#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ২৪
সকাল ৫ টা ,
জিব্রান পূর্ণতা আর নাদিরা কে নিয়ে পলাশির মোড়ে দাঁড়িয়ে বাকি সবার জন্য অপেক্ষা করছে ।
পূর্ণতা ফুটপাতের কিনারে একটা উঁচু জায়গায় বসে ঘুমে ঝুমছে । কারনটা হচ্ছে , গত কাল রাতে বাসায় ফিরে ঘুমাতে ঘুমাতে ২:৩০ টা বেজে গিয়েছে । আবার ৪:৩০ টায় উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে ব্যাগ নিয়ে বের হতে হয়েছে । ২ ঘন্টার ঘুমে রাতের ঘুম কি আর পোষায় ??
জিব্রান নাদিরাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে । এরই মধ্যে ১২ সিটের একটা মাইক্রোবাস এসে থামল ওদের সামনে । জিব্রান বলল ,
– মামা , আপনি কি শাদমান আঙ্কেলের লোক ??
– জি ভাই । আপনারা কি বসবেন ভেতরে ??
– না না , সবাই আসুক ।
মিনিট পাঁচেকের মধ্যে একে একে আয়মান , তাসিন , ফাহিম , নীরা , রুহি , প্রেনা এসে পৌঁছালো । বাকি একমাত্র আবরন ।
ফাহিম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল পুরো ৫ টা ২০ মিনিট ।
তাসিন বলল ,
– আমি একটা কল দিই । দেখি কোথায় আছে ?
তাসিন ফোন বের করে কল দিতেই যাচ্ছিল ঠিক তখন আবরন রিকশা দিয়ে এসে পৌঁছালো ।
– সরি , গাইজ । একটু দেড়ি হয়ে গেল ।
পূর্ণতা চোখ অফ করে মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিল । আবরনের কন্ঠ শুনে চোখ খুলে তাকাতেই দেখল আবরন রিকশা ওয়ালার ভাড়া মিটাচ্ছে । ওর পরনে মেরুন রং এর কাবলি , চোখে কালো স্টাইলিশ সানগ্লাস , চুলগুলো একেবারে জেল দিয়ে সুন্দর করে সেট করা , কাবলির হাতা ফোল্ড করে কনুই পর্যন্ত ওঠানো , হাতে ব্ল্যাক বেল্টের ঘড়ি , পায়ে কালো স্নিকারস্ ।
আবরন নিজের স্যুটকেস গুলো গাড়ির ডিকিতে ঢুকিয়ে সবার ব্যাগ একটা একটা করে ঢুকাতে লাগল । জিব্রানও সবার স্যুটকেস , ব্যাগ এগিয়ে নিয়ে আবরনকে দিচ্ছে । সর্বশেষ পূর্ণতার হাতে থাকা ব্যাগটা জিব্রান চাইতেই পূর্ণতা ওর ব্যাগ হাতে নিয়ে বলল ,
– এটা অনেক ভারী !
জিব্রান পূর্ণতার হাতে থাকা ব্যাগটা হাতে নিয়ে বলল ,
– কি এতো এনেছিস ব্যাগে করে ?
নাদিরা বলল ,
– ধুর , মেয়েদের অনেক জিনিস লাগে সেটা তোমরা ছেলেরা বুঝবে না । এখন জলদি জলদি ব্যাগটা ঢোকাও ।
জিব্রান আবরনের দিকে ব্যাগ বাড়িয়ে দিয়ে বলল ,
– নে , এটা ভেতরে রাখ ।
আবরন পূর্ণতার ব্যাগ ডিকিতে রেখে ড্রাইভার কে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– ভাই , ডিকি লাগিয়ে দিন । কাজ শেষ এখানকার ।
ড্রাইভার ডিকি লাগিয়ে দিতেই এবার এলো বসার পালা । গাড়ির দরজা খুলে মাঝের সিট সামনে টেনে দিতেই প্রথমে ফাহিম আর রুহি বসল , তারপর ওদের সাথেই তাসিন আর নীরা বসল । ওরা চারজন একদম পেছনের সিটে বসল ।
তারপর শেষের আগের সিটে আয়মান আর প্রেনা উঠে বসল ।
জিব্রান বলল ,
– সবাই জোড়ায় জোড়ায় বসতে চাচ্ছিস ! তাহলে তো সব গ্যাঞ্জাম গাড়ির পেছনের দিকে হলো । সামনে কে বসবে ?
আবরন বলল ,
– ড্রাইভার ভাই এর পাশের সিটটা নাহয় আজ খালিই থাকুক । তুমি আর নাদিরা ভাবিও তো একসাথে বসবে তাই না ?
জিব্রান বলল ,
– অবশ্যই , সবাই জোড়ায় জোড়ায় বসছে । আমরা কেন বসবো না ?
পূর্ণতা বলল ,
– এত বড় গাড়ি , প্রতি সিটে তিন জন করে বসলে আরামে যেতে পারতে । আর তোমরা সবাই এক সিটে চারজন করে বসে চাপাচাপি করে যাবে । আমি ভাই ২য় সিটে জানালার ধারে বসবো ।
আবরন বলল ,
– তাহলে আর কি ! ভাইয়া , তুমি নাদিরা ভাবিকে নিয়ে আয়মান আর প্রেনার সাথেই বসো । আমি বরং পূর্ণতার সাথে ২য় সিটে বসি ।
জিব্রান কথা মতো নাদিরাকে নিয়ে ৩য় সিটেই বসল ।
এরপর সিট লাগিয়ে দিতেই পূর্ণতা উঠে বসল আর ওর পাশেই আবরন উঠে বসল ।
তারপর ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট করে রওনা দিল । গন্তব্য চট্টগ্রাম ।
আবরন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল ,
– ভেবেছিলাম ৫:৩০ টায় রওনা হবো । কিন্তু আবার সেই দেড়ি ই হয়ে গেল । এখন ৬টা বাজতে ১০ মিনিট বাকি ।
জিব্রান বলল ,
– রাস্তায় জ্যামে না পড়লে বিকেলের আগেই পৌঁছে যাবো ।
নাদিরা বলল ,
– না , আরো সময় লাগতে পারে । আমরা তো কেউ ব্রেকফাস্ট করে বের হই নি । ৮ টার দিকে একটা রেস্টুরেন্টে গাড়ি থামিয়ে ব্রেকফাস্ট করে তারপর আবার রওনা হতে হবে ।
জিব্রান বলল ,
– হ্যা , এই বিষয়টা তো খেয়ালই ছিল না ।
আয়মান বলল ,
– সমস্যা নেই । যেতে থাকি । শহরে থাকা অবস্থায় ব্রেকফাস্ট সাড়তে হবে । লাঞ্চ আওয়ার হতে হতে ততক্ষনে গ্ৰামের রাস্তা গুলো পাড় করে অন্য শহরে পৌঁছে যাবো । সমস্যা নেই ।
আবরন বলল ,
– ঠিক আছে , আমার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে । আমি একটু ঘুমাই ।
তাসিন বলল ,
– আমরা সবাই চাপাচাপি করে বসলাম !! আর নিজে খালি সিটে যাচ্ছিস বলে ঘুমের কথা ভাবছিস ?
পূর্ণতা বলল ,
– আমি তো আগেই বলেছিলাম । তোমরা তোমাদের নিজ ইচ্ছায় বসেছো । এখন কাপলরা এনজয় করো ।
প্রেনা বলল ,
– মাফ চাই , দয়া চাই । এখন আর তোমরা দুজন আমাদের কাটা ঘাঁয়ে নুনের ছিটা দিও না প্লিজ ।
আবরন আর পূর্ণতা হেসে উঠল ।
সবাই যে যার যার মতো গল্প করছে ।
আর এদিকে পূর্ণতা আর আবরন ঘুমে ঢলে পড়ছে । ওদের এই অবস্থা দেখে নাদিরা বলল ,
– এই , তোমরা দুজন রাতে কোথায় গিয়েছিলে ??
নাদিরার প্রশ্ন শুনে দুজনেই ঘুমের মধ্যে ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা খেয়ে তাকিয়ে গিয়ে বলল ,
– কোথায় যাবো আবার ? কোথাও যাই নি । (আবরন)
পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকাতেই আবরন সানগ্লাস খুলে ওর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিল ।
জিব্রান বলল ,
– ঘুম কে বিদায় কর । চল সবাই গানের কলি খেলি ।
পূর্ণতা বলল ,
– সরি , আমি গান পারি না ।
প্রেনা বলল ,
– ঠাডা পরা মিথ্যা , কেউ বিশ্বাস করো না । ও ভালো গান জানে কিন্তু গাইতে চায় না ।
পূর্ণতা পেছনে তাকিয়ে প্রেনার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো ।
আবরন বলল ,
– আজকে আর তোমার ছাড় নেই । গানটা তাহলে তোমাকে দিয়েই শুরু হোক ।
পূর্ণতা বলল ,
– আমার এখন খেলার মুড নেই । আমার ঘুম পাচ্ছে ।
আবরন বলল ,
– ঠিক আছে । তোমরা খেলো । আমারও ঘুম পাচ্ছে ।
তাসিন বলল ,
– ড্রাইভার আঙ্কেল । গাড়ি থামান ।
ড্রাইভার গাড়ি একসাইডে থামাতেই সবাই তাসিনের দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো ।
নীরা বলল ,
– কিছু হয়েছে ? কোনো সমস্যা ?
তাসিন বলল ,
– হু সমস্যা । আমরা চারজন এখন আবরন পূর্ণতার সিটে গিয়ে বসবো আর তোরা দুইজন পেছনের সিটে গিয়ে বসে ঘুমা বা যা ইচ্ছা কর , উই ডোন্ট কেয়ার ।
পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকাতেই দেখল আবরন তাসিন কে বলছে ,
– ওকে তোরা আয় সামনে । আমরা বরং পেছনেই যাই ।
তারপর পূর্ণতা কে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– তুমি কি বলো !
পূর্ণতা বলল ,
– সবার যেমন ইচ্ছা ।
আবার সবাই গাড়ি থেকে নেমে কথামতো নতুন ভাবে বসলো । সবাই আবার বসতেই গাড়ি আবার চলতে শুরু করল ।
আবরন বলল ,
– ওকে , আমরা এখন ঘুমাই , তোমরা সবাই এনজয় করো ।
সবাই কথা মতো গানের কলি খেলতে শুরু করল ।
কিন্তু পূর্ণতা সিটের সাথে হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে । আবরন ওকে ঘুমাতে দেখে আস্তে করে ওর কানে কানে বলল ,
– ম্যাডাম , কাল রাতে আপনাকে গোলা খাওয়াতে গিয়ে ঘুম নষ্ট হয়েছে । আমার ঘুম নষ্ট করে এখন নিজে আরামসে ঘুমাচ্ছেন ! এই আইন কিন্তু চলবে না ।
পূর্ণতা চোখ বন্ধ করেই আস্তে করে বলল ,
– তাহলে এখন কি করতে চাইছেন ?
আবরন বলল ,
– তুমি জানালার দিকে চেপে বসো ।
পূর্ণতা ওর কথা মতো জানালার দিকে চেপে বসতেই আবরন পূর্ণতার কোলে মাথা রেখে কাত হয়ে শুয়ে পড়ল ।
পূর্ণতা ওর কান্ড দেখে ওর দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলল ,
– আর ইউ ক্রেইজি ? সবাই দেখলে পরে আমাদের খোঁচা মারবে ।
– মারুক । যার যা ইচ্ছা করুক । আমার মাথা ব্যথা করছে । চুল গুলো টেনে দিবে ?
পূর্ণতার কেমন যেন লাগছে । এই প্রথম আবরন ওর কোলে মাথা রেখে শুয়েছে । পূর্ণতা নিজের হাত গুলো ধীরে ধীরে আবরনের চুলের দিকে বাড়াচ্ছিল তখনই আবরন নিজে পূর্ণতার হাত দুটো ধরে ওর চুলে রেখে বলল ,
– তোমার ভাবতে ভাবতে আমার মাথা ব্যথায় ছিড়ে যাবে । এখন একটু টেনে দাও ।
পূর্ণতা আবরনের সিল্কি চুলগুলো বিলি কেটে কেটে টেনে দিতে লাগল । আবরন চোখ বন্ধ করে আছে । পূর্ণতার ঘুম যেন উড়ে গিয়েছে । আবরনের দিকে তাকিয়েই ওর চুল গুলো আস্তে আস্তে টেনে দিচ্ছে ।
বাকিরা গানের কলি খেলতে খেলতে প্রেনার ভাগে এসে পড়ল ‘ই’ অক্ষর পড়ল । প্রেনার এই মূহুর্তে মনে পড়ছে না ‘ই’ দিয়ে কি গান আছে । সবাই কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ১০ সেকেন্ড গুনতে শুরু করেছে ।
– ১ , ২ , ৩ , ৪ , ৫ , …………
পূর্ণতা আবরনের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দেখল প্রেনার “ই” দিয়ে কোনো গান মনে পড়ছে না ।
– ৮, ৯ ..
১০ বলার আগেই পূর্ণতা প্রেনার হয়ে গান গাইতে শুরু করলো ,
You’re the light, you’re the night
You’re the color of my blood
You’re the cure, you’re the pain
You’re the only thing I wanna touch
Never knew that it could mean so much, so much
পূর্ণতা কে গান গাইতে শুনে সবাই পেছনে ঘুরে ওর দিকে তাকালো । আবরনও চোখ খুলে ওর দিকে তাকালো । পূর্ণতা ওর চুল টেনে দিতে দিতেই হালকা হেসে গানটা গাইছিল ।
You’re the fear, I don’t care
‘Cause I’ve never been so high
Follow me through the dark
Let me take you past our satellites
You can see the world you brought to life, to life
So love me like you do, lo-lo-love me like you do
এই টুকু গাইতেই সবাই চিল্লিয়ে উঠল ।
Love me like you do, lo-lo-love me like you do
Touch me like you do, to-to-touch me like you do
What are you waiting for?
এইটুকু গেয়ে থামল পূর্ণতা । সবাই জোরে হাত তালি দিল । আবরনও শুয়ে হাত তালি দিল ।
আবরনও শুয়ে থেকেই হাত তালি দিল ।
নাদিরা বলল ,
– পূর্ণতা , তোমার গানের গলা কিন্তু অসম্ভব সুন্দর । কিন্তু হঠাৎ কি মনে করে গানটা গাইলে শুনি ??
পূর্ণতা নাদিরার প্রশ্ন শুনে নিচে থাকালো । দেখল আবরন একগাল হেসে ওর দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচাচ্ছে । পূর্ণতা বুঝলো আবরনও ওর কাছে একই প্রশ্নের উত্তর চাইছে ।
পূর্ণতা হালকা হেসে জবাব দিল ,
– এমনি মন চাইলো হঠাৎ গান গাইতে । আমার একমাত্র বান্ধবী খেলায় হেড়ে যাচ্ছিল তাই ওর পক্ষ থেকে আমি ই গানটা গেয়ে দিলাম ।
আয়মান উল্টো ঘুরে পেছনে উঁকি দিয়ে দেখল আবরন পূর্ণতার কোলে সটান হয়ে শুয়ে হাসছে ।
আয়মান শয়তানি হাসি দিয়ে বলল ,
– ও আচ্ছা , এই খবরররর !!
সবাই আয়মানের দিকে ভ্রু কুচকে তাকাতেই আয়মান বলল ,
– শালা , পেছনে বসার কারন তাহলে এইটা???
আবরন শোয়া থেকে উঠে বসে বলল ,
– জি না , মাথা ব্যথা করছিলো ।
ফাহিম দাঁত কেলিয়ে বলল ,
– মাথা ব্যথা কেন করছে , সেটা আমরা ভালো করে জানি ।
রুহি কাদো কাদো ফেস করে বলল ,
– দেখেছো , আবরন ভাইয়া পূর্ণতার কোলে শোয়ার জন্য নিজের মাথা কে ব্যথা বলে দাবি করছে । আর তুমি কখনো আমার কোলে শুয়েছো ?? এট লিষ্ট কেউ সামনে থাকলে কোনো বাহানাও তো দেখাতে পারো নি ।
পূর্ণতা আবরনকে কনুই দিয়ে গুতা মেরে বির বির করে বলল ,
– এই জন্য ই আমি বলেছিলাম যে কেউ দেখলে আমাদের এসব নিয়ে খোঁচা মারবে । আপনি তো তখন শুনলেন না । এখন জবাব দিন ।
আবরন সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– লিসেন গাইজ ! জিব্রান ভাইয়া বাদে সবাই তাকাও ।
জিব্রান বলল ,
– কেন কেন ? আমি তাকাবো না কেন ??
আবরন বলল ,
– কারন তুমি পূর্ণতার ভাই । কাজটা তোমার সামনে করা যাবে না ।
নাদিরা জিব্রানের কানে আস্তে করে বলল ,
– আরে আবরনকে তো চেনোই , ও নিশ্চিত দুষ্টুমি করবে । তুমি বরং তাকিয়ো না পেছনে কিছুক্ষণের জন্য ।
জিব্রান সবার উদ্দেশ্য নিয়ে স্বজোরে বলল ,
– ওকে , ফাইন । আমি পেছনে তাকাবো না ।
আবরন বলল ,
– থ্যাংকস ভাইয়া ।
জিব্রান সামনের দিকে তাকিয়ে আছে । আর বাকি সবাই আবরনের দিকে পেছনে ঘুরে তাকিয়ে আছে ।
আবরন পূর্ণতার কানে কানে বলল ,
– বিলিভ মি , আমি এমন কিছু করবো না যাতে তুমি আঘাত পাও । জাষ্ট সবাইকে দেখাতে ছোট খাটো একটা নাটক করবো । তুমি আর আমি শুধু সত্যটা জানবো , কিন্তু সবাই মিথ্যা টা জানবে । কোনো কথা বলবে না । যা করার আমিই করছি ।
পূর্ণতা শুধু মাথা নাড়ল কারন ও জানে আবরন উল্টাপাল্টা কিছু করবে না ।
সবাই বলল ,
– কি এতো কানাকানি করছিস ?
আবরন বলল ,
– কিছুই না । তোমাদের জাষ্ট একটা প্রুফ দেব ।
সবাই বলল ,
– ওকে ।
আবরন পূর্ণতার দিকে ঘুরে বসে পূর্ণতা কেও ওর দিকে ঘুরে বসতে বলে ওর খোপা করা লম্বা চুলগুলো একটানে খুলে দিল ।
চুলগুলো খুলে গাড়ির ঝাকুনিতে পূর্ণতার মুখ চোখ ঢেকে যেতেই আবরন চুলের ভেতর দিয়ে পূর্ণতার গালে হাত রেখে সরাসরি নিজে এগিয়ে গিয়ে ওর ঠোঁটের পাশে গালে কিস করলো । চুল দিয়ে ঢেকে থাকার কারনে সবাই ভাবল আবরন পূর্ণতা কে সত্যি সত্যি কিস করেছে ।
সবাই গাল লাল টমেটোর মতো করে সামনে ঘুরে বসলো । মুখে কিছুই বলল না ।
আর আবরনের কান্ড দেখে পূর্ণতা এখনো চোখ বড় বড় করে অবাক দৃষ্টিতে আবরনের দিকে তাকিয়ে আছে ।
আবরন দেখলো যে সবাই সামনে ফিরে গিয়েছে তাই সুযোগ বুঝে পূর্ণতা কে আস্তে করে বলল ,
– ওদের সবাইকে বুঝালাম “we are in a relationship . ” । কারনটা হচ্ছে , এখন আমরা একে অপরের সাথে দুষ্টুমি করলেও ওরা আমাদের খোঁচা মারবে না , ভাববে ওদের মতো আমরাও কাপল ।
পূর্ণতা শুধু কান দিয়ে শুনছে মুখে কিছুই বলছে না । আবরন ওর নিস্তব্ধতা দেখে বলল ,
– রাগ করলে নাকি ! আমি তো তোমাকে নরমাল কিস করেছি ।
পূর্ণতা কিছুই বলল না । মনে মনে ভাবছে ,
– আমি তো ভেবেছি আজ আপনি সত্যিই অসাধ্য কাজটা করেই ফেলবেন । আরেকটু হলে আমার কলিজা টা ধপাস করে লাফ দিয়ে বেরিয়ে যেত । আল্লাহ বাঁচিয়েছে । কিন্তু উনি কেমন নির্লজ্জ রে বাবা , সবাইকে এটা কি বোঝালো ? সবাই এখন কত কি ভাবছে আমাদের নিয়ে । ভাগ্যিস ভাইয়া দেখেনি , নাহলে আজকে খবরই ছিল ।
এই ভেবে মনে মন শুকুরিয়া আদায় করে আবরনকে বলল ,
– সড়ুন আপনি ।
আবরন বলল ,
– কোথায় সড়বো ?
পূর্ণতা কিছুটা আবরনের নকল করে কঠোর গলায়ই বলল ,
– জানালার ধারে গিয়ে বসুন ।
আবরন মনে মনে ভাবছে ,
– আয় হায় । মিস কান্না পরী তো দেখছি আমার সাথে রাগ করেছে । এখন কি করবো ??
আবরন পূর্ণতার কথা মতো জানালার ধারে গিয়ে বসে বাহিরে তাকিয়ে দৃশ্য দেখতে লাগল ।
পূর্ণতা আবরন চেপে বসতেই জুতো খুলে সিটে পা উঠিয়ে আবরনের কোলে মাথা রেখে শুয়ে বলল ,
– বহুত টেনেছি আপনার মাথার চুল , বহুত আরাম করেছেন । এখন আমাকে ঘুমুতে দিন । ডিস্টার্ব করবেন না । আর একেবারে ব্রেক ফাস্ট টাইমে আমাকে ডেকে তুলবেন ।
আবরন ওর কথা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে দেখল ও চোখ বন্ধ করে এক হাত গালের নিচে দিয়ে ঘুমুচ্ছে । আবরন মুচকি হেসে ওর মাথায় হাত রেখে ওর চুলগুলো শোয়া অবস্থায় হাতাতে হাতাতে মনে মনে ভাবছে ,
– আমি জানি যে এখন তুমি ও আমাকে ঠিক সেভাবেই ফিল করো যেভাবে আমি তোমাকে ফিল করি । বিষয়টা এখন সত্যিই ফাহিম – তাসিনের দুষ্টুমি করে গাওয়া গানের সাথে মিলে যাচ্ছে ।
আবরন হেসে তাসিনকে বলল ,
-তাসিন , শোন না ।
তাসিন বলল ,
– আমি আর ভাই পেছনে তাকাবো না । যা বলার বলে ফেল ।
আবরন বলল ,
– একটু ‘বাজে স্বভাব’ গানটা গা না ।
তাসিন বলল ,
– হঠাৎ এই গানটাই কেন ?
জিব্রান বলল ,
– আরে তুই গা ব্যাটা , ওর শুনতে মন চাইছে ।
তাসিন বলল ,
– ওকে , ফাইন । গাইছি ।
কথা হবে , দেখা হবে
প্রেমে প্রেমে মেলা হবে ,
কাছে আসাআসি আর হবে না ।
চোখে চোখে কথা হবে
ঠোঁটে ঠোঁটে নাড়া দেবে ,
ভালো বাসাবাসি আর হবে না ।
শত রাত জাগা হবে
থালে ভাত জমা রবে ,
খাওয়া দাওয়া কিছু মজা হবে না ।
হুট করে ফিরে এসে
লুট করে নিয়ে যাবে
এই মন ভেঙে যাবে , জানো না ।
আমার এই বাজে স্বভাব কোনোদিন যাবে না ।
আমার এই বাজে স্বভাব কোনোদিন যাবে না ।
………………………………………………….
নয়টার দিকে ওরা সবাই একটা রেস্টুরেন্টে নেমে ব্রেকফাস্ট সেড়ে কিছু স্ন্যাকস , চিপস , কোক , চকোলেট কিনে নিয়ে আবারও দশটার দিকে রওনা দিল সবাই ।
পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে দেখল আবরন চুইংগাম চিবাচ্ছে । আবরন পূর্ণতা কে তাকাতে দেখে ভ্রু নাচিয়ে ইশারা করলো , কি হয়েছে ?
পূর্ণতা মাথা নেড়ে ইশারা করল , কিছু না ।
আবরন চুইংগাম দিয়ে বাবল ফুলিয়ে ঠোঁটে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল ,
– চুইংগাম খাবে ?
– ফ্রুট নাকি ফ্রেশ ?
– দুইটাই আছে ।
– ফ্রুট ।
আবরন কাবলির পকেট থেকে সেন্টার ফ্রুট বের করে পূর্ণতা কে দিল ।
পূর্ণতা চুইংগাম মুখে দিয়ে কিছুক্ষণ চিবিয়ে আবরনকে বলল ,
– চলুন , দেখি ! কে সবচেয়ে বড় বাবল ফুলাতে পারে !
আবরন ভাব নিয়ে বলল ,
– চ্যালেঞ্জ করছো ?
পূর্ণতা বলল ,
– ধরুন তাই !!
– ওকে , চ্যালেঞ্জ একসেপ্টেড !!
পূর্ণতা বলল ,
– ওভার কনফিডেন্স ? ওকে , তাহলে judge করতে ও তো সবাইকে লাগে । কি বলেন ?
আবরন পূর্ণতার দিকে ঘুরে বসে বলল ,
– গাইজ , এদিকে তাকাও সবাই ।
রুহি ফাহিম কে বলল ,
– আল্লাহ ই জানে , আবরন ভাইয়া আমাদের কে আবার কি দেখাবে এখন !
ফাহিম হেসে বলল ,
– চলো , দেখা যাক ।
জিব্রান পেছনে ঘুরে বলল ,
– আমি ও কি দেখতে পারবো নাকি আমার আবার নিষেধ আছে ?
আবরন হেসে বলল ,
– আরে না , তুমি ও দেখো । আমি সবাইকে বলিছি বিষয়টা । আমি আর পূর্ণতা একটা চ্যালেঞ্জে নেমেছি । চ্যালেঞ্জ টা হচ্ছে আমাদের দুইজনের মুখেই চুইংগাম আছে । এখন কে একবারে সবচেয়ে বড় বাবল ফুলাতে পারে তা দেখতে হবে তোমাদের ।
পূর্ণতা আবরনের দিকে ঘুরে বসে বলল ,
– শুধু তা-ই না ! যে জিতবে তার জন্য পুরষ্কার আছে , আর যে হারবে তোর জন্য শাস্তি আছে ।
আবরন বলল ,
– ওকে , যদি আমি জিতি তাহলে আমার পুরষ্কার কি !
পূর্ণতা ভেবে বলল ,
– উমমমমমম , আপনি যা চাইবেন তাই দিব ।
আবরন ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল ,
– ভেবে বলছো তো ?
পূর্ণতা বলল ,
– ভাবনার কি আছে এখানে ?
আবরন বলল ,
– আর যে হারবে তার কি হবে ?
– তাকে যে জিতবে সে যা শাস্তি দিবে তা মাথা পেতে নিতে হবে । ডিল ??
আবরন বলল ,
– ডিল ।
আয়মান বলল ,
– আর ইউ গাইজ সিরিয়াস ? বাবল ফুলাতে গিয়ে এমন না হয় ফোলানোর আগেই টুস করে ফেটে গেল !
সবাই বলল ,
– না , মজা হবে । ওকে তোমরা স্টার্ট করো ।
– রেডি , স্টেডি এন্ড গো ………………
আবরন আর পূর্ণতা দুজনই বাবল ফোলাচ্ছে । প্রথমে দুজনেরই বাবলের সাইজ সমান দেখা গেল ।
প্রেনা বলল ,
– একই সাইজ । বড় ছোট করার চেষ্টা করো ।
আবরন ধীরে ধীরে বাবল বড় করছে , পূর্ণতা ও ফেটে যাওয়ার ভয়ে ধীরে ধীরে বড় করার চেষ্টা করছে । কিন্তু আবরন অনেক বড় করতেই সবাই চিল্লিয়ে উঠল । পূর্ণতা রাগ হয়ে নিজের বাবল ফাটিয়ে আবরনের বাবলও আঙ্গুল ফুটা করে দিল ।
আবরন পূর্ণতার কান্ড দেখে বলল ,
– এই এই , তুমি আমার বাবল ফাটিয়ে দিয়েছো । চিটিং , চিটিং । এটা হবে না । আমিই জিতেছি । এখন আমি যা বলবো তোমাকে তা ই দিতে হবে ।
পূর্ণতা অন্যদিকে তাকিয়ে বলল ,
– দিব না । কি করবেন ??
– কি করবো ?? দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা !!
আবরন সবাইকে বলল ,
– তোমরা সবাই সামনে তাকাও । কেউ পিছনে তাকাবে না ।
সবাই আবার জলদি জলদি সামনে তাকালো ।
পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে দেখতেই আবরন ……………………
#চলবে ♥️
বিঃদ্রঃ গত পর্বে বেশির ভাগ রিডার্স বলেছে আমার সুবিধা মতো গল্প দিতে । আমি একেক দিন একেক সময়ে সুবিধা পাই গল্প লেখার । তবে চিন্তা ভাবনা করে দেখলাম এই ছুটির দিন গুলো দিনেই কিছুটা সময় পাই । তাই বন্ধের এই দিন গুলোতে দিনেই গল্প দিব ।
গল্পের ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । ধন্যবাদ । ♥️