ভালোবাসি_বলেই_তো পর্ব – ৩২

0
898

 

#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৩২

পূর্ণতা দের বাসার সামনে গাড়ি পার্ক করে একে একে পূর্ণতা , আফতাব উজ্জামান ও আবরন গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো ।

আবরন ফোন করে নিজের ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাইকে জানিয়েছে যে ও পূর্ণতাদের বাসায় এসেছে । ওরা যেন চলে যায় । আর ওদের সব জিনিস গুলো আবরনদের বাসায় আছে তাই সেগুলো এক ফাঁকে বাসায় গিয়ে নিয়ে আসতে বলল ।

এদিকে ফাহিম , তাসিন আর আয়মান আবরনের কথা মতো ওদের বাসার সামনে পৌঁছতেই দাড়োয়ান জানালো আম্মাজান আর বড় কর্তা কেউ ই ঘরে নেই ।

ওরা তাই আবার আবরনকে কল দেয় । আবরন কল রিসিভ করতেই ফাহিম জানায় ,

– তোর আম্মু আর বাবা কেউই নাকি বাসায় নেই !

আবরন অবাক হয়ে বলল ,

– নেই মানে ? কোথায় যাবে ? আমাকে তো কিছু জানায় নি !

– ওও , তাহলে কি করবো ?

– আচ্ছা , তোরা বাসায় চলে যা । আমি দেখছি বিষয়টা ।

ওদের সাথে কথা বলে আবরন পর পর আধিরা আনজুম এবং শাদমান চৌধুরী কে কল করেই যাচ্ছে কিন্তু ওনাদের ফোনে রিং বেজে সেটা কেটে যাচ্ছে । কল কেউ পিক করছে না ।

সাথে পূর্ণতা আর আফতাব উজ্জামান থাকায় আবরন এখন কিছু করতেও পারছে না । তাই কিছু একটা ভেবে গেইটের দাড়োয়ান চাচাকে কল করে জানতে চাইলো , তারা কোথায় গিয়েছে তা তোমার কাছে বলে গিয়েছে কিনা ! দাড়োয়ান চাচা জানালো , সে জানে না । তাকে কিছু বলে যায় নি ।

আবরন কিছুক্ষণ চিন্তা করে পরে মনে মনে ভাবল ,

– বাবা তো আছেই মায়ের সাথে । আই হোপ দুজনেই ঠিক আছে ।

আবরনকে চিন্তিত হতে দেখে আফতাব উজ্জামান ওকে জিজ্ঞেস করলো , কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা !

আবরন স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিল ,

– তেমন কিছু না , আম্মু আর বাবা নাকি কাউকে কিছু না বলে একসাথে কোথাও বেরিয়েছে ।

আফতাব উজ্জামান বললেন ,

– চিন্তা করো না । একসাথেই তো আছে তারা । সমস্যা হবে না ।

– হুম ।

কিন্তু অবাক হ‌ওয়ার বিষয় হচ্ছে পূর্ণতা দের গেইটে পৌঁছতেই বটতলার মোড়েই আবরন চার সিটের প্রাইভেট কারটা দেখেছে যেটা ওর বাবার অফিসিয়াল কার ।

পূর্ণতাদের গেইটে আবরন গাড়ি পার্ক করল । সবাই নেমে দাঁড়াতেই আফতাব উজ্জামান চারিদিকে তাকিয়ে বলল ,

– এলাকাটা খুব‌ই ঘনবসতিপূর্ণ ।

পূর্ণতা বলল ,

– হু , বাবা । এলাকা পরে দেখা যাবে । চলো ভেতরে চলো ।

আবরন বলল ,

– পূর্ণতা , শোনো । আঙ্কেলকে আগে যেতে দাও । আমরা পেছনে যাই ।

পূর্ণতা ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল ,

– কেন ?

আবরন চোখ টিপ মেরে বলল ,

– আরে , এত দিন পর আঙ্কেল এসেছে । আগে আঙ্কেল গিয়ে কলিং বেল বাজাক , তারপর আন্টি দরজা খুলে আঙ্কেলকে প্রথমে দেখে খুশি হবে ।

আফতাব উজ্জামান হেসে বললেন ,

– ঠিক বলেছো জিনিয়াস । ঠিক আছে , আমি ই আগে যাচ্ছি । তোমরা বরং পেছনেই এসো ।

আবরন বলল ,

– হু , দোতলায় গিয়ে বাঁ পাশের ফ্ল্যাট টা নক করলেই হবে ।

– ওককে ।

আফতাব উজ্জামান গেইট দিয়ে ঢুকে ভেতরে প্রবেশ করে এগিয়ে গেলেন ।

তিনি চলে যেতেই পূর্ণতা আবরনকে জিজ্ঞেস করলো ,

– কি হয়েছে বলুন তো ! আপনাকে সেই কখন থেকে চিন্তিত দেখাচ্ছে !

আবরন বলল ,

– আম্মু আর বাবা নাকি একসাথে কোথায় বেরিয়েছে । তাও আমাকে এবং দাড়োয়ান চাচাকে কিছু না বলে যে , কোথায় গিয়েছে , কখন আসবে এসব ব‍্যাপারে আরকি !

তো আসার পথে বটতলায় দেখলাম বাবার অফিসিয়াল কার টা পার্ক করা সেখানে । এখন তো মনে হচ্ছে , ওনারা সব এখানে ।

পূর্ণতা চোখ বড় করে বলল ,

– কি বলছেন কি ?? তার মানে কি আরো কোনো সারপ্রাইজ দেওয়া বাকি নাকি ?

– আমার তো তা ই মনে হচ্ছে । চলো , ভিতরে গিয়ে দেখি ।

– চলুন , চলুন ।

আবরন আর পূর্ণতা কিছুটা দৌড়েই গেইট দিয়ে ভেতরে ঢুকে দোতলায় পৌঁছালো ।

আফতাব উজ্জামান কলিং বেল চেপে দাঁড়িয়ে আছেন । ভেতর থেকে কারো দরজা খোলার নাম গন্ধ পর্যন্ত নেই ।

পূর্ণতা বলল ,

– বাবা , আবার চাপো বেল ।

– সেই কখন থেকে চাপছি , খুলছে না তো !

– ভাইয়া তো জানে যে তুমি আসবে তাহলে খুলছে না কেন ?

– কি করে বলব ? দেখ , তোর মা হয়তো নামাজ পড়ছে । এখন তো নামাজের টাইম ।

আবরন বলল ,

– হতে পারে আঙ্কেল ।

মিনিট দুয়েক আরো অপেক্ষার পর ,
নিঃশব্দে কেউ ভেতর থেকে দরজা খুলে দিল ।

আফতাব উজ্জামান , আবরন আর পূর্ণতা ভেতরে তাকাতেই স্বজোরে পেপার বোম্ব ফাটানোর শব্দের সাথে সবাই বলে উঠলো ,

– সারপ্রাইইইইইইইইইজজজ !!! 🥳

পূর্ণতা আর আবরন ভালো করে তাকিয়ে দেখল ভেতরে জিব্রান , ফাহিম , তাসিন , আয়মান , শাদমান চৌধুরী , আধিরা আনজুম এবং মিলি রহমান সবাই একসাথে এখানে ।

আবরন ফাহিম , তাসিন আর আয়মানকে এখানে দেখে যেন ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা খেল ।

আফতাব উজ্জামান হেসে বললেন ,

– থ্যাংক ইউ গাইজ ফর দ্যা সারপ্রাইজ । আই এম রিয়েলি সারপ্রাইজড !!

আবরন বলল ,

– আঙ্কেল শুধু আপনি না সাথে আমিও সারপ্রাইজড হয়েছি !!

শাদমান চৌধুরী হেসে বললেন ,

– আমাকে আর তোর মাকে এখানে দেখে সারপ্রাইজড হয়েছিস তাই না ??

আবরন বলল ,

– না , তোমরা যে এখানে সেটা তো আমি আগেই আন্দাজ করেছি ।

আধিরা আনজুম আবরনের কথা শুনে ফাহিম , তাসিন আর আয়মানের দিকে তাকালেন ।

– এই , তোরা বলেছিস তাই না ??

ফাহিম , তাসিন আর আয়মান বলল ,

– না , আন্টি । বিশ্বাস করো , আমরা কিছু বলি নি ।

আবরন বলল ,

– না , ওরা কিছু বলে নি ‌। ঘটনা পরে বলছি , আগে আঙ্কেলকে ভেতরে তো ঢুকতে দাও ।

আফতাব উজ্জামান এত মানুষের মধ্যে এতক্ষন শাদমান চৌধুরীকে খেয়াল ই করে নি , হঠাৎ তার দিকে চোখ যেতেই বলে উঠল ,

– শাদমান ?? তুই ই তাহলে শাদমান চৌধুরী !! আমাদের শাদমান চৌধুরী ??

শাদমান চৌধুরী বলল ,

– আরে বেটা , এতক্ষন পর দেখলি ? আমি তো জেনে বুঝেই তোকে সারপ্রাইজ দিতে কাজ কর্ম ফেলে আধিরার সাথে এখানে চলে এসেছি ।

সবাই একে একে ভেতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল । পূর্ণতা নিজের রুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে । আর আবরন‌ও হাত মুখ ধুতে জিব্রানের রুমে চলে গেল ।

আবরন ফাহিম , তাসিন আর আয়মানকে কেলাতে কেলাতে বলল ,

– শালা , আমার সাথে নাটক করলি তোরা ?? আমার সাথে ?? আমাকে বললে কি হতো হ্যা ?? আমাকে বললে কি হতো ??

জিব্রান হেসে ওদের লড়াই ঝগড়া থামিয়ে বলল ,

– আরে ওদের কোনো দোষ নেই আবরন । আমি ই জানাতে নিষেধ করেছি । তুই ও সবার মতো সারপ্রাইজড হলি !

বাই দ্য ওয়ে , আঙ্কেল আন্টি যে এখানে সেটা তুই কি করে আন্দাজ করলি রে ?

পূর্ণতা ফ্রেশ হয়ে সোজা সবাইকে জিব্রানের রুমে দেখে সেখানে হাজির হয়ে বলল ,

– আমি বলছি ।

পূর্ণতা সব খুলে বলতেই ওরা হাসতে শুরু করলো ।

জিব্রান বলল ,

– হায়রে , আমরা গেইটের সামনে থেকে সবার জুতো ঠিক‌ই ভেতরে এনে রেখেছি কিন্তু আসল চিহ্ন ই রাস্তায় তোদের জন্য ক্লু হিসেবে ফেলে এসেছি ।

আবরন আর পূর্ণতা হাসল ।

পূর্ণতা হাসি থামিয়ে বলল ,

– আচ্ছা , আমিও কিন্তু বাসায় এসে সারপ্রাইজড হয়েছি !

সবাই বলল ,

– সেটা কিভাবে ??

পূর্ণতা বলল ,

– শাদমান আঙ্কেল আর আমার বাবা ও যে আধিরা আন্টি আর আম্মুর মতো ছোট বেলার বন্ধু সেটা কিন্তু আমি জানতাম না !

আবরন বলল ,

– আসলেই তো ! আমিও জানতাম না !

ফাহিম বলল ,

-বাহ , তোদের বিয়ে এবার পাক্কা ।।।।

ফাহিমের কথা শুনে আবরন আর পূর্ণতা যেন ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা খেল ।

জিব্রান বিষয়টা বুঝতে পেরে বলল ,

– তোরা গল্প কর আমি একটু বাবা আর আঙ্কেলের সাথে গিয়ে বসি ।

আবরন বলল ,

– ভাইয়া , আমি আর পূর্ণতা একটু ছাদে যাই ?

জিব্রান বলল,

– এর জন্য আবার পারমিশন চাইছিস ?যা ..

আবরন পূর্ণতা কে বলল ,

– চলো , একটু কথা আছে ।

আবরন পূর্ণতা কে নিয়ে ছাদে চলে গেল ।

ছাদে গিয়ে পূর্ণতা বলল ,

– বলুন , কি হয়েছে ?

– প্রেনা আর আয়মানের বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে তো !

পূর্ণতা বলল ,

– ভালো কথা মনে করেছেন ! প্রেনা আমাকে আজ সকালে বলছিল ও আমাকে কাল কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চায় । আমার মনে হচ্ছে ও এই বিষয়টাই জানাতে চাইছে ।

-হু , কিন্তু আয়মান এর কোনো টেনশন‌ই নেই এই বিষয়ে । ও এখনো নিজ পায়ে দাঁড়ায়নি আর আমার জানা মতে আঙ্কেল ওর বড় ভাইয়ের আগে ওকে বিয়ে করাবে না ।

– হ্যা !! আপনি এটা ভাবছেন ?? প্রেনার মা ও তো প্রেনা কে ডাক্তারি সম্পূর্ণ না পড়িয়ে বিয়ে দেবে না ।

– বলছো কি ?? সব ঝামেলা দেখি একসাথে এসে হাজির !!

– ওরা কি করে এত বড় ভুল করতে পারলো ?? আমরাও গাঁধা , কেন ওদের একসাথে করতে গেলাম !! মন চাইছে এখন নিজের চুল নিজেই টেনে ছিড়ে ফেলি ।

আবরন বলল ,

– তুমি টেনশন নিও না । একটা ব্যবস্থা হবেই । আর ওদের ভুলের জন্য নিজের এত সুন্দর চুল গুলো ছিড়তে যাবে কেন ??

পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,

– আপনি সবসময় ই এমন করেন কেন বলেন তো ?? এতো সিরিয়াস টপিকের মাঝে একটা আজাইরা কথা বললেন !

– এটা আজাইরা কথা ? ঠিক আছে , তোমার কষ্ট করে নিজের চুল নিজের ছিঁড়তে হবে না , আমি ই টেনে ছিঁড়ে দিচ্ছি ।

এই বলে আবরন পূর্ণতার দিকে তেড়ে আসতেই পূর্ণতা দিল ভো দৌঁড় ।

পূর্ণতা দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে বলছে ,

– আরে আরে !! প্লিজ , আমি এমনি বলেছি । প্লিজ , আমার এত সাধের চুল গুলোর প্রতি এমন অসামাজিক আচরন করবেন না । প্লিজ ।

আবরন ওর পেছনে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে বলল ,

– না , তুমি নিজেই তো বললে আমি নাকি আজাইরা কথা বলেছি , এখন সমস্যা কোথায় ??

– বললাম তো ভুল করেছি । সরি !!

– কোনো সরি চলবে না ।

দুজনই ফাঁকা ছাদে কতক্ষন টম এন্ড জেরির মতো দৌঁড়াদৌড়ি করে এখন হাপাচ্ছে ছাদের পানির ট‍্যাংকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ।

জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে দুজন‌ই দুজনের দিকে তাকিয়ে হু হা করে হেসে উঠল ।

হাসতে হাসতে দুজন‌ই নিচে বাচ্চাদের মতো বসে পড়ল ।

আবরন হাসতে হাসতে বলল ,

– আজকের দিনটা অনেক ভালো কেটেছে তাই না ??

পূর্ণতা হাসি থামিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে হাত মেলে বলল ,

– শুধু অনেক ভালো না বরঞ্চ জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় মূহুর্ত গুলো আজ‌ই খুঁজে পেয়েছি ।

পূর্ণতাকে প্রাণ খুলে কথা বলতে দেখে আবরন‌ও উঠে দাঁড়িয়ে বলল ,

– তাহলে আমি কি পেরেছি তোমাকে খুশি করতে ??

পূর্ণতা হাত নামিয়ে আকাশ থেকে চোখ সরিয়ে পেছনে ঘুরে আবরনের দিকে তাকিয়ে বলল ,

– আপনি অনেক ভালো জানেন । আজ আপনাকে একটা সত্যি কথা বলতে চাই , আপনার কাছে কি আমার জন্য একটু সময় হবে ?

আবরন পূর্ণতার দিকে এগিয়ে এসে ওর হাতে হাত রেখে বলল ,

– একটু কেন ? তুমি চাইলে সারাটা জীবনের সবটুকু সময় তোমার নামে লিখে দিতে পারি ।

পূর্ণতা মুচকি হেসে বলল ,

– সারাটা জীবন সময় দেওয়ার আগে এইটুকু সময় দিয়ে ফ্ল‍্যাশব্যাক টা জেনে নিন ।

আবরন বলল ,

– ফ্ল্যাশব্যাক টা কি বিষয়ে ??

পূর্ণতা বলল ,

– আপনার বিষয়ে ।

– সত্যি ? তাহলে শুনতে রাজি আছি ।

– কেন ? অন্য কারো বিষয়ে হলে বুঝি শুনতেন না ?

– উহু , অন্যেরটা জেনে আমার কি লাভ ! আই ডোন্ট কেয়ার এবাউট দেম ।

– ঠিক আছে । এখানে বসুন । তারপর বলছি ।

আবরন আর পূর্ণতা ছাদের পাকাতেই বসে পড়ল । আবরন বলল ,

– বলো ।

– প্রথম দিন আপনার সাথে ধাক্কা খেয়ে ক্যাম্পাসের মেইন গেইটের পড়ে গিয়েছিলাম মনে আছে ?

– মনে না থাকলে কি আজকে আবার এক‌ই ভাবে তোমাকে বরণ করে নিতাম ??

পূর্ণতা হাসল । তারপর আবারো বলতে শুরু করলো ,

– ঐদিন এতো রাগ লাগছিল আপনার উপর তা বলে বোঝাতে পারবো না ।

আবরন দাঁত কেলিয়ে বলল ,

– তারপর ?

– রাগের বসে আপনাকে মনে মনে অনেক বকা দিয়েছি । এই জন্য সরি ।

– আচ্ছা , মাফ করলাম ।

– তারপর আপনার ভাষন শুনে সেদিন মনে হয়েছিল আপনি মুখে মুখেই কঠোর , বাস্তবে না । তাই অপেক্ষায় ছিলাম আপনার বাস্তবতা টা দেখার জন্য ।

– তা কি বুঝলে ??

– কে জানতো যে আল্লাহ তায়ালা সেই বাস্তবতাটা আমার সামনে তুলে ধরতে আমাকে দিয়েই আপনার পরীক্ষা টা নেবে !

– হুম ।

– আমার সাথে সেদিন ক্যাম্পাসে যা হয়েছে , যারা আমার সাথে এমনটা করেছে তাদের সবাইকে আপনি শাস্তি দিয়েছেন তা আজ ইশান ভাইয়া না বললে আমি কখনো জানতেই পারতাম না ।

আবরন চুপচাপ পূর্ণতার কথা গুলো শুনছে ।

পূর্ণতা বলছে ,

– আপনি যে ভালোয় ভালো আর খারাপে খারাপ সেটা আজ ভালোই বুঝতে পারছি । আপনি সবাইকে অপরাধের জন্য সমান সাজা ই দেন তা ও বুঝতে পারছি ।

কিন্তু না বোঝার আগে যে আপনাকে মনে মনে অনেক খারাপ ভেবেছি , অনেক বকা ঝকা করেছি সেজন্য আজ নিজেকেই অপরাধী মনে হচ্ছে বাকি সবার মতোই । এর সাজা কি আপনি আমায় দেবেন না মিষ্টার শাহরিদ আহনাফ আবরন ??

বলুন , চুপ করে আছেন কেন ? আমিও তো অপরাধী , আমাকে কি সাজা দেবেন না আপনি ?

আবরন কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল ,

– হুম , সাজা তো তোমাকেও পেতে হবে । কিন্তু সেটা সময় এলে দেব ।

পূর্ণতা বলল ,

– হুম , আপনি আরো একবার প্রমাণ করে দিলেন যে আপনি দুর্বল না , আপনি আপন – পর সবাইকেই সমান চোখে দেখেন ।

আবরন বলল ,

– হুম , কিন্তু সবাইকে কিন্তু সমান ভালোবাসা দিতে পারি না আমি ।

পূর্ণতা বলল ,

– মানে ?

– মানে টা সহজ । আপনজনদের প্রতি ভালোবাসা অন্যরকম আর অন্যদের প্রতি কিছুটা কম তো বটেই । এইদিক থেকে আমি নিষ্ঠুর । সবাইকে ভালোবাসতে পারি না । নাহলে আমার মতো ড্যাশিং হ্যান্ডসাম ছেলের সহস্রাধিক গার্লফ্রেন্ড থাকতো ।

পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল ,

– উফফফ , আপনি আবারো শুরু করেছেন !!

এই বলে পূর্ণতা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো ।

আবরন ওর হাত টেনে ধরে বলল ,

– কোথায় যাচ্ছো ?

– নিচে ।

– কেন ?

– এক্ষুনি সন্ধ্যা হয়ে যাবে ।

– আরেকটু থাকি ?

এই বলে আবরন উঠে দাঁড়ালো ।

পূর্ণতা বলল ,

– সেই কখন এসেছি । সবাই অন্যকিছু ভাববে ।

আবরন বলল ,

– কেউ কিচ্ছু ভাববে না । সবাই জানে !

পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,

– কি জানে বলুন তো !

– এটা যে আমরাও বাকি সবার মতো কাপল ।

– এহহহ , পাগল নাকি ! সেটা তো দুষ্টুমি করে এই কয়দিন আমরা সবাইকে দেখিয়েছি ।

আবরন পূর্ণতার ড্যানা ধরে ওকে কাছে এনে বলল ,

– কেন ? আমরা কি সারা জীবনের জন্য কাপল হতে পারি না ? তোমার এতে আপত্তি আছে কোনো ?

পূর্ণতা মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে আছে । মনে মনে বলছে ,

– আপনি মাঝে মাঝে এমন সব প্রশ্ন করেন আমি উত্তর দিতে ভয় পাই ! কেন , আপনি বোঝেন না আমি কি চাই ? সেটা আবার জিজ্ঞেস করতে হয় ?

আবরন বলল ,

– কি হলো চুপ করে আছো কেন ?? আমি কি তোমার জন্য পারফেক্ট না ?? আমার সাথে তুমি হ্যাপি না ??

পূর্ণতা বলল ,

– আমি কি করে বলবো ? আমরা কি বিয়ে করা স্বামী স্ত্রী নাকি যে আমি আপনার সাথে সুখী নাকি অসুখী সেটা বুঝতে পারবো ??

আবরন হেসে বলল ,

– তারমানে এটা বুঝতে হলে তোমার আগে আমাকে বিয়ে করতে হবে ??

– অবশ্যই ।

আবরন বলল ,

– ঠিক আছে । বিয়ের পরেই নাহয় উত্তর টা দিও ।

এই বলে পূর্ণতা কে ছেড়ে সিড়ির দিকে হাঁটতে লাগল ।

পূর্ণতা বলল ,

– নিজের বিয়ের স্বপ্ন না দেখে আগে আয়মান ভাইয়া আর প্রেনার বিয়ের ব্যবস্থা করুন ।

– সেটাই করতে যাচ্ছি ।

পূর্ণতা বলল ,

– মানে ?? এই দাঁড়ান । আমিও আসছি ।

পূর্ণতা ও দৌড়ে আবরনের পিছু পিছু গিয়ে সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেল ।

আবরন বলল ,

– আইডিয়া এসেছে মাথায় একটা ! 💡

পূর্ণতা বলল ,

– কি সেটা ?

– ভেতরে গিয়ে বলছি । চলো ।

– ওকে ।

আবরন পূর্ণতাকে বলল ,

– আইডিয়াটা হলো ………………………

#চলবে ♥️

বিঃদ্রঃ সরি , সরি ! আজকে একটু দেড়ি হয়ে গেল ।

নেক্সট পার্টে কি হতে যাচ্ছে আমি সেই বিষয়টা নিয়ে নিজেই খুব ইন্টারেস্টেড !! 🌝

আপনাদের কি মনে হয় , আবরন কি বুদ্ধি বের করেছে ?? কমেন্টে জানাতে যাবেন না , মনে মনেই ভেবে রাখুন , যদি আবরনের ভাবনার সাথে মিলে যায় তাহলেই কালকের পর্বে তা কমেন্ট করে জানাবেন । 🤭😛

গল্পের ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । ধন্যবাদ । ♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here