ভালোবাসি আমি যে তোমায় পর্ব:৫৮

0
2097

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব:৫৮

রাত ৮টা বাজে,নিচ থেকে সবার সাথে হৈহুল্লোর করে রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে সবে মাত্র বই খুলেছি তখনই রুমের লাইট অফ হয়ে গেল।আমি ফোনে হাত দিতেই কেউ আমার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিল।আমি হকচকিয়ে লাফিয়ে উঠে একটা চিৎকার দিবো তখনই কেউ আমার মুখ চেপে ধরে বলল,

“চুপ চুপ ডোন্ট সাউট,ইটস মি।”

আমি একটু স্থির হয়ে আমার মুখের উপর রাখা উনার হাত সরিয়ে দিয়ে বললাম,
আমি:আপনি এভাবে চোরের মতো কখন আসলেন?আজ নাকি প্রান্ত ভাইয়াদের বাসায় থাকবেন?(মুখ ফুলিয়ে)

অন্ধকারে উনাকে ভাল করে দেখা যাচ্ছে না কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম উনি শব্দহীন হাসলেন তারপর আচমকা আমাকে কোলে নিয়ে বললেন,

নির্ভীক:তুমি আমাকে চোর বললা?
আমি:চোরের মতো বলেছি।লাইট অফ করলেন কেন?পড়ছি তো আমি।

নির্ভীক:আজকে আর পড়তে হবে না।তোমার যা পড়াশুনার স্পীড সারারাত বই নিয়ে বসে থাকলেও সকালে দেখবা যেখানকার পড়া সেখানেই পরে আছে তার চেয়ে বরং আজ তুমি ঘুমাও।(আমাকে বেডে শুয়ে দিয়ে)

আমি:আপনার মতো তো শার্প ব্রেন আমার নয় তাই এক পড়ায় বার বার দেখতে হয়।(মন খারাপ)

নির্ভীক:পক পক বক বক অফ করো আর ঘুমাও।(আমার পাশে শুয়ে)

আমি:এখনই ঘুমাবো?৮টা বাজে,এত সকাল সকাল ঘুম আসবে না।(উঠে বসে)

নির্ভীক:উঠছো কেন?

বলেই উনি আমাকে টেনে উনার বুকের উপর রেখে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললেন,
নির্ভীক:একদম নড়বা না কোন কথাও বলবানা।ভাল বাচ্চার মতো দশমিনিটের মধ্যে ঘুমিয়ে যাবা নাহলে কিন্তু সিক্রেট রুমের মধ্যে রেখে আসবো।

আমি:কালকে সকালে ওই রুমে নিয়ে যাবেন?(বুক থেকে মাথা তুলে উনার দিকে তাকিয়ে)

নির্ভীক:সকালে নয় গেলে রাতে যেতে হবে।এখন যাবা চলো তাহলে।

আমি:না।সকালে গেলে..
নির্ভীক:চোখ বন্ধ করো আর ঘুমাও।(আমাকে বলতে না দিয়ে)

বলেই উনি আমাকে উনার একপাশে নিয়ে আমার চোখের উপর হাত দিয়ে শুয়ে থাকলেন।আর আমি মন খারাপ করে ভাবলাম কাল আমার জন্মদিন আর উনি আমাকে রাত বারোটায় উইস না করে এখনই ঘুমোচ্ছেন।উনি তো এসব পছন্দ করেন না তাই হয়তো উনার মনেই নেই।ঠোঁট উল্টে এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে গেলাম।

নাকে মুখে শুর শুরি লাগায় ঘুম ভেঙ্গে গেল।বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে দেখি আমার মুখের উপর গোলাপ ফুল।পাশে তাকিয়ে দেখি নির্ভীক ভাইয়া ঘাসের উপর শুয়ে একহাতের তালুতে মাথা রেখে অন্যহাতে ফুল দিয়ে আমার মুখে শুরশুরি দিচ্ছেন।আমি চোখ মুখ কুচকে শোয়া থেকে উঠে বসলাম।আশে পাশে তাকিয়ে দেখি আমরা নদীর চড়ে। দূর দূরান্ত পর্যন্ত কোন গাছপালা ঘর বাড়ি কিছু নেই।চাঁদের আলোই সবকিছু দিনের মতো পরিষ্কার দেখাচ্ছে।একটু দূরে আমাদের গাড়ি পার্ক করা আছে আর গাড়ির ছাদে কিছু জিনিসপত্র রাখা আছে।আমি কিছু বুঝতে পারছিনা।ভাবছি এটা আবার কোথায় এলাম,স্বপ্ন টপ্ন দেখছি নাকি।

দুই হাত দিয়ে চোখ কচলে নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকালাম।উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছেন উনাকে খুব কোমল আর অমায়িক দেখাচ্ছে।আমি ডান হাতের তর্জনি আঙুল দিয়ে উনার বাম বাহুতে একটা খোঁচা দিয়ে চেক করে দেখলাম উনি সত্যি আছেন নাকি আমার ভ্রম।উনি আমার হাতের দিকে তাকিয়ে আবার আমার দিকে সন্দেহি চোখে তাকিয়ে বললেন,

নির্ভীক:হোয়াট?

অহ তারমানে উনি সত্যি আছেন।আমি উনার দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে বললাম,
আমি:আমরা কোথায়?বাসায় ঘুমিয়ে ছিলাম তো এখানে কিভাবে আসলাম?(আশেপাশে তাকিয়ে)

নির্ভীক:আমরা বাসা থেকে চল্লিশ কি.মি. দূরে বকুলতলির মোড়ে এসেছি।(উঠে দাঁড়িয়ে)

উনি গাড়ির কাছে যেয়ে গাড়ির ছাদ থেকে ব্যাগ নিয়ে আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে হাঁটা দিলেন।
আমি:আমরা এত রাতে এখানে কেন এসেছি?(উনার সাথে হাঁটতে হাঁটতে)

নির্ভীক:আমি তোমাকে ভালোবাসতে এসেছি আর তুমি আমাকে।(সামনের দিকে তাকিয়ে)

আমি:না।(চোখ বড় বড় করে)
নির্ভীক:হুম।

উনি আমাকে নিয়ে একটা টেবিলের কাছে আসলেন।প্লাস্টিকের টেবিল এটা গাড়ির ডিকিতে দেখেছিলাম ফোল্ড করে রেখে যেখানে সেখানে নিয়ে যাওয়া যায়।টেবিলের উপর একটা সুন্দর চকলেট কেক রাখা আছে কেকের উপর লিখা আছে হ্যাপি বার্থ ডে মায়াপরী।কেকের চারপাশে ছোট ছোট লালনীল ক্যান্ডেল সাজানো আছে।এছাড়াও টেবিলে একটা গোলাপের ক্রাউন কয়েকটা লালগোলাপ দুটো ছোট কালো বক্স আর একটা সাদা প্লেট রাখা আছে।উনি ব্যাগ থেকে খাবারের বাটি বের করে খাবার গুলো প্লেটে সাজিয়ে পাশের চেয়ারে বসে পরলেন।আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

নির্ভীক:কি হলো বসো।
আমি:কোথায় বসবো?আর তো চেয়ার নেই।(মাথা নিচু করে)

নির্ভীক:আরে বোকা এখানে বসো।

বলেই উনি আমার হাত টেনে আমাকে উনার কোলের উপর বসিয়ে দিয়ে বললেন,
নির্ভীক:উঠার ট্রাই করবা না।যদি করো তাহলে তোমাকে চেয়ারে দিয়ে আমি তোমার কোলে বসে থাকবো।(পেট জড়িয়ে ধরে)

আমি মাথা নাড়িয়ে চুপচাপ বাধ্য মেয়ের মতো বসে থাকলাম।উনি আমার বেনি করে রাখা চুলগুলো খুলে দিলেন।তারপর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে লাইটার দিয়ে ক্যান্ডেল গুলো জ্বালিয়ে দিয়ে টেবিলের উপর রাখা একটা সুইচে টিপ দিলেন।সামনে তাকিয়ে দেখি বালির উপর কতকগুলো ছোট ছোট টুইংকেল লাইট জ্বলছে,সেখানে লিখা আছে আই লাভ ইউ।আমি স্তব্ধ হয়ে গেছি আমাকে ঘিরে উনার এত কিছু করা দেখে।এত সুন্দর পরিবেশ দেখে আমি মুগ্ধ।হঠাৎ উনি আমার মাথায় গোলাপের ক্রাউন পরিয়ে দিলেন তারপর চুলগুলো এক সাইডে নিয়ে আমার কানে কানে ফিসফিস করে বললেন,
নির্ভীক:হ্যাপি বার্থ ডে মায়াপরী।(নরম কন্ঠে)

বলেই উনি আমার কানে কিস করলেন।আমার মুখ নিজের দিকে ঘুড়িয়ে কপালে কিস দিয়ে বললেন,
নির্ভীক:ভালোবাসি। (মুচকি হেসে)

আমি মাথা নিচু করে মুচকি হাসলাম।উনি আমার কাঁধে মুখ রেখে আমাকে দিয়ে কেক কাটিয়ে নিলেন।তারপর উনি আমাকে কেক খাওয়ালেন আমিও উনাকে খাওয়ালাম।উনি আমাকে উনিশটা লালগোলাপ,একটা সুন্দর ডায়মন্ডের ব্রেসলেট আর রিং গিফট করলেন।আমি তো খুব খুশি কিন্তু কিছু একটা ভেবে উনাকে বলেই বসলাম,
আমি:এত টাকা আপনি কোথায় পেলেন?চাকরি বাকরি তো করেন না কিছুই।(ভ্রু কুচকে)

নির্ভীক:ডোন্ট ওরি বউ,এগুলো তোমার বরের ব্রেন ঘামানো টাকা দিয়ে কেনা।(গালে কিস করে)

আমি উনার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।উনি দুষ্টু হেসে আমার মুখের কাছে মুখ এনে বললেন,
নির্ভীক:আমাকে কিছু দিবানা?একটা কিসি দাও প্লিজ!এখানে..।(ঠোঁটে ইশারা করে)

আমি চোখ বড় বড় করে আমার ঠোঁট মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে নিলাম।উনি আকাশের দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হাসলেন।কি শ্রুতিমধুর সেই হাসি!মৃদু ঠান্ডা বাতাসে আমার চুল গুলো উড়ে গিয়ে উনার মুখে গলায় পরছে উনি সেগুলো হাত দিয়ে সরানোর চেষ্টাও করছেন না।হাসি থামিয়ে উনি বললেন,
নির্ভীক:চলো আগে ডিনার করি,তারপর কিস করবো।তখন নাহয় নিজেকে প্রটেক্ট করো।

খাওয়া শেষ করে উনি আমাকে নিয়ে উঠে আসলেন।আমার হাত ধরে বালির আর পানির উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বললেন,
নির্ভীক:তুমি কিন্তু এই নিস্তব্ধ আর অসম্ভব সুন্দর জায়গায় তোমার আদার হাফের সাথে হাঁটছো।চলো ওখানে বসে কথা বলি।

উনি আমাকে একটু উঁচু ঢিবির মতো জায়গাতে নিয়ে আসলেন।এটা নদীর কিনারা এখান থেকে শক্ত মাটি শুরু বেলে মাটির শেষ।এখানের ঘাস গুলো মরা। আমরা মরা ঘাসের উপর পা ঝুলিয়ে পাশাপাশি বসলাম।আমাদের পায়ের নিচে বালি আমি তো জুতো নিয়ে আসিনি তাই খালি পায়ে বালি স্পর্শ করতে খুব ভাল লাগছে।হঠাৎ উনার ফোন বেজে উঠলো।উনি উঠে দাঁড়িয়ে প্যান্টের পেকেট থেকে ফোন বের করে আমাকে এখানে বসতে বলে নদীর দিকে গেলেন।আমি উনাকে দেখতে থাকলাম।সাদা টিশার্টের উপর লালাকালো চেক শার্ট পড়েছেন উনি,শার্টের বাটন সব গুলো খোলা।জিন্সের কালার চাঁদের আলোতে কালোই মনে হচ্ছে।উনি আজকে আবার সুন্দর করে সেজে এসেছেন আর আমি ফকিন্নির মতো সাদা টপস আর লাল প্লাজু পরে এসেছি।উনি ফোনে কথা বলে আমার কাছে এসে বসে একটা দম ছেড়ে বললেন,
নির্ভীক:একটা কিসি দাও না।(আমার হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে)

উনাকে একটা কিস নাহয় দিয়েই দিই।বিয়ে তো হয়েই গেছে। উনি আমাকে অনেক ভালোবাসেন আর আমিও উনাকে ভালোবাসি কিন্তু লোকটা একটা হাই লেভেলের অসভ্য,আমি একটা কিস দিলে নিশ্চয় উনি আমাকে আরও বেশি কিস দিবেন। দিলে দিবেন উনি তো আমারই হাজবেন্ড।উফ্ এই সুদর্শন লম্বু রাগী ছেলেটা আমার হাজবেন্ড ভাবলেই আমার কেমন কেমন হয়!!(মনে মনে

একটা ঢোক গিলে উনার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি আমার হাতের আঙুল গুলো টানছেন।আমি মুচকি হেসে আচমকায় উনার ঠোঁটে কিস দিয়ে দৌঁড়।পেছনে তাকিয়ে দেখি উনি শকে আছেন।মুখে যতই বলুক মনে মনে উনি কখনও এমনটা ভাবেননি সেটা উনার ভাব ভঙ্গি দেখেই বুঝা যাচ্ছে।আমি কিছুদূর যেয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছি উনি দৌঁড়ে আমার দিকে আসছেন দেখে আমিও দৌঁড় দিয়েছি কিন্তু উনি আমাকে ধরে ফেলেছেন।পেছন থেকে দুই হাত দিয়ে আমার পেট জড়িয়ে ধরে দুপাক ঘুড়িয়ে আমাকে দাঁড় করিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আমার গালে গাল ঠেকিয়ে বললেন,

নির্ভীক:ভালোবাসো আমাকে?প্লিজ বলো,এটা শোনার জন্য আমি আর ওয়েট করতে পারছিনা।(হাঁপাতে হাঁপাতে)

আমি নিচের ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে আছি।মন বলছে চিৎকার করে বলি ভালোবাসি কিন্তু মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছেনা খুব লজ্জা লাগছে।উনি আমাকে নিজের দিকে ঘুরাতেই আমি চোখ খিচে বন্ধ করে উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম,

আমি:ভালোবাসি আপনাকে,আই লাভ ইউ।(একদমে)
নির্ভীক:আই লাভ ইউ টু।(জড়িয়ে ধরে)

চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here