ভালোবাসি আমি যে তোমায় ২*পর্ব:২২

0
1702

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়_২
#Sohani_Simu

১৮.

অন্ত চোখ পিটপিট করে তাকাতেই সাদা রং করা সিলিং এ ফুল স্পীডে ঘূর্ণায়মান ফ্যান দেখতে পেল।হৈ-চৈ আর ধস্তাধস্তির আওয়াজ পেয়ে ডানপাশে তাকাতেই দেখতে পেল দুটো ছেলে মারপিট করছে।একটা ছেলে আরেকটা ছেলেকে সোফায় ঠেসে ধরে তার গলা চেপে ধরেছে।ছেলেটার মুখ দেখা যাচ্ছে না কারন অন্ত ছেলেটার পেছনে সোফায় শুয়ে আছে।ছেলেটা এক হাঁটু ভাজ করে আরেকটা ছেলের উরুতে রেখে বলছে,

‘আমাকে বিয়ের স্বপ্ন দেখিয়ে এখন বলছিস মজা করেছিস?তোকে আজ মেরে দিব।শালা আমার মন নিয়ে খেলেছিস?’

অন্ত এক লাফে উঠে বসলো।দৌঁড়ে যেয়ে একহাতে ছেলেটার হাত ধরলো আরেকহাত মাইর খাওয়া ছেলেটার বুকে রেখে ভ্রু কুচকে বলল,

‘মারছেন কেন উনাকে এভাবে!!ছাড়ুন!এই খারাপ ছেলে ছাড়ুন বলছি!’

অন্তর কথা শুনে নির্ভীক সোজা হয়ে দাঁড়ালো।অন্ত নির্ভীকের হাত ছেড়ে দিয়ে প্রান্তর কাঁধে আর বুকে হাত রেখে ভীত কন্ঠে বলল,

‘আপনি শ্বাস নিতে পারছেন না তো!’

প্রান্ত গলায় হাত দিয়ে হাসফাস করতে করতে নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলল,

‘শালা খারাপ ছেলে ছাড়লি কেন?’

অন্ত প্রান্তর শরীরে হাত দিয়ে আছে দেখে নির্ভীক চোখমুখ শক্ত করে এক ঝটকায় অন্তকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে অন্তর দুই হাত ধরে একটু দূরে ডাইনিং টেবিলের বেসিনের কাছে নিয়ে গেল।ট্যাপ ছেড়ে অন্তর হাত হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে ধুয়ে টাওয়েল দিয়ে মুছতে মুছতে বলল,

‘তুমি আমাকে খারাপ ছেলে বললা?তুমি জানো ওই ছেলেটা কত খারাপ?ও আমাকে বিয়ের স্বপ্ন দেখিয়ে এখন বলছে মজা করেছে।কত্ত বড় বেইমান দেখেছ?’

অন্ত এতক্ষণ এক দৃষ্টিতে নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে ছিল।নির্ভীকের কথা শেষ হতেই অন্ত ভ্রু কুচকে বলল,

‘আপনি ওই ছেলেকে বিয়ে করবেন?’

নির্ভীক হতভম্ব হয়ে অন্তর দিকে তাকালো।অন্ত ভীত চোখে নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে ছিল নির্ভীক ওর দিকে তাকাতেই অন্যদিকে তাকালো।এদিকে প্রান্ত হাসতে হাসতে পেট ফাটিয়ে ফেলছে।অন্ত ভীত চোখে চারপাশ দেখতে দেখতে হঠাৎই তার মনে পরলো সে তো ভার্সিটিতে ছিল এই ছেলে তাকে আই লাভ ইউ বলছিল।তারপর আর কিছু মনে নেই।এসব ভেবেই অন্ত তড়িৎ গতিতে একটু দূরে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে ভীত কন্ঠে বলল,

‘আমি কোথায়?আপনারা কারা?’

প্রান্ত হাসি থামালো।নির্ভীক ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে অন্তর সামনে গা ঘেষে দাঁড়ালো।দুজনার মধ্যে দু ইঞ্চি দূরুত্ব।এমনিতেই অন্ত অনেক ভীতু তার উপর এমন লম্বা চওড়া ছেলেকে এত কাছে আসতে দেখেই অন্ত ভয়ে কাঁপতে লাগলো, মাথা উপর দিকে তুলে ভীত চোখে নির্ভীকের দিকে তাকিয়েই দুই হাত নির্ভীকের বুকে রেখে ধাক্কা দিয়ে বলল,

‘সরুন সামনে থেকে,সরে দাঁড়ান!’

অন্ত নির্ভীককে এক চুলও সরাতে পারলোনা।নির্ভীক অন্তর দুইহাত আরও শক্ত করে নিজের বুকে চেপে ধরে নরম কন্ঠে বলল,

‘কি যেন বলছিলাম?..আই লাভ ইউ,ইয়াহ আই লাভ ইউ।উইল ইউ লাভ মি?’

অন্ত এবার ভ্যা ভ্যা করে কান্না করে দিল।নির্ভীক হতাশ হয়ে অন্তকে ছেড়ে দিয়ে মলিন মুখে সোফায় গিয়ে মাথা ধরে বসলো।অন্তকে কাঁদতে দেখে তার বুকের মধ্যে ব্যাথা করছে।নির্ভীক সামনে থেকে যেতেই অন্ত কান্না থামানোর চেষ্টা করে বলল,

‘বাসায় যাব।’

তখনই কিচেন থেকে কমলা খালাকে বেড়িয়ে আসতে দেখে অন্ত দৌঁড়ে যেয়ে কমলাকে জড়িয়ে ধরে আতংকিত হয়ে বলল,

‘খালা তুমি এখানে!!তোমাকেও ওই খারাপ ছেলেটা ধরে নিয়ে এসেছে?’

কমলা কিছু বুঝতে না পেরে বলল,

‘কি বলতাছো তুমি এসব?আমারে আবার কে ধরে আনছে আমি তো বাসাতেই আছি।’

কমলার কথা শুনে অন্ত আশেপাশে ভাল করে তাকিয়ে অবাক হলো।নির্ভীক ওকে এই বাসায় কেন নিয়ে এসেছে বুঝতে পারলো না।রাযীনকে সিঁড়ি দিয়ে ব্যস্ত হয়ে নামতে দেখেই দৌঁড়ে রাযীনের কাছে যেতে লেগে ওড়নাতে পা বেঁধে দরাম করে মেঝেতে পরে গেল।সবার সামনে এভাবে পরে যেয়ে নাক মুখ ফুলিয়ে কান্না করার আগেই ঝরের গতিতে নির্ভীক এসে অন্তর দুইবাহু ধরে টেনে তুলতে তুলতে রাগী কন্ঠে বলল,

‘কোথায় লেগেছে?এত ছুটোছুটি করছো কেন?ঘুম নেই চোখে?ঘুমে চোখ লাল হয়ে গেছে তাও তার ছুটোছুটি শেষ হচ্ছে না।’

নির্ভীকের মুখে ঘুমের কথা শুনেই অন্ত বুঝতে পারলো তার অনেক বেশি ঘুম পাচ্ছে কিন্তু এত ঘুম পাবার কারন সে কিছুতেই বুঝতে পারছেনা।ঘুমে চোখের পাতা ভারী হয়ে এসেছে।রাযীনকে দেখেই নির্ভীকের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রাযীনের পাশে দাঁড়িয়ে বলল,

‘ভাইয়া দেখ ওই খারাপ ছেলেটা আমাকে ভার্সিটি থেকে কিভাবে যেন এখানে নিয়ে এসেছে।তুমি চিনও ওকে?’

রাযীন ভ্রু কুচকে অন্তর দিকে তাকিয়ে বলল,

‘তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?শরীর খারাপ করছে নাকি?’

নির্ভীক অন্তর পাশে দাঁড়িয়ে অন্তর একহাত ধরে বলল,
‘ঘুমাবা চলো।’

অন্ত রাযীনের হাত ধরে কান্নার সুরে বলল,

‘ভাইয়াাাা..এ্যা এ্যা এ্যা।’

নির্ভীক অন্তর হাত থেকে রাযীনের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
‘এই পিচ্চি চুপ!কি ভাইয়া হ্যাঁ?ভাইয়া জানে আই লাভ ইউ।’

অন্ত আর রাযীন দুজনই অবাক হয়ে নির্ভীকের দিকে তাকালো।নির্ভীক বিরক্ত হয়ে অন্তকে ছেড়ে দিয়ে প্রান্তর কাছে যেতে যেতে বলল,

‘তোমরা এত অবাক হচ্ছো কেন বুঝতে পারছিনা।এসব হৃদয়ঘটিত ব্যাপারে এত অবাক হওয়ার কি আছে?ভালোবাসি তাই বলছি না বাসলে কি বলতাম?’

রাযীন ভ্রু কুচকে নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ওই বদমাইশের ঝাড়,আবার কি বদমাইশি শুরু করেছিস?’

নির্ভীক সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে অন্তর দিকে তাকিয়ে বলল,

‘এত দেখি তাও মন ভরে নারে ভাই।তোমাদের অন্ত সোনামণি এত কিউট কেন?হুয়াই?’

অন্ত ভ্রু কুচকে নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে ছিল।নির্ভীকের কথা শেষ হতেই রাযীনের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল,

‘ এই খারাপ ছেলেটা কে ভাইয়া?’

রাযীন মুচকি হেসে অন্তর দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ ওটা আমার ছোট ভাই।ওর নাম কি জানিস?’

অন্ত মাথা নাড়ালো যার অর্থ ও নাম জানেনা।রাযীন কিছু বলার আগেই নির্ভীক চেঁচিয়ে বলল,

‘নির্ভীক,আমার নাম নির্ভীক।’

নির্ভীকের নাম শুনে অন্তর কুচকানো ভ্রু স্বাভাবিক হল।কিছু বলতে চেয়ে মুখ খুলেও বলতে পারছেনা।অন্তর অসস্তি হতে লাগলো।রাযীন ব্যাপারটা ধরতে পেরে বলল,

‘চল তোকে বাসায় দিয়ে আসি।এসব বদমাইশদের সাথে থাকলে তুইও বদমাইশ হয়ে যাবি।’

নির্ভীক তেঁতে উঠে বলল,
‘বাসায় যাবে মানে?এখন ও কোথাও যাবেনা।’

অন্ত ধাপ তুলছে কিন্তু মাথা ঘোরার জন্য ধাপ সরে সরে যাচ্ছে।রাযীনের একবাহুতে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে মিনমিন করে বলল,

‘ভাইয়া ধর আমাকে,পরে যাচ্ছি।’

রাযীন ভ্রু কুচকে অন্তকে ধরল।নির্ভীক সোফা থেকে উঠে এসে অন্তকে কোলে নিয়ে সোফায় শুয়ে দিয়ে নরম কন্ঠে বলল,

‘কখন থেকে বলছি ঘুমাও।একটা কথাও শুনছো না।’

অন্ত কপালের উপর একহাত দিয়ে চোখবন্ধ করে আছে।রাযীন চিন্তিত হয়ে বলল,
‘কি হল আবার!কি করেছিস ওকে?’

নির্ভীক অন্তর পাশে মেঝেতে বসে বলল,

‘কিছু হয়নি।পানির সাথে স্লিপিং পিল খাইয়েছিলাম।ভার্সিটি থেকে বাসা পর্যন্ত আসতে না আসতেই জেগে গেল।’

রাযীন ভ্রু কুচকে বলল,
‘স্লিপিং পিল দিয়েছিস কেন?’

নির্ভীক ইনোসেন্ট মুখ করে বলল,

‘এখানে নিয়ে আসার জন্য।এমনি এমনি আমার সাথে আসতো নাকি?আমি তো ভেবেছিলাম মেডিসিনে কাজ হবে না কিন্তু দুমিনিটের মধ্যে কাজ হয়ে গেছে।’

রাযীন রাগী কন্ঠে বলল,
‘ডক্টর হয়েছিস?যা খুশি কর এরপর শরীর খারাপ হলে আমি কিছু জানিনা।’

বলেই রাযীন চলে যেতে লাগলো।নির্ভীক অন্তর দিকে তাকিয়ে দেখে ঘুমে কাঁদা।প্রান্তর দিকে তাকিয়ে দেখে সোফায় বসে ফোন টিপছে আর মুচকি হাসছে।নির্ভীক ভ্রু কুচকে বলল,

‘কি ব্যাপার?হাসছিস কেন?’

প্রান্ত অপ্রস্তুত হয়ে নির্ভীকের দিকে তাকালো।ফোন পকেটে ঢুকিয়ে থতমত করে বলল,

‘কই হাসিনি তো।’

নির্ভীক উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
‘মিথ্যে বলছিস কেন?দেখি ফোন দেখা।আমিও একটু হাসবো,মজার কিছু হলে পিচ্চিটাকেও একটু হাসাবো।’

নির্ভীককে এগিয়ে আসতে দেখে প্রান্ত উঠে এক দৌঁড়।যেতে যেতে বলল,

‘বিকেলে ক্যাম্পাসে আসিস।’

নির্ভীক কিছু বলল না।মুচকি হেসে অন্তকে কোলে নিয়ে রুমে এসে বিছানায় শুয়ে দিল।জানালার পর্দাগুলো লাগিয়ে দিয়ে রুমটা যতটা সম্ভব অন্ধকার করল তারপর ফ্যান অন করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।

দুপুর দুটো।সব ক্লাস শেষ করে ইচ্ছেমতি ভার্সিটির দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে।প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে একটু দূরে ছোট এককটা কৃষ্ণচূড়া গাছের ছায়ায় গিয়ে দাঁড়ালো।ড্রাইভার তাকে নিতে আসবে কিন্তু এই অসহ্য গরমে এক মুহূর্তও দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করছেনা।রাস্তায় তেমন যান চলাচলও নেই,একটাও খালি রিক্সা চোখে পরছেনা।রিক্সা পেলে রিক্সা নিয়েই চলে যেত।ইচ্ছেমতি জিহ্বা দিয়ে বিরক্তির শব্দ করে ব্যাগ থেকে ফোন বের করতেই কোথায় থেকে একটা বাইক এসে তার সামনে দাঁড়ালো।ইচ্ছেমতি সামনে না তাকিয়েই একডু সাইডে সরে দাঁড়িয়ে ফোন কানে ধরলো।প্রান্ত ভ্রু কুচকে বলল,

‘ওই হ্যালো?লুক এট মি,আ’ম হেয়ার।’

ইচ্ছেমতি চমকে প্রান্তর দিকে তাকালো।কান থেকে ফোন সরিয়ে সঙ্গে সঙ্গে প্রান্তর কাছে এগিয়ে গিয়ে আন্তরিকতার সাথে বলল,

‘অহ আপনি!আমি একদম খেয়াল করিনি সরি।’

প্রান্ত বাইকে বসে থেকেই ইচ্ছেমতির দিকে তাকিয়ে বলল,

‘এখানে কি করছো?’

ইচ্ছেমতি ডান হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে থুতনিতে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে বলল,

‘ড্রাইভার চাচার জন্য ওয়েট করছি।’

‘অহ এখনও আসছেনা?আমার সাথে গেলে যেতে পারো,নির্ভীকদের বাসায় যাচ্ছি।’

ইচ্ছেমতি মুচকি হেসে বলল,

‘আপনার গার্লফ্রেন্ড যদি জানতে পারে অন্য কোন মেয়েকে বাইকে নিয়েছেন কি হবে বুঝতে পারছেন?’

প্রান্ত ভ্রু কুচকে বলল,
‘কি হবে?’

‘অনেক কিছু হবে।আপনার সাথে ঝগড়া হবে,ব্রেক আপও হতে পারে।’

প্রান্ত মৃদু হেসে বলল,

‘তুমি বলতে চাইছো তোমার মতো সুন্দরীকে আমার সাথে দেখলে আমার গার্লফ্রেন্ড রাগ করবে?’তুমি জানো? আমার গার্লফ্রেন্ড তোমার থেকে দ্বিগুণ সুন্দরী তাই রাগ করার কোনে প্রশ্নই উঠেনা।’

ইচ্ছেমতি রেগে ফুলে উঠলো।প্রান্তর দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বলল,

‘শুনুন আপনার গার্লফ্রেন্ড রাগ না করলেও আমার বয়ফ্রেন্ড আমাকে অন্যকোন ছেলের বাইকে উঠতে দেখলে যথেষ্ট রাগ করবে।সামনে আমার এক্সাম এখন বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া করে ডিপ্রেশনে গেলে এক্সাম খারাপ হয়ে যাবে।আপনি যান তো এখান থেকে,আপনার সাথে কথা বলছি দেখলেও রেগে যেতে পারে।’

প্রান্ত মুচকি হেসে বলল,

‘ বাবা!!তোমার আবার বয়ফ্রেন্ডও আছে?’

ইচ্ছেমতি টেডি স্মাইল দিল।পরক্ষণেই থমথমে মুখ করে বলল,

‘কেন বিশ্বাস হচ্ছে না আপনার?উনি শুধু বয়ফ্রেন্ড নয় উড বি হাসবেন্ডও।রাযীন ভাইয়ার ফ্রেন্ড ডক্টর মনিম,নিউরোলজিস্ট।এখনও বিশ্বাস নাহলে হসপিটালে গিয়ে কথা বলে আসতে পারেন তারপরও যদি বিশ্বাস না হয় কয়েকমাস পর আমাদের বিয়েতে আসবেন তখন নিশ্চয় বিশ্বাস হবে। ‘

প্রান্ত ঠোঁট টিপে হেসে বলল,

‘করেছি বিশ্বাস আর তুমি বিয়েতে ইনভাইট করলে অবশ্যই যাবো।’

ইচ্ছেমতি হাসার চেষ্টা করে বলল,

‘অবশ্যই যাবেন আর আপনার সো কল্ড গার্লফ্রেন্ডকেও নিয়ে যাবেন।’

বলেই ইচ্ছেমতি হাঁটা দিল।এই মুহূর্তে তার যেমন রাগ হচ্ছে তেমন কান্নাও পাচ্ছে।এই কয় মাসে প্রান্তর মধ্যে এমন কোনো সাইন পায়নি যেটা দেখে সে বুঝবে প্রান্ত ওকে ভালোবাসে।ইচ্ছেমতিই সবসময় আকারে ইঙ্গিতে প্রান্তকে বুঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু প্রান্ত পাত্তায় দেয়না।ইচ্ছেমতি চলে যাচ্ছে দেখে প্রান্তও ধীরে ধীরে বাইক নিয়ে ইচ্ছেমতির সাথে যেতে যেতে বলল,

‘আরে তুমি কি রাগ করলা নাকি?’

ইচ্ছেমতি দাঁড়িয়ে গেল।প্রান্তর দিকে আঙুল তুলে ফুসে উঠে বলল,

‘আপনি একটা অহংকারী লোক।আর কখনও আমার সাথে কথা বলবেন না।’

প্রান্ত কুচকানো ভ্রু স্বাভাবিক করে মুচকি হেসে বলল,

‘এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছেনা।তোমার সাথে কথা না বললে তোমার বিয়েতে যাবো কোন মুখে বল?’

ইচ্ছেমতি জোরে শ্বাস নিয়ে রাগ কন্ট্রোল করে বলল,

‘ওই তো গাড়ি চলে এসেছে।আপনি যেদিকে যাচ্ছিলেন নির্ভীক ভাইয়ার বাসা কিন্তু সেদিকে নয়।আপনি মনে হয় রাস্তা ভুলে গেছেন,নো প্রবলেম আমাদের গাড়ি ফলো করুন আসুন।’

ইচ্ছেমতি আর একমুহূর্তও না দাঁড়িয়ে দ্রুত গিয়ে গাড়িতে উঠলো।প্রান্ত ইচ্ছেমতির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে কপাল ডলে মুচকি হাসলো তারপরই বাইক স্টার্ট দিয়ে নিজের ক্যাম্পাসের দিকে চলে গেল।গাড়ির মধ্যে থেকে প্রান্তকে চলে যেতে দেখে ইচ্ছেমতি মন খারাপ করে সিটে গা এলিয়ে দিল।মনে মনে বলল,

‘ আমি শুধু প্রান্ত প্রান্ত করি কেন,হুয়াই?প্রান্ত মোটেও আহামরি কিছু নয়।প্রান্তর থেকে ডক্টর মনিম হাজার গুন ভাল।ডক্টরকে একবার ফোন করলে উনি বিনিময়ে কয়েকবার ফোন দিয়ে আমার খোঁজ নেন আর প্রান্ত,আমি কয়েকবার ফোন দেওয়ার পর উনি একবার রিসিভ করেন তাও বিরক্ত হয়ে।কেন এত অবহেলা?আমি কি আদৌ এত অবহেলার যোগ্য?অনেক হয়েছে আর নয় এখন থেকে প্রান্তর চ্যাপ্টার ক্লোজ করে দিব।যে বুঝতে চায়না তাকিয়ে না বুঝানোই ভাল আর যেখানে আমার কদর নেই সেখানে যাওয়া মানে প্রতি পদে পদে নিজেকে ছোট করা।আমি কেন নিজেকে ছোট করব?আমার কি আত্মসম্মান নেই?অবশ্যই আছে।’

এসব চিন্তা করতে করতেই ইচ্ছেমতি বাসায় চলে গেল।

নিস্তব্ধ বিকেলে ঘুম ভাঙলো অন্তর।আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সে একটা মোটামুটি অন্ধকার ঘরে শুয়ে আছে।এই ঘর তার চেনা।গরমে ঘেমে গিয়ে পুরো শরীর ভিজে উঠেছে।মাথার উপর ফ্যান ঘুরছেনা দেখে ভ্রু কুচকে সুইচের দিকে তাকিয়ে দেখে সুইচ তো অনই আছে তাহলে নিশ্চয় লোড শেডিং হয়েছে।অন্ত উঠে বসে ওড়না দিয়ে গলা আর মুখের ঘাম মুছে বিছানা থেকে নেমে জুতো খুঁজতে লাগলো।কোথাও জুতো পাচ্ছেনা দেখে খালি পায়েই ঘর থেকে বেড়িয়ে আসলো।নিঃশব্দে সিঁড়ির কাছে আসতেই দেখলো নির্ভীক এক হাতে একটা চার্জার ফ্যান নিয়ে অন্য হাতে ফোন কানে ধরে কথা বলতে বলতে উপরে আসছে।নির্ভীককে আসতে দেখেই অন্ত ভয় পেয়ে দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে পরলো।নির্ভীক সিঁড়ির উপরের শেষ ধাপে দাঁড়িয়ে ফ্যান রেখে বলল,

‘ আকাশে মেঘ করেছে যেকোন টাইমে ঝড় শুরু হবে আমি এখন যেতে পারবো না……দরকারের সময় এমনই হয়।আমি পাসওয়ার্ড বলছি তুই তুলে নে………তাহলে এখন হবেনা……ভাইয়ার ল্যাপটপে চার্জ নেই…..না নেই আইপিএসও কাজ করছেনা…… আমারটা প্রান্তর কাছে আছে……..হ্যাঁ প্রান্ত পারবে ওকে পাসওয়ার্ড বলছি।’

নির্ভীক ভ্রু কুচকে মেসেজ টাইপ করে প্রান্তর কাছে পাঠিয়ে দিল।ফোন পকেটে ঢুকিয়ে মুচকি হেসে আড় চোখে বামপাশে তাকালো।অন্ত নাক মুখ চেপে নিঃশ্বাস বন্ধ করে দেয়ালের সাথে লেগে দাড়িয়ে ছিল হঠাৎ নির্ভীক অন্তর সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

‘হাউ মাউ খাও পিচ্চির গন্ধ পাও।’

অন্ত হকচকিয়ে লাফিয়ে চিৎকার করে উঠলো।নির্ভীক অন্তর এক হাত আর মুখ চেপে ধরে বলল,

‘কুল!কুল ডাউন,এটা আমি?ভয় পেয়েছো?’

অন্ত ভীত চোখে নির্ভীকের দিকে তাকালো।নির্ভীক অন্তর মুখ থেকে হাত সরিয়ে বলল,

‘গরমে ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছে না?নিচে থেকে ফ্যান নিয়ে এসেছি চলো।’

অন্ত দুই হাতে গাউন চেপে ধরে দৌঁড়।নির্ভীকও অন্তর পেছনে যেতে যেতে বলল,

‘দাঁড়াও ওখানে।পরে যাবা তো,ধীরে নামো।’

সিঁড়ি দিয়ে নেমে অন্ত মেইন দরজায় আসতেই নির্ভীক অন্তর হাত ধরে বলল,

‘উফ্ এত দৌঁড়ানো কার থেকে শিখেছো হুম?বাসায় যাবা?খালি পায়ে যাচ্ছো কেন?জুতো নিয়ে আসছি দাঁড়াও,ওই তো সোফার ওখানে তোমার জুতো আছে।’

নির্ভীক অন্তর হাত ছেড়ে দিতেই অন্ত আবার বাহিরে দৌঁড় দিয়েছে।নির্ভীকও জুতো না নিতে গিয়ে বাহিরে এসে খপ করে অন্তর হাত ধরে ধমক দিয়ে বলল,

‘দাঁড়াতে বললাম তো ওখানে,কথা শুনছোনা কেন?’

ধমক খেয়ে অন্ত ঠোঁট ফুলিয়েছে,কান্না করবে তখনই নির্ভীক আবার ধমক দিয়ে বলল,

‘চুপ!!এত কিসের কান্না?আমার সামনে কাঁদলে এক থাপ্পড় দিয়ে সব দাঁত ফেলে দিব।যাও জুতো পরে আসো আমি এখানে ওয়েট করছি।’

অন্ত নিজেদের বাসার দিকে তাকালো তারপর নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে ভীত কন্ঠে বলল,

‘ওখানে আমাদের বাসা,এখান থেকে এখানে জুতো পরতে হবে না।’

নির্ভীক আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে না দেখে ফট করে অন্তকে কোলে নিয়ে মুচকি হেসে বলল,

‘ও ওটায় তোমাদের বাসা?চলো তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি।’

অন্ত হাত-পা ছুড়ে বলল,

‘নামান আমাকে।নামান বলছি,এই খারাপ ছেলে নামান।আমি এখনই ভাইয়াকে বলে দিব দাঁড়ান।

নির্ভীক অন্তকে বাসার ভেতরে নিয়ে গিয়ে নামিয়ে দিল।অন্ত ভাইয়া ভাইয়া করতে করতে দৌঁড়ে উপরে চলে গেল।নির্ভীক মুচকি হেসে নিজের বাসায় চলে গেল।

চলবে…………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here