#ভালোবাসি_প্রিয়
(রিপোস্ট)
#পর্ব_৫
©জারিন তামান্না
পলককে ওমন স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হুঁশ হলো সিফাতের। হাসি থামিয়ে দিলো সে।বুঝতে পারলো যে এতটাও মজা করা ঠিক হয়নি। মৃন্ময়ী হার্ট হয়েছে।খারাপ লাগলো তার। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে যেই না কিছু বলতে যাবে,ওমনি ফোন বেজে উঠলো তার। রিহান কল করেছে হোয়াটস অ্যাপে। পলকের দিকে এক নজর দেখে ফোন রিসিভ করলো সে। ওপাশ থেকে রিহানই আগে বলে উঠলো,
_হ্যালো, ব্রো! হোয়াটস আপ?
_আ’ম ফাইন রিহান। হোয়াট অ্যাবাউট ইউ?
_ওহ..আ’ম গুড। আছিস কই তুই?তোর তো ১২ টায় ফ্লাইট ল্যান্ড করেছে। এখনো বাসায় কেন আসিসনি?
_হ্যাঁ,ফ্লাইট ১২ টায়ই ল্যান্ড করেছে। সব ফর্মালিটিস শেষ করে চলে এসেছি আমি। আসলে..
_চলে এসেছিস মানে? বাসায় কেন আসিসনি তুই? তুই জানিস ইয়ানা সেই সকাল থেকে তোর জন্য ওয়েট করছে?বারবার জিজ্ঞেস করছে তোর কথা,কখন আসবি বলে মাথা খারাপ করে দিচ্ছে মেয়েটা। কিছুটা অস্থির হয়েই কথাগুলো দ্রুত বললো রিহান।
_আরেএএএ ভাই,,আমার কথাটা তো শোন আগে।
_আচ্ছা বল।
_আমি আসলে এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি অন্য একটা কাজে এসেছি। লাঞ্চ বাইরেই করবো। তোরা লাঞ্চ করে নে সবাই। আমি বিকালের দিকে ফিরে আসবো। ততোক্ষণ মেয়েটাকে একটু সামলে নে নারে ভাই আমার।
_তুই একচুয়ালি কোথায় গেছিস বলতো? কিছুটা সন্দেহ নিয়ে প্রশ্ন করলো রিহান।
_আ আব..আমি ফিরে এসে বলছি তোকে সব। ফোন রাখ এখন। bye.
_ওকে,ফাইন। come back soon…see u.bye.
_ ok. see u. মুচকি হেসে কল কেটে ফোনটা পকেটে ভরে রাখতে রাখতে চোখ তুলে চাইলো পলকের দিকে। সে আগের মতই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
সিফাতও এসেছে পরে থেকে দাঁড়িয়েই আছে। পলককে দেখে মনে হলো বেশ রেগে আছে। তাই সব কিছু সামলে নিতেই কিছুটা গলা ঝেড়ে বললো,
_আ…তখন থেকে তো দাঁড়িয়েই আছি। এবার কি বসার অনুমতি পাবো?
এবার পলক দৃষ্টি ঘুরিয়ে সিফাতের দিকে চাইলো। বেচারা সেই কখন এসেছে আর এখনো বসতে অবদি পারেনি। সে যে এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি এখানেই এসেছে সেটা সে শুনেছে।এত খানি জার্নি করে আসা ক্লান্ত মানুষটাকে সেই কখন থেকে এভাবে দাঁড় করিয়ে রেখেছে সে। সেএএএ?! কিন্তু সে কিভাবে তাকে দাঁড় করিয়ে রাখবে। এই মানুষটা এসেছে পরে থেকেই যা সব শুরু করেছে বসতে বলার সুযোগটাই তো হলো না। এতে তার দোষ কই? যা হয়েছে সব উনার নিজের দোষে। নিজেকে নিজেই বুঝ দিলো পলক।কিন্তু তাও মায়া লাগলো তার। চোখ নামিয়ে খুব শান্ত স্বরে বললো,বসুন।
পলকের এমন শান্ত স্বরে বলা কথায় স্বস্তি পাওয়ার কথা থাকলেও সেটা মোটেও স্বস্তিদায়ক হলো না সিফাতের কাছে। সে ঠিক বুঝতে পারলো রেগে আছে তার মৃন্ময়ী।
এদিকে পলকের রাগ যে সিফাতের ক্লান্ত মুখটা দেখেই মিইয়ে গেছে সেটা তো আর সে জানে না।কিন্তু পলক জানে এই রাগ মিয়িয়ে গেলেও সেখানে একটা অচেনা অভিমান খুব করে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। কেন এই মানুষটা সব সময় তাকে এমন হেনস্তা করে।যখন যখন এই মানুষটা তার সাথে থাকে তখনই তার ভ্যাবাচ্যাকা দিবস শুরু হয়ে যায়।এটা ভেবেই মনে মনেই একটা ভেংচি কাটলো সে সিফাতকে ।
_________________________________
পলকের অনুমতি পেয়ে ব্যাগটা সাইডে রেখে ধীরে সুস্থে পলকের সামনের সীটটায় বসলো। তবে জানলার ধার ঘেঁষে। তারা যে হোটেলের রেস্টুরেন্টাতে এসেছে সেটা এয়ারপোর্ট থেকে কিছুটা কাছেই। তাই ফ্লাই করার আগে বা ফিরে এসে প্রায়ই এখনে আসে সিফাত। এখানকার কফি তার ভীষণ পছন্দের। তার সব ক্লান্তি মেটানোর জন্য বাসায় মায়ের হাতের কফি আর বাইরে এখানকার কফিটাই তার চাই। প্রায় সময় আসার কারণে বেশ পরিচিত সে সবার কাছেই। আর এই যে, যে টেবিলটা সে বুকিং দিয়েছে সেটাও তার প্রিয় জায়গা এখানে। কারণ এখান থেকে স্কাই ভিউ টা খুব ভালোভাবেই দেখা যায়। তাই এটা একপ্রকার তার জন্যই বুক করা থাকে।
পলক বসেছে বাইরের দিকে। আর সিফাত কিছুটা কাঁচ ঘেঁষে ভেতরের দিকে।যেন ঘাড় ঘুরালেই আকাশ দেখতে বিন্দুমাত্র সমস্যা না হয়। বলতে গেলে মুখোমুখি চেয়ারে বসেও তারা আড়াআড়ি ভাবে বসেছে। দুজন দু প্রান্তে।
ক্যাপ আর সানগ্লাস খুলে টেবিলের একপাশে রাখতে রাখতে পলকে জিজ্ঞেস করলো,
_তো কি খাবেন?
_প্রশ্নটা শুনে কেমন যেন একটা দৃষ্টি নিয়ে তাকালো পলক, যে কোন উদ্ভট টাইপের প্রশ্ন করা হয়েছে তাকে। সেটা দেখে সিফাত কিছুটা, মিনমিনে স্বরে বললো,
_না আ..মানে,লাঞ্চ টাইম তো এখন। সো, লাঞ্চের জন্য খাবার তো অর্ডার করতে হবে। তাই জিজ্ঞেস করছিলাম কি খাবেন আপনি?
সিফাতের এভাবে বলা কথা শুনে বেশ হাসি পেল পলকের। কিন্তু সে হাসলো না। রাগ তো এখন একেবারেই নেই। তবুও কিছুটা ভাব নিয়ে কাঠকাঠ গলায় বললো,
_আপনার যেটা ভালো লাগে অর্ডার করে দিন।
_ওকে, ফাইন। চাইনিজ প্ল্যাটার অর্ডার করি তবে।
বলেই সে ওয়েটারকে ডেকে দুটো চাইনিজ প্ল্যাটার আর আফটার লাঞ্চ নিজের জন্য একটা স্ট্রং কফি আর পলকের জন্য ডার্ক চকলেট আইসক্রিম অর্ডার করে দিলো।
এদিকে পলক তো পুরাই তাজ্জব বনে গেছে। কারণ সিফাত যা যা অর্ডার করেছে সেগুলো সব ওর পছন্দের আইটেম। মনে মনে বললো,এই লোকটা কি।সব জেনে বুঝে করেছে নাকি আমিই বেশি ভাবছি?উনার তো আমার পছন্দ জানার কথা নয়।তাহলে?উত্তর খুঁজে পায় না পলক।
পলকের এহেন হতভম্বিতা দেখে মিটিমিটি হাসছে সিফাত। কিন্তু, এবার আর তাকে নিয়ে মজা করতে ইচ্ছে হলো না।আজকে এমনিতেই ঢের হয়েছে।খাবার আসতেও একটু সময় লাগবে। চুপচাপ বসে থেকে তো আর লাভ নেই।তাই সে নিজে থেকেই কথা বলা শুরু করলো। কিন্তু, কিছু বলার আগে প্রথমেই সে দু’চোখ মেলে ভালোভাবে দেখলো পলককে। আজ তার মৃন্ময়ী আকাশী আর সাদার কম্বিনেশনের একটা লং গাউন পড়েছে। মাথায় সাদা ওড়না টানা। যেন ভেজা মাটির গা’য়ে এক খন্ড আকাশ নেমে এসেছে।বাইরের রৌদ্রজ্জ্বল আকাশের দিকে তাকালো একবার কি যেন বললো বিরবির করে। পলক সেটা শুনতে পেলো না। তাই জিজ্ঞেস করলো,
_কিছু কি বলছেন?
সে প্রশ্নের উত্তরে কিছু বললো না।শুধু হাসলো একটু।আকাশের থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে আবারও পূর্ণদৃষ্টি মেলে তার মৃন্ময়ীকে দেখলো। সেদিনের মতই লম্বা সিঁথি কাটা।কানে ছোট একজোড়া ক্রিস্টাল কালার স্টোনের টপ।বা হাতে সিলভার চেইনের মাঝারি একটা ঘড়ি। তার শুকনো কব্জিতে অনেকটা ব্রেসলেটের মতই লাগছে। আর ডান হাতে স্টোনের চিকন দুটো চুড়ি। ব্যস এটুকুই। মুখে না আছে তেমন কোন প্রসাধনীর ছোঁয়া আর না আছে চোখে সামান্য কাজল। এতটা সিম্পলভাবে একটা মেয়ে তার সামনে বসে রয়েছে।তারপরেও সিফাতের মনে হচ্ছে, পৃথিবীর এত এত দেশ ঘুরেও এর থেকে বিশুদ্ধ আর বিমোহিত সৌন্দর্য সে তার এতকালের জীবনে কখনো দেখেনি।
সিফাতের এভাবে তাকিয়ে থাকাটা পলককে অস্বস্তিতে ফেলে দিল। কিন্তু পলক জানে এই দৃষ্টিতে খারাপ কিছুই নেই। যদি কিছু থেকেও থাকে তবে সেটা পবিত্র কিছুই।তবুও সিফাতের এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে তার দৃষ্টি চঞ্চল হলো। সিফাত সেটা বুঝতে পারলো।তাই ব্যাপারটা এড়িয়ে যেতেই প্রশ্ন করলো,
_স্কুল কখন ছুটি হয়েছে আপনার?
_জ্বী…১ টায়।
_অহ।কিন্তু আমি তো জানি আপনার স্কুল ১২টায় ছুটি হয়ে যায়।
_হ্যাঁ,,সেটা স্টুডেন্টদের জন্য।১২ টায় ক্লাস শেষ হয়। বাচ্চাদের কপি চেক করে, কাজ গুছিয়ে বেরোতে বেরোতে ১ টা বেজে যায় আর কি।
_অহ, আচ্ছা। তাহলে তো বোধয় আজ আর বাসায় যাওয়ার সুযোগ হয়নি আপনার। বাসায় জানে আপনি এখানে?
_না,জানে না। তবে স্কুলে যাওয়ার আগেই বলে বেরিয়েছিলাম যে আজ ফিরতে লেট হবে।
_আচ্ছা।
_হ্যাঁ।
এটুকু বলেই চুপ করে গেল পলক।
সিফাত নিজেই বললো,
তাহলে কি ডিসাইড করলেন মৃন্ময়ী? বিয়ের আগে না পরে….বলেই পলকের দিকে চোখ মেলে চাইলো সিফাত উত্তরের আশায়।
বিয়ের কথা শুনে কিছুটা চুপসে গেল পলক।কিছুটা ইতস্তত করেই বললো,
_ হ্যাঁ,,কিন্তু এর আগে আমার আসলে একটা কথা বলার ছিল আপনাকে।
_yeah, sure. say.
পলক কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওয়েটার খাবার নিয়ে চলে এলো। খাবার টেবিলে রেখে সে চলে যেতেই সিফাত বললো,খেতে খেতে কথা বলি আমরা?
পলক মুখে কিছু বললো না। চুপচাপ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানালো।
তারপর সিফাত একটা প্লেট পলকের দিকে এগিয়ে দিয়ে অন্যটা নিজের দিকে টেনে নিল। খাওয়া শুরু করতে করতে বললো,
_তো মৃন্ময়ী! কি যেন বলতে চাইছিলেন আপনি?
_সিফাত দিব্যি ছুরি কাটাচামচ চালিয়ে খেয়ে যাচ্ছে। আর পলক শুধু সেসব দিয়ে খাবার নাড়াচাড়া করে যাচ্ছে।
পলককে এভাবে শুধু খাবার নাড়াচাড়া করতে দেখে সিফাতও খাওয়া থামিয়ে দিল।পলকের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে বেশ চিন্তিত। তাই চকিতেই প্রশ্ন করলো,
_Any problem, Mrinmoyi? টায়ার্ড লাগছে কি?
সিফাতের কথায় চমকে তাকালো পলক।কিন্তু পরমূহুর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
_না..কোন সমস্যা নেই। ঠিক আছি আমি।বলেই মুখে জোরপূর্বক হাসি টানার চেষ্টা করলো।যেন সব স্বাভাবিক আছে।
পলকের অবস্থা বুঝতে না পেরে সিফাত বললো,
_তো খাচ্ছেন না কেন? এটা ভালো লাগছে না? অন্য কিছু খাবেন, অর্ডার করি?
পলকের তাৎক্ষণিক জবাব,
আরে না না….এটাই ঠিক আছে একদম। খাচ্ছি আমি। বলেই একচামচ ফ্রাইডরাইস তুলে মুখে দিল সে।
সিফাতও আর ঘাঁটলো না তাকে। খাওয়ায় মনোযোগ দিল।কিন্তু সেটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। তার আগেই পলক নিজের কথা বলতে শুরু করলো।
_আসলে আমার সম্পর্কে আপনার কিছু ভুল ধারণা রয়েছে।বলতে গেলে,আপনাদের থেকে একটা সত্য লুকানো হয়েছে।
এটুকু বলতেই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চোখ মেলে পলকের মুখের দিকে চাইলো সিফাত। পলক কি বলতে চায় সেটা শোনার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। সিফাতের দৃষ্টিতে আরও বেশি জড়তা এসে জাপটে ধরলো পলককে। কিন্তু তাকে যে সব সত্যিটা বলতেই হবে। এতবড় প্রতারণা যে সে কিছুতেই করতে পারবে না। তাই নিজেকে শক্ত করে, দৃষ্টি নিচের দিকে রেখেই আবারও বলা শুরু করলো,
_আসলে এর আগে আমার একবার বিয়ে ঠিক হয়েছিল।এটুকু বলেই সে সিফাতের দিকে তাকালো তার ভাব মূর্তি বোঝার জন্য। কিন্তু যা দেখলো তার পরে পলকের শরীর একরকম হিম হয়ে এলো। কেমন এক শান্ত গম্ভীর চোখ মুখ করে তাকিয়ে আছে পলকের দিকে। পলক দৃষ্টি রাখতে পারলো না সিফাতের ওমন চাহনীর পানে। দ্রুত চোখ নামিয়ে আবার মনের ওপর জোর দিয়েই বললো,
_বিয়ে ঠিক হয়েছিল,কিন্তু বিয়ের দিন..
_বিয়েটা ভেঙে গেছিল।কারণ,ছেলেটা আদম ব্যাবসার সাথে জড়িত ছিল। সাথে নারী ও শিশু পাঁচারকারী একটা বড় চক্রের সাথে সামিল ছিল। বিয়ের দিন সকালে পুলিশ এসে ওকে এরেস্ট করে নিয়ে গেছে। এখনো মামলা চলছে।জেলে আছে সে এখনও। এটুকু বলেই সেই পলকের মুখের দিকে তাকালো।
পলকের ভাবীর ভাই ছিল সে। ক্লাস এইট পাশ করেই দালাল ধরে ইতালি চলে গেছিল।অন্যদিকে পলকের বড় বোন পালিয়ে বিয়ে করায় তার বাবা বেশ বেকায়দায় পড়ে যায়।যেটা খুব স্বাভাবিক।সমাজের লোকের নানান কথা সমালোচনা শুনতো হতো দিন রাত। একদল লোক বুদ্ধি দিল মেজ মেয়ের বেলায় যেন কোন রিক্স না নেয়। এই মেয়ে এমন কিছু ঘটানোর আগেই যেন কোন সু পাত্রের হাতে হস্থান্তর করে মেয়েকে। আর পলকের বাবাও কোন রিক্স নিতে চাননি বলে তার দ্রুত বিয়ের জন্য উঠে পড়ে লাগে। কিন্তু পলকের এই শ্যামবরণ রূপের কারণে বিয়েটা ঠিক হচ্ছিল না। ঠিক তখনই পলকের ভাবী সম্পত্তির লোভে পড়ে আর এ সংসারে নিজের জোর বাড়াতে তার এইট পাস করা বিদেশ ফেরৎ অধম ভাইয়ের সাথে তার বিয়ের প্রস্তাব রাখে।তার বাবা প্রথমে রাজি না হলেও বউয়ের কথার বর্শবর্তী হওয়া একমাত্র ছেলে আর তার গুণধর বউয়ের কথার মারপ্যাঁচে পড়ে রাজি হয়ে যায় তার অনার্স ২য় বর্ষে পড়া মেয়েটার সাথে বিয়ে দিতে। কিন্তু বিয়ের দিন সকালে যখন হলুদ আর তত্ত্ব নিয়ে কেউ না আসে ও বাড়ি থেকে তখনই খবর আসে ছেলেকে পুলিশ এরেস্ট করে নিয়ে গেছে। এরপর এই নিয়ে খুব অশান্তি হয় বাসায়। পলকের বাবা তার এহেন নির্বোধতার জন্য নিজেকে ক্ষমা করতে পারেন না। আর তার ছেলের বউ জেনে শুনে তার মেয়ের এত বড় ক্ষতি করতে চেয়েছিল সেই অপরাধে তাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলে। কিন্তু শশুড় বাড়িতে ঠাই না পেলেও স্বামীর কাছে টিকে গেছে। ২ মাসের প্রেগন্যান্ট হওয়ায় তার একমাত্র ভাই নিজের বউ আর সন্তানকে ছাড়তে পারেনি। এখন তারা আলাদা বাসা নিয়ে থাকে। যোগাযোগ নেই কোন। শুনেছিল তাদের নাকি একটা মেয়ে বাবু হয়েছে। কিন্তু তাকে দেখার ভাগ্য এখনো কারও হয়নি। পলকের ভাবী এই পরিবারের কাউকেই নিজের মেয়ের মুখ দেখতে দেয়নি। আর না দিয়েছে পরিবারের সাথে কোন যোগাযোগ রাখতে।
____________________________________________
পলকের মুখ হা হয়ে গেছে সিফাতের কথা শুনে।যেন কেউ ওকে ৪৪০ ভোল্টের নয় ৪৪০০ ভোল্টের শক দিয়েছে।ফলাফল পলক পুরো স্থির হয়ে গেছে।বলতে গেলে পলক বেচারি আবারও পলক ফেলতেই ভুলে গেছে।
পলক চোখ নামিয়ে নেওয়ার পরেই সিফাতও স্বাভাবিক হয়ে খাবারের দিকে অগ্রসর হয়।কারণ, তার যা বোঝার তা বোঝা হয়ে গেছিল। তাই সে মনোযোগ দিয়ে প্লেটে ছুরি চামচ দিয়ে খাবার নাড়াচাড়ার মাঝেই কান খাড়া রাখে পলকের বাকি কথা শোনার জন্য। পলক যেই না বিয়ের দিনের কথা তুললো,ওমনি সিফাতও ওর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে গড়গড়িয়ে বাকিটুকু বলে দিল। তারপর, মুচকি হেসে পলকের দিকে চাইতেই দেখলো পলকের এহেন অবস্থা।
চলবে…