ভালোবাসি তাই শেষ পর্ব

0
1969

#ভালোবাসি তাই
#Last part
Writer:Afifa Jannat Maysha

🍁

সামনের একটা বিল্ডিংয়ের দরজার উপরে একটা সাইনবোর্ডে বড় বড় করে লিখা ” কাজী অফিস”। এটা দেখেই গলা শুকিয়ে আসছে আমার। সায়ন ভাইয়ার স্পেশাল প্লেস যে এটাই সেটা এতক্ষনে বুঝে গেছি আমি। আমি আড়চোখে উনার দিকে তাকাতেই উনি বত্রিশ পাটি বের করে হাঁসি দিলেন। এখন নিজের উপরেই প্রচুর রাগ হচ্ছে। আমি কেনো আসতে গেলাম সায়ন ভাইয়ার সাথে? আমি কি পারতাম না উনাকে এক লাথি মেরে তবধা বানিয়ে দিতে?তাহলেই তো লেটা চুকে যেতো। এই “কাজী অফিস” নামক উল্টাপাল্টা জায়গায় আসতে হতো না। সায়ন ভাইয়া বিটকেল এক হাঁসি দিয়ে বললেন

– কিগো? অতিরিক্ত খুশিতে স্টেচু হয়ে গেলে নাকি? সামনে চলো।

– এখানে কেনো এলাম আমরা?

– বললাম না তোর “ভাইয়া” রোগ সারিয়ে তুলতে। মানে আর যেনো ভাইয়া না ডাকতে পারিস সেজন্য। আমরা এখানে বিয়ে করতে এসেছি।

– আজব! আমি বললাম না বিয়ে করবো না। আপনি এমন করছেন কেনো? এটাও একধরনের ছেচড়ামি ভাইয়া। আর আপনি নিশ্চই কোনো ছেচড়া নন? ছেচড়া তো আমি। আমার গুণটা নিজের মধ্যে ধারণ করাটা কি উচিৎ হচ্ছে আপনার?

আমার কথায় সায়ন ভাইয়ার হাঁসি উবে গেলো। উনি অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে বললেন

– বলতে থাক। আমি কিছু মনে করবো না। যা করেছি তার ফল তো ভোগ করতেই হবে। আমি সবকিছু সহ্য করতে পারবো। কিন্তু কোনোকিছুর বিনিময়েই তোকে হারাতে চাই না।

– বাহ আজ বলছেন আমায় হারাতে চাননা। কিন্তু কয়েকমাস আগেও আমি আপনার পিছু পিছু ঘুরতাম আর আপনি আমায় চাইতেন না। আচ্ছা বলুনতো আপুকে বিয়ে করার জন্য এতোটা ডেস্পারেট হয়ে গেছিলেন কেনো? তখন আমার কথা মনে পড়েনি? ওহ তখন তো আপনি আমায় ভালোই বাসতেন না। আচ্ছা হঠাৎ করেই কিভাবে আমায় ভালোবেসে ফেললেন আপনি?

সায়ন ভাইয়া হালকা হেঁসে বললেন

– আবির ভাইয়ার কথা শুনলি না? মায়ের ইচ্ছা। আমার ক্ষেত্রেও তাই। অবশ্য আমার মা আমার ইচ্ছেটাকেই প্রায়োরিটি দিতো। কিন্তু তখন তো আমি আমার অনুভূতির নামটাই জানতাম না। নিজের ইগো নিয়েই বসে ছিলাম। কিন্তু কাউকে হারিয়েই আমরা তার মুল্য বুঝতে পারি। আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তোকে যখন হারাতে বসেছিলাম তখনই তোর প্রতি নিজের অনুভূতির নামটা জানতে পেরেছিলাম। বুঝতে পেরেছিলাম আমি ভালোবাসি তোকে। হারাতে হারাতে যখন পেয়ে গেছি তখন আর ছাড়ছি না। এবার আর কোনো কথা না বলে সোজা সামনে চল।

– আমি এই বিয়ে করবো না।

– তুই নিজেও জানিস আমি যা বলি তাই করি। এটাই নিশ্চই জানিস যে আমি লোকজন দেখে রিয়েক্ট করি না। মাঝরাস্তায় কোনো সিনক্রিয়েট হোক সেটা আপাতত চাইছি না আমি।

সায়ন ভাইয়ার কথায় ভড়কে গেলাম আমি। উনার এই গুণ সমন্ধে আমার থেকে বেশি কেউ জানে না। ইজ্জতের ফালুদা বানাতে না চাইলে উনার কথামতো চলাই শ্রেয়। উনার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বড় বড় পা ফেলে হাঁটতে লাগলাম সামনের দিকে। সায়ন ভাইয়াও আমার পিছু পিছু চললেন আর গান গাইতে থাকলেন

– যতই করো বাহানা, যতই করো না না না। বিয়ের ফুল ফুটলে বাজবে বিয়ের বাজনা।

রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে আমার। কিন্তু মান-সম্মানের স্বার্থে চুপ করে সব সহ্য করে চলেছি আমি।

🍁

সামনে কিসব কাগজপত্র নিয়ে একটা চেয়ারে বসে আছি আমি আর সায়ন ভাইয়া। আমাদের সামনের চেয়ারেই বসে আছেন তথাকথিত কাজী সাহেব। পান খেয়ে খেয়ে দাঁত লাল করে ফেলেছেন তিনি। লাল হয়ে যাওয়া দাঁত নিয়েই ইয়া বড় বড় হাঁসি দিচ্ছেন কাজী সাহেব আর আমরাও তার হাঁসির উত্তরস্বরূপ জোরপূর্বক হাঁসি দিচ্ছি। তাতে উনি উৎসাহিত হয়ে আবারো হাঁসছেন। এই হাঁসাহাঁসির প্রতিযোগিতা শেষ করে সামনে থাকা কাগজে সিগনেচার করতে বলা হলো আমায়। আমি অসহায়ভাবে তাকালাম সায়ন ভাইয়ার মুখের দিকে। উনি চোখের ইশারায় সিগনেচার করতে বললেন। আমি একটা ঢুক গিলে কাঁপা হাতেই সাইন করে দিলাম। আমার পরেই সায়ন ভাইয়া বুলেট ট্রেনের গতিতে সাইন করে দিলেন। সাথে সাথেই বলে উঠলেন কাজী সাহেব

– আলহামদুলিল্লাহ। তোমরা সুখী হও।

তারপর আবারো সেই হাঁসি। এইমুহুর্তে উনার মাথায় গাট্টা মেরে বলতে ইচ্ছে করছে “চাচা আপনার হাঁসিটা বন্ধ করলেই আপাতত সুখী থাকবো আমরা”। কিন্তু আফসোস সেটা বলা গেলো না।

আমাদের বিখ্যাত কাজী সাহেবকে বিদায় জানিয়েই চলে এলাম বাসার উদ্দেশ্যে। গাড়িতে বসার পরই একটা বড় শ্বাস ছাড়লেন সায়ন ভাইয়া। আমি বিরক্তিমাখা চাহনিতে তাকলাম উনার দিকে। উনি উনার সেই পাগল করা হাঁসি দিয়ে বললেন

– অবশেষে আমার স্বপ্ন পূরণ হলো। আর ওই কাজির ভয়ংকর হাঁসির থেকেও রেহাই পেলাম। উফ কি ভয়ানক হাঁসি। সারার বরের হাঁসিও এমন ভয়ানক হবে ইনশাআল্লাহ।

সায়ন ভাইয়ার কথা শুনে হেঁসে উঠলাম আমি। শেষে কিনা এই কাজীর মতো বর জুটবে সারার কপালে। ইহা হাইস্যকর।

– যাক বাবা হাঁসলি তাহলে। একজনকে হাঁসাতে গিয়ে আরেকজনের হাঁসির বর্ণণা দিতে হলো আমায়।

– তো কে বলেছে আমায় হাঁসাতে? নিজেকে জোকার প্রমাণ করার কোনো মানে হয় না।

– আমার বউকে আমি হাঁসিয়েছি তাতে তোর কি?

সায়ন ভাইয়াকে কিছু বলাই ভুল। তাই চুপ করে বাইরে তাকিয়ে রইলাম আমি। উনি মনের আনন্দে সিটি মারছেন।

গাড়িতে কখন ঘুমিয়ে গেছি সেটা বুঝতে পারিনি। আমার ঘুম ভাঙলো সায়ন ভাইয়ার ডাকে। আড়মোড়া ভেঙে আশেপাশে তাকাতেই অবাক হলাম। সায়ন ভাইয়া আমায় বাসায় না নিয়ে গিয়ে উনাদের বাসায় নিয়ে এসেছেন। আমি চোখমুখ কুঁচকে বলে উঠলাম

– আমায় এখানে নিয়ে এলেন কেনো?

– তো কোথায় নিয়ে যাবো?

– আমাদের বাসায়।

– এটাই তো আমাদের বাসা।

– আরে ভাই আমার বাবার বাসায়।

– আবার ভাই? উফ। আচ্ছা ঠিক হয়ে যাবে আস্তে আস্তে। আর বিয়ের পর কেউ বাবার বাড়িতে থাকে? তারা তো শশুরবাড়িতে থাকে।

আমি আর কিছু না বলে চলে গাড়ি থেকে নেমে এলাম। উনার সাথে কথা বলা মানেই টাইম ওয়েস্ট। যেটা আপাতত করতে চাই না আমি।

বাড়ির সামনে এসে কলিংবেল বাজাতেই দরজা খুলে দিলেন খালামনি। আমায় দেখেই খুশি হয়ে এগিয়ে এলেন তিনি। এসব যে সবার জানা সেটা বুঝা হয়ে গেছে আমার। তাই আর কিছু বললাম না। ড্র‍য়িংরুমে আসতেই চোখে পড়লো সাদাব ভাইয়া আর ফাহাদ ভাইয়াকে। সাদাব ভাইয়া বলে উঠলেন

– কি ভাবি কি খবর।

– কাকে বলছেন ভাইয়া?

– তোমাকেই তো বলছি ভাবি।

– আমি ভাবি হলাম কবে থেকে?

– একঘন্টা চব্বিশ মিনিট আগেই তুমি আমাদের ভাবি হয়ে গেছো।

সাদাব ভাইয়াদের ফাজলামো ভালো লাগছে না আমার। কেমন চাপা রাগ কাজ করছে সায়ন ভাইয়ার প্রতি। খালামনি আমায় ফ্রেশ হতে বলে চলে গেলেন খাবার বানাতে। আমি বরাবর যেই ঘরে থাকি সেই ঘরে গিয়েই ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসতেই ফোন বেজে উঠলো আমার। ফোন হাতে নিতেই বুঝলাম এটা সারার কল। রিসিভ করতেই সে উচ্ছসিত হয়ে বললো

– কেমন লাগছে শশুড়বাড়িতে?

– মানে কি? তারমানে তুইও কি সব জানতি?

– আমার জানুর বিয়ে আর আমি জানবো না? তা কি করে হয়।

– ফাজিল মেয়ে। জানতি যখন তখন বললি না কেনো? তাহলে তো এভাবে ফেঁসে যেতে হতো না আমায়।

– আল্লাহ তোর মনে হচ্ছে তুই ফেঁসে গেছিস? আরে ইয়ার আমি তো এভাবেই ফেঁসে যেতে চাই। কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় আমার তো আর তোর মতো একটা সায়ন ভাইয়া নেই।

– আজাইরা কথা বাদ দিয়ে অন্য কথা বল। নয়তো ফোন রাখ।

– হ্যাঁ এখন তো আজাইরা কথাই। বরকে পেয়ে বেস্টুকে তো আজাইরাই মনে হবে। থাকো তুমি। থাকো তোমার সায়নকে নিয়ে। ভুলে যাও তোমার জীবনে সারা নামক কোনো মেয়ে ছিলো।

– এটা যেনো কোন মুভির ডায়লোগ?

– একবার সামনে পাই। পরে জানতে পারবি কোন মুভির ডায়লোগ। শয়তান মেয়ে তো……….

পুরো কথা শেষ না করতে দিয়েই টস করে ফোন কেটে দিলাম আমি। এখন তার গালির ভান্ডার নিয়ে বসবে সে। যেগুলো সব শুনতে শুনতে আমার মুখস্ত হয়ে গেছে। তাই আর শোনার ইচ্ছে নেই।

——————-

রাতের খাবার খাওয়ার জন্য আমায় নিচে নিয়ে এলেন খালামনি। খালামনির শশুড়বাড়ির কিছু লোকজন এসেছেন বাড়িতে। যাদের বেশিরভাগকেই চিনি না আমি। ডাইনিং টেবিলে সায়ন ভাইয়ার পাশে বসানো হলো আমায়।

সবাই খাওয়া শুরু করলেও আমি খাবার নাড়াচাড়া করছি শুধু। এতোগুলো অপরিচিত মানুষের মাঝে বসে খেতে পারছি না। তবুও একটু একটু করে খাওয়া শুরু করলাম। কিন্তু সায়ন ভাইয়ার ভাইয়ার চাচীর কথায় খাওয়ার ইচ্ছেটাই মরে গেলো আমার। উনি হেঁসে হেঁসে বলে উঠলেন

– তোমার কপাল তো খুব ভালো মাইশা। আমাদের সায়ন না থাকলেতো সারাজীবন বাবার ঘরেই বসে থাকতে হতো তোমায়। সত্যিই বাবা সায়ন তুমি অনেক মহৎ।

উনার কথায় পুরো পরিবেশটাই পাল্টে গেলো মুহুর্তেই। আমি মাথা নিচু করে বসে আছি। সত্যিই তো সায়ন ভাইয়া অনেক মহৎ। আমার মতো মেয়েকে বিয়ে করে উনি উনার উদারতার পরিচয় দিলেন। কিন্তু আমি তো উনার দয়া চাইনি। সবই বোধহয় কপালের দোষ।

সবাই চুপ করে থাকলেও সায়ন ভাইয়া খেয়েই চলেছেন। যেনো কিছুই হচ্ছেনা এখনো। উনি উনার খাওয়া শেষ করে হাত মুছে নিয়ে আরাম করে চেয়ারে বসলেন। তারপর চাচীকে উদ্দেশ্য করে বললেন

– উফ চাচী শুধু কি আমিই মহৎ? আমার পরিবারের সবাই তো মহৎ। এই যেমন ধরো চাচা। চাচা মহৎ বলেই তো তুমি কোনোদিন মা হতে পারবেনা জেনেও তোমায় বিয়ে করেছে। তাই না?

সায়ন ভাইয়ার কথায় চুপসে গেলো চাচীর মুখ। পরিস্থিতির চাপে পরে আর কোনো কথা বলছেন না উনি। সায়ন ভাইয়া আবারও বললেন

– সরি চাচী। আমি তোমায় কষ্ট দিতে এই কথা বলিনি। কিন্তু কি করবো বলো? তোমার কথার উত্তরে যে আমায় এটা বলতেই হলো। মনে রাখবে, পৃথিবীর কেউই সবদিক দিয়ে পারফেক্ট হয়না৷ সবারই কোনো না কোনো দুর্বলতা থাকে। তাই অন্যের দুর্বলতা নিয়ে তাকে আঘাত করার আগে আমাদের উচিৎ নিজের দুর্বলতাটা খেয়াল করা। তাহলেই আর অন্যকে কষ্ট দিয়ে কথা বলতে বিবেকে বাধবে। আর চাচা সব জেনেও তোমায় বিয়ে করেছে কেনো? কারণ চাচা তোমায় ভালোবাসতো। আমার ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই। আমিও মাইশাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি। দয়া করে নয়।

এটুকু বলেই উঠে দাঁড়ালেন সায়ন ভাইয়া। সিড়ি বেয়ে উঠে যেতে যেতে বললেন

– তোর খাওয়া শেষ হলেই ঘরে চলে আসবি মিষ্টি। আমি গেলাম।

আমিও কোনোমতে খেয়ে চলে এলাম সায়ন ভাইয়ার ঘরে। ঘরে ঢুকতেই সায়ন ভাইয়া এগিয়ে এসে বললেন

– এতো লেইট? আমি কখন থেকে ওয়েট করছি।

– কেউ অপেক্ষা করতে বলেছিলো আপনাকে?

– আমার বউয়ের জন্য আমি অপেক্ষা করবো সেটা কাউকে বলে দিতে হবে নাকি।

– আশ্চর্য! সবসময় বউ বউ করছেন কেনো? বিয়ে করে কি মাথা কিনে নিয়েছেন? অবশ্য সেরকমই তো। আপনি আমায় বিয়ে না করলে তো কপাল পুড়তো আমার।

– তুই কি চাচীর কথায় কষ্ট পেয়েছিস? আচ্ছা সরি। চাচীর হয়ে আমি ক্ষমা চাইছি।

– আরে আপনি ক্ষমা চাইছেন কেনো? উনি তো ঠিকই বলেছেন৷ তাছাড়া সত্যিটা তো এটাই যে আপনি দয়া করে বিয়ে করেছেন আমায়।

আমার কথা শেষ হতেই গালে জোড়ে একটা চড় পরলো। গালে হাত দিয়ে সায়ন ভাইয়ার দিকে তাকাতেই আতকে উঠলাম আমি। রক্তচক্ষু নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে সোজা বেলকনিতে চলে গেলেন উনি। আমি এখনো ওখানেই দাঁড়িয়ে আছি।

প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছেন সায়ন ভাইয়া। ভয়ে উনার কাছে যেতে পারছি না। আবার এভাবে চুপ করে থাকতেও পারছি না। সাহস জুগিয়ে বেলকনিতে গিয়ে সায়ন ভাইয়ার কাঁধে হাত রাখতেই আমার পায়ের কাছে হাটু মুড়ে বসে পড়লেন উনি। আমি অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। উনি আমার হাত ধরে নিয়ে বলতে লাগলেন

– কেনো এতো কষ্ট দিস আমায়? জানিস না তোর অবহেলা সহ্য করতে পারিনা আমি? আজ বুঝতে পারছি কতটা কষ্ট দিয়েছি আমি তোকে। আমি তো মাত্র এক মাসেই হাঁপিয়ে গেছি আর তুই চারবছর ধরে এই কষ্ট সহ্য করেছিস। সত্যিই আমি খুব খারাপ। কিন্তু বিশ্বাস কর আমি তোকে দয়া করিনি। আই রিয়েলি লাভ ইউ। আমি যা করেছি তার শাস্তি তো আমায় পেতেই হবে। তাই আরো কষ্ট পেতেও রাজি আছি আমি। শুধু একটা কথা আমায় ছেড়ে যাসনা কখনো। প্লিজ। তাহলে হয়তো মরে যাবো আমি। আর বাঁচতে পারবো না।

আর কোনো কথা না বলে পাশে তাকিয়ে রইলেন সায়ন ভাইয়া। তবে উনার চোখ বেয়ে যে কান্নারা ঝরে চলেছে অঝোর ধারায় সেটা চোখে পড়তে দেরি হলো না আমার। আমি ভাবতে পারছি না সায়ন ভাইয়া কাঁদছেন? তাও আবার আমার জন্য? কিন্তু উনি কি বুঝতে পারছেন না উনার চোখের পানি আমার হৃদয়ে আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছে। আমিও হাঁটু মুড়ে বসে পড়লাম সায়ন ভাইয়ার সামনাসামনি। উনি আমার দিকে তাকাতেই উনার চোখ মুছে দিয়ে বললাম

– কাঁদছেন কেনো আপনি? জানেন না আমার কষ্ট হয়? সহ্য হয়না আপনার কান্না।

– কেনো?

– ভালোবাসি তাই।

আমার উত্তর পেয়েই আমায় জাপটে ধরলেন সায়ন ভাইয়া। এতো শক্ত করে ধরায় দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমার। তবুও কিছু বলছিনা আমি। এভাবেই ভালো লাগছে। উনি আমার ঘাড়েই নিজের চোখ মুছে নিলেন। এমন করায় শুরশুরি লাগলো আমার। আর আমিও হেঁসে উঠলাম জোরে জোরে। সায়ন ভাইয়া আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থেকেই বলে উঠলেন

– হাঁসার কারণ?

– শুরশুরি লাগলো যে।

– আল্লাহ কি আজব তুই।

– হ্যাঁ আজব। তাতে আপনার কি?

উনি আমার নাক টেনে বললেন

– আমারই তো সব বউ।

আমি মুখ ফুলিয়ে বাইরে তাকালাম। সায়ন ভাইয়া বললেন

– ছাদে যাবি মিষ্টি? তোর তো রাতের বেলা ছাদে যাওয়া অনেক পছন্দের। দেখ, আজ আকাশে কত বড় চাঁদ। এই জোৎস্নার আলোতে আমি আমার জীবনের সবথেকে খুশির দিনটা কাটাতে চাই। কি যাবি?

– হুম যাবো। চলুন।

সায়ন ভাইয়ার হাত ধরে হাঁটতে লাগলাম ছাদের দিকে। আজ যে আমারো খুব খুশির দিন। অপুর্ণতার মাঝেও ভালোবাসায় পরিপূর্ণ আমি। নিজেকে অনেক সুখী মনে হচ্ছে আজ। নিজের হাতের মুঠোয় রাখা হাতটা যে আমারই প্রিয় মানুষটার।

——————-

তাড়াহুড়ো করে তৈরী হচ্ছি আমি। আর মাত্র দশ মিনিট পরেই বেরোতে হবে আমাদের। তাই ঝড়ের গতিতে সবকিছু করছি আমি।

আজ আপুর ছেলে মেহরাবের চতুর্থ জন্মবার্ষিকী। তাই এতোকিছু। সায়ন ভাইয়ার কঠিন আদেশ সুন্দর করে সাজতে হবে আমায়। বুঝতে পারছি না এই চেহারায় সেজে করবোটা কি। সেই তো আঁচল দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে অর্ধেক মুখ। কিন্তু কি আর করার উনার আদেশ বলে কথা। তার উপর আবার আমার তিন বছরের মেয়েটাও চায় আমি সাজি। তার মেহরাব ভাইয়ার জন্মদিনের পার্টিতে তার মা সাজবে না এটা কি করে হয়।

আমার বিয়ের একমাস পরই আপুর বিয়ে হয়েছে৷ আবির ভাইয়াকেই জীবনসাথী হিসেবে পেয়েছে সে। তবে এজন্য কম কষ্ট করতে হয়নি আপুকে। আবির ভাইয়াও আপুকে উপেক্ষা করতে না পেরে গ্রহণ করে নিয়েছেন।

– তোর হয়নি এখনো?

– এই তো শেষ।

সায়ন ভাইয়া আমার কাছে এগিয়ে এসে বললেন

– বাহ খুব সুন্দর লাগছে তো আমার বউকে।

আমি মুচকি হেঁসে বললাম

– এই নষ্ট হয়ে যাওয়া চেহারায় সৌন্দর্য খুজে পান আপনি?

– আমার কাছে তুই-ই সবচেয়ে সুন্দরী নারী। আমার বউ।

– আপনার কাছে আমায় সুন্দরী মনে হয় কেনো?

– ভালোবাসি তাই।

শত, সহস্র, লক্ষ, কোটি মানুষের ভীড়েও
আমার শুধু তোকেই চাই

কারণটাতো একটাই
ভালোবাসি তাই

সায়ন ভাইয়ার কথায় আবারো হাঁসলাম আমি। তখনই শুনতে পেলাম আমার ছোট্ট মামনি সায়নীর গলা। আধো আধো গলায় সে বলে উঠলো

– আমিও তোমাদেই থাতে থাততে তাই (আমিও তোমাদের সাথে থাকতে চাই)

আমরা দুজনেই বলে উঠলাম

– কেনো?

– বায়োবাতি তাই।

তিনজনেই হেঁসে উঠলাম একসাথে। ইশ! মেয়ের হাঁসিটাও একদম তার বাবার মতো ভয়ানক হয়েছে। আমিও যে আমার প্রিয় মানুষগুলোর সাথে সারাজীবন থাকতে চাই। কারণ? সেতো একটাই। ভালোবাসি তাই।

সমাপ্ত

[এতোদিন ধৈর্য ধরে পাশে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। জানি খুব একটা ভালো হয়নি। আসলে কাঁচা হাতের লিখা তো। এটাই আমার প্রথম গল্প। তাই হয়তো অজস্র ভুল-ভ্রান্তি থেকে থাকবে। তার জন্য দুঃখিত। আর আমার ভুলগুলো ধরিয়ে দেবেন প্লিজ। তাহলে হয়তো পরবর্তীতে আরো ভালো করতে পারবো।

আমার পরবর্তী গল্প “নিরব অশ্রু ” নিয়ে আবারো হাজির হবো আপনাদের মাঝে। আশা করি তখনও এভাবেই পাশে থাকবেন। ততদিন ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন আর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে আমার জন্য দোয়া করুন। ধন্যবাদ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here