ভালোবাসি তাই পর্ব-১৭

0
2053

#ভালোবাসি তাই
part:17
Writer:Afifa Jannat Maysha

🍁

বাসে বসে আছি । আজকে ফিরে যাচ্ছি আমরা। সবাই এখনো উঠে নি বাসে। তাই বসে বসে অপেক্ষা করছি । আজ জানালার পাশেই বসেছি আমি। আমার পাশেই আছে সারা। কোনো কারণে আমার মন খারাপ সেটা হয়তো বুঝতে পেরেছে সে। তাই আজ আর জানালার পাশে বিসা নিয়ে ঝামেলা করে নি।

সবাই বাসে উঠে যাওয়ার পর বাস ছাড়লো ঢাকার উদ্দেশ্যে। সিটে মাথা হেলিয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছি আমি। বাতাসের ঝাপটায় চুলগুলো মুখের সামনে এসে পরছে বারবার। মুখে কেমন যেনো শুরশুরি লাগছে আমার। কিন্তু এভাবেই চুপ করে বসে আছি । যেনো অনুভতিহীন একটা মাটির পুতুল আমি।

কালকে আমাদের রুমে কে এসেছিলো তা আমি জানি না। কিন্তু কেনো যেনো খুব পরিচিত লেগেছে আমার কাছে। কোনো এক অজানা টানে কিছুই করতে পারিনি আমি। আগের দিন রাতে তো এমন অনুভূতি হয় নি। এখন আমি শিউর যে কাল রাতের ব্যাক্তি আর এর আগের রাতের ব্যাক্তি সম্পুর্ন আলাদা। তাদের উদ্দেশ্যও ছিলো আলাদা।

আজ আমরা জুনিয়ররা সবাই একসাথে। তাই সায়ন ভাইয়ারা অন্য বাসে আছেন। খুব মিস করছি উনাকে। মনে হচ্ছে আমার পাশের সিটটায় যদি সারার বদলে সায়ন ভাইয়া থাকতেন! কিন্তু এই ইচ্ছা তো কোনোদিনই পূরণ হবার নয়।

– কি নিয়ে মন খারাপ তোর?

সারার প্রশ্ন কানে এলেও তা এড়িয়ে গেলাম আমি। চুপ করেই বসে রইলাম।

– কিরে কথা বলবি না?

– প্লিজ সারা, এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না আমার।

– ওহ, আচ্ছা ঠিক আছে। তুই চুপ করে বসে থাক। আমি বরং ঘুমাই। এতোক্ষণ চুপ করে বসে থাকার চেয়ে ঘুমানোই ভালো।

– হুম।

আবারও আগের মতোই বসে রইলাম আমি। আজ বাসে সবাই নিরব। কোনো মিউজিক বাজছে না আর না কেউ গলা মেলাচ্ছে। তবে ভালোই লাগছে এভাবে। চোখ বন্ধ করতেই চোখে ভাসছে সায়ন ভাইয়ার চেহারা। সায়ন ভাইয়াকে কি আমি কোনোদিনই ভুলতে পারবো না? এই প্রশ্নের উত্তরটা জানা যে আমার খুব প্রয়োজন।

🍁

ভারসিটির মাঠে এসে থেমেছে আমাদের বাস। আজকেও প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আস্তে আস্তে নেমে গেলাম সবাই। খুব ঘুম পাচ্ছে এখন আমার। মাঠেই হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পরতে ইচ্ছে করছে। যেহেতু এই ইচ্ছাটাও পূরণ হবার নয় তাই চোখে-মুখে পানি দিয়ে ঘুম দূর করার চেষ্টা করলাম আমি।

একে একে সকলেই চলে যাচ্ছে যে যার বাসার উদ্দেশ্যে। আমি আর সারা একপাশে দাঁড়িয়ে আছি। সারা তার ভাইয়াকে ফোন করে বলে দিয়েছে যেনো তাকে এসে নিয়ে যায়। এই সন্ধ্যায় একা একা যাওয়াটা ঠিক হবে না। আমিও ফোন বের করলাম ভাইয়াকে ফোন করবো বলে। কিন্তু তার আগেই হুট করে কোথা থেকে রাহুল ভাইয়া এসে বললেন

– এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো তোমরা?

– ভাইয়া এসে নিয়ে যাবে তো তাই।

– ওহ, তুমি চাইলে আমি দিয়ে আসতে পারি।

– না ভাইয়া, লাগবে না।

আমি রাহুল ভাইয়াকে না করলেও উনি হয়তো জোর করে হলেও আমায় উনার সাথে নিয়ে যেতেন। কিন্তু তার সুযোগ না দিয়েই সায়ন ভাইয়া ঝড়ের গতিতে এসে আমার হাত টেনে ধরে রাহুল ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বললেন

– তোর কষ্ট করতে হবে না রে ভাই। যেহেতু ও আমার কাজিন তাই আমিই পৌছে দেবো ওকে।

– কিন্তু তোর বাসা তো ওদের বাসার উল্টো দিকে।

– সমস্যা নেই। আজকে আমি আর বাসায় যাবো না। মাইশাদের বাসায়ই থাকবো।

সায়ন ভাইয়ার কথার পরিপ্রেক্ষিতে রাহুল ভাইয়া ছোট করে “ওহ” বললেন শুধু।

সারা আর রাহুল ভাইয়াকে বিদায় জানিয়ে আমাকে নিয়ে ভারসিটি থেকে বেরিয়ে এলেন সায়ন ভাইয়া। রাস্তায় এসে একটা রিকশা দাঁড় করালেন উনি। আমি কিছুই বলছি না। নিরব দর্শকের মতো দেখে চলেছি মাত্র। ভাবতেই অবাক লাগছে সায়ন ভাইয়া আমার সাথে এক রিকশায় বসে যাবেন। আর এখনও পর্যন্ত আমার হাতটা উনার হাতেই আছে। আমার কাছে তো অনেক ভালো লাগছে। কিন্তু সায়ন ভাইয়ারও কি আমার মতো আলাদা ফিলিংস কাজ করছে নাকি সেটা জানি না।

রিকশায় উঠে বসেছি দুজন। দুজনের মাঝে যথাসম্ভব দুরত্ব বজায় রাখার চেষ্টায় আছি আমি। কিন্তু সায়ন ভাইয়া আজ তেমন কিছুই করছেন না। আগে তো আমার পাশে বসা দূর ভাবতেই পারতেন না উনি। আর আজ কত অবলীলায় বসে আছেন আমার পাশে। মনে হচ্ছে সবটাই আমার স্বপ্ন । আদৌ কি এটা সম্ভব?

🍁

সময় থেমে থাকে না। সে গতিশীল। দেখতে দেখতে কেটে গেছে তিনটা মাস। সায়ন ভাইয়ার ফাইনাল এক্সাম শেষ হয়ে গেছে। এখন উনি নিজেদের ব্যাবসায় হাত দিয়েছেন।

কথা ছিলো উনার এক্সাম শেষ হয়ে গেলেই এনগেজমেন্ট হবে। কথামতো তাই করা হবে। কালকেই ওদের এনগেজমেন্ট। সারা বাড়িতে সেটারই তোর জোর চলছে। সব আত্মীয় – স্বজনরা চলে এসেছেন বাসায়। সারা বাড়ি গমগম করছে। বাচ্চারা মাতিয়ে তুলেছে পুরো বাড়ি।

এনগেজমেন্ট হবে কাল কিন্তু বাড়ির ভেতরের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আজকেই এনগেজমেন্ট। শুনেছি বড় বোনের বিয়েতে ছোট বোন সবচেয়ে বেশি মজা করে। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে তা পুরো উল্টো। বুঝতে পারছি না আমি খুশি নাকি খুশি নই। আপুর বিয়ে সেই হিসেবে আমার খুশি হওয়ার কথা। আবার, সায়ন ভাইয়ার বিয়ে হিসেবে কষ্ট পাওয়ার কথা।

এইমুহূর্তে আমার মধ্যে ঠিক কোন অনুভূতি কাজ করছে তা বুঝতে পারছি না আমি। তবে আমি খুশিই হবো এই প্রতিজ্ঞা করেছি। শুধু শুধু কষ্ট পাওয়ার কোনো মানেই হয় না। কার জন্য কষ্ট পাবো? যার কাছে কিনা আমার কোনো মূল্যই নেই।

চলবে…….

[ গল্পটা আর বেশি বড় করবো না। আর কয়েকটা পার্ট দিয়েই শেষ করে দিবো। আর আসল হিরো কে সেই কনফিউশানও খুব তারাতাড়ি দূর হয়ে যাবে। ততদিন পর্যন্ত একটু ধ্যৈর্য ধরুন। ধন্যবাদ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here