ভালোবাসি_বলেই_তো পর্ব – ৪০

0
750

#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৪০

পূর্ণতা কিছু না বলেই আবরনকে হুট করে জড়িয়ে ধরে নিজ থেকেই মাথাটা আবরনের বুকে চেপে ওকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল । পূর্ণতার এমন আচরনে আবরন কি করবে বা কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না ।
পূর্ণতা আবরনকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে বলল ,

– আমার কিছু ভালো লাগছে না ! আমি পারছি না নিজেকে মানিয়ে নিতে ! প্লিজ , আমাকে এমন জায়গায় নিয়ে চলুন যেখানে গেলে আমার সব দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যাবে । যেখানে গেলে আমার মনে বিরুদ্ধে আমাকে কিছু করতে কেউ বাধ্য করবে না । যেখানে গেলে আমি যা চাইবো তা ই পেয়ে যাবো । প্লিজ , আমাকে এমন জায়গায় নিয়ে চলুন । প্লিজ ।

পূর্ণতা হাউমাউ করে কাদছে আবরনকে জড়িয়ে ধরে । আবরন বুঝতে পারছে পূর্ণতার কেন এত কষ্ট হচ্ছে কিন্তু তবুও ওকে জিজ্ঞেস করল ,

– পাগলামি করছো কেন পূর্ণ ? কি হয়েছে বলো আমাকে ?

পূর্ণতা আবরনের বুক থেকে মাথা তুলে আবরনের দিকে মাথা উচু করে তাকিয়ে ওর গাল দুই হাত দিয়ে ধরে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলল ,

– আপনি না আমার মনে কথা বুঝতে পারেন ? আপনি তো নিজেই বলেছিলেন যে আপনি শুধু আমার মনের কথাই বুঝতে পারেন ! তাহলে আজ কেন পারছেন না !

আবরন পূর্ণতার হাত দুটো ধরে বলল ,

– আমি জানি না তুমি কি চাও বা কি করলে তুমি খুশি হবে ।

পূর্ণতা ছল ছল চোখে মায়া ভরে আবরনের দিকে তাকিয়ে র‌ইল ।

আবরন ওর দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছে ,

– তুমি এভাবে তাকালে আমি দুর্বল হয়ে যাই পূর্ণ । প্লিজ , এমন করো না , প্লিজ ।

পূর্ণতা আবরনের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে চোখ মুছে বলল ,

– আপনি চলে যান । কেন এসেছেন আপনি ?

আবরন বলল ,

– বাবা আর আম্মু আমার সাথে জলের বিয়ে ঠিক করেছে । কিন্তু এ বিষয়ে জল ও নিউট্রাল আর আমিও নিউট্রাল । আমাদের মাঝে এ বিষয়টা নিয়ে কোনো ফিলিংস ই কাজ করছে না ।

পূর্ণতা আরেকদিকে তাকিয়ে গড়িয়ে পড়া চোখের পানি টা মুছে বলল ,

– খুশির বিষয় তো ! আপনার বিয়ে আর আমার বিয়ে এক‌ই দিনে কিন্তু দুটো আলাদা মানুষের সাথে যাদের আমরা মন থেকে কখনো ভেবেই দেখিনি ।

আবরন বলল ,

– তুমি কি এই বিয়েতে খুশি ন‌ও !

– আরে আমার খুশিতে কার কি যায় আসে ? আমি তো ননির পুতুল মাত্র ,, যেভাবে বলবে তাই করতে হবে !

আবরন পূর্ণতার দিকে এগিয়ে এসে ওর গালে হাত রেখে বলল ,

– প্লিজ , এভাবে কেদো না । তুমি মত না দিলে তো আর আঙ্কেল তোমার বিয়েটা পাকা করতো না তাই না ? তুমি ই মত দিয়েছো ।

– হ্যা , আমি মত দিয়েছি । আচ্ছা , আপনি ও কি মত দিয়েছেন জল আপুর সাথে বিয়েতে ?

আবরন মাথা নেড়ে বলল ,

– না ।

– আর জল আপু ??

– না ।

– কেন ?

– সেটা তো আমার ও প্রশ্ন !

পূর্ণতা বলল ,

– আপনি যান । আমার আপনাকে দেখতে ইচ্ছে করছে না !

আবরন মনে মনে বলল ,

-প্লিজ , এভাবে বলো না । আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে ।

পূর্ণতা রাগ দেখিয়ে কাদতে কাদতে বলল ,

– দাঁড়িয়ে আছেন কেন ?? চলে যান । আমি আপনাকে কেন যেন সহ্য করতে পারছি না ।

আবরন পূর্ণতাকে জড়িয়ে নিয়ে বলল ,

– শশশশ ! এত জোরে কেউ চিৎকার করে ।

পূর্ণতা আবরনের টি শার্ট খামচি দিয়ে ধরে আবারো জোরে জোরে কেদে উঠল ।

আবরন বলল ,

– রিল্যাক্স ! উঠো , গাড়িতে উঠো ।

পূর্ণতা কোনো কথা না বলে গাড়িতে উঠে বসলো । আবরন ওর পাশে উঠে বসে গাড়ির ডোর টা অফ করে পূর্ণতা কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিজেও ওর দিকে ঘুরে বসে বলল,

– এখন তোমার আমাকে যা বলতে ইচ্ছে করে বলো !

পূর্ণতা বলল ,

– আমার সায়ন ভাইয়ার সাথে আর ১৫ দিন পর বিয়ে । আপনি কি মনে করেন সায়ন ভাইয়া আমাকে খুশি রাখতে পারবে ?

আবরন বলল ,

– উহু ।

– তাহলে কেন এই বিয়েটা হতে দিতে চাইছেন ?

– কারন তুমি নিজে এই বিয়েতে মত দিয়েছো । আর সায়ন ও তোমাকে ভালোবাসে । আমি কি করে পারি আরেকজনের ভালোবাসা কে কেড়ে নিতে ? আর তুমি সায়ন কে বিয়ে না করে কাকে বিয়ে করতে চাইছো ?

পূর্ণতা কান্না করতে করতেই আবরনের দিকে ঝুকে বলল ,

– আপনি এখনো বুঝতে পারছেন না আমি কি চাই ??

আবরন বলল ,

– না ।

পূর্ণতা চোখ মুছে আবরনের একদম কাছে গিয়ে বলল ,

– আপনি সত্যি ই বুঝতে পারছেন না ?

আবরন ওর চোখে চোখ রেখে মিথ্যা বলতে পারবে না তাই চোখ নিচে নামিয়ে মাথা নেড়ে বলল ,

– না , আমি বুঝতে পারছি না ।

পূর্ণতা আবরনের কপালের সাথে কপাল লাগিয়ে বলল ,

– এখন আমার কথার কোনো দাম নেই । এসব বলে আর লাভ নেই । আপনি অনেক ভালো থাকবেন । অনেক ভালো থাকবেন । আর একটা কথা , আমার সবসময় মনে হয়েছে দুনিয়ায় ফ্যামিলির পর বোধয় আমি আপনার সাথেই সবচেয়ে সুখের সময় কাটিয়েছি , সবচেয়ে ভালো সময় কাটিয়েছি । আমার বিয়ের পর প্লিজ আমার সাথে যেন আর আপনার দেখা না হয় সেই চেষ্টা করবেন । প্লিজ ।

আবরন বলল ,

– হুম ।

পূর্ণতা আবরনের ছোট্ট উত্তর শুনে ওকে কিল ঘুষি মেরে হেচকি তুলতে তুলতে বাচ্চাদের মতো কাদতে শুরু করলো ।

– তুমি পাগল হয়ে গিয়েছো পূর্ণতা !

– হ্যা , আমি পাগল হয়ে গিয়েছি । পাগল হয়ে গিয়েছি আমি ।

আবরন ও ওর আচরনে না কেদে পারল না । এই প্রথম ও কাদল ।

– তুমি এমন কেন করছো ?? কেন ??
বিয়েটা মেনে নিতে পারছো না কেন ? কাউকে ভালোবাসো ? তা ও তো বাসো না , তাহলে কেন ?

পূর্ণতার মন চাইছে আজ আবরনকে সত্যিটা বলে দিতে কারন হয়তো আবরন চাইছে পূর্ণতা আগে সত্যিটা নিজের মুখে স্বীকার করুক , তারপর নাহয় বিয়েটা যেন না হয় সেই ব্যবস্থা করবে । নিজেকে আর সামলাতে না পেরে আবরনের টিশার্ট এর গলা টেনে ধরে পূর্ণতা বলল ,

– আমি আপনার সাথে থাকতে চাই আবরন । আমি আপনার সাথে থাকতে চাই । সারাটা জীবন আপনার হাতে হাত রেখে চলতে চাই । আমার মনে হয়েছে আপনি ছেলে হিসেবে একদম পারফেক্ট
শুধু মাত্র আমার‌ই জন্য । আমার জীবনের প্রতিটা মূহুর্তে আমার আপনাকে পাশে চাই । আপনি বুঝতে পারছেন , আমি কি বলছি ? শুনতে পাচ্ছেন আমার কথা ?? বলুন না , চুপ করে আছেন কেন !! বলুন ।

আবরন বলল ,

– আমাকে যেতে হবে , আমি তোমাকে সব বুঝিয়ে বলবো পরে । তুমি শুধু বিয়ের দিনটা পর্যন্ত অপেক্ষা করো । প্লিজ ।

পূর্ণতা বলল ,

– না , আপনি আমাকে আগে বলুন আপনি ও আমাকে আমার মতো করেই চান কিনা !! বলুন ……

আবরন চোখের সামনে কিছু না বলে ওকে গাড়ি থেকে নামিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেল ।

পূর্ণতা জোরে চিৎকার করে সেখানে বসে পড়ল ।

আজানের ধ্বনি ভেসে আসছে । পূর্ণতা আজানের ধ্বনি শুনেই ঘুম থেকে হুড়মুড় করে জেগে উঠল । ওর শরীর পুরো ঘামে ভিজে একাকার হয়ে গিয়েছে । বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে এসে আবার বিছানায় বসে ভাবতে শুরু করল ,

– এটা স্বপ্ন ছিল ! আমি যদি উনাকে সত্য সত্য মনের কথা খুলে বলি তাহলে কি উনি সত্যি ই আমাকে বলবে বিয়ের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে !
শুনেছি , ভোরের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয় !

আমার কি করা উচিত এখন ?

উঠেছি ই যখন নামাজটা পরে ফেলি । আল্লাহ প্লিজ আমাকে সাহস দাও যেন আমি উনাকে সত্যিটা বলতে পারি ।

এই বলে ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ওযু টা সেড়ে নামাজে দাঁড়িয়ে গেল পূর্ণতা ।

…………………………………………………

সকাল সকাল আবরন আর জল এসে হাজির হয়েছে পূর্ণতাদের বাসায় ।

– আন্টি , জিব্রান ভাইয়া কোথায় ?

– এখনো ঘুমাচ্ছে ।

– বিয়ে বলে কথা ! কোথায় শপিং এর জন্য বের হবো সবাই তা না , ভাইয়া ঘুমাচ্ছে !

জল বলল ,

– পূর্ণতা ও কি ঘুমাচ্ছে আন্টি ?

– না , ওকে দেখলাম পড়তে বসেছে সকালে উঠে ।

মিলি রহমান বললেন ,

– তোমরা যাও ভেতরে ওদের কাছে ।

আবরন আর জল ভেতরে ঢুকল । আবরন বলল ,

– আমি ভাইয়ার কাছে যাচ্ছি , তুমি পূর্ণতার সাথে গিয়ে কথা বলো ।

জল বলল ,

– একটা কথা ছিল ! এখন না বললে পরে ভুলে যাবো ।

আবরন বলল ,

– বলো !

– সায়ন ভাইয়ার সাথে পূর্ণতার বিয়ে ঠিক হয়েছে ?

আবরন মুখে মলিন হাসি দিয়ে বলল ,

– হুম ।

– তাহলে তোমার কি হবে ?

– আমার আর কি হবে ? আমি ও বিয়ে করে নেব !

– কাকে ?

– তোমাকে !

জল চোখ বড় করে বলল ,

– আর ইউ সিরিয়াস ?

আবরন বলল ,

– কেন , আমাকে না তুমি ভালোবাসো ? সমস্যা কোথায় ?

– তুমি পূর্ণতা কে ভালোবাসো বলেই তো আমি তোমাকে ছেড়ে এখন অন্য কারো উপর চোখ তুলে তাকিয়ে ক্রাশ খেয়েছি ।

– আমি জানি ।

– সিরিয়াসলি ? কিভাবে জানলে তুমি ?

আবরন বলল ,

– আমার ১০০ টা চোখ । আমি দেখেছি ।

– বিষয়টা কি ঘুরানো যায়না ?

আবরন হেসে বলল ,

– তোমার ভাগ্যটাই খারাপ জল । প্রথমত পূর্ণতা কে আমি ভালোবেসে তোমাকে ফিরিয়ে দিয়েছি । এখন আবার সেই পূর্ণতার সাথেই তোমার ……..

জল বলল,

– আচ্ছা , আর কাটা ঘাঁ এ নুনের ছিটা দিও না । তুমি যাও ।

– ওকে ।

আবরন জিব্রানের রুমে চলে গেল ।

জল পূর্ণতার রুমের সামনে যেতেই কারো সাথে স্বজোরে কপালে বারি খেল।

– আউউউচ !!

– আহহহহ !!

জল কপালে হাত দিয়ে ডলতে ডলতে সামনে তাকাতেই লেখল সায়ন ও এক‌ই ভাবে নিজের কপাল ডলছে । জল বলল ,

– সরি , সরি । এক্সট্রিমলি সরি !

সায়ন জলের গলা শুনে সামনে তাকিয়ে বলল ,

– ও , তুমি । ইটস ওকে । তুমিও তো ব্যথা পেয়েছো !

পূর্ণতা টেবিল থেকে উঠে সামনে এগিয়ে দেখল জল এসেছে ।

– ও তুমি ! এসো আপু ।

জল সায়নকে বলল ,

– ব্যথা তো পেয়েছি , কিন্তু নো প্রবলেম । বাই দ্য ওয়ে , পরে কথা হচ্ছে ।

তারপর পূর্ণতা কে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– হু , আমি । পড়া শেষ ?

সায়ন চলে যেতেই জল পূর্ণতার রুমে ঢুকে বসল ।

পূর্ণতা টেবিলের ব‌ই খাতা গুছাতে গুছাতে বলল ,

– হুম , পড়া শেষ । তুমি একা এসেছো ?

জল বলল ,

– না , আবরন এসেছে তো ।

– ওহ ।

– পূর্ণতা !

– হু ।

– একটা কথা বলি ??

– বলো ।

– তুমি কি সায়ন ভাইয়ার সাথে এই বিয়েতে মন থেকে মত দিয়েছো ?

পূর্ণতা মলিন হাসি দিয়ে বলল ,

– হু ।

– এখনো কিন্তু সময় আছে !

– কিসের সময় ?

– কিছু না ।

– হুম ।

পূর্ণতা রুম গুছিয়ে বলল ,

– চলো , ভাইয়ার রুমে যাই ।

– চলো ।

পূর্ণতা আর জল জিব্রানের রুমের সামনে গিয়ে দেখল জিব্রানকে আবরন আর সায়ন মিলে রেডি করছে ।

পূর্ণতা ভ্রু কুচকে জলের দিকে তাকিয়ে বলল ,

– কি হচ্ছে এখানে !

জল হেসে বলল ,

– জিব্রান ভাইয়ার বিয়ের শপিং করতে যাবো আজ !

এর‌ই মধ্যে পেছন থেকে আফতাব উজ্জামান এর গলা শোনা গেল ।

– পূর্ণতা , মা এদিকে আয় তো !

পূর্ণতা বাবার গলা শুনে সেদিকে গিয়ে বলল ,

– হু , বাবা । বলো ।

– তোর বিয়ের চেয়ে দেখছি জিব্রানের বিয়ে নিয়ে সবাই বেশি ব্যস্ততা দেখাচ্ছে । তোর আবার মন খারাপ না তো ?

পূর্ণতা বলল ,

– না , মন খারাপের কি আছে ? ভাইয়া নাকি আজকে শপিং করতে বের হবে । কোনো কিছুর যেন কমতি না হয় ভাইয়া আর ভাবীর বিয়েতে । তাহলে কিন্তু আমি বিয়ে করবো না ।

আফতাব উজ্জামান হেসে পূর্ণতার মাথায় হাত রেখে বলল ,

– কোনো কিছুর কমতি হবে না মা । তোর বিয়েতে ও না আর তোর ভাইয়ের বিয়েতেও না । আমার একটা মাত্র ছেলে আর একটা মাত্র মেয়ে বলে কথা !

পূর্ণতা হাসল ।

মিলি রহমান বললেন ,

– এই , তোদের সাজুগুজু হলে নাস্তা করতে আয় ।

সায়ন ঐ রুম থেকে চিল্লিয়ে বলল,

– আসছি ।

মিলি রহমান বললেন ,

– তোরা ভাইরা ভাইরা যে কি করিস না !! বিয়ে আরো ১৪ দিন পর আর তোরা এখন‌ই জিব্রানকে রেডি করাচ্ছিস !

আফতাব উজ্জামান বললেন ,

– তিনটার বিয়ে তো এক‌ই দিনে । তাই খুশির ঠেলায় বাঁচে না ।

তিনজন এক এক করে ড্যাশিং লুক নিয়ে রুম থেকে লাইন দিয়ে বেরিয়ে এসে টেবিলে খেতে বসে পড়ল । আফতাব উজ্জামান ও ওদের সাথে বসল ।

অন্য পাশে জল আর পূর্ণতা বসল ।

………………………………………………..

সকাল ১১ টা ,

যমুনা ফিউচার পার্কের পার্কিং লর্ডে গাড়ি পার্ক করে একে একে সবাই নেমে দাঁড়ালো । শপিং করতে এসেছে আবরন , জিব্রান , সায়ন , জল ,পূর্ণতা আর নাদিরা ।

সবাই একসাথে লিফটে উঠে উপরে গেল ।

সবাই একসাথে মিলে পাঞ্জাবীর দোকানের সারিতে ঢুকল ।

জিব্রান বলল ,

– ফাহিম , তাসিন আর আয়মান কে সাথে আনা উচিত ছিল ।

আবরন বলল ,

– কেন ?

– একসাথে সবার পাঞ্জাবি কিনে নিতাম !

– ওরা তো বিয়ে করবে না । বিয়ে তো আমরা করবো ।

– আরে , বিয়েতে ওরা কি পড়বে তাহলে ?

আবরন দাঁত কেলিয়ে বলল ,

– ওদের পাঞ্জাবি না হলেও চলবে । শুধু সেন্টু গেঞ্জি আর একটা করে আন্ডার‌ওয়ার কিনে প্যাকেট করে হাতে ধরিয়ে দেব ।

আবরনের কথা শুনে সবাই হু হা করে হেসে উঠল ।

জল বলল ,

– আর আমরা মেয়েরা কি পড়বো ?

সায়ন বলল ,

– মেয়েদের মধ্যে তো তোমার , পূর্ণতার আর নাদিরা ভাবীর বিয়ে ই । বিয়েতে তো বিয়ের পোশাক ই পড়বে । আর যারা বাদ বাকি তাদের এক‌ই রং এর শাড়ি বা এক‌ই রকম লেহেঙ্গা দেওয়া যায়।

নাদিরা বলল ,

– বেষ্ট আইডিয়া । এখন চলো দেড়ি করে লাভ নেই ।

সবাই একের পর এক পাঞ্জাবীর দোকানে ঢুকে সবার জন‍্য পাঞ্জাবী পছন্দ করছে ।

পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে চিন্তা করছে ওকে সুযোগ বুঝে সত্যি কথা টা কি বলবে নাকি বলবে না !

পূর্ণতার ভাবনার মাঝেই আবরন আর সায়ন একসাথে পাঞ্জাবি হাতে নিয়ে পূর্ণতার কাছে এগিয়ে এসে বলল ,

– এটা কেমন ?

পূর্ণতা দুজনের দিকেই তাকালো । ওর মাথা ঘুরছে ।

– এ কোন দোটানায় পড়লাম !

সায়ন আবরনকে বলল ,

– জলকে জিজ্ঞেস করো তুমি !

আবরন সায়নকে মনে মনে গালি দিতে দিতে জলের কাছে গেল । আবরন চলে যেতেই সায়ন পূর্ণতা কে আবারো বলল ,

– এখন বলো , এটা কেমন ?

পূর্ণতা ছোট্ট করে বলল ,
– ভালো ।

আবরন জলের কাছে গিয়ে বলল ,

– দেখোতো এটা কেমন ?

জল বলল ,

– ভালোই । খারাপ না ।

পূর্ণতার দিকে আবরন আড় চোখে তাকাতেই পূর্ণতা আবরনকে মাথা নেড়ে ইশারা করে বলল ,

– ভালো না ।

আবরন এক গাল হেসে হাতের পাঞ্জাবি টা রেখে দিল ।

আবরন মনে মনে ভাবছে ,

– বিয়েটা তো তোমার সাথে আমার‌ই হবে ! যেভাবেই হোক , so সব আজ তোমার পছন্দ‌তেই কিনবো । বেটা সায়ন মাঝখানে প্যারা ! কিন্তু আমি তোমার পছন্দেই কিনব ।

পূর্ণতা মনে মনে ভাবছে ,

– আমি কি সত্যিটা উনাকে বলে দিব নাকি বিয়ের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবো ! হতে পারে আজকের দেখা স্বপ্নটাতে আল্লাহ আমাকে হিন্ট দিয়েছে । কি করা উচিত আমার ??

#চলবে ♥️

বিঃদ্রঃ গত পর্ব পড়ে সবাই খুশি হয়েছেন তাই আমি ও খুশি । কিন্তু খুব এক্সাইটেড লাগছে এই ভেবে যে আবরন কি করে বিয়েটা ক্যান্সেল করবে !

গল্পের ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । ধন্যবাদ । ♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here