ভালোবাসি_বলেই_তো পর্ব – ৪১

0
870

#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৪১

মেডিক্যালের প্রথম বর্ষের মেডিসিন বিভাগের একটা ক্লাস রুমে বাকি স্টুডেন্টস দের সাথে বসে প্রেনা আর পূর্ণতা ও বরাবরের মতো ক্লাস করছে ।

ক্লাস চলাকালীন সময়ে রুমে একদল স্টুডেন্টস এসে দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে ক্লাসে উপস্থিত প্রফসরের পার্মিশন চেয়ে ভেতরে প্রবেশ করল । সবার মাঝখান থেকে আবরন সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করল ,

– গুড মর্নিং !

সবাই একসাথে বলে উঠল ,

– মর্নিং !

পূর্ণতা আর প্রেনা ভালো করে শুনতে চেষ্টা করছে যে আবরন দলবল নিয়ে কি বলতে হাজির হয়েছে ।

আবরন বলল ,

– তোমাদের তো সামনে একটা এক্সাম আছে তাই না ?

সবাই বলল ,

– হ্যা ।

– তো এক্সামটা হচ্ছে দুটো বিষয়ের উপর । পর পর দুইদিন এক্সামের ডেট সেট করা হয়েছে । সেটা হচ্ছে আগামী মঙ্গল ও বুধবার ।
আজ হচ্ছে বৃহস্পতিবার । অর্থাৎ মাঝে আর ৪ দিন বাকি । আই হোপ সবার প্রিপারেশন ভালো । এবং সবাই খুব ভালো ভাবে এক্সাম দেবে ।
কিন্তু যেটা বলতে এসেছি সেটা হলো এক্সামে যারা 92% মার্কস পাবে তাদের মধ্যে থেকে ১০ জন কে বাছাই করে একটা কুইজ এক্সামে অংশগ্ৰহণের ব‍্যবস্থা করা হয়েছে । এবং কুইজ এ জেনারেল নলেজের বিষয়ের উপর‌ই প্রশ্ন থাকবে । so , সবাই সেভাবেই প্রিপারেশন নিবে । এক্সামের একদিন পর কুইজ এক্সামের জন্য আলাদাভাবে ১০ জনকে বাছাই করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা নির্দিষ্ট ডিপার্টমেন্ট এ নিয়ে যাওয়া হবে । সেখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে ১০ জন করে উপস্থিত থাকবে । so , গত বছর এই কুইজ প্রতিযোগিতায় আমাদের স্থান ২য় ছিল কিন্তু এবছর ১ম হ‌ওয়া চাই । Understand ?

সবাই একসাথে বলে উঠল ,

– ইয়েস !

– ওকে , so কান্টিনিউ দ্য ক্লাস ।

পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে মনোযোগ দিয়ে কথা শুনছিল । আবরন পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল ,

-মিস . জামান । আপনি কি বুঝতে পেরেছেন ?

পূর্ণতা দাঁড়িয়ে বলল ,

– ইয়েস ।

– আপনার উচিত ফার্স্ট বেঞ্চের মিডেল রো তে বসা , তাহলে আপনি পড়া ভালোভাবে বুঝতে পারবেন ।

পূর্ণতা একবার আশেপাশের সবার দিকে তাকিয়ে দেখে তারপর আবরনের দিকে তাকিয়ে বলল ,

– ওকে , I’ll try ..

আবরন সকলের দৃষ্টি এড়িয়ে পূর্ণতা কে চোখ মেরে ঠোঁটে বাঁকা হাসি দিয়ে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে যেতে যেতে বলল ,

– বায় গাইজ ।

সব মেয়েরা মনে লাড্ডু ফুটাতে ফুটাতে একসাথে বলল ,

– বায়য়য় !!

পূর্ণতা সবার উদ্দেশ্য মনে মনে গালি দিয়ে ক্লাসের দিকে মনোযোগ দিল । প্রেনা দাঁত কেলিয়ে বলল ,

– ভাইয়া যে কি করে আর কি করে না আমরা আপনজন ছাড়া বোধয় কেউ জানে ই না ।

পূর্ণতা দাঁতে দাঁত চেপে বলল ,

– রাখ তোর ভাই ।

ক্লাস শেষ করে করিডোর দিয়ে হেঁটে হেঁটে পূর্ণতা আর প্রেনা লাইব্রেরির দিকে যাচ্ছিল । কারন সাধারণ জ্ঞানের কিছু ব‌ই কালেক্ট করে সেগুলো পড়তে হবে । ১-১০ এর মধ্যে তো থাকতেই হবে আর সেই সাথে কুইজ প্রতিযোগিতায় ও ১ম পুরষ্কার আনতেই হবে ।

করিডোর থেকে বের হয়ে মাঠে পা রাখতেই দেখল ক্যাম্পাসে উপস্থিত বাকি সবাই ওদের বিপরীত দিকে দৌড়ে যাচ্ছে ।

পূর্ণতা আর প্রেনা ভ্রু কুচকে পেছনের দিকে ঘুরতেই দেখল সবাই বটতলার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । বিশেষ করে মেয়েরা সব সেদিকে ভিড় জমাচ্ছে ।

প্রেনা বলল ,

– আয়মানকে কল দিয়ে দেখি তো বিষয়টা কি ?

পূর্ণতা বলল ,

– হুম দেখ । এখান থেকে তো দেখাও যাচ্ছে না ।

প্রেনা আয়মানকে কল করতেই বিষয়টা জেনে পূর্ণতা কে বলল ,

– চল চল । আমরাও যাই ।

পূর্ণতা বলল ,

– কি আশ্চর্য ! কি হয়েছে না বলেই হুট করে নিয়ে যাচ্ছিস ।

– আরে আরে চল । গেলেই দেখবি । ভাগ্যিস এখন শুধু প্রথম বর্ষ আর ২য় বর্ষের বিরতি চলছে । বাকি সবার ক্লাস চলছে নাহলে তো পুরো ক্যাম্পাসেই ভিড় লেগে যেত । চল চল ।

এই বলে প্রেনা পূর্ণতা কে টেনে সেদিকে নিয়ে গেল ।

পূর্ণতা প্রেনাকে কিছু বলেই থামাতে পারলো না , অবশেষে বাধ্য হয়েই ওর সাথে গিয়ে ভিড় ঠেলে সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই দেখল সেখানে ফাহিম , তাসিন , আয়মান আর আবরন । আয়মানের হাতে গিটার । সবাই বটতলায় বসে মূলত গান গাইতে গাইতে আড্ডা দিচ্ছিল কিন্তু ক্যাম্পাসে উপস্থিত মেয়েরা গান শুনতে এখানে এসে ভিড় জমিয়েছে ।

ভিড়ের মাঝে পূর্ণতা কে দেখে আবরন ওর দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে তারপর আয়মানকে বলল ,

– কোনো রোমান্টিক গান গাওয়ার দরকার নেই । দেখ , তোর ব‌উ হাজির ।

আয়মান সামনে তাকিয়ে দেখল ভিড়ের মাঝে প্রেনা ও আছে ।

আয়মান প্রেনার দিকে তাকাতেই প্রেনা ও হাসি দিয়ে আয়মানের দিকে তাকালো । ফাহিম বলল ,

– আয়মান এখন প্রেনার দিকে তাকিয়ে রোমান্টিক গান গাইতে শুরু করবে এর চেয়ে বেটার হবে গানটা বরং তুই ই গা আবরন ।

আবরন হেসে বলল ,

– না , গানটা পূর্ণতা কে গিয়ে গাইতে বল । আমি বললে শুনবে না । তোরা গিয়ে রিকোয়েস্ট করে এদিকে নিয়ে আয় ।

তাসিন বলল ,

– ওকে । তা-ই করি ।

ফাহিম আর তাসিন বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল ,

– সবার এখানে এসে ভিড় করাটা মোটেও ঠিক হয় নি । আমরা জাষ্ট এমনিতেই আড্ডা দিচ্ছিলাম । কিন্তু ভিড় যখন করেই ফেলেছেন তো আপনারা সবাই যদি নিজেরা নিজেরা কথা বলা বন্ধ করে এদিকে কনসেন্ট্র‌ইট করেন তাহলে আমরা বিষয়টা কান্টিনিউ করবো । আর তা নাহলে আমরা চলে যাবো , আপনারা ই থাকবেন এখানে । so , কথা বন্ধ করুন ।

সবাই নিশ্চুপ হয়ে গেল । সবাই নিশ্চুপ হতেই ফাহিম আর তাসিন বলল ,

– আপনাদের মধ্য থেকে এখানে যেকোন একজন বসে গান গাইতে সুযোগ দেয়া হবে । so , কে কে গান গাইতে চান হাত তুলুন , আমরা যেকোনো একজনকে বাছাই করবো ।

পূর্ণতা দেখল কোনো হৈচৈ নেই । সবাই নিশ্চুপ । তারমানে কি কেউ গান গাইতে রাজি না !

বিষয়টা বুঝতে পূর্ণতা আশেপাশে , পেছনে তাকিয়ে দেখল সবাই ই হাত তুলেছে । এমনকি ওর পাশে দাঁড়িয়ে প্রেনাও হাত তুলেছে অথচ পূর্ণতার কোনো খবর‌ই নেই ।

আবরন পেছন থেকে আস্তে করে ফাহিমকে বলল ,

– কি করছিস তোরা ? সবাই ই তো গান গাইতে চাইছে !

ফাহিম হেসে বলল,

– সবাই ই গান গাইতে চাইছে কিন্তু পূর্ণতা তুমি গান না গাইতে চাওয়ার কারনটা কি ?

পূর্ণতা ফাহিমের প্রশ্ন শুনে ভরকে গেল । ও কি উত্তর দিবে ভেবে পাচ্ছে না । তাসিন বলল ,

– ওকে , কুল ! তোমাকে কিছু বলতে হবে না পূর্ণতা ! গানটা বরং তুমি ই গাও ।

সবাই হাত নিচে নামিয়ে নিল কিন্তু নিঃশব্দে ।

পূর্ণতা বলল ,

– ভাইয়া আমি কেন ? আমি তো হাত তুলি নি !

হঠাৎ পেছন থেকে জলের গলা শোনা গেল । জল পূর্ণতা কে বলল ,

– তুমি হাত তুলোনি বলেই তো তোমাকে গান গাইতে বলছে । কারন , কথা ই তো ছিল যেকোনো একজন কে গান গাওয়ার সুযোগ দেয়া হবে । সবাই হাত তুলেছে । এখন কাকে ফেলে কাকে ডিসাইড করবে তাই তোমাকেই বেছে নিল ।

পূর্ণতা বলল ,

– কিন্তু !

আয়মান বলল ,

– কোনো কিন্তু না । তুমি এসো !

পূর্ণতা আবরনের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে দেখল আবরন এদিকেই তাকিয়ে আছে ।

প্রেনা পূর্ণতা কে বলল ,

– আরে যা । সবাই অপেক্ষা করছে তো!

বাধ্য হয়ে পূর্ণতা ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে সেখানে বসলো । আয়মান আবরনের দিকে গিটার এগিয়ে দিয়ে বলল ,

– তুই ই বাজা । আমি সব গানের সুর তুলতে পারি না ।

আবরন গিটারটা হাতে নিয়ে পূর্ণতা কে বলল ,

– কোন গান গাইতে চাও ?

পূর্ণতা বলল ,

– আমি তো বাংলা গান পারি না ।

ফাহিম বলল ,

– আরো বোকা মেয়ে , কোনো ব্যাপার না । আমরাও তো এতক্ষন হিন্দি গান গেয়েছি ।

পূর্ণতা মলিন হাসি দিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখল সবাই অপেক্ষা করছে গান শুনবে বলে ।

আবরন বলল ,

– বলো , কোন গান ?

পূর্ণতা একটু ভেবে বলল ,

– teri ban jayungi .

আবরন মুচকি হেসে বলল ,

– নাইস চয়েস । আমার এটার টিউনটা জানা আছে । লেটস স্টার্ট !

আবরন আঙ্গুল দিয়ে ১ , ২ , ৩ ইশারা করতেই পূর্ণতা চোখ বন্ধ করে আবরনের গিটারের টিউন শুনতে লাগল তারপর টিউনের সাথে মিলিয়ে গাইতে শুরু করল ,

Meri Rahe
Tere Tak Hain,
Tujhpe Hi Toh Mera Hakk Hai,
Ishq Mera Tu Beshak Hai,
Tujhpe Hi Toh Mera Hakk Hai .

Saath Chorungi Naa, Tere Pichhe Aaungi ,
Chheen Lungi Ya Khuda Se Maang Laaungi,
Tere Naal Taqkdeeran Likhvaungi,
Mai
Teri Ban Jaungi,
Mai Teri Ban Jaungi .

Sau Teri Mai Qasam Yahi Khaungi,
Keetay Vaadeyan Nu Umraan Nibhaungi,
Tujhe Har Vaari Apna Banaungi,
Main Teri Ban Jaaungi .

এইটুক গেয়ে থেমে পূর্ণতা চোখ খুলে তাকালো ।

তাকাতেই দেখল সবাই জোরে হাত তালি দিচ্ছে । পাল থেকে ফাহিম , তাসিন আর আয়মান ও হাত তালি দিয়ে বলল ,

– অনেক সুন্দর একটা গান । আর গানের গলা সুন্দর বলেই গান শুনতে ভালো লেগেছে ।

পূর্ণতা ওদের কথা শুনে খুশি হলো ‌ ।

ডান পাশ থেকে আবরন‌ও হাত তালি দিতে দিতে বলল ,

– মিস জামান ! গান ভালোই গাইতে পারেন । আমার মতে গানের পাশাপাশি আপনার এখন কারাতি প্রাকটিস এ যাওয়াটা ও জরুরি । সেলফ ডিফেন্স ইজ ঠু মাচ ইমপরটেন্ট ফর গার্লস ।

আবরনের কথা শুনেই পূর্ণতার মনে পড়ল ,

– আসলেই তো ! কাল আমার কারাতি ক্লাস আছে । অনেক দিন তো নানা সমস্যার কারনে যাই নি । কাল তো যেতে হবে ।

……………………………………………….

আবরন পূর্ণতা কে বাসায় ড্রপ করে দিবে বলে ওকে নিয়ে গাড়িতে করে র‌ওনা হলো আজিমপুরের দিকে ।

আবরন ড্রাইভিং করছে , মুখে একটা টু শব্দ‌ও করছে না । পূর্ণতার এই জন্য ভালো লাগছে না । পূর্ণতা মনে মনে ভাবছে ,

– আমি কি উনাকে আমার মনের কথা টা বলে দেব ??
না , থাক । বিয়ের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করি । হয়তো এ ছাড়া আর কিছু করতে গেলে হিতে বিপরীত ঘটবে । রিস্ক নিয়ে লাভ নেই ।

ভাবনা বাদ দিয়ে পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে একটা মলিন হাসি দিয়ে বাহিরে তাকালো ।

আবরন বলল ,

– আমাকে কি আজকে একটু বেশি ড্যাশিং লাগছে ?

হঠাৎ আবরনের এমন প্রশ্ন শুনে পূর্ণতা অবাক হয়ে ভ্রু কুচকে আবরনের দিকে তাকালো ।

আবরন ওর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে আবার ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিয়ে বলল ,

– বলো !

পূর্ণতা বলল ,

– আপনাকে আবার কোনদিন দেখতে খারাপ লাগে !

পূর্ণতার কথা শুনে আবরন গাড়িটা হুট করে একসাইডে থামিয়ে দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বলল ,

– সিরিয়াসলি ? তুমি বলছো এ কথা ? তা ও আমাকে ?

পূর্ণতা বলল ,

– গাড়িতে আপনি আর আমি ছাড়া আর কেউ আছে নাকি ?

আবরন গাড়ির ইঞ্জিনটা অফ করে পূর্ণতার দিকে ফিরে বসে বলল ,

– ঘটনা কি বলো তো ?

পূর্ণতা বলল ,

– ঘটনা কিছুই না , আপনি চলুন ।

আবরন দাঁত কেলিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল ,

– বিয়ের ১৩ দিন আগে আবার ক্রাশ খেয়ে বসলে নাকি আমার উপর ?

পূর্ণতা আবরনের দিকে আবরনের মতোই ঘুরে বসে ওর দিকে তাকিয়ে বলল ,

– আমার কি আপনাকে বাকি সবার মতো ছেচড়া মেয়ে বলে মনে হয় ?

আবরন বলল ,

– না , তো । একদম‌ই না । তুমি তো ইউনিক ।

– হ্যা , তো আমি অযথা কেন আপনার উপর ক্রাশ খেতে যাবো ?

আবরন মনে মনে ভাবল ,

– উহ এখনো ভালো সাজে । আমার উপর ক্রাশ খেয়ে আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে , আমাকে হারাতে হবে ভেবে কান্না কাটি করে অস্থির আর মুখে এখনো বলে কিনা আমার উপর সে কখনো ক্রাশ খায়‌-ই নি !

– ও মিষ্টার , কি ভাবছেন ? চলুন !

আবরন বলল ,

– চলো আইসক্রিম খেতে যাই !

পূর্ণতা বলল ,

– এখন ? এই দুপুরে ?

– কেন কোথাও কি লেখা আছে নাকি যে আইসক্রিম দুপুরে খাওয়া যাবে না ?

পূর্ণতা হেসে বলল ,

– ঠিক আছে । চলুন তাহলে ।

– থাক , তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে না । তুমি বরং তোমার সায়নের সাথে যেও ।

হঠাৎ নিজেদের মাঝে সায়নের নাম শুনে পূর্ণতার কেন যেন খুব রাগ উঠে গেল ।

– আমার সায়ন মানে ?? উনি কি আমার প্রোপার্টি যে আমার সায়ন বলে চালিয়ে দিচ্ছেন ! আপনি বলেন যে আপনার জল আপুকে নিয়ে আইস ক্রিম খেতে যেতে ইচ্ছে করছে , ভুলে আমাকে বলে ফেলেছেন । দ্যাটস ফাইন , আমি মেনে নিতাম কিন্তু আপনি সায়নকে আমার বলে কেন কথা বললেন !

ধুর , আমি যাবোই না আপনার সাথে । আপনি চলে যান ।

এই বলে পূর্ণতা গাড়ির ডোর খুলে নিচে নেমে রাস্তায় হাঁটা ধরলো ।

আবরন মনে মনে বির বির করল ,

– যাহ বাবা ! এইটুকুতেই মিস জামান এত রেগে গেল ? হায়রে ! একা একা যাচ্ছে । না , আমাকেও যেতে হবে ।

এই বলে আবরন‌ জলদি সিট বেল্ট খুলে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে পূর্ণতার দিকে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে বলল ,

– আরে , এত রেগে গেলে কেন হঠাৎ ? সায়ন তো তোমার সো কলড হাজবেন্ড । সমস্যা কোথায় ??

পূর্ণতা আবরনের কথা শুনে এবার রাগের জায়গায় অভিমান করে কেদেই দিল ।

আবরন পূর্ণতা কে কাদতে দেখে ওর হাত ধরে টেনে ওকে দাঁড় করিয়ে বলল ,

– আরে আরে ! কাদছো কেন ? রাস্তায় লোকজন কি ভাববে বলো ! চলো চলো । গাড়িতে চলো । তারপর যা করার করো ।

পূর্ণতা কাদতে কাদতে বলল ,

– বিয়ে হলো না এর আগেই পর করে দিলেন ?

আবরন হেসে বলল ,

– আহ , পর করলাম কোথায় ? আই ওয়াজ জাষ্ট কিডিং !

– ওহ , রিয়েলি ? আমি আপনার কে হ‌ই যে আপনি আমার সাথে মজা নিবেন ?

আবরন হাসি বন্ধ করে আস্তে করে বলল ,

– তুমি আমার অভিনয় জগতের নকল ব‌উ ।

“বউ” কথাটা শুনে পূর্ণতার কেমন যেন ফিল হচ্ছে । কিন্তু আবরন তো ওকে নকল ব‌উ বলেছে , তবুও কেন মনে হচ্ছে এই অভিনয়ের পেছনেই একটা বাস্তবতা লুকিয়ে আছে ।

পূর্ণতার ভাবনার মাঝেই আবরন বলল ,

– তুমি কি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি আমার কোলে করে গাড়ি পর্যন্ত যাওয়ার ইচ্ছা জেগেছে ?

পূর্ণতা আবরনের কথা শুনে ওর দিকে তাকাতেই দেখল আবরন ইচ্ছে করে ওকে চেতাচ্ছে ।

পূর্ণতা ভেংচি কেটে বলল ,

– আমার দুটো পা আছে , আমি গাড়ি পর্যন্ত হেঁটেই যেতে পারবো ।

আবরন বলল ,

– শুধু গাড়ি পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারবে ? বাকি রাস্তা ??

পূর্ণতা হেঁটে গাড়ির দিকে যাচ্ছে আবার । আবরন‌ও ওর সাথে যেতে যেতে বলল ,

– আর বাকি রাস্তার কি হবে ?

পূর্ণতা বলল ,

– বাকি রাস্তা আপনার কোলে চড়ে যাবো । হয়েছে ! এবার খুশি ?

আবরন হেসে উঠল ।

আবরনকে হাসতে শুনে পূর্ণতা মনে মনে ভাবল ,

– আমি যে সত্যিই বাকিটা জীবনের পথ আপনার কোলে করেই পাড়ি দিতে চাই !

…………………………………………………

বিকেল সাড়ে পাঁচটা ,

পূর্ণতা ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছিল । নেটফ্লিক্স এ ” Five feet apart” মুভির লাষ্ট সিন দেখে কাদতে শুরু করলো হঠাৎ ।

সায়ন ডায়নিং রুমে এসে পানি খাচ্ছিল । হঠাৎ কান্নার শব্দ পেয়ে ড্রয়িং রুমে এগিয়ে গিয়ে দেখল পূর্ণতা কান্না করে ভাসিয়ে দিচ্ছে ।

সায়ন ওর পাশে বসে বলল ,

– একি ! কাদছো কেন ?

পূর্ণতা বলল ,

– কেন আপনি দেখছেন না মুভিটা কত কষ্টের !

সায়ন টিভির দিকে তাকিয়ে বলল ,

– এই মুভি দেখে কাদছো ?? এটাতে কান্নার কি আছে ?

মুভি শেষ হতেই পূর্ণতা বলল ,

– আপনি এটা দেখেছেন ?

– হ্যা । দেখেছি ।

– কাদেন নি ?

– না ।

পূর্ণতা সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল ,

– কারন আপনি হার্টলেস !

এই বলে রেগে সেখান থেকে চলে গেল ।

সায়ন মনে মনে ভাবছে ,

– হঠাৎ এমন করলো কেন ?

পূর্ণতা রাগে ফুসতে ফুসতে ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে পানির ছিটা দিয়ে আয়নায় তাকিয়ে ভাবছে ,

– একটা মানুষ এতোটা হার্টলেস কি করে হয় ?? মুভির নায়ক নায়িকা দুজন‌ই cystic fibrosis রোগে আক্রান্ত বলে দুজন দুজনকে ভালোবেসে হাতে হাত পর্যন্ত রাখতে পারছে না । সবসময় ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে । তবুও ভালোবাসার জোরে কেউ কারো কাছাকাছি এসে একজন আরেকজনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় নি । অবশেষে নায়কের ট্রিটমেন্টের জন্য ফুসফুস জোগাড় হলেও নায়িকার জন্য ফুসফুস জোগাড় হয় নি । নায়ক নায়িকাকে বাঁচাতে সেই ফুসফুস টা নিজে না নিয়ে নায়িকাকে দিয়ে দিল যেন নায়িকা বাঁচতে পারে , যেখানে নায়ক নায়িকার চেয়ে আরো বেশি অসুস্থ ছিল । ফুসফুস টা ওর নিজের আগের দরকার ছিল । ফুসফুসের ডোনার খোঁজা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার তবুও নিজের জীবন বাজি রেখে নায়িকাকে বাচিয়ে দিয়ে নিজে মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ল ।

এর চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে যে দুজন দুজনকে এত ভালোবেসেও কখনো হাতটা ধরে পর্যন্ত হাঁটতে পারে নি অথচ একজন আরেকজনকে বাচাতে নিজের জীবন পর্যন্ত দিয়ে দিতে পারে ।

সত্যিই এমন ভালোবাসা কি আদৌ দুনিয়াতে আছে !

এমন একটা হার্টলেস মানুষ কে আমার বিয়ে করতে হবে ভাবতেই তো আরো কষ্ট লাগছে ! সায়ন ভাইয়া কি পারবেন আমাকে আবরনের মতো করে টেইক কেয়ার করতে ? পারবেন না ! কখনো পারবেন না !

চোখ মুখ মুছে বাহিরে বের হতেই দেখল ফোনটা বিছানার উপর বাজছে ।

ফোনের দিকে এগিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল প্রেনা কল করছে । কলটা রিসিভ করে কানে দিতেই প্রেনা বলল ,

– কালকে নাকি তোর বিয়ের শপিং করবি ?

পূর্ণতা বলল ,

– তাই নাকি ? আমি তো নিজেই জানি না ।

– যা ই হোক , আমরা কিন্তু সবাই সাথে যাচ্ছি ।

– ওকে ।

– ওকে , টাটা ।

– বায়।

কল কাটতেই পূর্ণতাদের বাসার কলিং বেল বেজে উঠল ।

মিলি রহমান দরজা খুলে দিতেই আবরন মিলি রহমানের সাথে কথা শেষ করে পূর্ণতার রুমের দিকেই এগিয়ে আসছে ।

পূর্ণতা ভাবছে ,

– আজকে উনি এতো জলদি কেন এলেন ?

আবরন ওর সামনে এসে ওকে ভেতরে ঠেলে ঢুকিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিল ।

পূর্ণতা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে র‌ইল আবরনের দিকে ।

আবরন দরজা লাগিয়ে ওর দিকে ঘুরতেই পূর্ণতা দেখল ওর হাতে পলিথিন যাতে ঠান্ডা টাইপের কিছু আছে কাগজে মোড়ানো , কারন পলিথিনের বাহিরে বিন্দু বিন্দু পানি জমেছে ।

আবরন পূর্ণতা কে টেনে বিছানায় বসিয়ে নিজেও বিছানায় বসে বলল ,

– দেখো , কি এনেছি ?

পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,

– কি এনেছেন ?

আবরন পলিথিন খুলে কাগজের মোড়ানো ভাজ খুলে পূর্ণতা কে একটা কোন আইসক্রিম বের করে দিয়ে বলল ,

– ৬ টা আইসক্রিম এনেছি । ৩টা তোমার , ৩ টা আমার !

– এখন ?

– এখন দেখবো , কে আগে খেতে পারে !

পূর্ণতা বলল ,

– চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্টেড !

আবরন বলল ,

– আমি কিন্তু কোনো চ্যালেঞ্জ দেই নি !

পূর্ণতা আইসক্রিমের কাগজ ছাড়াতে ছাড়াতে বলল,

– আরে কথা না বাড়িয়ে শুরু করুন ।

আবরন আর কোনো উপায় না পেয়ে জলদি জলদি আইসক্রিমের কাগজ ছাড়াতে লাগল ।

দুজন‌ই পাল্লা দিয়ে আইসক্রিম খেয়ে যাচ্ছে তো খেয়েই যাচ্ছে । শ্বাস নেওয়ার সুযোগ ও নেই ।

#চলবে ♥️

বিঃদ্রঃ কে জিতবে আইসক্রিম খাওয়ার প্রতিযোগিতায় ?? 😁

গল্পের ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । ধন্যবাদ । ♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here