ভালোবাসি আমি যে তোমায় শেষ পর্ব:

0
3488

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব:৬১(শেষ পর্ব)

প্রান্ত ভাইয়া আর ইচ্ছের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।ওরা সোফায় বসে মুচকি মুচকি হাসছে আর নির্ভীক ভাইয়া আমার পাশে বসে আমাকে বলছেন,
নির্ভীক:এত অবাক হওয়ার কি আছে?এটা তো হওয়ারই ছিল।(আমার এক হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে)

আমি:এটা হওয়ারই ছিল??(ভ্রু কুচকে ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে)

ইচ্ছে:আমি কিছু জানিনা নির্ভীক ভাইয়া যখন বলছেন তাহলে তাই।(থতমত করে)

আমি:ওরা কি লুকিয়ে বিয়ে করেছে?(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে)

নির্ভীক:না সবার সামনেই করেছে।এই তো দশ দিনের মতো হলো মনে হয়,তাইনা প্রান্ত? (প্রান্ত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)

প্রান্ত:হুম নয় দিন।(মুচকি হেসে)
আমি:আপনি তো বলেছিলেন এখন বিয়ে করবেন না।

প্রান্ত:না করে কি আর উপায় ছিল?এই মেয়েটা তো সত্যি সত্যি অন্য কাউকে বিয়ে করে নিচ্ছিল।(ইচ্ছের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে)

আমি:হুম নিচ্ছিল কিন্তু আপনি ওকে কেন বিয়ে করলেন?ওর তো নিমপাতার ডক্টরের সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।(ভ্রু কুচকে)

নির্ভীক:আরে বুঝ না তুমি?ভালোবাসে তো।অপ্রকাশিত ভালোবাসা হঠাৎ প্রকাশ পেয়ে গেল আর ওরা বিয়ে করে নিল,সিম্পল।(মুচকি হেসে)

আমি:আরাফ ভাইয়া মেনে নিল?ফুপ্পি ফুপ্পা?(ভ্রু কুচকে)
নির্ভীক:না মানার কি আছে।সবাই মেনে নিয়েছে।(মুচকি হেসে)

আফ্রা:এই তোমরা ডিনার করবে আসো?(দরজা থেকে)
নির্ভীক:হুম হুম তোরা যা।আমি অন্তর কাছে আছি।(প্রান্ত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)

সবাই ডিনার করতে চলে গেল।আমি নির্ভীক ভাইয়ার দিকে সন্দেহি চোখে তাকিয়ে বললাম,
আমি:ওরা সত্যি বিয়ে করেছে?আপনি দেখেছেন?

নির্ভীক:হুম রে বাবা সত্যি।আমি দেখিনি,আমি তখন তোমার সাথে হসপিটালে ছিলাম।(আমার দুই গাল ধরে)

আমি:ওরা বিয়ে করলো?স্ট্রেঞ্জ!!

নির্ভীক:নট এট অল।ওদের ভালোবাসাটা স্ট্রেঞ্জ হতে পারে বিয়েটা নয়।আমি আন্দাজ করেছিলাম একদিন প্রান্ত ইচ্ছেমতিকে বিয়ে করতে চাইবে। তখন হয়তো দেরি হয়ে যাবে তাই আরাফ ভাইয়াকে বলে ইচ্ছেমতির বিয়ে ক্যান্সেল করে দিয়েছিলাম।(মুচকি হেসে)

উনার কথা শুনে বুঝলাম ইচ্ছে সব আগের থেকেই জানতো তাই ওকে অত হাসি খুশি দেখাতো।আমি মুচকি হেসে এসবই ভাবছিলাম।উনি আমার হাতের উল্টো পিঠে কিস করে বললেন,
নির্ভীক:আমারও বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে।আমিও বিয়ে করবো।চলো আবার বিয়ে করি।(মুচকি হেসে)

আমি:কি?(ভ্রু কুচকে)
নির্ভীক:প্লিজ প্লিজ প্লিজ আবার বিয়ে করবো।তোমাকে তো বউ সাজে দেখায় হলো না আর সবচেয়ে বড় কথা বাসর….ইয়ে মানে না কোন বড় কথা নেই।আমরা আবার বিয়ে করছি দ্যাটস্ ফাইনাল।(মুচকি হেসে)

আমি:না।
নির্ভীক:হুম।

আমি কিছু বলবো তখনই উনি এক হাত দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরে বললেন,
নির্ভীক:আর কোন কথা নয় ১০দিন পর বিয়ে ১২দিন পর হ্যানিমুন।(একদমে)

উনি উঠে দাঁড়িয়ে ট্রাউজারের পকেটে দুই হাত ঢুকিয়ে বললেন,
নির্ভীক:এই কয়দিন মেন্টালি প্রিপেয়ার্ড হও আগের বারের মতো বিয়ের আসরে যেন বলো না “আম্মু আমি বিয়ে করবো না.. এ্যা এ্যা এ্যা”।(হাসতে হাসতে)

আমি রাগী চোখে উনার দিকে তাকালাম।উনি বুকে হাত দিয়ে বললেন,
নির্ভীক:উফ্ ওভাবে তাকিওনা তোমার চোখের আগুনে পুরে আমি ভস্মীভূত হয়ে যাচ্ছি।

আমি মুখ ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকলাম। উনি হালকা হেসে বললেন,
নির্ভীক:তুমি একটু বসো আমি খাবার নিয়ে আসছি।

উনি রুম থেকে যেতেই আমি মুচকি হেসে কম্বল টেনে মুখ ঢেকে শুয়ে পড়লাম।দুবার বিয়ে হবে ভাবতেই আনন্দ হচ্ছে,লজ্জাও করছে আবার ভয়ও লাগছে।দিন দিন উনি যা অসভ্য হচ্ছেন এইবার বিয়ে করলে কিযে হবে আল্লাহ্ মালুম।
.
সকালে ঘুম ভাঙলো সবার হৈ চৈ শুনে।আমি চিন্তিত হয়ে উঠে বসলাম।অনেকটা সুস্থ হলেও হুট করে শোয়া থেকে উঠে মাথা তুলতে পারিনা।মাথার পেছন দিকে আর ঘাড়ে ব্যাথা করে। ডক্টর বলেছেন ধীরে ধীরে সব নরমাল হয়ে যাবে।কিছুক্ষণ বেডে হেলান দিয়ে বসে থেকে ধীরে ধীরে হেঁটে নিচে চলে আসলাম।নিচে এসেই দেখি সবাই কোলাহল করছে আর নির্ভীক ভাইয়া,সরি ওনলি নির্ভীক।কাল রাতে উনি আমাকে সাংঘাতিকভাবে শাসিয়েছেন তাই ভাইয়া বলা যাবেনা।যাইহোক উনি সবার মাঝে বসে আছেন, মুখে এক রাশ বিরক্তির ছাপ।

আমি:কি হয়েছে?(চিন্তিত হয়ে)

নির্ভীক ভাইয়া দ্রুত আমার কাছে এসে বললেন,
নির্ভীক:তুমি এখানে আসলা কেন?চলো বসো ওখানে।

উনি আমাকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে আমার পাশে বসলেন।সবাই কথা থামিয়ে স্থির হয়ে বসলো। নির্ভীক শান্ত কন্ঠে বলতে লাগলেন,

নির্ভীক:তোমরা আর না করো না।আমি এখানে থাকতে চাইনা।(সবার দিকে তাকিয়ে)

অ্যান্টি:আমাদের কি হবে?তুইও থাকবিনা রাযীনও থাকবেনা,কাকে নিয়ে থাকবো আমরা। (মন খারাপ করে)
নির্ভীক:ভাইয়া তো একবছর পর এখানে পার্মানেন্ট হয়ে যাবে।তখন ভাইয়া থাকবে তোমাদের সাথে।আমিও আসবো দুচার বছর পর পর,নো প্রবলেম।

অ্যাঙ্কেল:কত বছর থাকতে পারবে ওখানে?(নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে)

নির্ভীক:দেখো বাবা, সার্ন পৃথিবীর অন্যতম সেরা গবেষণাগার।ওখানে ফিজিক্স আর কম্পিউটার সাইন্স এ্যান্ড ইন্জিনিয়ারিং এর স্টুডেন্টদের তিনমাসের জন্য গবেষণার সুযোগ দেওয়া হয়।একবার যারা ওখানে সুযোগ পায় তারা আর আসে না।কেন আসবে বলো তো?ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব এর জন্মস্থান ওটা।ওখান থেকেই ইন্টার্নেটের যাত্রা শুরু হয়।আমি এরকম একটা সুযোগ হাত ছাড়া করবো?নেভার।

অ্যান্টি:বাংলাদেশেই কত কাজ আছে। তুই এখানেই কোথাও ট্রাই কর।(নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে)

রাযীন:আম্মু তুমি না করছো কেন বুঝতে পারছিনা।সার্নের সফটওয়্যার ইন্জিনিয়ার হওয়া চারটি খানি কথা নয়।(অ্যান্টির দিকে তাকিয়ে)

নির্ভীক:আচ্ছা তিন মাসের জন্য ছাড় আমাকে তারপর দেখি কি হয়।(উঠে দাঁড়িয়ে)

অ্যাঙ্কেল:হ্যা সেটায় করো তিন মাস পর ফিরে আসো।ওখানে পার্মানেন্ট হওয়ার প্রয়োজন নেই।

নির্ভীক:ওকে তাহলে তোমরা বিয়ের আয়োজন শুরু করে দাও আমরা বিয়ের একদিন পরই ফ্রান্স যাবো।ওখান থেকে সুইজারল্যান্ড দেন সার্ন ওটা একদম দুইদেশের সীমান্তে আর অন্তর পড়াশুনা নিয়ে তোমাদের ভাবতে হবেনা আমি ওখানকার কোন ইউনিভার্সিটিতে ওকে এ্যাডমিশন করিয়ে দিবো।জারিফ ভাইয়া আমার সাথে একমত।তোমরা আর আজাইরা টেনশন দিয়ে আমার মাথা খারাপ করে দিওনা।সব কিছু আর্লি করো টাইম নেই আমার।(সিরিয়াস হয়ে)

কথা গুলো বলে উনি উপরে চলে গেলেন।আমি বুঝলামম এই ছেলের মেধা আছে নাহলে সার্নের মতো একটা নাম করা প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পেতেন না।বাসার সবাই খুশি হলেও অ্যান্টি আর খালা খুশি হয়নি আমিও খুশি হইনি।সবাইকে ছেড়ে আমি কিছুতেই যেতে পারবো না।আমি সবাইকে মানাতে লেগে গেলাম কিন্তু সবাই ওসব আলোচনা বাদ দিয়ে বিয়ের তোড় জোড় শুরু করে দিয়েছে।রাযীন ভাইয়া সামনের উইক চলে যাবে তাই বিয়ে চারদিন পর শুক্রবার ঠিক করা হলো।যেহেতু আগে রেজিস্ট্রি হয়ে গিয়েছে তাই এবার শুধু ইসলামিক বিধান মেনে বিয়ে হবে।সবাই ব্যস্ত তাই আমি মন খারাপ করে রুমে চলে আসলাম।নির্ভীক ভাইয়াকে না যাওয়ার জন্য মানাতে লাগলাম কিন্তু উনি কিছুতেই মানলেন না।উনার হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে আমরা নড়কে আছি একবার এই নড়ক থেকে বের হতে পারলে উনি আর এখানে ফিরবেন না।আমি উনাকে মানাতে মানাতে উনিই আমাকে মানিয়ে নিলেন।অনেক রাগারাগি কান্নাকাটির পর ঠিক হলো বিয়ের ছয়দিন পর আমরা যাবো।

…………..

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে আসলো।হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে পুনরায় আমাদের বিয়ে সম্পূর্ণ হলো।বিয়ে শেষে আমরা স্টেজে বসে আছি। সবাই আমাদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছে।অনুষ্ঠান শেষে একটা ছোট ইভেন্টের ব্যবস্থা করলো নির্ভীকের সব ফ্রেন্ড, আমার কাজিন আর কিছু ফ্রেন্ড মিলে।সবাই মজা করছিল এমন সময় পুলিশ ফোন করে বলল টোয়া আপু হসপিটাল থেকে পালিয়ে গিয়েছে।বেচারি টোয়া আপু!নির্ভীক যে পুরো বাসায় ক্যামেরা লাগিয়ে রেখেছে সেটা ও জানতোনা।দুদিন আগে নির্ভীক সবাইকে আমাকে ধাক্কা দেওয়ার আর পানির মধ্যে ঘুমের মেডিসিন দেওয়ার ভিডিও দেখিয়েছেন।এছাড়াও উনি আরও কিছু সাক্ষ্য প্রমাণ দিয়েছেন যেগুলো টোয়া আপু করেছে আর আমি জানতামি না।আমার কফিতে বিষ দেওয়া,আমাকে কিডন্যাপ করতে গুন্ডা ভাড়া করা,আমাকে ল্যাবে আটকানো,আমার পিকচার আর নাম দিয়ে নোংরা আইডি খোলার মতো জঘন্য কাজ টোয়া আপু করেছে এসবের কিছুই আমি জানতামনা।এসব দেখে টোয়া আপুর বাবার ছোট হার্ট এ্যাটাক হয়েছিল তখন টোয়া আপুর মা টোয়া আপুকে পুলিশে দেয়।পুলিশের থেকে পালানোর সময় হাতে আঘাত পায় পুলিশ তখন ওকে হসপিটালে নিয়ে যায় তারপর টোয়া আপু হসপিটাল থেকে পালিয়ে যায়।নির্ভীক পুলিশদের বলে দিলেন টোয়া আপুকে ছেড়ে দিতে।টোয়া আপুকে নিয়ে উনার কোন মাথা ব্যথা নেই।উনি একদম নিশ্চিন্তে আছেন।আমি যতদূর নির্ভীককে চিনি উনি টোয়া আপুকে ছাড়বেন না,পুলিশের হাত থেকে পালানো হয়তো নির্ভীকেরই কোন ষড়যন্ত্র যেটা উনার মুখ দেখেই বুঝতে পারছি।টোয়া আপুকে উনি উপযুক্ত শাস্তি দিয়ে তবেই ছাড়বেন।

আড্ডার মাঝে একসময় সবাই নির্ভীককে গিটার এগিয়ে দিয়ে আমাকে ইন্ডিকেট করে একটা গান গাওয়ার জন্য বলল।উনি হালকা হেসে বললেন,
নির্ভীক:এই মুহূর্তে আমার একটা ডুয়েট গান মনে পরছে কিন্তু আমি একা গাইতে চাই।এনি প্রবলেম গাইস?(উচু কন্ঠে)

সবাই উনাকে গাইতে বললে উনি মুচকি হেসে আমার দিকে ঘুরে বসে গিটার হাতে নিয়ে গাইতে লাগলেন,

“”পলকে পলকে বলেছি তোমাকে
ভালোবাসি তোমায়(আমার দিকে তাকিয়ে)

এই তুমি তো আমার এ মনেরর মহারাণী
বুঝে কি বোঝনা আমায়?(জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে)

ভালোবাসি ভালোবাসবো যতদিন আমি বাঁচবো
যতদূরে তুমি থাকো না ভালোবেসে কাছে টানবো(আমার দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে)”””

পুরো গান উনি এত সুন্দর করে গাইলেন!গান শুনে আর উনার অ্যাটিটিউড দেখে সবাই মুগ্ধ।রাত আটটায় আমরা বাসায় আসার জন্য রওনা দিলাম কিন্তু রাস্তায় আরাফ ভাইয়ার ফোন পেয়ে নির্ভীক ভাইয়া আমাকে নিয়ে একটা নির্জন মাঠে নিয়ে আসলেন।জায়গাটা আমি চিনি আমাদের বাসা থেকে একটু দূরেই।এখানে আসতেই দেখি আরাফ ভাইয়া কালো শার্ট প্যান্ট পরে মাঠের মধ্যে ঘাসের উপর শুয়ে আছে।আমরা ধীরে ধীরে কাছে যেতেই আরাফ ভাইয়া উঠে দাঁড়ালো।আমার দিকে তাকিয়ে আছে,চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় জল পরছে।আরাফ ভাইয়াকে এভাবে দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
আমিও কান্না করে দিলাম।আরাফ ভাইয়া এবার হাউমাউ করে কেঁদে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে দেখি উনার চোখেও জল।অসহায় মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি আরাফ ভাইয়ার পিঠে একহাত রেখে বললাম,

আমি:তুমি আবার কান্না করছো?কাল কি বলেছিলে ভুলে গেলে?তুমি কিন্তু আমাকে প্রমিস করেছিলে আর কান্না করবে না।(কাঁদতে কাঁদতে)

আরাফ ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।নির্ভীকের সামনে যেয়ে উনার হাত ধরে বলল,
আরাফ:তুই আমাকে ওর সাথে একটু কথা বলতে দিবি?আমি শুধু ওর কথা শুনে আর দূর থেকে ওকে দেখেই বেঁচে থাকবো।বাঁচতে চাই আমি।ওর জন্য বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে।(ধরা গলায়)

নির্ভীক:আমি তো আগেই বলেছি তোমার যখন ইচ্ছে ওর সাথে কথা বলবা,দেখা করবা।নো প্রবলেম।আমরা তোমাকে ভালোবাসি। আমার থেকে বেশি যদি ওকে কেউ ভালোবাসে সেটা তুমি।আমি জানি তোমার ভালোবাসা কত পবিত্র।(নরম কন্ঠে)

আরাফ:ভুল মানুষকে ভালোবেসেছি আমি।আমার ভালোবাসা তোর ভালোবাসার শক্তির কাছে হেরে গেছে।আমি দেখেছি তোকে ওই দিন গুলোতে যখন ও হসপিটালে ছিল।আমি ভয় পেয়েছি তোর ভালোবাসাকে।তোর ভালোবাসা আমাকে সরে আসতে বাধ্য করেছে।

নির্ভীক:তুমি প্লিজ এত কষ্ট পেওনা।আমরা আছি তো।(আরাফ ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে)

আরাফ:অন্ত শুধু আমার।(নির্ভীককে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে)
নির্ভীক:কাম ডাউন, আই নো।(সান্তনা দিয়ে)

অনেকক্ষণ পর আরাফ ভাইয়া শান্ত হলো।আমাকে আর নির্ভীককে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে বলল,

আরাফ:আজ থেকে আমি জমিন আর তুমি আসমান।তুমি সবসময় সারাজীবন এই জমিনের বুকে থাকবে কিন্তু আমাদের মধ্যে দূরুত্ব থাকবে এই আকাশ পাতালের মতোই।তুমি আমার না হয়েও তুমি আমার।আমি তোমার না হয়েও আমি সারাজীবন তোমার থাকবো।তোমার জন্য আমি অনন্ত কাল ধরে অপেক্ষা করবো।(আমার দিকে তাকিয়ে)

আমার হাত নির্ভীকের হাতে দিয়ে বলল,
আরাফ:আমার জন্য ওকে কোনদিন কষ্ট পেতে দিস না।ও আমাকে কোনদিন ভালোবাসবে না।ও শুধু তোকে ভালোবাসে।আমার উপর বিরক্ত হয়ে ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করবিনা।আমি কখনও তোদের মাঝে আসবোনা।দূর থেকে ভালোবাসবো।(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)

হঠাৎই ওখানে জারিফ ভাইয়া চলে আসলো।এসেই আরাফ ভাইয়াকে চেঁচিয়ে বলল,
জারিফ:এই তুই আবার শুরু করেছিস?

আরাফ:এসেছিস?ওকে চল।(মুচকি হেসে)

জারিফ:হুম চল।চাঁদ ছোটপাখিকে নিয়ে যা।(নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে)

আরাফ:ভাল থাকিস,ওকে ভাল রাখিস।(মুচকি হেসে নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে)

নির্ভীক:ডোন্ট ওরি আমি কখনও ওকে কষ্ট পেতে দিবো না।(আরাফ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)

কথা শেষ করে ওরা দুজন হাঁটতে হাঁটতে চলে গেল।আমি আর নির্ভীক ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।ভালোবাসা কতটা নির্মম সেটা ওরা জানে। আসলে ভালোবাসার নির্মমতার কাছে আমরা সবাই অসহায়।ভালোবাসা আছে বলেই যেমন পৃথিবী সুন্দর ঠিক তেমনি ভালোবাসা আছে বলেই আমরা পৃথিবীর কুৎসিত রুপটাও দেখতে পাই।

রাত ১২টা লাল টুক টুকে বেনারসি পরে বাসর ঘরে বউ সেজে বসে আছি। আমার সামনে গোল্ডেন কালার শেরওয়ানী পরে বর সেজে বসে আছেন নির্ভীক।দুবার বিয়ে হয়ে গেল তাই ভুল করে কিংবা মনে মনেও আর ভাইয়া বলা যাবেনা।প্রতিদিন প্রাকটিস করিয়ে উনি আমাকে নির্ভীক বলা শিখিয়েই ছাড়লেন তাও শয়তান মন মাঝে মাঝে ভাইয়া ডাকে কিন্তু আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছি আর কখনও উনাকে ভাইয়া ডাকবো না।

উনি আমার দিকে প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে একধ্যানে তাকিয়ে আছেন আর আমি পুরো রুম দেখছি।পুরো রুম গোলাপ আর রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।বেডের উপরও ফুলের ছড়াছড়ি আর আমি ফুলের উপরই বসে আছি। উনার তাকিয়ে থাকা দেখে আমার খুব লজ্জা করছে। এভাবে দেখার কি আছে।উনাকেও তো সুন্দর লাগছে তাই বলে কি আমি ড্যাব ড্যাব করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি?উনি কি আমাকে আগে কখনও দেখেননি।এসব ভাবছি আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছি।উনি মুচকি হেসে বললেন,
নির্ভীক:এই পিচ্চি মোহরানা পেয়েছো?

আমি:হুম।(মাথা নিচু করে)
নির্ভীক:আবার ভুলে যাওনি তো?(ভ্রু কুচকে)
আমি:উহুম্।(মাথা নিচু করে)

নির্ভীক:ওয়েল।(আমার কাছে এগিয়ে এসে)

উনি আমার দুগাল ধরে আমার কপালে কিস করে মুচকি হেসে বললেন,
নির্ভীক:আমার তোমার সাথে দেখা হওয়া,আমার তোমাকে ভালোবাসা,তোমার আমাকে ভালোবাসা এসব আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর আর গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।আমার জীবনে এখন পর্যন্ত এত সুন্দর কিছু ঘটেনি আর আমি এর থেকে বেশি কখনও কিছু চাইও নি।তোমাকে ঘিরেই আমার সব জল্পনা কল্পনা।ভালোবাসি তোমায়।(আমার গালে হাত রেখে)

আমি উনার দুই হাতে হাত রেখে চোখ নিচু করে মুচকি হাসলাম।উনি আমার গাল থেকে হাত সরিয়ে সব গহনা খুলতে লাগলেন।আমার হাত পা মৃদু কাঁপছে,হার্টও দ্রুত গতিতে চলছে।উনি সব গহনা খুলে বেড সাইড টেবিলে রেখে বললেন,
নির্ভীক:ফ্রেশ হয়ে আসো।নফল নামাজ পড়বো।

নরমাল ড্রেস পড়ে ফ্রেশ হয়ে এসে আমরা নামাজ পড়ে নিলাম।উনি আমার কপালে হাত দিয়ে দোয়া পড়ে কপালে কিস করে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
নির্ভীক:আই লাভ ইউ।
আমি:আই লাভ ইউ টু।(উনার পিঠে হাত রেখে)

উনি আমার কাঁধ থেকে মাথা তুলে বললেন,
নির্ভীক:তুমি বলছো?আই ক্যান্ট বিলিভ।(অবাক হয়ে)

আমি:বিশ্বাস না করার কি আছে?প্রাকটিস করলে সব পারা যায় আর তাছাড়াও আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি বুঝেছেন আপনি?ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি আমি আপনাকে ভালোবাসি,হাজার বার বলবো আমি আপনাকে ভালোবাসি।আই লাভ ইউ অ্যান্ড আই উইল লাভ ইউ আন্টিল আই ডাই।

এক নাগাড়ে কথা গুলো বলেই আমি উল্টো দিকে ঘুড়ে দাঁড়িয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে লাগলাম।উফ্ আবেগ কন্ট্রোল করতে না পেরে বলে তো দিলাম এখন কি হবে?উনি আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললেন,

নির্ভীক:কিছু তো আছে তোমার মধ্যে যার জন্য আমি সবসময় তোমার খেয়ালেই ডুবে থাকি।মন মস্তিষ্ক বার বার বলে ভালোবাসো।সারাক্ষণ তোমাকে ভেবে আমি উতলা হয়ে যাই।(গালে গাল ঠেকিয়ে)

উনি আমাকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে একহাতে আমার কোমড় চেপে ধরে অন্যহাত ঘাড়ে রেখে আমার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলেন।এতদিন ভাল লাগলেও আমি কখনও প্রকাশ করতাম না কিন্তু আজ আমিও উনাকে ভালোবাসতে চাই।উনার ঘাড়ে গলায় হাত রাখতেই উনি আমাকে আরও কাছে টেনে নিলেন।কিছুক্ষণ পর উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন,

নির্ভীক:আমার জন্মই হয়েছে তোমাকে ভালোবাসার জন্য।খুব ভালোবাসতে চাই তোমাকে।আমার ভালোবাসা দিয়ে রঙিন করে দিতে চাই তোমার জীবন।আই নীড ইউ মায়াপরী।আই নীড ইউ সো মাচ,প্লিজ মায়াপরী।(গালে হাত দিয়ে)

আমি উনাকে জড়িয়ে ধরলাম।আমাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেল।ভালবাসার রঙে রঙিন হলো দুটি হৃদয়।

সমাপ্ত

(বি.দ্র:গল্প নিয়ে আমার তেমন কিছু বলার নেই।এটা আমার লিখা প্রথম গল্প ছিল।তাই অনেক ভুল হয়েছে।সাজিয়ে গুছিয়ে লিখার চেষ্টা করেছি,কতটা পেরেছি জানিনা।আপনারা যারা সাথে ছিলেন সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।ভাল থাকবেন সবাই….আল্লাহ্ হাফেজ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here