#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়_২
#Sohani_Simu
১৫.(বোনাস)
অন্ত সকালে ঘুম থেকে উঠে সারাবাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোথাও ইচ্ছেমতিকে না পেয়ে কান্না করে বাড়ি মাথায় তুলেছে।কেউ তাকে থামাতে পারছেনা।জারিফ সকাল সকাল অফিসে চলে গেছে আর জারিফের সাথে ইচ্ছেমতিও ভার্সিটিতে চলে গেছে।অন্ত ইচ্ছেমতির কাছে যাবে বলে ড্রইং রুমের মেঝেতে বসে হাত-পা ছড়িয়ে কান্না শুরু করে দিয়েছে।আফ্রা অন্তর পাশে বসে ভ্রু কুচকে কুহেলীকে বলছে,
‘এর জন্য তো মনে হচ্ছে ইচ্ছের পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যাবে।এই ছেমড়ি চুপ কর!’
অন্ত রাগী চোখে আফ্রার দিকে তাকালো।ছোটবেলা থেকেই দুজনার সাপে-নেউলে সম্পর্ক।অন্ত তো একটু হলেই ভাইকে বলে আফ্রাকে বকা খাইয়ে নেই।এখনও অন্ত মনে মনে ঠিক করলো এখনই যেয়ে ভাইয়াকে বলে দিবে আফ্রা ওকে ছেমড়ি বলেছে। কুহেলী অন্তর হাত ধরে টেনে তুলে বলল,
‘ইচ্ছে এখনই চলে আসবে।ওতো ক্লাস করতে গিয়েছে।’
অন্ত নাক টেনে বলল,
‘আমিও ক্লাস করতে যাব,আমাকেও নিয়ে চলো।’
আফ্রা সোফায় বসতে বসতে বলল,
‘কানের কাছে এমন প্যান প্যান করিস না তো,তোর প্যানপেনে আওয়াজ শুনতে বিশ্রী লাগছে।’
অন্ত ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,
‘ভাইয়াকে বলে দিব দাঁড়াও।’
আফ্রা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,
‘হুহ্ তুই আমার কিছু করতে পারবিনা,ভাইয়া অফিসে চলে গিয়েছে।’
অন্ত উল্টো দিকে হাঁটা দিয়ে বলল,
‘আরেকটা ভাইয়াকে বলে দিব।’
আফ্রা ফোন টিপতে টিপতে বলল,
‘আরাফ ভাইয়া মনে হয় ঘুমোচ্ছে।ডিস্টার্ব করলে এক থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিবে।’
অন্ত মুখ ফুলিয়ে গট গট করে আরাফের ঘরে চলে আসলো।আরাফ এখনও ঘুম থেকে উঠেনি।জানালার পর্দা দেওয়া আছে জন্য ঘরে তেমন আলো নেই।আফ্রার নামে নালিশ নিয়ে আসতে আসতে অন্তর আবার ইচ্ছেমতির কথা মনে পরলো।অন্ত আরাফের কাছে যেয়ে এক হাত টেনে বলল,
‘ভাইয়া?এই ভাইয়া?উঠো,আমাকে ইচ্ছের কাছে নিয়ে চলো।’
আরাফ ভ্রু কুচকে অন্তর দিকে তাকালো।আরাফ অন্তকে স্বপ্ন ভেবে মুচকি হেসে একটানে নিজের বুকের উপর ফেলে জড়িয়ে ধরলো।অন্তকে নিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে অন্তর গালে একটা চুমু দিয়ে চোখবন্ধ করে ফিসফিস করে বলল,
‘জানপাখি!’
অন্ত আরাফকে ধাক্কা দিয়ে ধুরমুর করে উঠে বসে ভ্রু কুচকে আরাফের দিকে তাকালো।আরাফও চোখ কচলে উঠে বসে দেখে অন্ত তার বিছানায় বসে আছে।অন্তকে দেখে অবাক হয়ে বলল,
‘তুমি এখানে কি করছো?’
অন্ত বিছানা থেকে নেমে মেঝেতে দাঁড়িয়ে আরাফের দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো।কিছুক্ষণ আগে আরাফের করা কাজ কর্ম কিছুই তার মাথায় ঢুকছে না।আরাফকে তার কাছে অন্যরকম লাগছে।একটু পরই অন্ত বুঝতে পারলো আরাফকে তার ভাল লাগছেনা।আরাফ ব্যাপারটা বুঝতে পেরে অন্তর সাথে সহজ হওয়ার জন্য বলল,
‘কি যেন বলছিলা?কোথায় যাবা?’
অন্তর ইচ্ছের কথা মনে হতেই উৎসুক হয়ে বলল,
‘ইচ্ছের কাছে যাব,ওর কাছে নিয়ে চলো।’
আরাফ সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আড়মোড়া ভাঙাতে ভাঙাতে বলল,
‘কোথায় গিয়েছে ও?’
অন্ত মুখ ফুলিয়ে বলল,
‘ক্লাস করতে।আমাকে না বলেই চলে গেছে।’
আরাফ বিছানা থেকে নামতে নামতে বলল,
‘আচ্ছা যাও এই ড্রেসটা চেন্জ করে আসো।আমরা বাহিরে যাব।’
অন্ত খুশি হয়ে দৌঁড়ে নিজের রুমে চলে গেল।আরাফ কেউ অনেক খুশি দেখাচ্ছে কিন্তু নির্ভীক এসব দেখে নিজের ঘরে ভাঙচুর শুরু করে দিয়েছে।নির্ভীক অন্তদের পুরো বাসায় সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে রেখেছে।জারিফ আর কুহেলী ছাড়া এ ব্যাপারে কেউ কিছু জানেনা।সকালে ঘুম থেকে উঠেই অন্ত কি করছে দেখার জন্য নির্ভীক ল্যাপটপ অন করে অন্তকে ড্রইং রুমে কান্না করতে দেখে।একটু পর অন্ত আরাফের ঘরে গেলে আরাফ যা করেছে সেসব দেখেই নির্ভীক রেগে যায়।চোখমুখ লাল করে বেডসাইড টেবিল থেকে ল্যাম্পটা ফেলে দেই।টেবিলের উপর থেকে পেপার ওয়েট নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের আয়না বরাবর ছুড়ে মারে।সাথে সাথে আয়না ফেঁটে চৌচির হয়ে যায়।চেয়ারে লাথি দিয়ে দুই হাতে নিজের চুল টেনে সোফায় গিয়ে বসলো।কিছুক্ষণ চোখমুখ শক্ত করে বসে থেকে কুহেলীর কাছে ফোন দিয়ে অন্ত কেন কাঁদছিল শুনে নিল।তারপর দ্রুত ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে বাইকে উঠে কালো হেলমেট পরে অন্তদের বাসার সামনে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো।
নির্ভীক অন্তদের বাসার সামনে দাঁড়ানোর কিছুক্ষণ পরই আরাফ আর অন্ত গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে আসলো।নির্ভীক ওদের ফলো করতে শুরু করলো কিন্তু একসময় ওদের গাড়ি হারিয়ে ফেলল।এদিকে আরাফ অন্তকে নিয়ে ভার্সিটিতে না যেয়ে পদ্মা গার্ডেনে গেল।অন্তকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে বসতেই আরাফের ফোন বেজে উঠলো।পকেট থেকে ফোন বের করে দেখলো বাবার ফোন।আরাফ বাবার কল ইগনোর করে অন্তকে বলল,
‘তোমার এখানে ভাল লাগছে?’
অন্তর কাট কাট জবাব,
‘না।’
আরাফের ফোনে আবার কল আসলো।কন্টিনুয়াসলি কয়েকবার ফোন বাজছে দেখে আরাফ অন্তকে এখানে চুপকরে বসে থাকতে বলেই ফোন নিয়ে একটু সাইডে চলে গেল।কল রিসিভ করে বিরক্ত কন্ঠে বলল,
‘কি বলবা বলো?’
বাবার কথা শুনে আরাফের পায়ের নিচের মাটি সরে যাওয়ার উপক্রম হলো কারন আরাফের বাবা জানালেন তার মা নাকি হার্ট এ্যাটাক করেছে।আরাফকে এক্ষুণি ঢাকা যেতে হবে।বাবার সাথে কথা বলেই আরাফ অন্তর কাছে এসে দেখে অন্ত নেই।নেই মানে কোথাও নেই। আশেপাশে পাশে কোথাও নেই।সবাইকে জিজ্ঞেস করলো কেউ বলতে পারলোনা।আরাফের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পরলো।সে কি করবে কিছু বুঝতে পারছেনা।জারিফকে ফোন করে জানিয়ে দিয়ে হন্যে হয়ে অন্তকে খুঁজতে শুরু করলো।দুঘন্টা ধরে খুঁজেও কোথাও পেলনা।আরাফের নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছে।হাইওয়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।চুলগুলো সব এলোমেলো হয়ে গিয়েছে।একদিকে অন্তকে হারিয়ে ফেলেছে অন্যদিকে তার মা অসুস্থ।টেনশনে পুরো শরীর অবশ হয়ে আসছে তার।পুরো তিন ঘন্টা তন্ন তন্ন করে খোঁজার পরও যখন অন্তকে পাওয়া গেলনা জারিফ আরাফকে আর ইচ্ছেমতিকে প্লেনের টিকিট কেটে জোর করে ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করে দিল কারন তাদের মা খুব বেশি অসুস্থ হয়ে গিয়েছে।আরাফ একদম দিশেহারা হয়ে গিয়েছে।ঢাকায় নেমেই জারিফকে ফোন দিয়ে অন্তর খোঁজ নিতে শুরু করলো।
হসপিটালে এসে মাকে দেখেই ইচ্ছেমতি কান্নাকাটি শুরু করে দিল।আরাফ মায়ের পাশে বসতেই আসমা বেগম কাঁপা কাঁপা হাতে মুখের অক্সিজেন মাস্ক খুলে শ্বাস টেনে টেনে বললেন,
‘আমার একটা শেষ অনুরোধ রাখবি বাবা?’
আরাফ মায়ের মুখে মাস্ক লাগিয়ে বলল,
‘উফ্ আম্মু কিসব বাজে কথা বলছো?তুমি একদম ঠিক হয়ে যাবে।’
আসমা বেগম আবার মাস্ক খুলে বললেন,
‘চলে যাবার আগে নিপাকে তোর বউ হিসেবে দেখে যেতে চাই নাহলে মেয়েটার প্রতি অন্যায় করা হবে।কয়েকবছর ধরে আমরা ওকে তোর সাথে বিয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিলাম..।’
কান্নার কারনে উনি আর কিছু বলতে পারলেন না।ডক্টর ও কথা বলতে নিষেধ করছেন।এত কিছুর পরও আরাফ নিপাকে বিয়ে করতে রাজী নয়।নিপা হসপিটালের করিডোরে এক কোনায় মাথা নিচু করে বসে আছে।আরাফের বাবা,মামা-মামি,ইচ্ছেমতি এমনকি ডক্টরও আরাফকে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে বিয়েতে রাজী করালেন।আরাফ রাজী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজী আর উকিল ডেকে আরাফের মায়ের সামনেই আরাফ আর নিপাকে বিয়ে দেওয়া হল।রাগে আরাফের চোখমুখ লাল হয়ে আছে,সবকিছু শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে।নিপাকে সে সহ্যই করতে পারছেনা।বিয়ের পর্ব শেষ করতেই আরাফ মাকে একটু সুস্থ বোধ করতে দেখে কাউকে কিছু না বলে আবার রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওণা দিল।তার জানপাখিকে যে এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি।এর মধ্যে নির্ভীকের সাথে কয়েকবার কথা হয়েছে।অন্তকে খুঁজে না পেলে নির্ভীক ওকে খুন করার হুমকি দিয়েছে।
চলবে……………….