ভালোবাসি আমি যে তোমায় ২*পর্ব:২

0
2273

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়_২
#Sohani_Simu

২.

দুদিন পর ভার্সিটিতে এসেছি।সব ক্লাস শেষ করে মাঠের মধ্যে রোদে বসে আছি।ফ্রেন্ডরা সবাই মজা করছে আর আমি ভ্রু কুচকে আমার ফ্রেন্ড আদনানের দিকে তাকিয়ে আছি।ছেলেটার মাথার চুল সজারুর মতো খাড়া খাড়া কিন্তু ছোট করে কাটা।ছেলেটা আমার দিকে কেমন করে যেন তাকাচ্ছে।ইচ্ছের একবাহু জড়িয়ে ধরে ওর কানে কানে ফিসফিস করে বললাম,
—-ওই আদনান ছেলেটা কিভাবে তাকাচ্ছে দেখ।

ইচ্ছে আদনানের দিকে তাকিয়ে বলল,
—-ওই নানুভাই কি দেখছিস রে?

আদনান অপ্রস্তুত হয়ে মাথা চুলকে বলল,
—-কই কিছুনা।রোদের জন্য কিছুই ভাল করে দেখতে পাচ্ছিনা রে দোস্ত।
রিপন আদনানের পিঠে ধপ করে একটা কিল দিয়ে বলল,
—-আরে শালা মিথ্যে বলিস ক্যা?

আদনান মাথা নিচু করে হেসে ঝট করে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
—-ক্লাস তো শেষ।নতুন বাসায় আজকে একটু কাজ আছে।তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে,থাক তোরা আমি আসি।

কিয়াম দুই পা ঘাসের উপর মেলে দিয়ে হাত পা টান টান করতে করতে বলল,
—-চল আমরাও যাই।সিনিয়রদের অত্যাচারে শান্তি মতো ক্যাম্পাসে থাকতে পারছিনা।কালকে যা র্যাগ দিল, বাবাগো।

আমি দুচোখ ভরা কৌতূহল নিয়ে বললাম,
—-কি র্যাগ দিয়েছিল?
আইরিন হাসতে হাসতে বলল,
—-রিপন,সাফি,কিয়াম আর আদনানকে সাবাস বাংলাদেশ ভাস্কর্যের মতো অঙ্গভঙ্গি করে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল প্রায় ত্রিশ মিনিট।একটা আপু আদনানের কানে গোলাপ গুজে দিয়ে ওকে হাসানোর চেষ্টা করছিল।ভাগ্যিস ও হাসেনি হাসলে খবর করে দিতো।

কিয়াম উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
—ওই দেখ সিনিয়র সিটিজেনরা আসছে,চল পালায়।

আমরা তলপিতলপা নিয়ে এক দৌঁড়।উফ্ এই ভার্সিটিতে এত র্যাগ দেয় কেন!শান্তি মতো কোথাও একটু দাঁড়ানোর জায়গা নেই।সিনিয়রদের সামনে পরলে কোনো কথা ছাড়ায় র্যাগিং শুরু।ভাইয়াকে জানানো দরকার।কচুর ভার্সিটিতে আমাকে ভর্তি করে দিল সারাদিন খালি পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।মনে মনে কথা গুলো ভেবেই ভাইয়াকে ফোন দিলাম।

—-হ্যালো ভাইয়া?
—হুম বল ব্যস্ত আছি।পরে কথা বলছি।

আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম,
—এটা কি ধরনের কথা বললা?আমাকে কথা বলতে বলছো আবার বলছো পরে কথা বলবা।

ভাইয়া বিরক্ত হয়ে বলল,
—আরে তোকে কথা বলতে বলছি।যা বলার তাড়াতাড়ি বলে রাখ,ব্যস্ত আছি আমি এখন।

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
—কিসের ব্যস্ততা তোমার এত?যখনই ফোন দিই তখনই ব্যস্ত থাকো।শোনো আমি এই ভার্সিটিতে পড়বো না।এটা আমার একদম পছন্দ হয়নি।এত বড় ভার্সিটিতে হাঁটতে হাঁটতে আমার পা ব্যথা হয়ে যাচ্ছে।আর সিনিয়র ভাইয়ারা খুব খারাপ।প্রথম দিনেই আমার মাথায় এক বালতি বরফ মেশানো ঠান্ডা পানি ঢেলে দিয়েছিল।আমি অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম।তোমরা টেনশন করবে দেখে বলিনি।এরা আমার সব ফ্রেন্ডকে র্যাগ দিয়েছে।ইচ্ছেকে এখনও দেইনি,ভাগ্য ভাল ওর।ধূর তুমি কথা বলছোনা কেন?

ভাইয়া অন্যমনস্ক হয়ে বলল,
—হুম?হুম বল শুনছি।

আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
—-কচু শুনছো তুমি।আমি আজই ঢাকায় চলে যাবো।শুনেছো তুমি?আজই ঢাকা যাবো।

তখনই কেউ পেছন থেকে আমার ফোন টেনে নিয়ে নিল।আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি আমার সামনে দুটো লম্বা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।একটা সেদিনের ওই রাগী ছেলে আর আরেকটা উনার ফ্রেন্ড। ছেলে দুটোর পেছনে একটু দূরে ইচ্ছে আর আইরিন দাঁড়িয়ে আছে।ওদের দেখে মনে হচ্ছে ওদের ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকতে বলা হয়েছে।আমি ভীত চোখে আশেপাশে তাকিয়ে দেখি তেমন কেউ নেই।রাগী ছেলেটা আমার ফোনে কি যেন করছে আর উনার ফ্রেন্ড প্যান্টের পকেটে একহাত ঢুকিয়ে আমাকে দেখে মুচকি হাসছে।আমি ভীত কন্ঠে কথাগুলো একটু উল্টা পাল্টা করে বললাম,

—-দিন ফোন বলছিলাম কথা আমার সাথে ভাইয়া।

রাগী ছেলেটা একবার আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে আবার আমার ফোন টিপতে লাগলো।কি সুন্দর হাসি।উনার চুল গুলো অনেক সিল্কি,বাতাস নেই তাও কপালের চুলগুলো দুলছে।খাড়া নাকটা খুব গ্লো করছে।পাতলা গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি।ঠোঁটে কি লিপস্টিক দিয়ে গোলাপি করেছে নাকি প্রাকৃতিকভাবেই গোলাপি?মনে তো হচ্ছে প্রাকৃতিক।যাইহোক,সুন্দর হলে কি হবে ছেলেটা দুনিয়ার অসভ্য নাহলে এভাবে ছো মেরে আমার ফোন নিত না।আমি ফোনের দিকে হাত এগিয়ে দিতেই ছেলেটা আমার ফোন নিজের প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে দিলেন।আমি মাথা নিচু করে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি।রাগী ছেলেটা আমার দিকে একধাপ এগিয়ে আসতেই আমি একটু পিছিয়ে গেলাম।ছেলেটা আাবার আমার কাছে এসে দাঁড়িয়ে বললেন,

—লুক এট মি।

আমি ভীত চোখে মাথা তুলে উপরের দিকে তাকালাম।উফ্ এত লম্বা কেন!আমি তাকাতেই উনি মুখ মলিন করে বললেন,

—আ’ম সরি।আমার তোমাকে ওভাবে ভিজিয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি।তুৃমি অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলে।সরি,সরি ফর এভরিথিং।

আমি মাথা নিচু করে মিন মিনে গলায় বললাম,

—-ইট’স ওকে।আমারই ভুল ছিল।কুকুরটাকে ভিজিয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি।আমি সরি।

উনি একটু নড়ে চড়ে বললেন,
—না না তোমাকে সরি বলতে হবে না।তোমার কোন দোষ নেই।আ’ম সরি,আ’ম রিয়েলি ভেরি সরি।

আমি চুপচাপ মাথা নিচু করে উনার সাদা কেডস কালো প্যান্ট বাম হাতে কালো ঘড়ি আর কালো ব্রেসলেট দেখছি।কালো কালার পাতলা একটা জ্যাকেটও পরে আছেন উনি।উনার প্যান্টের পকেটে আমার ফোন একটু উচু হয়ে আছে।উনি নরম কন্ঠে বললেন,
—অন্ত?

আমি উনার দিকে তাকালাম।উনার চোখের মণি কুচ কুচে কালো,মারাত্মক সুন্দর!আমি তো তাকাতেই পারছিনা।সঙ্গে সঙ্গে চোখ সরিয়ে নিলাম।তখনই উনার পকেটে আমার ফোন বাজতে লাগলো।নিশ্চয় ভাইয়া ফোন করেছে।আমি উনার দিকে তাকালাম।উনি একইভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,
—-আমার… ফোন বাজছে,দিন।
—উহুম।
আমি মাথা নিচু করে বললাম,
—-প্লিজ দিয়ে দিন,মে বি ভাইয়া ফোন দিয়েছে।টেনশন..

উনি আমাকে পুরোটা বলতে না দিয়ে বললেন,
—কোন ভাইয়া?কিসের ভাইয়া?ভাইয়া আছে তোমার?আর কে আছে?টেল মি।

আমি মনে মনে বললাম আচ্ছা পাগলের পাল্লায় পরেছি।হুদায় আমাকে এভাবে আটকে রেখেছে।সত্যি সরি বলতে এসেছে নাকি আবার র্যাগ দিবে?লক্ষণ ভাল লাগছেনা,নিশ্চয় আবার কিছু করবে।আমি একটা শুকনো ঢোক গিলে বললাম,
—-সবাই আছে।

উনি আমার দিকে সামন্য ঝুকে বললেন,
—-সবাই আছে?সবাই বলতে কারা কারা?
আমি উনার হাতের ব্রেসলেটের দিকে তাকিয়ে বললাম,
—বাবা-আম্মু,ভাইয়া,আপু।
উনি হাতটা জ্যাকেটের পকেটে ঢুকিয়ে বললেন,
—বাসা কোথায় তোমার?
আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
—–ঢাকায়।

উনি অবাক হয়ে বললেন,
—-ঢাকায়?আমি তো ভেবেছি রাজশাহীতেই।এখানে কোথায় থাকো তুমি?কার সাথে থাকো?
আমি একটু ভয় পেয়ে বললাম,
—-ফোন দিন বাসায় যাবো।

উনি পাশের ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললেন,
—দিবো?
অন্য ছেলেটা মুচকি হেসে বললেন,
—এ্যাজ ইউ উইশ?

রাগী ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
—-অন্ত?অন্তই না তোমার নাম?
—জ্বী।

উনি মুচকি হেসে পকেট থেকে ফোন বের করে বললেন,
—-আমি ফোন দিলে সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ করবা,ওকে?আর,আর…

উনি পাশের ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বললেন,—আর কি বলবো?
অন্য ছেলেটা আস্তে করে বললেন,
—ছেড়ে দে,ভয় পাচ্ছে মনে হয়।

রাগী ছেলেটা আমার দিকে ফোন এগিয়ে দিলেন।আমি ফোন নিয়ে ইচ্ছে আর আইরিনের দিকে তাকালাম।আমি যে এখানে আটকে আছি ওদের কোন চিন্তা নেই,দুজন মনের সুখে গল্প করছে।রাগী ছেলেটা আবার বললেন,
—এখনই বাসায় যাবা?আচ্ছা যাও।

সঙ্গে সঙ্গে আমি হাঁটা দিতেই ছেলেটা আমার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,
—ওয়েট ওয়েট।

আমি ভ্রু কুচকে উনার দিকে তাকালাম।উনি মন খারাপ করে বললেন,
—আচ্ছা যাও।

আমি এবার এক দৌঁড়।ইচ্ছের কাছে যেতেই ও বলল,
—ওই ভাইয়া দুটো কি বলল?
আমি একবার পেছনে উনাদের দিকে তাকালাম।ছেলে দুটো হাসাহাসি করছে।আমি ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে বললাম,
—কি আর বলবে,শয়তানি করছিল।দেখ কেমন মজা করছে।বদমাইশ ছেলে কোথাকার!!চল তো বাসায় চল তাড়াতাড়ি নাহলে আবার আসবে।

বিকেলে পাশের বাসায় ঘুরতে এসেছি।একতলা বাসা দেখতে খুব সুন্দর,ছাদে পেয়ারা আর লেবুর গাছ আছে।এই বাসায় মোট তিনজন মানুষ থাকে তাদের মধ্যে একজন হলো রিংকু।রিংকু ক্লাস ফাইভে পরে।দেখতে ভালই কিন্তু অনেক মোটা আর বাকি দুজন হলো রিংকুর বাবা-মা।ছাদে দাঁড়িয়ে পেয়ারা খাচ্ছি আর রিংকুর সাথে গল্প করছি।রিংকু ছাদের এক কোনায় দাঁড়িয়ে বলছে,
—তোমরা তাহলে এখন থেকে এখানেই থাকবা?ওই নতুন বাসা বানাচ্ছে,ওটা তোমাদের?

—হুম।(পেয়ারা খেতে খেতে)
—রাযীন ভাইয়ার সাথে তোমার আপুর বিয়ে হবে?
—হুম।
—তোমার বোনের বিয়ে হলে আমি তোমাকে বিয়ে করবো।তুমি খুব সুন্দর।

রিংকুর কথা শুনে আমি হা।মোটুটা বলে কি?আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
—ওই কি বলছিস?আমাকে বিয়ে করবি?তোর ভুড়ি একদম ফুটো করে দিব।
—আম্মু বলেছে বড় হলে এই ভুড়ি আর থাকবেনা।(হাত দিয়ে পেট নেড়ে)
—আমি তোকে বিয়ে করবো না।(ভাব নিয়ে)
—আমি ডক্টর হবো তাও করবা না?
—না, ডক্টর আমার ভাল লাগেনা।(রেলিং এ হেলান দিয়ে)
—তাহলে ইন্জিনিয়ার হবো।চাঁদ ভাইয়ার ভার্সিটিতে পরলেই ইন্জিনিয়ার হওয়া যায়।চাঁদ ভাইয়া বাসায় নেই না?থাকলে আমি একটু টিপস নিতাম?
—কিসের টিপস?(ভ্রু কুচকে)
–কিভাবে ওই ভার্সিটিতে ভর্তি হতে হবে।(রেলিং এ হাত দিয়ে)

আমি কিছু বলবো তখনই ফোন বেজে উঠলো তাকিয়ে দেখি ভাইয়া।ফোন রিসিভ করেই কান্নার সুরে বললাম,
—ভাইয়া আমি বাসায় যাবো।এখানে থাকতে ইচ্ছে করছে না।আম্মুর কাছে যাবো।

—আর কয়দিন থাক তারপর আমি যেয়ে নিয়ে আসবো।
–আজকেই যাবো,তুমি আজকেই আসো।

ভাইয়া আমাকে হাজিবিজি বুঝিয়ে ফোন কেটে দিল।বাবা আর আপু তো ভয়েই আমাকে ফোন দেইনা।বাসায় যাবো,বাসায় যাবো বলে বলে সবার মাথা খারাপ করে দিয়েছি।

রাতে ডিনার করে রুমে এসে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলাম।বাসায় যাওয়ার জন্য মন খারাপ করছে তাই একটা ঘুমেরর ঔষধ খেয়েছি।রাগী ছেলেটা ফোন দিতে চেয়েছিল এখনও দেইনি তারমানে শয়তান টা মাঝরাতে ফোন দিয়ে বিরক্ত করবে।আননোন নাম্বারর থেকে কল না আসারই কথা তাও ফোন অফ করে ঘুমিয়ে পরলাম।

চলবে………

(গল্পে আপনাদের রেসপন্স পাচ্ছিনা।গল্পটাকি তাহলে এখানেই শেষ করে দিব?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here