ভালোবাসি আমি যে তোমায় ২*পর্ব:১

0
3102

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়_২
#Sohani_Simu

১.

ভার্সিটির প্রথম দিনেই কুকুরের জন্য এরকম একটা ঝামেলা হবে বুঝতে পারিনি।আমি অন্ত।গুনে গুনে পাঁচটা বিশাল দেহি ছেলে আর তিনটে শাঁকচুন্নি টাইপের মেয়ের সামনে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে কান্না করছি।আমার মুখোমুখি যেই রাগী ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে তার হাতে এক বালতি ঠান্ডা পানি,পানির মধ্যে বরফের টুকরো ভাসছে।ঠান্ডা পানিকে আরও ঠান্ডা করার জন্য ওরা পানির মধ্যে বরফ দিয়েছে।আমাকে দশবার বার সরি বলতে বলা হয়েছে।আমি নয় বার সরি বলার পর একহাত দিয়ে চোখ মুছে নাক টেনে মাথা নিচু করে চোখ খিচে বন্ধ করে শেষ বারের মতো বললাম,

—-সরি।

সঙ্গে সঙ্গে রাগী ছেলেটা আমার মাথায় এক বালতি পানি ঢেলে দিল।সবাই হো হো করে উঠলো।এদিকে মাঘ মাসের হাড় কাঁপানো শীতে এমন ঠান্ডা পানি গায়ে লাগায় আমি যেন ঠান্ডায় জমে গেলাম।আমি মাথা তুলে সামনের রাগী ছেলেটির দিকে তাকালাম।ভার্সিটির সিনিয়র ভাইয়া।দেখতে মাকাল ফলের মতো সুন্দর অর্থাৎ শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য্যের অধিকারী ভেতরটা অনেক কুৎসিত নাহলে সামান্য একটা কুকুরকে আর ভুলবশত উনাকে একটু ভিজিয়ে দিয়েছি বলে উনি আমাকে এভাবে ভিজিয়ে দিতে পারতেন না।খারাপ আর অসভ্য ছেলেরা এমনই হয়।মেয়েদের উত্যক্ত করে তারা মজা পায়।

আমি উনার দিকে তাকাতেই উনার কুচকে থাকা ভ্রু স্বাভাবিক হয়ে গেল।উনি আমার চোখের দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে আছেন।আমি চোখ নামিয়ে নিলাম।সবাই আমাকে দেখে হাসছে আমার খুব কান্না পাচ্ছে তাই আমি আর এক মুহূর্তও এখানে না দাঁড়িয়ে উল্টো দিকে ঘুরে হাঁটা দিলাম।আমার সাথে আমার ফ্রেন্ডরাও আসতে লাগলো।এখন সবার আগে ওয়াশরুম যেয়ে ভেজা ড্রেসের পানি ঝরিয়ে তারপর বাসায় যেতে হবে।চলুন ওয়াশরুম যেতে যেতে কি ঘটেছে সবটা খুলে বলি।

ক্লাস শেষ করে ফ্রেন্ডদের সাথে পরিচিত হয়ে সবাই ভার্সিটি ঘুরে দেখছিলাম।ক্যান্টিনের সামনে এসেই আমরা গরম গরম কফি খাওয়ার জন্য ভেতরে যেয়ে চেয়ার টেবিলে বসলাম।আমি আমার বেস্টফ্রেন্ড ইচ্ছের সাথে গল্প করছিলাম তখনই একটা সাদা বিদেশী কুকুর আমার কাছে এসে কু কু আওয়াজ করতে লাগলো।কুকুরে আমি খুব ভয় পাই তাই এক লাফে চেয়ারের উপর উঠে কুকুরকে তাড়ানোর জন্য হুস হাস করছিলাম কিন্তু কুকুরটা আমার পায়ের কাছে চলে এসেছিল।তাই টেবিলে থাকা এক জগ পানি কুকুরের দিকে ছুড়ে মারলাম।তখনই কুকুরটার সুন্দর লোমগুলো ভিজে গিয়ে কুকুরটা দেখতে ভেজা বিড়ালের মতো হয়ে গেল।আমার নতুন ফ্রেন্ড রিপন কুকুরটাকে অনেক হুমকি ধামকি দিল।কুকুরটা কিছুতেই যেতে চাইছিল না রিপন না পেরে ব্যাগ দিয়ে হুস হাস করে কুকুরটাকে তাড়িয়ে দিল।কুকুরটা লেজ নাড়াতে নাড়াতে চলে গেল।রিপন হাসতে হাসতে বলল,

—প্রথমে ভেবেছিলাম ওটা একটা কুত্তা।অন্ত পানি দেওয়ার পর দেখি বিলাই।এখন কনফিউশন হচ্ছে ওটা কুত্তা না বিলাই নাকি দুটোই।বাপের জন্মে এত বড় ভেলকি দেখিনি।অন্ত তো কামাল কার দিয়া ইয়ার।

সবাই হো হো করে হেসে দিল।আমিও হাসতে হাসতে চেয়ার থেকে নেমে বসতেই একদল ছেলে মেয়ে কুকুরটিকে সাথে করে নিয়ে এসে টেবিলে বারি দিতে দিতে বলল।

—-এই কে ওকে ভিজিয়ে দিয়েছো?কে বলো?

ছেলে মেয়ে গুলোকে দেখেই ক্যান্টিনের সবাই বসা থেকে দাঁড়িয়ে গিয়েছে।আমি ইচ্ছের পাশে দাঁড়িয়ে ওর একবাহু ধরে ফিসফিস করে বললাম,

—-আমি তো ভিজিয়ে দিলাম।এখন কি হবে?

ইচ্ছে কিছু বলার আগেই কুকুরটা কু কু আওয়াজ করতে করতে দৌঁড়ে আমার কাছে আসতে লাগলো।আমি এক লাফে চেয়ারে উঠে একটা পানির গ্লাস হাতে নিয়ে আবার কুকুরটার দিকে পানি ছুড়ে তাকে তাড়াতে লাগলাম কিন্তু ভুলবশত পানি গিয়ে পরলো একটা ছেলের হাঁটুতে।লম্বা,ধবধবে ফর্সা,সুদর্শন ছেলেটি আমার দিকে আসতে আসতে রাগী কন্ঠে বললেন,

—-হেই ইউ স্টুপিড গার্ল তুমি আমাকে ভিজিয়ে দিয়েছো?হাউ ডেয়ার ইউ।এই টোয়া?এই মেয়েকে বাহিরে নিয়ে আয়।শৈবাল একবালতি পানি নিয়ে আসবি আইস দেওয়া।

বলেই উনি কুকুরের বেল্ট ধরে হন হন করে বেরিয়ে গেলেন।উনার সাথে আরও তিনটে ছেলেও বেড়িয়ে গেলেন।উজ্জ্বল শ্যামলা দেখতে একটা ছেলে ক্যান্টিনের মামাকে বলল,

—–ও মামা তোমার ফ্রিজে আইস আছে?থাকলে তাড়াতাড়ি দাও ও কি বলল শুনলা না?

জিন্স প্যান্ট আর শর্ট টপসের উপর কালো জ্যাকেট পরা সুন্দরী লেডি ডনদের মতো দেখতে একটা আপু আমাকে বললেন,
—-ওই দাঁড়িয়ে কি দেখছিস?কাম উইথ মি।

বলেই আপুটা চলে গেল।আমি চেয়ারের উপর দাঁড়িয়ে আতংকিত হয়ে এসব দেখছিলাম।ইচ্ছে চিন্তিত হয়ে বলল,
—উনারা কি করতে চাইছেন?

আইরিন বলল,
—-যা করতে বলছে তাই করতে হবে নাহলে খারাপ কিছুও হতে পারে।অন্ত তুই সরি বলে দে।

কিয়াম বলল,
—-হুম হুম সরি বলে দে।প্রথম দিন এসে বড়দের সাথে কোন ঝামেলায় জড়ানো ঠিক হবেনা।

আমি ভীত চোখে সব ফ্রেন্ডের দিকে তাকালাম।সবাই আমাকে সরি বলতে বলছে।পাশে থেকে দুটো অপরিচিত মেয়ে বলছে,

—-সরি বলে লাভ নেই।ওরা সরি একসেপ্ট করে না।তুমি বাসায় চলে যাও আর ওদের সামনে যেওনা।নাহলে এমন র্যাগ দিবে কেঁদে কুল পাবেনা।ওই মেয়েটা কিন্তু সাংঘাতিক।কেউ কিছু করতে পারবেনা।বাসায় যাও।

ওই আপুদের কথা শুনে আমি ফ্রেন্ডদের সাথে ক্যান্টিনের বাহিরে এসে দাঁড়াতেই দেখি ছেলে মেয়ে গুলো আমাদের সামনেই একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে।যেই রাগী ছেলের হাঁটুতে পানি দিয়েছি উনি টাওয়াল দিয়ে কুকুরের গা মুছে দিচ্ছেন।আমাকে দেখেই শৈবাল নামের শ্যামলা দেখতে ছেলেটা বলল,

—–ওইতো লাইকা চলে এসেছে।আসো আসো তাড়াতাড়ি আসো।

আমি ভয়ে ভয়ে উনাদের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।আমার ফ্রেন্ডরা আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।আমি ভীত চোখে সবার দিকে তাকিয়ে বললাম,

—–আই আম সরি,আমি ইচ্ছে করে পানি দিইনি।ওই কুকুরটা আমার কাছে আসছিল তাই ওকে তাড়ানোর জন্য..

আমাকে পুরো কথা বলতে না দিয়েই রাগী ছেলেটা টাওয়াল রেখে আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন।রাগী কন্ঠে বললেন,

—–সরি?এই শীতে তুমি ওকে ভিজিয়ে দিয়ে বলছো সরি?তুমি বুঝতে পারছো ওর কত শীত করছে?হুহ্ সরি বলতে এসেছে। এই শৈবাল পানি দে তো এই মেয়েকে প্রাকটিক্যালি বুঝিয়ে দিতে হবে শীতের দিনে গা ভিজলে কেমন লাগে।আর এই মেয়ে?তুমি একশো বার সরি বলো।

আমি মাথা নিচু করে আছি।শৈবাল এক বালতি বরফ মেশানো পানি নিয়ে রাগী ছেলেটাকে দিল।ছেলেটা আমাকে ধমক দিয়ে বলল,

—-কি হলো সরি বলো।একশো নয় দশবার বলো।আমাদের অতো ধৈর্য নেই,তাইনা গাইস?

সবাই ছেলেটার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
—–হুম হুম একদম তাই।

আমি ভাবলাম সরি বললে উনারা আমাকে ছেড়ে দিবেন তাই আমি সরি বলতে লাগলাম।আমার সরি বলা দেখে উনারা খুব মজা পাচ্ছেন।এদিকে আমি কান্না করে দিয়েছি।মাথা নিচু করে দশবার সরি বলতেই রাগী ছেলেটা আমার মাথায় একবালতি বরফ ঠান্ডা পানি ঢেলে দিল।

ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে কাঁপতে কাঁপতে গেইট পর্যন্ত এসে রিক্সার জন্য ওয়েট করছি।আমি নিঃশব্দে কান্না করছি আর আমার ফ্রেন্ডরা মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে।ওরা কিছু বলবে তখনই ইচ্ছে বলল,

—তোরা যা আমরা বাসায় চলে যাই।যা হওয়ার হয়েছে আর কিছু বলিসনা। কাল দেখা হবে।

রিপন আমাদের একটা রিক্সা ডেকে দিল আমরা রিক্সা নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।আমি ছোট বেলা থেকেই ঢাকাতে বড় হয়েছি।রাজশাহীর কিছু চিনিনা।রাবিতে এডমিশন এক্সাম দিয়ে চান্স হলো তাই ভাইয়া আমাকে এখানেই ভর্তি করে দিল।আমি তো কিছুতেই আসতে চাইছিলাম না। অনেক কান্নাকাটি করার পর গত কাল বিকেলে সবাইকে ছেড়ে ছুড়ে বাবার বন্ধুর বাসায় এসে উঠেছি।বাবার বন্ধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি।ভিসি অ্যাঙ্কেল শুধু বাবার বন্ধু নয় আমার বড় বোন আফ্রার হবু শ্বশুরও।অ্যাঙ্কেলের দুই ছেলে,বড় ছেলে রাযীন ভাইয়ার সাথে আপুর বিয়ে ঠিক করা হয়েছে প্রায় একমাস আগে।রাযীন ভাইয়া ঢাকা মেডিকেলে পড়ে।আর ছোট ছেলে চাঁদ ভাইয়া রুয়েটে পড়ে।আমি অ্যাঙ্কেলের কোন ছেলেকেই চিনিনা।রাযীন ভাইয়াকে একবার ছবিতে দেখেছিলাম আর চাঁদ ভাইয়াকে মনে হয় চাঁদের দেশে না গেলে দেখা যাবেনা কারন এখানে আসার পর থেকে উনার সাথে একবারও দেখা হয়নি।

এমনি তেই মন খারাপ ছিল তার উপর আজকে যা ঘটলো এতে আরও বেশি খারাপ লাগছে।ইচ্ছে করছে আজই ঢাকা চলে যায়।ইচ্ছে আমার ছোটবেলার বন্ধু একদম বেস্টফ্রেন্ড আর ফুপাতো বোনও।ইচ্ছেও আমার সাথে ভিসি অ্যাঙ্কেলের বাসাতেই থাকে।একমাস পর আমার বড় ভাই জারিফের বিয়ে।বিয়ে হলেই ভাইয়া আর ভাবি রাজশাহীতে চলে আসবে তখন আমরা ভাইয়া ভাবির সাথে আমাদের বাসাতেই থাকবো।ভিসি অ্যাঙ্কেলের বাসার পাশেই আমাদের বাসা তৈরির কাজ চলছে।

আমাকে ভিজে চুপচুপে হয়ে বাসায় ঢুকতে দেখেই অ্যান্টি আর কমলা খালা উদ্বিগ্ন হয়ে আমার কাছে এসে বলল,
—একি অন্ত মা,এভাবে ভিজলি কি করে?

আমি আবার কান্না শুরু করে দিলাম।ইচ্ছে অ্যান্টির দিকে তাকিয়ে বলল,

—র্যাগ দিয়েছে, না র্যাগ নয় ঠিক এমনি পানিশমেন্ট দিয়েছে।

অ্যান্টি আমার ব্যাগ হাতে নিয়ে বলল,
—অহ র্যাগ দিয়েছে?কাঁদিস না কালকে তোকে চাঁদের সাথে ভার্সিটিতে পাঠাবো।ও সবাইকে নিষেধ করে দেবে তারপর আর তোদের কেউ র্যাগ দিবেনা।

ইচ্ছে বলল,
—–চাঁদ ভাইয়া কোথায় অ্যান্টি?কাল আসার পর থেকে দেখছিনা।

অ্যান্টি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
—-একটা মজার কাহিনী আছে সময় হলে তোদের বলবো।চাঁদ ওর বাবার সাথে ঝগড়া করে একমাস ধরে ওর মামার বাসায় থাকে।মামাতো ভাই প্রান্ত,প্রান্ত আর ও দুজনেই রুয়েটে পরে।আচ্ছা আমি ওদের বাসায় আসতে বলবোনি আসলে দেখা করিস।অন্ত তুই আগে চেন্জ করে নে যা।দুজনই ফ্রেশ হয়ে নিচে আয় আমি খাবার বারছি।

ফ্রেশ হয়ে আমি কম্বল মুরিয়ে শুয়ে পরলাম কারন ঠান্ডা লেগে আমার জ্বর চলে এসেছে।সর্দি লেগে নাক বন্ধ হয়ে গিয়েছে।সারাদিন বিছানা থেকে উঠতে পারলাম না।

.
জ্বর থাকায় সকালে ভার্সিটি যেতে পারলাম না,ইচ্ছে একা গেল।আমি নিচে এসে কমলা খালা আর জাফর চাচার সাথে বিভিন্ন ধরনের গল্প করে সময় কাটালাম।অ্যান্টি ডক্টর হওয়ায় সারাদিন হসপিটালে ব্যস্ত থাকে।দুপুরের খাবার খেয়ে বিছানায় শুতেই ইচ্ছে ঘরে ঢুকলো।আমার কাছে এসে মলিন মুখে বলল,

—অন্ত জানিস আজ ভার্সিটি থেকে আসার সময় কি হয়েছে?

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
—-না বললে কি করে জানবো?তোকেও র্যাগ দিয়েছে নাকি?

ইচ্ছে জ্যাকেট খুলতে খুলতে বলল,
—–আরে না।কালকে যেই ভাইয়াটা তোকে ভিজিয়ে দিল ভার্সিটির গেইটে উনার সাথে দেখা।উনি বাইক নিয়ে ভার্সিটি থেকে বের হচ্ছিলেন।আমি তো দেখতেই পাইনি উনিই আমাকে ‘এই মেয়ে’ বলে ডাকলেন।আমি উনাকে দেখেই ভয়ে অন্যদিকে যাচ্ছিলাম কিন্তু উনি আর উনার একটা ফ্রেন্ড আমাকে আটকিয়ে বললেন কালকে যাকে ভিজিয়ে দিলাম সে কোথায়?আমি বললাম ‘আসেনি’।ভাইয়াটা হতাশ হয়ে বললেন ‘কেন?’আমি বলেছি তুই অসুস্থ। উনি তোর সব ডিটেইলস জোর করে আমার থেকে জেনে নিয়েছে আর ফোন নাম্বারও নিয়েছে।সরি রে।

আমি রাগী কন্ঠে বললাম,
—-ফোন নাম্বার চাইলো আর তুই দিয়ে দিলি?তুই জানিস না ওরা ভাল ছেলে নয়?এখন দেখ ফোন করে বিরক্ত করবে।তুই ভুল ভাল কোনো নাম্বার দিতে পারলিনা?মাথা মোটা মহিলা একটা।

ইচ্ছে অসহায় মুখ করে বলল,
—-জোর করে নিয়েছে।ফোন নাম্বার না দিলে আমাকে ঠান্ডা পানিতে চোবাতে চেয়েছে।ভয়ে আমি দিয়ে দিয়েছি।তুই এক কাজ কর আননোন নাম্বার সব ব্ল্যাক লিস্ট কর তাহলে আর কল আসবেনা।

আমি মুখ ফুলিয়ে আননোন নাম্বার ব্ল্যাক লিস্ট করে দিলাম।যাতে আননোন নাম্বার থেকে কল না আসে।

ইচ্ছে মুচকি হেসে বলল,
—-ছেলেটা কি সুন্দর নারে?আজকে একটা সাদা জ্যাকেট আর কালো প্যান্ট পরে এসেছিল।উফ্ এত কিউট লাগছিল!!

আমি রাগী চোখে ইচ্ছের দিকে তাকালাম।ইচ্ছে আমার রাগকে পাত্তা না দিয়ে বলল,
—–ইশ তোর ফোন নাম্বার না দিয়ে আমারটা দিলেই ভাল করতাম।

আমি বললাম,
—-নেক্সট টাইম দেখা হলে দিস,যত্তসব।

ইচ্ছে দুষ্টু হেসে বলল,
—-কালকে ছেলেটা তোকে ওইভাবে দেখছিল কেন রে?

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
—-কিভাবে দেখছিল?

ইচ্ছে কম্বলের ভেতরে পা ঢুকিয়ে বসে বলল,
—–অদ্ভতভাবে দেখছিল।তুই যখন মাথা নিচু করে সরি বলছিলি ছেলেটা মুগ্ধ হয়ে তোকে দেখছিল।আবার যখন উল্টো দিকে ঘুরে চলে আসতে লাগলি ছেলেটা দেয়ালে জোড়ে একটা পান্চ মেরেছিল।

আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,

—তো আমি কি করবো?সবাই এমনটায় করে।সব আমার এই সাদা চামড়া আর গুড লুকিং এর জন্য।শুধু কি ওই রাগী ছেলেটাই দেখছিল?ওদের গ্রুপের সব ছেলে হা দেখছিল না?আর আমাদের ফ্রেন্ড গুলোও দেখছিল না?আমি ওদের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করবোনা।

ইচ্ছে বলল,
—-সুন্দর হওয়ার বড়ই জ্বালা রে বইন।আচ্ছা তুই কার মতো হয়েছিস বলতো?মামা-মামি,আপু,ভাইয়া কারও মতো হোসনি তাহলে তোকে কি কুড়িয়ে পেয়েছে?

আমি মন খারাপ করে অন্যপাশ ফিরে শুয়ে পরলাম কারন ইচ্ছের মতো আফ্রা আপু আর আমার কাজিনরাও বলে আমি কুড়িয়ে পাওয়া।ভাইয়ার আর আমার ব্লাড গ্রুপ এক হওয়ায় মনটাকে একটু আশ্বাস দিয়ে বলি না আমি কুড়িয়ে পাওয়া নয়,আমি আমার বাবা মায়েরই সন্তান।আমার বার্থ সার্টিফিকেট আছে আর আম্মুর পেটে সিজারের দাগও আছে।সবচেয়ে বড় কথা আমার ছোটবেলার অনেক ছবি আছে।যেদিন জন্ম হয়েছে, আম্মুর কোলে থাকা অবস্থায় সেদিনের ছবিও আছে।আমি কুড়িয়ে পাওয়া নয় হু।

চলবে…………..

বি.দ্র. :-পাঠক শ্রেণি,আপনাদের যদি গল্পের কোথাও ঝুঝতে সমস্যা হয় কমেন্টে জানাবেন আর যারা সিজন এক পড়েননি তারা পড়েনিন নাহলে সিজন দুই টা অনেক জায়গায় বুঝতে পারবেন না।সিজন এক আর দুই মিল রেখে লিখতে চাইছি।দুই গল্পের মিল না থাকলে গল্পের নামই চেন্জ করে দিতে হবে তাই মিল থাকাটা জরুরি মনে করছি।কেমন হলো কমেন্টে জানিয়ে দিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here