#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়_২
#Sohani_Simu
২৩.
সকালের মিষ্টি রোদ জানালার কাচ ভেদ করে বিছানায় অন্তর শরীরে পরতেই নির্ভীক গিয়ে পর্দাটা টেনে দিল।কপাল আর ঘাড় ডলতে ডলতে সোফায় এসে আধ শোয়া হয়ে বসে চোখ বন্ধ করলো।সারারাত ঘুম না হওয়ায় চোখ লাল হয়ে গেছে সাথে জ্বালা করছে।বৃষ্টিতে ভিজার জন্য মাথাটাও ভার ভার লাগছে।চোখ মেলে রাখা দায় কিন্তু কিছু একটা পরার শব্দে নির্ভীক হকচকিয়ে চোখ খুললো।সামনে তাকিয়ে দেখে আরাফ দাঁড়িয়ে আছে।কার্পেটের সাথে হোচট খেয়ে হাতে থাকা ট্রে তে দুটো কফির মগ ছিল মেঝেতে পরে ভেঙ্গে গিয়েছে।আরাফ অন্তর দিকে তাকালো ভেবেছে অন্তর ঘুম হয়তো ভেঙ্গে দিল কিন্তু শব্দ পেয়েও অন্তর ঘুম ভাঙ্গেনি,একটু নড়েচড়ে অন্য পাশ ফিরে শুলো।আরাফ নিশ্চিন্ত হয়ে সোফায় নির্ভীকের পাশে বসলো।নির্ভীক ভ্রু কুচকালো।আরাফ তার কাছে কফি নিয়ে কেন এসেছে বুঝতে পারছেনা।আরাফ শান্ত কন্ঠে বলল,
‘বিয়ে করছিস?’
‘হুম।’
আরাফ সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে অন্তর দিকে তাকিয়ে বলল,
‘করতেই পারিস তবে ওকে নয়।ওই মেয়েটা শুধু আমার।’
নির্ভীক রেগে গেল।রাগ কন্ট্রোল করে বলল,
‘হ্যাঁ তোমারই।ওই মেয়েটা শুধু তোমার বোন।এর বেশি কিছু নয়।’
আরাফ একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
‘মামাতো বোন।বিয়ের করা যায়।’
নির্ভীক বুঝলো আরাফ কেন এখানে এসেছে।নির্ভীক সোজা হয়ে বসে ফুলহাতা টিশার্টের হাতা গুটাতে লাগলো।শেষ রাতে ঠান্ডা লাগার কারনে এটা পরেছিল এখন আরাফের কথা শুনে তার রক্ত গরম হয়ে যাচ্ছে।আরাফ চোখমুখ শক্ত করে বলল,
‘আমি ওকে ভালোবাসি।যতটা ভালোবাসলে মানুষ অনুভূতি শূন্য হয়ে যায় ততটা।ওকে ছাড়া আমি বাঁচতেই পারবোনা।দমবন্ধ হয়ে মরে যাব।রক্তের সাথে মিশিয়ে নিয়েছি ওকে।তুই সরে যা।’
নির্ভীক সোফায় হেলান দিয়ে চোখবন্ধ করে বলল,
‘এক কাজ কর।টেবিলের উপর এক গ্লাস পানি আছে ওখানে একটু বিষ মিশিয়ে দাও।পটাসিয়াম সায়ানাইড খুব ভাল কাজ করবে।খাওয়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মৃত্যু নিশ্চিত।ওটায় মিশিয়ে দাও।আমার গলা শুকিয়ে গেছে একটু পানি খাওয়া দরকার।’
আরাফ রেগে গেল।চোখ মুখ শক্ত করে টেবিলের উপর থেকে গ্লাসটা ফেলে দিল।নির্ভীক শান্ত চোখে আরাফের দিকে তাকালো।আরাফ উঠে দাঁড়িয়ে রাগী কন্ঠে বলল,
‘খুন করলে ওকে করব তোকে নয়।ওকে মেরে নিজেও মরবো।শী ইজ ওনলি মাইন,স্টে অ্যাওয়ে ফ্রম হার।’
নির্ভীক লাথি দিয়ে টেবিলটা উল্টে দিল।আরাফের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে শান্ত কন্ঠে বলল,
‘ভাল লাগে ভালোবাসতে।যেভাবে বলবা সেভাবে ভালোবাসবো।দূরেই থাকবো।’
বলেই নির্ভীক সোফার এক কোনায় পরে থাকা ল্যাপটপ নিয়ে দ্রুত ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল।আরাফ চিন্তিত হয়ে মাথা ধরে সোফায় বসলো।নির্ভীকের কথার আগাগোড়া কিছু বুঝতে পারছেনা।কি বুঝালো নির্ভীক তাকে?দূরে যেয়ে ভালোবাসবে মানে কি?অন্তকে ছেড়ে দিল না কি করল আরাফ কিছু বুঝলো না।কান্নার আওয়াজ পেয়েই আরাফ অন্তর দিকে তাকালো।অন্ত অন্যপাশ ফিরে শুয়ে কান্না করছে।এতক্ষণ দুজনার কথা শুনে ফেলেছে।গত রাতে তাকে কড়া ডোজের মেডিসিন দেওয়া হয়েছে।এখন ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া তারজন্য ভাল কথা নয় সেখানে কান্না করছে।আরাফ দ্রুত অন্তর পাশে গিয়ে অন্তর মাথায় হাত রেখে বলল,
‘এই জানপাখি কাঁদছো কেন?কিছু হয়নি।ডোন্ট ওরি,ঘুমাও তুমি।’
অন্ত আরাফের হাত সরিয়ে দিয়ে উঠে বসলো।হেঁচকি তুলতে তুলতে বলল,
‘নির্ভীক ভাইয়া চলে গেল কেন?’
আরাফ অন্তর চোখ মুছতে মুছতে বলল,
‘গিয়েছে যাক না।ওর এখানে থাকার কি দরকার?ও তোমাকে ভালোবাসেনা।আমি তোমাকে ভালোবাসি আর তুমিও আমাকে ভালোবাসবে।’
অন্ত নাক মুখ ফুলিয়ে কেঁদে দিল।আরাফকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
‘কেন এমন করছো?কি হয়েছে তোমার?আগের আরাফ ভাইয়া হয়ে যাও।’
আরাফ অন্তর পিঠে হাত রেখে বিরবির করে বলল,
‘আমি তো আগের মতোই আছি।ভালোবাসি আমি তোমাকে।অনেক বেশি ভালোবাসি।তুমিও একটু ট্রাই কর না।’
‘নির্ভীক ভাইয়াকে ভালোবাসি।যেতে দিও না উনাকে।কোথাও যেতে দিব না।প্রমিস করেছিলেন উনি।কেন চলে গেল।’
বিরবির করে এসব বলতে বলতে অন্ত আবার ঘুমিয়ে গেল।আরাফ অন্তকে ঠিক করে শুয়ে দিয়ে অন্তর কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে রাগী মুখ করে বলল,
‘তোমার আমাকে ভালোবাসতে হবে,শুধু আমাকে।ইউ হ্যাভ টু ফরগেট হিম।’
—–
সকাল গড়িয়ে দুপুর হল।ট্রাকে চড়ে যেমন ব্রেক ডান্স করতে করতে সবাই তানোর গিয়েছিল তেমনই ডান্স করতে করতে সবাই রাজশাহী ফিরে আসছে।প্রান্ত ইচ্ছেমতিকে নিয়ে ট্রাকের ভিতরে ড্রাইভারের সাথে বসেছে।প্রান্ত চায়না দুপুরের এমন কড়া রোদে ইচ্ছেমতি ওই ছেলেগুলোর সাথে নাচানাচি করুক।নির্ভীক ইচ্ছেমতিকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দিয়েছে এখন সেই দায়িত্ব ভালই ভালই পালন করতে পারলেই তার শান্তি।ইচ্ছেমতি থমথমে মুখ করে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে।তার মন খারাপ কারন সে সাফিদের বাড়িতে আরও দুটোদিন থাকতে চেয়েছিল থাকা হল না আর ট্রাকের উপর সবাই হৈ চৈ করছে প্রান্ত তাকে সেখানেও যেতে দিল না।ইচ্ছেমতিকে এমন গোমড়া মুখো হয়ে বসে থাকতে দেখে প্রান্ত মুচকি হেসে বলল,
‘এখনই যদি নাচটাচ করে কোমড় ভেঙ্গে বসে থাকো তাহলে কদিন পর নির্ভীকের বিয়েতে নাচবে কেমন করে সেটা ভেবেই তো তোমাকে এখানে নিয়ে আসলাম।এমন গোমড়া মুখ করে বসে থাকবে জানলে কিছুতেই আনতাম না।’
ইচ্ছেমতি রাগী কন্ঠে বলল,
‘অন্তর বিয়ে হতে হতে আমি বুড়ি হয়ে যাব।ডাইনিটা সুস্থও হবেনা ওর বিয়েও হবেনা তাই বলে আমি ফ্রেন্ডদের সাথে একটু মজা করব না?’
প্রান্ত মৃদু হেসে বলল,
‘বোনুর বিয়ে হবে কিনা জানিনা তবে নির্ভীকের বিয়ে হচ্ছে।নির্ভীক বলছিল একটা নিউস পাবলিক করতে হবে।আমি ভেবে দেখলাম নিউসটা তোমাকে বললে অতি শীঘ্রই পাবলিক হয়ে যাবে।’
ইচ্ছেমতি ভ্রু কুচকে বলল,
‘কিসের নিউস?’
‘নির্ভীকের বিয়ের কার্ড বের হয়েছে।আগামী ২রা আষাঢ় আমার ভাইয়ের শুভ বিবাহ।আজ শনিবার,হাতে মাত্র ছয়দিন সময় আছে।এই দেখ কত সুন্দর কার্ড।’
প্রান্ত ইচ্ছেমতির দিকে নিজের ফোন এগিয়ে দিল।ইচ্ছেমতি কার্ডের ছবি দেখে খুশি হয়ে বলল,
‘আমি কিন্তু পঞ্চাশ টা কার্ড নিব।এত সুন্দর!কিন্তু প্রিয়তার নাম কেন?নির্ভীক ভাইয়া অন্তকে বিয়ে করবেনা?’
অবাক হয়ে বলল ইচ্ছেমতি।প্রান্ত মন খারাপ করে বলল,
‘আমি কিছু জানিনা।’
ইচ্ছেমতি চেঁচিয়ে বলল,
‘জানেন না?এসবের মানে কি?’
প্রান্ত নির্বিকারভাবে বলল,
‘নির্ভীক যাকে ভালোবাসে তাকেই বিয়ে করবে এত মানের কি আছে।’
ইচ্ছেমতি ভ্রু কুচকে ফোন ঘাটতে লাগলো।চিন্তায় তার মুখ শুকিয়ে গিয়েছে। প্রান্ত মুচকি হেসে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকলো।মনে মনে বলল কাজ হয়েছে।চল প্রান্ত তুই এবার রিল্যাক্সে থাক।তোর সব কাজ এখন এই ড্রামাবাজ মেয়েটা করে ফেলবে।ইচ্ছেমতি জারিফকে ফোন করে বলতেই জারিফ যেন আকাশ থেকে পরলো।জারিফ এ ব্যাপারে কিছুই জানতো না।ইচ্ছেমতি ফটফট করে জারিফের সাথে কথা বলে একে একে আফ্রা,মামা-মামি,বাবা-মাকে জানিয়ে দিল।আরাফের কাছে ফোন দিচ্ছে কিন্তু ফোন ঢুকছেনা।ঢুকবে কি করে আরাফ যে বাংলাদেশে চলে এসেছে।ইচ্ছেমতি জানেনা তাই বার বার ট্রাই করছে।এদিকে প্রান্ত চোখবন্ধ করে ইচ্ছেমতির কথা বলা শুনতে শুনতে কখন যেন ঘুমিয়ে পরেছে।ঘুমের মধ্যেই মাথাটা ইচ্ছেমতির কাঁধে রাখলো।ইচ্ছেমতির চরম অসস্তি হতে লাগলো।বোকার মতো কিছুক্ষণ সামনে তাকিয়ে থেকে বাঁকা হেসে ফোন নিয়ে খ্যাচ খ্যাচ করে তাদের দুজনার কয়েকটা ছবি তুলে নিল তারপর ধীরে ধীরে প্রান্তর মাথা সোজা করে দিল কিন্তু কয়েকসেকেন্ডের মধ্যেই প্রান্ত ড্রাইভারের বাহুতে মাথা রাখলো।ড্রাইভার একটা ঝটকা দিয়ে প্রান্তর ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিল।প্রান্ত অপ্রস্তুত হয়ে একবার ড্রাইভারের দিকে আরেকবার ইচ্ছেমতির দিকে তাকিয়ে সরি বলল।ইচ্ছেমতি মুখ টিপে হাসলো।প্রান্ত বুকে হাত গুজে ইচ্ছেমতির দিকে তাকালো।ইচ্ছেমতি এতক্ষণ প্রান্তর ঘোরের মধ্যে ছিল জন্য নির্ভীক আর অন্তর ব্যাপারটা মাথা থেকে চলে গিয়েছিল।হঠাৎ করে আবার ওসব মনে হতেই নির্ভীককে ফোন দিল।
—
মাথাব্যথা আর হালকা জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল খেয়ে ঘর অন্ধকার করে সকাল থেকে ঘুমোচ্ছে নির্ভীক।টেবিলের উপর রাখা ফোনে বিরতিহীন কল আসছে কিন্তু ফোন মিউট করা আছে জন্য কোন শব্দ হচ্ছেনা।ফোনে ইচ্ছেমতির কল আসছে।প্রায় পনেরোটা কল আসার পর ফোনের আলো নিভে গেল কিন্তু তারপরই দরজাতে ঠক ঠক শব্দ হতে লাগলো।নির্ভীকের ঘুম ভেঙ্গে গেল।বিরক্ত হয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিল।অন্তকে দেখে অবাক হলেও স্বপ্ন ভেবে চোখ কচলাতে কচলাতে ঘুম ঘুম কন্ঠে বিরবির করে বলল,
‘মাথাটা পুরো নষ্ট করে দিবে এই পিচ্চিটা,স্বপ্নের মধ্যেও চলে এসেছে।এই রেড কালার ড্রেসে তোমাকে একটু বড়দের মতো লাগছে পিচ্চি।’
অন্ত ঢুলতে ঢুলতে দরজার পাশে দেয়ালে হেলান দিয়ে মেঝেতে বসলো।মাথা ঘুরছে।ডক্টর দুদিনের বেডরেস্ট দিয়েছে কিন্তু বাসা থেকে কাউকে কিছু না জানিয়ে নির্ভীকের কাছে চলে এসেছে।নির্ভীক চোখ কচলে অন্তকে নিচে বসতে দেখে নিজেও অন্তর সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো।অন্তর হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে উত্তেজিত হয়ে বলল,
‘এই এটা তো সত্যি তুমি।হোয়াট দ্যা…..এখানে এসেছো কেন?কার সাথে এসেছো?’
অন্ত চোখ বন্ধ করে একটা শুকনো ঢোক গিলে দূর্বল কন্ঠে বলল,
‘পানি দিন একটু।’
নির্ভীক অন্তকে কোলে নিয়ে ঘরে এসে বিছানায় বসিয়ে দিল।টেবিল থেকে গ্লাস নিয়ে ঢাকনা সরিয়ে অন্তর মুখে পানি ধরলো।অন্ত একঢোক পানি খেয়েই বিছানায় গা এলিয়ে দিল।চোখবন্ধ করে বিরবির করে বলল,
‘আপনি এমন করছেন কেন?’
নির্ভীক বিছানার পাশে দাঁড়িয়েই অন্তর দিকে ঝুকে অন্তর গালে হাত রেখে ভ্রু কুচকে বলল,
‘কেমন করছি?’
অন্ত নির্ভীকের হাতে হাত রেখে বলল,
‘আপনি কোথাও যাবেননা।যেখানে যাবেন আমাকেও সঙ্গে নিবেন।দূরে যাওয়ার কথা আর কখনও বলবেন না।’
নির্ভীক মুচকি হাসলো কিন্তু অন্ত এসব কথা কেন বলছে বুঝতে পারলো না।অন্তর পাশে বসে অন্তর হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে মিথ্যে রাগ দেখিয়ে বলল,
‘এসব ইউজলেস কথা বলতে এখানে এসেছো?নিজের দিকে দেখেছো একবারও?ইউ নিড ফুল বেডরেস্ট ইডিয়েট।’
অন্ত মুখ ফুলিয়ে নির্ভীকের দিকে তাকিলো।মনে মনে বলল এসব ইউজলেস কথা!এই খারাপ লোকের কাছে আসার আগে ভাবা উচিত ছিল লোকটা আমাকে একটুও ভালোবাসেননা।উনি তো প্রিয়তাকে ভালোবাসেন,আমার ফিলিংস তো উনি বুঝবেন না।শুধু শুধু এত কষ্ট করে ইনসাল্ট হতে এখানে আসলাম।যাইয়েন শুধু আমাদের বাসায় তারপর আমাকে এভাবে ইনসাল্ট করার জন্য আপনাকে মজা বুঝাবো।
অন্তকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নির্ভীক নরম কন্ঠে বলল,
‘কি দেখছো?কি খেয়েছো দুপুরে?দাঁড়াও আমি খাবার নিয়ে আসছি,খেয়ে ঘুমাবা।একদম উঠবানা কিন্তু।’
অন্ত উঠতে উঠতে মুখ ফুলিয়ে বলল,
‘লাগবেনা খাওয়া,আমাদের বাসায় খাবার আছে।’
অন্ত রাগ করেছে নির্ভীক বুঝতে পারছে কিন্তু অন্ত এখানে কেন এসেছে সেটা বুঝতে পারছেনা।এমনিতে তো সবসময় পালাই পালাই করে আজ এর হলো টাকি!নির্ভীক ভ্রু কুচকে বলল,
‘কেন এসেছো এখানে?’
নির্ভীকের এই কথাটাও অন্তর কাছে অপমান মনে হল।বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে মুখ ফুলিয়ে বলল,
‘এসেছি তো কি হয়েছে?এটা আপনার একার বাসা নয়।অ্যান্টি বলে এটা আমারও বাসা।যখন ইচ্ছে আসবো আপনার তাতে কি?’
নির্ভীক মুচকি হেসে বলল,
‘কি হয়েছে বল তো তোমার?ঝগড়া করছো কেন এভাবে?’
অন্ত উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটা দিল।নির্ভীক অন্তকে আটকে দিয়ে বলল,
‘দাঁড়াও কোথায় যাচ্ছ?’
‘ছাড়ুন বাসায় যাব।’
নির্ভীক অন্তকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে বলল,
‘ওয়েট আমি রেখে আসবো।’
বলেই নির্ভীক ওয়াশরুমে গেল।চোখেমুখে পানি দিয়ে টিশার্ট চেন্জ করে ঘরে এসে দেখে অন্ত নেই।দৌঁড়ে ঘর থেকে বের হয়ে এসে দেখে অন্ত সিঁড়ির রেলিং এ হেলান দিয়ে বসে আছে।খুব বেশি শরীর খারাপ করছে।চোখমুখ কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে।নিষেধ করার পরও একা চলে এসেছে জন্য নির্ভীক রাগী কন্ঠে বলল,
‘বসে আছো কেন,যাও।এনার্জি শেষ?’
অন্ত অসহায় মুখ করে নির্ভীকের দিকে তাকালো।সাথে সাথেই নির্ভীককে উল্টো করে টিশার্ট পরতে দেখে ফিক করে হেসে দিল।নির্ভীক নিজের দিকে তাকিয়ে মাথা চুলকে অন্তর পাশে বসে বলল,
‘তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে উল্টো করে পরে ফেলেছি।হয়তো বেশি দিন বাঁচবো না।ছেলেরা উল্টো করে ড্রেস পরলে নাকি মারা যায় হুমায়ূন আহমেদ স্যারের লিখা কোন উপন্যাসে পড়েছিলাম।’
অন্ত নির্ভীকের গলাটিপে ধরার জন্য হাত উঠিয়েও নামিয়ে নিল।মন খারাপ করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
‘ওহ।’
নির্ভীক মলিন মুখ করে বলল,
‘শুধু ওহ?’
অন্ত কিছু বলল না।বসে থাকতেও কষ্ট হচ্ছে।হাত-পা মৃদু কাঁপছে।নির্ভীক টিশার্টটা খুলতে খুলতে বলল,
‘আমি মারা গেলে তোমরা খুব খুশি হবা তাইনা?তুমি তো অনেক বেশি খুশি হবা।বিরক্ত করার মতো কেউ থাকবেনা।আরাফ ভাইয়ার সাথে সুখে সংসার করবা।আরাফ ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবা।আরাফ ভাইয়াও তোমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে কপালে চুমু দিবে।আহা!কত্ত ভালোবাসা!’
সকালে অন্তর ঘর থেকে চলে এসে নির্ভীক নিজের ল্যাপটপে অন্তর ঘরের ভিডিও ফ্রুটেজ আরাফ কি করছে সব দেখেছে।অন্তর উপর প্রচুর অভিমানও করেছে।কি দরকার ছিল আরাফকে জড়িয়ে ধরার?নির্ভীকের এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছে অন্ত আরাফকেই ভালোবাসে।অন্ত নির্ভীককে তো সেরকম ভাবে কখনও ভালোবাসি বলেনি।নির্ভীক টিশার্টটা ঠিক করে পরে অন্তর দিকে তাকিয়ে দেখে অন্ত কেঁদে বুক ভাসিয়ে দিয়েছে।সুস্থ থাকলে এতক্ষণ এখানে বসে থাকতোনা।এসব কথা শুনার পর অন্ত এভাবে বসে থাকতে পারতোনা।নির্ভীক মুখ মলিন করে বলল,
‘কাঁদছো কেন?’
অন্ত অন্যদিকে তাকালো।হেঁচকি তুলতে তুলতে উঠে দাঁড়াতেই সেন্সলেস হয়ে পরে গেল।
চলবে…………..