ভালোবাসি তোকে ❤ #লেখিকা: অনিমা কোতয়াল #পর্ব- ৪

#ভালোবাসি তোকে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৪
.
আমার চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে। কখনো ভাবিনি যে আমার সাথে এরকম হবে। আমার কাছে আমার আত্মসম্মান অনেক কিছু কিন্তু তবুও শুধুমাত্র আব্বু আম্মুর কথা ভেবেই চুপচাপ সবটা সহ্য করছি। কিন্তু কতোদিন? কেনো করছেন উনি আমার সাথে এরকম? উনি কী অন্যকাউকে ভালোবাসেন? তাহলে সেটা ওনার বাবা মাকে কেনো বলেন নি? আমি বাবা আর মামনীকে যতোটা চিনি তাতে ওনাদের একবার বললেই রাজী হয়ে যেতেন আদ্রিয়ান ভাইয়ার পছন্দের মানুষের সাথে বিয়ে দিতে। তো সমস্যাটা কোথায় হলো? আর সবাই মিলে আমায় বলির পাঠা কেনো বানালো? তবে যাই হোক আমাকে শক্ত হতে হবে। বিয়ে যখন হয়েই গেছে আমি আমার সবটা দিয়ে চেষ্টা করবো সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখার। এসব ভাবতে ভাবতেই ওয়াসরুমের দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে তাড়াতাড়ি চোখ মুছে স্বাভাবিক হয়ে নিলাম। উনি শাওয়ার নিয়ে এসছেন। আমি হা করে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। আফটার শাওয়ার লুকে চরম লাগছে। একটা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর নীল চিকন স্লিভস এর গেঞ্জি পরে আছেন, শরীরে বিন্দু বিন্দু জল জমে আছে, এমনিতেই সবসময় ওপার চুল কপালে পরে থাকে আর ভিজে চুলগুলো আজ আরো বেশি করে পরে আছে। উফ এতো সুন্দর কেনো উনি? সবসময় ঘায়েল করে ছাড়ে। ফোনের রিংটোনে ঘোর থেকে বেড়িয়ে এলাম আমি। ওনার ফোন বাজছে। উনি হাত দিয়ে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে ফোনটা হাতে নিয়েই স্ক্রিনে কী দেখলেন জানিনা ওনার চোখে মুখের বিষন্নতার ছাপ আবারও দেখা দিলো। আমার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে একবার তাকিয়ে ফোনটা রিসিভ করে ব্যালকনিতে চলে গেলেন। কে ফোন করেছে যে আমার সামনে কথা বলতে পারছেননা। যা খুশি করুক আমার কী? আমি একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলে ওয়াসরুমে ঢুকে দেখলাম ওনার পোশাক ভিজিয়ে রেখে দিয়েছেন। ভাবলাম ধুয়ে একটু রোদে দিয়ে আসি। নিজের জামাও কোনোদিন ধুই নি আমি কিন্তু আজ ওনার পোশাক ধোয়ার জন্যে কাউকে বলতেও হলোনা, এমনিতেই সেই ইচ্ছে চলে এলো মনের ভেতর। কেনো সেটা নিজেও জানিনা। মাত্র একটা গেঞ্জি আর প্যান্ট এটুকুর জন্যে ছাদে যেতে হবেনা তাই ওগুলো ধুয়ে ব্যালকনি শুকোতে দিতে যাবো কিন্তু ওনাকে ফোনে কথা বলতে শুনে থেমে গেলাম। উনি ফোনে বলছেন,

— ” আরে এভাবে কান্নাকাটি কেনো করছো? প্লিজ কান্না থামাও। তোমাকে এভাবে কাঁদতে দেখে আমার ভালো লাগছে? আমি আসছি আজ দেখা করতে।”

ওপাশ থেকে কিছু একটা বলল। উত্তরে উনি বললেন,

— ” না আমি এই বিয়ে মানি, আর না ওকে আমার বউ হিসেবে মানি। এসব কথা বাদ দাও।”

আমার এবার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। আমার সাথে কতো রুডভাবে কথা বলে আর কোথাকার কোন শাকচুন্নির সাথে কতো নরম করে কথা বলছে। নিশ্চয়ই গার্লফ্রেন্ড। এই মেয়ের জন্যেই আমাকে মেনে নিচ্ছে না। হুহ। উনি ফোন রেখে পেছন ঘুরে বেড়োতে নিয়ে আমাকে দেখে থেমে গেলো আমিও একটু চমকে গেলাম। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে সাইড কাটিয়ে গিয়ে রেলিং এর ওপর ওনার গেঞ্জি আর প্যান্ট মেলে দিলাম। উনি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। ওগুলো মেলে আমি ওনার পাশ কাটিয়ে ভেতরে যেতে নিলেই উনি আমার হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বললেন,

— ” কী চাই তোমার? যতো করে বলছি আমার বউ হওয়ার চেষ্টা করোনা ততোই তুমি যেচে পরে অধিকার ফলাতে চলে আসছো। যতোই বলছি চলে যাও আমার লাইফ থেকে ততোই তুমি জেকে বসছো এই বাড়িতে। এবার বলোতো ঠিক করে কী চাই তোমার? ব্লাঙ্ক চেইক তো ধরিয়ে দিয়েছিলাম তোমার হাতে আর কী চাই? আমার নামের যতো প্রপার্টি আছে সব লিখে দেবো তোমার নামে? তাহলে ছাড়বে আমায়? তাহলে বলো সেটাই করবো আমি। আজকেই করবো। তবুও প্লিজ চলে যাও আমার লাইফ থেকে।”

এবার আমার কষ্টের চেয়ে বেশি রাগ লাগছে। কান্না করছি আমি তবে কষ্টের চেয়ে বেশি রাগে। সবকিছুরই একটা সীমা থাকে, যেটা এখন পার হয়ে গেছে। আমি হাত ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে ওনার বুকে একটা ধাক্কা মেরে বললাম,

— ” কী পেয়েছেনটা কী হ্যাঁ? যা ইচ্ছে তাই বলবেন ? কাল রাত থেকে সহ্য করছি আমি। কারণ আপনি এখনো ডিপ্রেসড আছেন। বাট এভ্রিথিং হ্যাজ আ লিমিট। আর আপনি আপনার লিমিট ক্রস করে ফেলেছেন। বারবার টাকা প্রপার্টি এসব বলে কী বোঝাতে চাইছেন? আমি লোভী? টাকার লোভে বিয়ে করেছি আপনাকে? আপনার ক্যারিয়ার সম্পত্তি দেখে বিয়ে করেছি? আপনি কোথাকার সাধু হ্যাঁ ? বিয়ে তো আর একা একা করা যায়না তাইনা? এখন আমি আপনাকে প্রশ্ন করছি কেনো বিয়ে করেছেন আমাকে? আপনার ভাষ্যমতে একটা বাচ্চা মেয়েকে? আমার তো টাকা প্রপার্টি তেমন কিছুই নেই। তাহলে কী শরীরের জন্যে?”

উনি অনি বলে চিৎকার করে আমাকে চড় মারতে গিয়েও থেমে গেলেন। তবে আমি আজ ভয় পাইনি কেনো জানিনা এক অদ্ভুত সাহস চলে এসছে আমার মধ্যে। আমি একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম,

— ” থামলেন কেনো? কাল রাত থেকে তো কম করেননি আমার সাথে। এটা আর বাকি থাকবে কেনো? মারুন?”

উনি হাত নামিয়ে চোখ সরিয়ে নিয়ে চলে যেতে নিলেই আমি ওনার হাত ধরে আটকে নিয়ে বললাম,

— ” দাঁড়ান! আমার কথা শেষ হয়নি এখনো। ইশরাক ভাইয়ার ব্যপারটা নিয়ে আপনি ডিপ্রেসড আমি জানি সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তার সাথে আপনার পরিবার, বিয়ে এসবের কী সম্পর্ক? কেনো একটা দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে আপনি নিজের সাথে নিজের পরিবারের জীবনটা দুর্বিষহ করে দিচ্ছেন? ইশরাক ভাইয়া চলে গেছেন, কিন্তু আপনি কেনো থেকেও নেই বলবেন? উনি ওনার পরিবার, স্ত্রীকে যেই কষ্টটা না চাইতেও দিয়েছেন, আপনি কেনো ইচ্ছে করে জেনে শুনে আপনার পরিবারকে অাপনার স্ত্রীকে সেই একি কষ্ট দিচ্ছেন? নাকি এগুলো সব বাহানা? এক্চুয়ালি আপনার মনে অন্যকেউ আছে তাই ইচ্ছে করে সব দোষ আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে নিজে ফ্রি হতে চাইছেন। যাতে আপনি যাকে ভালোবাসেন তাকে নিয়ে আসতে পারেন তাইতো?”

উনি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,

— ” তার কৈফিয়ত আমি তোমাকে দেবো না।”

আমি একটা শ্বাস ফেলে বললাম,

— ” দিতে হবে না। আর আমি চাইছিও না। কিন্তু কাল থেকে এই বিয়েটার জন্যে আপনি আমাকে ব্লেম করে যাচ্ছেন। আমি যাতে চলে যাই, আমাকে বউ হিসেবেই কখনো মানবেন না। আচ্ছা কাবিননামায় যখন সই করেছিলেন তখন কেউ আপনাকে জোর করে সই করিয়েছিলো নাকি কবুল বলার সময় কেউ আপনার মাথায় বন্দুক ধরে রেখেছিল?বলুন? বিয়েটাতো আপনিও করেছেন ? এই বিয়েটা করে যদি আমি অপরাধ করে থাকি তাহলে সমান অপরাধ তো আপনিও করেছেন তাইনা? যেখানে আপনি নিজেও সমান অপরাধী সেখানে আমাকে ব্লেইম করার কোনো অধিকার আপনার নেই। আর হ্যাঁ আপনি যদি এখন এটা বলেন যে আপনি বাধ্য হয়ে বিয়ে করেছেন দেন ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে নাচতে নাচতে আপনাকে বিয়ে করিনি, তখন আপনার কথায় জেদ করে সবার সামনে ওমন ড্রামা করলেও পরে আমি আব্বুকে বলেছিলাম আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাইনা কিন্তু.. যাই হোক আমিও বাধ্য হয়েই আপনাকে বিয়ে করেছি। তাই পরেরবার আমার সাথে মিসবিহেভ করার আগে ভেবেচিন্তে করবেন যে সেটা কতোটা যুক্তিসঙ্গত।”

উনি একটু অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি হাত ভাজ করে চোখ সরিয়ে নিলাম। উনি কিছু না বলে ভেতরে গিয়ে গেঞ্জির ওপর একটা শার্ট পরে চলে গেলেন বাইরে। উনি চলে যেতেই আমি জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিলাম। বাপরে! আমার এতো সাহস? কবে থেকে হলো? আমি ওনার চোখে চোখ রেখে এতোগুলো কথা বললাম? আর এমন বলা বললাম যে ওনার বলতি বান্ধ? বাহ! কেয়া বাত হ্যাঁ। এসব ভেবে খুশি মনে নিচে চলে গেলাম। গিয়ে দেখি নাস্তা প্রায় রেডি। আমাকে দেখে মামনী বললেন,

— ” আরে তুই নেমে এসছিস। তোকেই ডাকতে পাঠাচ্ছিলাম। আয় বসে পর।”

আমি মুচকি হেসে আপির পাশে গিয়ে বসলাম। আমি দাদী শাশুড়ি বললেন,

— ” কীগো নাত বউ আজ তো তোমার নিচে নামার নামই নিচ্ছিলে না। আমার নাতী ছাড়ছিলো না বুঝি?”

আমি দিদার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম কিন্তু কিছু বললাম না আসলে খুব লজ্জা লাগছে। আপির দিকে তাকাতেই আপি চোখের ইশারায় কিছু বলতে চাইছে কিন্তু আমি বুঝতে পারছিনা। হঠাৎ দীদা বলে উঠলেন,

— ” বাহবা এতো লজ্জা? আমার নাতী তো আদর করে তোকে একেবারে লাল নীল বানিয়ে ফেলেছে রে।”

আমি চমকে গেলাম। দীদার হঠাৎ এসব বলার কারণটা বুঝতে পারছিনা। বাকি সবার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সবাই মিটমিটিয়ে হাসছে। আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। আপির দিকে তাকাতেই আপি চোখের রাঙিয়ে ইশারায় আমার ঘাড় গলা ঢাকতে বলল। আমি যা বোঝার বুঝে গেলাম তাড়াতাড়ি শাড়ির আচল আর চুল দিয়ে ঢেকে নিলাম। জাবিন একটু হেসে বলল ,

— ” এখন আর ঢেকে কী হবে ভাবী। যা দেখার সবতো আমরা দেখে..”

হঠাৎ করেই বড় আব্বু একটু কেশে এটা জানান দিলেন যে আমরা বড়রাও এখানে আছি মুখে একটু লাগাম দাও। আমি তো লজ্জায় মাথাই তুলতে পারছিনা। কোনোরকম খেয়ে উঠে চলে এলাম ওখান থেকে। রুমে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখলাম গলায় হাতে লাল লাল র‍্যাশ হয়ে আছে। আসলে রাতে গহনা পরে ঘুমানোর জন্যেই এমন হয়েছে। হয়তো গয়নাগুলো মাঝরাতে উঠেই খুলেছিলাম। গায়ে র‍্যাস হলো গয়নার জন্যে আর সবাই ভাবলো যে উনি আদরে আদরে ভরিয়ে দিয়েছেন আমাকে। হাহ্ কতো আদর করেছে তাতো আমি জানি। আমার স্কিন একটু সেনসিটিভ। তাই গহনার ঘষা বা যেকোনো রকম প্রেশার পরলে র‍্যাস উঠে যায়। এই র‍্যাস এর জন্যে যা হয়েছিলো। সেদিনের কথা মনে পরলেই ওনার ওপর যেমন রাগ হয় তেমন হাসিও পায়-

আপির গায়ে হলুদ ছিলো সেদিন। মাঝখানে একয়েকদিনে আদ্রিয়ান ভাইয়ারা অনেকবারই যাওয়া আসা করেছেন। ওনাদের সবার সাথেই ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছে আমাদের। আদ্রিয়ান ভাইয়া সবসময়ই আমার পেছনে পরে থাকেন। মানে সুযোগ পেলেই লেগ পুল করা শুরু করেন। এতে যে উনি খুব মজা পান সেটা বোঝাই যায়। বাকিরাও ইফাজ ভাইয়া, আদিব ভাইয়া, ইশরাক ভাইয়া, জাবিন, আপি, ভাইয়ারা সবাই বেশ ইনজয় করে এটা। শুধু বিরক্ত হয়ে মুখ ফুলিয়ে রাখি আমি। তবে একটা জিনিস ভালো লেগেছে আদিব, ইশরাক আর আদ্রিয়ান ভাইয়ার অটুট বন্ধুত্ব। ওনাদের বন্ধুত্ব দেখে সত্যিই হিংসা হতো আমার। এতো ভালো ফ্রেন্ডশিপ জীবণে প্রথম দেখেছিলাম আমি। ছেলেদের পক্ষ থেকে লোক এসে গেছে হলুদ আর বিভিন্ন কিছু নিয়ে। হলুদের পুরো অনুষ্ঠানে আদ্রিয়ান ভাইয়াদের সাথে দেখা হলেও তেমন কথা হয়নি। যা হয়েছে পরেও একটু হয়েছে। তো প্রোগ্রাম শেষে আপিদের সহ সকলকে নিয়ে একটা রুমে বসে উনি ফোন দেখছেন। আমার গলার হারটার কারণে র‍্যাস হয়ে গেছে অলরেডি তাই খুলে ফেলেছি। হঠাৎ করে খেয়াল করলাম আদ্রিয়ান ভাইয়া ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। আমি একটু অবাক হলেও সেদিকে পাত্তা দিয়ে আড্ডায় মনোযোগ দিলাম। হঠাৎ উনি আপিকে বলে উঠলেন,

— ” হিয়া তোমার বোনকে যতোটা বাচ্চাটাইপ মনে হয় অতোটাও কিন্তু নয়।”

আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম।সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আপি অবাক হয়ে বলল,

— ” কেনো কী করেছে?”

উনি ওনার ফোনটা সাইডে রেখে বললেন,

—- ” না আসলে তোমার বোন এইযে এতো ভদ্র সেজে ঘোরে। তলে তলে কিন্তু ঠিকই ট্যাম্পু চালিয়ে যাচ্ছে। নিশ্চয়ই অনুষ্ঠানে বি এফ ও এসছে। ওর গলা ঘাড় দেখো?”

আপি একবার আমার গলার দিকে একবার ওনার দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হেসে দিলো। বাকি সবাই তাল মিলিয়ে হেসে দিলো। আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম,

— ” আমি মোটেও তলে তলে টেম্পু চালাই না। আর এগুলো হার পরার কারণে র‍্যাস হয়েছে অন্যকিছু একদমি না। আর কোনো বি এফ টি এফ নেই।”

উনি আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললেন,

— ” যেটা পরলে স্কিনের এতো প্রবলেম হয় সেটা পরার কী দরকার?”

আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে।উনি তারপর আপির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললেন,

— ” দেখেছো? আমি যা বলেছি তা কিন্তু ইঙ্গিতেই বলেছি কিন্তু উনি সব বুঝে গেছেন। এবার বুঝেছো এই পিচ্ছির মাথায় কী কী চলে।”

আমি একটা মুখ ভেংচি দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে রাখলাম। ইশরাক ভাইয়া হেসে বললেন,

— ” বাট ভাই আজকাল তোর নজর এতো দিকে যাচ্ছে কেনো বলতো? আগে এতো দিকে তাকানোর সময় পেতি না? কেস কী?”

আদ্রিয়ান চোখ গরম করে ইশরাক ভাইয়ার দিকে তাকাতেই উনি চুপ হয়ে গেলেন। সবাই মিটমিটিয়ে হাসছে। আর উনি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ফোন দেখছেন। আমি পুরো লজ্জায় লাল হয়ে চুপ করে বসে ছিলাম তখন।

ঐদিনের কথা ভেবেই আনমনে হেসে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ মামনী এসে আদ্রিয়ান ভাইয়ার কথা জিজ্ঞেস করলো আমি অনেক অস্বস্তি নিয়েই বললাম জানিনা। সারাদিন ওনার কোনো দেখা পাইনি। কেউ আমায় ওনার কথা জিজ্ঞেস করে আর বিব্রত করে নি। কারণ নতুন বউ বাড়িতে রেখে হাজবেন্ট যদি সারাদিন বাইরে থাকে সেটা কোনো স্ত্রীর কাছেই ভালো লাগে না। আমার সারাদিন যে খুব খারাপ কেটেছে তাও নয় আপি, ইফাজ ভাইয়া সবার সাথেই খুব মজায় কেটেছে।

রাতে শুয়ে শুয়ে ওনার জন্যে অপেক্ষা করছি। সারাদিনে বাড়ি ফেরেননি ঠিক আছেন তো? নাকি যেই শাকচুন্নির সাথে সকালে কথা বলেছিলো তার কাছেই গেছে? যেখানে খুশি যাক আমার কী? হঠাৎ কিছুর আওয়াজ পেয়ে তাকিয়ে দ‍েখি উনি। আমিও কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে রাখলাম যাতে উনি মনে করেন আমি ঘুমিয়ে গেছি। উনি চুপচাপ ওয়াসরুমে চলে গেলেন আমি ঘুরে একবার দেখে আবার চোখ বন্ধ করে ফেললাম। কিছুক্ষণ পর উনি বেড়িয়েও এলেন। চোখ বন্ধ করেও আলাপ পেলাম উনি আমার পাশ থেকে বালিশ আর চাদর নিলেন। হয়তো এখনি সোফার দিকে যাবে। আমি এবার নিজেকে প্রস্তুত করলাম। তারপর মনে মনে কাউন্ট ডাউন শুরু করলাম, থ্রি, টু, ওয়ান। কিন্তু আফসোস, আমি ভেবেছিলাম উনি চেঁচিয়ে উঠবেন কিন্তু তেমন কিছুই হলোনা। একটু পর আলাপ পেলাম উনি আমাকে আস্তে করে ডাকছেন,

— ” অনি? অনি?”

আমি কিছুই জানিনা এমন একটা ভাব করে ঘুরে তাকিয়ে বিরক্তিমাখা কন্ঠে বললাম,

— ” কী হয়েছে কী এভাবে ডাকাডাকি করছেন কেনো? এখন কী ঘুমোতেও দেবেননা নাকি?”

আমাকে আরো অবাক করে নিয়ে উনি নরম কন্ঠেই বললেন,

— ” আমি বেডের একসাইডে ঘুমোলে তোমার কোনো প্রবলেম হবে? আসলে সোফাটা কীভাবে যেনো ভিজে গেছে।”

আমি ভুত দেখার মতো তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। আসলে সোফায় পানিটা আমিই ফেলেছি যাতে করে উনি বাধ্য হয়েই বেডে এসে শোয়। কিন্তু আমিতো ভেবেছিলাম উনি রেগে যাবেন চেঁচামেচি করবেন বাট এতো শান্ত কীকরে? কোনো প্লান নেই তো? হঠাৎ আমার প্রতি এতো নরম হওয়ার কারণ? মনে একরাশ সন্দেহ নিয়ে আমি মুচকি হেসে বললাম,

— ” আগেই বলেছি বাকি অর্ধেক খাট আপনার। যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন। আমাকে বলার কী আছে?”

উনি কিছু না বলে বেডের ওপর সাইডে শুয়ে পরলেন। কিন্তু মাঝখানে কোলবালিশের একটা বর্ডার দিতে ভোলেননি। ব্যাটা খবিশ বর্ডার দেওয়ার কী আছে আমি তো তোর বিয়ে করা বউ নাকি? আমি বলেছি বর্ডার দিতে? বেশি বেশি ফর্মালিটি হুহ। কতো স্বপ্ন ছিলো বরের বুকে মাথা রেখে ঘুমাবো কিন্তু এই বেটা নিরামিষ তো মাঝখানে ইন্ডিয়া পাকিস্তানের বর্ডার বানিয়ে বসে আছে। যত্তোসব।

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here