ভালোবাসি আমি যে তোমায় ২*পর্ব:১৩

0
1909

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়_২
#Sohani_Simu

১০.(বোনাস)

ডক্টর অন্তকে নির্ভীককে চিনার কথা বললে অন্ত দূর্বল হেসে হ্যা সূচক মাথা নাড়ায়।নির্ভীক হাফ ছেড়ে বাঁচে।আরেকটা ডক্টর অন্তকে বললেন,
“কথা বলো আমাদের সাথে।তোমার কি কথা বলতে প্রবলেম হচ্ছে?”

অন্ত ভ্রু কুচকে ডক্টরের কথা শুনছে।ডক্টর চিন্তিত হয়ে বললেন,
“তুমি কি আমার কথা বুঝতে পারছো?পা নাড়াও।”

অন্ত এবারও ভ্রু কুচকে ডক্টরের দিকে তাকিয়ে থাকলো।একটুপর পায়ের দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে পা নাড়ালো।ডক্টর আবার বললেন,
“এই ছেলেটার নাম বলো।তুমি কি ওকে চিনতে পারছো?”

অন্ত ভ্রু কুচকালো।কথাগুলো শোনার সময় অন্ত ভ্রু কুচকাচ্ছে ডক্টর তা খুব ভাল ভাবেই খেয়াল করলেন।অন্ত নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে দূর্বল কন্ঠে বলল,
“আমি চিনি।”

টাকওয়ালা সিনিয়র ডক্টর নরম কন্ঠে বললেন,
“নাম কি ওর?কথা বলো ওর সাথে।”

নির্ভীক অন্তর পাশে এসে দাঁড়ালো।অন্তর হাতে হাত রাখতেই অন্ত ভয় পেয়ে গেল।নির্ভীক অন্তকে ভয় পেতে দেখে চিন্তিত হয়ে বলল,
“আমার সাথে কথা বলো প্লিজ।কোথায় কষ্ট হচ্ছে বলো?”

ডক্টর নির্ভীককে অন্তর পাশ থেকে সরিয়ে দিলেন।আস্তে আস্তে বললেন,
“তুমি ওর নাম জানো?”

অন্ত কয়েকসেকেন্ড পরে বলল,
“না।”

নির্ভীক এক হাতে ওর কপালের চুলগুলো মাথার উপর চেপে ধরলো।ও কেমন রিয়েক্ট করবে বুঝতে পারছেনা।অন্ত ওর নাম জানেনা বলছে।নির্ভীক আশা করেছিল অন্ত তাকে কিছুতেই ভুলবেনা।নির্ভীক অস্থির হয়ে অন্তর পাশে দাঁড়িয়ে ওর হাত ধরে বলল,
“তুমি আমাকে চিনতে পারছোনা?”

অন্ত হাত টান দিয়ে ভ্রু কুচকে বলল,
“আমি চিনি।”
-“কি চিনো?নাম বলো আমার।”কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল।
-“ডক্টর আপনি।”

অন্তর কথা শুনে যেন নির্ভীকের দুনিয়ায় উল্টে গেল।অন্তর হাত ছেড়ে দিয়ে হন হন করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।রুমের বাহিরেই জারিফ আর প্রান্ত দাঁড়িয়ে ছিল।নির্ভীক জারিফকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলল,
“ভাইয়া ও আমাকে ভুলে গেছে।চিনতে পারছেনা আমাকে।ভয় পাচ্ছে আমাকে।এখন কি হবে?আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবোনা।”

জারিফ কোনো কথায় বলতে পারছেনা।প্রান্ত নির্ভীকের কাঁধে হাত রেখে ওকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে ওর চোখে চোখ রেখে বলল,
“একটু সময় দে সব ঠিক হয়ে যাবে।”

নির্ভীক প্রান্তকে জড়িয়ে ধরে দূর্বল কন্ঠে বলল,
“আর কত?আমি আর সহ্য করতে পারছিনা।এত কষ্ট কেন?”

প্রান্ত নির্ভীকের পিঠে হাত বুলিয়ে বলল,
“বুঝার চেষ্টা কর অন্ত এখন অসুস্থ।কয়েকদিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যাবে।”

নির্ভীক চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো।জারিফ চেয়ারে বসে মাথা নিচু করে নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে।একটু পর একটা ডক্টর বেড়িয়ে আসলেন।জারিফ উঠে দাঁড়িয়ে ব্যস্ত হয়ে বলল,
“ডক্টর কি অবস্থা ওর?”

ডক্টর জারিফের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“পেশেন্ট নিজের নাম বলতে পারছেনা,মেমোরি লস হয়েছে।কোনো কথাও দ্রুত ক্যাপচার করতে পারছেনা।আপনারা দশমিনিট কথা বলুন ওর সাথে।মনে করতে না পারলে প্রেশার দিবেন না।অবশ্যই থেমে থেমে কথা বলবেন।কথা বলতে না চাইলে জোড় করবেননা।আর টাচ করতে গেলে ভয় পাচ্ছে, দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলবেন।আসুন।”

ওরা ভেতরে ঢুকলো।জারিফ অন্তর কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।জারিফ কি বলবে বুঝতে পারছেনা।ওর মনে হচ্ছে ওর কন্ঠনালী কেউ আটকে দিয়েছে।।অন্ত কিছুক্ষণ জারিফের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে নির্ভীকের দিকে তারপর প্রান্তর দিকে তাকালো।নির্ভীক নিজেকে শক্ত করে জারিফকে সরিয়ে দিয়ে টুল টেনে অন্তর পাশে বসলো।মুচকি হেসে বলল,
“তুমি জানো তোমার নাম কি?ডক্টর রা তোমাকে নাম বলেছে?”

অন্ত ভ্রু কুচকে নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে থাকলো।নির্ভীক কি বলল কিছুই তার বোধগম্য হলোনা।অন্ত বিরক্ত হয়ে নিজের হাতের দিকে তাকালো।নির্ভীক একটু নড়ে চড়ে বসে নরম কন্ঠে বলল,
“অন্ত?”

কয়েকসেকেন্ড পর অন্ত নির্ভীকের দিকে তাকালো।নির্ভীক জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে ধীরে ধীরে বলল,
“তোমার নাম অন্ত।”

অন্ত কিছুক্ষণ চুপ থেকে নির্ভীক কে বলল,
“অন্ত কেন?”

রাযীন অন্যপাশে দাঁড়িয়ে খুশি হয়ে বলল,
“ভেরি গুড কোয়েশ্চেন।”

সিনিয়র ডক্টর ইশারায় রাযীনকে চুপ থাকতে বললেন।এদিকে নির্ভীক অন্তর এমন প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেছে।কি বলবে বুঝতে পারছেনা কিন্তু তাকে অনেক খুশি দেখাচ্ছে।নির্ভীক আবার ধীরে ধীরে বলল,
“তোমার নাম হুমাইরা আনতারা অন্ত কেন জানো?”
-“কেন?”
-“যেদিন তোমার জন্ম হয়েছিল সেদিন তুমি অনেক ফাইট করেছো।বীরাঙ্গনা কারা জানো?যারা অনেক সাহসী আর প্রচুর ফাইট করতে জানে তারা।তুমি সেদিন বেঁচে থাকার জন্য প্রচুর ফাইট করেছিলে সেজন্যই তো তোমার বাবা তোমার নাম দিল আনতারা আর হুমাইরা মানে রুপোসী,অন্ত মানে শেষ তাহলে বাবা তোমাকে কি নাম দিল?শেষ রুপোসী বীরাঙ্গনা।”

অন্ত কিছুটা বুঝলো বাকিটা বুঝার চেষ্টা করলোনা।সে বার বার জারিফের দিকে তাকাচ্ছে।জারিফ কাঁদছে জন্য তার একটু অসস্তি হচ্ছে।নির্ভীক বুঝতে পেরে অন্তকে বলল,
“ওটা জারিফ ভাইয়া আর ওটা প্রান্ত ভাইয়া।চিনো ওদের?ওরা খুব ভাল।”

অন্ত নির্ভীকের কথা শুনছেনা কিন্তু নির্ভীকের দেখাদেখি জারিফ আর প্রান্তর দিকে তাকাচ্ছে।জারিফ কয়েকবার ছোটপাখি বলে ডাকছে কিন্তু কোনো রেসপন্স নেই।অন্ত নির্ভীকের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকছে কারও কথায় কানে নিচ্ছে না।নির্ভীক যেদিকে তাকাচ্ছে অন্তও সেদিকে তাকাচ্ছে নির্ভীক যা বলছে অন্তও তাই বলছে।কি এক মুশকিল!এরকম করতে করতে অন্ত একটু পরই ক্লান্ত হয়ে গেল।সিনিয়র ডক্টর বললেন,

“নির্ভীক স্টপ।”

অন্ত চমকে ডক্টরের দিকে তাকালো।বির বির করে নির্ভীকের নাম বলতে লাগলো।নির্ভীক যেহেতু তার সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে তাই সে নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে বলল,
“নির্ভীক!”
-“ইয়াহ।”(মুচকি হেসে)
“কোথায় নির্ভীক?”(আশেপাশে তাকিয়ে)

নির্ভীকের মুখ চুপসে গেল।দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাযীনের দিকে তাকালো।রাযীন সিরিন্জে মেডিসিন তুলছে।নির্ভীক মলিন মুখে বলল,
“আমি নির্ভীক।”

অন্ত নির্ভীকের কথা মানলো না।তার ধারণা নির্ভীক অন্যকেউ।ধীরে ধীরে সে উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছে।সবাই বলার পরও সে মানছেনা নির্ভীক তার পাশেই বসে আছে।একসময় নির্ভীক যখন অন্তকে বলল তাহলে তুমিই বলো নির্ভীক কে।অন্ত তখন কিছু বলতে না পেরে কান্না করে দিল।ডক্টর ওকে ঘুমের মেডিসিন দিল।কিছুক্ষণের মধ্যেই সে ঘুমিয়ে পরলো।

আইসিইউ থেকে বেড়িয়ে সিনিয়র ডক্টর বললেন,
“পেশেন্টের মেমোরি লস হয়েছে শুধু তাই নয় পেশেন্ট অস্বাভাবিক আচরণ করছে।”

জারিফ দূর্বল কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“ও সুস্থ হবে কবে?”

ডক্টর হাত নাড়িয়ে কথা বলছেন,
“যা ভুলে গিয়েছে তা আর কখনও মনে করতে পারবেনা।সবচেয়ে ভাল হবে আপনারা ওকে একটা নতুন জগৎ দিন।নতুন করে পৃথিবীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিন।আপনাদের জন্য প্লাস পয়েন্ট হলো পেশেন্ট কিন্তু অনেক কিছু জানে।কোন কথার কি মানে সবই বুঝতে পারছে।ভাল লাগলে কথা শুনছে না লাগছে বিরক্ত হচ্ছে।আবেগ অনুভূতি সব আছে শুধু সেগুলোর সাথে সঠিকভাবে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে।রুমের সব জিনিস পত্রের নাম বলতে পারছে।আমি ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম প্রিয় ফুলের নাম কি বলতে পারেনি এখানে ব্যাপারটা এমন হয়েছে ও সব ফুলের নাম জানে কিন্তু প্রিয় ফুলের নামটা ভুলে গিয়েছে আবার নতুন করে কোন ফুল কোন বিশেষ কারনে ওর কাছে ভাল লাগবে তখন সেটা ওর কাছে প্রিয় হবে।ওর চুলগুলো সোজা নাকি কোকড়া সেটাও বলতে পারেনি।তারমানে ও নিজের চেহারাও চিনেনা।এমনকি নিজের চুলের দিকে তাকায়ওনি,সেই বুদ্ধি টা পায়নি।ভয় পাবেন না বুদ্ধি-বৃত্তিক কোন সমস্যা নেই শুধু স্মৃতি শক্তি নষ্ট হয়েছে বাকি সব ঠিক আছে।ক্লট থাকার কারনে ব্রেনে প্রেশার পরছে তাই অস্বাভাবিক আচরণ করছে সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে।আর একটা খারাপ দিক তো আপনারা দেখলেনই,সামান্য কারনে উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছে।এমনটা হতে দেওয়া যাবেনা।এই সময় পেশন্টের প্যানিক অ্যাটাক হলে সব কিছু হাতের বাহিরে চলে যাবে।কে নির্ভীক,কোথায় নির্ভীক এসব কখনও জিজ্ঞেস করবেন না।আই হোপ ও নিজেই নির্ভীকের ব্যাপারটা সামলে নিবে।কালকে ওর সব গুলো টেস্ট নেওয়া হবে।সবশেষ যে কথা বলবো তা হলো পুরোনো কোন কথা মনে করাতে জোড় করবেননা।যদি নিজের থেকে কিছু জানতে চায় তাহলে বলবেন।আপনাদের কিছু জানার থাকলে ডক্টর তালহার কাছে জেনে নিবেন।পেশেন্টের সব দায়িত্ব এখন থেকে উনার।”

ডক্টরের দীর্ঘ বক্তব্য শেষ হওয়ার আগেই নির্ভীক সেখান থেকে একটু দূরে বারান্দায় চলে গিয়েছে।জারিফ ডক্টরের কাছ থেকে সব শুনে নিল।রাযীনও অন্তর ট্রিটমেন্ট সম্পর্কে অনেক কিছু বলল।ডক্টর চলে যাওয়ার সাথে সাথে জারিফ আর প্রান্ত চিন্তিত হয়ে নির্ভীকের কাছে এগিয়ে গেল।ওরা নির্ভীককে সান্ত্বনা দিতে লাগলো কিন্তু নির্ভীক ওদের থামিয়ে দিয়ে খুবই স্বাভাবিক হয়ে বলল,
“ভুলে গেছে তাতে কি হয়েছে?ও কবে আমাকে মনে রেখেছিল?আজ থেকে তেতাল্লিশ দিন আগে তো আমাকে চিনতোই না।ভুলে গেছে যাক না,নতুন করে শুরু করবো।শোনো আমি একদম ঠিক আছি আর অন্তকেও ঠিক রাখবো,ডোন্ট ওরি।”

নির্ভীক আর এক মুহূর্তও ওদের সামনে না দাঁড়িয়ে ওদের থাকার জন্য যেই কেবিনটা নেওয়া হয়েছে সেখানে চলে গেল।শাওয়ার নিয়ে খাবার খেয়ে বেডে শুয়ে পড়লো।সে বুঝতে পারছে তার এখন কি করতে হবে।নিজের আর অন্তর সমস্ত দায়িত্ব তাকে এমনিতেও নিতে হতো এখন আরও বেশি করে নিবে।যা হবার হয়ে গিয়েছে সে আর অন্তর কোন ক্ষতি হতে দিবেনা।তার জন্য তাকে সব সময় স্ট্রং থাকতে হবে।এসব চিন্তা করতে করতে ভোর হওয়ার আগেই নির্ভীক ক্লান্ত চোখ জোড়া বন্ধ করে নিল।

চলবে……..

(বোনাস দিতে ইচ্ছে করলো তাই দিলাম।মেইন পার্ট হলে এত হিজিবিজি কিছু বলতাম না।এক কথায় বলতাম অন্ত সব ভুলে গেছে।যাইহোক,টিবিআই এর রোগীরা আরও ভয়ঙ্কর অসুস্থ হয়।অন্তকে একটু সুস্থ ভাবে উপস্থাপন করলাম।

অনেকে ইনবক্সে বলছেন গল্প এমন না হয়ে তেমন হওয়া লাগতো, উমুক নাহয়ে তমুক হওয়া লাগতো,এক্সিডেন্ট না হয়ে বিয়ে হওয়া লাগতো..তাদেরকে আমি রিকুয়েস্ট করছি আপনারা যেখানে গল্পটা পড়ছেন সেখানে কমেন্ট করুন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here