ভালোবাসি আমি যে তোমায় পর্ব: ৪০

0
1956

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব:৪০

রাতে বেলকুনিতে লাইট অফ করে অন্ধকারে একা একা বসে আছি।এখানে বসে থাকার একটায় উদ্দেশ্য সেটা হলো নির্ভীক ভাইয়াকে দেখা,উনি রাতে কিছু সময়ের জন্য বেলকুনিতে আসেন।সেজন্য আমি সন্ধ্যার থেকে এখানে এসে বসে থাকি।কয়েকদিন ধরে উনার সামনে তেমন যাই না,কথাও বলি না কারন উনি তো অন্যকাউকে ভালোবাসেন।যেদিন থেকে মায়ার কথা জানতে পেরেছি সেদিন থেকে আমি দূরে সরে এসেছি।আমি এটা মানতেই পারিনা খুব কষ্ট হয়।আমি উনাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি।কিছু ভাল লাগে না আমার।উনি অন্যকাউকে ভালোবাসেন এই কথা ভাবলেই আমি উনার সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলি।

সন্ধ্যার থেকে বসে আছি কিন্তু উনি এখনও আসেননি।এখন রাত ৯টা বাজে।আম্মু খেতে ডাকতে এসেছে।আমি খাবোনা বলে ওয়াশরুমে ঢুকে বসে থাকলাম।আম্মু কিছুক্ষণ বকাবকি করে চলে গেল।আমি ফ্রেশ হয়ে একটা থ্রী কোয়াটার প্যান্ট আর নির্ভীক ভাইয়ার দেওয়া পাখি প্রিন্ট করা টিশার্ট পরে বেড়িয়ে আসলাম।এগুলো আমার রাতের পোষাক,এই টিশার্ট না পরলে আমার ঘুমই হয়না।

আয়নার সামনে এসে বুকের কাছের ফিয়ারলেস লোগোটা কিছু সময় নিয়ে দেখে কিছু একটা ভেবে বেলকুনিতে গেলাম।নির্ভীক ভাইয়ার বেলকুনিতে তাকিয়ে দেখি উনি বেলকুনিতে এসেছেন।কানে ফোন ধরে হাঁটা হাঁটি করছেন।একহাত দিয়ে কপালের চুলগুলো মাথার উপর চেপে ধরে আছেন অন্যহাতে কানে ফোন ধরে আছেন।উনাকে খুব অস্থির দেখাচ্ছে। আজকে সারাটাদিন উনার সাথে দেখা করিনি।বিকেলে এসেছিলেন আমাদের বাসায় আমি দরজা বন্ধ করে রুমে শুয়েছিলাম।ফোন করেছিলেন ফোন অফ করে রেখে দিয়েছি।ওয়ান মিনিট,উনিকি এখন আমাকে ফোন করছেন নাকি?

ভেবেই আমি রুমে এসে ফোন অন করলাম।ফোন অন করার কিছু পরই নির্ভীক ভাইয়ার ফোন আসলো।আমি ভয়ে ভয়ে কল রিসিভ করে কানে ধরতেই উনি রাগী কন্ঠে বললেন,
নির্ভীক:আই উইল কিল ইউ,অন্ত।তোমার সাহস কি করে হয় আমার সাথে এমন করার?কেন এমন করছো?

আমি:আপনি….
নির্ভীক:কি আপনি হ্যা?সকাল থেকে তোমাকে ফোনে পাইনি আর আমার সাথে কথা বলছোনা,সামনে আসছোনা।কেন?(রেগে)

আমি কিছু বললাম না।আসলে আমার কিছু বলারই নেই।আমি কয়েকদিন ধরে উনাকে এভাবে ইগনোর করছি।ইচ্ছে থাকতে নির্ভীক ভাইয়া ওর ফোনে কল দিয়ে আমার সাথে জোড় করে কথা বলতো আর দেখাও করতো আর এখন ইচ্ছে নেই, চারদিন আগে ও ফুপ্পি আর আরাফ ভাইয়ার সাথে ওদের বাসায় গিয়েছে।তাই এই চারদিন ধরে নির্ভীক ভাইয়ার সাথে আমার মাত্র চারবার দেখা হয়েছে তাও কিছু সময়ের জন্য আর সেটাও উনি জোড় করে দেখা করেছেন বলে।

নির্ভীক:কথা বল ডামেট।কি সমস্যা কি তোর হ্যা?আমাকে কি মানুষ মনে হয় না তোর?কি চাস বল,আমি মরে যায় সেটাই চাস তুই? (রেগে)

আমি তো অনেক আগেই কেঁদে দিয়েছি কিন্তু উনার এত রেগে যাওয়াতে এইবার জোড়েই কেঁদে ফেলেছি।আমার কান্নার আওয়াজ শুনে উনি বললেন,
নির্ভীক:উফ্ আমি জাস্ট পাগল হয়ে যাচ্ছি।ওয়েট আসছি আমি।(রেগে)

বলেই উনি কল কেঁটে দিলেন।আমি ফ্লোরে বসে কাঁদতে থাকলাম।হঠাৎ মনে হলো উনি তো আসতে চাইলেন।উনি তো অনেক রেগে আছেন,উনি মনে হয় আজ আমাকে খুন করে ফেলবেন।এত দিনে উনার রাগ সম্পর্কে আমি খুব ভাল করে জেনে গিয়েছি,রেগে গেলে উনি যা ইচ্ছা করে ফেলতে পারেন।আমি দ্রুত ফ্লোর থেকে উঠে থ্রী কোয়াটার প্যান্টের উপরে একটা স্কার্ট পরে নিলাম আর গায়ে একটা ওড়নাও জড়িয়ে নিলাম।তারপর দরজা ভেতর থেকে লক করে দিলাম।যাতে উনার সাথে দেখা করা না লাগে।কিছুক্ষণের মধ্যেই দরজার বাহিরে নির্ভীক ভাইয়া আর জারিফ ভাইয়ার কথা শুনতে পেলাম।
জারিফ:কি হয়েছে চাঁদ?এনিথিং রং?

নির্ভীক:ভাইয়া আমি বাবাকে সব বলে এসেছি।অন্তকে নিয়ে গেলাম ২ঘন্টার মধ্যে ফিরে আসবো।(হালকা রেগে)

জারিফ:এত রাতে কোথায় যাবি?
নির্ভীক:অন্ত?অন্ত?অপেন দ্যা ডোর।অন্ত?(দরজায় জোড়ে জোড়ে ধাক্কা মেরে)
জারিফ:ছোটপাখি?দরজা খোল।

ভাইয়ার কথা শুনে আমি একটু সাহস করে ধীর পায়ে হেঁটে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম।ভাবলাম ভাইয়ার সামনে নির্ভীক ভাইয়া আমাকে তেমন কিছু বলবেন না,দুচারটে বকা দিয়ে ছেড়ে দিবেন কিন্তু আমার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল ছিল।দরজা খুলতেই নির্ভীক ভাইয়া আমাকে সজোড়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন।আমি একহাতে গাল ধরে দাঁড়িয়ে আছি,সবকিছু ঝাপসা লাগছে এমন সময় একটা কথায় কানে এলো,”ছোটপাখি?”

মুখের উপর পানি পরাতে চোখ খুলে দেখি নির্ভীক ভাইয়া আমার দিকে ঝুকে আমার গালে হাত দিয়ে ভীত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমাকে তাকাতে দেখেই উনি ঝড়ের গতিতে আমাকে টেনে তুলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন।
কিছুক্ষণ পর আমাকে ছেড়ে দুইহাত আমার দুগালে রেখে বললেন,
নির্ভীক:আর ইউ ওকে?আমি খুব সরি।আমি রেগে ছিলাম তখন।প্লিজ ফরগিভ মি।

এতক্ষণে আমার সবটা মনে পরলো।উনি আমাকে থাপ্পড় দেওয়ার পর আমি সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলাম।আমি আমার গাল থেকে উনার হাত সরিয়ে দিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখি আমরা নদীর ধারে একটা নির্জন জায়গায় ঘাসের উপর বসে আছি।চাঁদের আলোয় সব দেখা যাচ্ছে।কিছুটা দূরে একটা সাদা গাড়ি দেখা যাচ্ছে,এটা নির্ভীক ভাইয়াদের গাড়ি।চারপাশে দেখে আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

আমি:আমরা কোথায়?ভাইয়া কোথায়?আমি ভাইয়ার কাছে যাবো।(ভীত চোখে)

নির্ভীক:আমরা নদীর ধারে এসেছি। ভাইয়া তো কাজ করছে।কিছুক্ষণ পরই আমরা ফিরে যাবো।এই নাউ একটু পানি খাও।(আমার মুখের কাছে পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে)

আমি উনার দিকে তাকিয়ে দুঢোক পানি খেলাম।উনি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আমাকেও ধরে তুলে দাঁড়করালেন।তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,

নির্ভীক:অন্ত?আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে?

উনার কথা শুনে আমি উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলাম।উনি আমাকে আরও শক্ত করে ধরে আমার কাঁধে থুতনি রেখে বললেন,
নির্ভীক:প্লিজ ধরো না একবার।

আমি কাঁপা কাঁপা হাত উনার পিঠে রাখতেই উনি আমাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন।আমার মনে হচ্ছে আমি ভর্তা হয়ে যাচ্ছি।হাসফাস করতে করতে বললাম,
আমি:ছাড়ুন,লাগছে আমার।

উনি আমাকে ধীরে ধীরে ছেড়ে দিয়ে আমার কপালে কিস করে আমার কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে বললেন,

নির্ভীক:ভালোবাসি,অনেক বেশি ভালোবাসি তোমাকে।

এটুকু বলেই উনি আমার কপালে আরেকটা কিস করলেন।আমি তো হতবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।কি বলছেন উনি এসব,উনি তো মায়াকে ভালোবাসেন তাহলে আমাকে এসব বলছেন কেন।উনি আমাকে এক ঝটকায় উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আমার কানের কাছে মুখ এনে বললেন,

“আমার মনের আকাশে আমি একা ছিলাম হঠাৎ একদিন সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেল,আমি বুঝতে পারিনি কি হলো।ধীরে ধীরে বুঝলাম আমার মনের আকাশে একটা ছোটপাখি বাসা বেঁধেছে।আর সেই ছোটপাখিটা তুমি।এত দুষ্টু পাখি!সব সময় আমার আকাশে উড়ে বেড়াও,আমাকে বার বার অনুভূতি শূন্য করে দাও।আমি সব সময় ঘোরের মধ্যে চলে যাই।তুমি একটা মায়াপরী,সব সময় আমার উপর মায়া কর,এমন মায়া যেই মায়া থেকে আমি কখনও বের হতে পারিনা।”

উনি এবার আমাকে নিজের দিকে ঘুরালেন।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

“অনেক রাত কেঁটে গিয়েছে যে রাত গুলোতে শুধু তোমাকে নিয়ে ভেবেছি,তোমার কথা ভেবে হেসেছি,তোমার কথা ভেবে কেঁদেছি।যখন তোমাকে মিস করতাম তখন সারারাত চাঁদের পাশের ওই তারাটার সাথে গল্প করতাম।সবাই আমাকে চাঁদ বলে আর আমি তোমাকে চাঁদের পাশের শুকতারা বলি।যখন তুমি আমার কাছে ছিলে না তখন আমি কি ভাবতাম জানো?আমি ভাবতাম তুমি নেই তাতে কি বাতাসে তোমার প্রশ্বাস আছে যেটা আমি সবসময় অনুভব করি।আমি প্রত্যেক বার শ্বাস নেওয়ার সময় তোমার প্রশ্বাস নিই।মাঝে মাঝে তোমাকে না পাওয়ার শূন্যতায় ডুবে যেতাম আমি,মরে যেতে ইচ্ছে করতো আমার।প্রান্ত আর জারিফ ভাইয়া না থাকলে আমি এতদিন সুইসাইড করতাম ইভেন কয়েকবার সুইসাইড এটেমপ্ট করেছিও। তাছাড়া কি করতাম বলো?তুমিবিহীন আমার প্রত্যেকটা দিন সাহারা মরুভূূমির মতো ছিল।”

উনি কথা গুলো বলছেন আর উনার চোখ দিয়ে টপাটপ জল গড়িয়ে পরছে।উনার কথা শুনে আমিও কাঁদছি।উনি দুই হাত দিয়ে আমার চোখ মুছে দিয়ে বললেন,

“আমি সব সময় ভয়ে থাকতাম,তুমি যদি আমাকে ভালোনাবেসে অন্যকাউকে ভালোবাসো?আমি শেষ হয়ে যাবো তাহলে।আমার প্রত্যেকটা মোনাজাতে আমি তোমাকে চেয়েছি।আমার ভালোবাসা সত্যি অনেক শক্তিশালী,যার জন্য আজ আমাকে ছাড়া তুমি কাউকে ভালোবাসতে পারোনি।আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি পিচ্চি,তুমি বুঝতে পারছো?আই থিংক বুঝতে পারছো না।কেন বুঝতে পারছোনা?আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।আমি বুঝাতে পারছিনা তোমাকে।”

উনি এবার আমাকে ছেড়ে দিয়ে কিছুটা দূর যেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলেন,

“আমি তোমাকে ভালোবাসি,বুঝেছো তুমি?আই লাভ ইউ।ভালোবাসি তোমায়,ঐআকাশের চেয়ে বেশি ভালোবাসি তোমায়।ভালোবাসি তোমায় মায়াপরী।”

উনার কথার প্রতিধ্বনি হচ্ছিল।এত জোড়ে চিৎকার করে বলছিলেন যে আমার শরীরের লোম কাঁটা দিয়ে উঠেছে।আমার কথা বলার ভাষা হারিয়ে গিয়েছে।আমি কোনদিন কল্পনাতেও ভাবিনি উনি আমাকে ভালোবাসবেন।উনি দৌঁড়ে এসে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন।

কিছুক্ষণপর উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন,
নির্ভীক:চলো যেতে হবে এখন আমাদের।

বলেই উনি আমাকে কোলে তুলে নিলেন।তারপর আমাকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসলেন।পুরো রাস্তা উনার দিকে তাকিয়ে এসেছি আর ভেবেছি উনি কি করে আমাকে এত ভালোবাসলেন?পুরোটা রাস্তা উনি আমার সাথে একটা কথাও বলেন নি এমনকি একবার তাকানও নি আমার দিকে।উনাকে দেখেতো খুব সুখী মানুষ লাগছে কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে উনি খুব টেনশনে আছেন।

বাসায় এসে গাড়ি থেকে নেমে উনি আমাকে নিয়ে ভেতরে আসলেন।ভেতরে এসে তো আমি অবাক।এখানে বাবা,আম্মু,ভাইয়া,আপু,রাযীন ভাইয়া,প্রান্ত ভাইয়া,প্রান্ত ভাইয়ার বাবা,অ্যাঙ্কেল,অ্যান্টি,কমলা খালা,জাফর চাচা,রিংকুদের বাসার সবাই সহ আরও পাঁচটা অপরিচিত লোক আছে।

আমি যেতেই আপু আমাকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে আমার মাথায় লাল ওড়না দিয়ে দিল।আমি লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম,
আমি:এসব কি?(অবাক হয়ে ওড়না খুলে ফেলে)

আম্মু:অন্ত সোনা,আমি তোকে বলছি।(আমার পাশে এসে)

আমি:বাবা তুমি কখন আসলে?আমাকে বলোনি কেন আজ আসবে।জানো সকাল থেকে তোমাকে কত মিস করছিলাম?(বাবার কাছে যেয়ে)

বাবা:হুম জানি তো,আমার মামুনি টা তো আমাকে খুব মিস করে।(আমাকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে)

অ্যাঙ্কেল:আচ্ছা এখন তাহলে শুভ কাজ শুরু করা হোক।(সবার দিকে তাকিয়ে)

বাবা:হ্যা আপনারা সবাই বসুন।(সবার দিকে তাকিয়ে)

অ্যান্টি:অন্ত মা আয় তুই এখানে বস।

বলেই অ্যান্টি আমাকে নিয়ে গিয়ে নির্ভীক ভাইয়ার পাশে বসিয়ে দিলেন।আপু আবার আমার মাথায় লাল ওড়না দিয়ে দিল।আম্মু এসে আমার পাশে বসে বলল,
আম্মু:সোনা মা,আজ তোর বিয়ে।আমরা সবাই ঠিক করেছি চাঁদের সাথে তোর বিয়ে দিবো।চাঁদ তোকে অনেক ভালোবাসে,তুই ওর সাথে সুখী হবি।(আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে)

আমি এসব শুনে আর সবার আমার দিকে তাকানো দেখে জোড়ে জোড়ে কেঁদে দিয়েছি।আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললাম,
আমি:আমি বিয়ে করবো না।

আম্মু:এইরকম কথা বলেনা মা আর কাঁদছিস কেন?সব মেয়েকে বিয়ে করতে হয়।এইতো কয়দিন আগেই আফ্রার বিয়ে হল ওকে তো দেখেছিস কেঁদেছিল ও?

ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।হঠাৎ করে এসব কি হয়ে যাচ্ছে আমার সাথে?সবাই আমাকে বুঝাতে ব্যস্ত এইদিকে আমি বিয়ে করার ভয়ে কাহিল।ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে।নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি আমার এরকম করা দেখে থম মেরে বসে আছেন,চোখমুখে রাগী ভাব স্পষ্ট।সবাই আমাকে বিভিন্ন ভাবে বুঝাচ্ছে।
অ্যান্টি:এত ভয় পাচ্ছিস কেন মা?কোন ভয় নেই।চাঁদ কিছু বলবেনা তোকে।তুই তো এখানেই থাকবি।আগে যেমন ছিলি তেমনই থাকবি।এখন এই বিয়েটা করানো থাকবে পরে তুই বড় হলে আবার বিয়ে দিবো,তখন তোকে আফ্রার মতো সাজিয়ে বিয়ে দিব।(আমার পাশে বসে)

জারিফ:দেখি সরো তোমরা,আমাকে বলতে দাও।এই ছোটপাখি,তুই না করছিস কেন?আমি আছি তো।ভয় পাচ্ছিস কেন?আমি তো কয়েকবছর আগে থেকে ঠিক করে রেখেছি তোর বিয়ে চাঁদের সাথেই দিবো।এটা আমার স্বপ্ন,চাঁদের মতো ছেলে আমি আর কোথাও পাবোনা।তুই আমার কথা শুনবি না?(আমার সামনে বসে)

আমি অবাক হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম।ভাইয়া আমার হাত ধরে বলল,
জারিফ:কি হল বল?শুনবিনা আমার কথা?(জিজ্ঞাসু দৃষ্টি তে তাকিয়ে)

আমি শুধু মাথা নাড়িয়ে হুম বলেছি।ভাইয়া হাসি খুশি মুখ করে বলল,
জারিফ:কাজী সাহেব, এবার শুরু করুন।

কাজী সাহেব বিয়ে পরানো শুরু করলেন।নির্ভীক ভাইয়া কোন ভণিতা না করেই তিনবার কবুল বলে দিলেন আর আমি তো থরথর করে কাঁপছি।আপুকে জড়িয়ে ধরে অনেক কষ্টে তিনবার কবুল বলেছি।কাঁপা কাঁপা হাতে রেজিস্ট্রি পেপারে সাইনও করে দিয়েছি।বিয়ে সম্পূর্ণ হলো।আমি ভাবতেও পারছিনা কি থেকে কি হয়ে গেল।খুব নার্ভাস লাগছে।মাথার মধ্যে ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।সব কিছু অন্ধকার হয়ে আসছে।আমি আপুকে জড়িয়ে ধরে ছিলাম তারপর আর কিছু মনে নেই।

চলবে…………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here