ভালোবাসি আমি যে তোমায় ২শেষ পর্ব:প

0
2249

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়_২
#Sohani_Simu

৪১.

নিস্তব্ধ ঘরে টিকটিকির ঠিকঠিক আওয়াজ শুনেই অন্ত শোয়া থেকে ধুড়মুড় করে উঠে বসে নির্ভীকের বুকের উপর টিশার্ট খামচি দিয়ে ধরে ঝাকিয়ে বলল,

‘নির্ভীক ভাইয়া!উঠুন,উঠুন,প্লিজ,প্লিজ,উঠুন।’

নির্ভীক এমনি চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল অন্তর কথা শুনে থমথমে মুখ করে অন্তর দিকে তাকিয়ে থাকলো।অন্ত ভীত চোখে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে।এখন মধ্যরাত।ঘরের জানালা খোলা।টেবিলের উপর একটা মোমবাতি টিমটিম করে জ্বলে পুরো ঘর জুড়ে তার সোনালি আলোর দীপ্তি ছড়িয়ে দিয়েছে।খোলা জানালা দিয়ে মৃদু ঠান্ডা বাতাস আসায় থেকে থেকে কেঁপে উঠছে মোমবাতির জলন্ত আগুনের ঝলক।অন্ত উত্তরের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে দেখে একটা টিকটিকি ছোট ছোট পোকা ধরায় ব্যস্ত।টিকটিকিকে অন্ত খুব ভয় পায়।নির্ভীক এখনও উঠছেনা দেখে অন্ত নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে বুকের উপর খামচে ধরা টিশার্ট ছেড়ে দিয়ে অসহায় মুখ করে বলল,

‘ভয় লাগছে।’

নির্ভীক চোখমুখ শক্ত করে অন্য পাশ ফিরে শুলো।গরমে আর একটু আগে অন্ত কাছে আসতে না দেওয়ায় তার মেজাজ খারাপ ছিল অন্তর মুখে ভাইয়া ডাক শুনে আরও বেশি খারাপ হয়ে গিয়েছে।বিয়ের এতদিন পর,এত কিছুর পরও বউ যদি ভাই ডাকে তাহলে কার মেজাজ ঠিক থাকে!নির্ভীকের ইচ্ছে করছে অন্তকে কষে একটা থাপ্পড় দিতে কিন্তু সেটা করা মানে নিজের গালেই থাপ্পড় দেওয়া।তাছাড়াও নির্ভীক এমন কিছু করতে চায়না যার জন্য পরে পস্তাতে হয় তাই নির্ভীক চুপ করে আছে।আর মনে মনে রাগ কমানোর চেষ্টা করছে।অন্ত একবার খোলা জানালার দিকে তাকালো।বাইরে চাঁদের আলো কিন্তু পরিষ্কার করে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।জানালার কাছে ছোট একটা আমগাছে একটা বাদুর বসে ছিল হঠাৎ পাখা ঝাপটে উড়ে যেতেই অন্ত চমকে উঠে নির্ভীককে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলো।নির্ভীক পেটের উপর থেকে অন্তর হাত সরিয়ে দিয়ে রাগী কন্ঠে বলল,

‘উফ্ গায়ের মধ্যে আসছো কেন!গরম লাগছে সরো।’

অন্ত কান্না মুখ করে আবার উঠে বসলো।একটু আগে সেও নির্ভীককে এধরনের কথায় বলেছিল।অন্ত বুঝতে পারছে নির্ভীকেরও তখন খারাপ লেগেছিল।অন্ত কান্নামুখ করে বলল,

‘সরি,জানালাটা বন্ধ করে দিন না প্লিজ।’

নির্ভীক একবার জানালার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে বলল,

‘ভয় নেই ঘুমাও।’

অন্ত তালপাতার হাত পাখা নিয়ে মিনমিন করে বলল,

‘আমি বাতাস করছি আপনি ওটা বন্ধ করে দিন।’

নির্ভীক অন্তর দিকে পাশ ফিরে রেগে অন্তর হাত থেকে পাখা কেড়ে নিয়ে মেঝেতে ছুড়ে ফেলে দিল।অন্ত বুঝতে পারছে নির্ভীক রেগে গিয়েছে তাই মুখ কাচুমাচু করে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে।নির্ভীক একটানে অন্তর ওড়না খুলে নিয়ে টেবিলের উপর ছুড়ে ফেলে রাগী কন্ঠে বলল,

‘এত গরমে এসব কি পরে আছো?কিসের এত……’

অন্ত কেঁপে উঠে মাথা নিচু করে মন খারাপ করলো তাই নির্ভীক আর কিছু বলল না।এক হাতে কপাল ডলে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতে করতে উঠে বসলো।অস্থির হয়ে টিশার্ট খুলে মেঝেতে ফেলে দিয়ে বলল,

‘উফ্ জঘন্য!!’

অন্ত ভেবেছে নির্ভীক অন্তকে জঘন্য বলেছে তাই অন্তর চোখমুখ অন্ধকার হয়ে গেল কিন্তু নির্ভীক গরমে অস্থির হয়ে এভাবে রেগে যাচ্ছে।বিকেলে বৃষ্টি আসার আগেই কারেন্ট চলে গিয়েছে তারপর থেকে আর আসেনি।এদিকে দুঘন্টা আগে ফ্যান একদম বন্ধ হয়ে গিয়েছে।গরমে একটু স্বস্তি পেতে নির্ভীকের এইমুহূর্তে কোন একটা পুকুরে নেমে গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে বসে থাকতে ইচ্ছে করছে।

পোড়া পোড়া গন্ধ পেতেই নির্ভীক টেবিলের দিকে তাকালো।অন্তর সবচেয়ে পছন্দের গোলাপি ওড়নাটা মোমের আগুনে পুড়ে যাচ্ছে।এই ওড়না নিয়েই তো একবছর আগে একদিন দুই বোনের মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল।জারিফ বিচার করে ওড়নাটা আফ্রাকে দিয়েছিল কিন্তু পরে অন্তর কান্নাকাটি দেখে অন্তকে দিয়ে দেয়।আফ্রা রেগে অন্তকে ধুপধাপ কয়েকটা কিল বসিয়ে দেয়।ব্যস মাইর খেয়ে নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে জ্বর টর বাধিয়ে মরা মরা হয়ে গিয়েছিল।জারিফ নির্ভীককে ফোনে শুনিয়েছিল এই গল্প।অন্তর পছন্দের জিনিসের সবকিছুই নির্ভীকের জানা।পছন্দেরর জিনিস না পেলে অন্তর কেমন হয় সেটাও নির্ভীকের জানা।ওড়নাটা পুড়তে দেখেই নির্ভীক তাড়াহুড়ো করে বিছানা থেকে নেমে জগের পানি সব ওড়নায় ঢেলে দিল।আগুন নিভিয়ে ব্যস্ত হয়ে দেখতে লাগলো কত গুলো পুড়েছে।ওড়ানার মাঝখানে পুড়ে সেটা দুই ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে।নির্ভীক দুই হাতে ওড়নার দুই টুকরো নিয়ে শুকনো ঢোক গিলে অন্তর দিকে তাকালো।অন্ত মন খারাপ করে নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে আছে।নির্ভীক হাসার চেষ্টা করে বলল,

‘আবার কিনে দিব।এরকমই,না এটায় কিনে দিব ওকে?……ওকে তাহলে?’

অন্ত ছোট করে বলল,

‘ওকে।’

নির্ভীক অন্তর ওকে বলা আশা করেনি।ভেবেছিল অন্ত খুব রেগে যাবে কিংবা হাত-পা ছড়িয়ে কান্নাকাটি করবে কিন্তু তেমন কিছুই করছেনা।নির্ভীক বুঝতে পারছে অন্তর খুব বেশি মন খারাপ হয়ে গিয়েছে।ভেজা ওড়নার দুই টুকরো চেয়ারে মেলে দিয়ে নির্ভীক এসে অন্তর পাশে বসে অন্তর হাত ধরতে গেলেই অন্ত হাত গুটিয়ে মাথা নিচু করে নেয়।নির্ভীক কোনো ভণিতা না করে সোজা দুই কান ধরে বলল,

‘সরি,এই দেখ কান ধরেছি।’

অন্ত সরল চোখে নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে বলল,

‘ইট’স ওকে।’

নির্ভীক মুচকি হেসে কান থেকে হাত নামিয়ে অন্তকে জড়িয়ে ধরে বলল,

‘ওকে দেন লেট মি লাভ নাউ।’

খুব সকালে অন্তর হার্টবিট ফিল হওয়ায় নির্ভীকের ঘুম ভেঙ্গে গেল।অন্তর বুক থেকে মাথা তুলে ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে সে অন্তকে আচ্ছা মতো চাপা দিয়ে ভর্তা বানিয়ে ফেলেছে।অন্ত নিরীহ পাখির মতো নির্ভীকের এত বড় ভারী দেহের নিচে চাপা পরে ঘুমোচ্ছে।সকাল সকাল প্রেয়সীর ছোট্ট প্রাণের স্পন্দন পেয়ে নির্ভীকের শরীর মন যেন একদম চাঙ্গা হয়ে গিয়েছে।অন্তর চোখে ঠোঁটে গালে চুমু দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে অন্তর ঘুম ভাঙিয়ে দিয়ে বলল,

‘গুড মর্নিং বউ।’

অন্ত দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে নির্ভীকের উপর পা তুলে দিয়ে নির্ভীকের বুকে মুখ গুজে চোখ বন্ধ করে বলল,

‘পঁচা বর।’

নির্ভীক ভ্রু কুচকে বলল,

‘কেন কেন?পঁচা কেন?

অন্ত কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো। হঠাৎ রাতের কথা মনে হতেই নিজেকে কেমন নিঃস্ব মনে হতে লাগলো।প্লিজ প্লিজ বলতে বলতে নির্ভীক ওসব কি করেছিল ভাবতেই অন্তর ঘুম ছুটে গেল।অন্ত নির্ভীকের বুকে কিল ঘুষি দিয়ে উঠে বসে ভ্যা ভ্যা করে কান্না করে দিল।কান্নার মধ্যেই কিছু বলছে কিন্তু নির্ভীক বুঝতে পারছেনা।নির্ভীক উঠে বসে বুক ডলতে ডলতে বলল,

‘আরে কাঁদছো কেন?’

অন্ত হেঁচকি তুলতে তুলতে বলল,

‘ভাইয়াকে সব বলে দিব।’

নির্ভীক একটু দমে গেল।এই মেয়ে যদি সত্যি সব বলে দেয় মান সম্মান আর কিছু অবশিষ্ট থাকবেনা।ভাইয়ের নয়নের মণি,সবকিছু গড়গড় করে বলে দিবে আমি সিউর।আচ্ছা কিভাবে বলবে?লজ্জা করবেনা একটুও?আমি কি তবে বাড়াবাড়ি রকমের বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করলাম?না না ঠিক মেয়েকেই বিয়ে করেছি।এই কিউটের ডিব্বাটাকে ছাড়াতো আমার এক সেকেন্ডও চলেনা।অনেক ছোট তো তাই একটু বুঝাতে হবে।এসব ভেবে নির্ভীক অন্তকে বুঝাতে শুরু করলো।অন্তর দুই হাত ধরে বলল,

‘কাঁদছো কেন?পাগলি হয়েছো?বর হই তো,কি প্রবলেম?’

অন্ত নাক টেনে অন্যদিকে তাকালো।নির্ভীক অন্তর থুতনি ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নরম কন্ঠে বলল,

‘তোমার মধ্যে বাস করতে চাই,ভালোবাসতে চাই তোমাকে।ভালোবাসি আমি তোমাকে।কেন বুঝনা?’

অন্ত মুখ ফুলিয়ে বলল,

‘বাসায় যাবো।’

নির্ভীক শুকনো ঢোক গিলে বলল,

‘বলে দিবা সবাইকে?’

অন্তর কথা না শুনে পরক্ষণেই সব ভয় টয় ঝেড়ে ফেলে নির্ভীক বিছানা থেকে নেমে বলল,

‘বললে বল তবে এখন বাসায় যাওয়া নয়।আগে আমরা বাবু নিব তারপর।আজকেই বাবু নিতে যাবো ওকে?’

অন্ত কিছু বুঝতে না পেরে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে ভ্রু কুচকে বলল,

‘মানে?কিসের বাবু?আজকেই বাবু নিব মানে?’

নির্ভীক ঘড়িতে সময় দেখতে দেখতে বলল,

‘অনাথ আশ্রমে যাব।একটা ছেলে বাবু আর একটা মেয়ে বাবু এডপ্ট নিব।ওরাই আমাদের ছেলে-মেয়ে হবে।ওকে?’

অন্ত বিছানার উপর হাঁটুতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে বলল,

‘কিহ্!!!না।’

নির্ভীক অন্তর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নরম কন্ঠে বলল,

‘কেন না?বলেছিলে তো ছেলে বাবু নিবা।’

অন্ত হাঁটু দিয়ে হেঁটে নির্ভীকের দিকে এগিয়ে গিয়ে কান্নামুখ করে চেঁচিয়ে বলল,

‘আমাদের বাবুর কথা বলেছিলাম।অন্যকারো নয়,এডপ্ট করা নয়।করব না এডপ্ট।’

নির্ভীক অন্তর গালে হাত দিয়ে বলল,

‘রিল্যাক্স,রিল্যাক্স।আমাদের বাবুও হবে।এখন তো তোমার শরীর ভাল নয়।ডক্টর বলেছে আমরা যেন ভুল করেও এখন বেবি না নিই।পরে নিব ওকে?দুবছর পর। প্রান্তর ছেলে তো এখনও হয়নি না?আগে ওদের হোক তারপর আমরা মেয়ে বাবু নিব।’

অন্ত নির্ভীকের গলা জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করতে লাগলো।ছোট্ট একটা এক্সিডেন্টের জন্য আর কতদিন ভুগতে হবে!এত কষ্ট করে এতদিন ধরে ইন্জেকশনের কড়া ডোজ গুলো নিয়েও রেহাই নেই।নির্ভীক এডপ্ট নিতে চাইছে তারমানে আমাদের কখনও বাবু হবেনা?ভেবেই চিন্তা আর আতংকে সঙ্গে সঙ্গে অন্ত জ্ঞান হারালো।

নির্ভীক ব্যস্ত হয়ে অন্তকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে গাল ঝাকিয়ে অন্তকে ডাকতে লাগলো।অন্তর মুখে পানির ছিটা দিতেই অন্ত পিটপিট করে তাকালো।নির্ভীকের মুখ শুকিয়ে গিয়েছে।অন্ত যে ব্যাপারটা এত সহজে মেনে নিবেনা সেটা আগে ভাবেনি জন্য নিজের উপরই রাগ হচ্ছে।অন্ত কয়েক সেকেন্ড কিছু বুঝতে পারলোনা।তারপর আবার সেসব মনে হতেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।

কান্না আর কিছুতেই থামেনা।নির্ভীকের মুখের কথা অন্ত বিশ্বাসই করলনা।এডপ্ট নেওয়া তো হলোই না শেষমেশ মেডিকেল টেস্ট করে যখন জানতে পারলো কোন সমস্যা নেই তখনই অন্ত কান্না থামিয়েছে।তাড়াতাড়ি সুস্থ হওয়ার জন্য ডক্টর যা বলেছে তাই করেছে।যতগুলো মেডিসিন খেতে বলেছে সব খেয়েছে,কখনও ফাঁকিবাজি করেনি।অন্তর মাথায় ছেলে বাচ্চার ভূত ঢুকেছে।ছেলে বাচ্চা নাহলে তার হার্টব্রেক হয়ে যাবে।

…………+++++………….

অন্তর স্বপ্ন সত্যি হল ঠিক পাঁচবছর পর।হসপিটালের কেবিনে শুয়ে থেকে নির্ভীকের কোলে একসাথে দুটো ফুটফুটে হৃষ্টপুষ্ট ছেলে বাচ্চা দেখে অন্ত খুব খুশি হল।নিজের নড়ার শক্তি নেই তাও বাচ্চা দুটোকে কোলে নেওয়ার বাইনা ধরলো।নির্ভীক অন্তর ব্যাপারে একদম স্ট্রিক্ট তাই অন্তকে শুধু বাচ্চাদুটোকে ধরতে দেওয়া হলো,কোলে দেওয়া হলনা।বাচ্চাদুটোকে আদর করে অন্ত নির্ভীকের দিকে তাকালো।নির্ভীকের অবস্থা খারাপ।চোখমুখ লাল হয়ে আছে,দেখেই বুঝা যাচ্ছে কান্নাকাটি করে হসপিটাল মাথায় তুলেছে।অন্ত তো ওয়াশরুমে পা স্লিপ করে পরে গিয়েছিল।একদম মুমূর্ষু অবস্থায় অন্তকে হসপিটালে আনা হয়েছিল।ডক্টর বলেছিল অপারেশনে লাইফ রিস্ক আছে।ডক্টরের কথা শুনে নির্ভীকের পাগল হতে এক সেকেন্ডও সময় লাগেনি।অন্তর জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত ফুল পাগল হয়েই ছিল।অন্তর জ্ঞান ফিরলে কেবিনে শিফট করতেই নির্ভীক যেন জীবন ফিরে পেল।

নির্ভীক বাচ্চা দুটোকে কেবিনের বাইরে নিজের স্বজনদের কাছে দিয়ে কেবিনে ঢুকে দরজা লাগিয়ে অন্তর কাছে এসে অন্তর গলায় মুখ ডুবিয়ে কান্না করতে লাগলো।অন্ত ক্যানুলা করা হাত দিয়ে নির্ভীকের মাথায় হাত বুলিয়ে দুর্বল কন্ঠে বলল,

‘কাঁদছেন কেন?একটা মেয়ে বাবুও তো চেয়েছিলাম,আপনার দোষেই তো হয়নি।প্লিজ এভাবে কান্নাকাটি করবেননা তাহলে আমিও কাঁদবো কিন্তু।’

নির্ভীক চেয়েও কান্না থামাতে পারছেনা।অন্ত মুখ ফুলিয়ে বলল,

‘হয়েছে আর কাঁদতে হবেনা।এরপর মেয়ে বাবু নিব ওকে?’

নির্ভীক অন্তর গলা থেকে মুখ তুলে অন্তর কপালে চুমু দিয়ে বলল,

‘থ্যাংক ইউ পিচ্চি,এত এত এত বেশি খুশি দেওয়ার জন্য।বাবু আর কখনও নয়।চাই না আমার মেয়ে বাবু।উফ্ একটুর জন্য বেঁচে গিয়েছি।ভাইয়ার তো মেয়ে আছেই।রাহা আমাদেরও মেয়ে।লাগবেনা আর মেয়ে বাবু।তুমি কিন্তু আর কখনও আমাকে না জানিয়ে কোন স্টেপ নিবা না,প্রমিস মি।’

অন্ত ভ্রু কুচকে বলল,

‘এই আপনি এমন কেন বলুন তো?এমন ভাব করছেন যেন আপনাকেই সিজার করতে হয়েছে।করবোনা প্রমিস।আমার ইচ্ছে হলেই মেয়ে বাবুও নিব।’

নির্ভীক অন্তর গাল টিপে ধরে চোখ মুখ শক্ত করে বলল,

‘কথা না শুনলে থাপ্পড় দিয়ে সব দাঁত খুলে নিব,সিরিয়াসলি।’

অন্ত নির্ভীকের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘আমার দুটো ছেলে আছে।আপনাকে আর ভয় পাইনা,হুহ্।’

নির্ভীক অন্তর গাল ছেড়ে দিয়ে অন্তর ঠোঁটে চুমু খেয়ে মুচকি হেসে বলল,

‘ওরা তোমার ছেলে কে বলল?বাইরে সবাই বলছে নির্ভীকের ছেলে,নির্ভীকের দুটো ছেলে হয়েছে,নির্ভীকের দুটো ছেলেই নির্ভীকের মতো দেখতে হয়েছে,যেমন বাবা তেমন ছেলে হয়েছে,নির্ভীকের মতোই নাক,নির্ভীকের মতোই চোখ।সবাই শুধু নির্ভীকের কথায় বলছে।অন্তর কথা কেউ বলছেনা।তোমার কলিজার ভাই দুটোও বলছে বাপ কা বেটা।’

নির্ভীকের কথা শুনে অন্ত চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।নির্ভীক অপ্রস্তুত হয়ে অন্তকে থামানোর চেষ্টা করেও থামছেনা।বাইরে থেকে অন্তর কান্নার আওয়াজ পেয়ে সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে দরজা ধাক্কাতে লাগলো।নির্ভীক গিয়ে দরজা খুলে দিতেই সবাই ভেতরে আসলো।নির্ভীকের মা অন্তর চেক আপ শুরু করে বলল,

‘কাঁদছিস কেন মা?কোথায় কষ্ট হচ্ছে?’

অন্ত কান্না থামিয়ে নাক টেনে জারিফ আর আরাফের কোলে থাকা সাদা টাওয়াল দিয়ে মোড়ানো বাচ্চাদের দিকে ইশারা করে বলল,

‘ওরা কার ছেলে আম্মু?’

ইচ্ছেমতি সবার আগে আগ বাড়িয়ে এসে বলল,

‘নির্ভীক ভাইয়ার ছেলে।তুই চিনতে পারছিস না?আবার সব ভুলে গিয়েছিস?’

অন্ত আবার কান্না শুরু করতেই নির্ভীক এক ধমকে অন্তকে থামিয়ে দিল।সবাই ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলল এরা অন্ত আর নির্ভীকের ছেলে।অন্ত গোমড়া মুখ করে সবার দিকে তাকাচ্ছে।নির্ভীক অন্তর পাশে বসে অন্তর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,

‘ডোন্ট বি স্যাড,ওরা আমাদের দুজনেরই ছেলে।আমরা প্যাটেনালিস্টিক ফ্যামিলি তাই ওরা আমার পরিচয় বেশি পাবে।যেমনটা তুমি পেয়েছো, আমি পেয়েছি,এখানে সবাই পেয়েছে।’

অন্ত নাক মুখ ফুলিয়ে জারিফের দিকে তাকিয়ে আছে।ভাগ্নেকে পেয়ে জারিফের আর বোনের দিকে হুশ নেই।আরাফেরও একই অবস্থা।আরাফ এখনও অন্তকে ভালোবাসে।অন্তর ছেলেদেরও সে জীবন দিয়ে ভালোবাসবে।যদিও নিপার সাথে আরাফের সম্পর্ক অনেক এগিয়েছে তাও অন্তর জায়গা কেউ নিতে পারবেনা।আরাফের একটা একবছরের মেয়ে আছে।জারিফের ছেলের বয়সও চারবছর হয়ে গিয়েছে।সো কল্ড প্রান্তর ছেলের দুইবছর তিনমাস চলছে।আফ্রারও ফুটফুটে দেখতে তিন বছরের একটা মেয়ে আছে।সবাই বলে আফ্রার মেয়ে আফ্রার মতোই দেখতে হয়েছে কিন্তু
নির্ভীকের মনে হয় মেয়েটা তার মিষ্টুমা মানে অন্তর মতো হয়েছে।অন্তও ছোটবেলায় এমনই ছিল।ওদিকে টোয়ারও একজন বিজনেসম্যানের সাথে বিয়ে হয়েছে।ড্রাগসের নেশা ভুলে মেয়েটা নতুন জীবন শুরু করেছে।প্রায় দুবছর ধরে সে বরের সাথে ইন্ডিয়ায় আছে।

নির্ভীকের কথায় সবাই একমত।প্রান্ত নিজের ছেলেকে ইচ্ছেমতির কোলে দিয়ে মুচকি হেসে নির্ভীকের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল,

‘ভাইরে ভাই,এখনও বুঝতে পারছিসনা কি পেয়েছিস।দুটো দিন যাক তারপর বুঝতে পারবি বাপ হওয়ার কি জ্বালা।আমার একটা নিয়েই যা অবস্থা তুই দুটো কি করে সামলাবি আল্লাহ্‌ মালুম।’

নির্ভীক নিজের বাবার দিকে তাকিয়ে ইনোসেন্ট মুখ করে বলল,

‘বাবা তো আছেই।আমাকে যেভাবে এত বড় করেছে আমার ছেলে দুটোকেও করে দিবে,তাইনা বাবা?’

নির্ভীকের বাবা সোফায় বসে বললেন,

‘আই উইস তোমার ছেলে দুটো যেন বউমার মতো শান্ত আর সুস্থির হয়।’

প্রান্ত হু হা করে হেসে দিয়ে বলল,

‘বোনুর মতো একটাও হয়নি ফুপ্পা।দুটোই নির্ভীক হবে দেখো।’

নির্ভীক ভেবেছিল প্রান্তর কথা শুনে অন্ত আবার কাঁদবে কিন্তু অন্ত কাঁদলোনা বরং হাসছে।নির্ভীক সবার আড়ালে অন্তর কানের কাছে মুখ নিয়ে বিরবির করে বলল,

‘কি ব্যাপার বউ?হাসছো কেন?প্রান্ত তো আমার কথা বলেছে।’

অন্ত নির্ভীকের ডান হাত ধরে বলল,

‘আজকে আমি খুব খুশি খুব খুব।সবসময় নির্ভীক চেয়েছিলাম আজ পেয়েছি।ছোট ছোট দুটো নির্ভীক।উফ্ অনেক খুশি আমি।আই লাভ ইউ।’

নির্ভীক বাম হাতে ঘাড় চুলকিয়ে সবার দিকে তাকালো।সবাই এখন বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে আছে।এই সুযোগে নির্ভীক ফট করে অন্তর ঠোঁটের কোনায় চুমু দিয়ে বিরবির করে বলল,

‘লাভ ইউ টু সোনা বউ,ভালোবাসি।’

~সমাপ্ত~

বি.দ্র:- সিজন টু লিখার কোন অভিজ্ঞতা ছিল না।পারবো কি পারবোনা এমন দ্বিধা নিয়েই শুরু করেছিলাম।পাশে থাকার জন্য পাঠক-পাঠিকাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।আর অনেক সরিও কারন গল্প চলাকালীন অনেকের সাথে মিসবিহেভ করেছি।

ভাল থাকবেন সবাই।
আল্লাহ্ হাফেজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here