়ে বেড থেকে নেমে)

ইচ্ছে:৭:২৬ বাজে,১০:১৫ থেকে এক্সাম, ১৫টা কোয়েশ্চেন দিয়েছে। সবাইকে দুটো করে লিখতে হবে কার ভাগে কোনটা পরবে কেউ জানেনা।(আমার দিকে তাকিয়ে)

আমি:শীট!এখন কি হবে? দুদিন থেকে বই হাতে নেইনি।(ওয়াশরুম ঢুকতে ঢুকতে)

ইচ্ছে:আল্লাহ্ মালুম।

বলেই ইচ্ছে জোড়ে জোড়ে পড়া শুরু করে দিল।আমিও ফ্রেশ হয়ে এসে ডিরেক্ট বই নিয়ে বসে পড়লাম।মাথাটা ভারি হয়ে আছে কি পড়ছি কিছুই বুঝতে পারছিনা, আবার না পড়েও শান্তি পাচ্ছিনা।দুই ঘন্টা পড়ে ১৫টা কোয়েশ্চেন মোটামুটি ভাবে লিখার মতো আয়ত্ত করে নিলাম।তারপর রেডি হয়ে ব্রেকফাস্ট করে গেইটের কাছে আসতেই দেখি নির্ভীক ভাইয়া গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে হেসে হেসে কথা বলছেন।হালকা ধূসর প্যান্ট আর গাঢ় ধূসর টিশার্ট পরেছেন।এই কালারটাতে উনাকে দারুণ মানিয়েছে আর এই ড্রেসগুলো যেন শুধুমাত্র উনার জন্যই তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এত হেসে উনি কার সাথে কথা বলছেন।ওই মিষ্টি নামক মেয়েটার সাথে?ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল।

গাড়ির কাছে এসে দাঁড়াতেই নির্ভীক ভাইয়া কল কেটে ফোন পকেটে রেখে আমার কপালে হাত দিয়ে জ্বর চেক করে বললেন,
নির্ভীক:জ্বর নেই,মেডিসিন নিয়েছো সকালে?

আমি:না।(গাড়িতে উঠতে উঠতে)

নির্ভীক:হোয়াট?ওয়েট।

বলেই উনি বাসার ভেতরে চলে গেলেন।আমরা গাড়িতে উঠে বসলাম।আমি আর ইচ্ছে পেছনের সিটে বসলাম কারন ড্রাইভিং সিটে ড্রাইভার চাচা বসে আছেন।গাড়িতে উঠেই আমরা নোটস বের করে পড়তে লাগলাম।কিছুক্ষণের মধ্যেই নির্ভীক ভাইয়া ফিরে এলেন।উনি আমাকে মাঝখানে দিয়ে আমাদের সাথেই পেছনে বসলেন।তারপর আমাকে বললেন,
নির্ভীক:এটা খেয়ে নাও।(হাতে মেডিসিন দিয়ে)

আমি:জ্বর নেই তো।
নির্ভীক:তাও খেতে হবে, খাও।(আমার দিকে তাকিয়ে)

আমি ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে মেডিসিন খেয়ে নিলাম।তারপর আবার নোটস নিয়ে পড়তে লাগলাম।নির্ভীক ভাইয়াও কোলের উপর ল্যাপটপ নিয়ে কি যেন করতে লাগলেন।আমি পড়ছি আর আড়চোখে লুকিয়ে উনাকে দেখার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছিনা কারন উনাকে দেখতে হলে আমার মাথা ডানদিকে ঘুরাতে হবে আর আমি মাথা ঘুরালেই উনি কথা বলবেন যেটা আমি একদমই চাইছিনা।এখন থেকে আমি উনার সাথে যতটা সম্ভব কম কথা বলবো,কেন এমন করবো সেটা আমি নিজেও জানি না।

অর্ধেক রাস্তা আসার পর পড়াশুনায় আমি আর একটুও মনোযোগ দিতে পারছিনা।কারন নির্ভীক ভাইয়া এত কাছে থাকায় আমার কেমন অদ্ভূত ফিলিং আসছে।তাও মুখের সামনে নোটস ধরে রেখে নির্ভীক ভাইয়ার ল্যাপটপের দিকে তাকালাম। উনি মনে হয় কোডিং করছেন,এসব দেখেই আমার মাথা বিগরে যাচ্ছে কারন আমি এসব কিছুই বুঝিনা।তাই ল্যাপটপের দিকে না তাকিয়ে উনার হাতের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।উনার হাতের আঙুল গুলো কি সুন্দর লম্বা লম্বা,চিকন চিকন।ল্যাপটপের বাটন ক্রমাগত টিপার ফলে নখ গুলো গোলাপি হয়ে গিয়েছে,এগুলো দিয়েই উনি আমার গাল টানেন?উফ্,কি কিউট!বাম হাতের কব্জির কাছে মিচমিচে কালো একটা তিলও আছে দেখছি,আগে কখনও খেয়াল করিনি।লোমহীন ফর্সা হাতে এই কালো ঘড়িটা দারুণ লাগছে।কিন্তু একি, ঘড়িতে ১০:১৫ বাজে।আমাদের এক্সাম শুরু হয়ে গিয়েছে তো।

আমি:চাচাআআআ,,,তাড়াতাড়ি চলুন, অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে, এক্সাম এতক্ষণ শুরু হয়ে গিয়েছে।(চিৎকার দিয়ে একদমে)

আমার হঠাৎ এমন চিৎকার দেওয়ায় সবাই আতঙ্কিত হয়ে আমার দিকে তাকালো।ইচ্ছে ঘড়ি দেখে বলল,
ইচ্ছে:এখনও ২০ মিনিট টাইম আছে তো।

আমি:কি?তোর ঘড়ি নষ্ট।এই যে দেখ নির্ভীক ভাইয়ার ঘড়িতে ১০:১৬ বাজে।(ঘড়ির দিকে তাকিয়ে)

নির্ভীক:রিল্যাক্স,আমার ঘড়ি ২০মিনিট ফাস্ট চলে।(মুচকি হেসে)

আমি:২০ মিনিট?(অবাক হয়ে)
নির্ভীক:হুম।
আমি:এত কেন?(অবাক হয়ে)

নির্ভীক:এক্সামের জন্য করে রাখতাম যাতে ২০ মিনিট আগেই এক্সাম শেষ করতে পারি আর ভাল করে রিভিউ করতে পারি,ওটাই অভ্যাস হয়ে গেছে।(মুচকি হেসে)

ইচ্ছে:ওয়াও,তাহলে তো আপনি সবসময় আমাদের থেকে ২০ মিনিট ফাস্ট।(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)

আমিও নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকালাম উনি ল্যাপটপের স্ক্রিনে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন,
নির্ভীক:হুম।

আমি মনে মনে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।উফ্ কি টেনশনেই না পরেছিলাম।
আমাদের ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে নির্ভীক ভাইয়া উনার ক্যাম্পাসে চলে গেলেন।আমরা ক্লাসে এসে বসলাম। সবাই গুন গুন আওয়াজ করে পরছে।আমরাও পড়তে লাগলাম।কিছুক্ষণ পরই স্যার চলে আসলেন।নিয়ম অনুযায়ী আমাদের ২০মার্কসের এক্সাম শুরু হয়ে গেল।এক্সাম শেষ করে আমরা মাঠে চলে আসলাম।সবাই খুব হাসি খুশি মুডে ঘাসের উপর বসে আছি কারন সবার এক্সামই ভাল হয়েছে।রিপন কয়েকটা কাঁচা আম নিয়ে এসেছে সেগুলোই খাচ্ছি কিন্তু খুব টক।

আইরিন:একটু লবন থাকলে ভাল হতো।(মুখ কুচকে)
কিয়াম:লবন নারে চিনি,উফ্ কি টক দাঁত শির শির করছে।(এক চোখ বন্ধ করে মুখ কুচকে)

তামান্না:তোর দাঁতের প্রবলেম আছে,তুই আজ থেকে সেনসোডাইন টুথপেস্ট ইউজ করবি দেখবি সব শির শিরি দূর হয়ে যাবে।(হাসতে হাতসে)

সূচি:একদম।(হেসে)
কিয়াম:হা হা হা আর তোরা দাঁতের পোকা তাড়াবার জন্য কোলগেইট ইউস করিস, আই নো তোদের মেয়েদের সবার দাঁতে পোকা আছে।(হেসে)

আইরিন:পোকা?(রেগে)
সাফি:না ক্যাভিটি,দাঁতের মধ্যে কালো গর্ত।(মুচকি হেসে)

আমি:আরে ইয়ার, কেউ লবন নিয়ে আয় না একটু।লবন ছাড়া এত টক খেতেই পারবো না।(সবার দিকে তাকিয়ে)

আদনান:বাবু তুমি লবন খাবা? কিন্তু এখানে তো লবন নেই।(মাথা চুলকে)

আমি রেগে ওর মুখে একটা আম ছুড়ে মারলাম কিন্তু দূরভাগ্যবশত সেটা ওকে লাগলোনা।

আদনান:অ বাবু রাগ করলে তোমাকে আরও বেশি কিটউ লাগে।(চোখ মেরে)

ইচ্ছে:তোর বাবুটা লবন খেতে চাইছে আর তুই এসব বাজে বোকসিস?কেমন বাবারে তুই?(হেসে)

আদনান:ধূর,মুড টাই নষ্ট করে দিলি।(বিরক্ত হয়ে)

সূচি:নানুভাই,লবন নিয়ে আয় যা।
আদনান:কোথায় পাবো লবন?(সূচির দিকে তাকিয়ে)

আইরিন:এমনি কি আর মাথা মোটা বলি?..আমাদের ল্যাব থেকে নিয়ে আয় যা।(বিরক্ত হয়ে)

সূচি:হুম গুড আইডিয়া,আমাদের ল্যাবেই তো অনেক লবন আছে।
সাফি:তবে সোডিয়াম ক্লোরাইড নিয়ে আসবি অন্যকিছু যেন আবার নিয়ে আসিস না।

আদনান:ওকে আনছি,থাক তোরা।শান্তি নাই রে ভাই।(যেতে যেতে)

আমরা সবাই হেসে দিলাম।তারপর আমগুলো একটা ছোট চাকু দিয়ে পিস পিস করে কেটে নিলাম।কিছুক্ষণ পর আদনান একটা আয়োডিন যুক্ত লবনের প্যাকেট নিয়ে চলে এলো।
রিপন:কিরে এটা ল্যাব থেকে আনলি?(ভ্রু কুচকে)

আদনান:নারে ভাই,ক্যান্টিন থেকে আনলাম।(বসতে বসতে)

সাফি:ভাল করেছিস।ল্যাবের কিছু খাওয়া ঠিক নয়।সবই কেমিকেলে ঠাসা।

আদনান:ভাবলি কি করে আমার হুরপরীকে ল্যাবের জিনিস খাওয়াবো।(আমার দিকে তাকিয়ে)

আমি:দে তাড়াতাড়ি না হলে কিন্তু খাবই না।(বিরক্ত হয়ে)

সবাই বাম হাতের তালুতে লবন আর ডান হাত ভর্তি আমের পিস নিলাম।কেবল একটা আম মুখে দিব অমনি ব্যাগের মধ্যে ফোন বাজতে লাগলো।বাম হাতের লবন ইচ্ছের হাতে ঢেলে দিয়ে ফোন বের করে দেখি নির্ভীক ভাইয়া।
আমি:জ্বি ভাইয়া,বলুন।(রিসিভ করে)

নির্ভীক:কোথায় তোমরা?আমরা প্যারিস রোডে,বাসায় যাবো চলো।
আমি:এখনই?

নির্ভীক:হুম,কাম ফাস্ট।
আমি:ওকে।

বলেই কল কেটে দিলাম।ইচ্ছেকে বলে ফোন ব্যাগে ঢুকিয়ে ব্যাগ পিঠে নিয়ে আবার বাম হাতের তালুতে লবন নিলাম।আমগুলোও একটু বেশি করে নিয়ে উঠে দাঁড়ালাম।সবার থেকে বিদায় নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে আসলাম প্যারিস রোড।এখানে এসে দেখি নির্ভীক ভাইয়া আর প্রান্ত ভাইয়া গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে কয়েকটা ছেলের সাথে কথা বলছেন।আমি আর ইচ্ছে পেছনের সিটে এসে বসলাম।এখানে আগের থেকেই ল্যাপটপ রেখে একটা সিট বুক করা আছে।
প্রান্ত ভাইয়া এসে ড্রাইভার চাচার পাশে বসলেন আর নির্ভীক ভাইয়া এসে আমার পাশের ল্যাপটপ তুলে নিয়ে সেখানে বসলেন।তারপর আমাকে বললেন,

নির্ভীক:কি খাচ্ছো এসব?(ভ্রু কুচকে আমার দুই হাতের দিকে তাকিয়ে)

আমি:আম,খাবেন?এই নিন।(হাত এগিয়ে দিয়ে)
নির্ভীক:এখনই ফেলে দাও,এসব কেউ খাই?এসব খেলে শরীর খারাপ করবে।(হালকা রেগে)
আমি:কেন ফেলবো?আমি তো সবগুলো খাবো।(বাম হাতের তালুতে লবনের চারপাশ দিয়ে আমের পিস গুলো রাখতে রাখতে)
নির্ভীক:নেভার,দাও বলছি ওগুলো।(হালকা রেগে)

প্রান্ত:আরে খাক না,মেয়েরা এসব পছন্দ করে।(পেছনে তাকিয়ে)
ইচ্ছে:হুম।আপনারাও খান না, অনেক টেস্টি।
প্রান্ত:তোমরা খাও,আমি এসব টক খাবার খেতে পারিনা।(সামনের দিকে তাকিয়েই)

নির্ভীক ভাইয়া আর কিছু বললেন না। আমি আর ইচ্ছে খেতে লাগলাম।নির্ভীক ভাইয়া ল্যাপটপ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলেন।আমি আম খাচ্ছি আর ইচ্ছের সাথে কথা বলছি।লবনে আম ঠেকিয়ে কামড় দিয়ে একটু আম কেটে নিয়ে খাচ্ছি আবার লবন ঠেকিয়ে মুখে দিব অমনি নির্ভীক ভাইয়া আমার হাত টেনে নিয়ে আমের টুকরো মুখের মধ্যে নিলেন।আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম কিন্তু উনি একদম স্বাভাবিক হয়ে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি মুখ ফুলিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে লাস্ট পিস টা খেতে লাগলাম।দুই কামড় নিয়েছি আর এক কামড় নিলেই শেষ হবে।লবন মিশিয়ে যেই মুখে দিব অমনি নির্ভীক ভাইয়া আবার আমার হাত টেনে আমের টুকরো মুখে নিয়ে নিলেন।আমি রাগি চোখে উনার দিকে তাকালাম।উনি মুচকি হেসে আমার কানের কাছে মুখ এনে বললেন,

নির্ভীক:রাগ করছো কেন?তুমিই তো খেতে বলেছিলে।(ফিসফিস করে)
আমি:তাই বলে আপনি আমার খাওয়া গুলো খেয়ে নিবেন?লাস্ট বাইট ছিল ওটা,ভেবেছিলাম মুখে দিয়ে বাসা পর্যন্ত নিয়ে যাবো।(মুখ ফুলিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে জোড়ে)

ইচ্ছে:কি হয়েছে?(আমার দিকে তাকিয়ে)

ইচ্ছের হাতে এক পিস আম ছিল আমি সেটা মুখে দিয়ে বললাম,
আমি:এটা হয়েছে,বুঝেছিস হিমু?(রেগে)
ইচ্ছে:হুম খুব বুঝেছি।(মুচকি হেসে)

প্রান্ত:হিমু?হিমু কে?(পেছনে ঘাড় ঘুড়িয়ে)

আমি:ও,ওর নাম হিমু আর আপ..

আর কিছু বলতে পারলাম না। ইচ্ছে ওর লবন মাখানো বাম হাত দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরলো, তারপর রেগে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো।আমিও ওর হাত টেনে ওর দিকে রাগি চোখে তাকালাম কারন আমার মুখে লবন লেগে গেছে।ইচ্ছে মুচকি হেসে ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে আমার মুখ মুছে দিল।আমিও মুচকি হেসে ওর দিকে তাকালাম।

রাতে আমি আর ইচ্ছে ড্রইং রুমে দাঁড়িয়ে আছি।এখানে আপু আর রাযীন ভাইয়ার বিয়ের আলোচনা হচ্ছে।কিন্তু রাযীন ভাইয়া আর নির্ভীক ভাইয়া এখানে উপস্থিত নেই।কোথায় গিয়েছেন উনারা?(মনে মনে)

অ্যান্টি:আফ্রার এক্সাম কবে শেষ হবে?আমরা চাইছি বিয়েটা তাড়াতাড়ি হোক রাযীন তো তিনমাসের জন্য এসেছে।

জারিফ:আফ্রার আর একটা এক্সাম আছে।সামনের উইকের যেকোন দিন ঠিক করো তোমরা।

অ্যাঙ্কেল:সামনের শুক্রবার ভালোদিন।আফ্রা মার পরীক্ষাও শেষ হয়ে যাবে।তোমাদের কোন অসুবিধা না থাকলে শুক্রবারই বিয়ের দিন করা হোক।

আম্মু:আমাদের কোন অসুবিধা নেই।

জারিফ:বিয়ে এখানেই হবে?মানে ঢাকাতেই আমাদের পরিচিত লোক বেশি উনারাতো এখানে আসতে পারবেন না।

অ্যাঙ্কেল:হানিফের সাথে এব্যাপারে কথা হয়েছে।বিয়ে এখানে হবে আর দুই জায়গাতেই রিসেপশন পার্টির ব্যাবস্থা করা হবে।

আম্মু:তাহলে তো আর কোন কিন্তু রইল না।
অ্যান্টি:হুম এবার বিয়ের আয়োজন শুরু করতে হবে।

আম্মু:এই চম্পা মিষ্টি নিয়ে আয়।(চম্পাকে ডেকে)
চম্পা:আনতেছি।(কিচেন থেকে সাড়া দিয়ে)

চম্পা মিষ্টি নিয়ে এসে রাখতে না রাখতেই কলিং বেল বেজে উঠলো।চম্পা যেয়ে গেইট খুলে দিতেই নির্ভীক ভাইয়া, প্রান্ত ভাইয়া আর রাযীন ভাইয়া ভেতরে আসলেন।
নির্ভীক:অল সেট?কবে বিয়ে?(আমার পাশে দাঁড়িয়ে)

অ্যান্টি:সামনের শুক্রবার।
আম্মু:রাযীন বাবা বসো এখানে।

জারিফ:আয় এখানে বস।(পাশে ইশারা করে)

রাযীন ভাইয়া যেয়ে জারিফ ভাইয়ার পাশে বসলেন।নির্ভীক আর প্রান্ত ভাইয়াও গিয়ে বসলেন।আমি আর ইচ্ছে হাসি খুশি মুখ করে দাঁড়িয়ে ছিলাম হঠাৎ আমার হাসি উড়ে গেল নির্ভীক ভাইয়ার কথা শুনে।আম্মু সবাইকে মিষ্টি দিল।নির্ভীক ভাইয়া মিষ্টি নিয়ে বললেন,
নির্ভীক:অ্যান্টি আমাকে আরও দুটো মিষ্টি দাও তো,আই লাভ মিষ্টি।(মুচকি হেসে)

কথাটা শুনার সাথে সাথে আমার মন খারাপ হয়ে গেল।
উনি আবার মিষ্টিকে লাভ করার কথা বললেন।উনার দিকে তাকিয়ে দেখি মজা করে মিষ্টি খাচ্ছেন,ইচ্ছে করছে মিষ্টি গুলোকে উনার থেকে কেড়ে নিয়ে ব্লেন্ডারে দিয়ে পিষে ফেলি।ধূর কিছুই ভাল লাগছেনা।রুমে যাওয়ার জন্য এগুতেই আম্মু আমাকে মিষ্টি খাওয়ার জন্য ডাকলো।আমি কোনরকম একটা বাহানা দিয়ে মিষ্টি না খেয়েই রুমে চলে আসলাম।

রুমে এসেও কিছু ভাল লাগছেনা।বার বার একটা কথায় মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে,”হি লাভস মিষ্টি”।কিছুতেই মানতে পারছিনা।কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থেকে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে আবার নিচে যাওয়ার জন্য মনস্থির করলাম কিন্তু রুম থেকে বের হতেই কেউ আমাকে দেয়ালের সাথে ধাক্কা দিয়ে একহাত দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরলো।আমি চোখ বড় বড় করে সামনে তাকিয়ে আছি আর হাত খোলার চেষ্টা করছি।ভয়ে আমার আত্মা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে কারন আমার সামনে সেই হুডি পরা লোক দাঁড়িয়ে আছে।

এত শক্তি দিয়ে মুখটা চেপে ধরেছে যে আমি লোকটার হাত সরাতে পারছিনা।এখান থেকে সিঁড়ি দেখা যাচ্ছে কিন্তু কেউ আসছেনা এইদিকে।আমি আমার হাতে থাকা ফোন সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে সিঁড়ি বরাবর ফেলে দিলাম।অমনি লোকটা আমার দুইহাত তাঁর একহাত দিয়ে ধরে আমার কানের কাছে মুখ এনে বলল,

“জানপাখি,বলেছিলাম না নিয়ে যাবো?দেখ আমি এসে গেছি,চলো এবার যাওয়া যাক। ”

বলেই পকেট থেকে কিছু একটা বের করে আমার নাকের কাছে স্প্রে করে দিল।আমি নিঃশ্বাস আটকে রাখার চেষ্টা করেও ২সেকেন্ডের বেশি আটকে রাখতে পারলামনা কারন ভয়, আতঙ্ক আর মুখ চেপে ধরে থাকায় ঘন ঘন নিঃশ্বাস পরছিল।নিঃশ্বাস নিতেই আমার সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসলো।আমি ঝাপসা চোখেই সিঁড়ির দিকে তাকালাম,কাউকে দেখা যাচ্ছে কিন্তু চিনতে পারছিনা।হঠাৎ লোকটা আমাকে ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে চলে গেল আর আমি সজোরে ফ্লোরে লুটিয়ে পরলাম।

মুখের উপর পানির ছিটা পরাতে ধীরে ধীরে চোখ খুলে দেখি সবাই আমাকে ঘিরে ধরে আছে।আমি মেঝেতে শুয়ে আছি,মনে হচ্ছে নির্ভীক ভাইয়ার কোলে মাথা দিয়ে আছি।উনি আমার গালে হাত রেখে ব্যস্ত হয়ে বলছেন,
নির্ভীক:আর ইউ ওকে?
জারিফ:ছোটপাখি?(হাত ধরে ঝাকিয়ে)
আম্মু:অন্ত সোনা..
অ্যান্টি:এই তো চোখ খুলেছে আর কোন চিন্তা নেই।
নির্ভীক:কথা বল।

আমি সবার দিকে তাকিয়ে আছি।ঘুম পাচ্ছে তাই চোখ বন্ধ করে নিলাম।কিন্তু ওদের কথা শুনতে পাচ্ছি।

রাযীন:এখনই তো ঘটলো ঘটনাটা,ভয় পেয়েছে খুব আর ক্লোরোফর্ম দিয়েছে মনে হয়।কিছুক্ষণ পর নিজের থেকেই জেগে যাবে,একটু টাইম দাও ওকে।

নির্ভীক:কিছু হয়নি ওর।উঠো,কথা বলছোনা কেন?(আমার গালে হাত দিয়ে)

আর কিছু শুনতে পেলাম না।জানিনা কত সময় এভাবে ছিলাম।আবার চোখ খুলে দেখি আমি বেডে শুয়ে আছি।আমাকে তাকাতে দেখে সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।জারিফ ভাইয়া আমাকে বেডে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিল।
প্রান্ত:দাঁড়াও আমি নির্ভীক কে নিয়ে আসছি।

বলেই উনি রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন।আমি জারিফ ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম।

আমি:ভাইয়া।

জারিফ:ভয় পাসনা কিছু হয়নি।(আমার মাথা নেড়ে)

আম্মু:এই নে একটু পানি খা।(মুখের কাছে পানি ধরে)

অ্যাঙ্কেল:এভাবে আর হবেনা, আমি কাল থেকেই গার্ডসের ব্যাবস্থা করবো।

তখনই নির্ভীক ভাইয়া হন হন করে ভেতরে আসলেন।উনার পেছন পেছন প্রান্ত ভাইয়া আর রাযীন ভাইয়াও আসলেন।নির্ভীক ভাইয়া আমার সামনে এসে বসলেন।উনার মুখ একদম শুকনো শুকনো দেখাচ্ছে।

নির্ভীক:ঠিক আছো তুমি?(উনার হাতের মুঠোই আমার হাত নিয়ে)

আমি:হুম,ওই লোকটা কোথায়?(উনার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:পালিয়ে গিয়েছে। (চোখ মুখ শক্ত করে)

জারিফ:কি হয়েছিল তখন?

আমি:আমি রুম থেকে বের হয়ে নিচেই যাচ্ছিলাম কিন্তু কোথায় থেকে লোকটা এসে দেয়ালে ধাক্কা দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরে বলল আমাকে নিতে এসেছে, নিয়ে যাবে।তারপর মুখে কি যেন স্প্রে করলো।

জারিফ:মিষ্টিপাখি না থাকলে যে কি হতো,আমরা তো কেউ বুঝতেই পারতাম না।

আমি:আমি সিঁড়িতে ফোন ছুড়েছিলাম তোমরা বুঝতে পারোনি?
জারিফ:না।
ইচ্ছে:নির্ভীক ভাইয়া তোকে ডাকতে পাঠিয়েছিল তাই তোর কাছে আসছিলাম।সিঁড়ির উপরের ধাপে এসে দেখি তোর ফোন ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। সামনে আমাদের রুমের দিকে তাকিয়ে দেখি ওই লোকটা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে তোর মুখ চেপে ধরে আছে।আমি ভয় পেয়ে চিৎকার দিতেই লোকটা তোকে ছেড়ে দিয়ে ছাদের দিকে পালিয়ে গেল আর তুই নিচে পরে গেলি।

জারিফ:আমরা আসতে আসতে পালিয়ে গিয়েছে ।
নির্ভীক:ও কিছু বলেছে তোমাকে?

আমি:হুম,আমাকে নিয়ে যাবে বলেছে।(ভয় পেয়ে)
নির্ভীক: ডোন্ট ওরি,কোথাও নিয়ে যেতে দিব না।(আমার হাত নেড়ে)আমি আজই লোকটাকে ধরে ফেলবো দেখো তারপর আর এমন করতে পারবেনা।

প্রান্ত:কি করে ধরবি?পালিয়ে গেছে তো।(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:পালিয়ে যাওয়া এতই সোজা নাকি।(বাঁকা হেসে)

ঘড়িতে রাত ১টা বাজে।আমার চোখে ঘুম নেই।ভয়ে রুমের লাইট জ্বালিয়ে রেখেছি।ইচ্ছেও ভয় পাচ্ছে।ইচ্ছে বলছে,
ইচ্ছে:লোকটাতো খুবই ভয়ঙ্কর হয়ে এসেছিল।ওকে দেখেই আমার অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা হয়ে গিয়েছিল।

আমি:লোকটা কেন এমন করছে?
ইচ্ছে:লোকটা কে ধরতে পারলেই সব জানা যাবে।

আমি:ওই লোকটা আমার কোন ক্ষতি করে দিবে।(ভয় পেয়ে)
ইচ্ছে:কিছু করতে পারবেনা।জারিফ ভাইয়া আছে তো।আর নির্ভীক ভাইয়া তোর কিছু হতেই দিবেনা।তুই জানিস?তুই চোখ খুলছিলিসনা দেখে নির্ভীক ভাইয়া তোকে ডেকে ডেকে হয়রান হয়ে যাচ্ছিলো তারপর রাযীন ভাইয়া উনাকে নিয়ে জারিফ ভাইয়ার রুমে চলে গিয়েছিলেন।

আমি:সবাই ছিল তাও তো লোকটা এত কিছু করে ফেলল।

ইচ্ছে:চিন্ত করিসনা, তুই একটু ঘুমা,নে শুয়ে পর।
দুজনই শুয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পরলাম।

.
চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গলে তাকিয়ে দেখি অনেকটা সকাল হয়ে গিয়েছি। ইচ্ছে পাশে নেই।নিচ থেকে জারিফ ভাইয়ার চিৎকার শুনতে পাচ্ছি।কারও কিছু হলো না তো?(মনে মনে)
উঠে এক দৌঁড়ে নিচে আসলাম।এখানে এসে আমি অবাক কারন আরাফ ভাইয়া এসেছে।জারিফ ভাইয়া আরাফ ভাইয়ার বুকের কাছে শার্ট খামছে ধরে বলছে,

জারিফ:তোকে আজ আমি খুনই করে ফেলবো।(রেগে)

ইচ্ছে কাঁদতে কাঁদতে আমার কাছে এসে দাঁড়ালো।আর বলল,
ইচ্ছে:কালকের ওই লোকটা আরাফ ভাইয়া।

আমি অবাক হয়ে ইচ্ছের দিকে তাকালাম।তারপর আরাফ ভাইয়ার দিকে তাকালাম আর ভাবলাম,এই শয়তানটার দ্বারা সবই সম্ভব।কিন্তু একে ধরলো কি করে?(মনে মনে)

আরাফ:কর খুন,আমি মরতেই চাই।(রেগে জারিফ ভাইয়ার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে)

তারপর আরাফ ভাইয়া আমার সামনে এসে দাঁড়াতেই নির্ভীক ভাইয়া আমার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,
নির্ভীক:স্টে অ্যাউওয়ে।(আরাফ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)

আরাফ:সি ইজ মাইন,আমিও দেখবো তোরা কি করে আমার থেকে ওকে আলাদা করিস।(নির্ভীক আর জারিফ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে রেগে)

নির্ভীক:ওকে,কিপ ট্রায়িং।(শান্ত কন্ঠে)
আরাফ:চ্যালেঞ্জ করছিস আমাকে?(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:নট এ্যাট অল,আমি তোমাকে সমর্থন করছি।(শান্ত কন্ঠে)
আরাফ:চ্যালেঞ্জ একসেপ্ট করলাম।
বলেই হন হন করে বেড়িয়ে গেল।

জারিফ:আমি ওকে পুলিশে দিব।(ফোন বের করে)

নির্ভীক:কোন দরকার নেই।ওকে ওর মতো থাকতে দাও।(জারিফ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)

জারিফ:তুই বুঝতে পারছিস না এরকম করতে করতে ও…
নির্ভীক:ডোন্ট ওরি(জারিফ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)প্রান্ত,আয় আমার সাথে।(প্রান্ত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)

বলেই উনারা বেড়িয়ে গেলেন।জারিফ ভাইয়া কাকে যেন ফোন করছে।আম্মু আমাকে রুমে যেতে বলল।আমি আর ইচ্ছে রুমে আসলাম।ইচ্ছের মন খুব খারাপ।আমি ওকে বললাম,
আমি:আরাফ ভাইয়াকে কি করে ধরলো?

ইচ্ছে:নির্ভীক ভাইয়াতো সাংঘাতিক জিনিয়াস।আগে থেকেই উনি সব জানতেন কিন্তু প্রমান ছিলনা।আরাফ ভাইয়া ছাদ থেকে নামার সময় হয়ত কোথাও কেটে গিয়েছিল,নিচে রক্ত পরেছিল।

আমি:শুধু রক্ত দিয়ে কিভাবে…জানলো?

ইচ্ছে:অনেক কাহিনী,আরাফ ভাইয়া রাজশাহী তেই ছিল।নির্ভীক ভাইয়া জানতেন তাই রাতে ওই রক্ত আর আরাফ ভাইয়াকে নিয়ে ল্যাবে চলে গেলেন।আরাফ ভাইয়া কিছুতেই যেতে চায়নি জারিফ ভাইয়া মেরে পিটে নিয়ে গিয়েছে,তারপর ডিএনএ টেস্ট করিয়েছে।যদিও আরাফ ভাইয়ার এখানে থাকাতে সবটা পরিষ্কার ছিল তাও নির্ভীক ভাইয়া জোড় করে টেস্ট করিয়েছেন।রিপোর্ট পজিটিভ,ভাইয়া সব স্বীকার করেছে।

আমি:এখন কি হবে?
ইচ্ছে:জানিনা।আরাফ ভাইয়া তো এখন আর লুকিয়ে কিছু করবেনা।যা করার সবার সামনেই করবে।আমার ভয় করছে।

আমি:আমারও।
ইচ্ছে:তোকে সাবধানে থাকতে হবে।

আমি কিছু বলবো তখনই নির্ভীক ভাইয়া ইচ্ছের কাছে ফোন দিলেন,
ইচ্ছে:হ্যালো,ভাইয়া।(রিসিভ করে)
নির্ভীক:….।

ইচ্ছে:নে কথা বল।(আমার দিকে ফোন এগিয়ে দিয়ে)
আমি:জ্বি ভাইয়া বলুন।(ফোন নিয়ে)

নির্ভীক:রেডি হও আমি আসছি।
আমি:কোথায় যাবো?
নির্ভীক:এসে বলছি,বাই।

বলেই কল কাটলেন।আমি ইচ্ছেকে বলে ওয়াশরুমে ঢুকলাম।

চলবে…………

(ডিয়ার পাঠক-পাঠিকা,আজকের পার্ট কেমন হলো জানাবেন।আরাফ এত কিছু করেও কেন শাস্তি পাচ্ছেনা এসব ভেবে বিরক্ত হবেন না কারন শত ভুল করলেও নিজের লোকদের মেরে ফেলা বা কঠিন শাস্তি দেওয়া যায় না।তাও অনেক সময় শাস্তি দিতে হয়,পরিস্থিতি বুঝে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here