ভালোবাসি তাই পর্ব-২৮

0
2688

#ভালোবাসি তাই
part:28
Writer:Afifa Jannat Maysha

🍁

নিজের ঘরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমি। খুব ভালো করে পর্যবেক্ষন করছি নিজেকে। একমাস আগেও আমি ছিলাম বাকি সবার মতো স্বাভাবিক। আর আজ নিজেকে নিজেই চিনতে পারছি না। আয়নায় নিজেকে দেখলে মনে হয় সেও আমায় ব্যাঙ্গ করে বলছে “কি দেখতে এসেছো এখানে? নিজের বিকৃত হয়ে যাওয়া বিভৎস চেহারাটা দেখতে? ”

প্রায় একসপ্তাহ ধরে বাসায় এসেছি। বাসায় আসার পর থেকেই নিজেকে একমতন ঘরবন্দী করে রেখেছি আমি। আগের মতো সবার মাঝে থাকতে ভালো লাগে না আর। বেশি মানুষ সহ্য হয় না। সবার মাঝে নিজেকে খুব নিকৃষ্ট মনে হয় আমার। একা থাকতে ভালো না লাগলেও অন্যরকম প্রশান্তি খুজে পাই আমি।

পুরো ঘরে একবার ভালো করে তাকালাম। ঘরের সব জিনিসগুলো ঠিক আগের মতোই আছে। শুধু জিনিসগুলোর মালিকের জীবনটাই পাল্টে গেছে। আজকাল সারার সাথেও খুব একটা কথা বলি না আমি। সে রোজই আসে আমার কাছে। কিন্তু আমি কোনো না কোনো বাহানা দিয়ে এড়িয়ে চলি তাকে। কেনো জানিনা যেই আমার সাথে কথা বলতে আসে তাকে দেখেই মনে হয় দয়া দেখাতে এসেছে। কারো দয়া যে আমি চাইনা। এখন বোধহয় আমার নিজের বলতে কেউ নেই। আমি একা সম্পূর্ন একা। এসব ভাবতেই বুক চিরে বেরিয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস।

আমার প্রিয় দুটো জায়গা ছাদ আর বেলকনিতেও যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি এখন। এই একমাসে অন্যকিছু না পাল্টালেও আমার জীবনটা পুরোপুরি পাল্টে গেছে। সেই হাঁসিখুশি প্রাণবন্ত আমিটা এখন হয়ে গেছি নিঃপ্রাণ কাঠের পুতুল।

আয়নার সামনে থেকে সরে এসে জানালার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম । একচোখে সব দেখতে পাওয়া যায় ঠিকই কিন্তু সে দেখায় শান্তি পাওয়া যায় না। ভাবছি যারা দুচোখেই দেখতে পায় না তাদের কতটা কষ্ট হয়। খট করে দরজা খুলার আওয়াজে সেদিকে তাকালাম আমি। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন সায়ন ভাইয়া। ক্লান্ত তার চাহনি। উনার দিক থেকে চোখ সরিয়ে আবারো জানালার বাইরে তাকিয়ে রইলাম। কেনো যেনো উনার সাথে কথা বলার কোনো আগ্রহ খোজে পাচ্ছি না নিজের মাঝে।

– দোষটা কি আমাদের? বলবিতো সেটা?

আমি বাইরে তাকিয়েই উত্তর দিলাম

– কারো কোনো দোষ নেই।

– তাহলে কথা বলিস না কেনো আমাদের সাথে? সারাদিন একা একা থাকিস কেনো?

– কথা বলতে ভালো লাগে না তাই বলি না। আর একা থাকতে ভালো লাগে তাই থাকি।

– হেয়ালি বন্ধ কর।আর আমার দিকে তাঁকা। একটা জরুরি কথা বলতে এসেছি।

সায়ন ভাইয়ার দিকে ঘুরে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম

– বলুন কি বলবেন।

উনি চট করে বলে ফেললেন

– আমি যত তারাতাড়ি সম্ভব তোকে বিয়ে করতে চাই।

সায়ন ভাইয়ার কথা কানে আসতেই স্তব্ধ হয়ে গেলাম আমি। শরীরের পশমগুলোও দাঁড়িয়ে গেছে। সায়ন ভাইয়া আমায় বিয়ের কথা বলছেন? ভাবতে পারছি না আমি। একরাশ ভালোলাগা ছেয়ে গেলো মনে। কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়লো আমার এখনকার অবস্থার কথা। আমি সায়ন ভাইয়ার দিকে চোখ তুলে তাকালাম। উনি আগ্রহী দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছেন আমার দিকে। আমি বলে উঠলাম

– কিন্তু আমি তো করতে চাই না?

– মানে কি?

– মানে আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই না।

আমার কথায় চুপ করে গেলেন সায়ন ভাইয়া। আশেপাশে চোখ ঘুরিয়ে নিয়ে আবারো বললেন

– তুই আমায় ভালোবাসিস। তাহলে বিয়ে করতে সমস্যা কোথায় ?

– বাস্তবতা মানে বোঝেন তো? আমায় বিয়ে করে নিজের জীবন কেনো নষ্ট করবেন আপনি?

– তোকে বিয়ে করলে আমার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে?

– হবে না?

– আমি কিছু জানি না। আমি তোকে বিয়ে করবো। এটাই শেষ কথা।

– আপনি যা বলবেন সেটাই আমায় মেনে নিতে হবে?

– তুই এভাবে বলছিস কেনো? আমায় আর ভালোবাসিস না?

– হুম বাসিতো। আর ভালোবাসি বলেই তো আপনার জীবনটা নষ্ট করতে চাই না। আপনি আপুর সাথেই ভালো থাকবেন আশা করি।

আমার কথায় রেগে গেলেন সায়ন ভাইয়া। চেচিয়ে বলে উঠলেন

– আমি তোকে ভালোবাসি আর তোকেই বিয়ে করবো। দেখি তুই কিভাবে আমায় দূরে সরিয়ে রাখিস?

রাগ নিয়েই দরজাটায় জোরে একটা লাথি দিয়ে চলে গেলেন উনি। আমি চুও করেই বসে পড়লাম বিছানায়। আজ সারার বলা কথাটা কানে বেজে চলেছে বারবার। সে বলেছিলো সায়ন ভাইয়াও একদিন আমার ভালোবাসা বুঝবে কিন্তু সেদিন খুব বেশি দেরি না হয়ে যায়। আজ মনে হচ্ছে তার কথাটাই সত্যি হয়ে গেছে। কিন্তু আমিও তো আমার কথা রাখতে পারলাম না। আমিও তো বলেছিলাম আমার শেষ নিঃশ্বাসের আগেও যদি সায়ন ভাইয়া আমায় ভালোবাসার কথা বলে আমি ফিরিয়ে দেবো না উনাকে। কিন্তু আজ আমিতো বেঁচে আছি তবুও সায়ন ভাইয়াকে আগ্রহ করতে পারলাম। ফিরিয়ে দিলাম উনাকে। হ্যাঁ, যাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি তাকে আজ আমি নিজেই ফিরিয়ে দিয়েছি। এরকম ভাগ্য সবার হয় নাকি?

🍁

বিকাল ৫ টা। আপুর ঘরে আছি আমি। আমি আসতে চাই নি এখানে। আপু জোরকরে নিয়ে এসেছে আমায়। সেও নাকি কিসের জরুরি কথা বলতে চায় আমার সাথে। নিজেকে আজ প্রধানমন্ত্রী মনে হচ্ছে আমার। সবাই তাদের জরুরি কথা নিয়ে হাজির হচ্ছে আমার কাছে।

– এই নে কফি।

– আমার লাগবে না আপু।

– না লাগলেও নিতে হবে। কফি খাবো আর কথা বলবো।

আপুর সাথে তর্কে যেতে ইচ্ছে করছে না মোটেও৷ তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও কফিটা হাতে নিলাম আমি। আপুও কফি হাতে বসে পড়লো আমার পাশে। কফিতে এক চুমুক দিয়েই বলে উঠলো সে

– কি হয়েছে তোর?

– কি হবে?

– সায়ন ভাইয়াকে কি বলেছিস?

– জানি না।

– আচ্ছা আমিই বলে দিচ্ছি। তুই সায়ন ভাইয়াকে বলেছিস উনি আমার সাথে ভালো থাকবে তোর সাথে নয়।

– হুম ঠিকই তো বলেছি।

– যাকে ভালোবাসে না তার সাথে সুখী থাকবে কি করে?

– পারবে। একটু সময় গেলেই পারবে। এই ধরো এখন যদি আমার সাথে এমন কিছু না ঘটতো। তাহলে তোমার আর উনার বিয়েটাতো হয়েই যেতো। তখন তো তোমায় নিয়েই ভালো থাকতে হতো। তাইনা?

আমার কথায় চুপ করে গেলো আপু। বড় একটা শ্বাস নিয়ে বলে উঠলো

– “যদি “। সেটা তো এই যদিতেই আটকে আছে মাইশা। সেটা যখন হয়নি তখন তা নিয়ে বসে না থাকাটাই ভালো।

– হুম সেটা নিয়ে বসে থাকলাম না। কিন্তু সায়ন ভাইয়াকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয় আপু। তোমার কাছে একটা রিকুয়েস্ট করবো। রাখবে তো?

– কি?

– প্লিজ তুমি সায়ন ভাইয়াকে বিয়ে করে নাও।

– পাগল হয়ে গেছিস তুই? ভাবতে পারছিস কি বলছিস?

– হুম ঠিকই বলছি।

– তুই তোর জেদ নিয়েই বসে থাক আমি সায়ন ভাইয়াকে কোনোদিনও বিয়ে করবো না।

– তাহলেও সমস্যা নেই। সায়ন ভাইয়ার জন্য মেয়ের অভাব পড়বে না।

– এতো জেদ ভালো না মাইশা।

– প্রিয় মানুষটার ভালোর জন্য যদি জেদ ধরতে হয় তাহলে জেদই ভালো।

আমার কাটকাট কথায় আপু নিরাস হয়ে বসে রইলো। আমিও নিজের ঘরে আসার জন্য উঠে দাঁড়াতেই ঘরে ঢুকলো ভাইয়া। ভাইয়ার চোখমুখে রাগ স্পষ্ট। সে কর্কশ গলায় আমায় আর আপুকে উদ্দেশ্য করে বললো

– নিচে চল।

আমি উত্তর দিলাম

– তোরা যা। আমি নিজের ঘরে যাচ্ছি। ভালো লাগছে না আমার।

– তোকেই তো যেতে হবে। তুইই আসল। তারাতাড়ি চল।

না চাইতেও ভাইয়া আর আপুর সাথে নিচে আসতে হলো আমায়। কিন্তু নিচে আসতেই অবাক হয়ে গেলাম আমি। মুখ থেকে কোনো কথা বের হচ্ছে না।

আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন রাহুল ভাইয়া। পাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম পুলিশের হাতেই ধরা পরেছেন উনি। তবে আজ কালো ভুরিওয়ালা অফিসারের জায়গায় রয়েছে সুদর্শন এক যুবক। সোফায় চোখ-মুখ শক্ত করে বসে আছেন সায়ন ভাইয়া। আমি অস্ফুট স্বরে বলে উঠলাম

– কেমন আছেন ভাইয়া ?

এতক্ষন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলেও আমার কথায় আমার দিকে তাকালেন রাহুল ভাইয়া। আমায় দেখেই যেনো চমকে উঠলেন উনি। চোখজোড়ায় টইটম্বুর করছে নোনাজল। উনার এক্সপ্রেশনে আমিও অবাক হয়ে গেলাম। রাহুল ভাইয়াকে দেখে মনে হচ্ছে আমায় দেখে কষ্ট হচ্ছে উনার। অথচ উনি নিজেই তো আমার এই অবস্থার জন্য দ্বায়ী। তাহলে কষ্ট পাওয়ার কারণটা কি?

চলবে……

[জানি পার্ট ছোট হয়েছে। কাল গল্প দিতে পারিনি এমবিজনিত সমস্যায়। আর আজ একটু আগে এমবি কিনেছি। তাই বেশি বড় করতে পারিনি।আজও গল্প দিতাম না। কিন্তু অনেকেই রিকোয়েস্ট করেছেন যেনো ছোট করে হলেও একটা পার্ট দিই। তাই দিলাম। ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here